ইদাদ সিরিজ : ১
ইদাদের পরিচয় ও উদ্দেশ্য
শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহু
------------------------------------------
إن الحمد لله - و الصلاة و السلام على رسول الله - أما بعد
ইদাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রস্তুতি গ্রহণ করা বা পরিকল্পনা করা। আর শরিয়াহর পরিভাষায় ইদাদ বলা হয়, কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের ভীতসন্ত্রস্ত রাখার জন্য শক্তি সঞ্চয় করা এবং জিহাদের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা। ইদাদকে ফরজ ঘোষণা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন:ইদাদের পরিচয় ও উদ্দেশ্য
শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহু
------------------------------------------
إن الحمد لله - و الصلاة و السلام على رسول الله - أما بعد
وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدْوَّ اللّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لاَ تَعْلَمُونَهُمُ اللّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لاَ تُظْلَمُونَ
"আর তোমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে যতটা পার শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে যা দ্বারা আল্লাহ এবং তোমাদের শত্রুকে এবং তাদের ছাড়া অন্যান্যদেরকেও আতঙ্কিত রাখবে। তাদেরকে তোমরা চেন না, আল্লাহ চেনেন। তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে তা পুরোটাই তোমাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। এবং তোমাদের প্রতি মোটেও জুলুম করা হবে না।" [সুরা আনফাল (৮):৬০]
"আর তোমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে যতটা পার শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে যা দ্বারা আল্লাহ এবং তোমাদের শত্রুকে এবং তাদের ছাড়া অন্যান্যদেরকেও আতঙ্কিত রাখবে। তাদেরকে তোমরা চেন না, আল্লাহ চেনেন। তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে তা পুরোটাই তোমাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। এবং তোমাদের প্রতি মোটেও জুলুম করা হবে না।" [সুরা আনফাল (৮):৬০]
এই আয়াতের তাফসীরে আল্লামা সাদি রহ. বলেন:
'তোমাদেরকে এবং তোমাদের দ্বীনকে ধ্বংস করার চেষ্টায় লিপ্ত কাফিরদের বিরুদ্ধে ইদাদ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করো। তাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক, দৈহিক, ও সামরিক শক্তি সঞ্চয় করো। কাফিরদের সাথে যুদ্ধে সহায়ক সবকিছু ইদাদের অন্তর্ভুক্ত। যেমন: কামান, মেশিনগান, বন্দুক, জঙ্গিবিমান, ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, যুদ্ধজাহাজ ইত্যাদির মতো সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত করা; দূর্গ নির্মাণ, পরিখা খনন, আত্মরক্ষা সামগ্রী তৈরি করা, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিকল্পনা এবং আক্রমণ ও প্রতিরক্ষামূলক রণকৌশল প্রণয়ন; বিভিন্ন ধরণের যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার শিক্ষা, সাহসিকতা অর্জন ও সামরিক কৌশল আয়ত্ব করা ইত্যাদি।' (তাফসীরে সাদি: ৩২৪-৩২৫)
ইদাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
ইসলামি শরিয়াহ ইদাদের দু'টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা বর্ণনা করেছে।
এক. কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকদের ভীতসন্ত্রস্ত রাখা।
দুই. জিহাদের ফরজ আদায়ের সক্ষমতা অর্জন করা।
কেউ কেউ মনে করতে পারেন ইদাদের লক্ষ্য দু'টি নয় বরং দু'টি মিলিয়েই একটি লক্ষ্য জিহাদের ফরজ আদায়ের সক্ষমতা অর্জন করা। তাদের এই ধারণা সঠিক নয় বরং ইদাদের এই লক্ষ্য দু'টি স্বতন্ত্র। কাফের ও মুনাফিকদের মুসলিমদের শৌর্য-বীর্য, সামরিক শক্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক ভীতসন্ত্রস্ত রাখা এটি আলাদা একটি ফরজ। যেমনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইদাদের আয়াতে উল্লেখ করেছেন:
تُرْهِبُونَ بِهٖ عَدْوَّ اللّهِ وَعَدُوَّكُمْ
"যার দ্বারা তোমরা আল্লাহর দুশমন এবং তোমাদের দুশমনদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত রাখবে।"
"যার দ্বারা তোমরা আল্লাহর দুশমন এবং তোমাদের দুশমনদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত রাখবে।"
এখন আমরা প্রথম বক্তব্যটি নিয়ে আইম্মায়ে কেরামের বক্তব্য উল্লেখ করবো।
ইমাম রাজি রহ. বলেন:
"ইদাদের আয়াতটিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শক্তি সঞ্চয় করার নির্দেশ দেওয়ার পর, শক্তি সঞ্চয় করার উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনتُرْهِبُونَ بِهِ عَدْوَّ اللّهِ وَعَدُوَّكُمْ)'যার দ্বারা তোমরা আল্লাহর দুশমন এবং তোমাদের দুশমনদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত রাখবে।' কারণ কাফিররা যখন জানবে মুসলিমরা জিহাদের জন্য পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে, তারা সবধরণের অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সাজিয়ে রেখেছে, তখন কাফিররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে থাকবে। তাদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার কারণে অনেকগুলো ফায়দা অর্জিত হবে।
এক. তারা দারুল ইসলামে প্রবেশ করার সাহস করবে না।
দুই. ভীতি চরমে পৌঁছলে তারা অনেক সময় সেচ্ছায় জিযিয়া দিতে রাজি হয়ে যাবে।
তিন. অনেক ক্ষেত্রে এটি তাদেরকে ঈমান আনতে উদ্বুদ্ধ করবে।
চার. তারা অন্য কাফেরদের সহায়তা করবে না।
পাঁচ. এতে দারুল ইসলামের শান-শওক্বত বৃদ্ধি পাবে।"
ইমাম আলুসি রহ. ইদাদের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
"এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইদাদ সবসময় লড়াই করার উদ্দেশ্যে হয় না। বরং কখনো কখনো ইদাদ করা হয়, আল্লাহ ও মুসলিমদের দুশমনদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত করে জিযিয়া কর আরোপ করার জন্য কিংবা এই জাতীয় অন্যান্য উদ্দেশ্যে যা কাফিরদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত করার মাধ্যমে অর্জিত হয়।" (তাফসীরে রুহুল মা'আনি: ৫/২২২)
এবার আমরা ইদাদের দ্বিতীয় লক্ষ্য অর্থাৎ জিহাদের সক্ষমতা অর্জনের জন্য ইদাদ এই সম্পর্কে আইম্মায়ে কেরামের বক্তব্য উল্লেখ করবো।
ইদাদের আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জাসসাস রহ. বলেন:
"আল্লাহ তা'আলা এই আয়াতে দুশমনদেরকে ভীতসন্ত্রস্ত রাখতে এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে কিতালের পূর্বপ্রস্তুতি রূপে মুমিনদেরকে জিহাদের সময় আসার পূর্বেই অস্ত্রশস্ত্র ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন।" (আহকামুল কুরআন : ৩/৮৮)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন:
وَلَوْ أَرَادُواْ الْخُرُوجَ لأَعَدُّواْ لَهٗ عُدَّةً
"মুনাফিকদের যদি জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছাই থাকতো তাহলে তারা সেজন্যে কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো।" [সুরা তাওবা(৯) : ৪৬]
"মুনাফিকদের যদি জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছাই থাকতো তাহলে তারা সেজন্যে কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো।" [সুরা তাওবা(৯) : ৪৬]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জাসসাস রহ. বলেন:
وَ هٰذَا يَدُلُّ عَلٰى وُجُوْبِ الْاِسْتِعْدَادِ لِلْجِهَادِ قَبْلَ وَقْتِ وُقُوْعِهٖ
"এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, জিহাদ আসার পূর্বেই জিহাদের জন্য ইদাদ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা ফরজ।" (আহকামুল কুরআন : ৩/১৫৪)প্রিয় ভাই ও বোন,
যেখানে জিহাদের সময় আসার আগেই ইদাদ করা ফরজ সেখানে আজ আমরা জিহাদ ফরজে আইন হওয়ার পরও ইদাদ করছি না! অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইদাদ পরিত্যাগকারীদের মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করেছেন (নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক)। সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় হল, আমাদের একদল আলিম ও শাইখ হয় ইদাদের ফরজের কথা সাধারণ মুসলিমদের কাছ থাকে লুকিয়ে রাখছে অথবা ইদাদের ব্যাপারে নানান সংশয় সৃষ্টি করে উম্মাহকে ইদাদের ফরজ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।
ইদাদ সিরিজের সামনের পর্বগুলোতে আমরা এই সংশয়গুলো খণ্ডন করার প্রয়াস পাবো, ইংশা-আল্লাহ। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামিন।
Video Link
-------------------------
ইদাদ - একটি ভুলে যাওয়া ফরজ || Intro
https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232497%3B
-------------------------
ইদাদ - একটি ভুলে যাওয়া ফরজ || Intro
https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232497%3B
Comment