আল-কায়েদার এসব অপারেশনগুলো হুদুদ?
না, জিহাদ ও নহী আনিল মুনকার?
মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে শরীয়তের এ সব পরিভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করা প্রয়োজন।
১- হুদুদ হচ্ছে ইসলামের দণ্ডবিধি। এগুলো বাস্তবায়নের জন্যে নির্ধারিত কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। যেমন-চুরির শাস্তি হাতকাটা বাস্তবায়নের জন্যে উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও চুরিকৃত বস্তুর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আবশ্যক।
২- জিহাদ এ'লায়ে কালিমাতুল্লাহের জন্যে লড়াই করা। এটা কাফেরদের বিরুদ্ধে হতে পারে, আবার জরুরিয়াতে দীন অস্বীকারকারী নামধারী মুসলমানদের বিরুদ্ধে হতেও পারে। যেমন- হযরত আবু বকর রাজি. নামধারী মুসলিম যাকাত অস্বীকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন।
৩- নহী আনিল মুনকার হচ্ছে শরীয়াহকর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে বাধা দেওয়া। এক্ষেত্রে এগুলো হুদুদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া শর্ত নয়। মিথ্যা বলা ও গীবতের ব্যাপারে শরীয়াতে নিষেধ এসেছে। কিন্তু এগুলোর নির্ধারিত কোনো শাস্তি নেই। তাই বলে কি এগুলো থেকে বারণ করা যাবে না?
সামর্থ্যানুযায়ী এগুলোর প্রতিরোধে তিনটি স্তরের যেকোনোটি অবলম্বন করা যাবে।
এবার আসুন, আমরা খুঁজে দেখি বাংলাদেশে পরিচালিত আল-কায়েদার এ অপারেশনগুলো কোনটির অন্তর্ভুক্ত হয়।
এগুলো বোঝার জন্যে প্রথমে আল-কায়েদার টার্গেটগুলো পড়া প্রয়োজন।
যদি আপনি এই টার্গেটগুলো পড়ে নেন তাহলে দেখবেন যে, এই টার্গেটগুলোর কোনোটাই হুদুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এরমধ্যে যিনার শাস্তি, চুরির শাস্তি এবং মদ্যপানসহ বিভিন্ন অপরাধে জর্জরিত অপরাধীদেরকে টার্গেট বানানোর কথা উল্লেখ নেই। অথচ এই অপরাধগুলো আমাদের দেশে ব্যাপক হারে বিদ্যমান। যদি এই অপারেশনগুলো হুদুদ হয়ে থাকত তাহলে কেনো এই অপরাধগুলোর কথা উল্লেখ নেই?
তাহলে এই অপারেশগুলো কী?
এগুলো হচ্ছে হচ্ছে জিহাদ ও নহী আনিল মুনকার। কীভাবে এগুলো জিহাদ ও নহী আনিল মুনকার সেটাই এখানে আলোচনা করছি।
বোঝার স্বার্থে আমরা প্রথমে আল-কায়েদার অপারেশগুলো দু'ভাগে বিভক্ত করি।
১- শাতিমদের হত্যা করা। ২- অশ্লীলতা প্রসারকারী সমকামীদেরকে হত্যা করা।
প্রথমটি হচ্ছে জিহাদ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে নহী আনিল মুনকার।
প্রথমটির দলীল-
কা'ব বিন আশরাফ, আবু রাফে ও আসওয়াদ আনসিসহ সব শাতিমদের কোনোটিকেই বিচারিক পদ্ধতিতে শাস্তি দেওয়া হয় নি। অন্য এলাকায় বিভিন্ন সাহাবী পাঠিয়ে গুপ্তহত্যা করানো হয়েছে। আর বুখারী শরীফসহ বিভিন্ন হাদীসের গ্রন্থে এগুলো হুদুদের অধ্যায়ে নয় বরং মাগাযী তথা যুদ্ধের অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে। এবং অপারেশনগুলোর বিভিন্ন নামও ছিল যেমন- সারিয়্যাহে মুহাম্মদ বিন মাসলামাহ।
যদি এগুলো হুদুদ হয়ে থাকে তাহলে কেনো এদের শাস্তি বিচারিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন হয় নি? কেনো হাদীসের গ্রন্থসমূহে কিতাবুল হুদুদে না এগুলোর স্থান দিয়ে কিতাবুল মাগাযীতে স্থান দেওয়া হলো?
এবার অনেকে বলবেন, যে, রাসুলুল্লাহের যুগে এই শাস্তিতো রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে কাদের নেতৃত্বে হচ্ছে? তাদেরকে জিজ্ঞেস করবো, যে,
আল-কায়েদার প্রধান ঘাটি কোথায়? ওরা কাকে আমীরুল মুমিনীন মানে?
যেভাবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য এলাকায় নিজের লোক পাঠিয়ে অপরাধীকে হত্যা
করিয়েছেন ঠিক সেভাবে আল-কায়েদা তাদের প্রধান ঘাটি থেকে নির্দেশ পাঠিয়ে
অপরাধীকে হত্যা করিয়েছে। মাওলানা
আসেম উমরের বক্তব্য এটা বোঝা যায়।
এরপরও কথার মধ্যে কিছু ফাঁক থেকে যায়, কেননা অনেকে আবার
কইবেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতো নিজস্ব লোক পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আল-কায়েদাতো এদেশের লোক দ্বারা কার্য সম্পাদন করেছে।
তাদেরকে বলবো, যে, একটু কষ্ট করে ভন্ড
মিথ্যুক নবী দাবিদার যিন্দীক আসওয়াদ আল-আনসির হত্যাকান্ড স্মরণ করুন। তাহলে দেখবেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়েমেনের স্থানীয় নেতাদেরকে চিঠি
লিখেছেন এই ভন্ডকে শায়েস্তা করার
জন্যে। এই নির্দেশ পেয়েই যুবক সাহাবী হযরত ফায়রুজ আদ-দায়লামি রাযি.'র
নেতৃত্বে আসওয়াদকে হত্যা করা হয়। তাহলে বোঝা গেলো যে, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে স্থানীয় লোককেও দায়িত্ব দেওয়া যায়।
দ্বিতীয়টির দলীল : (এটি নহী আনিল মুনকার)
১- এই ব্যাপারে প্রথমে দলীল হিসেবে হযরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু'র কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তাফসীরে ইবনে কাসীর সহ নির্ভরযোগ্য সব তাফসীরগ্রন্থেই সুরা নিসার ৬৫নং আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ আছে যে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হয়ে হযরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু'র দরবারে প্রার্থী হয়েছিল, তখন হযরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু পূর্ণ ঘটনা শোনার পর তিনি ওই মুনাফিককে হত্যা করে ফেলেন। পরে যখন এই সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলো তখন রাসুলুল্লাহ এ কথা বলেন নি, যে, 'উমর বিনা বিচারে হত্যা করেছে', 'উমর আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে', 'উমর কাল-পাত্র বুঝে নি'।
বরং বলেছেন, ... উমর কোনো মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারে না।
২- হোদায়বিয়া সন্ধির মধ্যে যে সব শর্ত ছিল এরমধ্যে একটি ছিল যে, মক্কা থেকে যদি কেউ মদীনায় চলে আসে তাহলে তাকে মক্কায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে ইসলামগ্রহণকারী মদীনায় আসা সাহাবী আবু বছীর রাজিয়াল্লাহ আনহুকে মক্কার কাফিরদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু তিনি পথিমধ্যে এক কাফিরকে হত্যা করে মদীনায় গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে আশ্রয় দেন নি। পরে তিনি সমুদ্র উপকূলে চলে যান। সেখানে একটি বাহিনী বানিয়ে মক্কার কাফিরদের উপর চোরাগুপ্তা হামলা শুরু করেন।
আচ্ছা, এটা কী চোরাগুপ্তা হামলার পক্ষে দলীল নয়?
৩ - সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদবি রাহ. তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ তারীখে ও দাওয়াত বা সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাসের দ্বিতীয় খন্ড শুধু ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.র জীবনীর উপর সীমাবদ্ধ করেছেন। এইগ্রন্থে একাধিকবার উল্লেখ আছে যে, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. 'হিসবাতুল্লাহ' নামে একটি বাহিনী গঠন করেছিলেন যেটির কাজ ছিল শহরের সব অন্যায়-অপরাধ প্রতিহত করা। তাঁকে যখন বলা হল যে, সরকার বিদ্যমান থাকাবস্থায় আপনারা কেনো আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন? তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন, যে, সরকার যেসব মুনকারের নিষেধ করবে না আমরা সেগুলো করবো।
সুতরাং যারা ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.'র ছাত্র শুধু ইমাম ইবনে কায়্যিম রাহ. পর্যন্ত নিজের ইলম নিয়ে যান, তারা কেনো আরেকটু সাহস করে তাঁরই শায়খ ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ'র জীবনী পাঠ করেন না?
না, নিজের থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে এই ভয়ে? ইসলাম আম্রিকি না হয়ে চৌদ্দবছরের হয়ে যাবে এই ভয়ে?
৪- পাকিস্তানের গভর্ণর সালমান তাসিরকে হত্যার কারণে যখন উম্মাহের মুজাহিদ মুমতাজ কাদরী শহীদ রাহ.কে ফাঁসি দেওয়া হয় তখন শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানি হাফিজাহুল্লাহের একটি অডিওবার্তা নেটে আসে। ওই বার্তায় তিনি প্রাসঙ্গিক আলোচনা এভাবে করেছেন যে, 'যদি কেউ এভাবে হত্যা করে ফেলে তাহলে তাঁর উপর কেসাস আসবে না। কেননা যাকে সে হত্যা করেছে প্রথম থেকে তার রক্ত হালাল ছিলো'। শুনুন পূর্ণ বক্তব্য, মূল আলোচনা ৫মিনিট-এ পাবেন। https://m.youtube.com/#/watch?v=s5t3LwFVPFY
মোটকথা, আমরা যদি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সব তথ্য-উপাত্ত দেখি, তাহলে কোনোভাবেই এ গুলো শরীয়াহ বহির্ভূত পাবো না। বেশির চে বেশি পাবো যে, কেউ কেউ হিকমাতের খেলাফ বলেছেন।
ইনশাআল্লাহ আমরা অন্যদিনের আলোচনায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করবো যে, এগুলো কীভাবে শতভাগ হিকমাহপূর্ণ।
এত দলীল-প্রমাণাদি থাকার পরও যদি কেউ বলে যে,
'... ইসলামি শাস্তিগুলো কোনোরকম স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনা না করেই প্রয়োগ করা হঠকারিতা এবং তা ইসলামের জন্যই ক্ষতিকর'।
তাহলে আমরা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে পড়ে যাই যে, উনি ইসলামকে সর্বকালে সর্বসাধারণের জন্যে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা মানেন কি না? না, ইহুদীদের মতো একেক সময় একেক ব্যক্তির জন্যে একেক আইন মানেন! যেভাবে ইয়াহুদী নিয়ন্ত্রিত আমেরিকা একেকজনের জন্যে একেক আইন করে থাকে।
এ কথা আমাদের সবাই জেনে রাখা প্রয়োজন যে, এ ব্যাপারে কোনো ইমামের ইখতেলাফ নেই যে, ক্ষেত্র বিশেষে কিয়াস করে ইজতেহাদ করার অবকাশ সে সব বিষয়ে রয়েছে যে গুলোর ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহে বর্ণনা পাওয়া যাবে না। আর যেগুলোর ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহে সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে সে গুলোর ব্যাপারে কোনো ইজতেহাদ বা কিয়াস নেই।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
'অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে'।[সুরা: আন-নিসা/৬৫]
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
'যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান'।[সুরা : আন-নিসা/১১৫]
না, জিহাদ ও নহী আনিল মুনকার?
মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে শরীয়তের এ সব পরিভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করা প্রয়োজন।
১- হুদুদ হচ্ছে ইসলামের দণ্ডবিধি। এগুলো বাস্তবায়নের জন্যে নির্ধারিত কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। যেমন-চুরির শাস্তি হাতকাটা বাস্তবায়নের জন্যে উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও চুরিকৃত বস্তুর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আবশ্যক।
২- জিহাদ এ'লায়ে কালিমাতুল্লাহের জন্যে লড়াই করা। এটা কাফেরদের বিরুদ্ধে হতে পারে, আবার জরুরিয়াতে দীন অস্বীকারকারী নামধারী মুসলমানদের বিরুদ্ধে হতেও পারে। যেমন- হযরত আবু বকর রাজি. নামধারী মুসলিম যাকাত অস্বীকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন।
৩- নহী আনিল মুনকার হচ্ছে শরীয়াহকর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে বাধা দেওয়া। এক্ষেত্রে এগুলো হুদুদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া শর্ত নয়। মিথ্যা বলা ও গীবতের ব্যাপারে শরীয়াতে নিষেধ এসেছে। কিন্তু এগুলোর নির্ধারিত কোনো শাস্তি নেই। তাই বলে কি এগুলো থেকে বারণ করা যাবে না?
সামর্থ্যানুযায়ী এগুলোর প্রতিরোধে তিনটি স্তরের যেকোনোটি অবলম্বন করা যাবে।
এবার আসুন, আমরা খুঁজে দেখি বাংলাদেশে পরিচালিত আল-কায়েদার এ অপারেশনগুলো কোনটির অন্তর্ভুক্ত হয়।
এগুলো বোঝার জন্যে প্রথমে আল-কায়েদার টার্গেটগুলো পড়া প্রয়োজন।
যদি আপনি এই টার্গেটগুলো পড়ে নেন তাহলে দেখবেন যে, এই টার্গেটগুলোর কোনোটাই হুদুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এরমধ্যে যিনার শাস্তি, চুরির শাস্তি এবং মদ্যপানসহ বিভিন্ন অপরাধে জর্জরিত অপরাধীদেরকে টার্গেট বানানোর কথা উল্লেখ নেই। অথচ এই অপরাধগুলো আমাদের দেশে ব্যাপক হারে বিদ্যমান। যদি এই অপারেশনগুলো হুদুদ হয়ে থাকত তাহলে কেনো এই অপরাধগুলোর কথা উল্লেখ নেই?
তাহলে এই অপারেশগুলো কী?
এগুলো হচ্ছে হচ্ছে জিহাদ ও নহী আনিল মুনকার। কীভাবে এগুলো জিহাদ ও নহী আনিল মুনকার সেটাই এখানে আলোচনা করছি।
বোঝার স্বার্থে আমরা প্রথমে আল-কায়েদার অপারেশগুলো দু'ভাগে বিভক্ত করি।
১- শাতিমদের হত্যা করা। ২- অশ্লীলতা প্রসারকারী সমকামীদেরকে হত্যা করা।
প্রথমটি হচ্ছে জিহাদ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে নহী আনিল মুনকার।
প্রথমটির দলীল-
কা'ব বিন আশরাফ, আবু রাফে ও আসওয়াদ আনসিসহ সব শাতিমদের কোনোটিকেই বিচারিক পদ্ধতিতে শাস্তি দেওয়া হয় নি। অন্য এলাকায় বিভিন্ন সাহাবী পাঠিয়ে গুপ্তহত্যা করানো হয়েছে। আর বুখারী শরীফসহ বিভিন্ন হাদীসের গ্রন্থে এগুলো হুদুদের অধ্যায়ে নয় বরং মাগাযী তথা যুদ্ধের অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে। এবং অপারেশনগুলোর বিভিন্ন নামও ছিল যেমন- সারিয়্যাহে মুহাম্মদ বিন মাসলামাহ।
যদি এগুলো হুদুদ হয়ে থাকে তাহলে কেনো এদের শাস্তি বিচারিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন হয় নি? কেনো হাদীসের গ্রন্থসমূহে কিতাবুল হুদুদে না এগুলোর স্থান দিয়ে কিতাবুল মাগাযীতে স্থান দেওয়া হলো?
এবার অনেকে বলবেন, যে, রাসুলুল্লাহের যুগে এই শাস্তিতো রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে কাদের নেতৃত্বে হচ্ছে? তাদেরকে জিজ্ঞেস করবো, যে,
আল-কায়েদার প্রধান ঘাটি কোথায়? ওরা কাকে আমীরুল মুমিনীন মানে?
যেভাবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য এলাকায় নিজের লোক পাঠিয়ে অপরাধীকে হত্যা
করিয়েছেন ঠিক সেভাবে আল-কায়েদা তাদের প্রধান ঘাটি থেকে নির্দেশ পাঠিয়ে
অপরাধীকে হত্যা করিয়েছে। মাওলানা
আসেম উমরের বক্তব্য এটা বোঝা যায়।
এরপরও কথার মধ্যে কিছু ফাঁক থেকে যায়, কেননা অনেকে আবার
কইবেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতো নিজস্ব লোক পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আল-কায়েদাতো এদেশের লোক দ্বারা কার্য সম্পাদন করেছে।
তাদেরকে বলবো, যে, একটু কষ্ট করে ভন্ড
মিথ্যুক নবী দাবিদার যিন্দীক আসওয়াদ আল-আনসির হত্যাকান্ড স্মরণ করুন। তাহলে দেখবেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়েমেনের স্থানীয় নেতাদেরকে চিঠি
লিখেছেন এই ভন্ডকে শায়েস্তা করার
জন্যে। এই নির্দেশ পেয়েই যুবক সাহাবী হযরত ফায়রুজ আদ-দায়লামি রাযি.'র
নেতৃত্বে আসওয়াদকে হত্যা করা হয়। তাহলে বোঝা গেলো যে, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে স্থানীয় লোককেও দায়িত্ব দেওয়া যায়।
দ্বিতীয়টির দলীল : (এটি নহী আনিল মুনকার)
১- এই ব্যাপারে প্রথমে দলীল হিসেবে হযরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু'র কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তাফসীরে ইবনে কাসীর সহ নির্ভরযোগ্য সব তাফসীরগ্রন্থেই সুরা নিসার ৬৫নং আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ আছে যে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হয়ে হযরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু'র দরবারে প্রার্থী হয়েছিল, তখন হযরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু পূর্ণ ঘটনা শোনার পর তিনি ওই মুনাফিককে হত্যা করে ফেলেন। পরে যখন এই সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলো তখন রাসুলুল্লাহ এ কথা বলেন নি, যে, 'উমর বিনা বিচারে হত্যা করেছে', 'উমর আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে', 'উমর কাল-পাত্র বুঝে নি'।
বরং বলেছেন, ... উমর কোনো মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারে না।
২- হোদায়বিয়া সন্ধির মধ্যে যে সব শর্ত ছিল এরমধ্যে একটি ছিল যে, মক্কা থেকে যদি কেউ মদীনায় চলে আসে তাহলে তাকে মক্কায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে ইসলামগ্রহণকারী মদীনায় আসা সাহাবী আবু বছীর রাজিয়াল্লাহ আনহুকে মক্কার কাফিরদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু তিনি পথিমধ্যে এক কাফিরকে হত্যা করে মদীনায় গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে আশ্রয় দেন নি। পরে তিনি সমুদ্র উপকূলে চলে যান। সেখানে একটি বাহিনী বানিয়ে মক্কার কাফিরদের উপর চোরাগুপ্তা হামলা শুরু করেন।
আচ্ছা, এটা কী চোরাগুপ্তা হামলার পক্ষে দলীল নয়?
৩ - সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদবি রাহ. তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ তারীখে ও দাওয়াত বা সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাসের দ্বিতীয় খন্ড শুধু ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.র জীবনীর উপর সীমাবদ্ধ করেছেন। এইগ্রন্থে একাধিকবার উল্লেখ আছে যে, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. 'হিসবাতুল্লাহ' নামে একটি বাহিনী গঠন করেছিলেন যেটির কাজ ছিল শহরের সব অন্যায়-অপরাধ প্রতিহত করা। তাঁকে যখন বলা হল যে, সরকার বিদ্যমান থাকাবস্থায় আপনারা কেনো আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন? তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন, যে, সরকার যেসব মুনকারের নিষেধ করবে না আমরা সেগুলো করবো।
সুতরাং যারা ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.'র ছাত্র শুধু ইমাম ইবনে কায়্যিম রাহ. পর্যন্ত নিজের ইলম নিয়ে যান, তারা কেনো আরেকটু সাহস করে তাঁরই শায়খ ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ'র জীবনী পাঠ করেন না?
না, নিজের থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে এই ভয়ে? ইসলাম আম্রিকি না হয়ে চৌদ্দবছরের হয়ে যাবে এই ভয়ে?
৪- পাকিস্তানের গভর্ণর সালমান তাসিরকে হত্যার কারণে যখন উম্মাহের মুজাহিদ মুমতাজ কাদরী শহীদ রাহ.কে ফাঁসি দেওয়া হয় তখন শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানি হাফিজাহুল্লাহের একটি অডিওবার্তা নেটে আসে। ওই বার্তায় তিনি প্রাসঙ্গিক আলোচনা এভাবে করেছেন যে, 'যদি কেউ এভাবে হত্যা করে ফেলে তাহলে তাঁর উপর কেসাস আসবে না। কেননা যাকে সে হত্যা করেছে প্রথম থেকে তার রক্ত হালাল ছিলো'। শুনুন পূর্ণ বক্তব্য, মূল আলোচনা ৫মিনিট-এ পাবেন। https://m.youtube.com/#/watch?v=s5t3LwFVPFY
মোটকথা, আমরা যদি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সব তথ্য-উপাত্ত দেখি, তাহলে কোনোভাবেই এ গুলো শরীয়াহ বহির্ভূত পাবো না। বেশির চে বেশি পাবো যে, কেউ কেউ হিকমাতের খেলাফ বলেছেন।
ইনশাআল্লাহ আমরা অন্যদিনের আলোচনায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করবো যে, এগুলো কীভাবে শতভাগ হিকমাহপূর্ণ।
এত দলীল-প্রমাণাদি থাকার পরও যদি কেউ বলে যে,
'... ইসলামি শাস্তিগুলো কোনোরকম স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনা না করেই প্রয়োগ করা হঠকারিতা এবং তা ইসলামের জন্যই ক্ষতিকর'।
তাহলে আমরা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে পড়ে যাই যে, উনি ইসলামকে সর্বকালে সর্বসাধারণের জন্যে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা মানেন কি না? না, ইহুদীদের মতো একেক সময় একেক ব্যক্তির জন্যে একেক আইন মানেন! যেভাবে ইয়াহুদী নিয়ন্ত্রিত আমেরিকা একেকজনের জন্যে একেক আইন করে থাকে।
এ কথা আমাদের সবাই জেনে রাখা প্রয়োজন যে, এ ব্যাপারে কোনো ইমামের ইখতেলাফ নেই যে, ক্ষেত্র বিশেষে কিয়াস করে ইজতেহাদ করার অবকাশ সে সব বিষয়ে রয়েছে যে গুলোর ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহে বর্ণনা পাওয়া যাবে না। আর যেগুলোর ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহে সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে সে গুলোর ব্যাপারে কোনো ইজতেহাদ বা কিয়াস নেই।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
'অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে'।[সুরা: আন-নিসা/৬৫]
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
'যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান'।[সুরা : আন-নিসা/১১৫]
Comment