লেখাটি আমাদের প্রিয় দ্বীনি ভাই বহু কষ্ট এবং শ্রমের বিনিময়ে তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের মাঝে অল্প অল্প করে লিখেছিলেন। তার অনুরোধ ছিল লেখাটি যেন আমি নোট আকারে প্রকাশ করি। এবং পরবর্তীতে সকল দ্বীনি ভাইকে পৌছানোর জন্য পিডিএফ আকারে কোন সাইটে পোষ্ট করি। আপাতত আমি নোট আকারে প্রকাশ করলাম। লেখাটি যেহেতু তথ্য বহুল এবং সকলের জানা প্রয়োজন সেহেতু আপনারা সকলে লেখাটি প্রচার করবেন আশা করছি। ------------ (Destination Aqis)
=== === === === === === === === === === === === === === === === === === === === ===
بسم الله الرحمان الرحيم
.
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর,যিনি জিহাদকে গৈরবের বস্তু বানিয়েছেন ৷এবং দোওয়া ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূল সঃ এর উপর, যিনি "শাম"কে মুসলমানদের শেষ আশ্রয়স্থল ঘোষণা করেছেন ৷
.
জিহাদ আল্লাহ তা'লার একটি ফরজ বিধান ৷ যেমন নামাজ,রোযা,হজ্ব,যাকাত আল্লাহর ফরজ বিধান ৷ জিহাদ প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ ৷আল্লাহ বলেন: ""নিশ্চই আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন ৷ তাদের কাজ হলো (তারা) আল্লাহর পথে লড়াই করবে ৷ তারা (শত্রুদের উপর) হত্যাজজ্ঞ চালাবে, এবং (প্রয়োযনে) নিজেরাও নিহত হবে ৷ আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি তাওরাতেও ছিলো, ইন্জিলেও ছিলো, এবং কোরানেও আছে ৷ আর আল্লাহর চেয়ে উত্তম ওয়াদা রক্ষাকারী কে আছে ..!! অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে যে ক্রয়-বিক্রয় করেছ সে ব্যাপারে সুসংবাদ গ্রহণ করো (নিশ্চিন্ত থাকো)৷ এটাই মহা বিজয় ""(সূরা তাওবাহ-111)
.
ইমাম জুহুরী বলেন: ""ব্যক্তির যোগ্যতার ভিন্নতার কারণে এই ফরজ বিধানেও ভিন্নতা ঘটে ৷ শারিরীক ও আর্থিক ভাবে সক্ষম,শর'য়ী গ্রহণযোগ্য কোন পিছুটান নেই, এমন মুসলিমের উপর নিপ্রিত মুসলিম জনপদের সাহায্যে অস্ত্রহাতে বেরিয়ে পড়া ফরজ ৷ যার শুধু আর্থিক সক্ষমতা আছে, মুজাহিদীনের উপর খরচ করা তার জন্য ফরজ ৷ যার লেখালেখির যোগ্যতা আছে, জিহাদের ফাজায়েল উপকারিতা ও প্রয়োজনিয়তা নিয়ে লেখালেখি করা তার উপর ফরজ ৷ নিপ্রিত মুসলিম জনপদের আর্তনাদ, সক্ষম মুসলিমদের নিকট পৌঁছে দেয়া তার দায়ীত্ব""৷ এমূলনীতির উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আমরা যারা অনলাইনে জিহাদের খবরাখবর রাখি, পড়ি ও লিখি, তারাও জিহাদের ময়দানে আছি ৷ যদিও আমরা শিশু পর্যায়ের ৷
.
একজন মুজাহীদকে অস্ত্রচালনা শিখার পূর্বে জিহাদের মাসলা-মাসায়েল শিখা জরুরী ৷গণিমত বণ্টন, রিদ্দাত,আমীরের আনুগত্যের আবশ্যিকতা ইত্যাদী মাসলা-মাসায়েল জানা ফরজ ৷ কারণ ধর্মীও জ্ঞানহীন একজন মুজাহীদ আর একজন ডাকাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ৷ স্বসস্ত্র ডাকাত জানে না কাকে হত্যা করতে হবে ৷ সে যাকে ইচ্ছা হত্যা করে দিবে ৷ তেমনি ধর্মীও জ্ঞানহীন মুজাহীদ জানে না কাকে হত্যা করতে হবে ৷ সে যাকে ইচ্ছা হত্যা করে দিবে ৷ তাকফীর করে ফেতনা সৃষ্টি করবে ৷
.
জিহাদের এই ব্যবসা (আল্লাহ ও বান্দার মাধ্যে) যেমন লাভ জনক, তেমনি ঝুঁকিপূর্নও ৷ এই পথ বিপদ সংকুল ৷ পদে পদে ফিতনার ঝুঁকি ৷ এই পথে চলতে প্রয়োজন কোরান-হাদীসের পর্যাপ্ত জ্ঞান ৷ প্রয়োজন ইতিহাসের জ্ঞান ৷ যে জাতি ইতিহাস ভুলে যায় সে জাতি থেকে সুন্দর ভবিষ্যত আশা করা যায় না ৷ অনুরূপ যে মুজাহীদ সঠিক ইতিহাস জানে না ৷ এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না ৷ সে কখনই জিহাদের ফসল ঘড়ে তুলতে পারবে না ৷
.
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ফিতনাপূর্ন জিহাদের ভূমি হলো "শাম"৷ রাসূল সঃ অসংখ্য হাদীসে শামের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন ৷ এবং তিঁনি শামকে মুসলিমদের শেষ আশ্রয়স্থল ঘোষণা করে ছেন ৷ তাই শামের জিহাদের ইতিহাস জানা আমাদের ঈমানী দায়ীত্ব ৷ আগামী পর্ব থেকে আমরা ধারাবাহীক শামের জিহাদ নিয়ে পর্যালোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ ৷
শামে চলমান জিহাদের ইতিহাস জানতে হলে প্রথমে ইরাকের ইতিহাস জানতে হবে ৷ আর ইরাক জিহাদ যারা সৃষ্টি করে ছিলেন তারা হলেন জিহাদের পূণ্য ভূমী আফগানের আধ্যাতীক সন্তান ৷ আফগানস্থানের রয়েছে হাজার বছরের জিহাদী ইতিহাস ৷সেই ইতিহাস টেনে এখানে স্থুপ করা আমার উদ্দেশ্য নয় ৷
.
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে উসমানী খেলাফত ধ্বংস হলেও, মূলত ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আমরা মুসলিমরা পরাজিত শক্তি ৷ প্রায় তিন শত বছর ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে আমাদের উল্লেখযোগ্য কোন বিজয় অর্জন হয়নি ৷ ফ্রান্স,ব্রিটেন,জার্মান ইত্যাদী সাম্রাজ্যবাদী গুষ্ঠিগুলো গোটা আরব বিশ্বকে ভাগাভাগি করে খাচ্ছিলো ৷ তখন আরব বিশ্ব থেকে ইসলাম অনেকটা বিতারিত হয়ে ভারতবর্ষে আশ্রয় নেয় ৷
.
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান তালেবানদের বিজয় ছিলো বদর যুদ্ধের মত ঐতিহাসীক ঘটনা ৷ তিনশত বছর ধরে পরাজিত,ক্ষয় প্রাপ্ত মুসলিম জাতির গলায় বিজয়ের মালা পড়িয়ে তালেবান হয়ে ওঠে বিশ্বমুসলিমের একমাত্র আশার আলো ৷ রাসূল সঃ এর ইন্তেকালের পর বদরী সাহাবীদের যেমন সকলে সম্মান করতো ৷ তেমনি আফগান যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মুজাহিদীনকে বর্তমানে জিহাদের ময়দানে সম্মান করা হয় ৷ তাদের সিদ্ধান্তকে শীরধার্য মনে করা হয় (এ কথাটি মনে রাখবেন সামনে প্রয়োজন হবে)৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আল্লাহর প্রিও বান্দারা আফগানে মিলিত হতে থাকে ৷ আফগানকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে মুসলিম উম্মাহ ৷
.
আরব থেকে আফগান জিহাদে আসা হাজার হাজার মুহাজিরীনের ভিড়ে এক যুবক ছিলো, যার নাম আহমাদ ফাদেল ৷ অদ্ভূত ভাবগাম্বীর্যের ছাপ তার চেহাড়ায় ৷ জর্ডানের যারক্বাও শহরে তার বাড়ি ৷ তিনি ফিজিক্স ও কেমেস্ট্রির ছাত্র ৷ তার নিজ হাতে তৈরী বোমা মুজাহিদীনকে অনেক বিজয় এনে দিয়ে ছিলো ৷ ১৯৮৯ সালে তিনি আফগানে হিজরত করেন ৷ রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিনি প্রায় পাঁচমাস যুদ্ধ করার সুযোগ পান ৷ আফগানিস্তানে তিনি আল-কায়দার ক্যম্পে সামরিক প্রশিক্ষখ হিসে কাজ করেন ৷
.
১৯৯৪ সালে আহমদ ফাদেল জর্ডানে ফিরে যান ৷জর্ডান সরকার তাকে গ্রেফতার করেন ৷ নাশকতার অভিযোগ এনে তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় ৷ বন্ধী জীবনে তিনি আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসীর সান্যিদ্ধ লাভ করেন ৷ ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদী কার্যক্রমের অভিযোগ এনে শাইখ মাকদিসীকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়ে ছিলো ৷ মাকদিসী এখনও জর্ডান জেলে বন্ধী ৷
.
১৯৯৯ সালে জর্ডানের নতুন সরকার সকল কয়দীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেন ৷ তখন আহমদ ফাদেল জেল থেকে মুক্তি পান ৷ পুনরায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হলে তিনি আফগানে চলে আসেন ৷ তিনি শাইখ উসামার সান্যিদ্ধ লাভ করেন ৷আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি এক পা হারান ৷ কৃত্রিম পা দিয়েই তিনি চলতেন ৷ ৯/১১-এর পর যখন আমেরিকা তোরাবোরা পর্বত মালায় আল-কায়দাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে,তখন তিনি গিরীপথ ধরে ইরানে চলে আসেন ৷ ইরান থেকে লেবানন হয়ে পরে ইরাকে প্রবেশ করেন ৷
.
২০০৩ সালে আহমাদ ফাদেল ইরাকে একটি নতুন গ্রুপ তৈরি করেন ৷ "জামা'আতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদ" নামে এই দলটি ইরাকে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে ৷ আহমাদ ফাদেল নতুন উপাদী গ্রহন করে ৷ আবু মুসআ'ব আজ-জারকায়ী এই নামে তিনি প্রশিদ্ধি লাভকরেন ৷ ২০০৪ সালে জারকায়ী এক আমেরিকান জিম্মীকে জবাই করে হত্যা করেন ৷অনলাইনে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেন ৷আমেরিকান সৈন্যরা ভিডিও দেখে হ্রদরোগে আক্রান্ত হয় ৷ অনেকে আত্মহত্যা করে ৷
.
২০০৬ সাল,শাইখ জারকায়ী উসামা বিন লাদেনকে বায়াত দিয়ে ছিলেন ২০০৪ রে ৷ ফলে "জামাআতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদ" আল্-কায়দার অঙ্গসংঘটন হয়ে যায় ৷ ইরাকে একাধিক জিহাদী গ্রুপ ছিলো ৷ আল-কায়দা ছিলো তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ৷ মুজাহিদীনের মাঝে ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আল-কায়দা সকল জামাতের অংশ গ্রহণে একটি ঐক্য পরিষদ ঘঠন করে ৷ মাজলিসে শুরা আল-মুজাহিদীন নামে এই ঐক্য পরিষদের অধিনে জিহাদী গ্রুপগুলো কাজ করতে থাকে ৷ প্রতিটি গ্রুপ তাদের ব্যক্তিগত কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ৷ মাজলিসু শুরা আল-মুজাহিদীন নামের অধিনে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করে ৷ এই পরিষদের প্রধান ছিলেন আবু মুস'আব আজ-জারকায়ী ৷ শাইখ উসামার নির্দেশেই ইরাকে এতো বড়ো ঐক্য তৈরি হয় ৷
.
মাজলিসু শুরা আল-মুজাহিদীন এর অন্তরভূক্ত জিহাদী গ্রুপগুলোন তালিকা ৷
১: জামাআতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদ ৷
২: জাইশু তায়েফায়ে মানসুরা ৷
৩: সারিয়া আনসার আত-তাওয়হীদ ৷
৪: সারিয়াল জিহাদ আল-ইসলামিয়া ৷
৫: সারিয়া আল-গুরাবা ৷
৬: কাতাইবু আহওয়াল ৷
৭: জাইশু আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ৷
৮: কাতাইবু আল-মুরাবিতীন ৷
৯: কাতাইবু আল-আনবার ৷
.
একটি ভুল সংশোধন ৷ আমি আইএস সমর্থকদের একথা দাবি করতে দেখেছি যে, তারা বলে: শাইখ বাগদাদী আল-কায়দাকে কেন বাই'আত দিবেন ..? অথচ বাগদাদীর নিজস্য একটি জিহাদী গ্রুপ আছে ৷ বাগদাদী নিজ পকেটের টাকা দিয়ে সেই গ্রুপটি চালান ৷ গ্রুপটির নাম হলো "জামাআতে তাওয়াহীদ ওয়াল জিহাদ " ৷
.
উপরে আইএস সমর্থকদের এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানওয়াট, গাজাখুরী ৷ কারণ আপনারা জানেন যে "জামাতে তাওয়হীদ ওয়াল জিহাদের" প্রতিষ্ঠাতা সয়ং আবু মুসআব আজ-জারকায়ী ৷ এবং তিনি উসামা রঃ কে বায়াত দেয়ার কারনেই "জামাতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদ" আল-কায়দা ইন ইরাক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ৷ সুতরাং বাগদাদী কে "জামাতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা বলা মিথ্যাবাদীদের পক্ষেই সম্ভব ৷ সেই সময় বাগদাদী "জাইশু আহলি আস-সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ" এর শুরা সদস্য ছিলো ৷ কিন্তু আফসোস, আমাদের দেশীও আইএস সমর্থকরা নিজেদের শ্রেষ্ঠেত্ব প্রমাণ করার জন্য যতসব মিথ্যার জন্ম দেয় ৷
.
২০০৬ সালের ৮ জুন আমেরিকার বিমান হামলায় শাইখ আবু মুসআব আজ-জারকায়ী শহীদ হন ৷ শাহাদাতের পর তার লাশকে আমেরিকানরা অনেক অপমান করে ৷ শাইখের ছবি টাইলসের উপর ফিট করে আমেরিকার সদর দফতরের সিড়িতে সেই টাইলস ব্যবহার করা হয় ৷ শাইখের খণ্ড-বিখণ্ড লাশের ছবি শহরের বিভিন্ন বিলবোর্ডে ঝুলিয়ে রাখা হয় ৷ আল্লাহ শাইখকে শহীদ হিসেবে কবুল করুক ৷
৮/৬/২০০৬ ইং,সন্ধায় ইরাকের বাকুবা শরহে মার্কিন বিমাণ হামলায় শাইখ আবু মুসআ'ব আজ-জারকায়ী শহীদ হন ৷ স্মৃতি হিসেবে রেখে যান একটি শক্তিশালী মুজাহীদ গ্রুপ ৷ শত্রুর ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুব কঠর ৷ বিধর্মীদের ধর্মীও উপাসনালয়ে হামলা করা তিনি বৈধ মনে করতেন ৷ শাইখ জারকায়ীর কঠরতা নিয়ন্ত্রনে রাখতে উসামা বিন লাদেন রহঃ ঘন ঘন দিকনির্দেশনা দিতেন ৷ জারকায়ীর শাহাদাতের পর এই কঠরতার মাত্রা কঠিন থেকে কঠিনতর বৃদ্ধি পায় ৷
.
শাইখ জারকায়ীর শাহাদাতের পর, মাজলিশু শুরা আল-মুজাহিদীন বা আল-কায়দা ইন ইরাক নেতৃত্ব শূণ্য হয়েপরে ৷ "জাইশু তাইফায়ে মানসুরা"-এর এক সময়ের প্রধান, শাইখ আবু ওমার আল-বাগদাদীকে কায়দা ইন ইরাকের আমীর নির্ধারন করা হয় ৷ এবং আবু হামজা আল-মুহাজির কে কায়দা ইন ইরাকের সামরিক প্রধান হিসে নির্বাচন করা হয় ৷ ৷
.
শাইখ আবু হামজা এক সময় আইমান আলজাওয়াহিরীর সহযোগী ছিলেন ৷ আফগানে কায়দার আল-ফারুক সামরিক ক্যম্পে তিনি ছিলেন ৷ জিহাদের ময়দানে তিনি খোরাসানের মুজাহীদ হিসেবে সম্মানের পাত্র ছিলেন ৷ অপর দিকে আবু ওমর আল-বাগদাদী ইরাকের বাইরে পরিচিত কেও নন ৷ আফগান জিহাদেও তার কোন ভুমিকা নেই ৷ তাই আল-কায়দার প্রতি তার দায়বদ্ধতা অনেক কমছিলো ৷ যদিও তিনি আমির হওয়ার পর শাইখ উসামাকে বাই'আত দিয়ে ছিলেন ৷
.
দায়ীত্ব গ্রহণেন পর, তিনি পূর্বের চেয়ে আরো কঠিন যুদ্ধ-নীতি গ্রহণ করেন ৷ তিনি কায়দার কেন্দ্রীও দিকনির্দেশনার তোওক্যা করতেন না ৷ জাইশু শুরা আল-মুজাহিদীন বা কায়দা ইন ইরাক ধর্মীও উপাসনালয়ে হামলা করা জায়েয মনে করতো ৷ আহলুস সুন্নার মসজিদে হামলা করাকেও তারা জায়েয মনে করতো ৷ একজন শত্রুকে হত্যার জন্য প্রয়োজনে তিনশত নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা বৈধ মনে করতো ৷ আপনি ২০০৩-৯ এর পত্রিকাগুলো খুললেই দেখবেন শিয়াদের ধর্মীও স্থাপনা ও উৎসবে আত্মঘাঁতী হামলায় হাজার হাজার শিয়া মাড়া গেছে ৷ ইরাকে খ্রিষ্টান গির্জাতেও তারা হামলা চালাতো ৷ ঐ সকল হামলা হয়তো কোন রাজনৈতিক বা সামরিক কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করেই করা হতো ৷ কিন্তু হাজার হাজার নিরোহ মানুষ হত্যার বৈধতা তো ইসলামে নেই ৷
.
উপরের কথাগুলো থেকে কিছু ভাই আমাকে ভুল বুঝতে পারেন ৷ আমি শিয়াদের পক্ষপাতিত্ব করছি না ৷ বরং জায়েয এবং না জায়েয নিয়ে আলোচনা করছি ৷ যাতে পাঠক বুঝতে পারে যে, কিভাবে কায়দা ইন ইরাক তাকফির রোগে আক্রান্ত হলো ৷ রাসূল সঃ কখনো বিধর্মীদের উপাসনালয়ে আক্রমণ করেন নি ৷ খোলাফায়ে রাশেদীনও করেন নি ৷ সাহাবারাও করেন নি ৷ যুগে যুগে মুসলিম মণীষীরাও ধর্মীও উপাসনালয়ে হামলা করেন নি ৷ ইসলামী যুদ্ধনীতিতে আছে যে, শত্রু যদি যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যায়, তাকে পালানোর সুযোগ দেয়া ৷ পিছু ধাওয়া না করা (যদি সে শত্রুদের নেতা গোঁচের কেউ না হয়) ৷ তাহলে নিরোহ মানুষের উপর মসজিদে বোমাহামলা করা শরীয়ত কিভাবে সমর্থন করবে..!
.
আপনি একজন ভদ্রলোক ৷ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন ৷ পথে কুকুর আপনাকে কামড় দিলো ৷ আপনি কি পারবেন মানুষ হয়ে ঐ কুকুরটি কামড়াতে ..!! আমরা মুসলিম ৷ শত্রু আমাদের সাথে যতোই হিংস্র আচরণ করুক, আমরা তাদের সাথে তেমন করতে পারি না ৷ কারণ আমাদের আল্লাহ আছে ৷ আমাদের সামনে কোরান ও হাদীস আছে ৷ আমরা কিছুতেই তার অবাধ্য হতে পারি না ৷
.
১৩/১০/২০০৬ তারীখে আবু ওমার আলবাগদাদী "দাউলাতুল ইরাক" ঘোষণা করেন ৷ ফালুজা,আনবার,কিরকুক ইত্যাদী শহরগুলো নিয়ে দাউলা বা স্টেট ঘঠন করা হয় ৷ যেই শহরগুলো নিয়ে দাউলাতুল ইরাক গঠন করা হয়, সেই শহরগুলো কায়দা ইন ইরাকের পূর্ণ নিয়োন্ত্রন ছিলো না ৷ প্রাই ইরাকী সেনা বাহিনীকে সেখানে টহল দিতে দেখা যেতো ৷ আমেরিকান বাহিনী বিভিন্ন সময় সেখানে অভিযান চালাতো ৷ মূলতো "দাউলাতুল ইরাক" ঘোষণা দিলেও সেখানে নিজেদের একক নিয়োন্ত্রন ছিলো না ৷ আর একক নিয়োন্ত্রন প্রতিষ্ঠার আগে "দাউলা" ঘোষণা করা কায়দার কেন্দ্রীও নেতাদের আদর্শ ছিলো না ৷ আল-কায়দার সাথে কোন পূর্ব পরামর্শ ছাড়াই "দাউলা" ঘোষণা করা হয় ৷ ২০০৭ সালে উসামা বিন লাদেন রহঃ অডিও বার্তায় ইরাকের সকল জামাতকে আবু ওমার আলবাগদাদীকে বাই'আত দেয়ার আহ্বান জানান ৷ ভেদাবেদ ভুলে গিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ৷ উসামা রহঃ এর বার্তা প্রচারের পর, মাজলিশু শুরা আলমুজাহিদীন এর শুরা পরিষদ বাগদাদীকে বাই'আত প্রদান করে ৷ যারা তাকে আমির হিসেবে মানতে প্রস্তুত ছিলো না তারাও বাই'আত দেয় ৷ এতো কিছুর পরোও আলকায়দার ইরাক শাখার, আলকায়দার কেন্দ্রিও নেতাদের প্রতি আস্থা ছিলো না ৷ এবং তারা নিজেদের আলকায়দা পরিচয় দিতেও চাইতেন না ৷ এই অনাস্থার কারণ ছিলো উভয় জামাতের কর্মপন্থার ভিন্নতা ৷
.
কায়দা-আইএস উভয় জামাতের কর্মপন্থায় ভিন্নতা ৷ শাইখ আইমানকে আল-জাজিরার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনাদের এবং তাদের মাঝে পার্থক্যটা কী ? উত্তরে শাইখ আইমান বলেন, উভয়ের কর্মপন্থায় ভিন্নতা রয়েছে ৷ আক্রমণের ক্ষেত্রে কায়দাতুল জিহাদ সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করে ৷ মসজিদ,মার্কেট,উপাসনালয়,মিলনায়োতন এবং সমাগম স্থলে কায়দাতুল জিহাদ কখনোই আক্রমণ করে না ৷ নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষায় কায়দাতুল জিহাদ খুবই সতর্ক,সমাপ্ত ৷ পক্ষান্তরে কায়দার ইরাক শাখা এই বিষয়গুলোতে খুব অবহেলা করে ৷ একজন শত্রুকে হত্যার জন্য হাজারো নিরপরাধ মানুষ হত্যার ইতিহাস তাদের আছে ৷ শিয়াদের ঢালাউ ভাবে হত্যা করাকে তারা জায়েয মনে করে ৷ "শিয়া কাফের" এই মাসআলায় অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে ৷ যেই আক্বীদা বা ধর্মবিস্বাশের কারণে শিয়াদের কাফের বলাহয়, সেই আক্বীদা সব শিয়ারা রাখে না ৷ শিয়াদের মধ্যে অনেকগুলো ফেরকা আছে ৷ উলামায়ে কেরাম এই ফেরকাগুলোর মাঝে পার্থক্য করে থাকেন ৷ তবে ফেরকায়ে "জাফরিয়া"র কুফুরির ব্যাপারে সকলে একমত ৷ ফেরকায় জাফরিয়া মূলতো ইরান,ইরাক ও সিরিয়ার নেতৃত্ব পর্যায় রয়েছে ৷ সে হিসেবে এই তিন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা শুধু যায়েজ নয় বরং ফরজ ৷
.
ঢালাউ ভাবে সকল শিয়াদের হত্যা করা বৈধ মনে করা জায়েয নয় ৷ একজন নিরোপরাধ কাফের কেই তো হত্যা করা জায়েয নেই ৷ সেখানে একজন নিরোপরাধ শিয়াকে হত্যা কী করে জায়েয হতে পারে, যে আল্লাহ কে বিস্বাশ করে এবং সাহাবাদের প্রতি সুধারণা রাখে ৷ কায়দার কেন্দ্র থেকে কঠর নির্দেশ ছিলো যেন শিয়াদের মসজিদ ও ধর্মীও দিবোসগুলোতে হামলা চালানো না হয় ৷ কিন্তু কায়দার ইরাক শাখা এই নির্দেশগুলো আমলে নিতো না ৷ তারা নামাজরত শিয়াদের উপর আত্মঘাঁতী হামলা চালিয়ে শত শত মানুষ হত্যা করেছে ৷ আশুরার দিবসে তারা হামলা চালিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে ৷ এসব তারা এখনও করছে ৷ কায়দাতুল জিহাদের সিরিয়া শাখা আছে ৷ সেখানে তো পথে-ঘাটে, মসজিদে শিয়া জনসাধারণের উপর হামলা হয় না ৷ সিরিয়ান মুজাহিদীনরা শিয়া সৈন্যদের উপর হামলা চালায়, নিরপরাধ শিয়া জনসাধারণের উপর নয় ৷ এবং এটাই সঠিক নিয়ম ৷ (এখানে দীর্ঘ আলোচনার কারণ হলো যাতে পাঠক বুঝতে পারেন, কিভাবে ইরাকের এই দলটি দিনে দিনে তাকফিরের দিকে যাচ্ছিলো)
.
১৯/০৪/২০১০ইং তারিখে আমেরিকা শাইখ ওমার আল-বাগদাদীকে হত্যার দাবি করে ৷ ইতোপূর্বে ২০০৭-৯ সালেও ইরাকের মালিকী সরকার শাইখকে হত্যার দাবি কেরে ছিলো ৷ পরবর্তীতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয় ৷ ২০১০ সালে দাউলাতুল ইরাক এর শুরা পরিষদের পক্ষ থেকে এক অডিও বার্তায় শাইখের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয় ৷ আল্লাহ শাইখকে শহীদের মর্জাদা দান করুন ৷ আমিন ৷
১৯/৪/২০১০ সাল ৷ দাউলাতুল ইরাক এর পক্ষ থেকে এক অডিও বার্তায়, দাউলাতুল ইরাক এর আমীর আবু ওমার আল-বাগদাদী'র নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয় ৷এবং আবু বকর আল-বাগদাদীকে নতুন আমীর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় ৷
.
আবু ওমার আল-বাগদাদীর শাহাদাতের পর, কায়দা ইন ইরাক বা দাউলাতুল ইরাক নেতৃত্বহীনতায় ভূগছিলো ৷ নতুন আমির নির্ধারণের ব্যাপারে তারা একমত হতে পারছিলো না ৷ কারো মতে, এসময় কায়দা ইন ইরাকের পক্ষ থেকে জাওয়াহিরীর নিকট পত্র পাঠানো হয় ৷ পত্রে নতুন আমীর নির্ধারণ করে দেয়ার অনুরোধ করা হয় ৷ এই মতটি আমার কাছে দূর্বল মনে হয় ৷ একথার দলীল আমি পাইনি ৷
.
নতুন আমীর নির্ধারণের বিষয়টি ছিলো খুবই ঘোলাটে ৷ দাউলাতুল ইরাকের শুরাপরিষদে দুই ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য ছিলো ৷ তাদের কথার উল্টো করার ক্ষমতা শুরাপরিষদের ছিল না ৷ তারা দু'জন কোন সিদ্ধান্ত নিলে শুরা সদস্যের কেউ বিরোধিতা করতে সাহস করতো না ৷এদু'জন সাদ্দাম আমলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন ৷ তারা সাদ্দামের প্রথম সারির সহযোগী ছিলেন ৷ উপদেষ্টা ছিলেন ৷
.
তাদের একজনের নাম হুজ্জী বকর, দ্বিতীয় জনের নাম আবু আলী আল-আনবারী ৷ হুজ্জী বকরের দাপট ছিলো সবচেয়ে বেশি ৷ তিনি সাদ্দাম বাহিনীর আর্মী অফিসার ছিলেন ৷ সাদ্দামের প্রধান দুই সহযোগীর একজন ৷ বাথ পার্টির আদর্শের পুরোটাই তার মাঝে ছিলো ৷ তিনি প্রতিপক্ষ সহ্য করতে পারতেন না ৷ তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে দল পরিচালনা করতে বেশি পছন্দ করতেন ৷
.
দাউলাতুল ইরাক মূলত দু'টি প্রজন্মে বিভক্ত ৷ প্রথম প্রজন্ম, এরা হলেন শাইখ জারকাবী,আবু হামজা,আবু ওমার ৷ দ্বিতীয় প্রজন্ম শুরু হয়েছে আবু বকর আল-বাগদাদীকে দিয়ে ৷ প্রথম প্রজন্মের সাথে কায়দা ও বিশ্ববরেণ্য উলামায়ে কেরামের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো ৷ দাউলাতুল ইরাক নিয়ে জাওয়াহিরী ও অন্যান্য উলামাদের যে, প্রশংসা বাক্য আছে, তা কিন্তু প্রথম প্রজন্মকে কেন্দ্র করে ৷ যারা এই ময়দানে নতুন তারা এখানে ভুল করে ৷ প্রথম প্রজন্মের জন্য প্রশংসা দ্বিতীয় প্রজন্মের উপর প্রয়োগ করে ৷ এবং বলে, দাউলাকে তো একসময় তারা সমর্থন তরতো এখন করে না কেন ...ইত্যাদী ৷
.
আমরা এখন দাউলাতুল ইরাকের দ্বিতীয় প্রজন্ম নিয়ে আলোচনা করছি ৷ এবং এটাই এ-প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় ৷
.
দাউলাতুল ইরাকের দ্বিতীয় প্রজন্মে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন হূজ্জী বকর ৷ হুজ্জী বকরকে না বুঝলে দ্বিতীয় প্রজন্মকে বুঝা যাবে না ৷ আমাদের জানতে হবে, কিভাবে সাদ্দামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুজ্জী বকর দাউলার আস্থাভাজন হলেন..!
.
আবু ওমার আল-বাগদাদীর সময় হুজ্জী বকর দাউলায় যোগ দেয় ৷ তার ছিলো উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ ৷ দাউলার সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তিনি পরিচিতি লাভ করেন ৷ নিখুত দিকনির্দেশনা ও উন্নত যুদ্ধ কৌশলের কারণে তিনি আবু ওমার আলবাগদাদীর নৈকট্য লাভ করেন ৷ একসময় বাগদাদী হুজ্জী বকরকে ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না ৷ ফলে হুজ্জী বকর হয়ে যায় আমীর বাগদাদীর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ৷
.
১৯/৪/২০১০ সাল ৷ হুজ্জী বকর, আবু ওমার, আবু হামজা, দাউলাতুল ইরাকের এই তিন প্রধান সহ অরো কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ছিলেন ৷ আমেরিকা সেই বাড়িটিতে বিমান হামলা চালায় ৷ হুজ্জী বকর ছাড়া বাকি সকলে নিহত হয় ৷ বাগদাদী নিহত হওয়ার পর নতুন আমীর নির্বাচনে শুরা পরিষদে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় ৷ এভাবে কয়েক দিন কেটে যায় ৷
.
হুজ্জী বকর ঘোষণা দেন যে, আমি আবু বকর আল বাগদাদীকে আমীর হিসেবে বায়াত দিলাম ৷ হুজ্জী বকরের এই আচরণে সকলে অবাক হয় ৷ কারণ বাগদাদীর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রয়েছেন ৷ আবু সাইদ ইরাকী রয়েছেন ৷ যিনি বাগদাদীর উস্তাদ ৷ তিনি হাতে কলমে বাগদাদীকে শিক্ষা দিয়েছেন ৷ তিনি জাইশুল মুজাহিদীনের প্রধান ছিলেন ৷
.
=একটি কথা এখানে বলে রাখা উচিত ৷ আবু সাইদ ইরাকী বাগদাদীকে বায়াত দেন নি ৷ একারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেন ৷ জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে তিনি দামেশক চলে যান ৷ তখনও সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয় নি ৷ ২০১১ সালে বাগদাদী শাইখ জাওলানীকে সিরিয়া পাঠায় ৷ সিরিয়ায় যখন শাইখ জাওলানী নুসরাকে শক্তিশালী গ্রুপে পরিণত করেন, তখন বাগদাদী জাওলানীকে আবু সাইদ ইরাকীর উপর আত্মঘাঁতী হামলার নির্দেশ করেন ৷ জাওলানী এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন ৷
.
আবু সাইদ ইরাকীকে জাওলানী খুব ভালো করে চিনতেন ৷ ২০০৬ সালে আবু সাইদ ইরাকী আমেরিকার হাতে বন্দী হন ৷ তখন জাওলানীও আমেরিকার হাতে বন্দী হন ৷ এই দুই শাইখ একসাথে জেলে বছর খানিক ছিলেন ৷ জাওলানী খুব কাছ থেকে শাইখকে প্রত্যক্ষ করেন ৷ জাওলানীর ভাষায়, আবু সাইদ ইরাকী হলেন এক জন আল্লাহ ভিরু, পরহেযগার, কোরান-হাদীসের জ্ঞানে তার সমকক্ষ ইরাকে খুব কমো-ই ছিলো ৷ এ-কারণেই জাওলানী আবু সাইদ ইরাকীকে হত্যা করতে রাজী হন নি ৷ তিনি এখনও জীবিত আছেন ৷
.
বাগদাদীর বায়াত ভাঙ্গার কারণে যারা জাওলানীকে মুর্তাদ,কাফের,ক্ষমতা লোভী বলে গালাগাল করেন, তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন ৷ আজ যদি জাওলানী বাগদাদীর সাথে থাকতেন, তাহলে বর্তমানের চেয়ে জাওলানীর ক্ষমতা চারগুণ বেশি থাক তো ৷
-কিন্তু কেন তিনি বাগদাদীর বায়াত ভঙ্গ করলেন? দাউলাতুল ইরাক কেন "দাউলাতুল ইরাক ও শাম" ঘোষণা করতে গেলো? ইত্যাদী প্রশ্নের উত্তর আগামী পর্বগুলোতে থাকবে ইনশা আল্লাহ ৷
.
আবু বকর আল-বাগদাদী দাউলাতুল ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে ছিলেন না ৷ তিনি শুরা সদস্যদের মধ্যেও ছিলেন না ৷ দাউলাতুল ইরাকের এক জন কর্মী হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন ৷ একারণে ইমারতের দায়ীত্ব নিতে প্রথমে তিনি রাজি হন নি ৷
.
পর পর দু'জন আমীর বিমান হামলায় শহীদ হন ৷ বাগদাদী জানতেন যে, এবার শহীদদের কাতারে তাকেও শামীল হতে হবে ৷ তাই তিনি দায়িত্ব গ্রহণে ভয় পাচ্ছিলেন ৷ হুজ্জী বকর বাগদাদীকে অভয় দেন, এবং বলেন, আপনার সাথে আমি আছি কোন সমস্যা হবে না ৷
.
হুজ্জী বকরের সিদ্ধান্তের উলটো করার ক্ষমতা শুরা পরিষদের ছিল না ৷ হুজ্জী বকর সাদ্দামের সময়কার আরো কয়েক জন সেনা অফিসারকে দাউলাতুল ইরাকে যুক্ত করে ৷এদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দেয়া হয় ৷ এজন্য হুজ্জী বকরের বিরোধিতা করার ক্ষমতা কারো ছিলো না ৷ দাউলার শুরা সদস্যের অনেকে হুজ্জী বকরকে গুপ্তচর মনে করতো ৷ কিন্তু একথা প্রকাশ করার সাহস করতো না ৷
-আমি তাকে গুপ্তচর মনে করি না ৷ বরং তিনি সাদ্দামের আদর্শে কিছু করতে চেয়ে ছিলেন ৷ সাদ্দাম যেমন বাথ পার্টির উপরোস্থ নেতাদের হত্যা করে সর্বোচ্চ পদটি দখল করে ছিলো ৷ হুজ্জী বকর এমন কিছু করতে চেয়ে ছিলেন ৷
.
-হুজ্জী বকর ক্লিন শেভ করতেন ৷ বাগদাদীকে আমীর বানানোর পরথেকে তিনি দাড়ি লম্বা করতে শুরু করেন ;
.
দাউলাতুল ইরাক তার দ্বিতীয় প্রজন্মকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলো ৷ যার দু'জন আমীর ৷ একজন প্রত্যক্ষ আমীর "বাগদাদী", যার কথা আমরা সকলে জানি ৷ অন্য জন পরোক্ষ আমীর "হুজ্জী বকর", যাকে আমরা খুব কম চিনি ৷
.
দাউলাতুল ইরাক ভয় ও আশার মধ্য দিয়ে চলতে লাগলো ৷ উড়ে এসে জুড়ে বসা হুজ্জী বকরের ভয়ে সকলে "তটস্থ" ৷ নিচু পদস্থ কোন সদস্য উচ্চ পদস্থ নেতাদের তদারকি করার ক্ষমতা নেই ৷ কারণ কাউকে তদারকি করা মানে তাকে সন্দেহ করা ৷ আর সন্দেহ করা মানে আনুগত্য না করা ৷ আর যে আনুগত্য করবে না,তাকে নিজের কবর নিজেই খুঁদতে হবে ৷
.
বাগদাদী ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক সপ্তা পর, হুজ্জী বকরের আচরণে পরিবর্তন ঘটে ৷ তিনি ছিলেন গুরু গম্ভীর ৷ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন ৷ সবাইকে সন্দেহের নজরে দেখতেন ৷ শুধু বাগদাদী ও এক দুজন বাথ নেতা ছাড়া কাউকে সাক্ষাৎ দিতেন না ৷ তার সাথে কথা বলতে হলে আদব-লেহাজ রক্ষা করে কথা বলতে হতো ৷ সিরিয়ানদের স্বভাব হলো, তারা কথা বলার সময় হাত নেড়ে কথা বলে ৷ একবার হুজ্জী বকরের সামনে এক সিরিয়ান হাত নেড়ে কথা বলে ৷ এই অপরাধে হুজ্জী বকর তাকে অনেক শাস্তি দেয় ৷ হাত-পায়ে বেড়ী পড়িয়ে জেলে ফেলে রাখে ৷
.
হুজ্জী বকর নতুন করে শুরা পরিষদকে সাজান ৷ আবু আলী আল-আনবারীকে, দাউলাতুল ইরাকের সামরিক প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন ৷ আনবারী সাদ্দাম হুসেনের সেনা অফিসার ছিলেন ৷ রাতারাতি তিনি জিহাদী বনে যান ৷
.
হুজ্জী বকর বাগদাদীকে নিজের কাছে আগলে রাখেন ৷ নিচু পদস্থ নেতাকর্মীদের বাগদাদীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ ছিলো না ৷
.
হুজ্জী বকর শুরা সদস্যদের নিয়ে বাগদাদীর সাথে শাক্ষাত করেন ৷ তিনি দুটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ৷ ১: অভ্যন্তরীণ পুলিশ বাহিনী গঠন করা ৷ ২: খনিজ সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ নেয়া ৷
-অভ্যন্তরীণ পুলিশ বাহিনীর প্রধান হুজ্জী বকর নিজেই থাকেন ৷ এই পুলিশ বাহিনী বাস্তবে একটি গোপন ঘাতক দল ৷ এর সদস্যদের সকলেই সাদ্দাম আমলে সেনা সদস্য ছিলো ৷ বাগদাদী ক্ষমতা গ্রহণের একমাসের মাথায় পুলিশ বাহিনী ২০ জন নেতাকর্মীকে গোপনে হত্যা করে ৷ কয়েক মাসের মাথায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ১০০ বেশি লোক হত্যা করে ৷ যারা বাগদাদীকে বায়াত দিতে চাইত না, বা যাদের মধ্যে অবাধ্যতা দেখা যেতো তাদেরকে গোপনে হত্যা করা হত ৷
.
বাগদাদী এক সময় লক্ষ্য করলেন, হুজ্জী বকর ছাড়া নেতৃত্ব সামলানো সম্ভব নয় ৷ হুজ্জী বকর যেভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করেছে, ইতপূর্বে কেউ তেমন করতে পারেনি ৷ তাই বাগদাদীও হুজ্জী বকরকে অমান্য করতে পারতেন না ৷ যদিও তিনি "নামমাত্র" আমীর ছিলেন ৷
.
দ্বিতীয় যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, খনিজ সম্পদ ও দাউলাতুল ইরাকের অর্থায়োনে মনযোগ দেয়া ৷
-আবু ওমর আল-বাগদাদী রাষ্ট্রিয় অর্থায়োনের জন্য কিছু পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ছিলেন ৷ তা নিম্মরূপ...
১: শিয়া,খ্রিষ্টান, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী এবং ইরাক সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন সুন্নি মুসলিমদের সমস্ত সম্পদকে জাতীয়করণ করা ৷
২: তেলের খনিগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ৷ বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও সরকারী মিল-ফ্যাক্টরীগুলো নিজেদের দখলে নেওয়া ৷
৩: যে কনো কম্পানি যদি ইরাক সরকারের সাথে কোনো ধরণের চুক্তিতে আবদ্ধ থাকে, তাহলে সে কম্পানী দাউলাতুল ইরাকের আমীরের সম্পত্বি বলে গন্য হবে ৷
৪: যে সকল কম্পানি দখলে নেয়া সম্ভব হবে না, সেই কম্পানির মালিকদের হত্যার হুমকি দেয়া হবে ৷ অথবা বোম্বিং করে কম্পানি উড়িয়ে দেয়া হবে ৷
৫: মহা সড়কে চেকপোষ্ট বসিয়ে তেলবাহী ট্রাক থেকে কর আদায় করা হবে ৷
.
উপরের খাতগুলো থেকে প্রচুর অর্থ দাউলাতুল ইরাকের কোষাগারে জমা হতে থাকে ৷ এদিকে আমেরিকা ইরাক ত্যাগ করার পর, যুদ্ধের খরচও কমে আসে ৷ ফলে দাউলাতুল ইরাকের কোষাগারে অনেক সম্পদ জমা হয় ৷ একারণে দাউলাতুল ইরাকের অধিনে চাকরী নেয়ার জন্য শিয়ারাও আগ্রহী হয় ৷
.
সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, আলাদাকরে অর্থমন্ত্রণালয় খোলার প্রয়োজন দেখা দেয় ৷ হুজ্জী বকর নিজেই অর্থমন্ত্রীর দায়ীত্ব গ্রহণ করেন ৷
.
হুজ্জী বকর পূর্বের শুরা পরিষদ ভেঙ্গে, তের সদস্য বিশিষ্ট নতুন শুরা পরিষদ গঠন করেন ৷ যাদের সকলেই ইরাকী ৷ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই এমনটি করা হয় ৷
.
২০১১ সাল ৷ আমেরিকা ইরাক ত্যাগের পর, দাউলাতুল ইরাকে স্বস্তি নেমে আসে ৷ ফালুজা, আনবার, মসুল, দিয়ালা, সালাহুদ্দীন,নিনোভা ইত্যাদী সুন্নী শহরগুলো নিয়ে গঠিত হয়ে ছিলো দাউলাতুল ইরাক ৷
.
আমেরিকা ইরাক আক্রমণের পর, বৃহত্তম ইরাক ভেঙ্গে তিনটি স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরির প্রস্তাব করা হয় ৷ কুর্দী রাষ্ট্র, সুন্নী রাষ্ট্র, শিয়া রাষ্ট্র ৷ ইরাকের মালিকী সরকার বরাবর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছিলেন ৷ সেই প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে সুন্নী শহরগুলো নিয়ে দাউলাতুল ইরাক গঠন করা হয় ৷
.
আমেরিকা এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিলো ৷ তবে জিহাদীদের দিয়ে নয় বরং গণতান্ত্রীক উপায়ে একটি আলাদা সুন্নী রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলো ৷
.
২০১৪ সালে জুলাই-র প্রথম সপ্তাগুলোতে যখন আইএস ইরাকের শহরগুলো একে একে দখল করছিলো ৷ তখন জাতিসংঘে সুন্নীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র রাখা-না রাখার বিষয়ে ভোটাভুটি হচ্ছিলো ৷ ইসরাইল স্বতন্ত্র সুন্নী রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয় ৷ তুরস্কও পক্ষে ভোট দেয় ৷ আমেরিকা ভোট না দিলেও, বানরের মত বিচারকের ভূমিকায় ছিলো ৷ একমাত্র ইরান বিপক্ষে ভোট দেয় ৷
-অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা ৷
আমরা সকলে জানি যে খিলাফা ঘোষণার দুই সপ্তা পূর্বে আইএস ইরাকের একতৃতীয়াংশ দখল করে ৷ এটাকে তারা মহা বিজয় বলে প্রচার করে ৷ কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে, আইএস ১৪ সালে যেই শহরগুলো বিদ্যুৎ গতিতে দখল করলো, ৬ সালে সেই শহরগুলোর উপর ভিত্তি করেই তো দাউলাতুল ইরাক গঠন করা হয়ে ছিলো ৷ তাহলে কেন পূর্বের দখলকরা শহরগুলোর উপর নতুন করে দখল দেখানো হলো?
বিষয়টি স্পষ্ট করে বলি ৷ ১৪ সালের দখল করা ভূমীগুলো যদি প্রথম দখল হয়ে থাকে, তাহলে ৬ সালে ঘোষিত দাউলাতুল ইরাককে অস্বীকার করতে হবে ৷ আর যদি দাউলাতুল ইরাককে স্বীকার করা হয়, তাহলে ১৪ সালের বিজয়গুলোকে অস্বীকার করতে হবে ৷ আমি এখানে সার্বিক বিজয়ের কথা বলছি ৷ একথা আমি নিজেও স্বীকার করি যে, ১৪ সালে দাউলাতুল ইরাক কিছু নতুন শহর দখলে নিতে সক্ষম হয় ৷ কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি, ১৪ সালে ইরাকে যে সার্বিক বিজয় দেখানো হয়েছে, তা যদি মেনে নেই তাহলে দাউলাতুল ইরাক কোথায় যাবে?
একটি সমাধান আছে ৷ এবং সেটাই সঠিক ৷ শাইখ বাগদাদী এখানে একটি যুদ্ধকৌশল প্রয়োগ করেছে ৷ যেমন ভাবে কৌশলটি হুজ্জী বকরের পরামর্শে শামেও প্রয়োগ করা হয়েছিলো ৷
কৌশলটি হলো ৷ ইরাকের যেই শহরগুলোর উপর দখল নিয়ে ৬ সালে দাউলাতুল ইরাক ঘোষণা করা হয়, সেই শহরগুলোর উপর দাউলার ৫০% দখল ছিলো ৷ ১৪ সালে এসে সেই শহরগুলোতে ১০০% দখল পূর্ণ করা হয় ৷ ৫০% বিজয়কে তারা মিডিয়ায় ১০০% বিজয় বলে প্রচার করে ৷ যাতেকরে শত্রুরা ভয় পায় ৷ এবং খিলাফার ঘোষণাকে মুসলিম বিশ্বের কাছে মহনীয় করে তোলা যায় ৷
কিছু নতুন ভাই, যারা পূর্ব থেকে হুজ্জী বকর বিষয়ে কোন জ্ঞান না থাকার কারণে পুরো বিষয়টিকেই অস্বীকার করছেন ৷ কোন বিষয়ে যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে নতুন করে জানুন ৷ কিন্তু কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিষয়টি আপনি অস্বীকার করবেন .. এটা তো মূর্খোতার লক্ষণ ৷
পূর্বে বলেছিলাম যে হুজ্জী বকর আড়াল থেকে দল পরিচালনা করতে পছন্দ করতেন ৷ একারণে কোনো ভিডিও ডকুমেন্ট দিয়ে তার অস্তিত্ত প্রমাণ করা সম্ভব নয় (আমার জন্য) ৷
চলতি মাসে বা ১৫ সালের জুলাই মাসে নুসরা তার এক শুরা সদস্যকে দল থেকে বহিস্কার করেছিলো ৷ তার নাম "আবু সালেহ" ৷ তিনি মিডিয়ায় তার ও জাওলানীর মধ্যের কিছু মতবিরোধ তুলে ধরেন ৷ তখন খিলাফার আরব সমর্থকরা বিষয়গুলো নিয়ে খুব মাতামাতি করে ৷ আবু সালেহ খিলাফ সমর্থকদের বলেন "হুজ্জী বকরের সাথে আমি দশ বার দেখা করেছি ৷ প্রতি বারই তাকে আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে ৷ তিনি ছিলেন রহস্যময় ৷ কর্কষ স্বভাবের ৷ স্বল্পভাষী ৷ সুকৌশলী ৷ সন্দেহ প্রবণ ৷ শরিআ'তের বিধিবিধান শিখার প্রতি তার আগ্রহ ছিলো ৷ তিনি এমন কৈশলে তোমাকে মাসআলা জিজ্ঞেস করবে, তুমি বুঝতেও পারবে না যে, সে তোমার থেকে শিখছে" (তিনি যে আগে থেকে জানতেন না, তা আপনাকে বুঝতে দিবে না) ৷ হুজ্জী বকরের ধর্মীও জ্ঞানের দৈন্যতার কথা খিলাফার আরব সমর্থকরা স্বীকার করে থাকেন ৷ এরকম স্বল্প জ্ঞান নিয়ে তিনি আল-জাজীরার সকল সাংবাদিককে মুর্তাদ বলতেন ৷ তিনি ভোট প্রদানকারী সাধারণ জনগনকেও মুর্তাদ জ্ঞান করতেন ৷ যদিও ভোট প্রদানকারী মূর্খ হয় ৷ বিস্তারিত জান্তে এবং হুজ্জী বকররের ছবি দেখতে লিংকে ক্লিক করুন ৷ http://m.arabi21.com/story/827551/
আবু সালেহ, হুজ্জী বকরকে নিয়ে আরো অনেক ত্বথ্য দিয়ে ছেন ৷সেগুলো আগামী পর্বগুলোতে উল্লেখ করা হবে ৷ আবু সালেহ-এর বক্তব্য দ্বারা আমি একথা প্রমাণ করতে চেয়েছি যে, হুজ্জী বকর আমাদের কাছে নতুন হলেও ইরাক-শামের "শিশু-বাচ্চারা" তাকে ভালো করে চিনে, জানে ৷ ভাষার ভিন্নতা ও ভূমীর দূরোত্বের কারণে কি এই ত্বথ্যগুলো আমাদের কাছে মিথ্যা হয়ে যাবে ..!
.
- পাঠকের সুবিধার্থে একটি কথা বলে রাখা দরকার ৷ দাউলাতুল ইরাক ঘোষণা করা হয় ২০০৬ সালে ৷ দাউলাতুল "ইরাক & শাম" ঘোষণা করা হয় ২০১১/১২ সালে ৷ খিলাফা ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালের জুলাই-এ ৷ এই তিনটি স্টেপ জানা না থাকলে পাঠকের কাছে কথাগুলো অগোছালো মনে হবে ৷
আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো ৷ যারা কায়দা ও আইএসের মধ্যে বিরোধের কারণ খুঁজছেন, এবং এটাকে "হাইলাইট" করে প্রচার করে থাকেন ৷ তাদের জেনে রাখা উচিত যে, এখানে বিরোধটা কায়দা ও আইএসের নয় ৷ বরং এটা আইএসের অভ্যান্তরীণ বিরোধ ৷
আইএস নিজেদের বিরোধ মিটানোর জন্য মোকদ্দমা নিয়ে শাইখ জাওয়াহিরীর দরবারে আসে ৷ জাওয়াহিরী যখন উভয়ের মাঝে ফায়সালা করে দিলেন, তখন বাগদাদী ফায়সালা প্রত্যাখ্যান করলো ৷ কি সেই বিরোধ? কেন ফায়সালা প্রত্যাখ্যান করা হলো? ইত্যাদিপ্রশ্নের উত্তর আগামী পর্বগুলোতে থাকবে ৷ ইনশা আল্লাহ ৷
.
আমরা দাউলাতুল ইরাক নিয়ে আলোচনা করছিলাম ৷ আমেরিকার প্রস্থানের পর দাউলাতুল ইরাক নিজেকে আরও সংগঠিত করতে সক্ষম হয় ৷ আগের মত যুদ্ধাবস্থা এখন আর নেই ৷ বৃহত্তম ইরাক ভেঙ্গে তিনটি স্টেট গঠনের রাজনৈতিক সমর্থন যেহেতু আগে থেকেই ছিলো, তাই সকলে দাউলাতুল ইরাককে মৌন সমর্থন দিচ্ছিলো ৷ ফলে দাউলাতুল ইরাকের পরিধি বিস্তৃত করা, বা শিয়াদের শহরগুলো দখল করে দাউলার অধিনে আনার মত গ্লোবাল পরিকল্পনা দাউলাতুল ইরাকের তখন ছিলো না ৷ দাউলা নিজেকে গঠন করতেই ব্যস্ত ৷ এককথায় তখন ইরাক জিহাদ থেমে যায় ৷
.
২০১১ সাল ৷ সিরিয়ায় চারদিকে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে ৷ মুসলিম যুবকরা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলো ৷ শিয়া বাশার সরকার এক লাখ ত্রিশ হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করে ৷ সিরিয়ান মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানো গ্লোবাল মুজাহিদীনের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে ৷
.
দাউলাতুল ইরাক যখন কায়দার সাথে সুসম্পর্ক রাখতো,তখন কায়দা বিভিন্ন দেশ থেকে মুহাজিরীন সংগ্রহ করে ইরাকে পাঠাতো ৷ একারণে ইরাকে বিদেশী মুজাহিদীনের সংখ্যা ইরাকী মুজাহিদীন থেকে বেশি ছিলো ৷ বিশেষ করে সিরিয়ানদের সংখ্যা বেশি ছিলো ৷ যদিও নেতৃত্বে একমাত্র ইরাকীরাই ছিলো ৷
.
দাউলাতুল ইরাকের বিদেশী মুজাহিদীনরা সিরিয়া জিহাদে যোগ দেওয়ার পথ খুঁজতে লাগলো ৷ হুজ্জী বকর দেখলেন যে, এভাবে যদি মুহাজিরীনরা সিরিয়ার দিকে যেতে থাকে, তাহলে যেকোনো সময় দাউলাতুল ইরাকের "চেইন অব কমান্ড" ভেঙ্গে যেতে পারে ৷ হুজ্জী বকর বাগদাদীকে নতুন ফরমান ঘোষণার নির্দেশ দেন ৷ বাগদাদীর ঘোষণা পত্র সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় ৷ ঘোষণা পত্রে, সিরিয়া যেতে কড়া ভাবে নিষেধ করা হয়েছে ৷ যে সিরিয়া যাবে সে বিদ্রোহী হবে ৷ কারণ হিসেবে বলা হয়, সিরিয়ানরা গণতন্ত্রের জন্য বিদ্রোহ করছে ৷ গণতন্ত্র কুফুরী মতবাদ ৷
.
কিন্তু কড়াকড়িতে কোনো কাজ হলো না ৷ দাউলাতুল ইরাকের সৈন্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখাদেয়৷ একসময় সৈন্যদের মধ্যে ফাটল দেখা দেয় ৷ হুজ্জী বকর শুরা সদস্যদের সাথে পরামর্শে বসলেন ৷ দাউলাতুল ইরাকের নেতৃত্বে মুহাজিরীন দ্বারা গঠিত একটি দল সিরিয়া পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হলো ৷ যাতে দাউলাতুল ইরাকের ভাঙ্গন রোধ করা যায় ৷ এবং সিরিয়াগামী দলটি নতুন সৈন্য সংগ্রহ করে দাউলাতুল ইরাকে পাঠাতে পারে ৷ এদিকে শাম বাসীর জন্য দাউলাতুল ইরাকের "মুখ" রক্ষার মতো কিছু করা জরুরী ছিলো ৷
.
সিরিয়ায় যেই দলটি পাঠানো হবে, কে হবেন সেই দলটির আমীর ..? অবশ্যই আমীরকে সিরিয়ান হতে হবে ৷ এমন বিশ্বস্ত, বিচক্ষণ কে আছেন..? অনেক পরীক্ষা, নিরীক্ষার পর শাইখ আবু মুহাম্মদ আল-জাওলানীকে আমীর নির্ধারণ করা হলো ৷ "জাওলান" সিরিয়ার একটি শহরের নাম ৷ তিনি শান্ত ও মিশুক প্রকৃতির ৷ তিনি দাউলাতুল ইরাকের সাথে প্রথম থেকেই ছিলেন ৷ আমেরিকার হাতে বন্দী হয়ে তিন বছর বা চার বছর জেল খাটেন ৷ দাউলাতুল ইরাকের জন্য তার অনেক ত্যাগ রয়েছে ৷
.
২০১১ সালের অগাষ্টে শাইখ আবু বকর আল-বাগদাদী, শাইখ জাওলানীকে সিরিয়া অভিযানে প্রেরণ করেন ৷
.
আলজাজীরার সাংবাদিক আবু মানসুর-এর প্রশ্নোত্তরে জাওলানী বলেন, যখন বাগদাদী আমাকে সিরিয়া প্রেরণ করেন তখন আমার থেকে আনুগত্যের বাই'আত গ্রহণ করেন ৷ বাই'আত দেয়ার পূর্বে আমি জানতে চেয়েছি জাওয়াহিরীর (আল-কায়দার প্রধানের) নিকট তার বাই'আত আছে কি না ৷ তখন বাগদাদী বলেন "আমার গলায় জাওয়াহিরীর বাই'আত ঝুলানো আছে" ৷ জাওলানী বলেন, জাওয়াহিরীর নিকট বাগদাদীর বাই'আতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমি বাগদাদীকে বাই'আত দেই ৷ বিস্তারিত জানতে উটিউবে সার্চ দিন "بلا حدود لقاء امير جبهة النصرة ابو محمد الجولاني. الحلقة الثانية.
.
জাওলানীর বাই'আতের বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক লেখালেখি হয়েছে ৷ অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে ৷ আমি সংক্ষেপে এতটুক-ই বলবো যে, যিনি বাই'আত দিয়েছিলেন তিনিই ভালো জানেন যে, খিলাফার বাই'আত দিয়েছেন না কি আনুগত্য বা ছোট বাই'আত দিয়েছেন ৷ অতএব আপনি-আমি সুদূর বাংলায় বসে বিতর্ক না করে, বরং যিনি বাই'আত দিয়েছেন তার কথা মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে ৷
.
জাওলানীর নেতৃত্বে একটি দল সিরিয়ার মাটিতে পা রাখে (সম্ভব তারা সংখ্যায় সাত জন ছিলেন) ৷ তারা সকলে জাতিগত ভাবে সিরিয়ান ৷ বিভিন্ন দেশে জিহাদ করার অভিজ্ঞতা তাদের ছিলো ৷ দলটির নাম আন-নুসরা ফ্রোন্ট ৷ "নুসরা" শব্দটি আরবী ৷ যার অর্থ সাহায্য ৷ "জাবহাত" অর্থ ফ্রন্ট ৷ দাউলাতুল ইরাকের পক্ষ থেকে নির্যাতিত সিরিয়াবাসীর জন্য দলটি সাহায্য হিসেবেই প্রেরিত হয়েছিলো ৷ তাই দলটির নাম "নুসরা" রাখা হয় ৷
.
সিরিয়ার মাটিতে নুসরা নিজেকে আল-কায়না ইন সিরিয়া বলে পরিচয় দিতে থাকে ৷ হাজার হাজার মুসলিম যুবক নুসরাকে বাই'আত দেয় ৷ নুসরার এক মুজাহীদ, ভাই আব্দুল্লাহ ৷ যিনি আমাকে বিভিন্ন অডিও-ভিডিও তথ্য দিয়ে সাহায্য করে ছেন ৷ যিনি নুসরা ও দাউলাতুল ইরাকের বিভিন্ন মিটিং ও সভায় অডিও-ভিডিও রেকোর্ড করার দায়িত্বে ছিলেন ৷ তিনি আমাকে বলেন 'ইরাক থেকে আগত এই দলটিকে যখন আমরা বাই'আত দিচ্ছিলাম, তখন তাদের প্রশ্ন করতাম, কসম করে বলো তোমরা কি আল-কায়দা? তখন তারা বিভিন্ন ভাবে কছম করে বলতো, আমরা আল-কায়দা ইন ইরাক থেকে শামে প্রেরিত হয়েছি (শেষ) ৷
.
খুব স্বল্প সময়ে আন-নুসরার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ৷ বাশার সরকারের বিরুদ্ধে নুসরা সবচেয়ে কার্যকরী গ্রপে পরিণত হয় ৷ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মুহাজিরীন নুসরায় যোগ দিতে থাকে ৷ খলিজ, লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরোক্কো, তিউনিশিয়া,কাজাখস্থান,আফগানিস্তান, ককেসাস এবং উরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে মুহাজিরীনরা নুসরার নেতৃত্বে শামের জিহাদে অংশ নেয় ৷ আল-কায়দার বিদেশী যোদ্ধা সংগ্রহের খাতগুলো থেকে মুহাজিরিনদের শামে পাঠানো হয় ৷
.
দিনে দিনে নুসরার সৈন্য সংখ্যা বাড়তে থাকে ৷ একে একে সিরিয়ান শহরগুলো নুসরার অধীনে আসতে থাকে ৷ একসময় নুসরার সৈন্য সংখ্যা এবং অধিকৃত এলাকার আয়তন, দাউলাতুল ইরাকের দ্বিগুন হয়ে যায় ৷ সিরিয়াবাসীর আগামীর স্বপ্নের সাথে নুসরা মিশে যায় ৷ ২০১২ সালে যখন আমেরিকা নুসরাকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে, তখন লাখ লাখ সিরিয়াবাসী নুসরার পক্ষে মিছিল বের করে ছিলো ৷
.
সিরিয়া জিহাদ নিয়ে মিডিয়ার প্রপাগাণ্ডা ৷
-কোথাও যদি আগুন লাগে, তখন সেখানে আপনি তিন শ্রেণীর মানুষকে দেখতে পাবেন ৷ এক শ্রেণী আগুন নিভাতে যাবে ৷ দ্বিতীয় শ্রেণী চুরি করতে যাবে ৷ তৃতীয় শ্রেণী তামাশা দেখতে যাবে ৷
.
সিরিয়ায় যখন যুদ্ধের আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলতে শুরু করে, তখন কিছু লোক নির্যাতিত মানুষের পক্ষে লড়াই কারার জন্য যায় ৷ কিছু লোক অস্ত্র বিক্রি বা এক শত্রু দিয়ে আরেক শত্রু দমন করার মত স্বার্থোদ্ধার করে ৷ কিছু লোক দূরে বসে সিরিয়া জিহাদ নিয়ে হাতে তালি আর গালাগালি করায় ব্যস্ত হয়ে পরে ৷
.
"সিরিয়ার জিহাদীরা ইজরাইল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে" ৷
-উপোরের কথাটি আমি অস্বীকার করি না ৷ তবে আমাদের দেখা উচিত ইজরাইল কাদের চিকিৎসা দিয়ে ছিলো ৷ আমি যতটুকু জানি, ২০১২ সালে ফ্রি সিরিয়ান আর্মীর (সিরিয়ার একটি গণতন্ত্রপন্থী গ্রুপের) কিছু আহত সৈন্যকে ইজরাইল চিকিৎসা দিয়ে ছিলো ৷ এখানে বিস্ময়ের কিছু নেই ৷ কারণ, আমেরিকা, চীন, রাশিয়া যদি সিরিয়ায় অস্ত্র ব্যবসা করতে পারে তাহলে ইজরাইল চিকিৎসা ব্যবসা করতে দোষ কিসের ৷
ইজরাইলের সামনে দু'টি শত্রু ৷ উদীয়মান জিহাদী গ্রুপ, বাশার আল-আসাদ ৷ ইজরাইল চিন্তা করলো, সুন্নীদের দ্বারা যদি বাশারকে পরাস্থ করা যায়, তাহলে আমার অন্তত একটা শত্রু কমবে ৷
ব্যরেল বোমার আগুনে যার শরীর ঝলসে যায় সেই বুঝে যন্ত্রণা কাকে বলে ৷ তখন রুটির চেয়ে চিকিৎসা বেশি প্রয়োজন, চিকিৎসক যে-ই হোক না কেন ৷
রাসূল সঃ অসংখ্য হাদীসে সিরিয়া যুদ্ধের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন ৷ অতএব মিডিয়ার প্রপাগান্ডা শুনে এই মহান যুদ্ধ থেকে মুখফিরিয়ে নেওয়া কিছুতেই যায়েজ হবে না ৷
.
"নিকাহ জিহাদ"
এই বিশেষ পদ্ধতির জিহাদ আমি যেমন বুঝি না, তেমন পাঠকও হয়তো বুঝেন না ৷
নিকাহ জিহাদ হয়ত শিয়াদের "মুতা বিবাহ"-এর মত কিছু হবে ৷ অর্থাৎ কোন নারীর সাথে স্বল্প সময়ের জন্য সহবাসের চুক্তি করা ৷ বিনিময়ের সাথেও হতে পারে ৷ বিনিময় ছাড়াও হতে পারে ৷
সিরিয়া জিহাদের প্রতি মিডিয়ার সবচেয়ে বড় আঘাত হলো এই নিকাহ জিহাদের নাটক ৷ সিরিয়ার কয়েক জন ভাইকে নিকাহ জিহাদ নিয়ে প্রশ্ন করে ছিলাম ৷ তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন ৷
নিকাহ জিহাদ নাটকের মূল উৎস হলো, তিউনিসের এক শিয়া ঘেঁসা মুফতী ফতুওয়া দেন "মুসলিম নারীদের উচিত সিরিয়ায় তাদের মুহাজিরীন ভাইদের যৌনসঙ্গ দেওয়া ৷ এভাবে মুসলিম নারীরা সিরিয়া জিহাদে অংশ গ্রহণের সোওয়াব পাবে" ৷ এই ফতুওয়া শুনার পর, তিউনিসের কিছু নারী সিরিয়া চলে যায় ৷ এবং মুহাজির মুজাহিদীনের সাথে স্থায়ী বিবাহে আবদ্ধ হয় ৷ এই নারীদের সংখ্যা খুব-ই কম ৷ বরোজোড় বিশ জন ৷ মিডিয়া এই স্বাভাবিক বিবাহ পদ্ধতিকে "নিকাহ জিহাদ" নামে প্রচার করে ৷
=== === === === === === === === === === === === === === === === === === === === ===
بسم الله الرحمان الرحيم
.
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর,যিনি জিহাদকে গৈরবের বস্তু বানিয়েছেন ৷এবং দোওয়া ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূল সঃ এর উপর, যিনি "শাম"কে মুসলমানদের শেষ আশ্রয়স্থল ঘোষণা করেছেন ৷
.
জিহাদ আল্লাহ তা'লার একটি ফরজ বিধান ৷ যেমন নামাজ,রোযা,হজ্ব,যাকাত আল্লাহর ফরজ বিধান ৷ জিহাদ প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ ৷আল্লাহ বলেন: ""নিশ্চই আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন ৷ তাদের কাজ হলো (তারা) আল্লাহর পথে লড়াই করবে ৷ তারা (শত্রুদের উপর) হত্যাজজ্ঞ চালাবে, এবং (প্রয়োযনে) নিজেরাও নিহত হবে ৷ আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি তাওরাতেও ছিলো, ইন্জিলেও ছিলো, এবং কোরানেও আছে ৷ আর আল্লাহর চেয়ে উত্তম ওয়াদা রক্ষাকারী কে আছে ..!! অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে যে ক্রয়-বিক্রয় করেছ সে ব্যাপারে সুসংবাদ গ্রহণ করো (নিশ্চিন্ত থাকো)৷ এটাই মহা বিজয় ""(সূরা তাওবাহ-111)
.
ইমাম জুহুরী বলেন: ""ব্যক্তির যোগ্যতার ভিন্নতার কারণে এই ফরজ বিধানেও ভিন্নতা ঘটে ৷ শারিরীক ও আর্থিক ভাবে সক্ষম,শর'য়ী গ্রহণযোগ্য কোন পিছুটান নেই, এমন মুসলিমের উপর নিপ্রিত মুসলিম জনপদের সাহায্যে অস্ত্রহাতে বেরিয়ে পড়া ফরজ ৷ যার শুধু আর্থিক সক্ষমতা আছে, মুজাহিদীনের উপর খরচ করা তার জন্য ফরজ ৷ যার লেখালেখির যোগ্যতা আছে, জিহাদের ফাজায়েল উপকারিতা ও প্রয়োজনিয়তা নিয়ে লেখালেখি করা তার উপর ফরজ ৷ নিপ্রিত মুসলিম জনপদের আর্তনাদ, সক্ষম মুসলিমদের নিকট পৌঁছে দেয়া তার দায়ীত্ব""৷ এমূলনীতির উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আমরা যারা অনলাইনে জিহাদের খবরাখবর রাখি, পড়ি ও লিখি, তারাও জিহাদের ময়দানে আছি ৷ যদিও আমরা শিশু পর্যায়ের ৷
.
একজন মুজাহীদকে অস্ত্রচালনা শিখার পূর্বে জিহাদের মাসলা-মাসায়েল শিখা জরুরী ৷গণিমত বণ্টন, রিদ্দাত,আমীরের আনুগত্যের আবশ্যিকতা ইত্যাদী মাসলা-মাসায়েল জানা ফরজ ৷ কারণ ধর্মীও জ্ঞানহীন একজন মুজাহীদ আর একজন ডাকাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ৷ স্বসস্ত্র ডাকাত জানে না কাকে হত্যা করতে হবে ৷ সে যাকে ইচ্ছা হত্যা করে দিবে ৷ তেমনি ধর্মীও জ্ঞানহীন মুজাহীদ জানে না কাকে হত্যা করতে হবে ৷ সে যাকে ইচ্ছা হত্যা করে দিবে ৷ তাকফীর করে ফেতনা সৃষ্টি করবে ৷
.
জিহাদের এই ব্যবসা (আল্লাহ ও বান্দার মাধ্যে) যেমন লাভ জনক, তেমনি ঝুঁকিপূর্নও ৷ এই পথ বিপদ সংকুল ৷ পদে পদে ফিতনার ঝুঁকি ৷ এই পথে চলতে প্রয়োজন কোরান-হাদীসের পর্যাপ্ত জ্ঞান ৷ প্রয়োজন ইতিহাসের জ্ঞান ৷ যে জাতি ইতিহাস ভুলে যায় সে জাতি থেকে সুন্দর ভবিষ্যত আশা করা যায় না ৷ অনুরূপ যে মুজাহীদ সঠিক ইতিহাস জানে না ৷ এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না ৷ সে কখনই জিহাদের ফসল ঘড়ে তুলতে পারবে না ৷
.
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ফিতনাপূর্ন জিহাদের ভূমি হলো "শাম"৷ রাসূল সঃ অসংখ্য হাদীসে শামের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন ৷ এবং তিঁনি শামকে মুসলিমদের শেষ আশ্রয়স্থল ঘোষণা করে ছেন ৷ তাই শামের জিহাদের ইতিহাস জানা আমাদের ঈমানী দায়ীত্ব ৷ আগামী পর্ব থেকে আমরা ধারাবাহীক শামের জিহাদ নিয়ে পর্যালোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ ৷
শামে চলমান জিহাদের ইতিহাস জানতে হলে প্রথমে ইরাকের ইতিহাস জানতে হবে ৷ আর ইরাক জিহাদ যারা সৃষ্টি করে ছিলেন তারা হলেন জিহাদের পূণ্য ভূমী আফগানের আধ্যাতীক সন্তান ৷ আফগানস্থানের রয়েছে হাজার বছরের জিহাদী ইতিহাস ৷সেই ইতিহাস টেনে এখানে স্থুপ করা আমার উদ্দেশ্য নয় ৷
.
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে উসমানী খেলাফত ধ্বংস হলেও, মূলত ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আমরা মুসলিমরা পরাজিত শক্তি ৷ প্রায় তিন শত বছর ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে আমাদের উল্লেখযোগ্য কোন বিজয় অর্জন হয়নি ৷ ফ্রান্স,ব্রিটেন,জার্মান ইত্যাদী সাম্রাজ্যবাদী গুষ্ঠিগুলো গোটা আরব বিশ্বকে ভাগাভাগি করে খাচ্ছিলো ৷ তখন আরব বিশ্ব থেকে ইসলাম অনেকটা বিতারিত হয়ে ভারতবর্ষে আশ্রয় নেয় ৷
.
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান তালেবানদের বিজয় ছিলো বদর যুদ্ধের মত ঐতিহাসীক ঘটনা ৷ তিনশত বছর ধরে পরাজিত,ক্ষয় প্রাপ্ত মুসলিম জাতির গলায় বিজয়ের মালা পড়িয়ে তালেবান হয়ে ওঠে বিশ্বমুসলিমের একমাত্র আশার আলো ৷ রাসূল সঃ এর ইন্তেকালের পর বদরী সাহাবীদের যেমন সকলে সম্মান করতো ৷ তেমনি আফগান যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মুজাহিদীনকে বর্তমানে জিহাদের ময়দানে সম্মান করা হয় ৷ তাদের সিদ্ধান্তকে শীরধার্য মনে করা হয় (এ কথাটি মনে রাখবেন সামনে প্রয়োজন হবে)৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আল্লাহর প্রিও বান্দারা আফগানে মিলিত হতে থাকে ৷ আফগানকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে মুসলিম উম্মাহ ৷
.
আরব থেকে আফগান জিহাদে আসা হাজার হাজার মুহাজিরীনের ভিড়ে এক যুবক ছিলো, যার নাম আহমাদ ফাদেল ৷ অদ্ভূত ভাবগাম্বীর্যের ছাপ তার চেহাড়ায় ৷ জর্ডানের যারক্বাও শহরে তার বাড়ি ৷ তিনি ফিজিক্স ও কেমেস্ট্রির ছাত্র ৷ তার নিজ হাতে তৈরী বোমা মুজাহিদীনকে অনেক বিজয় এনে দিয়ে ছিলো ৷ ১৯৮৯ সালে তিনি আফগানে হিজরত করেন ৷ রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিনি প্রায় পাঁচমাস যুদ্ধ করার সুযোগ পান ৷ আফগানিস্তানে তিনি আল-কায়দার ক্যম্পে সামরিক প্রশিক্ষখ হিসে কাজ করেন ৷
.
১৯৯৪ সালে আহমদ ফাদেল জর্ডানে ফিরে যান ৷জর্ডান সরকার তাকে গ্রেফতার করেন ৷ নাশকতার অভিযোগ এনে তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় ৷ বন্ধী জীবনে তিনি আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসীর সান্যিদ্ধ লাভ করেন ৷ ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদী কার্যক্রমের অভিযোগ এনে শাইখ মাকদিসীকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়ে ছিলো ৷ মাকদিসী এখনও জর্ডান জেলে বন্ধী ৷
.
১৯৯৯ সালে জর্ডানের নতুন সরকার সকল কয়দীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেন ৷ তখন আহমদ ফাদেল জেল থেকে মুক্তি পান ৷ পুনরায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হলে তিনি আফগানে চলে আসেন ৷ তিনি শাইখ উসামার সান্যিদ্ধ লাভ করেন ৷আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি এক পা হারান ৷ কৃত্রিম পা দিয়েই তিনি চলতেন ৷ ৯/১১-এর পর যখন আমেরিকা তোরাবোরা পর্বত মালায় আল-কায়দাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে,তখন তিনি গিরীপথ ধরে ইরানে চলে আসেন ৷ ইরান থেকে লেবানন হয়ে পরে ইরাকে প্রবেশ করেন ৷
.
২০০৩ সালে আহমাদ ফাদেল ইরাকে একটি নতুন গ্রুপ তৈরি করেন ৷ "জামা'আতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদ" নামে এই দলটি ইরাকে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে ৷ আহমাদ ফাদেল নতুন উপাদী গ্রহন করে ৷ আবু মুসআ'ব আজ-জারকায়ী এই নামে তিনি প্রশিদ্ধি লাভকরেন ৷ ২০০৪ সালে জারকায়ী এক আমেরিকান জিম্মীকে জবাই করে হত্যা করেন ৷অনলাইনে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেন ৷আমেরিকান সৈন্যরা ভিডিও দেখে হ্রদরোগে আক্রান্ত হয় ৷ অনেকে আত্মহত্যা করে ৷
.
২০০৬ সাল,শাইখ জারকায়ী উসামা বিন লাদেনকে বায়াত দিয়ে ছিলেন ২০০৪ রে ৷ ফলে "জামাআতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদ" আল্-কায়দার অঙ্গসংঘটন হয়ে যায় ৷ ইরাকে একাধিক জিহাদী গ্রুপ ছিলো ৷ আল-কায়দা ছিলো তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ৷ মুজাহিদীনের মাঝে ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আল-কায়দা সকল জামাতের অংশ গ্রহণে একটি ঐক্য পরিষদ ঘঠন করে ৷ মাজলিসে শুরা আল-মুজাহিদীন নামে এই ঐক্য পরিষদের অধিনে জিহাদী গ্রুপগুলো কাজ করতে থাকে ৷ প্রতিটি গ্রুপ তাদের ব্যক্তিগত কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ৷ মাজলিসু শুরা আল-মুজাহিদীন নামের অধিনে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করে ৷ এই পরিষদের প্রধান ছিলেন আবু মুস'আব আজ-জারকায়ী ৷ শাইখ উসামার নির্দেশেই ইরাকে এতো বড়ো ঐক্য তৈরি হয় ৷
.
মাজলিসু শুরা আল-মুজাহিদীন এর অন্তরভূক্ত জিহাদী গ্রুপগুলোন তালিকা ৷
১: জামাআতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদ ৷
২: জাইশু তায়েফায়ে মানসুরা ৷
৩: সারিয়া আনসার আত-তাওয়হীদ ৷
৪: সারিয়াল জিহাদ আল-ইসলামিয়া ৷
৫: সারিয়া আল-গুরাবা ৷
৬: কাতাইবু আহওয়াল ৷
৭: জাইশু আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ৷
৮: কাতাইবু আল-মুরাবিতীন ৷
৯: কাতাইবু আল-আনবার ৷
.
একটি ভুল সংশোধন ৷ আমি আইএস সমর্থকদের একথা দাবি করতে দেখেছি যে, তারা বলে: শাইখ বাগদাদী আল-কায়দাকে কেন বাই'আত দিবেন ..? অথচ বাগদাদীর নিজস্য একটি জিহাদী গ্রুপ আছে ৷ বাগদাদী নিজ পকেটের টাকা দিয়ে সেই গ্রুপটি চালান ৷ গ্রুপটির নাম হলো "জামাআতে তাওয়াহীদ ওয়াল জিহাদ " ৷
.
উপরে আইএস সমর্থকদের এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানওয়াট, গাজাখুরী ৷ কারণ আপনারা জানেন যে "জামাতে তাওয়হীদ ওয়াল জিহাদের" প্রতিষ্ঠাতা সয়ং আবু মুসআব আজ-জারকায়ী ৷ এবং তিনি উসামা রঃ কে বায়াত দেয়ার কারনেই "জামাতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদ" আল-কায়দা ইন ইরাক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ৷ সুতরাং বাগদাদী কে "জামাতে তাওহীদ ওয়াল জিহাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা বলা মিথ্যাবাদীদের পক্ষেই সম্ভব ৷ সেই সময় বাগদাদী "জাইশু আহলি আস-সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ" এর শুরা সদস্য ছিলো ৷ কিন্তু আফসোস, আমাদের দেশীও আইএস সমর্থকরা নিজেদের শ্রেষ্ঠেত্ব প্রমাণ করার জন্য যতসব মিথ্যার জন্ম দেয় ৷
.
২০০৬ সালের ৮ জুন আমেরিকার বিমান হামলায় শাইখ আবু মুসআব আজ-জারকায়ী শহীদ হন ৷ শাহাদাতের পর তার লাশকে আমেরিকানরা অনেক অপমান করে ৷ শাইখের ছবি টাইলসের উপর ফিট করে আমেরিকার সদর দফতরের সিড়িতে সেই টাইলস ব্যবহার করা হয় ৷ শাইখের খণ্ড-বিখণ্ড লাশের ছবি শহরের বিভিন্ন বিলবোর্ডে ঝুলিয়ে রাখা হয় ৷ আল্লাহ শাইখকে শহীদ হিসেবে কবুল করুক ৷
৮/৬/২০০৬ ইং,সন্ধায় ইরাকের বাকুবা শরহে মার্কিন বিমাণ হামলায় শাইখ আবু মুসআ'ব আজ-জারকায়ী শহীদ হন ৷ স্মৃতি হিসেবে রেখে যান একটি শক্তিশালী মুজাহীদ গ্রুপ ৷ শত্রুর ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুব কঠর ৷ বিধর্মীদের ধর্মীও উপাসনালয়ে হামলা করা তিনি বৈধ মনে করতেন ৷ শাইখ জারকায়ীর কঠরতা নিয়ন্ত্রনে রাখতে উসামা বিন লাদেন রহঃ ঘন ঘন দিকনির্দেশনা দিতেন ৷ জারকায়ীর শাহাদাতের পর এই কঠরতার মাত্রা কঠিন থেকে কঠিনতর বৃদ্ধি পায় ৷
.
শাইখ জারকায়ীর শাহাদাতের পর, মাজলিশু শুরা আল-মুজাহিদীন বা আল-কায়দা ইন ইরাক নেতৃত্ব শূণ্য হয়েপরে ৷ "জাইশু তাইফায়ে মানসুরা"-এর এক সময়ের প্রধান, শাইখ আবু ওমার আল-বাগদাদীকে কায়দা ইন ইরাকের আমীর নির্ধারন করা হয় ৷ এবং আবু হামজা আল-মুহাজির কে কায়দা ইন ইরাকের সামরিক প্রধান হিসে নির্বাচন করা হয় ৷ ৷
.
শাইখ আবু হামজা এক সময় আইমান আলজাওয়াহিরীর সহযোগী ছিলেন ৷ আফগানে কায়দার আল-ফারুক সামরিক ক্যম্পে তিনি ছিলেন ৷ জিহাদের ময়দানে তিনি খোরাসানের মুজাহীদ হিসেবে সম্মানের পাত্র ছিলেন ৷ অপর দিকে আবু ওমর আল-বাগদাদী ইরাকের বাইরে পরিচিত কেও নন ৷ আফগান জিহাদেও তার কোন ভুমিকা নেই ৷ তাই আল-কায়দার প্রতি তার দায়বদ্ধতা অনেক কমছিলো ৷ যদিও তিনি আমির হওয়ার পর শাইখ উসামাকে বাই'আত দিয়ে ছিলেন ৷
.
দায়ীত্ব গ্রহণেন পর, তিনি পূর্বের চেয়ে আরো কঠিন যুদ্ধ-নীতি গ্রহণ করেন ৷ তিনি কায়দার কেন্দ্রীও দিকনির্দেশনার তোওক্যা করতেন না ৷ জাইশু শুরা আল-মুজাহিদীন বা কায়দা ইন ইরাক ধর্মীও উপাসনালয়ে হামলা করা জায়েয মনে করতো ৷ আহলুস সুন্নার মসজিদে হামলা করাকেও তারা জায়েয মনে করতো ৷ একজন শত্রুকে হত্যার জন্য প্রয়োজনে তিনশত নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা বৈধ মনে করতো ৷ আপনি ২০০৩-৯ এর পত্রিকাগুলো খুললেই দেখবেন শিয়াদের ধর্মীও স্থাপনা ও উৎসবে আত্মঘাঁতী হামলায় হাজার হাজার শিয়া মাড়া গেছে ৷ ইরাকে খ্রিষ্টান গির্জাতেও তারা হামলা চালাতো ৷ ঐ সকল হামলা হয়তো কোন রাজনৈতিক বা সামরিক কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করেই করা হতো ৷ কিন্তু হাজার হাজার নিরোহ মানুষ হত্যার বৈধতা তো ইসলামে নেই ৷
.
উপরের কথাগুলো থেকে কিছু ভাই আমাকে ভুল বুঝতে পারেন ৷ আমি শিয়াদের পক্ষপাতিত্ব করছি না ৷ বরং জায়েয এবং না জায়েয নিয়ে আলোচনা করছি ৷ যাতে পাঠক বুঝতে পারে যে, কিভাবে কায়দা ইন ইরাক তাকফির রোগে আক্রান্ত হলো ৷ রাসূল সঃ কখনো বিধর্মীদের উপাসনালয়ে আক্রমণ করেন নি ৷ খোলাফায়ে রাশেদীনও করেন নি ৷ সাহাবারাও করেন নি ৷ যুগে যুগে মুসলিম মণীষীরাও ধর্মীও উপাসনালয়ে হামলা করেন নি ৷ ইসলামী যুদ্ধনীতিতে আছে যে, শত্রু যদি যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যায়, তাকে পালানোর সুযোগ দেয়া ৷ পিছু ধাওয়া না করা (যদি সে শত্রুদের নেতা গোঁচের কেউ না হয়) ৷ তাহলে নিরোহ মানুষের উপর মসজিদে বোমাহামলা করা শরীয়ত কিভাবে সমর্থন করবে..!
.
আপনি একজন ভদ্রলোক ৷ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন ৷ পথে কুকুর আপনাকে কামড় দিলো ৷ আপনি কি পারবেন মানুষ হয়ে ঐ কুকুরটি কামড়াতে ..!! আমরা মুসলিম ৷ শত্রু আমাদের সাথে যতোই হিংস্র আচরণ করুক, আমরা তাদের সাথে তেমন করতে পারি না ৷ কারণ আমাদের আল্লাহ আছে ৷ আমাদের সামনে কোরান ও হাদীস আছে ৷ আমরা কিছুতেই তার অবাধ্য হতে পারি না ৷
.
১৩/১০/২০০৬ তারীখে আবু ওমার আলবাগদাদী "দাউলাতুল ইরাক" ঘোষণা করেন ৷ ফালুজা,আনবার,কিরকুক ইত্যাদী শহরগুলো নিয়ে দাউলা বা স্টেট ঘঠন করা হয় ৷ যেই শহরগুলো নিয়ে দাউলাতুল ইরাক গঠন করা হয়, সেই শহরগুলো কায়দা ইন ইরাকের পূর্ণ নিয়োন্ত্রন ছিলো না ৷ প্রাই ইরাকী সেনা বাহিনীকে সেখানে টহল দিতে দেখা যেতো ৷ আমেরিকান বাহিনী বিভিন্ন সময় সেখানে অভিযান চালাতো ৷ মূলতো "দাউলাতুল ইরাক" ঘোষণা দিলেও সেখানে নিজেদের একক নিয়োন্ত্রন ছিলো না ৷ আর একক নিয়োন্ত্রন প্রতিষ্ঠার আগে "দাউলা" ঘোষণা করা কায়দার কেন্দ্রীও নেতাদের আদর্শ ছিলো না ৷ আল-কায়দার সাথে কোন পূর্ব পরামর্শ ছাড়াই "দাউলা" ঘোষণা করা হয় ৷ ২০০৭ সালে উসামা বিন লাদেন রহঃ অডিও বার্তায় ইরাকের সকল জামাতকে আবু ওমার আলবাগদাদীকে বাই'আত দেয়ার আহ্বান জানান ৷ ভেদাবেদ ভুলে গিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ৷ উসামা রহঃ এর বার্তা প্রচারের পর, মাজলিশু শুরা আলমুজাহিদীন এর শুরা পরিষদ বাগদাদীকে বাই'আত প্রদান করে ৷ যারা তাকে আমির হিসেবে মানতে প্রস্তুত ছিলো না তারাও বাই'আত দেয় ৷ এতো কিছুর পরোও আলকায়দার ইরাক শাখার, আলকায়দার কেন্দ্রিও নেতাদের প্রতি আস্থা ছিলো না ৷ এবং তারা নিজেদের আলকায়দা পরিচয় দিতেও চাইতেন না ৷ এই অনাস্থার কারণ ছিলো উভয় জামাতের কর্মপন্থার ভিন্নতা ৷
.
কায়দা-আইএস উভয় জামাতের কর্মপন্থায় ভিন্নতা ৷ শাইখ আইমানকে আল-জাজিরার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনাদের এবং তাদের মাঝে পার্থক্যটা কী ? উত্তরে শাইখ আইমান বলেন, উভয়ের কর্মপন্থায় ভিন্নতা রয়েছে ৷ আক্রমণের ক্ষেত্রে কায়দাতুল জিহাদ সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করে ৷ মসজিদ,মার্কেট,উপাসনালয়,মিলনায়োতন এবং সমাগম স্থলে কায়দাতুল জিহাদ কখনোই আক্রমণ করে না ৷ নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষায় কায়দাতুল জিহাদ খুবই সতর্ক,সমাপ্ত ৷ পক্ষান্তরে কায়দার ইরাক শাখা এই বিষয়গুলোতে খুব অবহেলা করে ৷ একজন শত্রুকে হত্যার জন্য হাজারো নিরপরাধ মানুষ হত্যার ইতিহাস তাদের আছে ৷ শিয়াদের ঢালাউ ভাবে হত্যা করাকে তারা জায়েয মনে করে ৷ "শিয়া কাফের" এই মাসআলায় অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে ৷ যেই আক্বীদা বা ধর্মবিস্বাশের কারণে শিয়াদের কাফের বলাহয়, সেই আক্বীদা সব শিয়ারা রাখে না ৷ শিয়াদের মধ্যে অনেকগুলো ফেরকা আছে ৷ উলামায়ে কেরাম এই ফেরকাগুলোর মাঝে পার্থক্য করে থাকেন ৷ তবে ফেরকায়ে "জাফরিয়া"র কুফুরির ব্যাপারে সকলে একমত ৷ ফেরকায় জাফরিয়া মূলতো ইরান,ইরাক ও সিরিয়ার নেতৃত্ব পর্যায় রয়েছে ৷ সে হিসেবে এই তিন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা শুধু যায়েজ নয় বরং ফরজ ৷
.
ঢালাউ ভাবে সকল শিয়াদের হত্যা করা বৈধ মনে করা জায়েয নয় ৷ একজন নিরোপরাধ কাফের কেই তো হত্যা করা জায়েয নেই ৷ সেখানে একজন নিরোপরাধ শিয়াকে হত্যা কী করে জায়েয হতে পারে, যে আল্লাহ কে বিস্বাশ করে এবং সাহাবাদের প্রতি সুধারণা রাখে ৷ কায়দার কেন্দ্র থেকে কঠর নির্দেশ ছিলো যেন শিয়াদের মসজিদ ও ধর্মীও দিবোসগুলোতে হামলা চালানো না হয় ৷ কিন্তু কায়দার ইরাক শাখা এই নির্দেশগুলো আমলে নিতো না ৷ তারা নামাজরত শিয়াদের উপর আত্মঘাঁতী হামলা চালিয়ে শত শত মানুষ হত্যা করেছে ৷ আশুরার দিবসে তারা হামলা চালিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে ৷ এসব তারা এখনও করছে ৷ কায়দাতুল জিহাদের সিরিয়া শাখা আছে ৷ সেখানে তো পথে-ঘাটে, মসজিদে শিয়া জনসাধারণের উপর হামলা হয় না ৷ সিরিয়ান মুজাহিদীনরা শিয়া সৈন্যদের উপর হামলা চালায়, নিরপরাধ শিয়া জনসাধারণের উপর নয় ৷ এবং এটাই সঠিক নিয়ম ৷ (এখানে দীর্ঘ আলোচনার কারণ হলো যাতে পাঠক বুঝতে পারেন, কিভাবে ইরাকের এই দলটি দিনে দিনে তাকফিরের দিকে যাচ্ছিলো)
.
১৯/০৪/২০১০ইং তারিখে আমেরিকা শাইখ ওমার আল-বাগদাদীকে হত্যার দাবি করে ৷ ইতোপূর্বে ২০০৭-৯ সালেও ইরাকের মালিকী সরকার শাইখকে হত্যার দাবি কেরে ছিলো ৷ পরবর্তীতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয় ৷ ২০১০ সালে দাউলাতুল ইরাক এর শুরা পরিষদের পক্ষ থেকে এক অডিও বার্তায় শাইখের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয় ৷ আল্লাহ শাইখকে শহীদের মর্জাদা দান করুন ৷ আমিন ৷
১৯/৪/২০১০ সাল ৷ দাউলাতুল ইরাক এর পক্ষ থেকে এক অডিও বার্তায়, দাউলাতুল ইরাক এর আমীর আবু ওমার আল-বাগদাদী'র নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয় ৷এবং আবু বকর আল-বাগদাদীকে নতুন আমীর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় ৷
.
আবু ওমার আল-বাগদাদীর শাহাদাতের পর, কায়দা ইন ইরাক বা দাউলাতুল ইরাক নেতৃত্বহীনতায় ভূগছিলো ৷ নতুন আমির নির্ধারণের ব্যাপারে তারা একমত হতে পারছিলো না ৷ কারো মতে, এসময় কায়দা ইন ইরাকের পক্ষ থেকে জাওয়াহিরীর নিকট পত্র পাঠানো হয় ৷ পত্রে নতুন আমীর নির্ধারণ করে দেয়ার অনুরোধ করা হয় ৷ এই মতটি আমার কাছে দূর্বল মনে হয় ৷ একথার দলীল আমি পাইনি ৷
.
নতুন আমীর নির্ধারণের বিষয়টি ছিলো খুবই ঘোলাটে ৷ দাউলাতুল ইরাকের শুরাপরিষদে দুই ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য ছিলো ৷ তাদের কথার উল্টো করার ক্ষমতা শুরাপরিষদের ছিল না ৷ তারা দু'জন কোন সিদ্ধান্ত নিলে শুরা সদস্যের কেউ বিরোধিতা করতে সাহস করতো না ৷এদু'জন সাদ্দাম আমলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন ৷ তারা সাদ্দামের প্রথম সারির সহযোগী ছিলেন ৷ উপদেষ্টা ছিলেন ৷
.
তাদের একজনের নাম হুজ্জী বকর, দ্বিতীয় জনের নাম আবু আলী আল-আনবারী ৷ হুজ্জী বকরের দাপট ছিলো সবচেয়ে বেশি ৷ তিনি সাদ্দাম বাহিনীর আর্মী অফিসার ছিলেন ৷ সাদ্দামের প্রধান দুই সহযোগীর একজন ৷ বাথ পার্টির আদর্শের পুরোটাই তার মাঝে ছিলো ৷ তিনি প্রতিপক্ষ সহ্য করতে পারতেন না ৷ তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে দল পরিচালনা করতে বেশি পছন্দ করতেন ৷
.
দাউলাতুল ইরাক মূলত দু'টি প্রজন্মে বিভক্ত ৷ প্রথম প্রজন্ম, এরা হলেন শাইখ জারকাবী,আবু হামজা,আবু ওমার ৷ দ্বিতীয় প্রজন্ম শুরু হয়েছে আবু বকর আল-বাগদাদীকে দিয়ে ৷ প্রথম প্রজন্মের সাথে কায়দা ও বিশ্ববরেণ্য উলামায়ে কেরামের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো ৷ দাউলাতুল ইরাক নিয়ে জাওয়াহিরী ও অন্যান্য উলামাদের যে, প্রশংসা বাক্য আছে, তা কিন্তু প্রথম প্রজন্মকে কেন্দ্র করে ৷ যারা এই ময়দানে নতুন তারা এখানে ভুল করে ৷ প্রথম প্রজন্মের জন্য প্রশংসা দ্বিতীয় প্রজন্মের উপর প্রয়োগ করে ৷ এবং বলে, দাউলাকে তো একসময় তারা সমর্থন তরতো এখন করে না কেন ...ইত্যাদী ৷
.
আমরা এখন দাউলাতুল ইরাকের দ্বিতীয় প্রজন্ম নিয়ে আলোচনা করছি ৷ এবং এটাই এ-প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় ৷
.
দাউলাতুল ইরাকের দ্বিতীয় প্রজন্মে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন হূজ্জী বকর ৷ হুজ্জী বকরকে না বুঝলে দ্বিতীয় প্রজন্মকে বুঝা যাবে না ৷ আমাদের জানতে হবে, কিভাবে সাদ্দামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুজ্জী বকর দাউলার আস্থাভাজন হলেন..!
.
আবু ওমার আল-বাগদাদীর সময় হুজ্জী বকর দাউলায় যোগ দেয় ৷ তার ছিলো উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ ৷ দাউলার সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তিনি পরিচিতি লাভ করেন ৷ নিখুত দিকনির্দেশনা ও উন্নত যুদ্ধ কৌশলের কারণে তিনি আবু ওমার আলবাগদাদীর নৈকট্য লাভ করেন ৷ একসময় বাগদাদী হুজ্জী বকরকে ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না ৷ ফলে হুজ্জী বকর হয়ে যায় আমীর বাগদাদীর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ৷
.
১৯/৪/২০১০ সাল ৷ হুজ্জী বকর, আবু ওমার, আবু হামজা, দাউলাতুল ইরাকের এই তিন প্রধান সহ অরো কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ছিলেন ৷ আমেরিকা সেই বাড়িটিতে বিমান হামলা চালায় ৷ হুজ্জী বকর ছাড়া বাকি সকলে নিহত হয় ৷ বাগদাদী নিহত হওয়ার পর নতুন আমীর নির্বাচনে শুরা পরিষদে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় ৷ এভাবে কয়েক দিন কেটে যায় ৷
.
হুজ্জী বকর ঘোষণা দেন যে, আমি আবু বকর আল বাগদাদীকে আমীর হিসেবে বায়াত দিলাম ৷ হুজ্জী বকরের এই আচরণে সকলে অবাক হয় ৷ কারণ বাগদাদীর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রয়েছেন ৷ আবু সাইদ ইরাকী রয়েছেন ৷ যিনি বাগদাদীর উস্তাদ ৷ তিনি হাতে কলমে বাগদাদীকে শিক্ষা দিয়েছেন ৷ তিনি জাইশুল মুজাহিদীনের প্রধান ছিলেন ৷
.
=একটি কথা এখানে বলে রাখা উচিত ৷ আবু সাইদ ইরাকী বাগদাদীকে বায়াত দেন নি ৷ একারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেন ৷ জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে তিনি দামেশক চলে যান ৷ তখনও সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয় নি ৷ ২০১১ সালে বাগদাদী শাইখ জাওলানীকে সিরিয়া পাঠায় ৷ সিরিয়ায় যখন শাইখ জাওলানী নুসরাকে শক্তিশালী গ্রুপে পরিণত করেন, তখন বাগদাদী জাওলানীকে আবু সাইদ ইরাকীর উপর আত্মঘাঁতী হামলার নির্দেশ করেন ৷ জাওলানী এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন ৷
.
আবু সাইদ ইরাকীকে জাওলানী খুব ভালো করে চিনতেন ৷ ২০০৬ সালে আবু সাইদ ইরাকী আমেরিকার হাতে বন্দী হন ৷ তখন জাওলানীও আমেরিকার হাতে বন্দী হন ৷ এই দুই শাইখ একসাথে জেলে বছর খানিক ছিলেন ৷ জাওলানী খুব কাছ থেকে শাইখকে প্রত্যক্ষ করেন ৷ জাওলানীর ভাষায়, আবু সাইদ ইরাকী হলেন এক জন আল্লাহ ভিরু, পরহেযগার, কোরান-হাদীসের জ্ঞানে তার সমকক্ষ ইরাকে খুব কমো-ই ছিলো ৷ এ-কারণেই জাওলানী আবু সাইদ ইরাকীকে হত্যা করতে রাজী হন নি ৷ তিনি এখনও জীবিত আছেন ৷
.
বাগদাদীর বায়াত ভাঙ্গার কারণে যারা জাওলানীকে মুর্তাদ,কাফের,ক্ষমতা লোভী বলে গালাগাল করেন, তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন ৷ আজ যদি জাওলানী বাগদাদীর সাথে থাকতেন, তাহলে বর্তমানের চেয়ে জাওলানীর ক্ষমতা চারগুণ বেশি থাক তো ৷
-কিন্তু কেন তিনি বাগদাদীর বায়াত ভঙ্গ করলেন? দাউলাতুল ইরাক কেন "দাউলাতুল ইরাক ও শাম" ঘোষণা করতে গেলো? ইত্যাদী প্রশ্নের উত্তর আগামী পর্বগুলোতে থাকবে ইনশা আল্লাহ ৷
.
আবু বকর আল-বাগদাদী দাউলাতুল ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে ছিলেন না ৷ তিনি শুরা সদস্যদের মধ্যেও ছিলেন না ৷ দাউলাতুল ইরাকের এক জন কর্মী হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন ৷ একারণে ইমারতের দায়ীত্ব নিতে প্রথমে তিনি রাজি হন নি ৷
.
পর পর দু'জন আমীর বিমান হামলায় শহীদ হন ৷ বাগদাদী জানতেন যে, এবার শহীদদের কাতারে তাকেও শামীল হতে হবে ৷ তাই তিনি দায়িত্ব গ্রহণে ভয় পাচ্ছিলেন ৷ হুজ্জী বকর বাগদাদীকে অভয় দেন, এবং বলেন, আপনার সাথে আমি আছি কোন সমস্যা হবে না ৷
.
হুজ্জী বকরের সিদ্ধান্তের উলটো করার ক্ষমতা শুরা পরিষদের ছিল না ৷ হুজ্জী বকর সাদ্দামের সময়কার আরো কয়েক জন সেনা অফিসারকে দাউলাতুল ইরাকে যুক্ত করে ৷এদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দেয়া হয় ৷ এজন্য হুজ্জী বকরের বিরোধিতা করার ক্ষমতা কারো ছিলো না ৷ দাউলার শুরা সদস্যের অনেকে হুজ্জী বকরকে গুপ্তচর মনে করতো ৷ কিন্তু একথা প্রকাশ করার সাহস করতো না ৷
-আমি তাকে গুপ্তচর মনে করি না ৷ বরং তিনি সাদ্দামের আদর্শে কিছু করতে চেয়ে ছিলেন ৷ সাদ্দাম যেমন বাথ পার্টির উপরোস্থ নেতাদের হত্যা করে সর্বোচ্চ পদটি দখল করে ছিলো ৷ হুজ্জী বকর এমন কিছু করতে চেয়ে ছিলেন ৷
.
-হুজ্জী বকর ক্লিন শেভ করতেন ৷ বাগদাদীকে আমীর বানানোর পরথেকে তিনি দাড়ি লম্বা করতে শুরু করেন ;
.
দাউলাতুল ইরাক তার দ্বিতীয় প্রজন্মকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলো ৷ যার দু'জন আমীর ৷ একজন প্রত্যক্ষ আমীর "বাগদাদী", যার কথা আমরা সকলে জানি ৷ অন্য জন পরোক্ষ আমীর "হুজ্জী বকর", যাকে আমরা খুব কম চিনি ৷
.
দাউলাতুল ইরাক ভয় ও আশার মধ্য দিয়ে চলতে লাগলো ৷ উড়ে এসে জুড়ে বসা হুজ্জী বকরের ভয়ে সকলে "তটস্থ" ৷ নিচু পদস্থ কোন সদস্য উচ্চ পদস্থ নেতাদের তদারকি করার ক্ষমতা নেই ৷ কারণ কাউকে তদারকি করা মানে তাকে সন্দেহ করা ৷ আর সন্দেহ করা মানে আনুগত্য না করা ৷ আর যে আনুগত্য করবে না,তাকে নিজের কবর নিজেই খুঁদতে হবে ৷
.
বাগদাদী ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক সপ্তা পর, হুজ্জী বকরের আচরণে পরিবর্তন ঘটে ৷ তিনি ছিলেন গুরু গম্ভীর ৷ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন ৷ সবাইকে সন্দেহের নজরে দেখতেন ৷ শুধু বাগদাদী ও এক দুজন বাথ নেতা ছাড়া কাউকে সাক্ষাৎ দিতেন না ৷ তার সাথে কথা বলতে হলে আদব-লেহাজ রক্ষা করে কথা বলতে হতো ৷ সিরিয়ানদের স্বভাব হলো, তারা কথা বলার সময় হাত নেড়ে কথা বলে ৷ একবার হুজ্জী বকরের সামনে এক সিরিয়ান হাত নেড়ে কথা বলে ৷ এই অপরাধে হুজ্জী বকর তাকে অনেক শাস্তি দেয় ৷ হাত-পায়ে বেড়ী পড়িয়ে জেলে ফেলে রাখে ৷
.
হুজ্জী বকর নতুন করে শুরা পরিষদকে সাজান ৷ আবু আলী আল-আনবারীকে, দাউলাতুল ইরাকের সামরিক প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন ৷ আনবারী সাদ্দাম হুসেনের সেনা অফিসার ছিলেন ৷ রাতারাতি তিনি জিহাদী বনে যান ৷
.
হুজ্জী বকর বাগদাদীকে নিজের কাছে আগলে রাখেন ৷ নিচু পদস্থ নেতাকর্মীদের বাগদাদীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ ছিলো না ৷
.
হুজ্জী বকর শুরা সদস্যদের নিয়ে বাগদাদীর সাথে শাক্ষাত করেন ৷ তিনি দুটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ৷ ১: অভ্যন্তরীণ পুলিশ বাহিনী গঠন করা ৷ ২: খনিজ সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ নেয়া ৷
-অভ্যন্তরীণ পুলিশ বাহিনীর প্রধান হুজ্জী বকর নিজেই থাকেন ৷ এই পুলিশ বাহিনী বাস্তবে একটি গোপন ঘাতক দল ৷ এর সদস্যদের সকলেই সাদ্দাম আমলে সেনা সদস্য ছিলো ৷ বাগদাদী ক্ষমতা গ্রহণের একমাসের মাথায় পুলিশ বাহিনী ২০ জন নেতাকর্মীকে গোপনে হত্যা করে ৷ কয়েক মাসের মাথায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ১০০ বেশি লোক হত্যা করে ৷ যারা বাগদাদীকে বায়াত দিতে চাইত না, বা যাদের মধ্যে অবাধ্যতা দেখা যেতো তাদেরকে গোপনে হত্যা করা হত ৷
.
বাগদাদী এক সময় লক্ষ্য করলেন, হুজ্জী বকর ছাড়া নেতৃত্ব সামলানো সম্ভব নয় ৷ হুজ্জী বকর যেভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করেছে, ইতপূর্বে কেউ তেমন করতে পারেনি ৷ তাই বাগদাদীও হুজ্জী বকরকে অমান্য করতে পারতেন না ৷ যদিও তিনি "নামমাত্র" আমীর ছিলেন ৷
.
দ্বিতীয় যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, খনিজ সম্পদ ও দাউলাতুল ইরাকের অর্থায়োনে মনযোগ দেয়া ৷
-আবু ওমর আল-বাগদাদী রাষ্ট্রিয় অর্থায়োনের জন্য কিছু পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ছিলেন ৷ তা নিম্মরূপ...
১: শিয়া,খ্রিষ্টান, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী এবং ইরাক সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন সুন্নি মুসলিমদের সমস্ত সম্পদকে জাতীয়করণ করা ৷
২: তেলের খনিগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ৷ বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও সরকারী মিল-ফ্যাক্টরীগুলো নিজেদের দখলে নেওয়া ৷
৩: যে কনো কম্পানি যদি ইরাক সরকারের সাথে কোনো ধরণের চুক্তিতে আবদ্ধ থাকে, তাহলে সে কম্পানী দাউলাতুল ইরাকের আমীরের সম্পত্বি বলে গন্য হবে ৷
৪: যে সকল কম্পানি দখলে নেয়া সম্ভব হবে না, সেই কম্পানির মালিকদের হত্যার হুমকি দেয়া হবে ৷ অথবা বোম্বিং করে কম্পানি উড়িয়ে দেয়া হবে ৷
৫: মহা সড়কে চেকপোষ্ট বসিয়ে তেলবাহী ট্রাক থেকে কর আদায় করা হবে ৷
.
উপরের খাতগুলো থেকে প্রচুর অর্থ দাউলাতুল ইরাকের কোষাগারে জমা হতে থাকে ৷ এদিকে আমেরিকা ইরাক ত্যাগ করার পর, যুদ্ধের খরচও কমে আসে ৷ ফলে দাউলাতুল ইরাকের কোষাগারে অনেক সম্পদ জমা হয় ৷ একারণে দাউলাতুল ইরাকের অধিনে চাকরী নেয়ার জন্য শিয়ারাও আগ্রহী হয় ৷
.
সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, আলাদাকরে অর্থমন্ত্রণালয় খোলার প্রয়োজন দেখা দেয় ৷ হুজ্জী বকর নিজেই অর্থমন্ত্রীর দায়ীত্ব গ্রহণ করেন ৷
.
হুজ্জী বকর পূর্বের শুরা পরিষদ ভেঙ্গে, তের সদস্য বিশিষ্ট নতুন শুরা পরিষদ গঠন করেন ৷ যাদের সকলেই ইরাকী ৷ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই এমনটি করা হয় ৷
.
২০১১ সাল ৷ আমেরিকা ইরাক ত্যাগের পর, দাউলাতুল ইরাকে স্বস্তি নেমে আসে ৷ ফালুজা, আনবার, মসুল, দিয়ালা, সালাহুদ্দীন,নিনোভা ইত্যাদী সুন্নী শহরগুলো নিয়ে গঠিত হয়ে ছিলো দাউলাতুল ইরাক ৷
.
আমেরিকা ইরাক আক্রমণের পর, বৃহত্তম ইরাক ভেঙ্গে তিনটি স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরির প্রস্তাব করা হয় ৷ কুর্দী রাষ্ট্র, সুন্নী রাষ্ট্র, শিয়া রাষ্ট্র ৷ ইরাকের মালিকী সরকার বরাবর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছিলেন ৷ সেই প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে সুন্নী শহরগুলো নিয়ে দাউলাতুল ইরাক গঠন করা হয় ৷
.
আমেরিকা এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিলো ৷ তবে জিহাদীদের দিয়ে নয় বরং গণতান্ত্রীক উপায়ে একটি আলাদা সুন্নী রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলো ৷
.
২০১৪ সালে জুলাই-র প্রথম সপ্তাগুলোতে যখন আইএস ইরাকের শহরগুলো একে একে দখল করছিলো ৷ তখন জাতিসংঘে সুন্নীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র রাখা-না রাখার বিষয়ে ভোটাভুটি হচ্ছিলো ৷ ইসরাইল স্বতন্ত্র সুন্নী রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয় ৷ তুরস্কও পক্ষে ভোট দেয় ৷ আমেরিকা ভোট না দিলেও, বানরের মত বিচারকের ভূমিকায় ছিলো ৷ একমাত্র ইরান বিপক্ষে ভোট দেয় ৷
-অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা ৷
আমরা সকলে জানি যে খিলাফা ঘোষণার দুই সপ্তা পূর্বে আইএস ইরাকের একতৃতীয়াংশ দখল করে ৷ এটাকে তারা মহা বিজয় বলে প্রচার করে ৷ কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে, আইএস ১৪ সালে যেই শহরগুলো বিদ্যুৎ গতিতে দখল করলো, ৬ সালে সেই শহরগুলোর উপর ভিত্তি করেই তো দাউলাতুল ইরাক গঠন করা হয়ে ছিলো ৷ তাহলে কেন পূর্বের দখলকরা শহরগুলোর উপর নতুন করে দখল দেখানো হলো?
বিষয়টি স্পষ্ট করে বলি ৷ ১৪ সালের দখল করা ভূমীগুলো যদি প্রথম দখল হয়ে থাকে, তাহলে ৬ সালে ঘোষিত দাউলাতুল ইরাককে অস্বীকার করতে হবে ৷ আর যদি দাউলাতুল ইরাককে স্বীকার করা হয়, তাহলে ১৪ সালের বিজয়গুলোকে অস্বীকার করতে হবে ৷ আমি এখানে সার্বিক বিজয়ের কথা বলছি ৷ একথা আমি নিজেও স্বীকার করি যে, ১৪ সালে দাউলাতুল ইরাক কিছু নতুন শহর দখলে নিতে সক্ষম হয় ৷ কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি, ১৪ সালে ইরাকে যে সার্বিক বিজয় দেখানো হয়েছে, তা যদি মেনে নেই তাহলে দাউলাতুল ইরাক কোথায় যাবে?
একটি সমাধান আছে ৷ এবং সেটাই সঠিক ৷ শাইখ বাগদাদী এখানে একটি যুদ্ধকৌশল প্রয়োগ করেছে ৷ যেমন ভাবে কৌশলটি হুজ্জী বকরের পরামর্শে শামেও প্রয়োগ করা হয়েছিলো ৷
কৌশলটি হলো ৷ ইরাকের যেই শহরগুলোর উপর দখল নিয়ে ৬ সালে দাউলাতুল ইরাক ঘোষণা করা হয়, সেই শহরগুলোর উপর দাউলার ৫০% দখল ছিলো ৷ ১৪ সালে এসে সেই শহরগুলোতে ১০০% দখল পূর্ণ করা হয় ৷ ৫০% বিজয়কে তারা মিডিয়ায় ১০০% বিজয় বলে প্রচার করে ৷ যাতেকরে শত্রুরা ভয় পায় ৷ এবং খিলাফার ঘোষণাকে মুসলিম বিশ্বের কাছে মহনীয় করে তোলা যায় ৷
কিছু নতুন ভাই, যারা পূর্ব থেকে হুজ্জী বকর বিষয়ে কোন জ্ঞান না থাকার কারণে পুরো বিষয়টিকেই অস্বীকার করছেন ৷ কোন বিষয়ে যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে নতুন করে জানুন ৷ কিন্তু কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিষয়টি আপনি অস্বীকার করবেন .. এটা তো মূর্খোতার লক্ষণ ৷
পূর্বে বলেছিলাম যে হুজ্জী বকর আড়াল থেকে দল পরিচালনা করতে পছন্দ করতেন ৷ একারণে কোনো ভিডিও ডকুমেন্ট দিয়ে তার অস্তিত্ত প্রমাণ করা সম্ভব নয় (আমার জন্য) ৷
চলতি মাসে বা ১৫ সালের জুলাই মাসে নুসরা তার এক শুরা সদস্যকে দল থেকে বহিস্কার করেছিলো ৷ তার নাম "আবু সালেহ" ৷ তিনি মিডিয়ায় তার ও জাওলানীর মধ্যের কিছু মতবিরোধ তুলে ধরেন ৷ তখন খিলাফার আরব সমর্থকরা বিষয়গুলো নিয়ে খুব মাতামাতি করে ৷ আবু সালেহ খিলাফ সমর্থকদের বলেন "হুজ্জী বকরের সাথে আমি দশ বার দেখা করেছি ৷ প্রতি বারই তাকে আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে ৷ তিনি ছিলেন রহস্যময় ৷ কর্কষ স্বভাবের ৷ স্বল্পভাষী ৷ সুকৌশলী ৷ সন্দেহ প্রবণ ৷ শরিআ'তের বিধিবিধান শিখার প্রতি তার আগ্রহ ছিলো ৷ তিনি এমন কৈশলে তোমাকে মাসআলা জিজ্ঞেস করবে, তুমি বুঝতেও পারবে না যে, সে তোমার থেকে শিখছে" (তিনি যে আগে থেকে জানতেন না, তা আপনাকে বুঝতে দিবে না) ৷ হুজ্জী বকরের ধর্মীও জ্ঞানের দৈন্যতার কথা খিলাফার আরব সমর্থকরা স্বীকার করে থাকেন ৷ এরকম স্বল্প জ্ঞান নিয়ে তিনি আল-জাজীরার সকল সাংবাদিককে মুর্তাদ বলতেন ৷ তিনি ভোট প্রদানকারী সাধারণ জনগনকেও মুর্তাদ জ্ঞান করতেন ৷ যদিও ভোট প্রদানকারী মূর্খ হয় ৷ বিস্তারিত জান্তে এবং হুজ্জী বকররের ছবি দেখতে লিংকে ক্লিক করুন ৷ http://m.arabi21.com/story/827551/
আবু সালেহ, হুজ্জী বকরকে নিয়ে আরো অনেক ত্বথ্য দিয়ে ছেন ৷সেগুলো আগামী পর্বগুলোতে উল্লেখ করা হবে ৷ আবু সালেহ-এর বক্তব্য দ্বারা আমি একথা প্রমাণ করতে চেয়েছি যে, হুজ্জী বকর আমাদের কাছে নতুন হলেও ইরাক-শামের "শিশু-বাচ্চারা" তাকে ভালো করে চিনে, জানে ৷ ভাষার ভিন্নতা ও ভূমীর দূরোত্বের কারণে কি এই ত্বথ্যগুলো আমাদের কাছে মিথ্যা হয়ে যাবে ..!
.
- পাঠকের সুবিধার্থে একটি কথা বলে রাখা দরকার ৷ দাউলাতুল ইরাক ঘোষণা করা হয় ২০০৬ সালে ৷ দাউলাতুল "ইরাক & শাম" ঘোষণা করা হয় ২০১১/১২ সালে ৷ খিলাফা ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালের জুলাই-এ ৷ এই তিনটি স্টেপ জানা না থাকলে পাঠকের কাছে কথাগুলো অগোছালো মনে হবে ৷
আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো ৷ যারা কায়দা ও আইএসের মধ্যে বিরোধের কারণ খুঁজছেন, এবং এটাকে "হাইলাইট" করে প্রচার করে থাকেন ৷ তাদের জেনে রাখা উচিত যে, এখানে বিরোধটা কায়দা ও আইএসের নয় ৷ বরং এটা আইএসের অভ্যান্তরীণ বিরোধ ৷
আইএস নিজেদের বিরোধ মিটানোর জন্য মোকদ্দমা নিয়ে শাইখ জাওয়াহিরীর দরবারে আসে ৷ জাওয়াহিরী যখন উভয়ের মাঝে ফায়সালা করে দিলেন, তখন বাগদাদী ফায়সালা প্রত্যাখ্যান করলো ৷ কি সেই বিরোধ? কেন ফায়সালা প্রত্যাখ্যান করা হলো? ইত্যাদিপ্রশ্নের উত্তর আগামী পর্বগুলোতে থাকবে ৷ ইনশা আল্লাহ ৷
.
আমরা দাউলাতুল ইরাক নিয়ে আলোচনা করছিলাম ৷ আমেরিকার প্রস্থানের পর দাউলাতুল ইরাক নিজেকে আরও সংগঠিত করতে সক্ষম হয় ৷ আগের মত যুদ্ধাবস্থা এখন আর নেই ৷ বৃহত্তম ইরাক ভেঙ্গে তিনটি স্টেট গঠনের রাজনৈতিক সমর্থন যেহেতু আগে থেকেই ছিলো, তাই সকলে দাউলাতুল ইরাককে মৌন সমর্থন দিচ্ছিলো ৷ ফলে দাউলাতুল ইরাকের পরিধি বিস্তৃত করা, বা শিয়াদের শহরগুলো দখল করে দাউলার অধিনে আনার মত গ্লোবাল পরিকল্পনা দাউলাতুল ইরাকের তখন ছিলো না ৷ দাউলা নিজেকে গঠন করতেই ব্যস্ত ৷ এককথায় তখন ইরাক জিহাদ থেমে যায় ৷
.
২০১১ সাল ৷ সিরিয়ায় চারদিকে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে ৷ মুসলিম যুবকরা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলো ৷ শিয়া বাশার সরকার এক লাখ ত্রিশ হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করে ৷ সিরিয়ান মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানো গ্লোবাল মুজাহিদীনের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে ৷
.
দাউলাতুল ইরাক যখন কায়দার সাথে সুসম্পর্ক রাখতো,তখন কায়দা বিভিন্ন দেশ থেকে মুহাজিরীন সংগ্রহ করে ইরাকে পাঠাতো ৷ একারণে ইরাকে বিদেশী মুজাহিদীনের সংখ্যা ইরাকী মুজাহিদীন থেকে বেশি ছিলো ৷ বিশেষ করে সিরিয়ানদের সংখ্যা বেশি ছিলো ৷ যদিও নেতৃত্বে একমাত্র ইরাকীরাই ছিলো ৷
.
দাউলাতুল ইরাকের বিদেশী মুজাহিদীনরা সিরিয়া জিহাদে যোগ দেওয়ার পথ খুঁজতে লাগলো ৷ হুজ্জী বকর দেখলেন যে, এভাবে যদি মুহাজিরীনরা সিরিয়ার দিকে যেতে থাকে, তাহলে যেকোনো সময় দাউলাতুল ইরাকের "চেইন অব কমান্ড" ভেঙ্গে যেতে পারে ৷ হুজ্জী বকর বাগদাদীকে নতুন ফরমান ঘোষণার নির্দেশ দেন ৷ বাগদাদীর ঘোষণা পত্র সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় ৷ ঘোষণা পত্রে, সিরিয়া যেতে কড়া ভাবে নিষেধ করা হয়েছে ৷ যে সিরিয়া যাবে সে বিদ্রোহী হবে ৷ কারণ হিসেবে বলা হয়, সিরিয়ানরা গণতন্ত্রের জন্য বিদ্রোহ করছে ৷ গণতন্ত্র কুফুরী মতবাদ ৷
.
কিন্তু কড়াকড়িতে কোনো কাজ হলো না ৷ দাউলাতুল ইরাকের সৈন্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখাদেয়৷ একসময় সৈন্যদের মধ্যে ফাটল দেখা দেয় ৷ হুজ্জী বকর শুরা সদস্যদের সাথে পরামর্শে বসলেন ৷ দাউলাতুল ইরাকের নেতৃত্বে মুহাজিরীন দ্বারা গঠিত একটি দল সিরিয়া পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হলো ৷ যাতে দাউলাতুল ইরাকের ভাঙ্গন রোধ করা যায় ৷ এবং সিরিয়াগামী দলটি নতুন সৈন্য সংগ্রহ করে দাউলাতুল ইরাকে পাঠাতে পারে ৷ এদিকে শাম বাসীর জন্য দাউলাতুল ইরাকের "মুখ" রক্ষার মতো কিছু করা জরুরী ছিলো ৷
.
সিরিয়ায় যেই দলটি পাঠানো হবে, কে হবেন সেই দলটির আমীর ..? অবশ্যই আমীরকে সিরিয়ান হতে হবে ৷ এমন বিশ্বস্ত, বিচক্ষণ কে আছেন..? অনেক পরীক্ষা, নিরীক্ষার পর শাইখ আবু মুহাম্মদ আল-জাওলানীকে আমীর নির্ধারণ করা হলো ৷ "জাওলান" সিরিয়ার একটি শহরের নাম ৷ তিনি শান্ত ও মিশুক প্রকৃতির ৷ তিনি দাউলাতুল ইরাকের সাথে প্রথম থেকেই ছিলেন ৷ আমেরিকার হাতে বন্দী হয়ে তিন বছর বা চার বছর জেল খাটেন ৷ দাউলাতুল ইরাকের জন্য তার অনেক ত্যাগ রয়েছে ৷
.
২০১১ সালের অগাষ্টে শাইখ আবু বকর আল-বাগদাদী, শাইখ জাওলানীকে সিরিয়া অভিযানে প্রেরণ করেন ৷
.
আলজাজীরার সাংবাদিক আবু মানসুর-এর প্রশ্নোত্তরে জাওলানী বলেন, যখন বাগদাদী আমাকে সিরিয়া প্রেরণ করেন তখন আমার থেকে আনুগত্যের বাই'আত গ্রহণ করেন ৷ বাই'আত দেয়ার পূর্বে আমি জানতে চেয়েছি জাওয়াহিরীর (আল-কায়দার প্রধানের) নিকট তার বাই'আত আছে কি না ৷ তখন বাগদাদী বলেন "আমার গলায় জাওয়াহিরীর বাই'আত ঝুলানো আছে" ৷ জাওলানী বলেন, জাওয়াহিরীর নিকট বাগদাদীর বাই'আতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমি বাগদাদীকে বাই'আত দেই ৷ বিস্তারিত জানতে উটিউবে সার্চ দিন "بلا حدود لقاء امير جبهة النصرة ابو محمد الجولاني. الحلقة الثانية.
.
জাওলানীর বাই'আতের বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক লেখালেখি হয়েছে ৷ অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে ৷ আমি সংক্ষেপে এতটুক-ই বলবো যে, যিনি বাই'আত দিয়েছিলেন তিনিই ভালো জানেন যে, খিলাফার বাই'আত দিয়েছেন না কি আনুগত্য বা ছোট বাই'আত দিয়েছেন ৷ অতএব আপনি-আমি সুদূর বাংলায় বসে বিতর্ক না করে, বরং যিনি বাই'আত দিয়েছেন তার কথা মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে ৷
.
জাওলানীর নেতৃত্বে একটি দল সিরিয়ার মাটিতে পা রাখে (সম্ভব তারা সংখ্যায় সাত জন ছিলেন) ৷ তারা সকলে জাতিগত ভাবে সিরিয়ান ৷ বিভিন্ন দেশে জিহাদ করার অভিজ্ঞতা তাদের ছিলো ৷ দলটির নাম আন-নুসরা ফ্রোন্ট ৷ "নুসরা" শব্দটি আরবী ৷ যার অর্থ সাহায্য ৷ "জাবহাত" অর্থ ফ্রন্ট ৷ দাউলাতুল ইরাকের পক্ষ থেকে নির্যাতিত সিরিয়াবাসীর জন্য দলটি সাহায্য হিসেবেই প্রেরিত হয়েছিলো ৷ তাই দলটির নাম "নুসরা" রাখা হয় ৷
.
সিরিয়ার মাটিতে নুসরা নিজেকে আল-কায়না ইন সিরিয়া বলে পরিচয় দিতে থাকে ৷ হাজার হাজার মুসলিম যুবক নুসরাকে বাই'আত দেয় ৷ নুসরার এক মুজাহীদ, ভাই আব্দুল্লাহ ৷ যিনি আমাকে বিভিন্ন অডিও-ভিডিও তথ্য দিয়ে সাহায্য করে ছেন ৷ যিনি নুসরা ও দাউলাতুল ইরাকের বিভিন্ন মিটিং ও সভায় অডিও-ভিডিও রেকোর্ড করার দায়িত্বে ছিলেন ৷ তিনি আমাকে বলেন 'ইরাক থেকে আগত এই দলটিকে যখন আমরা বাই'আত দিচ্ছিলাম, তখন তাদের প্রশ্ন করতাম, কসম করে বলো তোমরা কি আল-কায়দা? তখন তারা বিভিন্ন ভাবে কছম করে বলতো, আমরা আল-কায়দা ইন ইরাক থেকে শামে প্রেরিত হয়েছি (শেষ) ৷
.
খুব স্বল্প সময়ে আন-নুসরার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ৷ বাশার সরকারের বিরুদ্ধে নুসরা সবচেয়ে কার্যকরী গ্রপে পরিণত হয় ৷ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মুহাজিরীন নুসরায় যোগ দিতে থাকে ৷ খলিজ, লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরোক্কো, তিউনিশিয়া,কাজাখস্থান,আফগানিস্তান, ককেসাস এবং উরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে মুহাজিরীনরা নুসরার নেতৃত্বে শামের জিহাদে অংশ নেয় ৷ আল-কায়দার বিদেশী যোদ্ধা সংগ্রহের খাতগুলো থেকে মুহাজিরিনদের শামে পাঠানো হয় ৷
.
দিনে দিনে নুসরার সৈন্য সংখ্যা বাড়তে থাকে ৷ একে একে সিরিয়ান শহরগুলো নুসরার অধীনে আসতে থাকে ৷ একসময় নুসরার সৈন্য সংখ্যা এবং অধিকৃত এলাকার আয়তন, দাউলাতুল ইরাকের দ্বিগুন হয়ে যায় ৷ সিরিয়াবাসীর আগামীর স্বপ্নের সাথে নুসরা মিশে যায় ৷ ২০১২ সালে যখন আমেরিকা নুসরাকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে, তখন লাখ লাখ সিরিয়াবাসী নুসরার পক্ষে মিছিল বের করে ছিলো ৷
.
সিরিয়া জিহাদ নিয়ে মিডিয়ার প্রপাগাণ্ডা ৷
-কোথাও যদি আগুন লাগে, তখন সেখানে আপনি তিন শ্রেণীর মানুষকে দেখতে পাবেন ৷ এক শ্রেণী আগুন নিভাতে যাবে ৷ দ্বিতীয় শ্রেণী চুরি করতে যাবে ৷ তৃতীয় শ্রেণী তামাশা দেখতে যাবে ৷
.
সিরিয়ায় যখন যুদ্ধের আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলতে শুরু করে, তখন কিছু লোক নির্যাতিত মানুষের পক্ষে লড়াই কারার জন্য যায় ৷ কিছু লোক অস্ত্র বিক্রি বা এক শত্রু দিয়ে আরেক শত্রু দমন করার মত স্বার্থোদ্ধার করে ৷ কিছু লোক দূরে বসে সিরিয়া জিহাদ নিয়ে হাতে তালি আর গালাগালি করায় ব্যস্ত হয়ে পরে ৷
.
"সিরিয়ার জিহাদীরা ইজরাইল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে" ৷
-উপোরের কথাটি আমি অস্বীকার করি না ৷ তবে আমাদের দেখা উচিত ইজরাইল কাদের চিকিৎসা দিয়ে ছিলো ৷ আমি যতটুকু জানি, ২০১২ সালে ফ্রি সিরিয়ান আর্মীর (সিরিয়ার একটি গণতন্ত্রপন্থী গ্রুপের) কিছু আহত সৈন্যকে ইজরাইল চিকিৎসা দিয়ে ছিলো ৷ এখানে বিস্ময়ের কিছু নেই ৷ কারণ, আমেরিকা, চীন, রাশিয়া যদি সিরিয়ায় অস্ত্র ব্যবসা করতে পারে তাহলে ইজরাইল চিকিৎসা ব্যবসা করতে দোষ কিসের ৷
ইজরাইলের সামনে দু'টি শত্রু ৷ উদীয়মান জিহাদী গ্রুপ, বাশার আল-আসাদ ৷ ইজরাইল চিন্তা করলো, সুন্নীদের দ্বারা যদি বাশারকে পরাস্থ করা যায়, তাহলে আমার অন্তত একটা শত্রু কমবে ৷
ব্যরেল বোমার আগুনে যার শরীর ঝলসে যায় সেই বুঝে যন্ত্রণা কাকে বলে ৷ তখন রুটির চেয়ে চিকিৎসা বেশি প্রয়োজন, চিকিৎসক যে-ই হোক না কেন ৷
রাসূল সঃ অসংখ্য হাদীসে সিরিয়া যুদ্ধের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন ৷ অতএব মিডিয়ার প্রপাগান্ডা শুনে এই মহান যুদ্ধ থেকে মুখফিরিয়ে নেওয়া কিছুতেই যায়েজ হবে না ৷
.
"নিকাহ জিহাদ"
এই বিশেষ পদ্ধতির জিহাদ আমি যেমন বুঝি না, তেমন পাঠকও হয়তো বুঝেন না ৷
নিকাহ জিহাদ হয়ত শিয়াদের "মুতা বিবাহ"-এর মত কিছু হবে ৷ অর্থাৎ কোন নারীর সাথে স্বল্প সময়ের জন্য সহবাসের চুক্তি করা ৷ বিনিময়ের সাথেও হতে পারে ৷ বিনিময় ছাড়াও হতে পারে ৷
সিরিয়া জিহাদের প্রতি মিডিয়ার সবচেয়ে বড় আঘাত হলো এই নিকাহ জিহাদের নাটক ৷ সিরিয়ার কয়েক জন ভাইকে নিকাহ জিহাদ নিয়ে প্রশ্ন করে ছিলাম ৷ তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন ৷
নিকাহ জিহাদ নাটকের মূল উৎস হলো, তিউনিসের এক শিয়া ঘেঁসা মুফতী ফতুওয়া দেন "মুসলিম নারীদের উচিত সিরিয়ায় তাদের মুহাজিরীন ভাইদের যৌনসঙ্গ দেওয়া ৷ এভাবে মুসলিম নারীরা সিরিয়া জিহাদে অংশ গ্রহণের সোওয়াব পাবে" ৷ এই ফতুওয়া শুনার পর, তিউনিসের কিছু নারী সিরিয়া চলে যায় ৷ এবং মুহাজির মুজাহিদীনের সাথে স্থায়ী বিবাহে আবদ্ধ হয় ৷ এই নারীদের সংখ্যা খুব-ই কম ৷ বরোজোড় বিশ জন ৷ মিডিয়া এই স্বাভাবিক বিবাহ পদ্ধতিকে "নিকাহ জিহাদ" নামে প্রচার করে ৷
Comment