সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্* রাব্বুল আলামিনের জন্য! দরুদ এবং সালাম রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর সম্মানিত পরিবারবর্গের উপর।
একজন মুসলিমের সর্ব প্রথম প্রতিরক্ষা তার ঈমান! একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আর কোন প্রতিরক্ষা হতে পারেনা। একজন মুসলিমের ঈমান যখন চলে যায়, তখন তার প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাবস্থা টি ধ্বংস হয়ে যায়। আর এরপর তাকে নিয়ে খেলতামাশা করা কোন ব্যাপারই না।
আজ যখন আমাদের চারপাশে তাকাই তখন আমাদের মুসলিম মা বোনদের কস্ট আমাদের পেরেশান করে তুলে। এই পেরেশানির ব্যাপ্তি এতই বেশি যে এর শুরু কোথায় আর এর শেষ কোথায় সেটাই বুঝে উঠা যায়না। আমাদের জিন্দেগী টা এমন হয়ে গেছে যে কেউ এখন জানেইনা সে কেন বেঁচে আছে আর সে কেন বেঁচে থাকবে! আমাদের বেঁচে থাকা এখন পুরাপুরি জৈবিক তাড়না হয়ে গেছে, ঠিক যেমন একটা গরুর জীবন কিংবা একটা গাধার জীবন। একটি দিন শেষ, আরেকটি দিন পার করো। জীবনের মাকসাদ গুলো পরিবর্তন হয়ে গেছে। কামিয়াবি গুলোর সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে গেছে, ইজ্জত এবং জিল্লতি নিজেদের মধ্যে সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নিয়েছে। আশরাফুল মাখলুকাত নিজেকে পশুর কাতারে নামিয়ে নিয়ে এসেছে। আক্ষরিক অর্থেই তাই, আমি পত্রিকায় দেখলাম, পশ্চিমাদের ৬০% অধিক মানুষ তার পরিবারের যে কারো চাইতে তার নিজের পোষা কুকুরের সাথে সময় কাটাতে অধিক পছন্দ করে, তার ১০০ ছবির মধ্যে ৯০ এর অধিক থাকে কুকুরের সাথে! অনেক উপর থেকে যদি এই দৃশ্য কল্পনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে আমরা ধুঁকছি, উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরাফেরা করছি, সকালে যাচ্ছি রাতে ফিরছি.. এবং এই চক্র বলতে গেলে অনেক সময় চলে যাবে। এমন একটি চক্র যা আমাদের ঈমান কে তিলে তিলে শেষ করে ফেলছে আর ঈমানের অভাবে আমাদের অন্তর গুলো রক্তশূন্যতায় ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। বাইরে থেকে দেখা যায় শুধু দেহ! কখনো কি এমন বলতে শুনেন নি, আজকাল মানুষের অন্তর বলে কিছু নাই! মানুষের বিবেক বলে কিছু নাই! এটাই প্রমান করে দেয় যে আমাদের অন্তর তিলে তিলে মারা যাচ্ছে। আর অন্তর বেঁচে থাকে নূর নিয়ে, আলো নিয়ে, হিদায়েত নিয়ে। অন্তরের নূর আর আলো হচ্ছে ঈমান। ঈমান এই অন্তর কে জীবিত রাখে, তাকে আলো দিয়ে প্রজ্বলিত করে রাখে। আর ঈমানের অভাবে এই অন্তর ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার হয়ে থাকে। যে অন্তর ঘুটঘূটে অন্ধকারে ডুবে থাকে সে কি কখনো লক্ষ্যে পৌছাতে পারে? আল্লাহ্* সুবহানাহু ওতায়ালা এদের সম্পর্কে বলেছেন,
"তারা কোথায় ঘুরপাক খাচ্ছে?"
ঈমান হচ্ছে আমাদের অন্তরের আলো, আমাদের অন্তরের খোরাক। এই ঈমান ব্যাতিত অন্তর মৃত। ঈমান কি? সহজ পরিভাষায় ঈমান হচ্ছে আল্লাহ্*র প্রতি বিশ্বাস, কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস, রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস.. এবং এখানেই শেষ নয়, এরপরে এই ঈমান ধীরে ধীরে তার ডালপালা মেলতে শুরু করে, এর শিকড় গভীরে যেতে শুরু করে, আর তার অন্তর বেশি থেকে বেশি সুরক্ষিত হতে শুরু করে। অপর দিকে এই ঈমান যখন আস্তে আস্তে ঝরে যেতে শুরু করে তখন তার প্রতিরক্ষাও দুর্বল হতে থাকে। যেমন জান্নাত এবং জাহান্নামের প্রতি বিশ্বাস ঈমান এর একটা অংশ,তাকদিরে বিশ্বাসও ঈমানের একটা অংশ। এখন যে ব্যাক্তি তাকদিরে বিশ্বাস করবেন তিনি কোন চাকরি না পাওয়ায় হতাশ হবেন না বরং নতুন ভাবে চেস্টা করবেন। আর যে তাকদিরে বিশ্বাস করেনা সে যদি চাকরি পায় তবে সে তার লেখাপড়াকে এবং তার ডিগ্রী কে চাকরির কারন হিসাবে মেনে নেয়। আর যদি কখনো সে ব্যার্থ হয় তখন সে এই দোষ লেখাপড়ার উপরে চাপিয়ে দেয়, এই ভয়ে তখন সে নিজের উপরে জুলুম করা শুরু করে। এত গুলো ডিগ্রি না থাকলে, এত এত সার্টিফিকেট না থাকলে কিংবা আরেকটু বেশি স্মার্ট না হলে, আরেকটু বেশি সাজুগুজু না করলে সে উমুক চাকরি পাবেনা। এইভাবে তাকদিরের ঈমানের অভাবে সেই নিজের উপরে জুলুম শুরু করে। শুধুমাত্র এই অংশটুকুর অভাবেই সে আরেকজন মানুষের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিতেও প্রস্তুত থাকে। এমন ভাবে যে জান্নাত জাহান্নাম কে বিশ্বাস করেনা তার ভিতর থেকে পাপ বোধ লুপ্ত হয়, পশুর সাথে বিশেষ কোন পার্থক্য থাকেনা। এমন কি রাস্তায় জেনা করতেও তার কোন লজ্জা বোধ হয়না, কিংবা পুরা পরিবার নিয়ে সম্মলিতি ভাবে টিভির সামনে বসে সম্মিলিত ভাবে জেনার অনুষ্ঠান দেখার মধ্যেও তার কোন লজ্জাবোধ হয়না! এমনি ভাবে যখন কেউ রাসুলদের প্রতি ঈমান হারিয়ে ফেলে তখন বিপথগামী জাহান্নামীদের পথ অনুসরণ করে, তাদের পথ কে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে, আর এক পর্যায়ে গিয়ে সে বুঝতে পারে সে আসলে পথভ্রষ্ট, কিন্তু ঘুরে ফিরে সে সঠিক পথের কোন দিশা পায়না, কারন সে তত দিনে অনেক দূর চলে গেছে।
একই ভাবে যে ব্যাক্তি আল্লাহ্*র প্রতি ঈমান হারিয়ে ফেলে তার আসলে সব কিছুই শেষ হয়ে যায়। সব কিছু বলতে সব কিছু, এই দুনিয়া এবং আখিরাত সব। তাই এটা তো লিখে শেষ করা যাবেনা! যে আল্লাহ্* কে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আর পালন কর্তা হিসাবে চিনতে পারলোনা তার অবস্থা হয় ডারউইনের মত যে বানরের মধ্যে নিজের পূর্বপুরুষদের খুঁজতে শুরু করেছিলো। ডারউইনের এই বিষয় টি আসলে এতটা সহজ নয় যতটা সহজ ভাবে তা আমাদের সন্তানদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এভাবেই খুব ধীরে ধীরে আমাদের ঈমানের দিকে তীর মারা হয়, আমরা সেটাকে সহজ ভাবে নেই, আর একদিন সবার অলক্ষ্যে আমাদের ঈমান মারা যায়। বরং লক্ষ্য করি, আসলে ডারউইনের এই বিষয়টি হচ্ছে ঈমানের চূড়ান্ত মৃত্যু যার ফলে একজন মানুষ নিজের রব কে ভুলে গিয়ে বানরের মধ্যে নিজের পূর্বপুরুষদের খুঁজতে থাকে।
কেন? এটা কখন হয়? যখন আল্লাহ্*র প্রতি কারো ঈমান মরে যায়। তার ঘুটঘুটে অন্তর তখন একবার বানর কে আর একবার শিম্পাঞ্জী কে নিজের পূর্বপুরুষ ভাবতে শেখায়! সহজাত প্রবৃত্তি সেটা মানতে চায়না, তখন সে নিজের অন্ধাকার অন্তরের উদ্ভট সিদ্ধান্ত কে শক্তিশালী করার জন্য তার চেয়েও বেশি বিভিন্ন উদ্ভট বিষয়ের জন্ম দেয়।
এভাবে ঈমানের অভাবে আমরা আমাদের নিজেদের আসল অস্তিত্ব কে বিলীন করে দিয়ে অন্য এমন এক কিছুর মধ্যে ঢুকে যাই যা কোন ভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। যেমন একটি সহজ উদাহরন দেই, আল্লাহ্*র উপর আমাদের ঈমান কে গলা টিপে হত্যা করে যখন মানুষ তারই মত কিছু মানুষের উপরে তার ঈমান কে ন্যাস্ত করে, আর বলে গনতান্ত্রিক একটি সমাজ ব্যাবস্থা তার জীবনের নিরাপত্তা দিবে আর যখন সে নিজেকে এই গনতন্ত্রের কাছে সঁপে তখন সে তার ফিতরাত কে ছেড়ে নিয়ে অন্য কিছুর মধ্যে প্রবেশ করে। এবং এর ফলে তার জিন্দেগীর প্রতিটা মুহুর্ত পরিবর্তন হয়ে যায়। ওয়াল্লাহি প্রতিটা মুহুর্ত। প্রতিটা দিন তার কাছে নতুন মনে হয়, প্রতিটা কাজ তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়, প্রতিটা পরিস্থিতি তার কাছে নতুন মনে হয়। সে শিম্পাঞ্জী কে পুর্বপুরুষ হিসাবে মেনে নেয়ার মত অদ্ভুত সব বিষয়ের জন্ম দেয় এবং সেগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে চেস্টা করে এভাবে তার প্রতিটা দিন শুধু নতুন কিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার যুদ্ধ চলতে থাকে, একদিন সে ক্লান্ত হয়ে ফিরে দেখে আসলে হচ্ছে কি? কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পায়না। এর চেয়েও ভয়ংকর কথা হচ্ছে উত্তর খুঁজে দেখার মত কোন শক্তি তার অবশিস্ট থাকেনা, আর এর চেয়েও ভয়ঙ্কর কথা হচ্ছে এর কোন উত্তর পাওয়া যাবেনা। কারন এই সিস্টেমের জন্ম দাতারা কখনই এই প্রশ্ন কে পছন্দ করেনা, কারন এই প্রশ্ন তাদের জুলুমের এই সিস্টেম কে টলিয়ে দিবে। তারা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে এই প্রশ্নকে চেপে রাখার চেস্টা করে। এর এটা হচ্ছে ঠিক ফিরাউনের মত কাজ!
আরও সহজ করে যদি বলা হয়, বাংলাদেশের কোন একজন মানুষ যখন নিজেকে গনতন্ত্রের কাছে সঁপে দেয় ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে তার সমস্যা কি কেউ লিখে শেষ করতে পারবে? নাকি তার সমস্যার কেউ কোন ব্যাখ্যা দিতে পারবে? বাস্তবতাকে আমাদের খুব ভালো ভাবে দেখা দরকার। এই যে উপজেলা নির্বাচন গেলো, শতাধিক লোক নিহত। এখন এর মধ্যে যে কোন একজন মৃত ব্যাক্তির পরিবারের কি করনীয় আছে? তাদে কি সাহস আছে এই প্রশ্ন করার কেন সে মারা গেলো? আরো আশ্চর্য হচ্ছে এই প্রশ্ন করার দরকারই নাই, কারন প্রশ্ন করার আগেই এর উত্তর পরিষ্কার এবং এই উত্তর কাউকে মুখ ফুটে দিতে হবেনা। কিন্তু সে জেনে বা না জেনে গণতন্ত্র নামের এই সিস্টেমের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ছিলো, আর তারও অনেক আগে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো।
এমনি ভাবে আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তে ঈমানের অভাব আমাদের তিলে তিলে শেষ করে ফেলছে। ঈমানের অভাবে আমারা নিজেরা আমাদের কে হত্যা করছি।
আর আমাদের ঈমান কে প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহুর্তে, দিনে কিংবা রাতে আঘাত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি সমাজ ব্যাবস্থা যা গভীর থেকে আমাদের ঈমান কে নস্ট করে ফেলার কাজে ব্যাস্ত। এটি একটি দাজ্জালি সমাজ ব্যাবস্থা, এটি একটি আল্লাহ্* দ্রোহী সমাজ ব্যাবস্থা, এটি একটি জালিম সমাজ ব্যাবস্থা! আমরা সাধ্যমত আমাদের সন্তানদের ঈমান শিক্ষা দেই, আলহামদুলিল্লাহ কিন্তু যা শিক্ষা দেইনা তা হচ্ছে কিভাবে এই ঈমান ধ্বংস হয়ে যায়। কিভাবে আমাদের এই সমাজ আমাদের ঈমান কে ধ্বংস করে ফেলছে। ধার্মিক বাবা মার ঘরে কি নাস্তিক বড় হয়না? কিভাবে হয়? কারন সে ঈমানের শত্রু কে চিনতে পারেনি। তাই আমাদের সন্তানদের ঈমান শেখানোর পাশাপাশি ঈমান ধ্বংসকারী বিষয় সম্পর্কেও শিক্ষা দেয়া উচিত, না হলে তাদের অন্তর একদিন ঈমানের অভাবে মারা যাবে। আপনি হয়তো ভাববেন, আমার ছেলে এমন কেন হলো? আমি তো তাকে এই শিক্ষা দেইনি! কারন আপনি তাকে ঈমান শিখিয়েছেন কিন্তু কিভাবে ঈমান রক্ষা করতে হয় সেটা শেখান নি। আপনার সন্তান কখনই ডোবা নালা থেকে পানি খাবেনা। কেন জানেন? কারন ছোট থেকেই আপনি এবং তার পাঠ্য বই তাকে শিখিয়েছে এই পানিতে জীবানু আছে! ঈমান ধ্বংসকারী জীবানু কিসের মধ্যে আছে এই শিক্ষা আমরা শেষ কবে দিয়েছি মনে পড়ে কি?
একটা পুরা সমাজ ব্যাবস্থা আমাদের ঈমান কে তিলে তিলে শেষ করার জন্য অক্লান্ত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, ব্যাপারটা কে এভাবে দেখতে পারেন, এক গ্লাস পানির মধ্যে যদি আপনি একফোটা দুধ দেন তাহলে সেই পানি মুহূর্তেই সাদা দুধ কে পানির মত করে ফেলবে। আপনি কি বুঝতে পারবেন কোন দিক দিয়ে দুধ পানি হয়ে গেলো? হুবহু এই ভাবেই আমাদের ঈমান এই সমাজ ব্যাবস্থার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে, ঠিক এই ভাবেই। তাই এর চিহ্নিতকরণ অনেক কঠিন! কিন্তু এরপরেও কিছু বিষয় আছে যেগুলো হয়তো খুব সহজেই চোখে ধরা পড়বে।
ঈমান ধ্বংস কারী জীবানু ১, শিক্ষা ব্যাবস্থাঃ
ঈমান ধ্বংস করার জন্য অন্যতম একটা জীবানুর নাম শিক্ষা ব্যাবস্থা। যা আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। কোন সন্দেহ নাই আমাদের এই শিক্ষা ব্যাবস্থার মূল গোড়াপত্তন করেছে ব্রিটিশ কাফির রা। এর অর্থ এই যে, আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার মূলভিত্তি স্থাপন করেছে কাফির রা! এরপরে কিভাবে তিলে তিলে শিক্ষা ব্যাবস্থাকে দুষিত করা হয়েছে সেটাও একটা কম বড় আলোচনা না। এর কিছু ধারনা পাবার জন্য শাইখ আওলাকি (রহঃ) এর ব্যাটল অফ হার্টস অ্যান্ড মাইন্ড লেকচার টা শোনা যেতে পারে। একটা ধারনা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ্*। তবে আমরা সবাই এটা জানি যে ব্রিটিশরাই সর্বপ্রথম কওমী মাদ্রাসা কে মর্ডানাইজ করে আলীয়া ভার্সন বের করে এবং সর্বপ্রথম আলীয়া মাদ্রাসার হেড ছিলো একজান ব্রিটিশ কাফির!
মুসলিম দের শিক্ষা ব্যাবস্থার মূল উৎস কুরআন এবং হাদিস কে দুষিত করার জন্য তারা সর্বপ্রথম বিভিন্ন দুনিয়াবী শিক্ষা ব্যাবস্থা চালু করে। আমি দুনিয়াবী শিক্ষা ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে বলছিনা, আমি বলছি দুনিয়াবী শিক্ষা ব্যাবস্থা তো পাকাপাকি ভাবেই আছে, কিন্তু কুরআন এবং সুন্নাহ কই? কোথায় গেলো? ভালো করে লক্ষ্য করেন, মুসলিমের শিক্ষা ব্যাবস্থা থেকে কুরআন এবং সুন্নাহ কে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। কুরআন এবং সুন্নাহ ব্যাতিত আপনি আপনার সন্তান কে ঈমান শিক্ষা দিবেন কিভাবে? ঈমান কি গাছের ফল?
এবার একেবারে বর্তমানে চলে আসি। দেখা যাক আমাদের সন্তানরা ছোট বেলায় কি শিখে! সমাজ বিজ্ঞান তাকে শেখায় আদিম যুগে মানুষ উলঙ্গ থাকতো, লতা পাতা দিয়ে লজ্জা স্থান ঢাকতো, তাহলে আদম (আঃ) কি এমনই ছিলেন? তাকে শেখানো হয়, পানি চক্র, খাদ্য চক্র, তাকে শেখানো হয় প্রকৃতি নামের এক নতুন সংজ্ঞা। আর এগুলোর কোথাও আল্লাহ্* কে খুঁজে পাওয়া যায়না। পানি চক্র, খাদ্য চক্র এর মত এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি আমাদের সন্তানরা আল্লাহ্* কে খুঁজে না পায় তবে আমরা তাদেরকে কি ঈমান শেখাতে পারলাম?
আল্লাহ্* কি সুরা মূলকে বলেন নি,
"বল তোমরা ভেবে দেখেছো কি যদি তোমাদের পানি ভুগর্ভের তলদেশে চলে যায়, তাহলে কে এনে দেবে তোমাদের প্রবাহমান পানি?"
এরপর তাকে শেখানো হয় বিদ্রোহী কবিতা, নজরুল ইসলাম খোদার আরশ ভেদ করে চলে যাবে (নাউজুবিল্লাহ) কারন সে নাকি বিদ্রোহী! সে নাকি জাতীয় কবি! আচ্ছা এই জাতীয় বিষয়টা কি তা কি কখনো আমাদের সন্তান কে শেখানো হয়েছে? সে কি জানে জাতীয়তাবাদের সাথে ইসলামের কি সম্পর্ক? ঈমান কি শেখাবেন, সে তো জলজ্যান্ত শিরক শিখে ফেললো! নজরুলের শিরকের বুলি সে কত সুন্দর ভাবে মুখস্ত করতে পারবে এর উপরে তাকে নম্বর দেয়া হবে! তাকে শেখানো হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, অথচ সে আপনার কাছে থেকে শুনেছে, জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ)। সে বুঝেনা কোনটা সত্য! জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) একথা আপনি ১০ বার বলে ক্লান্ত হয়ে যান, কিন্তু এই শিক্ষা ব্যাবস্থা তাকে প্রতিদিন বলতে থাকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
তাকে শেখানো হচ্ছে ১০০ টাকায় সুদ ৬ টাকা ২১৪০ টাকা সুদ কত? সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ্* যেখানে সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন আর সেখানে আমাদের সন্তান সুদ শিখছে, প্রকারান্তে সে কি এটাই শিখছেনা যে কিভাবে আল্লাহ্*র সাথে যুদ্ধ করতে হয়? আর এই গনিতে সে যদি ১০০ তে ১০০ পায় খুশিতে আমরা পাগল হয়ে যাই! আমার সন্তান আল্লাহ্*র বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা শিখছে আর সেই খুশিতে আমরা আনন্দে আত্মহারা!
তাকে বিজ্ঞান শেখানো হয়, তাকে লজিক শেখানো হয়, কিন্তু তাকে যেটা শেখানো হয়না সেটা হচ্ছে, লজিক এর ও সীমা আছে! তাকে যেভাবে গ্রাভিটিশনাল ল মুখস্ত করানো হয় আর প্র্যাক্টিকাল করানো হয়, আল্লাহর নাম সমূহ সেভাবে তাকে না শিক্ষা দেয়া হয় না সেই নামগুলোকে বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখানো হয়! সুতরাং তাঁর ঈমান ঐ ফিজিক্সের ল এর সামনে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হতে শুরু করে।
বিষয় গুলো এতো সাধারন যে আলোচনা করলে শুধু করেই যেতে হবে। জিওগ্রাফী তাকে শেখায় টেকটনিক প্লেটের সঙ্ঘর্ঘের কারনে ভূমিকম্প হয়, অথচ তাকে এটা কেউ শেখায় না যে, সমাজে পাপ বেড়ে গেলে ভূমিকম্প হয়! আর তাকে বয়ঃসন্ধি কালের নিদর্শন শেখানো হয়, আরো অশ্লীল বিষয় শেখানো হয় যার আলোচনা আমাদের রুচিকে বিঘ্নিত করে। তাহলে আমাদের মেয়েরা কিভাবে তাকওয়াহ অর্জন করবে? তারা কিভাবে জেনা করতে আল্লাহ্* কে ভয় পাবে!
তাকে তোতা পাখির মত শেখানো হয় মুক্তিযুদ্ধ! কিন্তু তাকে বদর, উহুদ, খন্দক, তাবুক, মুতা এগুলো শেখানো হয়না। তাহলে সে কিভাবে ঈমান শিখবে? সুবহানাল্লাহ আল্লাহ্* সাহাবাদের কে পর্যন্ত ঈমান শিখিয়েছেন এই গাজওয়া গুলোর মধ্য দিয়ে, আর আমরা আজ আশা করি আমাদের সন্তানরা এগুলো শিক্ষা ছাড়াই ঈমান শিখে ফিলবে! কি এক ছলনা! নিজের সাথে নিজেরই ছলনা!
এভাবেই চলতেই থাকবে, তিলে তিলে আমাদের সন্তানদের ঈমান কে এভাবে শিক্ষা ব্যাবস্থার নামে ধ্বংস করা হয়! আমাদে সন্তানদের ঈমান সেই স্কুল ঘরেই মারা যায়! আর একদিন তারা জাতীয়তাবাদের চেতনা নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। এই বিষ এত ব্যাপক যে আপনি কাটা ছেড়া করতে পারবেন না! আপনি ভালো করে দেখেন, তথাকথিত এই শিক্ষা ব্যাবস্থার প্রতিটা ধাপে ধাপে আছে ঈমান বিধ্বংসী বিষয়। শুধু তাই নয়, শুধু ঈমান কে ধ্বংস করেই তারা ক্ষান্ত হয়না বরং সেখানে কুফর আর শিরক এর মত জঘন্য বিষয় গুলোকেও প্রবেশ করিয়ে দেয়।
আমি বলছিনা যে ব্যাতিক্রম নাই। আমি শুধু বলতে চাই আমদের জানা উচিত কিভাবে আমাদের ঈমান কে ধ্বংস করা হয়। এর মানে এই না যে সবার ঈমান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তবে ক্ষতি যে হচ্ছে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই! এর শেষ প্রান্তে ঈমানের মৃত্যুই শুধু অবশিষ্ট থাকবে।
ঈমান ধ্বংস কারী জীবানু ২, ...
[চলবে ইনশাআল্লাহ্*]
Comment