মতিউর রহমান মাদানির কাছের একজন আলেম, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টারের পৃষ্ঠপোষক আবদুল্লাহ শাহেদ মাদানির সাথে জনৈক জিহাদির কথোপকথন
শায়খ আবদুল্লাহ শাহেদ মাদানি উনার এক স্ট্যটাসে প্রকৃত সালাফি আলিমদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। এর বিপরীতে মতানৈক্য তুলে ধরলে তিনি ফেইসবুকে ভয়েস কল দেন (আলহামদুলিল্লাহ)।
স্ট্যটাস লিঙ্ক (ক্লিক করুন)
**পুরোটা সময় আদব বজায় রেখে কথা বলার চেস্টা করেছি, কিন্তু ১০লক্ষাধিক মুসলিম ও হক্কানি আলিম-উলামাদের রক্তের ব্যাপারে শায়খের উদাসীনতা দেখে হয়তো কিছুটা উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। আশা করি, শায়খ কিছু মনে করেন নি। এই পোস্টে শায়খের বক্তব্যের খন্ডন করা হয়নি, শুধুমাত্র কথোপকথনটি তুলে ধরা হয়েছে। নিম্নে উল্লেখিত হলো -
শুরুতেই শায়খ আমার কাছে সৌদি শাসকগোষ্ঠীর বৈধতা সম্পর্কে বয়ান করলেন।
তিনি বললেন,
"শেষ জমানায় মদিনাতে আবার ইলম ফিরে আসবে। যেমনটি রাসুল(সাঃ)বলেছেন।"
অধম জানতে চাইল,
"মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে সাহায্যকারী শাসকের শরিয়তে হুকুম কি?"
"এ ব্যাপারে ইবন তাইমিয়া(রঃ)ও ইবনুল কাইয়ুম(রঃ) বলেছেন,বড় ক্ষতিকে এড়ানোর জন্য ছোট ক্ষতি স্বীকার করে নেয়া যায়।যেমন হুসি কাফিরদের দমন করার জন্য সৌদি সরকার কাফিরদের সাহায্য নিতে পারে।না হলে হুসি কাফিররা মক্কা মদিনা দখল করে ফেলবে।"
শায়খ জানালেন,
"সাদ্দাম রাশিয়াকে ডেকে এনে সৌদি দখল করতে চাইল। তাই তখন সৌদি সরকার আমেরিকা থেকে সাহায্য নিল।"
যাই হোক!
অধম জানতে চাইল,
"যদি সাদ্দামকে অপসারণ করার জন্যই সৌদি সরকার আমেরিকা থেকে সাহায্য নিয়ে থাকে তবে কেন ২০০৩ সালে সাদ্দাম সরে যাওয়ার পরে সৌদি সরকার কেন আম্রিকাকে বের করে দিল না!"
"সেখানে এখন আর কোন আম্রিকান সৈন্য নেই!"
অধম হাল ছাড়ল না! জানতে চাইলাম,
"দাম্মাম, জেদ্দায় আমরা যে এখনও আম্রিকান সৈন্যদের দেখি তাদের কাজটা কি তাহলে শুনি!"
"আমেরিকান সৈন্যরা সেখানে সৌদি সৈন্যদের সাথে পরস্পর মত-বিনিময়ের কাজে ব্যাস্ত। তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করে,প্রশিক্ষণ নেয়। আর এটা বিশ্বের যেকোন দেশে জায়েজ আছে।"
অধম জানতে চাইল,
"ইরাকের ১০-১৫ লক্ষ মুসলিমকে শহিদ করে দেয়া হল সৌদির ভূমি ও আকাশ ব্যাবহার করে। শরিয়তে এ ধরনের শাসকের হুকুম কি?"
"past is past!"
অধম বলল,
"সুবহানআল্লাহ! আপনি একজন আলেম হয়ে এসব কথা কিভাবে বলেন? আপনি তো ইলমের খিয়ানত করলেন।"
"রাফেজি,হুসিরা যে নিরীহ সুন্নি হত্যা করে তা আপনাদের চোখে পড়ে না?"
"অবশ্যই আমরা রাফেজি,হুসিদের বিরোধিতা করি এবং কেউ যদি ইসলামের জন্য মুসলিমদের সুরক্ষার জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তবে আমরা তা সমর্থন করি। কিন্তু এর মানে এই না যে,হুসিদের দমন করার নামে নিরীহ মানুষ হত্যা করা হবে। নিরীহ সুন্নি হত্যা করা হবে!"
"সৌদির ভূমিতে অবস্থিত CIA'র ড্রোন ঘাটি ব্যাবহার করে এখন ইয়েমেনে আলেমদের হত্যা করা হচ্ছে! সুন্নিদের হত্যা করা হচ্ছে। শরিয়তে এর হুকুম কি?"
"আলেমদের হত্যা করা হচ্ছে না। আওলাকিকে হত্যা করা হয়েছে। সে কোন আলেম না। সে আল-কায়েদার নেতা। সে কোন মাদ্রাসায় পড়েছে?"
অধম বলল,
"ও আচ্ছা! মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে বুঝি সে আলেম না! আর আল-কায়েদার নেতা হলেই তাকে এভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে, কোন রকম শারিয়াহ কোর্টে বিষয়টি না তুলে হত্যা করা যাবে শরিয়তের কোথায় এমনটি বলা আছে? আর এছাড়াও আমরা দেখতে পাচ্ছি, সুন্নিদের এক বিয়ের প্রোগ্রামে হামলা চালিয়ে ১৩০ জন আহলে সুন্নাহর সদস্যদের হত্যা করা হল।"
"এরা সবাই আল-কায়েদার! এরা সবাই আল-কায়েদার!"
"সৌদি সরকার যা করছে আলেমদের ফতওয়া নিয়েই করছে।"
"ইয়া শায়খ! তাহলে নিরীহ মানুষদেরকে কেন হত্যা করছে!"
"এটা হল ভুল-বশত হত্যা।"
"এখন সৌদি সরকার কেন সন্ত্রাসী হবে না?"
"সৌদি 'মুজাহিদরা' এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করে নি।"
"শেষ জমানার যে হাদিসটা তিনি বললেন(মদিনায় আবার ইলম ফিরে আসবে) সেখানে খাসভাবে যে আমাদের আজকের সময়টার কথা বলা হচ্ছে তা আপনি কিভাবে বললেন? কেননা এটা নবিজি(সাঃ) ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। এটাতো ৫০ বছর পরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।"
"এটা সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য।"
"ও আচ্ছা! তাহলে মদিনার আলিমরা শরিয়ত বিরোধী কোন ফতওয়া দিলেও তার উপর আমল করতে হবে?"
"না! তা কেন হবে?"
"ঠিক আছে।আরেকদিন কথা হবে!"
"ইনশা'আল্লাহ! ঠিক আছে,আরেকদিন কথা হবে!"
*মূলত! সৌদি সরকারের বৈধতা প্রসঙ্গেই আলোচনাটি হয়। তবে শায়খ এখানে ছোট্ট একটা ভুল করেছেন। উনি ঢালাওভাবে আল-কায়দার নামে মৃত্যু-পরোয়ানা জারি করে দিচ্ছেন, কিন্তু আল-কায়দাকে তখনই খাওয়ারিজ প্রমাণের প্রসঙ্গ আসবে যখন শায়খ প্রথমে সৌদি সরকারকে বৈধ মুসলিম শাসক হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন।
সুতরাং, আগে সৌদি সরকারকে ন্যায়পরায়ণ শাসক প্রমাণ না করেই আল-কায়দার নামে মুসলিমদের রক্ত হালাল করার মত ভয়ংকর কাজ থেকে দূরে থাকা সমীচীন ছিল হয়তোবা। এছাড়াও শায়খ আওলাকি (রহ)'র ১৬ বছরের ছেলে আব্দুর রাহমান কে টার্গেট কিলিং এর ব্যপারে শায়খের বক্তব্য জানতে পারলে ভালো লাগত।
সময় ও সুযোগ পেলে সাদ্দামকে সরিয়ে রাফেজি নুরি আল মালিকিকে ইরাকের ক্ষমতা দেয়ার পেছনে সৌদির ভূমিকা কেন বৈধ তা নিয়েও আলোচনা করতে পারেন তিনি।
সর্বশেষ আপডেট - এই কথোপকথনটি প্রকাশ করার পর আজ পর্যন্ত তিনি অন্যসব কিছুর উত্তর সাথে সাথে দিলেও এই বিষয়ে আর মন্তব্য করেন নি।
ছোট্ট এই কথোপকথনটি এসকল আলিমদের হিংস্র চেহারা ও এদের অন্তরে লালিত হওয়া বিষাক্ত চেহারা সারাংশ ফুটিয়ে তুলেছে। নিতান্তই অন্ধ ব্যাতিত এসকল আলিমের অনুসরণ কেউই করবে না।
এবং , হিদায়াত তো কেবল আল্লাহ্* তা'আলার পক্ষ থেকেই আসে।
Comment