দুনিয়াতে আমরা কত রকম ব্যবসাই তো দেখি, আজ আমরা ভিন্ন এক ব্যবসা নিয়ে কথা বলবো ইনশাআল্লাহ্। যে ব্যবসা নিয়ে কথা বলা মানুষ প্রায় ছেড়েই দিয়েছে, যে ব্যাবসা আজ আমাদের অন্তর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, অথচ এর মত লাভজনক ব্যবসা আর দ্বিতীয় টি নেই।
আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা সুরা আস-সাফ ১০-১২ নাম্বার আয়াতে বলেন,
"হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক ব্যাবসার সন্ধান দিবো যা তোমাদের কঠিন এবং যন্ত্রণাদায়ক এক আযাব থেকে বাঁচিয়ে দিবে। তোমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে, এবং তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে; এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরাবুঝতে। আল্লাহ্ তোমাদের গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন, এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন এক জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে ঝর্নাধারা প্রবাহিত থাকবে, তিনি তোমাদের কে আরো প্রবেশ করাবেন জান্নাতের স্থায়ী নিবাসস্থলের সুন্দর ঘরসমূহে; আর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সাফল্য"
আল্লাহ্* সুবহানাহু তায়ালা সুরা বাকারার ২৬১ নাম্বার আয়াতে বলেন,
"যারা নিজেদের ধন সম্পদ আল্লাহ্*র পথে খরচ করে তাদের উদাহরন হচ্ছে একটি বীজের মত, যা থেকে উৎপন্ন হয় সাতটি শীষ, আবার প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) একশ শস্য দানা। আল্লাহ্* তায়ালা যাকে চান তাকে বহু গুন বৃদ্ধি করে দেন, বস্তুত আল্লাহ্* হচ্ছেন বিপুল দাতা ও মহাজ্ঞানী"
___ (সুরা বাকারাহ ২৬১)
এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর (রহঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাস্তায় ব্যায়কৃত প্রত্যেকটি আমলের আজর ৭০০ গুন বৃদ্ধি পাবে।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যায়িদ ইবনে খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসুল (সাঃ) বলেন, যে আল্লাহর রাস্তায় একজন মুজাহিদ কে প্রস্তুত করে দিলো সে যেন নিজেই যুদ্ধ করলো, যে একজন মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবারের দেখাশোনা করলো সেও জিহাদ করলো।
___ সাহিহ বুখারী
শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি (রহঃ) এর বিখ্যাত জিহাদে অংশগ্রহনের ৪৪ উপায় এর মধ্যে কিছু হচ্ছেঃ
নিজের সম্পদ দিয়ে জিহাদ
মুজাহিদিনদের জন্য অর্থ সংগ্রহ
মুজাহিদিনদের আর্থিক সাহায্য করা
মুজাহিদিনদের পরিবারের দেখাশোনা করা
শহীদ পরিবারের দেখাশোনা করা
যুদ্ধ বন্দী পরিবারের দেখাশোনা করা
আজ আমি আপনাদের এমন এক ব্যবসার কথা বলতে চাই যার তুলনায় আর কোন ব্যবসা সামনে দাঁড়াতেও পারবেনা! এমন এক ব্যবসা সারা পৃথিবীতে যার দ্বিতীয় কোন উদাহরন কেউ দিতে পারবেনা! এমন এক ব্যবসা যার সমতুল্য আর কিছুই নাই! এই ব্যাবসার কথা কিন্তু আমি নিজে বলছিনা, এই ব্যবসার কথা বলছেন, সমস্ত জাহানের মালিক, আসমান সমূহের মালিক, জমিন সমূহের মালিক, জান্নাত সমূহের মালিক, জাহান্নাম সমূহের মালিক, আরশের অধিপতি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আর মহান আল্লাহ্*র এই লাভজনক ব্যবসা সম্পর্কে জানার আগে আল্লাহ্ সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা প্রয়োজন। যেমন দুনিয়াবি কোন ব্যবসার আগে আমরা এর আগে পিছের মানুষ গুলো সম্পর্কে জানতে চাই! যার সামর্থ্য যত বেশি, যার টাকা পয়সা যত বেশি, যার যত ইন্ডাস্ট্রি আছে, যার কোটি কোটি টাকা আছে, যার কাছে দেশের পুলিশ র্যাতব জিম্মি, যার টাকার খেলায় মন্ত্রী এমপি পুতুল নাচ নাচে এমন কেউ যদি আমাদের কোন ব্যবসার প্রস্তাব দেয় সবাই তার এই প্রস্তাব লুফে নিবে। কারন সবাই জানে এই লোকের কাছে ক্ষমতা আছে, টাকা আছে, লবিং আছে, সবকিছুই আছে। সুতরাং এমন কোন বোকা আছে যে এমন লোকের ব্যাবসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিবে, কারন এমন লোকের সাথে ব্যবসায় কোন লস নাই! সুতরাং এমন ব্যবসার প্রস্তাব এক কথায় অসাধারন! এবার দেখি আমরা এখানে যে ব্যবসার কথা বলছি সেই ব্যবসা কার পক্ষ থেকে আসছে। তাকে আমরা কত টুকু চিনি!
আল্লাহ্ তিনি, যিনি ব্যাতিত আর কোন ইলাহ নাই, তিনি চিরঞ্জীব, চির স্থায়ী। আল্লাহ্ সমস্ত সৃষ্টি জগতের মালিক, আসমান সমূহের মালিক, জমিন সমূহের মালিক, জান্নাত সমূহের মালিক, জাহান্নাম সমূহের মালিক। তিনি মালিক জিবরীল (আঃ)। তিনি মালিক ইস্রাফীল আঃ, মিকাইল (আঃ) এর, আজরাইল (আঃ) এর। তিনি মালিক আরশ বহন কারী ফেরেশতাদের আর তিনিই মালিক সমস্ত আরশের। তিনি মালিক বিলিওন বিলিওন ফেরেশতাদের, তিনি মালিক সমস্ত সৃষ্টি জগতের। তিনি কখনো ঘুমাননা, কখনো ক্লান্ত হননা। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর ইশারা ব্যাতিত কোন কিছু হয়না, আর তাঁর জ্ঞানের বাইরে কেউ কোন কিছু লুকাতে পারেনা। তিনি খাওয়ান সাগরের সমস্ত প্রানী কে, আকাশের সমস্ত পাখিকে আর জমিনের সমস্ত প্রানীকে আবার তিনি জানেন সমুদ্রের তীরে ঠিক কতগুলো বালুকনা আছে! মায়ের গর্ভে তিনি নাপাক বীর্য কে রক্তপিন্ড বানিয়ে দেন, রক্ত পিন্ড কে সুনির্দিষ্ট আকৃতি দেন, তার ভিতরে হাড় তৈরি করেন আর সেই হাড়ের উপরে গোশতের আবরন দিয়ে সুন্দর মানুষ তৈরি করেন, তিনি কাউকে করেন ছেলে আবার কাউকে করেন মেয়ে। তিনি জীবন দেন, আবার তিনি মরন দেন। তিনি জীবিত থেকে মৃত বের করান আবার মৃত থেকে জীবিত বের করান। তার সমকক্ষ কেই নাই, তাকে চ্যালেঞ্জ করার মত কেউ নাই, তিনি সূর্য কে পূর্ব থেকে উঠান কারো সামর্থ্য নাই সেটাকে পশ্চিম থেকে উঠানোর আবার তিনি যদি সূর্যকে পশ্চিম থেকে উঠাতে চান কারো সাধ্য নাই সেটাকে পূর্ব থেকে উঠানোর! তিনি যদি কাউকে সম্মান দিতে চান কেউ তাকে অপমান করতে পারেনা আর তিনি যদি কাউকে অপমান করতে চান কেউ তার কোন উপকার করতে পারেনা। তিনিই আল্লাহ্, ইব্রাহীম (আঃ) রব্ব, মুসার (আঃ) এর রব্ব, ঈসা আঃ এর রব্ব, মুহাম্মদ সাঃ এর রব্ব। সৃষ্টির সমস্ত কিছু তাঁর প্রশংসা করে আর তাঁর তাসবিহ পড়তে থাকে। আল্লাহর কাছে থেকেই আমরা এসেছি আর তাঁর কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন।
সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি সুবহানাল্লহিল আজিম
আসলে আজ তো আমরা আল্লাহর পরিচয়ই ভুলে গেছি তাই আল্লাহ দেয়া ব্যাবসার প্রস্তাব আমাদের মনে কোন দাগ কাটেনা। এর চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আর কি হতে পারে যে, আল্লাহ পক্ষ থেকে সরাসরি ব্যাবসাও আজ আমাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে যায়।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের এক ব্যাবসার প্রস্তাব দিচ্ছেন। অনেক টা এমন যে, আমি আল্লাহ, কেউ আছো কি যে আমার সাথে ব্যাবসা করতে রাজি আছ! যেমন আল্লাহ কুরানে অন্য এক জায়গায় বলছেন, "কে এমন হবে যে আল্লাহ কে উত্তম ঋণ দিবে.." আল্লাহ নিজে আমাদের কে এক ব্যাবসার সন্ধান দিচ্ছেন। সেই ব্যাবসার প্রথম লাভ, কঠিন এক আজাব থেকে বাঁচিয়ে দিবে। ব্যাবসা বুঝতে হলে ব্যাবসার লাভক্ষতি গুলোও খুব ভালো ভাবে বুঝে আসা দরকার। না হলে ব্যাবসা মনে ধরেনা।
ব্যবসার প্রথম লাভঃ
কি এই কঠিন আজাব! এ হচ্ছে সেই আজাব যার শুরু হবে উলঙ্গ অবস্থায়, কেউ সেদিন মুখের ভরে হাঁটবে, কেউ বুকের উপর ভর দিয়ে ছেচড়িয়ে সামনে আগাবে, কারো জিহবা কুকুরের মত সামনে বেরিয়ে আসবে, ঘামের সাগরে মানুষ সাতার কাটবে, পিপাসায় কাতর হয়ে যাবে, মাথার উপরে কোন ছায়া থাকবেনা আর সূর্য থাকবে কয়েক হাত উপরে! এটা কোন দিন! বিচারের দিন। হাদিস শরিফে এসেছে, এই দিন হবে ৫০ হাজার বছর, আর আর এই ৫০ হাজার বছরের এক দিন আমাদের হিসাবের ৫০ হাজার বছর। আর এটা তো শুধু শুরু মাত্র! এদিন সবাই সবাইকে ভুলে যাবে, মা সন্তান কে চিনবেনা, কোন ধন সম্পদ কারো উপকারে আসবেনা। সেদিন কেউ কোন কথা বলার সাহস পাবেনা। সবাই নিশ্চুপ থাকবে। আল্লাহ্ বলেন সেদিন শুধু মাত্র সেই কথা বলার সাহস রাখে যাকে আল্লাহ্ কথা বলার অনুমতি দিবেন। আল্লাহ্ বলছেন সেই দিন কেউ যদি কোন ক্ষমতা রাখে তাহলে যেন এর ব্যাতিক্রম কিছু করে দেখায়। আল্লাহ্* বলবেন "ও আদম সন্তান যদি তোমাকে সারা পৃথিবী সমান স্বর্ণ দেয়া হতো আর আজ যদি তা মুক্তিপণ হিসাবে চাওয়া হতো তুমি কি তা দিতে? আদম সন্তান উত্তর দিবে অবশ্যই ইয়া আল্লাহ্। আল্লাহ্ বলবেন কিন্তু আমি তো তোমাদের কাছে এর চেয়ে অনেক কমই চেয়েছিলাম, কিন্তু আজ আর কোন কিছুই গ্রহন করা হবেনা। সেদিন মানুষের কর্মফলের প্রতিদান দেয়া হবে। আল্লাহ বলেন, সেদিন তারা সব কিছুই দেখতে পাবে যা তারা আগে করে এসেছিলো। আল্লাহ বলেন সেদিন কতক মুখ হবে উজ্জ্বল আর কতক মুখ হবে হতাশায় ভরপুর। আল্লাহর ব্যাবসার প্রথম লাভ হচ্ছে, তিনি আমাদের এই কঠিন আজাব থেকে বাঁচিয়ে দিবেন। এই আজাব এতই ভয়ঙ্কর যে শুধু মাত্র এই আজাব থেকে বাঁচতে পারাই আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় নেয়ামত! সুতরাং ব্যাবসার প্রথম লাভ, হাশরের ময়দানে কঠিন আজাব থেকে আল্লাহ বাঁচিয়ে নিবেন।
ব্যবসার দ্বিতীয় লাভঃ
আল্লাহ সমস্ত গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন। সারা জীবনে আমরা যত গুনাহ করেছি আল্লাহ সেই সমস্ত গুনাহ গুলোকে মাফ করে দিবেন। আমরা মনে করি আমরা অনেক নেক আমল করি, সালাত আদায় করি, সিয়াম রাখি, জাকাত দেই, সাদাকাহ করি, হাজ্জ করেছি আলহামদুলিল্লাহ্, তাসবিহ পড়ি, আর এই আমল গুলো আমাদের কে সন্তুষ্ট করে ফেলে। আমাদের এই আমল আমাদের এতটাই পরিতুষ্ট করে ফেলে যে আল্লাহ যখন গুনাহ সমূহ মাফের কথা বলেন তখন সেটা আমাদের মনে কোন প্রভাব ফেলেনা, আমরা নিজেদের কে সেই আয়াতের বাইরে মনে করি! আর তা যদি নাই হবে তাহলে কেন আমাদের মাগফিরাত দরকার হবেনা? কেন আমরা আল্লাহর গুনাহ সমূহ ক্ষমার অঙ্গীকারে উৎসাহিত হইনা? কেন ক্ষমার অঙ্গীকার আমাদের কাছে যথেষ্ট মনে হয়না? মাসের শেষে ৫০০০০ টাকার প্রতিশ্রুতি আমাদের যত টুকু অভিভূত করে আল্লাহর ক্ষমার প্রতিশ্রুতি কি আমাদের তারচেয়ে বেশি না হলেও ঠিক ততটুকু পরিমান অভিভুত করে! আরা তা যদি না করে তাহলে আসলে, আল্লাহর ক্ষমার অঙ্গীকার আমাদের কাছে ৫০০০০ টাকার সামনে বাতাসে মিলিয়ে যায়। রাসুল (সাঃ) বলছেন, "কেউ তার আমলের বিনিময়ে কখনই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া। সাহাবা গণ জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ এমন কি আপনিও না? রাসুল (সাঃ) বললেন, এমন কি আমিও না" হযরত উমার (রাঃ) কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয়ে বলতেন সম্ভব হলে আমি চাইতাম আমার আমলের কোন হিসাব নেয়া হবেনা, আর আমাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে। এমন অবস্থায় আমরা নিজেদের আমলের উপরে এত বেশি খুশি থাকি যে যখন আল্লাহ বলেন, "আমি তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিব তখন তা আমাদের অভিভূত করেনা। তা আমাদের মনে দাগ কাটেনা। আবু দারদাহ (রাঃ) বাগান বাড়ি সহ তাঁর পুরা একটা খেজুরের বাগান মুহূর্তের মধ্যে দান করে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র জান্নাতের ভিতরে একটা গাছের ওয়াদা পেয়ে। কথা হচ্ছিলো এই ব্যাবসার দ্বিতীয় লাভ, আল্লাহ সমস্ত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। এমনকি লাভ হিসাবে শুধু এইটাই অনেক বেশি আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আমাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন! একবার নিজেদের জীবনের দিকে তাকাই, আর চিন্তা করি আমার জীবনে কত গুনাহ আছে! আর সেই গুনাহ সমূহের হিসাব যদি আল্লাহ একটা একটা করে নেয়া শুরু করেন তাহলে আমাদের কি অবস্থা হবে!
ব্যবসার তৃতীয় লাভ জান্নাতঃ
এই ব্যাবসার প্রথমে আল্লাহ্ বলেছিলেন, বিপদ থেকে বাঁচিয়ে নিবেন, এরপর বলেছেন সমস্ত গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন এরপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম পুরস্কারের কথা আল্লাহ বলছেন, আর তা হচ্ছে জান্নাত! একজনের বিশ্বাসীর জন্য জান্নাতের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারেনা! আফসোস আজ জান্নাতও আমাদের মন গলাতে পারেনা। আমরা আজ জান্নাতের কাছেও বিক্রি হইনা। জান্নাতের চেয়ে বরং দুনিয়ার অনেক তুচ্ছ কোন বিষয়ে আমরা নিজেদের বিক্রি করে দেই। আর এর কারন এই যে, দুনিয়ার এই জীবন টা নিয়ে আমরা যত টা ভাবি জান্নাত নিয়ে কিংবা জান্নাতের সেই জীবন টা নিয়ে আমরা বিন্দু মাত্র চিন্তা করিনা। নিজেদের কে প্রশ্ন করি, আসলেই কি আমরা জান্নাতে থাকতে চাই? তাহলে আরো একবার প্রশ্ন করি, প্রতিদিন আমার এবং আপনার সেই নতুন ফ্ল্যাট টার কথা কিংবা নতুন কেনা জায়গা টার কথা, নতুন চাকরির কথা, প্রোমোশনের কথা, নতুন ব্যাবসার কথা আমরা কয়বার চিন্তা করি আর জান্নাতের সেই চিরস্থায়ী আবাস স্থলের কথা কয়বার চিন্তা করি! আল্লাহ্* বার বার করে আমাদের স্মরন করিয়ে দিচ্ছেন, আর আল্লাহ বলেন,
"মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে, নারী, সন্তান, স্তূপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্য ভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ, আর আল্লাহ্*- তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল। বল, আমি কি তোমাদের কে এসব হতেও অতি উত্তম কোন কিছুর সন্ধান দেব? যারা মুত্তাকী তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট এমন বাগান রয়েছে, যার নিম্নে নদী প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে। আর রয়েছে পবিত্র সঙ্গী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি, বস্তুত আল্লাহ্* বান্দাগনের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা কর এবং আমাদের কে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আল্লাহর প্রতি আজ্ঞাবহ, আল্লাহর পথে ব্যায়কারী, এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী"
--- সুরা আল ইমরান, ১৪-১৭
আল্লাহ আরো বলেন, "আর জেনে রেখো এ দুনিয়ার জীবন তো খেল তামাশার ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না।
এই দুনিয়া খেল তামাশার বস্তু ছাড়া আর কিছুই না, বরং আখিরাত হচ্ছে আমাদের আসল ঠিকানা। সেখানেই আমাদের জন্য অনন্ত জীবন অপেক্ষা করছে। কিন্তু এরপরেও আল্লাহর সেই কথাই সত্য হয়ে যায়, "শয়তান তাদের সামনে তাদের কাজ গুলোকে সুন্দর করে দেখায়" দুনিয়ার ব্যাপারে শয়তান আমাদের ফিতনায় ফেলে দেয়, এমন ফিতনায় ফেলে দেয় যে জান্নাতের কথাই ভুলে যাই। শেষ কবে আমরা নিজেদের জান্নাতের কথা কল্পনা করে আল্লাহর কাছে জান্নাত চেয়েছিলাম? নিজের বাড়ির টাইলস টা কি রঙের হবে, নতুন চাকরির পোস্টিং কোথায় হবে? নতুন ফ্ল্যাটে লিফট কবে দিবে? এই সব চিন্তা আমাদের পেরেশান করে তুলে কিন্তু আমার জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউস হবে নাকি অন্য কোন জান্নাতে হবে নাকি জাহান্নামে হবে, এই চিন্তা শেষ কবে করেছি! আমার বাড়িটা যেন অভিজাত এলাকায় থাকে, নতুন জায়গাটা যেন একটা অভিজাত এলাকায় থাকে যেখানে আমার স্ত্রী, আমার সন্তান সবাই যেন অভিজাত এবং সমাজের সম্মানিত মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এই চিন্তা বাস্তবায়নের জন্য দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমেও আমাদের কোন ক্লান্তি নাই, কিন্তু জান্নাত সমূহের মধ্যে কোন জান্নাতে থাকলে আল্লাহর সবচেয়ে কাছে থাকা যাবে এই চিন্তায় আমরাকখনো কি একটা রাত পার করেছি? জান্নাতের ব্যাপারে আমাদের যেন নিশ্চয়তা দিয়েই দেয়া হয়েছে! আমরা তো এমন যে, নিজে তাই আশা করি যা কখনো আশাই করিনা। তবে যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য তৃতীয় লাভ জান্নাত!
এরপরেও কি কেউ এমন থাকতে পারে যে আল্লাহর এই ব্যাবসার প্রস্তাবে সাড়া দিবেনা!
এবার দেখা যাক আল্লাহ কিসের বিনিময়ে এই ব্যাবসার প্রস্তাব দিচ্ছেন? মাত্র তিনটা কাজঃ
আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবাই আল্লাহর উপরে এবং তাঁর রাসুলের উপরেও ঈমান এনেছি। আমরা দুয়া করি আল্লাহ যেন আমাদের এই ঈমানে পবিত্রতা দান করেন। এরপরে, একবার ভেবে দেখেছেন কি আল্লাহর সেই অকল্পনীয় ব্যাবসা থেকে আমরা আর কত টুকু দূরে! মাত্র একটা কাজ বাকি। কি সেই কাজ? আল্লাহর রাস্তায় নিজের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করা। শুধু মাত্র এই একটি কাজ করলেই আমরা আল্লাহর ওয়াদা কৃত জান্নাতের অধিবাসী হয়ে যেতে পারি ইনশাআল্লাহ্। আমার ভাই এবং বোনেরা, আপনাদের অন্তরটা আমাকে কিছুক্ষনের জন্য ধার দিবেন। একটু লক্ষ্য করেন, আর দশটা লেখা পড়ার মত শুধু লাইন গুলো পড়ে শেষ করবেন না। আমরা জান্নাত নিয়ে কথা বলছি! জান্নাত হচ্ছে অনন্ত জীবনের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি! যে জীবনে কোন কষ্ট নাই, দুঃখ নাই। সবাই সেখানে থাকবেন আনন্দের সাথে। আল্লাহ বলেন সেখানে তাদের কোন দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করবেনা, সেখানে তারা চিন্তিত হবেনা, সেখানে তারা কোন বাজে কথা শুনবেনা। জান্নাতের অধিবাসীদের সঙ্গী হবেন আল্লাহর ফেরেশতা গণ, তারা জান্নাতীদের সালাম করবেন। সেখানে আপনার জান্নাতের প্রাসাদ গুলো আল্লাহ নিজে ফেরেশতাদের তৈরি করতে বলেছেন, আল্লাহ নিজে যেই প্রাসাদের ডিজাইন করেছেন, আর সেই প্রাসাদ সমূহ জান্নাতের আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়েছেন ফেরেশতাগন! কখোনো কি ভেবে দেখেছেন আপনার প্রাসাদ সমূহের ডিজাইনার আল্লাহ স্বয়ং নিজে! আর এই জান্নাতের ইন্টেরিওর ডিজাইন এর কাজ করেছেন আল্লাহর ফেরেশতাগন! এই দুনিয়ার পাহাড় দেখে, কিংবা সাগর দেখে কিংবা সুন্দর কোন জায়গা দেখে আমরা বিমোহিত হয়ে যাই, তাহলে কেন ভাবিনা এই সৃষ্টি যদি এমন সুন্দর হয় তাহলে জান্নাত কত সুন্দর হবে! জান্নাতের বর্ণনা বলে শেষ করে এমন সাধ্য কার! জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত, আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ! আল্লাহ বলবেন আমার বান্দারা এত দিন আমাকে না দেখেই আমার ইবাদত করেছে, আজ আমি আল্লাহ তাদের সামনে আসবো। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা জান্নাতীদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করে দিবেন আর মুহূর্তের মধ্যে জান্নাতীদের কাছে জান্নাতের সমস্ত নিয়ামত ম্লান হয়ে যাবে, মানুষ বিভোর হয়ে সাজদায় লুটিয়ে পড়বে! আল্লাহ কে একবার দেখার পর জান্নাতীরা শুধু আল্লাহ কে আরো একবার দেখার অপেক্ষাতেই থাকবেন। এমন জান্নাত থেকে আমরা মাত্র একটা কাজ দূরে আছি।
কিন্তু এটাও ঠিক যে শয়তান আসে, আর বলে এটা তো জিহাদ। এর মত কঠিন কোন কাজ আর নাই। আমার প্রিয় ভাই এবং বোনেরা। ইনশাআল্লাহ্ আজ আমি চেস্টা করবো এই কথাটা বলতে যে, আমি এবং আপনি, আমরা সবাই এর চেয়ে অনেক কঠিন কাজ করছি, অক্লান্ত ভাবে করেই যাচ্ছি। শয়তান আমাকে আর আপনাকে দিয়ে চাকরের মত সেসব কাজ করিয়ে নিচ্ছে আর জাহান্নামের কাছে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ঐ একই কাজ কিংবা তার চেয়েও অনেক সহজ কাজ যখন আল্লাহ্*র রাস্তায় করতে বলা হয় তখন শয়তান আমাদের ধোকা দিয়ে বসে। আর শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ্*র রাসুল (সাঃ) আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন, "আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রজীম" পড়তে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই বিতাড়িত শয়তান থেকে, যে শুধু আমাদের ধোঁকাই দিতে পারে এর বেশি কিছুই নয়। শয়তান আমাদের শেখায় রিজিকের জন্য সকাল সন্ধ্যা পরিশ্রম করতে হবে না হলে রিজিক আসবেনা। আর যদি কখনো রিজিক সংকুচিত হয়েই যায়, শয়তান তখন বাতাসে মিলিয়ে যায়, আর আমরা হাত তুলে বলি ইয়া আল্লাহ্* আমার উমুক সমস্যা সমাধান করে দেন। প্রিয় ভাই বোনেরা নিজের সাথে এই প্রতারনা আর কতদিন! চরম সঙ্কটের সময় যদি আল্লাহ্* আমার এবং আপনার রিজিকের সমস্যা দূর করে দিতে পারেন তাহলে অন্য সময় কেন আমার এই বিশ্বাস থাকেনা আল্লাহই আমার রিজিকের উত্তম ব্যাবস্থা করবেন। রিজিকের পিছনে আমরা আমাদের কি পরিমান সামর্থ্য আর সময় নস্ট করি তা আর আজ এখানে বলবোনা। এতো গেলো পরিশ্রমের কথা, এবার আসি সম্পদের কথায়। আজ পর্যন্ত জীবনে কত টাকা কত জায়গায় খরচ করেছেন তার একটা হিসাব কষতে পারবেন? শুধু এইটা চিন্তা করেন কত টাকা শখের পিছনে খরচ করেছেন। একটা মোবাই কিনেছেন, চুরি হয়ে গেছে, ঘড়ি কিনেছেন নষ্ট হয়ে গেছে। সন্তান কে দামী খেলনা কিনে দিয়েছেন ভেঙ্গে গেছে। থিম পার্কে গেছেন, এভাবে চলতেই থাকবে। কখনো ভেবে দেখেছেন এই সমস্ত সম্পদ আপনার জন্য চিরস্থায়ী কোন উপকার করেছে কিনা! আপনি হয়তো ভুলেই গেছেন গত বছর কত টাকা খরচ করেছেন শুধুমাত্র আপনার আর আপনার পরিবারের বিনোদনের জন্য (এখানে আমি প্রয়োজন এর জন্য যে খরচ তা বলছিনা) আপনার এই সম্পদ স্রেফ মিলিয়ে গেছে। কিন্তু খরচ করা প্রত্যেক টা পয়সা আপনার জন্য বিনিয়োগ হতে পারতো যদি তা আল্লাহ্*র রাস্তায় ব্যায় করা হতো। কমপক্ষে ১০ গুন আর এর বেশি কত হতে পারে তা আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ্*র রাস্তায় আমার এবং আপনার একটা সাদাকাহ আমাকে এবং আপনাকে জান্নাতের আরো কাছে নিয়ে যাবে, এভাবে প্রতিটি সাদাকাহ আমার এবং আপনার জন্য জান্নাতের বিনিয়োগ হিসাবে লেখা হয়ে যাবে! সুতরাং যেই জিহাদ কে আমরা ভয় পাচ্ছি কষ্ট আর সম্পদের কথা ভেবে, সেই একই কাজ আমরা সবাই করি, শয়তান আমাদের কে দিয়ে করিয়ে নেয়। আফসোস সেই কাজ কে আমরা জিহাদ করে নিতে পারতাম যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহ্*র পথে করা হতো। আল্লাহ্* তো বলেছেন আমি আমার বান্দার উপরে সাধ্যের বাইরে কোন কিছুই চাপিয়ে দেইনা। নিজের মন কে বিশ্বাস না করে বরং আল্লাহ্*র কথাকেই বেশি বিশ্বাস করি ইনশাল্লাহ, সব কিছু অনেক সহজ হয়ে যাবে।
যেদিন রাসূল (সাঃ) মক্কার রাস্তায় প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিলেন সেদিন থেকে হক্ক আর বাতিলের যুদ্ধ শুরু। সেদিন থেকে আল্লাহ্*র দুশমনেরা তাদের ক্যাম্প গোছানো শুরু করে দিয়েছিলো, তাদের তরবারি গুলোতে শান দিচ্ছিলো, বর্শার ফলা গুলো আরো তীক্ষ্ণ করছিলো। তারা তাদের সম্পদ গুলো ঢেলে দিতো যুদ্ধের ময়দানে যেন শুধু মাত্র মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং ইসলাম কে চিরতরে শেষ করে দেয়া যায়। আর এর বিপক্ষে মুসলিমরাও তাদের সাধ্য মত চেস্টা করে যাচ্ছিলেন, তাদের সব কিছুই কম ছিলো কিন্তু তারপরেও আল্লাহ্*র ওয়াদা সত্য হয়ে আসছিলো। কারন আল্লাহ্* ওয়াদা করেছেন, আল্লাহ্* তাঁর দ্বীন কে প্রতিষ্ঠিত করেই ছাড়বেন। আল্লাহ্* বলেন,
"কাফির রা তাদের মুখের এক ফুঁৎকারে আল্লাহ্*র নূর (দ্বীন) কে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ্* তা প্রজ্বলিত করেই ছাড়বেন এতে কাফিরদের যতই গায়ে জ্বালা ধরুক না কেন"
আজও সেই দৃশ্য এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি, আজো কুফরার রা তাদের অস্ত্র গুলোতে শান দেয় এই জমিনের বুক থেকে আল্লাহ্*র দ্বীনের নাম নিশান মুছে দেয়ার জন্য। কিন্তু তাদের জন্য আফসোস ছাড়া আর কিছুই নয়! শাইখ আওলাকি রহঃ বলেছিলেন, "আমার খুব আশ্চর্য লাগে এটা দেখে যে কুফফার রা বিলিওন বিলিওন ডলার ব্যায় করছে ইসলাম কে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য অথচ প্রতিদিন ইসলাম আগের চেয়ে আরো বেশি প্রসার পাচ্ছে। ইসলাম কে মুছে দেয়ার জন্য তারা তাদের সমস্ত অর্থ সম্পদ ঢেলে দিচ্ছে, সমস্ত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করছে, কিন্তু ইসলামের অগ্রযাত্রা রোধ করতে পারা তো অনেক দুরের কথা, বরং তাঁর নিজেরাই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে! আর জ্বলে পুড়ে মরছে। আল্লাহ্* সুবহানাহু ওতায়ালা সুরা আনফালের ৩৬ নাম্বার আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলেন,
" যে সব লোক সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা আল্লাহ্*র পথ হতে লোকদের বাধা দেয়ার জন্য তাদের ধন সম্পদ ব্যায় করেকরে থাকে, তারা তা ব্যায় করতেই থাকবে, অতঃপর এটাই তাদের দুঃখ ও অনুশোচনার কারন হবে। পরে তারা পরাজিতও হবে"
ইসলামের প্রিয় ভাই এবং বোনেরা! উম্মত ঘুমিয়ে ছিলো আর সেই উম্মতের সেই ঘুমের সুযোগে কাফির রা এই উম্মতের অনেক রক্ত ঝরিয়েছে! উম্মতের মা বোনের সম্মান নস্ট করেছে! আল্লাহ্*র ঘরকে শহীদ করে দিয়েছে, আল্লাহর পবিত্র কালাম কে পুড়িয়ে দিয়েছে, আল্লাহ্*র পবিত্র কালাম কে সামনে রেখে টার্গেট শুটিং করেছে। এ যুগের নব্য ফিরাউন রা মানুষের রব সেজে বসে আছে। উম্মতের প্রথম কিবলা মাসজিদুল আকসায় গুলি চালিয়ে মাসজিদুল আকসা কে ক্ষত বিক্ষত করেছে, আর তাদের নাপাক বুট পরে আর তাদের নাপাক শরীর নিয়ে পবিত্র মাসজিদুল আকসার পবিত্র জমিনের উপর দম্ভ ভরে পদচারনা করেছে। তখন উম্মত কোথায় ছিলো?
জানেন কোথায় ছিলো? মাসজিদুল আকসার ছবি ফ্রেমে বাধাই করে উম্মত ঘুমিয়ে ছিলো, ফেসবুকে ছিলো, শপিং এ ছিলো, বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলো, বার্থডে পার্টি তে ছিলো, ইনস্ট্যাগ্রামে ছিলো, হানিমুনে ছিলো, অবসর যাপনে ছিলো, সন্তান দের নিয়ে খেলায় মত্ত ছিলো, বাগান পরিচর্যায় ডুবে ছিলো, পায়ের নখ পালিশে মত্ত ছিলো, ফুটবল খেলার ম্যাচে ছিলো, মদের গ্লাসে ডুবে ছিলো, বন্ধু নিয়ে মেতে ছিলো, ফ্যাশন শোর র্যােম্পে ছিলো, এমনকি পতিতালয়ে বেশ্যার বিছানায় শুয়েও ছিলো!
উম্মতের গাফেলতির সুযোগ নিয়ে আল্লাহ্*র কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ রাসুল (সাঃ) কে এমন বিদ্রুপ করেছে যা মক্কার জাহেল কাফেররাও করার সাহস পায়নি! আর এই কাজে তার রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র পরিবার এবং উম্মুহাতুল মু'মিনাত দের কেও ছাড়েনি। আর এই উম্মতের জন্য রাসুল (সাঃ) কেঁদেছেন, উম্মুল মু'মিনিন আয়েশা (রাঃ) বর্ননা করেন, একদিন আমি রাসুল (সাঃ) কে বেশ প্রশান্ত এবং হাসি খুশি অবস্থায় দেখতে পেলাম। আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার জন্য আল্লাহ্*র কাছে দুয়া করেন। রাসুল (সাঃ) দুয়া করলেন, "ইয়া আল্লাহ্* আপনি আয়েশা কে ক্ষমা করে দেন, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তার ভবিষ্যতের গুনাহ ক্ষমা করে দেন. তার গোপন গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তার প্রকাশ্য গুনাহ ক্ষমা করে দেন. এবং এই দুয়া আয়েশা (রাঃ) কে এত সন্তুষ্ট করলো যে উম্মুল মু'মিনিন আয়েশা (রাঃ) হাসতে লাগলেন। প্রিয় ভাই বোনেরা একটু চিন্তা করেন। মনে করেন আমরা রাসুল (সাঃ) এর যুগে আছি আর রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার জন্য দুয়া করেন আর রাসুল (সাঃ) ঠিক এই দুয়াই করলেন আমার এবং আপনার জন্য। আমি এবং আপনি কতটুকু খুশি হবো? রাসুল (সাঃ) আমার এবং আপনার অতীত, ভবিষ্যৎ, গোপন, প্রকাশ্য সমস্ত গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ্*র কাছে দুয়া করছেন, এটা কত টুকু খুশির বিষয় হতে পারে? রাসুল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া আয়েশা এই এই দুয়া কি তোমাকে সন্তুষ্ট করেছে? আয়েশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ এই দুয়া কেমন করে আমাকে সন্তুষ্ট না করতে পারে? রাসুল (সাঃ) বললেন, আয়েশা, ওয়াল্লাহি আমি প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর আমার উম্মতের জন্য এই একই দুয়া করি! এই উম্মতের জন্য রাসুল (সাঃ) রক্ত ঝরিয়েছেন। ওয়াল্লাহি উহুদের যুদ্ধে, রাসুল (সাঃ) চিবুকে আঘাত করা হয়েছে, রাসুল (সাঃ) বর্ম ভেঙ্গে গালের ভিতরে ঢুকে গেছে, সেই লোহার টুকরা বের করতে গিয়ে এক সাহাবী তাঁর দুইটা দাঁত শহীদ করে দিয়েছেন, রক্ত গলগল করে রাসুল (সাঃ) পবিত্র দাড়ি মুবারক দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে, আল্লাহ্*র রাসুল (সাঃ), মুহাম্মদ (সাঃ) দুই হাত দিয়ে সেই রক্ত মুছার চেস্টা করছেন।
কিন্তু কে এই মুহাম্মদ (সাঃ)? কে? কি তাঁর পরিচয়? কি তাঁর সম্মান? কত টুকু তাঁর মর্যাদা? হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষ ৫০ হাজার বছর দাঁড়িয়ে থাকবে, মানুষ অসহায় হয়ে আদম (আঃ) এর কাছে যাবে, আল্লাহ্*র কাছে সুপারিশ করার জন্য, আদম (আঃ) বলবেন, আমি নিজেই আজ নিজেকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি, আদম (আঃ) বলবেন তোমরা নুহ এর কাছে যাও, নুহ (আঃ) বলবেন, আমি নিজেই আজ নিজেকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি, তোমরা মুসার কাছে যাও, মুসা (আঃ) বলবেন, আমি নিজেই আজ নিজেকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি, তোমরা ইব্রাহিম (আঃ) এর কাছে যাও, ইবরাহিম (আঃ) বলবেন আমি নিজেই আজ নিজেকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি, তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে যাও। মুহাম্মদ (সাঃ) এর মানুষ যাবে আর বলবে, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাদের জন্য শাফায়াত করেন। আল্লাহ্*র রাসুল (সাঃ) হাদিসে বলেন, আমি সেদিন আল্লাহর সামনে যাবো এবং সাজদায় নত হবো, আল্লাহ্* আমাকে সেদিন এমন কিছু প্রশংসার কথা শিখিয়ে দিবেন যা ইতিপুর্বে আর কাউকে শেখানো হয়নি, আল্লাহ্* আমাকে বলবেন, হে মুহাম্মাদ, তুমি শাফায়াত করো, তোমার শাফায়াত কবুল করা হবে। আমি শাফায়াত করবো, আর আল্লাহ্* আমার শাফায়ত কবুল করবেন।
এই সেই মুহাম্মাদ (সাঃ) উহুদের যুদ্ধে নিজের হাত দিয়ে দাড়ি থেকে রক্ত মুছছেন আর কস্টে অভিশাপ তাঁর মুখে চলে আসছে তিনি সাথে সাথে নিজেকে সামলে বললেন, "ও আল্লাহ তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও, তারা জানেনা তারা কি করছে" আর এই রাসুল (সাঃ) কে যখন গালি দেয়া হয়, যখন তাঁর পবিত্র পরিবার কে অসম্মান করা হয়, নোংরা ছবি আকা হয় তখন উম্মত ঘুমিয়ে থাকে! তখন উম্মত যুক্তি দিয়ে এই ঘৃণিত কাজের পক্ষে যুক্তি খোঁজার চেস্টা করে! অনেকে এর সাথে একাত্মতা পোষণ করে, অনেকের তো চোখ কপালে উঠে যায় শুধু এই চিন্তা করতে করতে যে এর মধ্যে অপরাধের কি আছে!
প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, কিন্তু এরপরেও আল্লাহ্*র পছন্দের কিছু যুবক ঠিকই দাঁড়িয়ে গেছে! আল্লাহ, তাঁর দ্বীন আর তাঁর রাসুল (সাঃ) এর অসম্মানের বিরুদ্ধে নিজের জান কে কুরবানী করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছেন! পৃথিবীর আনাচে কানাচে উম্মতের এক অংশ জেগে উঠছে। দুনিয়ার ধন দৌলত, মান সম্মান, পরিবার পরিজন, সুন্দরী স্ত্রী, আরাম আয়েশের জিন্দেগী, ক্যারিয়ার, সব কিছুকে তুচ্ছ করে জিহাদের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ছে জান্নাতুল ফিরদাউসে নিজেদের হিস্যা বুঝে নিতে আর আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের জন্য! আর আল্লাহ তাদের জন্য বিজয় কে সহজ করে দিচ্ছেন সুবহানাল্লাহ! কেন আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না, আফগানিস্থান থেকে রাশিয়ানরা লেজ তুলে পালিয়েছে, এখন অ্যামেরিকা আর তার দোসর ন্যাটো লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে, ইরাক থেকে জান নিয়ে পালাতে পারলেও যেন বাঁচে! কই আজ কেন অ্যামেরিকা তর্জন গর্জন করেনা। কেন আজ অ্যামেরিকা বলেনা, পৃথিবীর যে প্রান্তেই আল্লাহর পবিত্র মুজাহিদ আর তাদের ভাষায় সন্ত্রাসী থাকুক না কেন অ্যামেরিকা তাকে ছাড় দিবেনা। কেন অ্যামেরিকা আজ বলে, অ্যামেরিকা তার নিজের ভুমি ছাড়া অন্য কোন দেশে আপাতত সৈনিক পাঠাবেনা!
আমার ভাই বোনেরা এই হচ্ছে আল্লাহর প্রতিজ্ঞার শুরু মাত্র! আল্লাহ কি বলেন নি আর সবশেষে আল্লাহ বিজয় মুত্তাকীন দের কেই দিবেন। আল্লাহ নিজেই তার দ্বীন কে বিজয় দিবেন, আর আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা অসীম অনুগ্রহে এই সব মুজাহিদিন ভাইরা তাঁদের নাম দ্বীনের বিজয়ের সাথে লিখে নিচ্ছেন! আর নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনাদের মধ্য থেকে পবিত্র শহীদগণ কে বেছে নিচ্ছেন! আর নিশ্চয়ই এর মধ্য দিয়ে উম্মতের ভাই এবং বোনেরা বিশেষ করে উম্মতের যুবক ভাই এবং বোনেরা জান্নাতের টিকেট কেটে জান্নাত আল ফিরদাউসে পাড়ি জমাচ্ছেন ইনশাআল্লাহ! নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিদান প্রদানে সর্বউত্তম! আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কর্মফল নস্ট করেন না!
এক সময়ে উম্মত ঘুমিয়ে ছিলো, আজো কিছু ঘুমিয়ে আছে এবং কালও তাদের মধ্য থেকে কিছু ঘুমিয়েই থাকবে! কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি এর মধ্য থেকে ঠিকই কিছু আল্লাহর বান্দা, আল্লাহর সৈনিক ঘুম থেকে জেগে উঠেছে, নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছে আর আল্লাহর নুসরাহ চেয়েছে আর নিজেদের সব কিছু নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় ঝাপিয়ে পড়েছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা বলেন,
"মুমিনদের মধ্যে কতক লোক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কতক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শাহাদাত বরন করেছে, আর কতক অপেক্ষায় আছে। তারা তাদের সঙ্কল্প কখনো তিল পরিমান পরিবর্তন করেনি" (সুরা আহযাব ২৩)
আর এটাই আমরা সত্যি দেখছি। কিছু শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে ধন্য হয়ে গেছেন আর কিছু এখনো নিজেদের সঙ্কল্পে অবিচল থেকে শাহাদাতের অপেক্ষায় আছেন! কখনো কি ভেবে দেখেছি, আল্লাহর কুরআন তাদের সম্পর্কে কথা বলছেন আর তাদের কাজের সাক্ষ্য দিচ্ছেন, যারা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন, আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছেন আর সেই ওয়াদার উপর অবিচল রয়েছেন।
সবাই সবার হিস্যা বুঝে নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা কি করছি? আমরা কি জেগে আছি নাকি এখনো ঘুমিয়ে আছি? জান্নাত আল ফিরদাউসের টিকেট বিক্রি হচ্ছে! বাতাসে জান্নাতের টিকেট উড়ছে, কিছু মানুষ সেই জান্নাতের পিছনে নিজেদের জান ও মাল বাজি রেখেছে। আল্লাহর সেই ব্যাবসা যা আমরা প্রথমে বলেছিলাম, তা গ্রহন করেছে!
ভাই এবং বোনেরা আমার, মাল দিয়ে যদি না জিহাদ না করতে পারি তবে জান দিয়ে কিভাবে জিহাদ সম্ভব? আর মাল হচ্ছে জিহাদের রক্ত! মাল ছাড়া জিহাদ হবে কি করে! উম্মতের ভাইরা নিজেদের জান নিয়ে প্রস্তুত, আমরা কি তাদের জন্য আমাদের কিছু মাল নিয়ে তাদের প্রস্তুতির আঞ্জাম দিতে পারিনা? আর এটা কার জন্য করবো? আল্লাহ কি আমাদের ধন সম্পদের মুখাপেক্ষী? অবশ্যই নয়, বরং আমরাই তাঁর বিশাল জান্নাত যার প্রশস্ততা হচ্ছে এই দুনিয়া এবং আসমানের সমান। আল্লাহ আমাদের অনুগ্রহ চাননা, বরং আমরাই তাঁর অনুগ্রহের ভিখারী! আবু দারদাহ (রাঃ) তাঁর পুরা বাগান এবং বাগানবাড়ির বিনিময়ে জান্নাতের একটা গাছ কিনেছিলেন, আর এখানে তো পুরা জান্নাতের কথা বলা হচ্ছে!
আমার ভাই এবং বোনেরা, আমরা আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করি, আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই, আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে ফরিয়াদ করি আর বলি, ও আল্লাহ "আপনি সত্য, আপনার কালাম আল কুরআন সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, জান্নাত সত্য, আর জাহান্নাম সত্য! আমার জন্ম সত্য আর আমার মৃত্যুও সত্য! ও আল্লাহ আমি ভয় করি জাহান্নাম কে আর আমি আশা করি আপনার জান্নাতের। ও আল্লাহ আপনার কালামের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আপনি আমার জান ও মালের বিনিময়ে জান্নাতের ওয়াদা দিচ্ছেন! ও আল্লাহ আপনি আমাকে আপনার সাথে এই পবিত্র ব্যাবসা করার তাউফিক দেন আর আমার এই ব্যাবসা কে কবুল করেন। ও আল্লাহ, আমি আমার এই ধন সম্পদ কিছুই চাইনা, এগুলোর বদলায় আপনি আমাকে জান্নাতে একটা ঘর বানিয়ে দিন, ও আল্লাহ আমাকে এমন জান্নাত দান করেন যেই জান্নাত থেকে আমি আপনাকে দেখতে পাবো, আপনি আমার প্রতি হাসবেন আর আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। রাসুল (সাঃ) বলেন, দুনিয়াতে এমন কিছু আল্লাহর বান্দা আছেন, আল্লাহ যাদের প্রতি হাসেন। আর আল্লাহ যার প্রত হাসেন তাঁর জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়। ও আল্লাহ আপনি আমাকে কবুল করেন, আমার জান কে আর আমার মাল কে, আপনার দ্বীনের জন্য, আপনার সন্তুষ্টির জন্য! ও আল্লাহ্* নিশ্চয়ই আপনি আপনার বান্দার ডাকে সাড়া দেন আর নিশ্চয়ই আপনি দুয়া কবুল করেন!
আর যদি আমরা সত্য ইরাদা করেই থাকি তবে নিশ্চয়ই আল্লাহও আমাদের সাথে সত্য থাকবেন। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা, হাদীসে কুদসি তে বলেন, "আমি আমার বান্দার কাছে তেমন, যেমন সে আমার সম্পর্কে ধারনা পোষণ করে"। রাসুল (সাঃ) বলেন, তুমি যদি আল্লাহর সাথে সত্য থাকো তবে আল্লাহ ও তোমার সাথে সত্য থাকবেন।
আগে যা বলা হয়েছিলো উম্মতের কিছু যুবক, আপনাদের মধ্যে থেকেই, আপনাদেরই সন্তান, আপনাদেরই ছোট ভাই, নিজেদের জীবন কে আল্লাহর রাহে সঁপে দিয়েছেন। তারা নিজেদের জীবন বিক্রি করে দিতে প্রস্তুত। দ্বীনের খেদমতে তারা দাঁড়িয়ে গেছেন। আমরা কি তাদের আঞ্জাম দিতে প্রস্তুত আছি? এই ভূমিতে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার কাজে আমরা কি আঞ্জাম দিতে প্রস্তুত আছি? ভাই এবং বোনেরা আমার, একটু স্মরন করেন, আপনার মা বাবা কিংবা উনাদের মা-বাবা, তারা একদিন দুনিয়ায় বেঁচে ছিলেন, উনাদের ও কি সম্পদ ছিলোনা? কিন্তু আজ তাঁরা কোথায় আর তাদের সম্পদ কোথায়? তাদের সম্পদের কিছু বা অধিকাংশই কি আপনি ভোগ করছেন না? চিন্তা করে দেখেন, এই সম্পদ আজ তাদের কি উপকারে আসছে? তাঁরা তো সম্পদ ছেড়ে যেতে চাননি, কিন্তু তাদের সম্পদই তাদের কে জমিনের নিচে পুতে রেখে এসেছে। এই সম্পদই তাদের কবর খুঁড়েছে, কাফনের কাপড় কিনেছে, আর আর মাটির নিচে দাফন করে দিয়েছে। এই খরচ কি তাদের সম্পদ থেকেই ব্যায় করা হয়নি? তাদের নিজেদের হাতে কামাই করা সম্পদ কি তাদের দাফন দিয়ে দেয়নি? আজ যা আপনার সম্পদ, এই সম্পদকে আপনি ছাড়তে চাইবেন না এটাই সত্য, কিন্তু সময় হলে এই সম্পদই আপনাকে ছেড়ে দিবে এবং আপনাকে মাটির নিচে দাফন করে ফেলবে। ভেবে দেখেছেন কি! আবার এই সম্পদ দিয়েই আপনি এই দুনিয়ায় বসে, জান্নাতে জায়গা কিনতে পারেন, প্রাসাদ কিনতে পারেন, বাগান কিনতে পারেন, এবং তা কখনই আপনাকে ছেড়ে যাবেনা। বরং আপনার মৃত্যুর সাথে সাথে আপনার কবর থেকে জানালা খুলে দেয়া হবে আর দুনিয়াতে বসে আপনি জান্নাতে যেই জায়গা কিনেছেন, যে প্রাসাদ কিনেছেন তা দেখানো হবে, আর আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে, আপনার কবরে জান্নাতের প্রাসাদ থেকে জান্নাতী সুগন্ধি আর ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকবে! আর এর জন্য আপনি কতটুকু করতে প্রস্তুত?
আল্লাহ আপনাকে আর আমাকে আর আমাদের কে দেয়ার জন্য প্রস্তুত, শুধু দেখার বিষয় কে কতটুকু নিতে চায়! আবারো বলছি, দেখার বিষয় কে কত টুকু নিতে চায়! নিজেদের সঞ্চিত মালের থলের মুখ খুলে দিন, আপনার ঘরের দরজা মুজাহিদিন দের জন্য উন্মুক্ত করে দিন, আপনার খানার সাথে মুজাহিদিন দের শরীক করে নিন, একজন করে মুজাহিদকে পরিবারের সদস্য বানিয়ে নিন, কারন শহীদের প্রথম ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তিন জান্নাতে তাঁর জায়গা দেখে নেন। আর এই শহিদ কে যদি আপনি আজ আপনার ঘরে জায়গা দেন, আপনার খানা থেকে তার খানার ব্যাবস্থা করে দেন, আপনার ছাদের নিচে তাঁর থাকার জায়গায় করে দেন, আর যদি তাকে আপনার পরিবারের হিস্যা বানিয়ে নেন, তাহলে জান্নাতে প্রবেশের আগে এই শহীদ আপনাকে খুঁজতে থাকবে ইনশাআল্লাহ্! আজ যখন মাল দিয়ে দ্বীনের পথে জিহাদ করার সুযোগ আপনার ছিলো কিন্তু যে কোন কারনে আপনি সেই সুযোগ নিলেন না, নিশ্চিত থাকেন আল্লাহর বান্দাদের অন্য কেউ সেই সুযোগ গ্রহন করবে এবং জান্নাতে নিজের হিস্যা বানিয়ে নিবে। মনে রাখবেন আজ যেই মুজাহিদ কে আপনি আশ্রয় দিলেন না জীবনের ভয় করে, আগামি কালই আপনার সেই জীবন বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে চলে যেতে পারে কিন্তু সেই মুজাহিদ কে অন্য কেউ তাঁর ঘরে আশ্রয় দিবেন এবং জান্নাতে তাঁর হিস্যা বুঝে নিবেন। এই অমুল্য সুযোগ হাতছাড়া করা কি চরম বোকামি নয়!
আপনি কাকে ভয় পাচ্ছেন? আল্লাহর দ্বীন কে? আপনি এই ভয় পাচ্ছেন যে, এই জমিনের বুকে আল্লাহর দ্বীন কায়েম হয়ে যাবে? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দ্বীন কায়েম হবে এটাই কি আপনার ভয়? অথচ আপনি মুখে বলেন আমি আল্লাহ কে ভালোবাসি, আল্লাহর দ্বীন কে ভালোবাসি। আল্লাহ ওয়াদা করছেন তিনিই তাঁর দ্বীন কে বিজয়ী করবেন অথচ তারপরেও আপনি তাগুত আর তার শক্তি কে ভয় পাচ্ছেন! আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে তিনি মুত্তাকীদের বিজয় দিবেন অথচ আপনি দ্বীনের মুজাহিদ কে ভয় পাচ্ছেন? আবারো চিন্তা করে দেখি, আমরা কি ভয় পাচ্ছি? আল্লাহ? আল্লাহর দ্বীন? আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার পথে নিজের জীবন বিক্রি করে দেয়া মুজাহিদদিন গণ? তাহলে তো আজ আমরা আমাদের রাসুল (সাঃ) কেও ঘরে জায়গা দিতে ভয় পাবো? কিংবা আবু বকর (রাঃ) কে যিনি ছিলেন ধর্ম ত্যাগী মুরতাদদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর, কিংবা উমার (রাঃ) কে যিনি পারস্যে এবং রোমে জিহাদের ঝান্ডা উড়িয়েছিলেন, কিংবা সেই হামযা (রাঃ) কে দ্বীনের জন্য যাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়া হয়েছিলো, আর যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আল্লাহর সিংহ বলেছেন!
আসলে যেই সময়ে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, ব্যাস্ত ছিলাম দুনিয়ার রং তামাশা নিয়ে সেই ফাকে কুফফার রা আমাদের মেরুদন্ড কে গুড়িয়ে দিয়েছে, আর ভিতরের গিরাহ কে, সম্মান কে বিলীন করে দিয়েছে। আজ আমরা নিজেই নিজেকে খুঁজে পাইনা। আমি জানিই না আমি মুসলিম উম্মাহর অংশ! পবিত্র কাবার সম্মানের চেয়ে আমার সম্মান আল্লাহর কাছে বেশি। তবে এটাই শেষ নয়। বরং আশার কথা হচ্ছে এটা শুরু, ইসলামী খিলাফাতের শুরু এখান থেকেই। চারিদিকে তাকিয়ে দেখেন, কালো পতাকা গুলো কি মানচিত্রে স্পস্ট ভাবে ফুটে উঠছেনা? দিনে দিনে কুফফার দের পরাজয় কি আরো সুস্পষ্ট হচ্ছেনা? সব সময়ে দুটি দল ছিলো, এবং থাকবে দাজ্জাল শেষ হবার আগ পর্যন্ত। হিযব আশ শাইতান আর হিযব আর রাহমান। হিযব আশ শাইতান তার ক্যাম্প গুছিয়ে প্রস্তুত তার পতন ঠেকানোর ব্যার্থ চেষ্টার জন্য এদিকে হিযব আর রহমান ও প্রস্তুত।
হিজব আর রাহমানের তাঁবু গুলো ধীরে ধীরে ভোরের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ঐ তো মাশরিক থেকে আর মাগরিব থেকে এই বাহিনী এগিয়ে আসছে, ভোরের প্রথম আলোয় তাঁদের শিরস্ত্রাণ গুলো আভা ছড়াচ্ছে, ঘোড়াগুলোর শ্বাস প্রশ্বাস আরো ঘন হচ্ছে, ঘোড়ার ক্ষুর গুলো মাটিতে শক্ত কদমে আছড়ে পড়ছে আর পিছনে ধুলার মেঘ তৈরি করছে! প্রত্যেক ঘোড়া তার পাশের ঘোড়ার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, আর ঘোড়সোওয়ার রা? তারাও ধেয়ে আসছে তুফান বেগে, জান্নাতের সুগন্ধ আর আল্লাহর দেখা পাবার নেশা তাদের পাগল করে তুলেছে!
জান্নাতের এই কাফেলা যেন আমাদের হাত ছাড়া না হয়ে যায়!
হে আল্লাহ আমি আপনার দয়ার ভিখারী, আপনি সবার আগে আমাকে এবং আর সবাইকে মাফ করে দেন আর কবুল করে নেন শাহাদাতের জন্য। অধম ভাই এর জন্য অনেক দুয়া করবেন ইনশাআল্লাহ্*।
আপনাদের ভাই,
আব্দুল্লাহ
আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা সুরা আস-সাফ ১০-১২ নাম্বার আয়াতে বলেন,
"হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক ব্যাবসার সন্ধান দিবো যা তোমাদের কঠিন এবং যন্ত্রণাদায়ক এক আযাব থেকে বাঁচিয়ে দিবে। তোমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে, এবং তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে; এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরাবুঝতে। আল্লাহ্ তোমাদের গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন, এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন এক জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে ঝর্নাধারা প্রবাহিত থাকবে, তিনি তোমাদের কে আরো প্রবেশ করাবেন জান্নাতের স্থায়ী নিবাসস্থলের সুন্দর ঘরসমূহে; আর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সাফল্য"
আল্লাহ্* সুবহানাহু তায়ালা সুরা বাকারার ২৬১ নাম্বার আয়াতে বলেন,
"যারা নিজেদের ধন সম্পদ আল্লাহ্*র পথে খরচ করে তাদের উদাহরন হচ্ছে একটি বীজের মত, যা থেকে উৎপন্ন হয় সাতটি শীষ, আবার প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) একশ শস্য দানা। আল্লাহ্* তায়ালা যাকে চান তাকে বহু গুন বৃদ্ধি করে দেন, বস্তুত আল্লাহ্* হচ্ছেন বিপুল দাতা ও মহাজ্ঞানী"
___ (সুরা বাকারাহ ২৬১)
এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর (রহঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাস্তায় ব্যায়কৃত প্রত্যেকটি আমলের আজর ৭০০ গুন বৃদ্ধি পাবে।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যায়িদ ইবনে খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসুল (সাঃ) বলেন, যে আল্লাহর রাস্তায় একজন মুজাহিদ কে প্রস্তুত করে দিলো সে যেন নিজেই যুদ্ধ করলো, যে একজন মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবারের দেখাশোনা করলো সেও জিহাদ করলো।
___ সাহিহ বুখারী
শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি (রহঃ) এর বিখ্যাত জিহাদে অংশগ্রহনের ৪৪ উপায় এর মধ্যে কিছু হচ্ছেঃ
নিজের সম্পদ দিয়ে জিহাদ
মুজাহিদিনদের জন্য অর্থ সংগ্রহ
মুজাহিদিনদের আর্থিক সাহায্য করা
মুজাহিদিনদের পরিবারের দেখাশোনা করা
শহীদ পরিবারের দেখাশোনা করা
যুদ্ধ বন্দী পরিবারের দেখাশোনা করা
আজ আমি আপনাদের এমন এক ব্যবসার কথা বলতে চাই যার তুলনায় আর কোন ব্যবসা সামনে দাঁড়াতেও পারবেনা! এমন এক ব্যবসা সারা পৃথিবীতে যার দ্বিতীয় কোন উদাহরন কেউ দিতে পারবেনা! এমন এক ব্যবসা যার সমতুল্য আর কিছুই নাই! এই ব্যাবসার কথা কিন্তু আমি নিজে বলছিনা, এই ব্যবসার কথা বলছেন, সমস্ত জাহানের মালিক, আসমান সমূহের মালিক, জমিন সমূহের মালিক, জান্নাত সমূহের মালিক, জাহান্নাম সমূহের মালিক, আরশের অধিপতি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আর মহান আল্লাহ্*র এই লাভজনক ব্যবসা সম্পর্কে জানার আগে আল্লাহ্ সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা প্রয়োজন। যেমন দুনিয়াবি কোন ব্যবসার আগে আমরা এর আগে পিছের মানুষ গুলো সম্পর্কে জানতে চাই! যার সামর্থ্য যত বেশি, যার টাকা পয়সা যত বেশি, যার যত ইন্ডাস্ট্রি আছে, যার কোটি কোটি টাকা আছে, যার কাছে দেশের পুলিশ র্যাতব জিম্মি, যার টাকার খেলায় মন্ত্রী এমপি পুতুল নাচ নাচে এমন কেউ যদি আমাদের কোন ব্যবসার প্রস্তাব দেয় সবাই তার এই প্রস্তাব লুফে নিবে। কারন সবাই জানে এই লোকের কাছে ক্ষমতা আছে, টাকা আছে, লবিং আছে, সবকিছুই আছে। সুতরাং এমন কোন বোকা আছে যে এমন লোকের ব্যাবসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিবে, কারন এমন লোকের সাথে ব্যবসায় কোন লস নাই! সুতরাং এমন ব্যবসার প্রস্তাব এক কথায় অসাধারন! এবার দেখি আমরা এখানে যে ব্যবসার কথা বলছি সেই ব্যবসা কার পক্ষ থেকে আসছে। তাকে আমরা কত টুকু চিনি!
আল্লাহ্ তিনি, যিনি ব্যাতিত আর কোন ইলাহ নাই, তিনি চিরঞ্জীব, চির স্থায়ী। আল্লাহ্ সমস্ত সৃষ্টি জগতের মালিক, আসমান সমূহের মালিক, জমিন সমূহের মালিক, জান্নাত সমূহের মালিক, জাহান্নাম সমূহের মালিক। তিনি মালিক জিবরীল (আঃ)। তিনি মালিক ইস্রাফীল আঃ, মিকাইল (আঃ) এর, আজরাইল (আঃ) এর। তিনি মালিক আরশ বহন কারী ফেরেশতাদের আর তিনিই মালিক সমস্ত আরশের। তিনি মালিক বিলিওন বিলিওন ফেরেশতাদের, তিনি মালিক সমস্ত সৃষ্টি জগতের। তিনি কখনো ঘুমাননা, কখনো ক্লান্ত হননা। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর ইশারা ব্যাতিত কোন কিছু হয়না, আর তাঁর জ্ঞানের বাইরে কেউ কোন কিছু লুকাতে পারেনা। তিনি খাওয়ান সাগরের সমস্ত প্রানী কে, আকাশের সমস্ত পাখিকে আর জমিনের সমস্ত প্রানীকে আবার তিনি জানেন সমুদ্রের তীরে ঠিক কতগুলো বালুকনা আছে! মায়ের গর্ভে তিনি নাপাক বীর্য কে রক্তপিন্ড বানিয়ে দেন, রক্ত পিন্ড কে সুনির্দিষ্ট আকৃতি দেন, তার ভিতরে হাড় তৈরি করেন আর সেই হাড়ের উপরে গোশতের আবরন দিয়ে সুন্দর মানুষ তৈরি করেন, তিনি কাউকে করেন ছেলে আবার কাউকে করেন মেয়ে। তিনি জীবন দেন, আবার তিনি মরন দেন। তিনি জীবিত থেকে মৃত বের করান আবার মৃত থেকে জীবিত বের করান। তার সমকক্ষ কেই নাই, তাকে চ্যালেঞ্জ করার মত কেউ নাই, তিনি সূর্য কে পূর্ব থেকে উঠান কারো সামর্থ্য নাই সেটাকে পশ্চিম থেকে উঠানোর আবার তিনি যদি সূর্যকে পশ্চিম থেকে উঠাতে চান কারো সাধ্য নাই সেটাকে পূর্ব থেকে উঠানোর! তিনি যদি কাউকে সম্মান দিতে চান কেউ তাকে অপমান করতে পারেনা আর তিনি যদি কাউকে অপমান করতে চান কেউ তার কোন উপকার করতে পারেনা। তিনিই আল্লাহ্, ইব্রাহীম (আঃ) রব্ব, মুসার (আঃ) এর রব্ব, ঈসা আঃ এর রব্ব, মুহাম্মদ সাঃ এর রব্ব। সৃষ্টির সমস্ত কিছু তাঁর প্রশংসা করে আর তাঁর তাসবিহ পড়তে থাকে। আল্লাহর কাছে থেকেই আমরা এসেছি আর তাঁর কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন।
সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি সুবহানাল্লহিল আজিম
আসলে আজ তো আমরা আল্লাহর পরিচয়ই ভুলে গেছি তাই আল্লাহ দেয়া ব্যাবসার প্রস্তাব আমাদের মনে কোন দাগ কাটেনা। এর চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আর কি হতে পারে যে, আল্লাহ পক্ষ থেকে সরাসরি ব্যাবসাও আজ আমাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে যায়।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের এক ব্যাবসার প্রস্তাব দিচ্ছেন। অনেক টা এমন যে, আমি আল্লাহ, কেউ আছো কি যে আমার সাথে ব্যাবসা করতে রাজি আছ! যেমন আল্লাহ কুরানে অন্য এক জায়গায় বলছেন, "কে এমন হবে যে আল্লাহ কে উত্তম ঋণ দিবে.." আল্লাহ নিজে আমাদের কে এক ব্যাবসার সন্ধান দিচ্ছেন। সেই ব্যাবসার প্রথম লাভ, কঠিন এক আজাব থেকে বাঁচিয়ে দিবে। ব্যাবসা বুঝতে হলে ব্যাবসার লাভক্ষতি গুলোও খুব ভালো ভাবে বুঝে আসা দরকার। না হলে ব্যাবসা মনে ধরেনা।
ব্যবসার প্রথম লাভঃ
কি এই কঠিন আজাব! এ হচ্ছে সেই আজাব যার শুরু হবে উলঙ্গ অবস্থায়, কেউ সেদিন মুখের ভরে হাঁটবে, কেউ বুকের উপর ভর দিয়ে ছেচড়িয়ে সামনে আগাবে, কারো জিহবা কুকুরের মত সামনে বেরিয়ে আসবে, ঘামের সাগরে মানুষ সাতার কাটবে, পিপাসায় কাতর হয়ে যাবে, মাথার উপরে কোন ছায়া থাকবেনা আর সূর্য থাকবে কয়েক হাত উপরে! এটা কোন দিন! বিচারের দিন। হাদিস শরিফে এসেছে, এই দিন হবে ৫০ হাজার বছর, আর আর এই ৫০ হাজার বছরের এক দিন আমাদের হিসাবের ৫০ হাজার বছর। আর এটা তো শুধু শুরু মাত্র! এদিন সবাই সবাইকে ভুলে যাবে, মা সন্তান কে চিনবেনা, কোন ধন সম্পদ কারো উপকারে আসবেনা। সেদিন কেউ কোন কথা বলার সাহস পাবেনা। সবাই নিশ্চুপ থাকবে। আল্লাহ্ বলেন সেদিন শুধু মাত্র সেই কথা বলার সাহস রাখে যাকে আল্লাহ্ কথা বলার অনুমতি দিবেন। আল্লাহ্ বলছেন সেই দিন কেউ যদি কোন ক্ষমতা রাখে তাহলে যেন এর ব্যাতিক্রম কিছু করে দেখায়। আল্লাহ্* বলবেন "ও আদম সন্তান যদি তোমাকে সারা পৃথিবী সমান স্বর্ণ দেয়া হতো আর আজ যদি তা মুক্তিপণ হিসাবে চাওয়া হতো তুমি কি তা দিতে? আদম সন্তান উত্তর দিবে অবশ্যই ইয়া আল্লাহ্। আল্লাহ্ বলবেন কিন্তু আমি তো তোমাদের কাছে এর চেয়ে অনেক কমই চেয়েছিলাম, কিন্তু আজ আর কোন কিছুই গ্রহন করা হবেনা। সেদিন মানুষের কর্মফলের প্রতিদান দেয়া হবে। আল্লাহ বলেন, সেদিন তারা সব কিছুই দেখতে পাবে যা তারা আগে করে এসেছিলো। আল্লাহ বলেন সেদিন কতক মুখ হবে উজ্জ্বল আর কতক মুখ হবে হতাশায় ভরপুর। আল্লাহর ব্যাবসার প্রথম লাভ হচ্ছে, তিনি আমাদের এই কঠিন আজাব থেকে বাঁচিয়ে দিবেন। এই আজাব এতই ভয়ঙ্কর যে শুধু মাত্র এই আজাব থেকে বাঁচতে পারাই আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় নেয়ামত! সুতরাং ব্যাবসার প্রথম লাভ, হাশরের ময়দানে কঠিন আজাব থেকে আল্লাহ বাঁচিয়ে নিবেন।
ব্যবসার দ্বিতীয় লাভঃ
আল্লাহ সমস্ত গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন। সারা জীবনে আমরা যত গুনাহ করেছি আল্লাহ সেই সমস্ত গুনাহ গুলোকে মাফ করে দিবেন। আমরা মনে করি আমরা অনেক নেক আমল করি, সালাত আদায় করি, সিয়াম রাখি, জাকাত দেই, সাদাকাহ করি, হাজ্জ করেছি আলহামদুলিল্লাহ্, তাসবিহ পড়ি, আর এই আমল গুলো আমাদের কে সন্তুষ্ট করে ফেলে। আমাদের এই আমল আমাদের এতটাই পরিতুষ্ট করে ফেলে যে আল্লাহ যখন গুনাহ সমূহ মাফের কথা বলেন তখন সেটা আমাদের মনে কোন প্রভাব ফেলেনা, আমরা নিজেদের কে সেই আয়াতের বাইরে মনে করি! আর তা যদি নাই হবে তাহলে কেন আমাদের মাগফিরাত দরকার হবেনা? কেন আমরা আল্লাহর গুনাহ সমূহ ক্ষমার অঙ্গীকারে উৎসাহিত হইনা? কেন ক্ষমার অঙ্গীকার আমাদের কাছে যথেষ্ট মনে হয়না? মাসের শেষে ৫০০০০ টাকার প্রতিশ্রুতি আমাদের যত টুকু অভিভূত করে আল্লাহর ক্ষমার প্রতিশ্রুতি কি আমাদের তারচেয়ে বেশি না হলেও ঠিক ততটুকু পরিমান অভিভুত করে! আরা তা যদি না করে তাহলে আসলে, আল্লাহর ক্ষমার অঙ্গীকার আমাদের কাছে ৫০০০০ টাকার সামনে বাতাসে মিলিয়ে যায়। রাসুল (সাঃ) বলছেন, "কেউ তার আমলের বিনিময়ে কখনই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া। সাহাবা গণ জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ এমন কি আপনিও না? রাসুল (সাঃ) বললেন, এমন কি আমিও না" হযরত উমার (রাঃ) কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয়ে বলতেন সম্ভব হলে আমি চাইতাম আমার আমলের কোন হিসাব নেয়া হবেনা, আর আমাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে। এমন অবস্থায় আমরা নিজেদের আমলের উপরে এত বেশি খুশি থাকি যে যখন আল্লাহ বলেন, "আমি তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিব তখন তা আমাদের অভিভূত করেনা। তা আমাদের মনে দাগ কাটেনা। আবু দারদাহ (রাঃ) বাগান বাড়ি সহ তাঁর পুরা একটা খেজুরের বাগান মুহূর্তের মধ্যে দান করে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র জান্নাতের ভিতরে একটা গাছের ওয়াদা পেয়ে। কথা হচ্ছিলো এই ব্যাবসার দ্বিতীয় লাভ, আল্লাহ সমস্ত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। এমনকি লাভ হিসাবে শুধু এইটাই অনেক বেশি আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আমাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন! একবার নিজেদের জীবনের দিকে তাকাই, আর চিন্তা করি আমার জীবনে কত গুনাহ আছে! আর সেই গুনাহ সমূহের হিসাব যদি আল্লাহ একটা একটা করে নেয়া শুরু করেন তাহলে আমাদের কি অবস্থা হবে!
ব্যবসার তৃতীয় লাভ জান্নাতঃ
এই ব্যাবসার প্রথমে আল্লাহ্ বলেছিলেন, বিপদ থেকে বাঁচিয়ে নিবেন, এরপর বলেছেন সমস্ত গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন এরপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম পুরস্কারের কথা আল্লাহ বলছেন, আর তা হচ্ছে জান্নাত! একজনের বিশ্বাসীর জন্য জান্নাতের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারেনা! আফসোস আজ জান্নাতও আমাদের মন গলাতে পারেনা। আমরা আজ জান্নাতের কাছেও বিক্রি হইনা। জান্নাতের চেয়ে বরং দুনিয়ার অনেক তুচ্ছ কোন বিষয়ে আমরা নিজেদের বিক্রি করে দেই। আর এর কারন এই যে, দুনিয়ার এই জীবন টা নিয়ে আমরা যত টা ভাবি জান্নাত নিয়ে কিংবা জান্নাতের সেই জীবন টা নিয়ে আমরা বিন্দু মাত্র চিন্তা করিনা। নিজেদের কে প্রশ্ন করি, আসলেই কি আমরা জান্নাতে থাকতে চাই? তাহলে আরো একবার প্রশ্ন করি, প্রতিদিন আমার এবং আপনার সেই নতুন ফ্ল্যাট টার কথা কিংবা নতুন কেনা জায়গা টার কথা, নতুন চাকরির কথা, প্রোমোশনের কথা, নতুন ব্যাবসার কথা আমরা কয়বার চিন্তা করি আর জান্নাতের সেই চিরস্থায়ী আবাস স্থলের কথা কয়বার চিন্তা করি! আল্লাহ্* বার বার করে আমাদের স্মরন করিয়ে দিচ্ছেন, আর আল্লাহ বলেন,
"মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে, নারী, সন্তান, স্তূপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্য ভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ, আর আল্লাহ্*- তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল। বল, আমি কি তোমাদের কে এসব হতেও অতি উত্তম কোন কিছুর সন্ধান দেব? যারা মুত্তাকী তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট এমন বাগান রয়েছে, যার নিম্নে নদী প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে। আর রয়েছে পবিত্র সঙ্গী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি, বস্তুত আল্লাহ্* বান্দাগনের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা কর এবং আমাদের কে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আল্লাহর প্রতি আজ্ঞাবহ, আল্লাহর পথে ব্যায়কারী, এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী"
--- সুরা আল ইমরান, ১৪-১৭
আল্লাহ আরো বলেন, "আর জেনে রেখো এ দুনিয়ার জীবন তো খেল তামাশার ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না।
এই দুনিয়া খেল তামাশার বস্তু ছাড়া আর কিছুই না, বরং আখিরাত হচ্ছে আমাদের আসল ঠিকানা। সেখানেই আমাদের জন্য অনন্ত জীবন অপেক্ষা করছে। কিন্তু এরপরেও আল্লাহর সেই কথাই সত্য হয়ে যায়, "শয়তান তাদের সামনে তাদের কাজ গুলোকে সুন্দর করে দেখায়" দুনিয়ার ব্যাপারে শয়তান আমাদের ফিতনায় ফেলে দেয়, এমন ফিতনায় ফেলে দেয় যে জান্নাতের কথাই ভুলে যাই। শেষ কবে আমরা নিজেদের জান্নাতের কথা কল্পনা করে আল্লাহর কাছে জান্নাত চেয়েছিলাম? নিজের বাড়ির টাইলস টা কি রঙের হবে, নতুন চাকরির পোস্টিং কোথায় হবে? নতুন ফ্ল্যাটে লিফট কবে দিবে? এই সব চিন্তা আমাদের পেরেশান করে তুলে কিন্তু আমার জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউস হবে নাকি অন্য কোন জান্নাতে হবে নাকি জাহান্নামে হবে, এই চিন্তা শেষ কবে করেছি! আমার বাড়িটা যেন অভিজাত এলাকায় থাকে, নতুন জায়গাটা যেন একটা অভিজাত এলাকায় থাকে যেখানে আমার স্ত্রী, আমার সন্তান সবাই যেন অভিজাত এবং সমাজের সম্মানিত মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এই চিন্তা বাস্তবায়নের জন্য দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমেও আমাদের কোন ক্লান্তি নাই, কিন্তু জান্নাত সমূহের মধ্যে কোন জান্নাতে থাকলে আল্লাহর সবচেয়ে কাছে থাকা যাবে এই চিন্তায় আমরাকখনো কি একটা রাত পার করেছি? জান্নাতের ব্যাপারে আমাদের যেন নিশ্চয়তা দিয়েই দেয়া হয়েছে! আমরা তো এমন যে, নিজে তাই আশা করি যা কখনো আশাই করিনা। তবে যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য তৃতীয় লাভ জান্নাত!
এরপরেও কি কেউ এমন থাকতে পারে যে আল্লাহর এই ব্যাবসার প্রস্তাবে সাড়া দিবেনা!
এবার দেখা যাক আল্লাহ কিসের বিনিময়ে এই ব্যাবসার প্রস্তাব দিচ্ছেন? মাত্র তিনটা কাজঃ
- আল্লাহর উপরে ঈমান
- রাসুলের উপরে ঈমান
- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা নিজের মাল ও জান দিয়ে
আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবাই আল্লাহর উপরে এবং তাঁর রাসুলের উপরেও ঈমান এনেছি। আমরা দুয়া করি আল্লাহ যেন আমাদের এই ঈমানে পবিত্রতা দান করেন। এরপরে, একবার ভেবে দেখেছেন কি আল্লাহর সেই অকল্পনীয় ব্যাবসা থেকে আমরা আর কত টুকু দূরে! মাত্র একটা কাজ বাকি। কি সেই কাজ? আল্লাহর রাস্তায় নিজের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করা। শুধু মাত্র এই একটি কাজ করলেই আমরা আল্লাহর ওয়াদা কৃত জান্নাতের অধিবাসী হয়ে যেতে পারি ইনশাআল্লাহ্। আমার ভাই এবং বোনেরা, আপনাদের অন্তরটা আমাকে কিছুক্ষনের জন্য ধার দিবেন। একটু লক্ষ্য করেন, আর দশটা লেখা পড়ার মত শুধু লাইন গুলো পড়ে শেষ করবেন না। আমরা জান্নাত নিয়ে কথা বলছি! জান্নাত হচ্ছে অনন্ত জীবনের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি! যে জীবনে কোন কষ্ট নাই, দুঃখ নাই। সবাই সেখানে থাকবেন আনন্দের সাথে। আল্লাহ বলেন সেখানে তাদের কোন দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করবেনা, সেখানে তারা চিন্তিত হবেনা, সেখানে তারা কোন বাজে কথা শুনবেনা। জান্নাতের অধিবাসীদের সঙ্গী হবেন আল্লাহর ফেরেশতা গণ, তারা জান্নাতীদের সালাম করবেন। সেখানে আপনার জান্নাতের প্রাসাদ গুলো আল্লাহ নিজে ফেরেশতাদের তৈরি করতে বলেছেন, আল্লাহ নিজে যেই প্রাসাদের ডিজাইন করেছেন, আর সেই প্রাসাদ সমূহ জান্নাতের আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়েছেন ফেরেশতাগন! কখোনো কি ভেবে দেখেছেন আপনার প্রাসাদ সমূহের ডিজাইনার আল্লাহ স্বয়ং নিজে! আর এই জান্নাতের ইন্টেরিওর ডিজাইন এর কাজ করেছেন আল্লাহর ফেরেশতাগন! এই দুনিয়ার পাহাড় দেখে, কিংবা সাগর দেখে কিংবা সুন্দর কোন জায়গা দেখে আমরা বিমোহিত হয়ে যাই, তাহলে কেন ভাবিনা এই সৃষ্টি যদি এমন সুন্দর হয় তাহলে জান্নাত কত সুন্দর হবে! জান্নাতের বর্ণনা বলে শেষ করে এমন সাধ্য কার! জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত, আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ! আল্লাহ বলবেন আমার বান্দারা এত দিন আমাকে না দেখেই আমার ইবাদত করেছে, আজ আমি আল্লাহ তাদের সামনে আসবো। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা জান্নাতীদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করে দিবেন আর মুহূর্তের মধ্যে জান্নাতীদের কাছে জান্নাতের সমস্ত নিয়ামত ম্লান হয়ে যাবে, মানুষ বিভোর হয়ে সাজদায় লুটিয়ে পড়বে! আল্লাহ কে একবার দেখার পর জান্নাতীরা শুধু আল্লাহ কে আরো একবার দেখার অপেক্ষাতেই থাকবেন। এমন জান্নাত থেকে আমরা মাত্র একটা কাজ দূরে আছি।
কিন্তু এটাও ঠিক যে শয়তান আসে, আর বলে এটা তো জিহাদ। এর মত কঠিন কোন কাজ আর নাই। আমার প্রিয় ভাই এবং বোনেরা। ইনশাআল্লাহ্ আজ আমি চেস্টা করবো এই কথাটা বলতে যে, আমি এবং আপনি, আমরা সবাই এর চেয়ে অনেক কঠিন কাজ করছি, অক্লান্ত ভাবে করেই যাচ্ছি। শয়তান আমাকে আর আপনাকে দিয়ে চাকরের মত সেসব কাজ করিয়ে নিচ্ছে আর জাহান্নামের কাছে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ঐ একই কাজ কিংবা তার চেয়েও অনেক সহজ কাজ যখন আল্লাহ্*র রাস্তায় করতে বলা হয় তখন শয়তান আমাদের ধোকা দিয়ে বসে। আর শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ্*র রাসুল (সাঃ) আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন, "আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রজীম" পড়তে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই বিতাড়িত শয়তান থেকে, যে শুধু আমাদের ধোঁকাই দিতে পারে এর বেশি কিছুই নয়। শয়তান আমাদের শেখায় রিজিকের জন্য সকাল সন্ধ্যা পরিশ্রম করতে হবে না হলে রিজিক আসবেনা। আর যদি কখনো রিজিক সংকুচিত হয়েই যায়, শয়তান তখন বাতাসে মিলিয়ে যায়, আর আমরা হাত তুলে বলি ইয়া আল্লাহ্* আমার উমুক সমস্যা সমাধান করে দেন। প্রিয় ভাই বোনেরা নিজের সাথে এই প্রতারনা আর কতদিন! চরম সঙ্কটের সময় যদি আল্লাহ্* আমার এবং আপনার রিজিকের সমস্যা দূর করে দিতে পারেন তাহলে অন্য সময় কেন আমার এই বিশ্বাস থাকেনা আল্লাহই আমার রিজিকের উত্তম ব্যাবস্থা করবেন। রিজিকের পিছনে আমরা আমাদের কি পরিমান সামর্থ্য আর সময় নস্ট করি তা আর আজ এখানে বলবোনা। এতো গেলো পরিশ্রমের কথা, এবার আসি সম্পদের কথায়। আজ পর্যন্ত জীবনে কত টাকা কত জায়গায় খরচ করেছেন তার একটা হিসাব কষতে পারবেন? শুধু এইটা চিন্তা করেন কত টাকা শখের পিছনে খরচ করেছেন। একটা মোবাই কিনেছেন, চুরি হয়ে গেছে, ঘড়ি কিনেছেন নষ্ট হয়ে গেছে। সন্তান কে দামী খেলনা কিনে দিয়েছেন ভেঙ্গে গেছে। থিম পার্কে গেছেন, এভাবে চলতেই থাকবে। কখনো ভেবে দেখেছেন এই সমস্ত সম্পদ আপনার জন্য চিরস্থায়ী কোন উপকার করেছে কিনা! আপনি হয়তো ভুলেই গেছেন গত বছর কত টাকা খরচ করেছেন শুধুমাত্র আপনার আর আপনার পরিবারের বিনোদনের জন্য (এখানে আমি প্রয়োজন এর জন্য যে খরচ তা বলছিনা) আপনার এই সম্পদ স্রেফ মিলিয়ে গেছে। কিন্তু খরচ করা প্রত্যেক টা পয়সা আপনার জন্য বিনিয়োগ হতে পারতো যদি তা আল্লাহ্*র রাস্তায় ব্যায় করা হতো। কমপক্ষে ১০ গুন আর এর বেশি কত হতে পারে তা আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ্*র রাস্তায় আমার এবং আপনার একটা সাদাকাহ আমাকে এবং আপনাকে জান্নাতের আরো কাছে নিয়ে যাবে, এভাবে প্রতিটি সাদাকাহ আমার এবং আপনার জন্য জান্নাতের বিনিয়োগ হিসাবে লেখা হয়ে যাবে! সুতরাং যেই জিহাদ কে আমরা ভয় পাচ্ছি কষ্ট আর সম্পদের কথা ভেবে, সেই একই কাজ আমরা সবাই করি, শয়তান আমাদের কে দিয়ে করিয়ে নেয়। আফসোস সেই কাজ কে আমরা জিহাদ করে নিতে পারতাম যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহ্*র পথে করা হতো। আল্লাহ্* তো বলেছেন আমি আমার বান্দার উপরে সাধ্যের বাইরে কোন কিছুই চাপিয়ে দেইনা। নিজের মন কে বিশ্বাস না করে বরং আল্লাহ্*র কথাকেই বেশি বিশ্বাস করি ইনশাল্লাহ, সব কিছু অনেক সহজ হয়ে যাবে।
যেদিন রাসূল (সাঃ) মক্কার রাস্তায় প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিলেন সেদিন থেকে হক্ক আর বাতিলের যুদ্ধ শুরু। সেদিন থেকে আল্লাহ্*র দুশমনেরা তাদের ক্যাম্প গোছানো শুরু করে দিয়েছিলো, তাদের তরবারি গুলোতে শান দিচ্ছিলো, বর্শার ফলা গুলো আরো তীক্ষ্ণ করছিলো। তারা তাদের সম্পদ গুলো ঢেলে দিতো যুদ্ধের ময়দানে যেন শুধু মাত্র মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং ইসলাম কে চিরতরে শেষ করে দেয়া যায়। আর এর বিপক্ষে মুসলিমরাও তাদের সাধ্য মত চেস্টা করে যাচ্ছিলেন, তাদের সব কিছুই কম ছিলো কিন্তু তারপরেও আল্লাহ্*র ওয়াদা সত্য হয়ে আসছিলো। কারন আল্লাহ্* ওয়াদা করেছেন, আল্লাহ্* তাঁর দ্বীন কে প্রতিষ্ঠিত করেই ছাড়বেন। আল্লাহ্* বলেন,
"কাফির রা তাদের মুখের এক ফুঁৎকারে আল্লাহ্*র নূর (দ্বীন) কে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ্* তা প্রজ্বলিত করেই ছাড়বেন এতে কাফিরদের যতই গায়ে জ্বালা ধরুক না কেন"
আজও সেই দৃশ্য এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি, আজো কুফরার রা তাদের অস্ত্র গুলোতে শান দেয় এই জমিনের বুক থেকে আল্লাহ্*র দ্বীনের নাম নিশান মুছে দেয়ার জন্য। কিন্তু তাদের জন্য আফসোস ছাড়া আর কিছুই নয়! শাইখ আওলাকি রহঃ বলেছিলেন, "আমার খুব আশ্চর্য লাগে এটা দেখে যে কুফফার রা বিলিওন বিলিওন ডলার ব্যায় করছে ইসলাম কে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য অথচ প্রতিদিন ইসলাম আগের চেয়ে আরো বেশি প্রসার পাচ্ছে। ইসলাম কে মুছে দেয়ার জন্য তারা তাদের সমস্ত অর্থ সম্পদ ঢেলে দিচ্ছে, সমস্ত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করছে, কিন্তু ইসলামের অগ্রযাত্রা রোধ করতে পারা তো অনেক দুরের কথা, বরং তাঁর নিজেরাই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে! আর জ্বলে পুড়ে মরছে। আল্লাহ্* সুবহানাহু ওতায়ালা সুরা আনফালের ৩৬ নাম্বার আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলেন,
" যে সব লোক সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা আল্লাহ্*র পথ হতে লোকদের বাধা দেয়ার জন্য তাদের ধন সম্পদ ব্যায় করেকরে থাকে, তারা তা ব্যায় করতেই থাকবে, অতঃপর এটাই তাদের দুঃখ ও অনুশোচনার কারন হবে। পরে তারা পরাজিতও হবে"
ইসলামের প্রিয় ভাই এবং বোনেরা! উম্মত ঘুমিয়ে ছিলো আর সেই উম্মতের সেই ঘুমের সুযোগে কাফির রা এই উম্মতের অনেক রক্ত ঝরিয়েছে! উম্মতের মা বোনের সম্মান নস্ট করেছে! আল্লাহ্*র ঘরকে শহীদ করে দিয়েছে, আল্লাহর পবিত্র কালাম কে পুড়িয়ে দিয়েছে, আল্লাহ্*র পবিত্র কালাম কে সামনে রেখে টার্গেট শুটিং করেছে। এ যুগের নব্য ফিরাউন রা মানুষের রব সেজে বসে আছে। উম্মতের প্রথম কিবলা মাসজিদুল আকসায় গুলি চালিয়ে মাসজিদুল আকসা কে ক্ষত বিক্ষত করেছে, আর তাদের নাপাক বুট পরে আর তাদের নাপাক শরীর নিয়ে পবিত্র মাসজিদুল আকসার পবিত্র জমিনের উপর দম্ভ ভরে পদচারনা করেছে। তখন উম্মত কোথায় ছিলো?
জানেন কোথায় ছিলো? মাসজিদুল আকসার ছবি ফ্রেমে বাধাই করে উম্মত ঘুমিয়ে ছিলো, ফেসবুকে ছিলো, শপিং এ ছিলো, বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলো, বার্থডে পার্টি তে ছিলো, ইনস্ট্যাগ্রামে ছিলো, হানিমুনে ছিলো, অবসর যাপনে ছিলো, সন্তান দের নিয়ে খেলায় মত্ত ছিলো, বাগান পরিচর্যায় ডুবে ছিলো, পায়ের নখ পালিশে মত্ত ছিলো, ফুটবল খেলার ম্যাচে ছিলো, মদের গ্লাসে ডুবে ছিলো, বন্ধু নিয়ে মেতে ছিলো, ফ্যাশন শোর র্যােম্পে ছিলো, এমনকি পতিতালয়ে বেশ্যার বিছানায় শুয়েও ছিলো!
উম্মতের গাফেলতির সুযোগ নিয়ে আল্লাহ্*র কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ রাসুল (সাঃ) কে এমন বিদ্রুপ করেছে যা মক্কার জাহেল কাফেররাও করার সাহস পায়নি! আর এই কাজে তার রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র পরিবার এবং উম্মুহাতুল মু'মিনাত দের কেও ছাড়েনি। আর এই উম্মতের জন্য রাসুল (সাঃ) কেঁদেছেন, উম্মুল মু'মিনিন আয়েশা (রাঃ) বর্ননা করেন, একদিন আমি রাসুল (সাঃ) কে বেশ প্রশান্ত এবং হাসি খুশি অবস্থায় দেখতে পেলাম। আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার জন্য আল্লাহ্*র কাছে দুয়া করেন। রাসুল (সাঃ) দুয়া করলেন, "ইয়া আল্লাহ্* আপনি আয়েশা কে ক্ষমা করে দেন, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তার ভবিষ্যতের গুনাহ ক্ষমা করে দেন. তার গোপন গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তার প্রকাশ্য গুনাহ ক্ষমা করে দেন. এবং এই দুয়া আয়েশা (রাঃ) কে এত সন্তুষ্ট করলো যে উম্মুল মু'মিনিন আয়েশা (রাঃ) হাসতে লাগলেন। প্রিয় ভাই বোনেরা একটু চিন্তা করেন। মনে করেন আমরা রাসুল (সাঃ) এর যুগে আছি আর রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার জন্য দুয়া করেন আর রাসুল (সাঃ) ঠিক এই দুয়াই করলেন আমার এবং আপনার জন্য। আমি এবং আপনি কতটুকু খুশি হবো? রাসুল (সাঃ) আমার এবং আপনার অতীত, ভবিষ্যৎ, গোপন, প্রকাশ্য সমস্ত গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ্*র কাছে দুয়া করছেন, এটা কত টুকু খুশির বিষয় হতে পারে? রাসুল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া আয়েশা এই এই দুয়া কি তোমাকে সন্তুষ্ট করেছে? আয়েশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ এই দুয়া কেমন করে আমাকে সন্তুষ্ট না করতে পারে? রাসুল (সাঃ) বললেন, আয়েশা, ওয়াল্লাহি আমি প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর আমার উম্মতের জন্য এই একই দুয়া করি! এই উম্মতের জন্য রাসুল (সাঃ) রক্ত ঝরিয়েছেন। ওয়াল্লাহি উহুদের যুদ্ধে, রাসুল (সাঃ) চিবুকে আঘাত করা হয়েছে, রাসুল (সাঃ) বর্ম ভেঙ্গে গালের ভিতরে ঢুকে গেছে, সেই লোহার টুকরা বের করতে গিয়ে এক সাহাবী তাঁর দুইটা দাঁত শহীদ করে দিয়েছেন, রক্ত গলগল করে রাসুল (সাঃ) পবিত্র দাড়ি মুবারক দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে, আল্লাহ্*র রাসুল (সাঃ), মুহাম্মদ (সাঃ) দুই হাত দিয়ে সেই রক্ত মুছার চেস্টা করছেন।
কিন্তু কে এই মুহাম্মদ (সাঃ)? কে? কি তাঁর পরিচয়? কি তাঁর সম্মান? কত টুকু তাঁর মর্যাদা? হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষ ৫০ হাজার বছর দাঁড়িয়ে থাকবে, মানুষ অসহায় হয়ে আদম (আঃ) এর কাছে যাবে, আল্লাহ্*র কাছে সুপারিশ করার জন্য, আদম (আঃ) বলবেন, আমি নিজেই আজ নিজেকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি, আদম (আঃ) বলবেন তোমরা নুহ এর কাছে যাও, নুহ (আঃ) বলবেন, আমি নিজেই আজ নিজেকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি, তোমরা মুসার কাছে যাও, মুসা (আঃ) বলবেন, আমি নিজেই আজ নিজেকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি, তোমরা ইব্রাহিম (আঃ) এর কাছে যাও, ইবরাহিম (আঃ) বলবেন আমি নিজেই আজ নিজেকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি, তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে যাও। মুহাম্মদ (সাঃ) এর মানুষ যাবে আর বলবে, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাদের জন্য শাফায়াত করেন। আল্লাহ্*র রাসুল (সাঃ) হাদিসে বলেন, আমি সেদিন আল্লাহর সামনে যাবো এবং সাজদায় নত হবো, আল্লাহ্* আমাকে সেদিন এমন কিছু প্রশংসার কথা শিখিয়ে দিবেন যা ইতিপুর্বে আর কাউকে শেখানো হয়নি, আল্লাহ্* আমাকে বলবেন, হে মুহাম্মাদ, তুমি শাফায়াত করো, তোমার শাফায়াত কবুল করা হবে। আমি শাফায়াত করবো, আর আল্লাহ্* আমার শাফায়ত কবুল করবেন।
এই সেই মুহাম্মাদ (সাঃ) উহুদের যুদ্ধে নিজের হাত দিয়ে দাড়ি থেকে রক্ত মুছছেন আর কস্টে অভিশাপ তাঁর মুখে চলে আসছে তিনি সাথে সাথে নিজেকে সামলে বললেন, "ও আল্লাহ তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও, তারা জানেনা তারা কি করছে" আর এই রাসুল (সাঃ) কে যখন গালি দেয়া হয়, যখন তাঁর পবিত্র পরিবার কে অসম্মান করা হয়, নোংরা ছবি আকা হয় তখন উম্মত ঘুমিয়ে থাকে! তখন উম্মত যুক্তি দিয়ে এই ঘৃণিত কাজের পক্ষে যুক্তি খোঁজার চেস্টা করে! অনেকে এর সাথে একাত্মতা পোষণ করে, অনেকের তো চোখ কপালে উঠে যায় শুধু এই চিন্তা করতে করতে যে এর মধ্যে অপরাধের কি আছে!
প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, কিন্তু এরপরেও আল্লাহ্*র পছন্দের কিছু যুবক ঠিকই দাঁড়িয়ে গেছে! আল্লাহ, তাঁর দ্বীন আর তাঁর রাসুল (সাঃ) এর অসম্মানের বিরুদ্ধে নিজের জান কে কুরবানী করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছেন! পৃথিবীর আনাচে কানাচে উম্মতের এক অংশ জেগে উঠছে। দুনিয়ার ধন দৌলত, মান সম্মান, পরিবার পরিজন, সুন্দরী স্ত্রী, আরাম আয়েশের জিন্দেগী, ক্যারিয়ার, সব কিছুকে তুচ্ছ করে জিহাদের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ছে জান্নাতুল ফিরদাউসে নিজেদের হিস্যা বুঝে নিতে আর আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের জন্য! আর আল্লাহ তাদের জন্য বিজয় কে সহজ করে দিচ্ছেন সুবহানাল্লাহ! কেন আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না, আফগানিস্থান থেকে রাশিয়ানরা লেজ তুলে পালিয়েছে, এখন অ্যামেরিকা আর তার দোসর ন্যাটো লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে, ইরাক থেকে জান নিয়ে পালাতে পারলেও যেন বাঁচে! কই আজ কেন অ্যামেরিকা তর্জন গর্জন করেনা। কেন আজ অ্যামেরিকা বলেনা, পৃথিবীর যে প্রান্তেই আল্লাহর পবিত্র মুজাহিদ আর তাদের ভাষায় সন্ত্রাসী থাকুক না কেন অ্যামেরিকা তাকে ছাড় দিবেনা। কেন অ্যামেরিকা আজ বলে, অ্যামেরিকা তার নিজের ভুমি ছাড়া অন্য কোন দেশে আপাতত সৈনিক পাঠাবেনা!
আমার ভাই বোনেরা এই হচ্ছে আল্লাহর প্রতিজ্ঞার শুরু মাত্র! আল্লাহ কি বলেন নি আর সবশেষে আল্লাহ বিজয় মুত্তাকীন দের কেই দিবেন। আল্লাহ নিজেই তার দ্বীন কে বিজয় দিবেন, আর আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা অসীম অনুগ্রহে এই সব মুজাহিদিন ভাইরা তাঁদের নাম দ্বীনের বিজয়ের সাথে লিখে নিচ্ছেন! আর নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনাদের মধ্য থেকে পবিত্র শহীদগণ কে বেছে নিচ্ছেন! আর নিশ্চয়ই এর মধ্য দিয়ে উম্মতের ভাই এবং বোনেরা বিশেষ করে উম্মতের যুবক ভাই এবং বোনেরা জান্নাতের টিকেট কেটে জান্নাত আল ফিরদাউসে পাড়ি জমাচ্ছেন ইনশাআল্লাহ! নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিদান প্রদানে সর্বউত্তম! আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কর্মফল নস্ট করেন না!
এক সময়ে উম্মত ঘুমিয়ে ছিলো, আজো কিছু ঘুমিয়ে আছে এবং কালও তাদের মধ্য থেকে কিছু ঘুমিয়েই থাকবে! কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি এর মধ্য থেকে ঠিকই কিছু আল্লাহর বান্দা, আল্লাহর সৈনিক ঘুম থেকে জেগে উঠেছে, নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছে আর আল্লাহর নুসরাহ চেয়েছে আর নিজেদের সব কিছু নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় ঝাপিয়ে পড়েছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা বলেন,
"মুমিনদের মধ্যে কতক লোক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কতক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শাহাদাত বরন করেছে, আর কতক অপেক্ষায় আছে। তারা তাদের সঙ্কল্প কখনো তিল পরিমান পরিবর্তন করেনি" (সুরা আহযাব ২৩)
আর এটাই আমরা সত্যি দেখছি। কিছু শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে ধন্য হয়ে গেছেন আর কিছু এখনো নিজেদের সঙ্কল্পে অবিচল থেকে শাহাদাতের অপেক্ষায় আছেন! কখনো কি ভেবে দেখেছি, আল্লাহর কুরআন তাদের সম্পর্কে কথা বলছেন আর তাদের কাজের সাক্ষ্য দিচ্ছেন, যারা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন, আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছেন আর সেই ওয়াদার উপর অবিচল রয়েছেন।
সবাই সবার হিস্যা বুঝে নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা কি করছি? আমরা কি জেগে আছি নাকি এখনো ঘুমিয়ে আছি? জান্নাত আল ফিরদাউসের টিকেট বিক্রি হচ্ছে! বাতাসে জান্নাতের টিকেট উড়ছে, কিছু মানুষ সেই জান্নাতের পিছনে নিজেদের জান ও মাল বাজি রেখেছে। আল্লাহর সেই ব্যাবসা যা আমরা প্রথমে বলেছিলাম, তা গ্রহন করেছে!
ভাই এবং বোনেরা আমার, মাল দিয়ে যদি না জিহাদ না করতে পারি তবে জান দিয়ে কিভাবে জিহাদ সম্ভব? আর মাল হচ্ছে জিহাদের রক্ত! মাল ছাড়া জিহাদ হবে কি করে! উম্মতের ভাইরা নিজেদের জান নিয়ে প্রস্তুত, আমরা কি তাদের জন্য আমাদের কিছু মাল নিয়ে তাদের প্রস্তুতির আঞ্জাম দিতে পারিনা? আর এটা কার জন্য করবো? আল্লাহ কি আমাদের ধন সম্পদের মুখাপেক্ষী? অবশ্যই নয়, বরং আমরাই তাঁর বিশাল জান্নাত যার প্রশস্ততা হচ্ছে এই দুনিয়া এবং আসমানের সমান। আল্লাহ আমাদের অনুগ্রহ চাননা, বরং আমরাই তাঁর অনুগ্রহের ভিখারী! আবু দারদাহ (রাঃ) তাঁর পুরা বাগান এবং বাগানবাড়ির বিনিময়ে জান্নাতের একটা গাছ কিনেছিলেন, আর এখানে তো পুরা জান্নাতের কথা বলা হচ্ছে!
আমার ভাই এবং বোনেরা, আমরা আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করি, আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই, আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে ফরিয়াদ করি আর বলি, ও আল্লাহ "আপনি সত্য, আপনার কালাম আল কুরআন সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, জান্নাত সত্য, আর জাহান্নাম সত্য! আমার জন্ম সত্য আর আমার মৃত্যুও সত্য! ও আল্লাহ আমি ভয় করি জাহান্নাম কে আর আমি আশা করি আপনার জান্নাতের। ও আল্লাহ আপনার কালামের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আপনি আমার জান ও মালের বিনিময়ে জান্নাতের ওয়াদা দিচ্ছেন! ও আল্লাহ আপনি আমাকে আপনার সাথে এই পবিত্র ব্যাবসা করার তাউফিক দেন আর আমার এই ব্যাবসা কে কবুল করেন। ও আল্লাহ, আমি আমার এই ধন সম্পদ কিছুই চাইনা, এগুলোর বদলায় আপনি আমাকে জান্নাতে একটা ঘর বানিয়ে দিন, ও আল্লাহ আমাকে এমন জান্নাত দান করেন যেই জান্নাত থেকে আমি আপনাকে দেখতে পাবো, আপনি আমার প্রতি হাসবেন আর আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। রাসুল (সাঃ) বলেন, দুনিয়াতে এমন কিছু আল্লাহর বান্দা আছেন, আল্লাহ যাদের প্রতি হাসেন। আর আল্লাহ যার প্রত হাসেন তাঁর জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়। ও আল্লাহ আপনি আমাকে কবুল করেন, আমার জান কে আর আমার মাল কে, আপনার দ্বীনের জন্য, আপনার সন্তুষ্টির জন্য! ও আল্লাহ্* নিশ্চয়ই আপনি আপনার বান্দার ডাকে সাড়া দেন আর নিশ্চয়ই আপনি দুয়া কবুল করেন!
আর যদি আমরা সত্য ইরাদা করেই থাকি তবে নিশ্চয়ই আল্লাহও আমাদের সাথে সত্য থাকবেন। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা, হাদীসে কুদসি তে বলেন, "আমি আমার বান্দার কাছে তেমন, যেমন সে আমার সম্পর্কে ধারনা পোষণ করে"। রাসুল (সাঃ) বলেন, তুমি যদি আল্লাহর সাথে সত্য থাকো তবে আল্লাহ ও তোমার সাথে সত্য থাকবেন।
আগে যা বলা হয়েছিলো উম্মতের কিছু যুবক, আপনাদের মধ্যে থেকেই, আপনাদেরই সন্তান, আপনাদেরই ছোট ভাই, নিজেদের জীবন কে আল্লাহর রাহে সঁপে দিয়েছেন। তারা নিজেদের জীবন বিক্রি করে দিতে প্রস্তুত। দ্বীনের খেদমতে তারা দাঁড়িয়ে গেছেন। আমরা কি তাদের আঞ্জাম দিতে প্রস্তুত আছি? এই ভূমিতে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার কাজে আমরা কি আঞ্জাম দিতে প্রস্তুত আছি? ভাই এবং বোনেরা আমার, একটু স্মরন করেন, আপনার মা বাবা কিংবা উনাদের মা-বাবা, তারা একদিন দুনিয়ায় বেঁচে ছিলেন, উনাদের ও কি সম্পদ ছিলোনা? কিন্তু আজ তাঁরা কোথায় আর তাদের সম্পদ কোথায়? তাদের সম্পদের কিছু বা অধিকাংশই কি আপনি ভোগ করছেন না? চিন্তা করে দেখেন, এই সম্পদ আজ তাদের কি উপকারে আসছে? তাঁরা তো সম্পদ ছেড়ে যেতে চাননি, কিন্তু তাদের সম্পদই তাদের কে জমিনের নিচে পুতে রেখে এসেছে। এই সম্পদই তাদের কবর খুঁড়েছে, কাফনের কাপড় কিনেছে, আর আর মাটির নিচে দাফন করে দিয়েছে। এই খরচ কি তাদের সম্পদ থেকেই ব্যায় করা হয়নি? তাদের নিজেদের হাতে কামাই করা সম্পদ কি তাদের দাফন দিয়ে দেয়নি? আজ যা আপনার সম্পদ, এই সম্পদকে আপনি ছাড়তে চাইবেন না এটাই সত্য, কিন্তু সময় হলে এই সম্পদই আপনাকে ছেড়ে দিবে এবং আপনাকে মাটির নিচে দাফন করে ফেলবে। ভেবে দেখেছেন কি! আবার এই সম্পদ দিয়েই আপনি এই দুনিয়ায় বসে, জান্নাতে জায়গা কিনতে পারেন, প্রাসাদ কিনতে পারেন, বাগান কিনতে পারেন, এবং তা কখনই আপনাকে ছেড়ে যাবেনা। বরং আপনার মৃত্যুর সাথে সাথে আপনার কবর থেকে জানালা খুলে দেয়া হবে আর দুনিয়াতে বসে আপনি জান্নাতে যেই জায়গা কিনেছেন, যে প্রাসাদ কিনেছেন তা দেখানো হবে, আর আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে, আপনার কবরে জান্নাতের প্রাসাদ থেকে জান্নাতী সুগন্ধি আর ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকবে! আর এর জন্য আপনি কতটুকু করতে প্রস্তুত?
আল্লাহ আপনাকে আর আমাকে আর আমাদের কে দেয়ার জন্য প্রস্তুত, শুধু দেখার বিষয় কে কতটুকু নিতে চায়! আবারো বলছি, দেখার বিষয় কে কত টুকু নিতে চায়! নিজেদের সঞ্চিত মালের থলের মুখ খুলে দিন, আপনার ঘরের দরজা মুজাহিদিন দের জন্য উন্মুক্ত করে দিন, আপনার খানার সাথে মুজাহিদিন দের শরীক করে নিন, একজন করে মুজাহিদকে পরিবারের সদস্য বানিয়ে নিন, কারন শহীদের প্রথম ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তিন জান্নাতে তাঁর জায়গা দেখে নেন। আর এই শহিদ কে যদি আপনি আজ আপনার ঘরে জায়গা দেন, আপনার খানা থেকে তার খানার ব্যাবস্থা করে দেন, আপনার ছাদের নিচে তাঁর থাকার জায়গায় করে দেন, আর যদি তাকে আপনার পরিবারের হিস্যা বানিয়ে নেন, তাহলে জান্নাতে প্রবেশের আগে এই শহীদ আপনাকে খুঁজতে থাকবে ইনশাআল্লাহ্! আজ যখন মাল দিয়ে দ্বীনের পথে জিহাদ করার সুযোগ আপনার ছিলো কিন্তু যে কোন কারনে আপনি সেই সুযোগ নিলেন না, নিশ্চিত থাকেন আল্লাহর বান্দাদের অন্য কেউ সেই সুযোগ গ্রহন করবে এবং জান্নাতে নিজের হিস্যা বানিয়ে নিবে। মনে রাখবেন আজ যেই মুজাহিদ কে আপনি আশ্রয় দিলেন না জীবনের ভয় করে, আগামি কালই আপনার সেই জীবন বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে চলে যেতে পারে কিন্তু সেই মুজাহিদ কে অন্য কেউ তাঁর ঘরে আশ্রয় দিবেন এবং জান্নাতে তাঁর হিস্যা বুঝে নিবেন। এই অমুল্য সুযোগ হাতছাড়া করা কি চরম বোকামি নয়!
আপনি কাকে ভয় পাচ্ছেন? আল্লাহর দ্বীন কে? আপনি এই ভয় পাচ্ছেন যে, এই জমিনের বুকে আল্লাহর দ্বীন কায়েম হয়ে যাবে? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দ্বীন কায়েম হবে এটাই কি আপনার ভয়? অথচ আপনি মুখে বলেন আমি আল্লাহ কে ভালোবাসি, আল্লাহর দ্বীন কে ভালোবাসি। আল্লাহ ওয়াদা করছেন তিনিই তাঁর দ্বীন কে বিজয়ী করবেন অথচ তারপরেও আপনি তাগুত আর তার শক্তি কে ভয় পাচ্ছেন! আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে তিনি মুত্তাকীদের বিজয় দিবেন অথচ আপনি দ্বীনের মুজাহিদ কে ভয় পাচ্ছেন? আবারো চিন্তা করে দেখি, আমরা কি ভয় পাচ্ছি? আল্লাহ? আল্লাহর দ্বীন? আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার পথে নিজের জীবন বিক্রি করে দেয়া মুজাহিদদিন গণ? তাহলে তো আজ আমরা আমাদের রাসুল (সাঃ) কেও ঘরে জায়গা দিতে ভয় পাবো? কিংবা আবু বকর (রাঃ) কে যিনি ছিলেন ধর্ম ত্যাগী মুরতাদদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর, কিংবা উমার (রাঃ) কে যিনি পারস্যে এবং রোমে জিহাদের ঝান্ডা উড়িয়েছিলেন, কিংবা সেই হামযা (রাঃ) কে দ্বীনের জন্য যাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়া হয়েছিলো, আর যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আল্লাহর সিংহ বলেছেন!
আসলে যেই সময়ে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, ব্যাস্ত ছিলাম দুনিয়ার রং তামাশা নিয়ে সেই ফাকে কুফফার রা আমাদের মেরুদন্ড কে গুড়িয়ে দিয়েছে, আর ভিতরের গিরাহ কে, সম্মান কে বিলীন করে দিয়েছে। আজ আমরা নিজেই নিজেকে খুঁজে পাইনা। আমি জানিই না আমি মুসলিম উম্মাহর অংশ! পবিত্র কাবার সম্মানের চেয়ে আমার সম্মান আল্লাহর কাছে বেশি। তবে এটাই শেষ নয়। বরং আশার কথা হচ্ছে এটা শুরু, ইসলামী খিলাফাতের শুরু এখান থেকেই। চারিদিকে তাকিয়ে দেখেন, কালো পতাকা গুলো কি মানচিত্রে স্পস্ট ভাবে ফুটে উঠছেনা? দিনে দিনে কুফফার দের পরাজয় কি আরো সুস্পষ্ট হচ্ছেনা? সব সময়ে দুটি দল ছিলো, এবং থাকবে দাজ্জাল শেষ হবার আগ পর্যন্ত। হিযব আশ শাইতান আর হিযব আর রাহমান। হিযব আশ শাইতান তার ক্যাম্প গুছিয়ে প্রস্তুত তার পতন ঠেকানোর ব্যার্থ চেষ্টার জন্য এদিকে হিযব আর রহমান ও প্রস্তুত।
হিজব আর রাহমানের তাঁবু গুলো ধীরে ধীরে ভোরের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ঐ তো মাশরিক থেকে আর মাগরিব থেকে এই বাহিনী এগিয়ে আসছে, ভোরের প্রথম আলোয় তাঁদের শিরস্ত্রাণ গুলো আভা ছড়াচ্ছে, ঘোড়াগুলোর শ্বাস প্রশ্বাস আরো ঘন হচ্ছে, ঘোড়ার ক্ষুর গুলো মাটিতে শক্ত কদমে আছড়ে পড়ছে আর পিছনে ধুলার মেঘ তৈরি করছে! প্রত্যেক ঘোড়া তার পাশের ঘোড়ার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, আর ঘোড়সোওয়ার রা? তারাও ধেয়ে আসছে তুফান বেগে, জান্নাতের সুগন্ধ আর আল্লাহর দেখা পাবার নেশা তাদের পাগল করে তুলেছে!
জান্নাতের এই কাফেলা যেন আমাদের হাত ছাড়া না হয়ে যায়!
হে আল্লাহ আমি আপনার দয়ার ভিখারী, আপনি সবার আগে আমাকে এবং আর সবাইকে মাফ করে দেন আর কবুল করে নেন শাহাদাতের জন্য। অধম ভাই এর জন্য অনেক দুয়া করবেন ইনশাআল্লাহ্*।
আপনাদের ভাই,
আব্দুল্লাহ
Comment