Announcement

Collapse
No announcement yet.

মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ !!! (পর্ব-৩)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ !!! (পর্ব-৩)

    আমেরিকা ইউরোপ তথা পশ্চিমা মিত্র জোটের রণকৌশল পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবো যে, তারা দুই রকম রণ নীতির উপর আমল করছে রণক্ষেত্র মোতাবেক। আর তাদের রণক্ষেত্রগুলো হলো সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক।

    সামরিক আগ্রাসনের ক্ষেত্রে কুফফার জোটের রণনীতি হচ্ছে দ্রুততা ও স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধ। কারণ বেশি সময় ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান এর অর্থ হচ্ছে বেশি রক্তক্ষয়, অতিরিক্ত হতাশা ও হতাহত এবং প্রাণহানি। তাই তারা যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে (ব্যক্তি, আবাসস্থল, খামার, ক্ষেত, কারখানা, হাসপাতাল, মসজিদ, অপরাধী নিরাপরাধী) ময়দান ত্যাগ করতে চায়। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসনের ক্ষেত্রে তাদের নীতি হচ্ছে ধীরস্থিরতা ও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ। কারণ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন হলো ছল-চাতুরিতা, মিথ্যা-কপটতা আর চাটুকারদের সহযোগিতা। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া পশ্চিমাদের জন্য অত্যন্ত সহজ।

    আমেরিকানরা সারাবিশ্বে মুসলমানের বিপক্ষে শুধমাত্র সামরিক আগ্রাসনের সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তারা "আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা'র" নামে এমন এক জটিল শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে যা বর্তমান প্রজন্মকে মানসিকভাবে পশ্চিমাদের দাসে পরিণত করেছে। আর এই দাসত্বের বহিঃপ্রকাশ অব্যাহত রয়েছে কাবুল বিজয়ের পর থেকে। কেননা, কাবুল তথা ইসলামের বিজয়ের ফলে মুসলমানরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে ছিল কিন্তু পরমুহুর্তে আমেরিকানদের ছুড়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ও প্রতারণামূলক প্রশ্নে তারা তালেবানের বিজয়কে বিতর্কিত করছে। প্রশ্ন আর সন্দেহের বানে জর্জরিত করছে সম্মানিত নেতৃত্বেস্থানীয় শায়খদের।

    আর এই বিতর্কিত বিষয়গুলো এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয়ে পরিণিত হয়েছে "ইমারতে ইসলাম আআফগানিস্তানের অর্থনীতি"। আমেরিকা আফগান ত্যাগেএ চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেপশ্চিমা মিডিয়া প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন টিভি চ্যানেল, নিউজ মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া বা ইকনোমিক্যাল পোর্টাল ব্যবহার করে আফগানের অর্থনীতি নিয়ে একের পর এক মিথ্যা এবং ধোঁয়াশাপূর্ণ রিপোর্ট প্রদান করে যাচ্ছে। যার মূল বক্তব্য হলো "আফগানের অর্থনীতি বর্তমানে এক জরাজীর্ণ দশা পার করছে। চার কোটি মানুষের এই দেশটিতে মাথাপিছু আয় দুই ডলারের কম। যেকোনো মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে।" আর এই সংবাদে মুসলিম প্রজন্ম আতঙ্কিত। তাদের একের পর এক প্রশ্নে আফগান বিজয়কে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। যেমনঃ আফগানিস্তানের অর্থব্যবস্থা কেমন হবে? অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কোন পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে? আফগানিস্তান কোন কোন দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করবে? ইত্যাদি, ইত্যাদি।

    এই সকল প্রশ্নের যেকোনো উত্তর বা বিশ্লেষণের পূর্বে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার একটি কালাম সকলকে স্মরণ করাতে চায়। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেছেন,
    ٱلشَّيْطَٰنُ يَعِدُكُمُ ٱلْفَقْرَ ....
    অর্থঃ শয়তান তোমাদের দারিদ্রতার ভয় দেখায় .... (সূরা বাকারাহ; ২ঃ২৬৮)

    আজ যে আমেরিকান মিডিয়া ইমারতে ইসলাম আফগানিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে আস্ফালন করছে, ভুলে গেলে চলবে না যে সেই আমেরিকায় আফগানিস্তানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। টনের পর টন বোমাবর্ষণ করেছে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। মাঠে কর্মরত সাধারণ কৃষকদের হত্যা করেছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। মূলত আমেরিকা আফগানিস্তানকে সাহায্যের নাম করে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে ফেলেছে। আফগানিস্তানের বাজেট ও অর্থনীতি বিদেশি দাতাদের দানের এবং বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ নির্ভর করেছে এই কুফফার জোট। আর তার ওপর প্যাক্স জুদাইকা (ইহুদি নির্ভর বিশ্বব্যবস্থা) -এর অন্তর্গত মুদ্রা ও অর্থব্যবস্থার কষাঘাত তো রয়েছেই।

    কেননা জনদরদি আমেরিকা যারা নিজেদের নেশন বিল্ডার'স (রাষ্ট্র বিনির্মাণকারী) হিসেবে দাবী করে তারা কেন ২০ বছরে আফগানিস্থানে কল-কারখানা নির্মাণ করলো না? তারা কেন সাধারণ আফগানিদের কৃষি যন্ত্রপাতি, আধুনিক সরঞ্জাম, মেশিনারি দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করলো না? কারণ আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি, বাণিজ্যের বিকাশ, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জন তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্রের জোরে মুজাহিদীনদের প্রতিহত করা এবং খেলাধুলা ও কুফরী-সেক্যুলার শিক্ষা প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মকে ধ্বংস করা।

    আমেরিকার দাবি মোতাবেক, আফগানিস্থান থেকে প্রস্থানের মাধ্যমে তারা আফগান জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে। অথচ ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জমা থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাবতীয় রিজার্ভ আটকে দেয় হোয়াইট হাউস। এই মুহূর্তে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আফগানিস্তানের এক হাজার কোটি ডলারের সম্পদ জমা আছে। রয়েছে ১২ লাখ ডলারের স্বর্ণ আর ৩০ কোটি ডলার সমমূল্যের আন্তর্জাতিক মুদ্রা। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে জমা থাকা আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ না ছাড়ার নির্দেশ প্রদান করেছে বাইডেন প্রশাসন ও মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার বলুন, এ কেমন স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান?

    প্রতিদিন সংবাদ করা হচ্ছে আফগানিস্তান মারাত্মক তারল্য সংকটে রয়েছে। সেই সাথে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু সংবাদ মাধ্যম বা সংস্থা সমাধান নিয়ে কেউ কথা বলছে না; অথচ সমাধান অত্যন্ত সহজ। আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান আজমল আহমাদি বলেন, "পশ্চিমারা যদি আসলেই আফগান জনগণের ভাগ্য নিয়ে চিন্তিত হয়, তাহলে অবশ্যই আফগানিস্তানের স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা আটকে দিয়ে বাড়তি সমস্যা তৈরি করা উচিত নয়। আফগানিস্তান পতমশীল মুদ্রা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে এসব সম্পদ ছাড় দিতে হবে। প্রায় একই রকম আহ্বান জানিয়েছে আফগান জাতির জন্য মায়াকান্নারত জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। আমেরিকার আটকে রাখা এই অর্থসমূহ ছাড় দেওয়া হলে, আফগানিস্তানের তারল্য সংকট দূর হবে। এবং আফগানের মুদ্রা ব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য যে কোন দেশের মতো গতিশীল হয়ে উঠবে। হয়তোবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য যা কোন দেশের তুলনায় আরো বেশি গতিশীল হবে।

    অতি উৎসাহী কিছু সম্মানিত ভাইদের দাবি, কেন ইমারতে ইসলাম আফগানিস্তান "দিনার ও দিরহাম" মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন করেছে না। সে সকল প্রিয় ভাইদের প্রতি জবাব হচ্ছে, দিনার (স্বর্ণ) ও দিরহাম (রৌপ্য) ব্যবস্থা চালু করা মত স্বর্ণ বা রৌপ সাধারণ জনগণের হাতে নেই। কেননা, ১৯৯৬ সালে তালেবান ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির যে মহাযজ্ঞ দেখেছিল, বর্তমানে ক্ষমতায় এসে এই দুর্নীতির মাত্রা কয়েক গুণ বেড়েছে। এমনকি আফগানিস্তানের সাবেক তাগুত সরকারের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের স্বীকারোক্তি স্বয়ং তাদের মিত্ররা (আমেরিকা-বৃটেন- ভারত) প্রদান করছে। তাই "দিনার-দিরহাম" মুদ্রাব্যবস্থার দিকে ফিরে আসতে ইমারত ইসলাম আফগানিস্তানের কিছুটা সময় এবং অন্যান্য ইসলামী ইমারতের সাহায্যের প্রয়োজন।

    তথাকথিত দরিদ্র আফগানিস্তানের কাছে স্বর্ণ, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, নিকেল ছাড়াও লিথিয়াম, কপার ও কোবাল্টের মত খনিজ সম্পদ রয়েছে। আরও রয়েছে স্ক্যানডিয়াম সহ অনেক দুর্লভ মৃত্তিকা মৌল।

    শুধু মাত্র তিন ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, নিকেল ও কোবাল্ট রয়েছে মাটির নীচে। সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে ৩০ মিলিয়ন টন কপার মজুদ আছে দেশটিতে। অনাবিষ্কৃত আরো ২৮ মিলিয়ন টন। যার মূল্য কয়েকশ বিলিয়ন ডলার। ২ বিলিয়ন টন লোহার আকরিক, ১.৪ মিলিয়ন টন রেয়ার আর্থ (দুর্লভ মৃত্তিকা মৌল), দুই হাজার সাত'শ কেজি (২৭০০ কেজি) স্বর্ণের মজুদ রয়েছে আফগানিস্তানে।

    তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে ইলেকট্রনিক গাড়ি, মোবাইল থেকে শুরু করে ব্যাটারি চালিত নানা প্রযুক্তির অসীম ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। আর ব্যাটারি চালিত প্রতিটি প্রযুক্তির জন্য প্রধান মৌলিক উপাদান হচ্ছে লিথিয়াম। শুধুমাত্র গজনিতে এত পরিমান অতি মূল্যবান এই খনিজ সম্পদের মজুদ রয়েছে যে আফগানিস্তানকে "লিথিয়ামের সৌদি আরব" বলা হয়।

    উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্য মতে, আগ্রাসী আমেরিকান জোট সন্ত্রাস দমনের নামে আফগানিস্থানে আগ্রাসন চালালেও পরবর্তীতে খনিজ সম্পদে দখলে নিতেই "আফগান রিং রোড" এর নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছিল। কিন্তু তালেবান যোদ্ধাদের প্রতিরোধে আগ্রাসী আমেরিকার এই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।

    প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান ক্ষমতাসীন ছিল। এই সময়ে তারা কেন খনিজ সম্পদ উত্তোলনে হাত দেয়নি? প্রশ্নের সাথে সাথে উত্তর ও জানিয়ে দিয়েছে হলুদ মিডিয়া। তাদের মতে উত্তর হচ্ছে, তালেবান খনিজ সম্পদ উত্তোলনে কখনো সক্ষম ছিল না। উত্তরটা আংশিক সত্য, কারণ ১৯৯৬ থেকে ২০০১, এই ৫ বছরে তালেবান সরকার রাশিয়া ও আমেরিকার দালাল সেক্যুলার সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যস্ত ছিল। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আঞ্জাম দিচ্ছিলেন তা হল, "গ্লোবাল জিহাদের পথিকৃৎদের আশ্রয় প্রদান ও উম্মাহর জিহাদী নেতৃস্থানীয়দের বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা"। তাই খনিক সম্পদ তো অনেক দুরের কথা, নিজ ব্যক্তিজীবন নিয়ে ভাবার অবকাশ তৎকালীন সময়ে তালেবান যোদ্ধাদের ছিল না।

    বর্তমানে চীন, রাশিয়া, কাতার ও পাকিস্তানের মতো অনেক দেশ ইমারতে ইসলাম আফগানিস্তানকে খনিজ সম্পদ উত্তোলনে সাহায্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু চীন ওবরাশিয়ার মতো কাফের রাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করার আগে সম্মানিত তালেবান শাইখ ও নেতৃস্থানীয়রা শরয়ী মাসলা-মাসায়েল ও অবস্থান পরিষ্কার করছেন। পাশাপাশি পাকিস্তান বা কাতারের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তাদের রিদ্দার কোথাও ভুলে যাচ্ছেন না। কারণ তালেবান প্রশাসন কোন ক্ষণস্থায়ী বা অস্থায়ী সমাধান নয়; বরং স্থায়ী ও শরয়ী সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে চাচ্ছেন।

    তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো আফগানিস্তান ও কৃষি প্রধান দেশ। আফগানিস্তানের শুকনো ফল ও মশলার খরিদ্দার হচ্ছে পাকিস্তান, ভারত, আরব আমিরাত সহ আরো কয়েকটি উন্নত দেশ। তালেবান তাদের খনিজ সম্পদ বিক্রি করে সহজেই তাদের কৃষিব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে দেশকে কৃষি নির্ভর করতে পারবেন। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ শুরু হলেই আফগানিস্তানের অর্থনীতি পরিপূর্ণভাবে স্থির অবস্থানে চলে আসবে। খোদ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)- এরএকটি প্রতিবেদন মতে, যদি তারা শুধুমাত্র তাদের (আফগানিস্তানের) কৃষিখাতকে আধুনিকীকরণ করতে পারেন, তাহলে ২০৩৫ সালের মধ্যে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির সমকক্ষ হতে পারবেন।

    অনেকে চিন্তা করছেন আফগানিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে অথচ আফিমের আলোচনায় এখনো কেন আসেনি। এর কারণ হচ্ছে কাবুল বিজয়ের পর পর মোহতারাম শায়খ জাবিউল্লাহ মুজাহিদ (হাফিঃ) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইমারত ইসলাম আফগানিস্তান কোন ভাবেই আফিম চাষের অনুমতি প্রদান করবে না। এবং পাশাপাশি আফিম চাষের বিকল্প কৃষি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্যের আহবান করেছেন। সুতরাং, আফিম নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত করার অর্থই হচ্ছে স্বয়ং তালেবান নেতৃত্বস্থানীয় শায়খদের সন্দেহ ও অপমানিত করা অপচেষ্টা।

    আজ যে আমেরিকা আফগানিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে এতটাই চিন্তিত সাধারণভাবে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে আফগানিস্তানের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতের উন্নয়ন কোনো-না-কোনোভাবে তারা বাধাগ্রস্থ করে রেখেছে। আবার এই নিয়ে তারা মিথ্যা প্রচারণা-প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তাতে তারা মুসলিমদের ধোকায় ফেলতে পারে এবং মানসিকভাবে দুর্বল করে তাদের দাসে পরিণত করতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমেরিকা ও পশ্চিমা জোটের এই প্রপাগান্ডা বুঝার ও প্রতিহত করার তওফিক দান করেন। আমিন।

    মূলত উপরোক্ত আলোচনা বা বিশ্লেষণ হচ্ছে সংখ্যাতত্ত্ব, পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন নির্ভর দুনিয়ার আসবাবের আলোচনা। কিন্তু মূল রিযিক তো রয়েছে স্বয়ং সেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার হাতে, যার উপর তাওয়াক্কুল করে তালেবানরা ২০ বছর জিহাদ পরিচালনা করেছেন, যে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নের জন্য জীবন হাতে নিয়ে ইসলামের পতাকা উত্তোলন করেছেন। তাই সংশয় নয়, তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল সকল সমস্যার সমাধান। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেছেন,
    وَٱللَّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًاۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ
    অর্থঃ আর আল্লাহ্* তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ্* সর্বব্যপী-প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাহ, ২ঃ২৬৮)।

    পরিশেষে সকলের প্রতি আরজি হচ্ছে, ইমারতে ইসলামের এই কঠিন মুহূর্তে আমাদের পূর্বের তুলনায় আরও অনেক বেশি দু'আ কল্যাণ কামনা করা এবং বাস্তবিক ও প্রয়োগিক সাহায্য-সহযোগিতায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসা পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় অবশ্যক। এই মুহূর্তে দ্বীনের নুসরিতের পথে এগিয়ে না আসা বা কার্পণ্য করার পরিণতি আশঙ্কাজনকও হতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তা থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।

    তাই সম্মানিত ভাই ও বোনের, ইমারতে ইসলাম আফগানিস্তানের বিজয়ে আনন্দিত হোন এবং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। এবং খোরাসানের মুজাহিদদের কাফেলাকে আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত করতে শোকর বিল মাল - এর মাধ্যমে ভূমিকা রাখুন। ইখলাসের সাথে যৎসামান্য হলেও আল্লাহর দ্বীনের জন্য ব্যয়ের হাত সম্প্রসারণ করুন। মনে রাখবেন, আমাদের রব রহমত সুযোগ খোঁজে, সুযোগ্য খুঁজে না।

    رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ وَتُبْ عَلَيْنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
    আবু দানিয়াল উসামা
    তারিখঃ ০৮ সফর, ১৪৪৩ হিজরি।।
    তথ্যসূত্রঃ

    সংবাদপত্রঃ যুগান্তর (১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১)
    নিউস পোর্টালঃ চ্যানেল ২৪, ডয়েচ ভেল, ওয়াল্ড ট্রেড ফোরাম ও উইকি লিকস।

  • #2
    মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর লিখছেন ভাই....জাযাকাল্লাহু খাইরান।
    নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ রইল। আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দিন। আমীন
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment

    Working...
    X