পরম দয়াময় আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি,
সেই আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি, যাঁর নামের স্মরনে রয়েছে অন্তর সমূহের প্রশান্তি! সেই আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি যিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে নিয়ে আসেন আলোর দিকে, সেই আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি ক্ষমাপরায়ন এবং স্নেহশীল!
আল্লাহ্* সুবহানাহু ওতায়ালা কুরআন মাজিদ এর সুরা ফাতহ এর ২৯ নাম্বার আয়াত এ বলছেন, (অনুবাদ)
"মুহাম্মাদ আল্লাহ্*র রাসুল। আর যে সব লোক তাঁর সঙ্গে আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, নিজেদের পরস্পরের প্রতি দয়াশীল। তাদের কে তুমি দেখবে রুকু ও সাজদায় অবনত অবস্থায়, তারা আল্লাহ্*র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অনুসন্ধানে নিয়োজিত। তাদের চিহ্ন হল, তাদের মুখমন্ডলে সেজদার প্রভাব পরিস্ফুট হয়ে আছে। তাদের মএন দৃষ্টান্তের কথা তাওরাতে আছে, তাদের দৃষ্টান্ত ইঞ্জিলেও আছে। তারা যেন (এমন), (যেমন) একটা চারা গাছ তাঁর কচিপাতা বের করে, তারপর তা শক্ত হয়, অতঃপর তা কান্ডের উপর মজবুত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় - যা চাষী কে আনন্দ দেয়! (এভাবে আলাহ মুমিনদের কে দুর্বল অবস্থা থেকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দেন) যাতে কাফিরদের অন্তর গোস্বায় জ্বলে যায়। তাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনে আর সৎকর্ম করে, আল্লাহ্* তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন"
প্রথমে একটু অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে নেই, (যা এই লখার মূল ভাবের সাথে সম্পর্কিত না)
ছোট বেলায় পড়তাম আমাদের রাসুল (সাঃ) মুজিজা হল কুরআন। আমি পড়েছিলাম, ঈসা (আঃ) কুষ্ঠ রোগী কে আল্লাহ্*র ইচ্ছায় ভালো করে দিতেন, অন্ধ কে (আল্লাহ্*র ইচ্ছায় দৃষ্টি) ফিরিয়ে দিতেন, মূসা (আঃ) হাতের লাঠি কে সাপ বানিয়ে দিতেন.. এগুলোর তুলনায় কুরআন একটা কিতাব সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিজা এটা আমার দুর্বল মন মেনে নিতে পারতোনা। মনে হত, সুবহানাল্লাহ, ঐ মু'জিজা গুলো তো আরো কত দারুন! আমার মাকে অনেক প্রশ্ন করতাম, "মা কুরআন কিভাবে সর্ব শ্রেষ্ঠ মু'জিজা? আল্লাহ্* আমার মা'র উপর সন্তুষ্ট হোন.. আমার মা আমাকে তার সাধ্যমত বুঝানোর চেস্টা করতেন কিন্তু তা আমার মত বাচ্চাকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ছিলোনা। আমার মনে আছে আমার মা বলতেন, "বড় হলে বুঝবে" আমার মনে পড়ে "আসলেই কিভাবে এবং কেন কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিজা" তা বুঝার কিছু আগ্রহ আল্লাহ্* আমদের দিলে দিয়েছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ্* খুব সামান্য বুঝার সুযোগ ও দিয়েছেন। তো এত কথা বললাম দুইটা কারনেঃ
১. কুরআন বড় অদ্ভুত সুন্দর এক কিতাব! বড় অদ্ভুত সুন্দর! আমি আরবী কিছুই বুঝিনা, কিন্তু যারা বুঝতো এমন কি যারা আরবীর পন্ডিত ছিলো "আবু জাহাল" সে পর্যন্ত কুরআনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেছিলো।
২. কুরআন আমাদের পথ চলার সর্বপ্রথম সম্বল, আমাদের সন্তান রা যেন কুরআন কিভাবে সর্ব শ্রেষ্ঠ মু'জিজা এই অন্ধকারে না থেকে যায়।
প্রথম প্রসঙ্গঃ
যা হোক, মূল কোথায় আসি ঐ যে বলছিলাম কুরআন বড় অদ্ভুত সুন্দর এক কিতাব! আল্লাহ্* আমাদের জন্য এত সুন্দর করে কথা বলেছেন, ভাবতেও খুব অবাক লাগে। আমি তো আরবি বুঝিনা, শুধু ভুল ভ্রান্তি ভরা এই অনুবাদ এর দিকে তাকালেও বুঝা যায় মহান আল্লাহ্* কত প্রগাঢ় ভালোবাসা নিয়ে এই কিতাবে আমাদের কথা বলেছেন!
আল্লাহ্* সুবহানাহু ওতায়ালা এই আয়াতে বড় মুহাব্বাতের সাথে মুমিনদের কথা এখানে বলেছেন। আল্লাহ্* বলছেন তাদের উদাহরন যেন এমন, যে একটা চারা গাছ তার কচি পাতা বের করে... কখনো কি একটা চারা গাছ কে কচি পাতা বের করতে দেখেছেন? আচ্ছা মনে করেন আপনি একটা মাটির টব এর সামনে বসে আছেন, আপনি জানেন একটু পরে এখান থেকে একটা চারা গাছ তার কচি পাতা বের করবে। আপনি তাকিয়ে আছেন, আপনার সামনে সেই চারা গাছ তার কচি পাতা বের করলো। এই দৃশ্য টা আপনার কাছে কেমন লাগবে!
এরপর আল্লাহ্* বলছেন, এরপর তা মজবুত হয়ে শক্ত কান্ডের উপরে দাঁড়িয়ে যায়।
আপনি পুরা ঘটনা টা এভাবে চিন্তা করেন, আপনার শিশু সন্তান, জন্মের পর আপনার দিকে মিটমিট করে চোখ খুলে তাকালো এর পর আপনাকে চিনতে শিখলো, এরপর আপনাকে দেখে হাসতে শিখলো, একদিন হামাগুড়ি ছেড়ে দাড়াতে শিখে গেলো, এরপর একদিন সে হয়ে গেলো শক্ত সমর্থ যুবক! এই পুরা ঘটনা টা আপনার কাছে কতটুকু আনন্দদায়ক! বাবা হিসেবে এর মধ্যে আপনার কি পরিমান স্নেহ এবং ভালোবাসা জমা হয়ে থাকবে!
এবার আসেন, আয়াত এর দিকে তাকাই! আল্লাহ্*র দেয়া ভালোবাসা নিয়ে নিজ সন্তানের প্রতি যদি ঐ পরিমান ভালোবাসা জমা হয়, তাহলে বলেন তো ভাই, সমস্ত ভালোবাসার মালিক এই আয়াতে মুমিনদের জন্য কি পরিমান স্নেহ এবং ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন! কিন্তু এখানে স্নেহ ভালোবাসার সাথে আরো কিছু আছে!
আপনি জানেন না যে আপনার সন্তান একদিন বড় হবেই! সামর্থ্য হবেই। কিন্তু এখানে আল্লাহ্* বলে দিচ্ছেন একদিন তা শক্ত হবেই এবং যা আনন্দ দিবে। এখানে মহান আল্লাহ্*র সিফাত ভালোবাসার সাথে আরো একটি সিফাত যোগ হয়েছে। আল্লাহ হচ্ছেন সমস্ত কিছুর উপরে ক্ষমতাবান। তিনি জানেন কেউ তার ক্ষমতা কে খর্ব করতে পারেনা। সেই অসীম ক্ষমতাশীল আল্লাহ্* বলছেন, আমার দুর্বল মুমিন বান্দারা একদিন সবল হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। ধরতে পারছেন কি! ভালোবাসা ছাড়াও আরো একটি বিষয় এখানে উপস্থিত! আমাদের সন্তানের প্রতি আমাদের যত ভালোবাসাই থাকুক না কেন আমরা কিন্তু নিশ্চিত হতে পারিনা যে একদিন আমার সন্তান বুক টান করে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আল্লাহ্* বলে দিচ্ছেন, "মুমিন রা শক্ত হয়ে দাঁড়াবেই" কেন? কারন আল্লাহ বলে দিয়েছেন তাই, আর আল্লাহ্* এই কথাকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ নাই তাই! অনেকটা এরকম, আল্লাহ্*র প্রিয় বান্দাদের ব্যাপারে আল্লাহ্* তার নিজের ভালোবাসা এবং ক্ষমতার সন্নিবেশ করে ঘোষণা দিচ্ছেন, "মুমিন রা শক্ত হয়ে দাঁড়াবেই" (এবং আল্লাহ্*ই উত্তম টা জানেন)
মহান আল্লাহ্*র কত ভালোবাসা!
শুধু তাই নয়, আলাহ যে এখানে তাঁর নিজের ক্ষমতা এবং প্রভাব মুমিনদের পক্ষে রহমত স্বরূপ ঢেলে দিয়েছেন তা বুঝা যায়, কারন আল্লাহ্* বলছেন, আল্লাহ্* এটা করবেন যেন কাফির দের গা জ্বলে যায়!
দ্বিতীয় প্রসঙ্গঃ
আল্লাহ্* বলেইছেন, তিনি মুমিনদের কে দুর্বল অবস্থা থেকে মজবুত করে দিবেন। আজ আল্লাহ্*র বান্দাদের দুর্বল অবস্থা দেখে যারা খুব মজা পাচ্ছে, বড় বড় লেকচার ঝাড়ছে তাদের জন্য আফসোস, তারা এখনো বুঝে নাই, মুমিন দের এই সাময়িক দুর্বলতা তাদের জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে! সুতরাং সাময়িক এই দুর্বলতা আমাদের যেন হতাশ না করে, কারন এই দুর্বলতার মধ্য দিয়ে আল্লাহ আমাদের শক্ত করে দিবেন। বাচ্চা জন্মের পরে শক্ত হয়ে দাড়াতে পারে! এখন কেউ যদি এটা নিয়ে হতাশ হয় আমার বাচ্চা টা দাঁড়াতে পারেনা তাহলে সবাই তাকে কি বলবে! কারন এই দুর্বলতার মধ্য দিয়েই বাচ্চা সবল হতে শিখবে। একই ভাবে আমাদের এই সাময়িক দুর্বলতার মধ্য দিয়েই আল্লাহ্* আমাদের কে শক্ত করে দিবেন ইনশা আল্লাহ্*। সুতরাং আমাদের সাময়িক এই দুর্বলতা আসলে আমাদের জন্য সাইন! আর আজ যারা মুমিনদের এই দুর্বলতা দেখে খুশি হচ্ছে, বড় বড় বুলি ছাড়ছে, মুমিনদের অপমান করছে, অত্যাচার করছে এমনকি এটাও সাইন, কারন আল্লাহ্* বলেছেন তিনি মুমিনদের শক্তিশালী করে কাফিরদের গায়ের জ্বালা সৃষ্টি করে দিবেন। গায়ের জ্বালা কখন তৈরি হবে, যখন কেউ আপনার ক্ষতি করতে চাইবে কিন্তু পারবেনা, যখন কেউ আপনার ধংস চাইবে কিন্তু দেখবে তার চোখের সামনেই আপনি ডালপালা মেলে বড় হয়ে যাচ্ছেন, আর তার কিছুই করার নাই। আপনার সাথে যার শত্রুতা নাই, আপনার উন্নতিতে তো তার গায়ের জ্বালা হবে না! গায়ের জ্বালা শুধু তারই হবে যার সাথে আপনার শত্রুতা আছে। সুতরাং আজ কাফিরদের এই হম্বি তম্বিই আসলে একটা সাইন যে তাদের ই গায়ের জ্বালা শুরু হবে।
তৃতীয় প্রসঙ্গঃ
আল্লাহ্* যে উদাহরন দিয়েছেন তা হচ্ছে, চারা গাছ। মুমিনদের বর্ননা বুঝাতে গিয়ে চারা গাছের উদাহরন বড়ই হিকমত পুর্ন। বীজ থেকে যখন প্রথম চারা পাতা বের হয়ে আসে, দুনিয়ার কয়জন মানুষ সেটা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করে, কিংবা সেই চারা গাছের বেড়ে উঠা? বরং বাস্তবতা এটাই যে সবার অলক্ষ্যে এই চারা গাছ জন্ম নেয়, আস্তে আস্তে একটু বড় হয় একদিন সে ডাল পালা মেলে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়! এভাবে চিন্তা করেন, একটা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন দুইজন মানুষ যেত। একজন বৃদ্ধ এবং সৎ, একজন যুবক একজন জালিম। একদিন সেই রাস্তার পাশে একটা চারা গাছ বেরিয়ে আসলো, কিছু দিন পর সেই গাছের ছোট ছোট ডাল রাস্তার উপরে এসে পড়লো। বৃদ্ধ এবং সৎ লোকটা গাছ তা দেখত এবং ভাবতো একদিন এই গাছ টা বড় হলে গাছটার নিচে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়া যেত। আর জালিম লোকটা যাবার সময় গাছের পাতা ছিঁড়ত, ডাল ভেঙ্গে দিত। এভাবে চলতে থাকলো। একদিন সেই জালিম গাছের ডাল ভাংতে গিয়ে লক্ষ্য করলো আজ আর সে ডাল ভাংতে পারছেনা, কারন আজ সেই ডাল এত শক্ত হয়ে গেছে যে এটা ভাঙ্গা তার সামর্থ্যের বাইরে, সেই জালিম হতাশ হয়ে চলে গেলো। আর ঐ দিন এই বৃদ্ধ রাস্তা দিয়ে যাবার পথে লক্ষ্য করলো আরে, গাছ টা তো বড় গেছে, এখন তো দেখি এটার নিচে বসা যায়! এই গাছ কিন্ত তাদের চোখের সামনেই বড় হয়েছে, কিন্তু জানান দিয়েছে একদিন হঠাত করেই!
আল্লাহ্* মুমিনদের বেড়ে উঠাকেও ঐ চারা গাছের সাথে তুলনা করেছেন। সবার অলক্ষ্যে সে বেড়ে উঠে!
এত ফিতনা আর এত অস্থিরতার মধ্য দিয়েও ধীরে ধীরে আল্লাহ্* তার বান্দাদের কে তৈরি করে নিচ্ছেন! সবার অলক্ষ্যেই! একদিকে ফিতনা, বেহায়াপনা, কুফুরি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে একটা ছোট দল ও কিন্তু সেই দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে! আর এরা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে! আজ কাফির মুরতাদ আর নাস্তিক রা খুব চিন্তায় পড়ে গেছে, "এটা কিভাবে হচ্ছে?" তাদের প্রশ্ন, "এই রিভাইভাল টা হচ্ছে কিভাবে? কে তাদের কে মোটীভেট করছে? কে তাদের অনুপ্রেরনা জোগাচ্ছে? তাদের সমস্ত সমীকরণ ভেস্তে যেতে বসেছে! কিছুদিন আগ পর্যন্তও তারা সব কিছু ঢালাও ভাবে মাদ্রাসার উপরে আর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থার উপরে চাপিয়ে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতো, বড় বড় টকশো করতো, কিন্তু আজ তাদের সেই মুখস্ত বুলি মিথ্যা প্রমানিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এই জাগরন কে তারা কোন ভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারছেনা। আর এটাই তাদের সবচেয়ে বড় ভয়ের কারন! কারন তারা জানেনা এই জাগরনের উৎস কোথায়! তারা এই উম্মতের যুবক দের দ্বীন দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সমস্ত পরিকল্পনাই গ্রহন করেছিলো, তাদের সামনে দুনিয়াকে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো ক্যারিয়ারের নামে, অন্তর কে মেরে ফেলেছিলো ফাহেশার মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে, আল্লাহ্* কে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলো যুক্তি আর বিজ্ঞানের নামে! এবং তাদের চেষ্টায় কোন ফাঁক ছিলোনা। এখন তারা অবাক হয়ে যাচ্ছে কিভাবে তাদের এই পরিকল্পিত জগত থেকে এই নতুন জাগরনের আভা প্রকাশ পাচ্ছে! আল্লাহ্* যথার্থই বলেছেন,
"কাফির দের পরিকল্পনা ব্যার্থ হবেই"
চতুর্থ প্রসঙ্গঃ
কাফির আর মুরতাদ রা একটা বিষয় খুব পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পেরেছে যে এই জাগরন কে তারা বন্দুকের গুলি দিয়ে আর ধরপাকড় দিয়ে বন্ধ করতে পারবেনা। এই জন্য তারা এই যুদ্ধের সাথে সাধারন মানুষকেও সম্পৃক্ত করে নিয়েছে। কারন এই যুদ্ধ হচ্ছে অন্তরের যুদ্ধ। "ব্যাটল অফ হার্টস অ্যান্ড মাইন্ড" এই যুদ্ধের মূল অনুপ্রেরনা যা কাফির এবং মুরতাদ রা ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে তা হচ্ছে আল্লাহ্*র নূর, আল্লাহ্*র কালাম যা মুমিনদের বিজয় বর্ননা করেছে! কিন্তু তারা এই নূর কে কিভাবে ধন্সকরবে যেখানে আল্লাহ্* বলেছেন, "তারা মুখের ফুতকারে আল্লাহ্*র নূর কে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ্* তাঁর নূর কে প্রজ্বলিত করেই ছাড়বেন এতে কাফির দের যতই গায়ে জ্বালা ধরুক না কেন"
সুতরাং তারা পারবে না। তাহলে এখন আমাদের করনীয় কি? অনেক করনীয় এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এই জাগরন কে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া, বিকশিত করা। এটা নিয়ে চিন্তা করা, এটার প্রসারে কাজ করা। একটা কথা শুনেছিলাম, ইজরায়েল এটা ভয় পায়না যে ফিলিস্তিন কে ভালোবেসে কেউ ইজরায়েলের দিকে একটা গ্রেনেড মারবে বা একটা গুলি ছুড়বে। বরং ইজরায়েল এটা ভয় পায় যে কেউ ফিলিস্তিন কে নিয়ে চিন্তা করবে। কারন গুলি বা গ্রেনেড কে প্রতিহত করার সামর্থ্য ইজরায়েলের আছে কিন্তু একটা জাগরন কে প্রতিহত করার সামর্থ্য তার নাই। ইজরায়েল চায় মুসলিম উম্মাহ এই ফিলিস্তনকে ভুলে যাক, কেউ একে নিয়ে চিন্তা না করুক।
একই ভাবে আমাদের মুরতাদ সরকার এবং তাদের এই কুফুরি ব্যাবস্থাও আমাদের কে আমাদের বিজয়ের আদর্শ এবং চিন্তা ধারা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইবে। কিন্তু আমাদের কে বেশি এই চিন্তা ধারার প্রসার ঘটাতে হবে। আমাদের এই সময় টা বড় অদ্ভুত সময়! আমরা উম্মতের দুইটা অবস্থার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত! এই অবস্থায় কেউ যদি উম্মতের আদর্শ এবং চিন্তা চেতনা থেকে অন্ধকারে থেকে যায় তবে তা হবে মারাত্মক ক্ষতিকর! কারন সে অতলে ভেসে যাবে! উম্মতের এই জাগরনে আমাদের অংশ গ্রহন করা জরুরী, উম্মতের জন্য নয়। বরং নিজেদের জন্যই! কারন আপনি যদি নির্ধারিত সময়ে ট্রেনে না উঠতে পারেন তাহলে ট্রেন ছেড়ে চলে যাবেই, আপনার জন্য বসে থাকবেনা। একই ভাবে উম্মতের বিজয়ের এই কাফেলা আপনার আমার জন্য বসে থাকবেনা। বরং এই কাফেলা সামনে এগিয়ে যাবে। আমি বা আপনি যদি এই কাফেলা মিস করে ফেলি তবে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই থাকবে না!
আল্লাহ্* আমাদের জন্য সহজ করুন।
সেই আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি, যাঁর নামের স্মরনে রয়েছে অন্তর সমূহের প্রশান্তি! সেই আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি যিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে নিয়ে আসেন আলোর দিকে, সেই আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি ক্ষমাপরায়ন এবং স্নেহশীল!
আল্লাহ্* সুবহানাহু ওতায়ালা কুরআন মাজিদ এর সুরা ফাতহ এর ২৯ নাম্বার আয়াত এ বলছেন, (অনুবাদ)
"মুহাম্মাদ আল্লাহ্*র রাসুল। আর যে সব লোক তাঁর সঙ্গে আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, নিজেদের পরস্পরের প্রতি দয়াশীল। তাদের কে তুমি দেখবে রুকু ও সাজদায় অবনত অবস্থায়, তারা আল্লাহ্*র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অনুসন্ধানে নিয়োজিত। তাদের চিহ্ন হল, তাদের মুখমন্ডলে সেজদার প্রভাব পরিস্ফুট হয়ে আছে। তাদের মএন দৃষ্টান্তের কথা তাওরাতে আছে, তাদের দৃষ্টান্ত ইঞ্জিলেও আছে। তারা যেন (এমন), (যেমন) একটা চারা গাছ তাঁর কচিপাতা বের করে, তারপর তা শক্ত হয়, অতঃপর তা কান্ডের উপর মজবুত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় - যা চাষী কে আনন্দ দেয়! (এভাবে আলাহ মুমিনদের কে দুর্বল অবস্থা থেকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দেন) যাতে কাফিরদের অন্তর গোস্বায় জ্বলে যায়। তাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনে আর সৎকর্ম করে, আল্লাহ্* তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন"
প্রথমে একটু অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে নেই, (যা এই লখার মূল ভাবের সাথে সম্পর্কিত না)
ছোট বেলায় পড়তাম আমাদের রাসুল (সাঃ) মুজিজা হল কুরআন। আমি পড়েছিলাম, ঈসা (আঃ) কুষ্ঠ রোগী কে আল্লাহ্*র ইচ্ছায় ভালো করে দিতেন, অন্ধ কে (আল্লাহ্*র ইচ্ছায় দৃষ্টি) ফিরিয়ে দিতেন, মূসা (আঃ) হাতের লাঠি কে সাপ বানিয়ে দিতেন.. এগুলোর তুলনায় কুরআন একটা কিতাব সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিজা এটা আমার দুর্বল মন মেনে নিতে পারতোনা। মনে হত, সুবহানাল্লাহ, ঐ মু'জিজা গুলো তো আরো কত দারুন! আমার মাকে অনেক প্রশ্ন করতাম, "মা কুরআন কিভাবে সর্ব শ্রেষ্ঠ মু'জিজা? আল্লাহ্* আমার মা'র উপর সন্তুষ্ট হোন.. আমার মা আমাকে তার সাধ্যমত বুঝানোর চেস্টা করতেন কিন্তু তা আমার মত বাচ্চাকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ছিলোনা। আমার মনে আছে আমার মা বলতেন, "বড় হলে বুঝবে" আমার মনে পড়ে "আসলেই কিভাবে এবং কেন কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিজা" তা বুঝার কিছু আগ্রহ আল্লাহ্* আমদের দিলে দিয়েছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ্* খুব সামান্য বুঝার সুযোগ ও দিয়েছেন। তো এত কথা বললাম দুইটা কারনেঃ
১. কুরআন বড় অদ্ভুত সুন্দর এক কিতাব! বড় অদ্ভুত সুন্দর! আমি আরবী কিছুই বুঝিনা, কিন্তু যারা বুঝতো এমন কি যারা আরবীর পন্ডিত ছিলো "আবু জাহাল" সে পর্যন্ত কুরআনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেছিলো।
২. কুরআন আমাদের পথ চলার সর্বপ্রথম সম্বল, আমাদের সন্তান রা যেন কুরআন কিভাবে সর্ব শ্রেষ্ঠ মু'জিজা এই অন্ধকারে না থেকে যায়।
প্রথম প্রসঙ্গঃ
যা হোক, মূল কোথায় আসি ঐ যে বলছিলাম কুরআন বড় অদ্ভুত সুন্দর এক কিতাব! আল্লাহ্* আমাদের জন্য এত সুন্দর করে কথা বলেছেন, ভাবতেও খুব অবাক লাগে। আমি তো আরবি বুঝিনা, শুধু ভুল ভ্রান্তি ভরা এই অনুবাদ এর দিকে তাকালেও বুঝা যায় মহান আল্লাহ্* কত প্রগাঢ় ভালোবাসা নিয়ে এই কিতাবে আমাদের কথা বলেছেন!
আল্লাহ্* সুবহানাহু ওতায়ালা এই আয়াতে বড় মুহাব্বাতের সাথে মুমিনদের কথা এখানে বলেছেন। আল্লাহ্* বলছেন তাদের উদাহরন যেন এমন, যে একটা চারা গাছ তার কচি পাতা বের করে... কখনো কি একটা চারা গাছ কে কচি পাতা বের করতে দেখেছেন? আচ্ছা মনে করেন আপনি একটা মাটির টব এর সামনে বসে আছেন, আপনি জানেন একটু পরে এখান থেকে একটা চারা গাছ তার কচি পাতা বের করবে। আপনি তাকিয়ে আছেন, আপনার সামনে সেই চারা গাছ তার কচি পাতা বের করলো। এই দৃশ্য টা আপনার কাছে কেমন লাগবে!
এরপর আল্লাহ্* বলছেন, এরপর তা মজবুত হয়ে শক্ত কান্ডের উপরে দাঁড়িয়ে যায়।
আপনি পুরা ঘটনা টা এভাবে চিন্তা করেন, আপনার শিশু সন্তান, জন্মের পর আপনার দিকে মিটমিট করে চোখ খুলে তাকালো এর পর আপনাকে চিনতে শিখলো, এরপর আপনাকে দেখে হাসতে শিখলো, একদিন হামাগুড়ি ছেড়ে দাড়াতে শিখে গেলো, এরপর একদিন সে হয়ে গেলো শক্ত সমর্থ যুবক! এই পুরা ঘটনা টা আপনার কাছে কতটুকু আনন্দদায়ক! বাবা হিসেবে এর মধ্যে আপনার কি পরিমান স্নেহ এবং ভালোবাসা জমা হয়ে থাকবে!
এবার আসেন, আয়াত এর দিকে তাকাই! আল্লাহ্*র দেয়া ভালোবাসা নিয়ে নিজ সন্তানের প্রতি যদি ঐ পরিমান ভালোবাসা জমা হয়, তাহলে বলেন তো ভাই, সমস্ত ভালোবাসার মালিক এই আয়াতে মুমিনদের জন্য কি পরিমান স্নেহ এবং ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন! কিন্তু এখানে স্নেহ ভালোবাসার সাথে আরো কিছু আছে!
আপনি জানেন না যে আপনার সন্তান একদিন বড় হবেই! সামর্থ্য হবেই। কিন্তু এখানে আল্লাহ্* বলে দিচ্ছেন একদিন তা শক্ত হবেই এবং যা আনন্দ দিবে। এখানে মহান আল্লাহ্*র সিফাত ভালোবাসার সাথে আরো একটি সিফাত যোগ হয়েছে। আল্লাহ হচ্ছেন সমস্ত কিছুর উপরে ক্ষমতাবান। তিনি জানেন কেউ তার ক্ষমতা কে খর্ব করতে পারেনা। সেই অসীম ক্ষমতাশীল আল্লাহ্* বলছেন, আমার দুর্বল মুমিন বান্দারা একদিন সবল হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। ধরতে পারছেন কি! ভালোবাসা ছাড়াও আরো একটি বিষয় এখানে উপস্থিত! আমাদের সন্তানের প্রতি আমাদের যত ভালোবাসাই থাকুক না কেন আমরা কিন্তু নিশ্চিত হতে পারিনা যে একদিন আমার সন্তান বুক টান করে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আল্লাহ্* বলে দিচ্ছেন, "মুমিন রা শক্ত হয়ে দাঁড়াবেই" কেন? কারন আল্লাহ বলে দিয়েছেন তাই, আর আল্লাহ্* এই কথাকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ নাই তাই! অনেকটা এরকম, আল্লাহ্*র প্রিয় বান্দাদের ব্যাপারে আল্লাহ্* তার নিজের ভালোবাসা এবং ক্ষমতার সন্নিবেশ করে ঘোষণা দিচ্ছেন, "মুমিন রা শক্ত হয়ে দাঁড়াবেই" (এবং আল্লাহ্*ই উত্তম টা জানেন)
মহান আল্লাহ্*র কত ভালোবাসা!
শুধু তাই নয়, আলাহ যে এখানে তাঁর নিজের ক্ষমতা এবং প্রভাব মুমিনদের পক্ষে রহমত স্বরূপ ঢেলে দিয়েছেন তা বুঝা যায়, কারন আল্লাহ্* বলছেন, আল্লাহ্* এটা করবেন যেন কাফির দের গা জ্বলে যায়!
দ্বিতীয় প্রসঙ্গঃ
আল্লাহ্* বলেইছেন, তিনি মুমিনদের কে দুর্বল অবস্থা থেকে মজবুত করে দিবেন। আজ আল্লাহ্*র বান্দাদের দুর্বল অবস্থা দেখে যারা খুব মজা পাচ্ছে, বড় বড় লেকচার ঝাড়ছে তাদের জন্য আফসোস, তারা এখনো বুঝে নাই, মুমিন দের এই সাময়িক দুর্বলতা তাদের জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে! সুতরাং সাময়িক এই দুর্বলতা আমাদের যেন হতাশ না করে, কারন এই দুর্বলতার মধ্য দিয়ে আল্লাহ আমাদের শক্ত করে দিবেন। বাচ্চা জন্মের পরে শক্ত হয়ে দাড়াতে পারে! এখন কেউ যদি এটা নিয়ে হতাশ হয় আমার বাচ্চা টা দাঁড়াতে পারেনা তাহলে সবাই তাকে কি বলবে! কারন এই দুর্বলতার মধ্য দিয়েই বাচ্চা সবল হতে শিখবে। একই ভাবে আমাদের এই সাময়িক দুর্বলতার মধ্য দিয়েই আল্লাহ্* আমাদের কে শক্ত করে দিবেন ইনশা আল্লাহ্*। সুতরাং আমাদের সাময়িক এই দুর্বলতা আসলে আমাদের জন্য সাইন! আর আজ যারা মুমিনদের এই দুর্বলতা দেখে খুশি হচ্ছে, বড় বড় বুলি ছাড়ছে, মুমিনদের অপমান করছে, অত্যাচার করছে এমনকি এটাও সাইন, কারন আল্লাহ্* বলেছেন তিনি মুমিনদের শক্তিশালী করে কাফিরদের গায়ের জ্বালা সৃষ্টি করে দিবেন। গায়ের জ্বালা কখন তৈরি হবে, যখন কেউ আপনার ক্ষতি করতে চাইবে কিন্তু পারবেনা, যখন কেউ আপনার ধংস চাইবে কিন্তু দেখবে তার চোখের সামনেই আপনি ডালপালা মেলে বড় হয়ে যাচ্ছেন, আর তার কিছুই করার নাই। আপনার সাথে যার শত্রুতা নাই, আপনার উন্নতিতে তো তার গায়ের জ্বালা হবে না! গায়ের জ্বালা শুধু তারই হবে যার সাথে আপনার শত্রুতা আছে। সুতরাং আজ কাফিরদের এই হম্বি তম্বিই আসলে একটা সাইন যে তাদের ই গায়ের জ্বালা শুরু হবে।
তৃতীয় প্রসঙ্গঃ
আল্লাহ্* যে উদাহরন দিয়েছেন তা হচ্ছে, চারা গাছ। মুমিনদের বর্ননা বুঝাতে গিয়ে চারা গাছের উদাহরন বড়ই হিকমত পুর্ন। বীজ থেকে যখন প্রথম চারা পাতা বের হয়ে আসে, দুনিয়ার কয়জন মানুষ সেটা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করে, কিংবা সেই চারা গাছের বেড়ে উঠা? বরং বাস্তবতা এটাই যে সবার অলক্ষ্যে এই চারা গাছ জন্ম নেয়, আস্তে আস্তে একটু বড় হয় একদিন সে ডাল পালা মেলে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়! এভাবে চিন্তা করেন, একটা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন দুইজন মানুষ যেত। একজন বৃদ্ধ এবং সৎ, একজন যুবক একজন জালিম। একদিন সেই রাস্তার পাশে একটা চারা গাছ বেরিয়ে আসলো, কিছু দিন পর সেই গাছের ছোট ছোট ডাল রাস্তার উপরে এসে পড়লো। বৃদ্ধ এবং সৎ লোকটা গাছ তা দেখত এবং ভাবতো একদিন এই গাছ টা বড় হলে গাছটার নিচে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়া যেত। আর জালিম লোকটা যাবার সময় গাছের পাতা ছিঁড়ত, ডাল ভেঙ্গে দিত। এভাবে চলতে থাকলো। একদিন সেই জালিম গাছের ডাল ভাংতে গিয়ে লক্ষ্য করলো আজ আর সে ডাল ভাংতে পারছেনা, কারন আজ সেই ডাল এত শক্ত হয়ে গেছে যে এটা ভাঙ্গা তার সামর্থ্যের বাইরে, সেই জালিম হতাশ হয়ে চলে গেলো। আর ঐ দিন এই বৃদ্ধ রাস্তা দিয়ে যাবার পথে লক্ষ্য করলো আরে, গাছ টা তো বড় গেছে, এখন তো দেখি এটার নিচে বসা যায়! এই গাছ কিন্ত তাদের চোখের সামনেই বড় হয়েছে, কিন্তু জানান দিয়েছে একদিন হঠাত করেই!
আল্লাহ্* মুমিনদের বেড়ে উঠাকেও ঐ চারা গাছের সাথে তুলনা করেছেন। সবার অলক্ষ্যে সে বেড়ে উঠে!
এত ফিতনা আর এত অস্থিরতার মধ্য দিয়েও ধীরে ধীরে আল্লাহ্* তার বান্দাদের কে তৈরি করে নিচ্ছেন! সবার অলক্ষ্যেই! একদিকে ফিতনা, বেহায়াপনা, কুফুরি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে একটা ছোট দল ও কিন্তু সেই দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে! আর এরা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে! আজ কাফির মুরতাদ আর নাস্তিক রা খুব চিন্তায় পড়ে গেছে, "এটা কিভাবে হচ্ছে?" তাদের প্রশ্ন, "এই রিভাইভাল টা হচ্ছে কিভাবে? কে তাদের কে মোটীভেট করছে? কে তাদের অনুপ্রেরনা জোগাচ্ছে? তাদের সমস্ত সমীকরণ ভেস্তে যেতে বসেছে! কিছুদিন আগ পর্যন্তও তারা সব কিছু ঢালাও ভাবে মাদ্রাসার উপরে আর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থার উপরে চাপিয়ে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতো, বড় বড় টকশো করতো, কিন্তু আজ তাদের সেই মুখস্ত বুলি মিথ্যা প্রমানিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এই জাগরন কে তারা কোন ভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারছেনা। আর এটাই তাদের সবচেয়ে বড় ভয়ের কারন! কারন তারা জানেনা এই জাগরনের উৎস কোথায়! তারা এই উম্মতের যুবক দের দ্বীন দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সমস্ত পরিকল্পনাই গ্রহন করেছিলো, তাদের সামনে দুনিয়াকে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো ক্যারিয়ারের নামে, অন্তর কে মেরে ফেলেছিলো ফাহেশার মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে, আল্লাহ্* কে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলো যুক্তি আর বিজ্ঞানের নামে! এবং তাদের চেষ্টায় কোন ফাঁক ছিলোনা। এখন তারা অবাক হয়ে যাচ্ছে কিভাবে তাদের এই পরিকল্পিত জগত থেকে এই নতুন জাগরনের আভা প্রকাশ পাচ্ছে! আল্লাহ্* যথার্থই বলেছেন,
"কাফির দের পরিকল্পনা ব্যার্থ হবেই"
চতুর্থ প্রসঙ্গঃ
কাফির আর মুরতাদ রা একটা বিষয় খুব পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পেরেছে যে এই জাগরন কে তারা বন্দুকের গুলি দিয়ে আর ধরপাকড় দিয়ে বন্ধ করতে পারবেনা। এই জন্য তারা এই যুদ্ধের সাথে সাধারন মানুষকেও সম্পৃক্ত করে নিয়েছে। কারন এই যুদ্ধ হচ্ছে অন্তরের যুদ্ধ। "ব্যাটল অফ হার্টস অ্যান্ড মাইন্ড" এই যুদ্ধের মূল অনুপ্রেরনা যা কাফির এবং মুরতাদ রা ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে তা হচ্ছে আল্লাহ্*র নূর, আল্লাহ্*র কালাম যা মুমিনদের বিজয় বর্ননা করেছে! কিন্তু তারা এই নূর কে কিভাবে ধন্সকরবে যেখানে আল্লাহ্* বলেছেন, "তারা মুখের ফুতকারে আল্লাহ্*র নূর কে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ্* তাঁর নূর কে প্রজ্বলিত করেই ছাড়বেন এতে কাফির দের যতই গায়ে জ্বালা ধরুক না কেন"
সুতরাং তারা পারবে না। তাহলে এখন আমাদের করনীয় কি? অনেক করনীয় এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এই জাগরন কে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া, বিকশিত করা। এটা নিয়ে চিন্তা করা, এটার প্রসারে কাজ করা। একটা কথা শুনেছিলাম, ইজরায়েল এটা ভয় পায়না যে ফিলিস্তিন কে ভালোবেসে কেউ ইজরায়েলের দিকে একটা গ্রেনেড মারবে বা একটা গুলি ছুড়বে। বরং ইজরায়েল এটা ভয় পায় যে কেউ ফিলিস্তিন কে নিয়ে চিন্তা করবে। কারন গুলি বা গ্রেনেড কে প্রতিহত করার সামর্থ্য ইজরায়েলের আছে কিন্তু একটা জাগরন কে প্রতিহত করার সামর্থ্য তার নাই। ইজরায়েল চায় মুসলিম উম্মাহ এই ফিলিস্তনকে ভুলে যাক, কেউ একে নিয়ে চিন্তা না করুক।
একই ভাবে আমাদের মুরতাদ সরকার এবং তাদের এই কুফুরি ব্যাবস্থাও আমাদের কে আমাদের বিজয়ের আদর্শ এবং চিন্তা ধারা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইবে। কিন্তু আমাদের কে বেশি এই চিন্তা ধারার প্রসার ঘটাতে হবে। আমাদের এই সময় টা বড় অদ্ভুত সময়! আমরা উম্মতের দুইটা অবস্থার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত! এই অবস্থায় কেউ যদি উম্মতের আদর্শ এবং চিন্তা চেতনা থেকে অন্ধকারে থেকে যায় তবে তা হবে মারাত্মক ক্ষতিকর! কারন সে অতলে ভেসে যাবে! উম্মতের এই জাগরনে আমাদের অংশ গ্রহন করা জরুরী, উম্মতের জন্য নয়। বরং নিজেদের জন্যই! কারন আপনি যদি নির্ধারিত সময়ে ট্রেনে না উঠতে পারেন তাহলে ট্রেন ছেড়ে চলে যাবেই, আপনার জন্য বসে থাকবেনা। একই ভাবে উম্মতের বিজয়ের এই কাফেলা আপনার আমার জন্য বসে থাকবেনা। বরং এই কাফেলা সামনে এগিয়ে যাবে। আমি বা আপনি যদি এই কাফেলা মিস করে ফেলি তবে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই থাকবে না!
আল্লাহ্* আমাদের জন্য সহজ করুন।
Comment