'তাওয়াক' এর গল্প
(শামের বরকতময় জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারী এক মুজাহিদের ডায়েরি)
পর্ব: ২
অনুবাদ: আশ-শাম মিডিয়া
(শামের বরকতময় জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারী এক মুজাহিদের ডায়েরি)
পর্ব: ২
অনুবাদ: আশ-শাম মিডিয়া
প্রশিক্ষণ শিবিরের কয়েকটি দৃশ্য
“আওস” আলবেনিয়ার একটি মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন... দুনিয়ার শাহাদাহ (সার্টিফিকেট) ত্যাগ করে আখিরাতের শাহাদাহ খুঁজতে জিহাদের ময়দানে এসেছেন!
“আব্দুর রহিম আজারবাইজানী”, বয়স ২১ বছর... তার পরিবারের মধ্যে তিনি একাই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। বাকিরা এখনো কুফরের ওপরেই আছে। ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে বের হয়েছেন আল্লাহর দিকে হিজরতের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য...
“আবু মুসলিম আশ-শীশানী”... গাম্ভীর্যপূর্ণ শান্ত চেহারা, দীর্ঘ চুল। দৃঢ় মনোবল। কিন্তু তার চোখদুটি থেকে যেন রাহমাহ (দয়া ও করুণা) উপচে পড়ছে...
তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তার ছেলেদের কথা। জবাবে বলেছিলেন, ‘বয়স ১৫ হলেই তাদেরকে একে একে পাঠিয়ে দেব জিহাদের ময়দানে’।
“শামিল” দাগেস্তানী, বয়স ১৫ বছর... ওর বয়স শুনে অবাক হয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘এখানে এসেছ কিভাবে?’ ও বলেছিল, ‘আমরা সপরিবারে হিজরত করেছি। আমার মা চেচনিয়ায়ও জিহাদ করেছেন, এখানেও এসেছেন জিহাদ করতে।
“আবু যর দাগেস্তানী”... প্রশিক্ষণের কঠিন পরিশ্রমের পর সাথি ভাইরা সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। কিন্তু তার তাবুতে মিটিমিটি আলো জ্বলতে দেখা যেত। আর শোনা যেত তাহাজ্জুদের সালাতে সুরা আনফাল তিলাওয়াত!
“আব্দুর রহমান আজারবাইজানী”... একদিন কুরআন তিলাওয়াত শুনছিলেন। এমন সময় তার দুই পায়ের মাঝে মাটিতে পিপড়ার বাসা দেখতে পেলেন। তার মায়া হল। বন্ধুদের থেকে কয়েক টুকরা বিস্কুট নিয়ে গুড়ো করে ছড়িয়ে দিলেন সেখানে। দৃশ্যটা ছিল মনে দাগ কাটার মত।
এদের মধ্যে একজনের এখানে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ২৩ দিন। অনেক বিপদাপদ ও কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে এখানে পৌঁছেছেন তিনি... কারো লেগেছে এক মাস, আবার কারো তিন মাস... কিসের আকর্ষণ তাদেরকে এখানে এনেছে?!
আমাদের সাথে এমন কিছু লোকও ছিলেন যাদের ওজন ১৩০ কেজির বেশি। তারাও প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করছেন। শারিরিক যোগ্যতা অর্জন থেকে শুরু করে দুশমনের ছাউনিতে হামলার কৌশল পর্যন্ত সব প্রশিক্ষণই নিয়েছেন... যারা শারীরিকভাবে সক্ষম তাদের জন্য কিছু বাকি রেখেছেন কি?
কিছুদিন অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষ চলছিল। তারপর এক সময় আবার আমাদের রবের রহমতে আকাশ ছেয়ে গেল। মুষলধারে বৃষ্টি নামল... এমন সময় বৃষ্টির ফোটাগুলোর রিমঝিম শব্দ ছাপিয়ে একটি ঘোষণা কানে এল: “সবাই গুছিয়ে নাও... যাত্রার সময় হয়ে গেছে...”
বিদায়ের আবেগময় মুহূর্তে ভাবছিলাম, ইমানের ভ্রাতৃত্ব তাগুতী সীমারেখার বিভেদকে কিভাবে মুছে ফেলেছে!...
আমরা বাসে চড়লাম। এ যেন জান্নাতে যাবার বাস। অন্যরা হাত নেড়ে বিদায় জানালো। একজন নিচুস্বরে বলল, ‘ভাই, কখনও নিস্তেজ হয়ে যেও না যেন’!
এক বছর পার হয়ে গেছে। আজ বৃষ্টির ফোটাগুলো ঝরে পড়ার সাথে সাথে সেই দিনগুলো মনে পড়ছে। মনে পড়ছে সেই ভাইদের কথা। তাদের অনেকেই আজ শহীদ। কেউ আহত, কেউ বন্দী। আবার কেউ ফিরে গেছে নিজ দেশে... তাদের মধ্যে অল্পই বাকি আছে।
#অনুভব
তোমার রবের দোহাই, আমাকে বল, তুমি আরামে ঘুমাতে পার কিভাবে যখন তোমার কিছু ভাইয়ের রক্ত প্রবাহিত হয়? যখন তারা জীবন-মরণের তুমুল লড়াইয়ের লিপ্ত? রাতের অন্ধকারে একটু জেগে ওঠ। কয়েক রাকাত সালাত আর রবের দরবারে ফরিয়াদ- এই দুইয়ের মাধ্যমে ঘন কালো আঁধারেও একটু আলো জ্বালিয়ে দাও।
ভাই, দোয়া করতে ‘শব্দের বিশাল ভাণ্ডার’ জানা থাকার প্রয়োজন নেই। দরকার নেই সাহিত্যপূর্ণ ভাষার। কেবল প্রয়োজন তরবারির মত পরিস্কার একটি হৃদয়ের, যা সৃষ্টিকর্তার সামনে ভেঙ্গে পড়বে। সত্যবাদিতার সাথে তাঁর সামনে লুটিয়ে পড়বে। তখন তার জন্য খুলে যাবে আকাশের দরজাগুলো! ওঠ, মিনতি জানাও রবের দরবারে। তুমি ভাবতেও পারবে না তোমার দোয়ায় কী হতে পারে। হতে পারে কোন দোয়া তাগুতের সিংহাসনকে টুকরো টুকরো করে দিবে। ঘটনা প্রবাহের দিক পরিবর্তন করে দিবে... ওঠ, হাত তোল। সবচেয়ে বড় অকর্মা তো সে যে দোয়াও করতে পারে না!
তাওয়াক...!
Comment