পৃথিবীর মানচিত্রে চোখ রেখে যে প্রান্তেই নজর দেবেন মুসলিম নির্যাতন কোথাও খুব বিরল নয়। বর্তমান দুনিয়ার সবচে স্বল্পমূল্য জিনিসগুলোর তালিকায় চলে এসেছে মুসলিমদের রক্ত। ধরাপৃষ্ঠের অন্য কোনো জাতি বা ধর্ম ইসলাম বা মুসলিমের মতো নির্যাতিত নয়। জগতের সবচে বড় নিগৃহিত জাতির নাম মুসলিম। আধুনিক দুনিয়ায় বসনিয়া-চেচনিয়া-জিংজিয়াং ও মিন্দানাওয়ের পর কাশ্মির-গুজরাট-আসাম, ফিলিস্তিন-আফগান-ইরাক ও মায়ানমারে চলছে মুসলিম নিধনযজ্ঞ। জাতিসঙ্ঘের ঘোষণা অনুযায়ী পৃথিবীতে সবচে নির্যাতিত সংখ্যালঘু জাতির নাম রোহিঙ্গা মুসলিম।
একটি কুকুর না খেয়ে মারা গেলে যে সভ্য দুনিয়ায় চোখের পানির স্রোত বয়ে যায়, বন্য প্রাণী বাঁচাতে যেখানে কোটি কোটি ডলারের ফান্ড অনায়াসে সংগৃহীত হয়, মায়ানমারে মাসের পর মাস নির্বিচারে নিরপরাধ নারী-শিশু-বৃদ্ধকে হত্যা করার পরও সেখানে কোনো সাড়া পড়ে না। কোনো কুলাঙ্গার ইসলামের নবী বা ধর্মকে কটাক্ষ করে প্রাণ বাঁচাতে দেশান্তরিত হলে সভ্য দুনিয়ায় তার আশ্রয়ের অভাব হয় না। তার স্বদেশ ত্যাগের বেদনায় সমব্যথী ব্যক্তি বা দেশের অভাব হয় না। অথচ নিজ দেশে পরবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হলেও এ নিয়ে তাদের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। মানববন্ধন, টকশো কিংবা জাতিসঙ্ঘের কোনো বিশেষ বৈঠক নেই। এই বিশ্বে বাঘ সংরক্ষণের আহ্বানে পত্রিকার শিরোনাম করা হয়, সম্মেলন হয় কিন্তু সারাবিশ্বে ৫৭টি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ থাকা সত্ত্বেও মুসলিমদের গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে কোনো সম্মেলন হয় না।
অন্তহীন নির্যাতনের পরম্পরা :
১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয় বার্মা সরকার। কয়েকশ বছরের পিতৃভূমিতেই তাদের বলা হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী। নিজেদের দেশে তাঁরা বর্তমানে প্রবাসী। এদের রোহিঙ্গা বলতে নারাজ বার্মা সরকার এবং বার্মার বৌদ্ধরা। তারা এদের ডাকে বাঙালি বলে। সে থেকেই বার্মায় মুসলিমদের গণহত্যা চলে আসছে। প্রায়ই রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি কখনো সরকার, কখনো স্থানীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক বৌদ্ধরা আবার কখনো উভয়পক্ষ মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। যখনই নির্যাতনের কিছু চিত্র সামরিক জান্তার জান্তব নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত আলোয় আসে, তখনই এ নিয়ে কিছুটা কথাবার্তা হয়। আবার কদিন পরেই সব আলোচনা থেকে যায়। স্থায়ী সুরাহা হয় না রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমস্যার।
সর্বশেষ ব্যাপক গণহত্যা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বছরের জুন মাসে। রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মূলত মায়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহ। দাঙ্গাটির সূত্রপাত হয় জাতিগত কোন্দলকে কেন্দ্র করে এবং উভয়পক্ষই এতে জড়িত হয়ে পড়ে। অক্টোবর মাসে এটি সকল নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঙ্গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এতে কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়, বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় ২০,০০০ মানুষ এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে যায়।
১০ জুন রাখাইনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং সামরিক বাহিনীকে ওই অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। চলমান দাঙ্গায় অনেকেই নিহত হয়। ২২ আগস্ট সরকারিভাবে ৪৪ জনের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়। ৯০,০০০০ লোক বাস্তুচ্যূত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ২,৫২৮টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যার বেশিরভাগই রোহিঙ্গাদের। দাঙ্গায় বার্মিজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একতরফাভাবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক গণগ্রেফতার এবং ধরপাকড়ের অভিযোগ ওঠে।
২১ মার্চ আবার দাঙ্গা শুরু হয়েছে। বার্মার মেইকতিলা শহরে বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বড় ধরনের দাঙ্গা শুরু হয়েছে। স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য বলেছেন সহিংসতায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েকটি মসজিদের ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ১ মে উগ্রবাদী বৌদ্ধদের হামলায় নতুন করে অন্তত দু’টি মসজিদ ও প্রায় দুশ’ বসতবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। মুসলিমদের এসব ঘর-বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
অসহায় রোহিঙ্গা :
একবার চিন্তা করে দেখুন তো হঠাৎ যদি বলা হয় আপনি এ দেশের নাগরিক নন, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্বও নেই আপনার কাছে-তাহলে কেমন লাগবে? বার্মার রোহিঙ্গা মুসলিমদের বর্তমান কোনো মাতৃভূমি নেই। এতসব মানবাধিকার আর আন্তর্জাতিক সঙ্ঘের যুগে তাদের বাসস্থল রিফিউজি ক্যাম্প! কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ক্যাম্পগুলো পাহারা দিচ্ছে চেকপোস্ট বসিয়ে বার্মার মিলিটারি। বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সার্বক্ষণিক অভাব-বঞ্চনায়, দুঃখ-কষ্টে ও দুর্ভোগে অনিশ্চিত জীবন কেটে যাচ্ছে শরণার্থী শিবিরবাসী রোহিঙ্গাদের। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা ৬৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলি সংবাদ ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলতে লাগলেন, আমার বাবা, দাদা সবার জন্ম এই মাটিতেই। বরুদা ক্যাম্পে আশ্রিত হয়েছেন ১৫ হাজার রোহিঙ্গা। মুসলিম সিতবেতে ছিল এদের নিজস্ব ঘরবাড়ি। ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
৩৮ বছর বয়সী মুসলিম নারী মনিয়ন খাতা জানালেন, তাদের বসতের আশপাশ পুলিশ ও বৌদ্ধরা ঘিরে ফেললে পালিয়ে গিয়ে তারা জান বাঁচান ঝিলের পানিতে লুকিয়ে। বৌদ্ধরা কেন তাদের ওপর হামলা করলো- জানেন না এই ভয়ার্ত নারী। তার ধারণা, তাদের জমি ও সম্পত্তি বৌদ্ধরা কেড়ে নিতে চায়। আমরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাই- এটাই চায় বৌদ্ধরা। বৌদ্ধদের সহিংস হামলা থেকে বাঁচার গরজে রাখাইন অঞ্চলের অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিম ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে শরণার্থী শিবিরগুলোয় দিন কাটিয়ে চলেছেন গত বছরের জুন থেকে। বার্মায় একের পর এক বৈষম্য-যন্ত্রণা সয়ে চলেছে এই মুসলিম সম্প্রদায়।
৩ ডিসেম্বর আকিয়াবের একটি মুসলিম শিবিরে হাজির হয়ে বর্মী সৈনিকরা মুসলিমদের একটি ছাপানো ফর্মে সই করতে বলে। ফর্মে নাগরিকত্বের জায়গায় বাংলাদেশী লেখা দেখে শিবিরের লোকজন ফর্মে সই করতে অস্বীকার করলে সৈন্যরা এরপর চার মহিলাসহ আট ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায়।
গণতন্ত্রের নেত্রীও নেই রোহিঙ্গাদের পাশে :
বার্মার গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সুচি গত বছর কয়েক দশকের গৃহবন্দিত্ব ঘুচিয়ে মুক্ত দুনিয়ায় পা ফেলেন। তার ত্যাগ আর সংগ্রামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সারাবিশ্বের মিডিয়া। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে লড়াইয়ের জন্য একেরপর এক তিনি লাভ করছেন নানা আন্তর্জাতিক সম্মাননা। অথচ গত এক বছরে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দুর্যোগের ঘনঘটা বিরাজ করলেও প্রতিবাদে স্বজাতীয়দের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন নি তিনি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তার নীরবতার সমালোচনা হয়েছে মুসলিম বিশ্বজুড়ে। স্বদেশী রোহিঙ্গারাও অসন্তুষ্ট তার প্রতি। বাস্তুভিটাহারা রোহিঙ্গা নারী মৌং বলেন, তিনি (সুচি) কোনো কথা বলছেন না, সম্ভবত আরও বেশি বৌদ্ধ ভোট তিনি পেতে চান বলে। কিন্তু শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত হয়েও ভবিষ্যৎ প্রশ্নে রোহিঙ্গারা আতঙ্কমুক্ত নন। গত 2013 জুন ও অক্টোবরে বৌদ্ধ সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাঁচাবার জন্য কোনো অবলম্বনের উপায় খোঁজা সম্ভব হচ্ছে না। কাঁটাতারের বেড়ায় এবং পুলিশ ও সেনা তথা সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর পাহারায় তাদের দিন কাটছে। খাদ্যাভাবে, রোগে, চিকিৎসার অভাবে ও শীতের প্রাদুর্ভাবে অস্থায়ী ক্যাম্পে তাদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। কোনো আন্তর্জাতিক সাহায্য আজও তাদের কাছে পৌঁছায়নি। অন্যদিকে শিবিরাশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর বর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা ও হয়রানি আজও অব্যাহত রয়েছে।
বাকি পরে
একটি কুকুর না খেয়ে মারা গেলে যে সভ্য দুনিয়ায় চোখের পানির স্রোত বয়ে যায়, বন্য প্রাণী বাঁচাতে যেখানে কোটি কোটি ডলারের ফান্ড অনায়াসে সংগৃহীত হয়, মায়ানমারে মাসের পর মাস নির্বিচারে নিরপরাধ নারী-শিশু-বৃদ্ধকে হত্যা করার পরও সেখানে কোনো সাড়া পড়ে না। কোনো কুলাঙ্গার ইসলামের নবী বা ধর্মকে কটাক্ষ করে প্রাণ বাঁচাতে দেশান্তরিত হলে সভ্য দুনিয়ায় তার আশ্রয়ের অভাব হয় না। তার স্বদেশ ত্যাগের বেদনায় সমব্যথী ব্যক্তি বা দেশের অভাব হয় না। অথচ নিজ দেশে পরবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হলেও এ নিয়ে তাদের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। মানববন্ধন, টকশো কিংবা জাতিসঙ্ঘের কোনো বিশেষ বৈঠক নেই। এই বিশ্বে বাঘ সংরক্ষণের আহ্বানে পত্রিকার শিরোনাম করা হয়, সম্মেলন হয় কিন্তু সারাবিশ্বে ৫৭টি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ থাকা সত্ত্বেও মুসলিমদের গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে কোনো সম্মেলন হয় না।
অন্তহীন নির্যাতনের পরম্পরা :
১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয় বার্মা সরকার। কয়েকশ বছরের পিতৃভূমিতেই তাদের বলা হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী। নিজেদের দেশে তাঁরা বর্তমানে প্রবাসী। এদের রোহিঙ্গা বলতে নারাজ বার্মা সরকার এবং বার্মার বৌদ্ধরা। তারা এদের ডাকে বাঙালি বলে। সে থেকেই বার্মায় মুসলিমদের গণহত্যা চলে আসছে। প্রায়ই রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি কখনো সরকার, কখনো স্থানীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক বৌদ্ধরা আবার কখনো উভয়পক্ষ মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। যখনই নির্যাতনের কিছু চিত্র সামরিক জান্তার জান্তব নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত আলোয় আসে, তখনই এ নিয়ে কিছুটা কথাবার্তা হয়। আবার কদিন পরেই সব আলোচনা থেকে যায়। স্থায়ী সুরাহা হয় না রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমস্যার।
সর্বশেষ ব্যাপক গণহত্যা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বছরের জুন মাসে। রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মূলত মায়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহ। দাঙ্গাটির সূত্রপাত হয় জাতিগত কোন্দলকে কেন্দ্র করে এবং উভয়পক্ষই এতে জড়িত হয়ে পড়ে। অক্টোবর মাসে এটি সকল নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঙ্গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এতে কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়, বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় ২০,০০০ মানুষ এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে যায়।
১০ জুন রাখাইনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং সামরিক বাহিনীকে ওই অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। চলমান দাঙ্গায় অনেকেই নিহত হয়। ২২ আগস্ট সরকারিভাবে ৪৪ জনের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়। ৯০,০০০০ লোক বাস্তুচ্যূত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ২,৫২৮টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যার বেশিরভাগই রোহিঙ্গাদের। দাঙ্গায় বার্মিজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একতরফাভাবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক গণগ্রেফতার এবং ধরপাকড়ের অভিযোগ ওঠে।
২১ মার্চ আবার দাঙ্গা শুরু হয়েছে। বার্মার মেইকতিলা শহরে বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বড় ধরনের দাঙ্গা শুরু হয়েছে। স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য বলেছেন সহিংসতায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েকটি মসজিদের ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ১ মে উগ্রবাদী বৌদ্ধদের হামলায় নতুন করে অন্তত দু’টি মসজিদ ও প্রায় দুশ’ বসতবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। মুসলিমদের এসব ঘর-বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
অসহায় রোহিঙ্গা :
একবার চিন্তা করে দেখুন তো হঠাৎ যদি বলা হয় আপনি এ দেশের নাগরিক নন, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্বও নেই আপনার কাছে-তাহলে কেমন লাগবে? বার্মার রোহিঙ্গা মুসলিমদের বর্তমান কোনো মাতৃভূমি নেই। এতসব মানবাধিকার আর আন্তর্জাতিক সঙ্ঘের যুগে তাদের বাসস্থল রিফিউজি ক্যাম্প! কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ক্যাম্পগুলো পাহারা দিচ্ছে চেকপোস্ট বসিয়ে বার্মার মিলিটারি। বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সার্বক্ষণিক অভাব-বঞ্চনায়, দুঃখ-কষ্টে ও দুর্ভোগে অনিশ্চিত জীবন কেটে যাচ্ছে শরণার্থী শিবিরবাসী রোহিঙ্গাদের। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা ৬৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলি সংবাদ ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলতে লাগলেন, আমার বাবা, দাদা সবার জন্ম এই মাটিতেই। বরুদা ক্যাম্পে আশ্রিত হয়েছেন ১৫ হাজার রোহিঙ্গা। মুসলিম সিতবেতে ছিল এদের নিজস্ব ঘরবাড়ি। ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
৩৮ বছর বয়সী মুসলিম নারী মনিয়ন খাতা জানালেন, তাদের বসতের আশপাশ পুলিশ ও বৌদ্ধরা ঘিরে ফেললে পালিয়ে গিয়ে তারা জান বাঁচান ঝিলের পানিতে লুকিয়ে। বৌদ্ধরা কেন তাদের ওপর হামলা করলো- জানেন না এই ভয়ার্ত নারী। তার ধারণা, তাদের জমি ও সম্পত্তি বৌদ্ধরা কেড়ে নিতে চায়। আমরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাই- এটাই চায় বৌদ্ধরা। বৌদ্ধদের সহিংস হামলা থেকে বাঁচার গরজে রাখাইন অঞ্চলের অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিম ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে শরণার্থী শিবিরগুলোয় দিন কাটিয়ে চলেছেন গত বছরের জুন থেকে। বার্মায় একের পর এক বৈষম্য-যন্ত্রণা সয়ে চলেছে এই মুসলিম সম্প্রদায়।
৩ ডিসেম্বর আকিয়াবের একটি মুসলিম শিবিরে হাজির হয়ে বর্মী সৈনিকরা মুসলিমদের একটি ছাপানো ফর্মে সই করতে বলে। ফর্মে নাগরিকত্বের জায়গায় বাংলাদেশী লেখা দেখে শিবিরের লোকজন ফর্মে সই করতে অস্বীকার করলে সৈন্যরা এরপর চার মহিলাসহ আট ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায়।
গণতন্ত্রের নেত্রীও নেই রোহিঙ্গাদের পাশে :
বার্মার গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সুচি গত বছর কয়েক দশকের গৃহবন্দিত্ব ঘুচিয়ে মুক্ত দুনিয়ায় পা ফেলেন। তার ত্যাগ আর সংগ্রামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সারাবিশ্বের মিডিয়া। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে লড়াইয়ের জন্য একেরপর এক তিনি লাভ করছেন নানা আন্তর্জাতিক সম্মাননা। অথচ গত এক বছরে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দুর্যোগের ঘনঘটা বিরাজ করলেও প্রতিবাদে স্বজাতীয়দের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন নি তিনি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তার নীরবতার সমালোচনা হয়েছে মুসলিম বিশ্বজুড়ে। স্বদেশী রোহিঙ্গারাও অসন্তুষ্ট তার প্রতি। বাস্তুভিটাহারা রোহিঙ্গা নারী মৌং বলেন, তিনি (সুচি) কোনো কথা বলছেন না, সম্ভবত আরও বেশি বৌদ্ধ ভোট তিনি পেতে চান বলে। কিন্তু শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত হয়েও ভবিষ্যৎ প্রশ্নে রোহিঙ্গারা আতঙ্কমুক্ত নন। গত 2013 জুন ও অক্টোবরে বৌদ্ধ সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাঁচাবার জন্য কোনো অবলম্বনের উপায় খোঁজা সম্ভব হচ্ছে না। কাঁটাতারের বেড়ায় এবং পুলিশ ও সেনা তথা সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর পাহারায় তাদের দিন কাটছে। খাদ্যাভাবে, রোগে, চিকিৎসার অভাবে ও শীতের প্রাদুর্ভাবে অস্থায়ী ক্যাম্পে তাদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। কোনো আন্তর্জাতিক সাহায্য আজও তাদের কাছে পৌঁছায়নি। অন্যদিকে শিবিরাশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর বর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা ও হয়রানি আজও অব্যাহত রয়েছে।
বাকি পরে
Comment