আল্লাহ তাআলাই তো ঐ সত্তা যিনি আমাদের হেদায়েত দান করেছেন ৷ আমরা তো আল্লাহ তাআলার জন্যই নিজেদের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করেছি। আমরা তো দুনিয়া ও পরকালে মহান রবের সন্তুষ্টির আশায়ই দুনিয়ার তুচ্ছ জিনিস ছেড়ে মহান আল্লাহ তাআলার দিকে ধাবিত হয়েছি।
আমরা কি বুঝতে পারি যে আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার অনেক বড় বড় নেয়ামত রয়েছে? আমাদের মতই তো কত মানুষ আছে যারা দ্বীন থেকে অনেক দূরে। তাদেরও তো আমাদের মত দেহ ও রক্ত-মাংস রয়েছে। আল্লাহ তাআলা দয়া করে আমাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের উপর কি আবশ্যক নয় যে আমরা আকুল অন্তরে মহান রবের নিকট নিজেদেরকে সমর্পণ করব? তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ ভাবে আঁকড়ে ধরব? আমাদের কি ইচ্ছা হয়না যে আমরা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে নবী, সিদ্দীক, শহীদদের সাথে থাকব? রবের আরশের নিচে সবুজ পাখি হয়ে উড়ব? কীভাবে আমরা সেই দয়াময় আল্লাহ তাআলার দিকে আরো বেশি ধাবিত হতে পারব তা কি আমরা তালাশ করব না?
আল্লাহ তাআলা আমাদের হেদায়েতের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করেছেন। তিনি সুদীর্ঘ তেইশ বছরের জীবনে দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। আর আমাদের জন্য তিনি রেখে গেছেন আল্লাহর কুরআন ও সুন্নাহ। যতদিন আমরা কোরআন ও সুন্নাহকে পরিপূর্ণভাবে আঁকড়ে ধরব ততদিন আমরা পথভ্রষ্ট হব না।
তাই এখন আমাদের উপর আবশ্যক হল, আমরা সমগ্র কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ণাঙ্গ জীবনাচারকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করব। তো কুরআন আমাদের এখন কি বলে? আমাদের এখন কি করা উচিত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচারকে কীভাবে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ব্যবস্থা থেকে এখন আমাদের কী শিক্ষা নেওয়া উচিত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সারা জীবনের আমল কেমন ছিল? তিনি ইসলামকে কিভাবে বাস্তবায়ন করেছেন এবং আমাদের প্রতি তিনি কি নির্দেশ দিয়েছেন দিয়ে গেছেন?
আসলে মুমিনরা তো এগুলোর পেছনেই ছুটে চলে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শকে নিজেদের জীবনে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করে যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়াত প্রাপ্তির পর কিছু সময় গোপনে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন । এরপর আল্লাহ তাআলা তাকে একপর্যায়ে প্রকাশ্যভাবে দাওয়াত দিতে নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِينَ
অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না। (সূরা হিজর, আয়াত ৯৪)
আর তখনই তাঁর উপর নেমে আসে অসহনীয় নির্যাতন ও অত্যাচার । আল্লাহর নির্দেশে তিনি ধৈর্য ধারণ করতে থাকেন । আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَٱصۡبِرۡ وَمَا صَبۡرُكَ إِلَّا بِٱللَّهِۚ وَلَا تَحۡزَنۡ عَلَيۡهِمۡ وَلَا تَكُ فِي ضَيۡقٖ مِّمَّا يَمۡكُرُونَ
আপনি সবর করবেন। আপনার সবর আল্লাহর জন্য ব্যতীত নয়, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না। (সূরা নাহল, আয়াত ১২৭)
এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াহর মাধ্যমে একটা দল গঠন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এই দাওয়াহ মদিনাতে ছড়িয়ে পড়ে ও সেখানকার কিছু মানুষও মুসলমান হয়ে যায় । এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসআব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে মদিনায় প্রেরণ করেন দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য এবং মদীনাবাসীদের কে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য । এক পর্যায়ে মদিনাতে মুসলমানদের শক্তিশালী একটা দল তৈরি হয়। অন্যদিকে মক্কায় ইসলামের বিপক্ষে কাফেরদের নির্যাতন ও কঠোরতা আরো বেড়ে যায়। তখন একপর্যায়ে আল্লাহর নির্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের পর মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেন ।এর পর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ মাধ্যমে দ্বীনকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জীবদ্দশায় অনেক জিহাদ পরিচালনা করেন যার কোনোটিতে তিনি স্বশরীরে শরীক থাকেন, আর কোনোটিতে নিজে বাহিনী প্রেরণ করেন। এমনিভাবে তিনি আমৃত্যু জিহাদের মাধ্যমে দ্বীন ইসলামকে ছড়াতে থাকেন এবং আল্লাহর জমিনে তা প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন । তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর সাহাবীগণও জিহাদের মাধ্যমেই পূর্ব-পশ্চিমে দ্বীনকে ছড়িয়ে দেন।
এর পরবর্তীতে উম্মতের সাহসী বীরেরা এই জিহাদের মাধ্যমেই দ্বীনকে পৃথিবীর বিশাল এক অংশে ছড়িয়ে দেন। হিন্দুস্তান, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিশাল অংশ ইসলামের ছায়াতলে আসে। এরপর মুসলিমরা গৌরবের সাথে বিশ্ব শাসন করতে থাকেন । সর্বশেষ ১৯২৩-২৪ সাল পর্যন্ত তেরশ বছর মুসলিমরা নিজেদের আধিপত্য কায়েম রাখেন। আস্তে আস্তে দীর্ঘদিনের অলসতা, দ্বীনবিমুখতা ইত্যাদির কারণে মুসলমানদের খেলাফতের বিলুপ্তি ঘটে । এর পরের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। মুসলমানদের খেলাফত না থাকার কারণে ১৯২৪ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মুসলিম কাফেরদের হাতে শহীদ হয় ।
এমতাবস্থায় একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে ইসলাম আমাদের নিকট কি চায়? আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এখন আমাদের কি দায়িত্ব? আজ প্রতিদিন সারা বিশ্বে কত কত মুসলিম নিহত হচ্ছে , নির্যাতিত হচ্ছে, নিজ দেশ থেকে বহিস্কৃত হচ্ছে , দরিদ্র ও লাঞ্ছনার জীবন অতিবাহিত করছে এর কি কোন হিসাব আছে? তাদের জান মালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সাধারণ মুসলিমদের মাঝে ফাহেশা ও নোংরামির প্রসার ঘটানো হচ্ছে।
এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি কি করতেন? তিনি কি মুসলিম উম্মাহর জন্য ব্যথিত হতেন না? তাদের পাশে দাঁড়াতেন না? এমতবস্থায় আমাদের উপর কি জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করা ফরজ নয় ? আল্লাহ তা'আলা বলেন:
وَمَا لَكُمۡ لَا تُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلۡمُسۡتَضۡعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلۡوِلۡدَٰنِ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةِ ٱلظَّالِمِ أَهۡلُهَا وَٱجۡعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيّٗا وَٱجۡعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا
আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (সূরা নিসা, আয়াত ৭৫)
বর্তমানে আমাদের উপর একাধিক কারণে জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেছে । সেগুলো হলো– মুসলিম ভূমিগুলোতে কাফেরদের আগ্রাসন, বিভিন্ন মুসলিম দেশের শাসকদের মুরতাদ হয়ে যাওয়া ও প্রকাশ্যভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে, জিহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, অসংখ্য মুসলমান বন্দি অবস্থায় থাকা ইত্যাদি । ফিকহের কিতাবে আছে– চার কারনে জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায় :
১.কাফেরদের মুসলিম ভূমিতে আক্রমণ করা।
২. ইমাম যখন নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে জিহাদে বের হতে বলেন ।
৩.যখন মুসলিম ও কাফের বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়।
৪.যখন কাফেররা একদল মুসলিমকে বন্দি করে নিয়ে যায়।
ভাই, আমরা সবাই আল্লাহ তা'আলার বান্দা। আমরা তো চাই যে, দয়াময় আল্লাহ তা'আলা আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং চিরস্থায়ী জীবনে আমাদেরকে সৌভাগ্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন । আর এই সৌভাগ্যের সর্বোচ্চ চূড়া হলো জিহাদ। তাহলে জিহাদের মাধ্যমে মহা সৌভাগ্য অর্জনে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? অথচ আমাদের পূর্বসূরী কত মানুষ এই পথে নিজেদেরকে সপে দিয়ে মহা সৌভাগ্য অর্জন করেছেন । প্রিয় দ্বীনী ভাই, আল্লাহ তায়ালার কোরআনের সম্পূর্ণ অংশের উপর আমল করার জন্য কি আমরা আদিষ্ট নই? আমরা যদি কোরআনের কিছু অংশ কে ছেড়ে দেই তাহলে কি আর জন্য আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না ? আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে না? কোরআনে জিহাদ সম্পর্কে যতবেশী আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে অন্য কোন বিষয়ে এত অধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে কি?
আল্লাহ তাআলা কি কুরআনে বলেন নি যে –
وَقَٰتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةٞ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ كُلُّهُۥ لِلَّهِۚ فَإِنِ ٱنتَهَوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। (সূরা আনফাল ,আয়াত ৩৯)
এখন ফিতনা কি নির্মূল হয়ে গিয়েছে ? সব জায়গায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা হয়েছে গিয়েছে?
আমাদের মহান রব কোরআন মাজীদে কি বলেন নি –
كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡـٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡـٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ
তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। (সূরা বাকারা, আয়াত ২১৬)
তিনি কি এই বলে আমাদের উৎসাহিত করেন নি যে–
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ. تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ.
মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। (সূরা সফ ,আয়াত ১০-১১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জিহাদের ব্যাপারে বলেন নি যে–
عن أبي زرعة بن عمرو بن جرير، قال سمعت أبا هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال " انتدب الله لمن خرج في سبيله لا يخرجه إلا إيمان بي وتصديق برسلي أن أرجعه بما نال من أجر أو غنيمة، أو أدخله الجنة، ولولا أن أشق على أمتي ما قعدت خلف سرية، ولوددت أني أقتل في سبيل الله ثم أحيا، ثم أقتل ثم أحيا، ثم أقتل
আবূ যুর‘আহ ইব্*নু ‘আম্*র ইব্*নু জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, যদি সে শুধু আল্লাহর উপর ঈমান এবং তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমানের কারণে বের হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা দেন যে, আমি তাকে তার পুণ্য বা গানীমাত (ও বাহন) সহ ঘরে ফিরিয়ে আনব কিংবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।
আর আমার উম্মতের উপর কষ্টদায়ক হবে বলে যদি মনে না করতাম তবে কোন সেনাদলের সঙ্গে না গিয়ে বসে থাকতাম না। আমি অবশ্যই এটা ভালবাসি যে, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬)
তিনি আরো বলেন যে:
عن المقدام بن معديكرب، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " للشهيد عند الله ست خصال يغفر له في أول دفعة ويرى مقعده من الجنة ويجار من عذاب القبر ويأمن من الفزع الأكبر ويوضع على رأسه تاج الوقار الياقوتة منها خير من الدنيا وما فيها ويزوج اثنتين وسبعين زوجة من الحور العين ويشفع في سبعين من أقاربه " . قال أبو عيسى هذا حديث صحيح غريب .
মিকদাব ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ছয়টি পুরস্কার বা সুযোগ আছে। তাঁর প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সাথে সাথে তাঁকে ক্ষমা করা হয়, তাঁকে তাঁর জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়, কবরের আযাব হতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, সে কঠিন ভীতি হতে নিরাপদ থাকবে, তাঁর মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর এক একটি পাথর দুনিয়া ও তাঁর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। তার সাথে টানা টানা আয়তলোচনা বাহাত্তরজন জান্নাতী হূরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর সত্তরজন নিকটাত্মীয়ের জন্য তাঁর সুপারিশ ক্ববূল করা হবে। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৬৩)
তিনি আরো বলেন যে–
عن أبي هريرة ـ رضى الله عنه ـ حدثه قال جاء رجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال دلني على عمل يعدل الجهاد. قال " لا أجده ـ قال ـ هل تستطيع إذا خرج المجاهد أن تدخل مسجدك فتقوم ولا تفتر وتصوم ولا تفطر ". قال ومن يستطيع ذلك قال أبو هريرة إن فرس المجاهد ليستن في طوله فيكتب له حسنات.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (অতঃপর বললেন,) তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ‘ইবাদত করবে এবং আলস্য করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। ব্যক্তিটি বলল, এটা কে পারবে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘মুজাহিদের ঘোড়া রশির দৈর্ঘ্য পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে, এতেও তার জন্য নেকী লেখা হয়।’(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৮৫)
তিনি আরো বলেন যে–
عن أنس بن مالك ـ رضى الله عنه ـ عن النبي صلى الله عليه وسلم قال " لغدوة في سبيل الله أو روحة خير من الدنيا وما فيها ".
আনাস ইব্*নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্*র রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৯২)
আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুদ্ধা নবী ছিলেন না? তিনি কি বলেন নি যে–
عن حذيفة ، قال : لقيت النبي صلى الله عليه وسلم , في بعض طرق المدينة , فقال : " أنا محمد ، وأنا أحمد ، وأنا نبي الرحمة ، ونبي التوبة ، وأنا المقفى ، وأنا الحاشر ، ونبي الملاحم " .
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, একবার মদিনার কোন এক রাস্তায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, আমি মুহাম্মদ, আমি আহমাদ, আমি নবীউর রহমত (রহমতের নবী) আমি নবীউত তাওবা (তাওবার নবী), আমি মুকাফফী (পরে আগমনকারী), আমি হাশির (একত্রকারী), আমি মালাহিমের নবী (জিহাদকারী)। (শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ২৮৩)
তিনি আরো বলেছেন যে–
عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى اللٰه عليه وسلم بعثت بالسيف حتى يعبد الله لا شريك له وجعل رزقي تحت ظل رمحي وجعل الذلة والصغار على من خالف أمري ومن تشبه بقوم فهو منهم
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি (কিয়ামতের পূর্বে) তরবারি-সহ প্রেরিত হয়েছি, যাতে শরীকবিহীনভাবে আল্লাহর ইবাদত হয়। আমার জীবিকা রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। অপমান ও লাঞ্ছনা রাখা হয়েছে আমার আদেশের বিরোধীদের জন্য। আর যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।” (আহমাদ ৫১১৪-৫১১৫, ৫৬৬৭, শুআবুল ঈমান ৯৮)
জিহাদকে শিখর(চূড়া) ঘোষণা করে তিনি বলেছেন–
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم:" ألا أخبرك برأس الأمر كله وعموده وذروة سنامه " . قلت بلى يا رسول الله . قال " رأس الأمر الإسلام وعموده الصلاة وذروة سنامه الجهاد "
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি কি সমস্ত কাজের মূল, স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ সকল কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামায এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জিহাদ। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৬১৬)
সমস্ত সাহাবা কি ব্যাপকভাবে সবাই মুজাহিদ ছিলেন না ? আমরা কি এমন কোন সাহাবীর নাম বলতে পারব যিনি মুজাহিদ ছিলেন না? তাঁদের মধ্যে ফকীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির এর সংখ্যা ছিলো অনেক সীমিত।
আসলে আমরা যতই শান্তিপ্রিয় হই না কেন, যুদ্ধ-কিতাল চলতে থাকা হলো পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম। আল্লাহ তায়ালা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকেই এরূপ করে সৃষ্টি করেছেন যা অস্বীকার করা অসম্ভব। কিছু লোক যতই শান্তির বুলি আওড়াক, প্রতিপক্ষ কিন্তু যুদ্ধ-কিতাল চালিয়েই যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَوۡلَا دَفۡعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعۡضَهُم بِبَعۡضٖ لَّفَسَدَتِ ٱلۡأَرۡضُ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ ذُو فَضۡلٍ عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ
আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়। (সূরা বাকরা,আয়াত ২৫১)
তিনি আরো বলেন:
وَلَا يَزَالُونَ يُقَٰتِلُونَكُمۡ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمۡ عَن دِينِكُمۡ إِنِ ٱسۡتَطَٰعُواْۚ
বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। (সূরা বাকারা , আয়াত ২১৭)
সব বাস্তবতা পরিষ্কার হওয়া সত্ত্বেও জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকার শাস্তি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও যন্ত্রণাদায়ক। পিছনে থাকা লোকদেরকে তিরস্কার করে আল্লাহ কোরআন মাজীদে বলেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَا لَكُمۡ إِذَا قِيلَ لَكُمُ ٱنفِرُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱثَّاقَلۡتُمۡ إِلَى ٱلۡأَرۡضِۚ أَرَضِيتُم بِٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا مِنَ ٱلۡأٓخِرَةِۚ فَمَا مَتَٰعُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। (সূরা তাওবা , আয়াত ৩৮)
জিহাদ থেকে পিছনে থেকে সন্তুষ্ট থাকা হলো মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা কুরআনে মুনাফিকদের ব্যাপারে বলেন:
رَضُواْ بِأَن يَكُونُواْ مَعَ ٱلۡخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَفۡقَهُونَ
তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর। ফলে তারা বোঝে না। (সূরা তাওবা ,আয়াত ৮৭)
প্রিয় ভাই, আমরা ভেবে দেখি– আমাদের জানায় বা অজান্তে আমাদের মাঝে কোন নিফাক থেকে যাচ্ছে না তো? তাই ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় আমরা এ থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবো না? একবার মৃত্যু বরণ করলে আর কোন সময় কি নিজেকে সংশোধন করার সুযোগ পাবো?
আমাদের কি মনে আছে যে তাবুকের যুদ্ধে পেছন থেকে যাওয়ার কারণে তিনজন সাহাবীর কী শাস্তি হয়েছিল? নিজেদের প্রাণপ্রিয় নবী তাদের সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাদেরকে বয়কট করা হয়েছিল। এর কারণ ছিল যে তখন জিহাদ ফরজে আইন ছিল। মদীনা থেকে আটশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাবূক প্রান্তরে কাফেররা মদিনা আক্রমণের জন্য সৈন্য জমায়েত করেছিল। মদিনা তখনও নিরাপদ ছিল। তাহলে বর্তমানে তো আমাদের প্রতিটা ভূখণ্ডে কাফেররা আগ্রাসন চালিয়ে জান-মাল ধ্বংস করছে। তবুও কি আমাদের উপর জিহাদ ফরজ হবে না? এমনিভাবে এছাড়াও বর্তমানে আমাদের উপর একাধিক কারণ জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেছে। এখন আমরা যদি অলসতা করে জিহাদ থেকে পিছনে থাকি তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেঁচে থাকলে আমাদের সাথে কিরূপ আচরণ করতেন , এটা কি আমরা ভেবে দেখি? আমরা কি শয়তানের ধোঁকা ও প্ররোচনার বেড়াজাল ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলার দিকে এগিয়ে আসব না? আমার কি শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে আমাদের চিরস্থায়ী জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করবো? আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
এখন প্রশ্ন হতে পারে , রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম যখন জিহাদ করেছেন তখন ইসলামী রাষ্ট্র ছিল, এখন তো কোন ইসলামী রাষ্ট্র নেই, সুতরাং আমরা কিভাবে জিহাদ করবো? এছাড়া আমাদের জিহাদ করার মত সক্ষমতা নেই । আবার আমাদের বড়রা তো এ ব্যাপারে কিছু করছেন না বা করছেন না।
আসলে এর একটা উত্তর হলো – আল্লাহ তাআলার সাথে সততা ও আন্তরিকতা দাবি হলো যে – আমরা তো এরূপ প্রশ্নই করব না। বরং আমাদের উচিত তো ছিলো যে, আমরা বেশি বেশি এই চেষ্টা করব যে , কীভাবে এই মোবারক কাজ যথাযথ ভাবে আঞ্জাম দিতে পারব , আরো কীভাবে বেশি পরিমাণে আল্লাহ তাআলার দিকে এগিয়ে যেতে পারব ,সম্ভাব্য সকল পন্থায় কীভাবে আমরা জিহাদের কত মহান ফরজ ইবাদতকে বাস্তবায়ন করতে পারব।
শরীয়ার ভাষ্য হল- জিহাদ দুই প্রকার : ১.প্রতিরোধমূলক জিহাদ ও ২.আক্রমণাত্মক জিহাদ। কিছু ইমামের মতে ইসলামী রাষ্ট্র থাকা, শাসকের অনুমতি হওয়া এগুলো আক্রমনাত্মক জিহাদের জন্য শর্ত। আর প্রতিরোধমূলক জিহাদের জন্য ইসলামী রাষ্ট্র থাকা শর্ত নয়।
ভাই, একটা বিষয় ভেবে দেখি। কারো ঘরে যদি দুষ্টু লোকেরা এসে লুটপাট করতে থাকে অথবা মহিলাদের সাথে খারাপ কাজ করতে চায়, তাহলে কি সে একটা চিন্তা করবে যে, আমি তো কোন ইসলামী রাষ্ট্রে বাস করি না?! তাই আমাকে দুষ্টু লোকদের বাঁধা দিতে হবে না!! নাকি সর্বশক্তি দিয়ে তাকে প্রতিরোধ করবে?
আজ বিশ্বব্যাপী কাফেররা মুসলিমদের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু ঈমান ছিনিয়ে নিতে মুসলিমদের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। সুতরাং এখন আমরা কি এটা দেখব যে, আমরা ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করি না?! না, আল্লাহর কসম কখনও নয় । হাদিসে তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যদি কোন মুসলিমও অন্য মুসলিমের জান মালের উপর আক্রমণ করে তাহলে তার সাথে কিতাল করা বৈধ। তাহলে কাফেররা যদি আমাদের ঈমানের (যা জান মালের চেয়ে দামী) উপর আক্রমণ করে তাহলে আমরা কি ইসলামী রাষ্ট্রের শর্ত নিয়ে বসে থাকবো?
আরেকটি বিষয় হলো– কাফেররা যখন কোন মুসলিম ভূমিতে আগ্রাসন চালায় তখন সর্বপ্রথম সেই ভূখণ্ডের মুসলিমদের উপর জিহাদ করা ফরজে আইন হয়ে যায় ।তারা অক্ষম হলে বা অলসতার কারণে শত্রুদের মোকাবেলায় অক্ষম হলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে ক্রমান্বয়ে ফরয হওয়াটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায় ,যেমনটা ফতওয়ায়ে শামী তে আছে । বর্তমানে সিরিয়া, কাশ্মীর ,আরাকান, পূর্ব তুর্কিস্তান ইত্যাদি ভূখণ্ডে অক্ষমতার কারণে মুসলিমদের শত্রুদের পরিপূর্ণভাবে মোকাবেলা না করতে পারা কারো কাছে অবিদিত নয় ।
আর আমরা অক্ষমতার যে ওজর পেশ করে থাকি এটা সঠিক নয়। আমরা যদি এখলাস ও আন্তরিকতার সাথে জিহাদের পথে এগিয়ে আসি , তাহলে আমরা দেখতে পাব – অবশ্যই কাফেরদের মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে সবার পক্ষে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করা সবার জন্য সম্ভব না হলেও জিহাদের জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করাও কি অসম্ভব? বর্তমানে জিহাদের ক্ষেত্রে এমন অনেক কাজ আছে যা আমাদের দ্বারা করা সম্ভব, জিহাদের কাজে এগিয়ে আসলে যা আমরা বুঝতে পারবো
ইনশাআল্লাহ। আর আল্লাহ এমন কোন কাজের নির্দেশ দেন না যা করতে বান্দা সক্ষম নয়। যেহেতু জিহাদের নির্দেশ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে তাই সক্ষমতাও কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
ভাই, আমরা আন্তরিকতার সাথে বলি তো, আমরা কি সত্যিই কি এই কাজগুলো করতে অক্ষম? আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করার ,জিহাদ করারব কোন শক্তিই কি আমাদের নেই? নাকি দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুর ভয়ের কারণে আমরা নিজেদের ধোঁকা দিয়ে চিরস্থায়ী কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি?
পরিশেষে আল্লাহ তায়ালার প্রতি আন্তরিক বিনয়াবত মুসলিম ভাইদেরকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে বলব –প্রিয় ভাই, আপনারা এই সফলতার পথে এগিয়ে আসুন। মহান রবের প্রশস্ত রহমতের ছায়ায় প্রবেশ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা কে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করুন । শয়তানের মুখে কাঁদা ছিটিয়ে কাফেরদের রাঙানো চোখ কে তুচ্ছজ্ঞান করে এই মহা সফলতার পথে এগিয়ে আসুন। আমাদের দুনিয়াতে জীবন তো একটাই। যদি এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে এই মহা সফলতা লাভ না করে পরকালে চলে যাই তাহলে পরে তা আর লাভ করার সুযোগ থাকবে না।
হে আল্লাহ তায়ালার প্রতি আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান ভাইয়েরা, আমরা তো আল্লাহ তায়ালার জন্য নিজেদের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করেছি, দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করেছি।আমরা কি আমাদের প্রভুর সর্বাধিক পছন্দের কাজে শরীক হবো না?
আমি আল্লাহ তা'আলার জন্য আপনাদেরকে ভালোবাসি এবং আপনাদের কল্যাণকামী। তাই আসুন ভাই দুনিয়ার জীবন ফুরিয়ে যাবার আগেই আমরা সফলদের সাথে শরিক হয়ে নিজেদেরকে সফলতার পথে পরিচালিত করি। আপনাদের প্রতি উদাত্ত আহবান থাকবে আল্লাহ তাআলার নিকট আমাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন যাতে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্টার কাজ করার তৌফিক দান করেন।
-সংগৃহীত-
আমরা কি বুঝতে পারি যে আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার অনেক বড় বড় নেয়ামত রয়েছে? আমাদের মতই তো কত মানুষ আছে যারা দ্বীন থেকে অনেক দূরে। তাদেরও তো আমাদের মত দেহ ও রক্ত-মাংস রয়েছে। আল্লাহ তাআলা দয়া করে আমাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের উপর কি আবশ্যক নয় যে আমরা আকুল অন্তরে মহান রবের নিকট নিজেদেরকে সমর্পণ করব? তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ ভাবে আঁকড়ে ধরব? আমাদের কি ইচ্ছা হয়না যে আমরা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে নবী, সিদ্দীক, শহীদদের সাথে থাকব? রবের আরশের নিচে সবুজ পাখি হয়ে উড়ব? কীভাবে আমরা সেই দয়াময় আল্লাহ তাআলার দিকে আরো বেশি ধাবিত হতে পারব তা কি আমরা তালাশ করব না?
আল্লাহ তাআলা আমাদের হেদায়েতের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করেছেন। তিনি সুদীর্ঘ তেইশ বছরের জীবনে দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। আর আমাদের জন্য তিনি রেখে গেছেন আল্লাহর কুরআন ও সুন্নাহ। যতদিন আমরা কোরআন ও সুন্নাহকে পরিপূর্ণভাবে আঁকড়ে ধরব ততদিন আমরা পথভ্রষ্ট হব না।
তাই এখন আমাদের উপর আবশ্যক হল, আমরা সমগ্র কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ণাঙ্গ জীবনাচারকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করব। তো কুরআন আমাদের এখন কি বলে? আমাদের এখন কি করা উচিত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচারকে কীভাবে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ব্যবস্থা থেকে এখন আমাদের কী শিক্ষা নেওয়া উচিত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সারা জীবনের আমল কেমন ছিল? তিনি ইসলামকে কিভাবে বাস্তবায়ন করেছেন এবং আমাদের প্রতি তিনি কি নির্দেশ দিয়েছেন দিয়ে গেছেন?
আসলে মুমিনরা তো এগুলোর পেছনেই ছুটে চলে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শকে নিজেদের জীবনে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করে যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়াত প্রাপ্তির পর কিছু সময় গোপনে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন । এরপর আল্লাহ তাআলা তাকে একপর্যায়ে প্রকাশ্যভাবে দাওয়াত দিতে নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِينَ
অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না। (সূরা হিজর, আয়াত ৯৪)
আর তখনই তাঁর উপর নেমে আসে অসহনীয় নির্যাতন ও অত্যাচার । আল্লাহর নির্দেশে তিনি ধৈর্য ধারণ করতে থাকেন । আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَٱصۡبِرۡ وَمَا صَبۡرُكَ إِلَّا بِٱللَّهِۚ وَلَا تَحۡزَنۡ عَلَيۡهِمۡ وَلَا تَكُ فِي ضَيۡقٖ مِّمَّا يَمۡكُرُونَ
আপনি সবর করবেন। আপনার সবর আল্লাহর জন্য ব্যতীত নয়, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না। (সূরা নাহল, আয়াত ১২৭)
এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াহর মাধ্যমে একটা দল গঠন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এই দাওয়াহ মদিনাতে ছড়িয়ে পড়ে ও সেখানকার কিছু মানুষও মুসলমান হয়ে যায় । এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসআব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে মদিনায় প্রেরণ করেন দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য এবং মদীনাবাসীদের কে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য । এক পর্যায়ে মদিনাতে মুসলমানদের শক্তিশালী একটা দল তৈরি হয়। অন্যদিকে মক্কায় ইসলামের বিপক্ষে কাফেরদের নির্যাতন ও কঠোরতা আরো বেড়ে যায়। তখন একপর্যায়ে আল্লাহর নির্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের পর মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেন ।এর পর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ মাধ্যমে দ্বীনকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জীবদ্দশায় অনেক জিহাদ পরিচালনা করেন যার কোনোটিতে তিনি স্বশরীরে শরীক থাকেন, আর কোনোটিতে নিজে বাহিনী প্রেরণ করেন। এমনিভাবে তিনি আমৃত্যু জিহাদের মাধ্যমে দ্বীন ইসলামকে ছড়াতে থাকেন এবং আল্লাহর জমিনে তা প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন । তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর সাহাবীগণও জিহাদের মাধ্যমেই পূর্ব-পশ্চিমে দ্বীনকে ছড়িয়ে দেন।
এর পরবর্তীতে উম্মতের সাহসী বীরেরা এই জিহাদের মাধ্যমেই দ্বীনকে পৃথিবীর বিশাল এক অংশে ছড়িয়ে দেন। হিন্দুস্তান, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিশাল অংশ ইসলামের ছায়াতলে আসে। এরপর মুসলিমরা গৌরবের সাথে বিশ্ব শাসন করতে থাকেন । সর্বশেষ ১৯২৩-২৪ সাল পর্যন্ত তেরশ বছর মুসলিমরা নিজেদের আধিপত্য কায়েম রাখেন। আস্তে আস্তে দীর্ঘদিনের অলসতা, দ্বীনবিমুখতা ইত্যাদির কারণে মুসলমানদের খেলাফতের বিলুপ্তি ঘটে । এর পরের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। মুসলমানদের খেলাফত না থাকার কারণে ১৯২৪ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মুসলিম কাফেরদের হাতে শহীদ হয় ।
এমতাবস্থায় একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে ইসলাম আমাদের নিকট কি চায়? আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এখন আমাদের কি দায়িত্ব? আজ প্রতিদিন সারা বিশ্বে কত কত মুসলিম নিহত হচ্ছে , নির্যাতিত হচ্ছে, নিজ দেশ থেকে বহিস্কৃত হচ্ছে , দরিদ্র ও লাঞ্ছনার জীবন অতিবাহিত করছে এর কি কোন হিসাব আছে? তাদের জান মালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সাধারণ মুসলিমদের মাঝে ফাহেশা ও নোংরামির প্রসার ঘটানো হচ্ছে।
এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি কি করতেন? তিনি কি মুসলিম উম্মাহর জন্য ব্যথিত হতেন না? তাদের পাশে দাঁড়াতেন না? এমতবস্থায় আমাদের উপর কি জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করা ফরজ নয় ? আল্লাহ তা'আলা বলেন:
وَمَا لَكُمۡ لَا تُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلۡمُسۡتَضۡعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلۡوِلۡدَٰنِ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةِ ٱلظَّالِمِ أَهۡلُهَا وَٱجۡعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيّٗا وَٱجۡعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا
আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (সূরা নিসা, আয়াত ৭৫)
বর্তমানে আমাদের উপর একাধিক কারণে জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেছে । সেগুলো হলো– মুসলিম ভূমিগুলোতে কাফেরদের আগ্রাসন, বিভিন্ন মুসলিম দেশের শাসকদের মুরতাদ হয়ে যাওয়া ও প্রকাশ্যভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে, জিহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, অসংখ্য মুসলমান বন্দি অবস্থায় থাকা ইত্যাদি । ফিকহের কিতাবে আছে– চার কারনে জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায় :
১.কাফেরদের মুসলিম ভূমিতে আক্রমণ করা।
২. ইমাম যখন নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে জিহাদে বের হতে বলেন ।
৩.যখন মুসলিম ও কাফের বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়।
৪.যখন কাফেররা একদল মুসলিমকে বন্দি করে নিয়ে যায়।
ভাই, আমরা সবাই আল্লাহ তা'আলার বান্দা। আমরা তো চাই যে, দয়াময় আল্লাহ তা'আলা আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং চিরস্থায়ী জীবনে আমাদেরকে সৌভাগ্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন । আর এই সৌভাগ্যের সর্বোচ্চ চূড়া হলো জিহাদ। তাহলে জিহাদের মাধ্যমে মহা সৌভাগ্য অর্জনে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? অথচ আমাদের পূর্বসূরী কত মানুষ এই পথে নিজেদেরকে সপে দিয়ে মহা সৌভাগ্য অর্জন করেছেন । প্রিয় দ্বীনী ভাই, আল্লাহ তায়ালার কোরআনের সম্পূর্ণ অংশের উপর আমল করার জন্য কি আমরা আদিষ্ট নই? আমরা যদি কোরআনের কিছু অংশ কে ছেড়ে দেই তাহলে কি আর জন্য আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না ? আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে না? কোরআনে জিহাদ সম্পর্কে যতবেশী আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে অন্য কোন বিষয়ে এত অধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে কি?
আল্লাহ তাআলা কি কুরআনে বলেন নি যে –
وَقَٰتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةٞ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ كُلُّهُۥ لِلَّهِۚ فَإِنِ ٱنتَهَوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। (সূরা আনফাল ,আয়াত ৩৯)
এখন ফিতনা কি নির্মূল হয়ে গিয়েছে ? সব জায়গায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা হয়েছে গিয়েছে?
আমাদের মহান রব কোরআন মাজীদে কি বলেন নি –
كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡـٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡـٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ
তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। (সূরা বাকারা, আয়াত ২১৬)
তিনি কি এই বলে আমাদের উৎসাহিত করেন নি যে–
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ. تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ.
মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। (সূরা সফ ,আয়াত ১০-১১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জিহাদের ব্যাপারে বলেন নি যে–
عن أبي زرعة بن عمرو بن جرير، قال سمعت أبا هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال " انتدب الله لمن خرج في سبيله لا يخرجه إلا إيمان بي وتصديق برسلي أن أرجعه بما نال من أجر أو غنيمة، أو أدخله الجنة، ولولا أن أشق على أمتي ما قعدت خلف سرية، ولوددت أني أقتل في سبيل الله ثم أحيا، ثم أقتل ثم أحيا، ثم أقتل
আবূ যুর‘আহ ইব্*নু ‘আম্*র ইব্*নু জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, যদি সে শুধু আল্লাহর উপর ঈমান এবং তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমানের কারণে বের হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা দেন যে, আমি তাকে তার পুণ্য বা গানীমাত (ও বাহন) সহ ঘরে ফিরিয়ে আনব কিংবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।
আর আমার উম্মতের উপর কষ্টদায়ক হবে বলে যদি মনে না করতাম তবে কোন সেনাদলের সঙ্গে না গিয়ে বসে থাকতাম না। আমি অবশ্যই এটা ভালবাসি যে, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬)
তিনি আরো বলেন যে:
عن المقدام بن معديكرب، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " للشهيد عند الله ست خصال يغفر له في أول دفعة ويرى مقعده من الجنة ويجار من عذاب القبر ويأمن من الفزع الأكبر ويوضع على رأسه تاج الوقار الياقوتة منها خير من الدنيا وما فيها ويزوج اثنتين وسبعين زوجة من الحور العين ويشفع في سبعين من أقاربه " . قال أبو عيسى هذا حديث صحيح غريب .
মিকদাব ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ছয়টি পুরস্কার বা সুযোগ আছে। তাঁর প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সাথে সাথে তাঁকে ক্ষমা করা হয়, তাঁকে তাঁর জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়, কবরের আযাব হতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, সে কঠিন ভীতি হতে নিরাপদ থাকবে, তাঁর মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর এক একটি পাথর দুনিয়া ও তাঁর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। তার সাথে টানা টানা আয়তলোচনা বাহাত্তরজন জান্নাতী হূরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর সত্তরজন নিকটাত্মীয়ের জন্য তাঁর সুপারিশ ক্ববূল করা হবে। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৬৩)
তিনি আরো বলেন যে–
عن أبي هريرة ـ رضى الله عنه ـ حدثه قال جاء رجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال دلني على عمل يعدل الجهاد. قال " لا أجده ـ قال ـ هل تستطيع إذا خرج المجاهد أن تدخل مسجدك فتقوم ولا تفتر وتصوم ولا تفطر ". قال ومن يستطيع ذلك قال أبو هريرة إن فرس المجاهد ليستن في طوله فيكتب له حسنات.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (অতঃপর বললেন,) তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ‘ইবাদত করবে এবং আলস্য করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। ব্যক্তিটি বলল, এটা কে পারবে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘মুজাহিদের ঘোড়া রশির দৈর্ঘ্য পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে, এতেও তার জন্য নেকী লেখা হয়।’(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৮৫)
তিনি আরো বলেন যে–
عن أنس بن مالك ـ رضى الله عنه ـ عن النبي صلى الله عليه وسلم قال " لغدوة في سبيل الله أو روحة خير من الدنيا وما فيها ".
আনাস ইব্*নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্*র রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৯২)
আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুদ্ধা নবী ছিলেন না? তিনি কি বলেন নি যে–
عن حذيفة ، قال : لقيت النبي صلى الله عليه وسلم , في بعض طرق المدينة , فقال : " أنا محمد ، وأنا أحمد ، وأنا نبي الرحمة ، ونبي التوبة ، وأنا المقفى ، وأنا الحاشر ، ونبي الملاحم " .
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, একবার মদিনার কোন এক রাস্তায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, আমি মুহাম্মদ, আমি আহমাদ, আমি নবীউর রহমত (রহমতের নবী) আমি নবীউত তাওবা (তাওবার নবী), আমি মুকাফফী (পরে আগমনকারী), আমি হাশির (একত্রকারী), আমি মালাহিমের নবী (জিহাদকারী)। (শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ২৮৩)
তিনি আরো বলেছেন যে–
عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى اللٰه عليه وسلم بعثت بالسيف حتى يعبد الله لا شريك له وجعل رزقي تحت ظل رمحي وجعل الذلة والصغار على من خالف أمري ومن تشبه بقوم فهو منهم
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি (কিয়ামতের পূর্বে) তরবারি-সহ প্রেরিত হয়েছি, যাতে শরীকবিহীনভাবে আল্লাহর ইবাদত হয়। আমার জীবিকা রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। অপমান ও লাঞ্ছনা রাখা হয়েছে আমার আদেশের বিরোধীদের জন্য। আর যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।” (আহমাদ ৫১১৪-৫১১৫, ৫৬৬৭, শুআবুল ঈমান ৯৮)
জিহাদকে শিখর(চূড়া) ঘোষণা করে তিনি বলেছেন–
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم:" ألا أخبرك برأس الأمر كله وعموده وذروة سنامه " . قلت بلى يا رسول الله . قال " رأس الأمر الإسلام وعموده الصلاة وذروة سنامه الجهاد "
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি কি সমস্ত কাজের মূল, স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ সকল কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামায এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জিহাদ। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৬১৬)
সমস্ত সাহাবা কি ব্যাপকভাবে সবাই মুজাহিদ ছিলেন না ? আমরা কি এমন কোন সাহাবীর নাম বলতে পারব যিনি মুজাহিদ ছিলেন না? তাঁদের মধ্যে ফকীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির এর সংখ্যা ছিলো অনেক সীমিত।
আসলে আমরা যতই শান্তিপ্রিয় হই না কেন, যুদ্ধ-কিতাল চলতে থাকা হলো পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম। আল্লাহ তায়ালা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকেই এরূপ করে সৃষ্টি করেছেন যা অস্বীকার করা অসম্ভব। কিছু লোক যতই শান্তির বুলি আওড়াক, প্রতিপক্ষ কিন্তু যুদ্ধ-কিতাল চালিয়েই যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَوۡلَا دَفۡعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعۡضَهُم بِبَعۡضٖ لَّفَسَدَتِ ٱلۡأَرۡضُ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ ذُو فَضۡلٍ عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ
আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়। (সূরা বাকরা,আয়াত ২৫১)
তিনি আরো বলেন:
وَلَا يَزَالُونَ يُقَٰتِلُونَكُمۡ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمۡ عَن دِينِكُمۡ إِنِ ٱسۡتَطَٰعُواْۚ
বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। (সূরা বাকারা , আয়াত ২১৭)
সব বাস্তবতা পরিষ্কার হওয়া সত্ত্বেও জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকার শাস্তি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও যন্ত্রণাদায়ক। পিছনে থাকা লোকদেরকে তিরস্কার করে আল্লাহ কোরআন মাজীদে বলেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَا لَكُمۡ إِذَا قِيلَ لَكُمُ ٱنفِرُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱثَّاقَلۡتُمۡ إِلَى ٱلۡأَرۡضِۚ أَرَضِيتُم بِٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا مِنَ ٱلۡأٓخِرَةِۚ فَمَا مَتَٰعُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। (সূরা তাওবা , আয়াত ৩৮)
জিহাদ থেকে পিছনে থেকে সন্তুষ্ট থাকা হলো মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা কুরআনে মুনাফিকদের ব্যাপারে বলেন:
رَضُواْ بِأَن يَكُونُواْ مَعَ ٱلۡخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَفۡقَهُونَ
তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর। ফলে তারা বোঝে না। (সূরা তাওবা ,আয়াত ৮৭)
প্রিয় ভাই, আমরা ভেবে দেখি– আমাদের জানায় বা অজান্তে আমাদের মাঝে কোন নিফাক থেকে যাচ্ছে না তো? তাই ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় আমরা এ থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবো না? একবার মৃত্যু বরণ করলে আর কোন সময় কি নিজেকে সংশোধন করার সুযোগ পাবো?
আমাদের কি মনে আছে যে তাবুকের যুদ্ধে পেছন থেকে যাওয়ার কারণে তিনজন সাহাবীর কী শাস্তি হয়েছিল? নিজেদের প্রাণপ্রিয় নবী তাদের সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাদেরকে বয়কট করা হয়েছিল। এর কারণ ছিল যে তখন জিহাদ ফরজে আইন ছিল। মদীনা থেকে আটশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাবূক প্রান্তরে কাফেররা মদিনা আক্রমণের জন্য সৈন্য জমায়েত করেছিল। মদিনা তখনও নিরাপদ ছিল। তাহলে বর্তমানে তো আমাদের প্রতিটা ভূখণ্ডে কাফেররা আগ্রাসন চালিয়ে জান-মাল ধ্বংস করছে। তবুও কি আমাদের উপর জিহাদ ফরজ হবে না? এমনিভাবে এছাড়াও বর্তমানে আমাদের উপর একাধিক কারণ জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেছে। এখন আমরা যদি অলসতা করে জিহাদ থেকে পিছনে থাকি তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেঁচে থাকলে আমাদের সাথে কিরূপ আচরণ করতেন , এটা কি আমরা ভেবে দেখি? আমরা কি শয়তানের ধোঁকা ও প্ররোচনার বেড়াজাল ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলার দিকে এগিয়ে আসব না? আমার কি শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে আমাদের চিরস্থায়ী জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করবো? আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
এখন প্রশ্ন হতে পারে , রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম যখন জিহাদ করেছেন তখন ইসলামী রাষ্ট্র ছিল, এখন তো কোন ইসলামী রাষ্ট্র নেই, সুতরাং আমরা কিভাবে জিহাদ করবো? এছাড়া আমাদের জিহাদ করার মত সক্ষমতা নেই । আবার আমাদের বড়রা তো এ ব্যাপারে কিছু করছেন না বা করছেন না।
আসলে এর একটা উত্তর হলো – আল্লাহ তাআলার সাথে সততা ও আন্তরিকতা দাবি হলো যে – আমরা তো এরূপ প্রশ্নই করব না। বরং আমাদের উচিত তো ছিলো যে, আমরা বেশি বেশি এই চেষ্টা করব যে , কীভাবে এই মোবারক কাজ যথাযথ ভাবে আঞ্জাম দিতে পারব , আরো কীভাবে বেশি পরিমাণে আল্লাহ তাআলার দিকে এগিয়ে যেতে পারব ,সম্ভাব্য সকল পন্থায় কীভাবে আমরা জিহাদের কত মহান ফরজ ইবাদতকে বাস্তবায়ন করতে পারব।
শরীয়ার ভাষ্য হল- জিহাদ দুই প্রকার : ১.প্রতিরোধমূলক জিহাদ ও ২.আক্রমণাত্মক জিহাদ। কিছু ইমামের মতে ইসলামী রাষ্ট্র থাকা, শাসকের অনুমতি হওয়া এগুলো আক্রমনাত্মক জিহাদের জন্য শর্ত। আর প্রতিরোধমূলক জিহাদের জন্য ইসলামী রাষ্ট্র থাকা শর্ত নয়।
ভাই, একটা বিষয় ভেবে দেখি। কারো ঘরে যদি দুষ্টু লোকেরা এসে লুটপাট করতে থাকে অথবা মহিলাদের সাথে খারাপ কাজ করতে চায়, তাহলে কি সে একটা চিন্তা করবে যে, আমি তো কোন ইসলামী রাষ্ট্রে বাস করি না?! তাই আমাকে দুষ্টু লোকদের বাঁধা দিতে হবে না!! নাকি সর্বশক্তি দিয়ে তাকে প্রতিরোধ করবে?
আজ বিশ্বব্যাপী কাফেররা মুসলিমদের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু ঈমান ছিনিয়ে নিতে মুসলিমদের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। সুতরাং এখন আমরা কি এটা দেখব যে, আমরা ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করি না?! না, আল্লাহর কসম কখনও নয় । হাদিসে তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যদি কোন মুসলিমও অন্য মুসলিমের জান মালের উপর আক্রমণ করে তাহলে তার সাথে কিতাল করা বৈধ। তাহলে কাফেররা যদি আমাদের ঈমানের (যা জান মালের চেয়ে দামী) উপর আক্রমণ করে তাহলে আমরা কি ইসলামী রাষ্ট্রের শর্ত নিয়ে বসে থাকবো?
আরেকটি বিষয় হলো– কাফেররা যখন কোন মুসলিম ভূমিতে আগ্রাসন চালায় তখন সর্বপ্রথম সেই ভূখণ্ডের মুসলিমদের উপর জিহাদ করা ফরজে আইন হয়ে যায় ।তারা অক্ষম হলে বা অলসতার কারণে শত্রুদের মোকাবেলায় অক্ষম হলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে ক্রমান্বয়ে ফরয হওয়াটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায় ,যেমনটা ফতওয়ায়ে শামী তে আছে । বর্তমানে সিরিয়া, কাশ্মীর ,আরাকান, পূর্ব তুর্কিস্তান ইত্যাদি ভূখণ্ডে অক্ষমতার কারণে মুসলিমদের শত্রুদের পরিপূর্ণভাবে মোকাবেলা না করতে পারা কারো কাছে অবিদিত নয় ।
আর আমরা অক্ষমতার যে ওজর পেশ করে থাকি এটা সঠিক নয়। আমরা যদি এখলাস ও আন্তরিকতার সাথে জিহাদের পথে এগিয়ে আসি , তাহলে আমরা দেখতে পাব – অবশ্যই কাফেরদের মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে সবার পক্ষে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করা সবার জন্য সম্ভব না হলেও জিহাদের জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করাও কি অসম্ভব? বর্তমানে জিহাদের ক্ষেত্রে এমন অনেক কাজ আছে যা আমাদের দ্বারা করা সম্ভব, জিহাদের কাজে এগিয়ে আসলে যা আমরা বুঝতে পারবো
ইনশাআল্লাহ। আর আল্লাহ এমন কোন কাজের নির্দেশ দেন না যা করতে বান্দা সক্ষম নয়। যেহেতু জিহাদের নির্দেশ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে তাই সক্ষমতাও কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
ভাই, আমরা আন্তরিকতার সাথে বলি তো, আমরা কি সত্যিই কি এই কাজগুলো করতে অক্ষম? আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করার ,জিহাদ করারব কোন শক্তিই কি আমাদের নেই? নাকি দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুর ভয়ের কারণে আমরা নিজেদের ধোঁকা দিয়ে চিরস্থায়ী কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি?
পরিশেষে আল্লাহ তায়ালার প্রতি আন্তরিক বিনয়াবত মুসলিম ভাইদেরকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে বলব –প্রিয় ভাই, আপনারা এই সফলতার পথে এগিয়ে আসুন। মহান রবের প্রশস্ত রহমতের ছায়ায় প্রবেশ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা কে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করুন । শয়তানের মুখে কাঁদা ছিটিয়ে কাফেরদের রাঙানো চোখ কে তুচ্ছজ্ঞান করে এই মহা সফলতার পথে এগিয়ে আসুন। আমাদের দুনিয়াতে জীবন তো একটাই। যদি এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে এই মহা সফলতা লাভ না করে পরকালে চলে যাই তাহলে পরে তা আর লাভ করার সুযোগ থাকবে না।
হে আল্লাহ তায়ালার প্রতি আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান ভাইয়েরা, আমরা তো আল্লাহ তায়ালার জন্য নিজেদের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করেছি, দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করেছি।আমরা কি আমাদের প্রভুর সর্বাধিক পছন্দের কাজে শরীক হবো না?
আমি আল্লাহ তা'আলার জন্য আপনাদেরকে ভালোবাসি এবং আপনাদের কল্যাণকামী। তাই আসুন ভাই দুনিয়ার জীবন ফুরিয়ে যাবার আগেই আমরা সফলদের সাথে শরিক হয়ে নিজেদেরকে সফলতার পথে পরিচালিত করি। আপনাদের প্রতি উদাত্ত আহবান থাকবে আল্লাহ তাআলার নিকট আমাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন যাতে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্টার কাজ করার তৌফিক দান করেন।
-সংগৃহীত-