Announcement

Collapse
No announcement yet.

'তাওয়াক' এর গল্প (শামের বরকতময় জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারী এক মুজাহিদের ডায়েরি)- পর্ব

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • 'তাওয়াক' এর গল্প (শামের বরকতময় জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারী এক মুজাহিদের ডায়েরি)- পর্ব

    'তাওয়াক' এর গল্প
    (শামের বরকতময় জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারী এক মুজাহিদের ডায়েরি)
    পর্ব: ৩

    অনুবাদ: আশ-শাম মিডিয়া






    ‘জাযিরাহ’-এ হামলার রাত্রি

    ক্যাম্পে আমরা ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম... হঠাৎ জরুরি অপারেশনের জন্য বের হবার নির্দেশ এলো। কারণ শত্রু বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে। আমরা গুলির বেল্ট ও অস্ত্রশস্ত্র কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে আমীরের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকলাম।

    ‘আল্লাহর অশ্বারোহীরা, আরোহন কর!’ শোনা মাত্রই চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে গেল। ভাইয়েরা শরীর থেকে ক্লান্তি ও অবসাদের ধুলা ঝেড়ে ফেলল। উদগ্রীব হয়ে রইল শত্রুর মোকাবেলার জন্য, তাদের রক্ত প্রবাহিত করার জন্য... ভাইদের প্রত্যেকে অপর ভাইয়ের মনোবল বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

    গাইড আসার পর আমরা মুজাহিদদের রিবাতের পয়েন্ট উদ্দেশে রওয়ানা হলাম... উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা পথ আর পথ সুগম করতে মুজাহিদদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দেখে চমকে গেলাম!

    প্রায়ই আমাদের গাড়ি কোন বাড়ির আঙিনার এক দিক থেকে ঢুকে অন্য দিক থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। কখনো কোন বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে নেমে অন্য পাশ থেকে উঠে যাচ্ছিলাম... এত কিছুর কারণ মূল পথটি স্নাইপারের নজরদারিতে ছিল!

    পথ সুগম করতে এবং বাঁধাগুলো শাবল ও গাইতি দিয়ে ভেঙে দিতে মুজাহিদ ভাইয়েরা যে কঠোর পরিশ্রম করছিল, তা দেখলে আপনার নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হত। মনে পড়ে যেত (আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক রাহ. এর সেই বিখ্যাত কবিতা): ‘ওহে হারামাইনে ইবাদতকারী, যদি দেখতে আমাদেরকে...’

    আমরা মুজাহিদদের অবস্থানে পৌঁছে গেলাম... সেখানে ইমানদীপ্ত নুরানী চেহারার মুজাহিদদেরকে দেখতে পেলাম। তারা শত্রুর মুখোমুখি হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, রবের দরবারে মিনতি করছিল আর যুদ্ধের পরিকল্পনা তৈরি করছিল।

    আমাদের শাইখ আব্দুল্লাহ মুহাইসিনীকেও সেখানে দেখলাম। তিনি মুজাহিদদের সাথে কাতারবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দোয়া ও ফরিয়াদে মশগুল ছিলেন। তাকে বলতে শুনলাম, ‘আল্লাহ, তোমার মাজলুম বান্দাদের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের তাওফিক দিয়ে আমাদের ওপর অনুগ্রহ কর...’

    ভারি অস্ত্রের গোলাবর্ষণ শুরু হল... ৫৭ মি.মি. কামান চালক আবু মুয়াবিয়াহ জাযরাবী আমাদেরকে সরে যেতে বলল। সে তাকবির দিয়ে ফায়ার করছিল। প্রচণ্ড শব্দে মাটি কেঁপে উঠছিল, সেই সাথে আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছিল আগুনের একটি গোলক!

    ভারি অস্ত্রের গোলাবর্ষণ চলছিল, এমন সময় ওয়ারলেসে আড়ি পেতে ‘হিযবুল লাত’ (অর্থাৎ, মুশরিকদের উপাস্য ‘লাত’ এর বাহিনী। এটা মুজাহিদীনের দেয়া নাম। আর ওরা নিজেদেরকে ‘হিযবুল্লাহ’ বলে।) এর একজন সৈন্যের কথা শুনতে পেলাম। মনে হল সে আমাদের অবস্থান শনাক্ত করে ফেলেছে। কামান চালককে বলল এদিকে ফায়ার করতে। কিন্তু কামান চালক দ্বিধায় পড়ে গেল। তখন কমান্ডার বলল, ‘তুমি তোমার মত ফায়ার চালিয়ে যাও, ওরা কোথায় বোঝা যাচ্ছে না।‘

    ‘ইনগিমাসি হামলা’র জন্য কিছু মুজাহিদ নির্বাচন করা হল। (এটা মুজাহিদীনের হামলার বিশেষ একটি পদ্ধতি। অর্থাৎ, হামলা চালিয়ে শত্রু ছাউনিতে ঢুকে পড়া।) ইনগিমাসি মুজাহিদরা আল্লাহর ওয়াদার প্রতি আস্থা রেখে ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে দুর্বার গতিতে ছুটে গেল দুশমনের আস্তানা গুড়িয়ে দিতে। বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখছিল তারা...

    ইনগিমাসিরা মুজাহিদদের ভবনগুলো ছেড়ে সামনে এগিয়ে গেল। তখন তাদের ও কুফফারদের ভবনগুলোর মাঝে কেবল খোলা মাঠ ছিল।

    আকাশের দিকে তাকাল তারা। সুন্দর গোলাকার চাঁদটা যেন ফিসফিস করে বলছিল, ‘তোমাদের সাথে সাক্ষাত করতে খুব ইচ্ছা করছে!’

    ইনগিমাসি মুজাহিদীন তীব্র স্রোতের গতিতে ছুটে পার হল খোলা জায়গাটা। কখনো ক্রোলিং করে কখনো গড়িয়ে, আবার কখনো দৌড়ে।

    তারা শত্রুদের প্রথম দুটি ভবনের কাছে পৌঁছে ছোট ছোট তিনটি ‘সারিয়া’য় (ছোট গ্রুপে) ভাগ হয়ে গেল, যেন সবদিক থেকে হামলা করা যায়...

    ককেশীয়দের গ্রুপটি ডান দুশমনদের ডান দিকে অবস্থান নিল। প্রথম আক্রমণ তারাই করল...

    এমন দুঃসাহসী হামলার মুখে বাতিলের সৈন্যরা একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। বাম দিকে ছুটে পালাল তারা...

    ‘শারঈ’দের গ্রুপটি আগে থেকেই ওৎ পেতে বসে ছিল। একদল লোককে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখল তারা। ‘শারঈ’দের আমীর বললেন, ‘সিমসিম সিমসিম’। (শব্দটির অর্থ ‘তিল’।) কোন জবাব এল না। তখন সবাই গুলিবর্ষণ করল ওদের ওপর!

    ‘সিমসিম’ হল সংকেত, এর সঠিক উত্তর ‘ঈদ’। এই সংকেতের উদ্দেশ্য বন্ধু আর শত্রু আলাদা করা। আপনি ‘সিমসিম’ বলার পর যদি জবাব আসে ‘বিত্তিখ’ (অর্থাৎ, তরমুজ) তাহলে সিলেক্টর লিভারটি নিচের দিকে নামিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ব্রাশ ফায়ার করে দিতে পারেন

    কুফফাররা পালিয়ে গেলে প্রথম দুটি ভবন মুজাহিদদের দখলে এসে গেল। তারা সেখানেই অবস্থান করল।

    সেখানে আজকের ডিউটির কাগজপত্র পাওয়া গেল। আরো কিছু লাল ফিতা পাওয়া গেল যেগুলোতে লেখা ছিল, ‘ইয়া হুসাইন, ইয়া আলি’। আশুরার দিনের জন্য বানানো হয়েছিল সেগুলো।

    ‘হিযবুল লাত’ এর একজন সৈন্যর মোবাইল ফোন পাওয়া গেল। কল লিস্টের একদম ওপরের নাম্বারটাতে কল দিল ভাইয়েরা। বলল, ‘তোমাদের সহকর্মীকে মেরে ফেলেছি’... সম্ভবত মারাই গিয়েছে ফোনের মালিক

    হিযবুল লাতের সৈন্যদের রেজিস্ট্রি খাতা পাওয়া গেল। খাতার শুরুতে ছিল তাওহিদ- ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’, আর শেষে ছিল কুফর- ‘ইয়া যাইনাব, ইয়া আলি...’ ওদের ওপর লাগাতার আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক...

    ককেশীয় মুজাহিদদের তর সইছিল না। তারা ছুটে গেল অন্যান্য ভবনগুলোতে হামলার জন্য। আর কিছু ভাই থেকে গেল প্রথম দুটি ভবন পাহারায়।

    প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হাত-পা জমে যাচ্ছিল... যাদের ঘুম আসছিল তাদের কেউ ঠাণ্ডা মেঝেতেই শুয়ে পড়ছিল, কেউ আবার পালা করে বিছানায় ঘুমাচ্ছিল। কয়েকজন ঘুমাচ্ছিল, তাদের জেগে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল আর ক’জন।

    একদিকে কনকনে শীত, অন্যদিকে একটানা গোলাগুলির শব্দ। একের পর এক মর্টারের শেল বিস্ফোরিত হচ্ছিল। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল স্প্লিন্টার।

    হঠাৎ এক ভাই চিৎকার করে সাহায্যের আবেদন করল। একটি স্প্লিন্টার তার মাথায় আঘাত করেছে!

    ফজর হতে বেশি বাকি নেই। বৃষ্টির ফোটার মত গোলাবর্ষণ হচ্ছে। এর মধ্যে এক মুহূর্তও ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব না... এদিকে ভাইয়েরা একটির পর একটি ছাউনি শত্রুমুক্ত করে অনবরত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রশংসা কেবলই আল্লাহর।

    মহান আল্লাহ শত্রুর মনে ভীতি সৃষ্টি করে দিলেন। ভাইদের তাকবির ধ্বনি আর প্রচণ্ড আঘাতের সামনে টিকতে পারছিল না তারা। ভাইয়েরা এগিয়েই যাচ্ছিল, আর ওরা শুধুই পালাচ্ছিল। ভাইদের হামলার জবাবে ওপাশ থেকে এল মাত্র কয়েকটা বুলেট।

    ফজরের সময় হয়ে গেল। ভোরের আলো ফুটলো... পাঁচটি ভবন শত্রুমুক্ত হয়েছে। কিন্তু ফিরে যাবার পথে স্নাইপার ওৎ পেতে বসে আছে। এদিকে গোলাবারুদ কমে এসেছে, খাবারও শেষ। ফলে ভাইয়েরা ক্ষুধা ও অবরোধের মুখে পড়ল।

    এক ভাই খাদ্য ও রসদ আনতে ফিরে যাচ্ছিল। স্নাইপারের ব্যাপারটি তার মাথায় ছিল না। স্নাইপারের গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগল সে। অন্যরা তাকে দেখতে পাচ্ছিল কিন্তু উদ্ধার করার উপায় ছিল না। কারণ কেউ কাছে গেলে তাকেও গুলি করবে স্নাইপার।

    জিহাদের ময়দানের দুটি ‘সিংহ’ প্রাণ বাজি রেখে দুঃসাহসী উদ্ধার অভিযানে নামল। আহত ভাইকে উদ্ধার করতে দৌড়ে চলে গেল স্নাইপারের রেঞ্জের ভেতরে। স্নাইপারের বুলেট তাদের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু তারা তাকে উঠিয়ে নিয়ে নিরাপদেই ফিরে এল...

    আহত ভাইয়ের রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না। তার চিকিৎসা করার অথবা তাকে মেডিকেল টিমের কাছে পৌছে দেয়ার কোন উপায় ছিল না... সাথিভাই ও বন্ধুদের সামনেই একটানা ছয় ঘন্টা রক্তক্ষরণ চলল। অবশেষে সে মহান বন্ধুর সান্নিধ্যে চলে গেল, তিনিও তাকে তাঁর সান্নিধ্যের জন্য নির্বাচিত করলেন ইনশাআল্লাহ।

    সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত হল যখন আপনার সামনেই আপনার বন্ধুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কিন্তু আপনি তার জন্য কিছুই করতে পারছেন না। তারপর আপনার সামনেই সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে... তখন আপনার মনে হবে রক্তের প্রতিটি ফোটার সাথে যেন আপনার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে।

    তোমার সামনে ঢেকে রাখা দেহটির কথা ভেবে দেখ... একটু আগেও সে কষ্ট পাচ্ছিল কিন্তু এখন আছে মহাসুখে। তোমাকে ছেড়ে চলে গেল, আর তুমি থেকে গেলে তার সাথে মিলিত হবার আশা নিয়ে। কেমন মৃত্যু নসিব হয়েছে তার! যে মৃত্যু রুকু ও সিজদা অবস্থায় মৃত্যু থেকেও উত্তম!!

    তোমার চলে যাওয়া বন্ধুর কথা ভেবে দেখ... প্রথমে তার হিম্মত আকাশ ছুঁয়েছিল, তারপর আল্লাহ তাকে সম্মান দিয়েছেন তার রূহকে তুলে নিয়ে। ভেবে দেখ, জান্নাতের হুরেরা এখন কিভাবে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে তাকে...

    তাকে এভাবে দেখে তোমার খারাপ লাগছে। তারপর কপালে চুমু খেয়ে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছ।

    ভাইয়েরা পাঁচটি ভবনে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ল... কুফফারদের একটি বি.এম.বি. বারবার আসা যাওয়া করত দেখা গেল। তাতে সৈন্য ভর্তি করে আনা হচ্ছিল। কাফেররা ভবনগুলোর চারপাশে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান নিল। তাদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। হুসাইন ও আলী রা. এর নাম ধরে সাহায্যের আবেদন করছিল তারা।

    কঠিন অবস্থায় পড়ে গেল ভাইয়েরা। কুফফাররা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। একেবারে নিকটে তারা। রসদ সামান্যই অবশিষ্ট আছে। ম্যাগাজিনগুলো শূন্য। আর ওদের মোকাবেলা করতে হলে একটি গ্রুপ হামলা করতে হবে, অন্য গ্রুপটিকে ফায়ারিং অব্যাহত রাখতে হবে।

    অবরুদ্ধ ভাইরা সংখ্যায় ছিল ২০ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন হতাহত। কেউ শহীদ, কেউ আহত। ভাইদের সংখ্যা ও রসদের পরিমাণ কম, তাই আমীর সিদ্ধান্ত নিলেন হামলা মুলতবী রেখে কেবল ওদের প্রতিরোধ করার, আর আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষায় থাকার।

    অবরুদ্ধ ভাইদের ম্যাগাজিনের বুলেট একেবারে শেষ হয়ে যাবার আগ মূহুর্তে ক্ষীণ কণ্ঠের একটা আওয়াজ শোনা গেল, ‘লোড, লোড!’... তারপর আর কোন সাড়াশব্দ নেই। গোলাবারুদ নেই খাবারও নেই!

    আশুরার দিন ভাইয়েরা জিহাদ ও ইনগিমাসে কাটাল। জিহাদের ময়দানে শত্রুর মোকাবেলার শক্তি অর্জনের জন্য সাওম না রাখাটাই সুন্নাহ। কিন্তু অবরুদ্ধ ভাইয়েরা রোজা রেখেছিল, কারণ খাবার ছিল না একেবারেই!

    কুফফাররা এগিয়ে আসছিল, কিন্তু কাপুরুষগুলো ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছিল না। প্রতি সেকেন্ডে মর্টারের শেল এসে পড়ছিল। এমনকি দেয়ালগুলোও ভেঙ্গে পড়েছিল... কিন্তু ভাইদেরকে স্বয়ং আল্লাহ সঙ্গ দিচ্ছিলেন!

    প্রবল গোলাবর্ষণ, শত্রুর বেষ্টনী, ক্ষুধা, শহীদ, আহত সাথিভাই, ..., ... এত কিছুর পরেও আল্লাহ তাআলা ভাইদের অন্তরে প্রশান্তি ও স্থিরতা ঢেলে দিয়েছিলেন। বরং ভাইয়েরা কসম করে বলতে পারবে, এটা ছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে সুখের কিছু মূহুর্ত!

    সন্ধাবেলা যখন আঁধারের পর্দা নামল এবং ফিরে আসার পথ নিরাপদ হয়ে গেল তখন অবরোধও আর টিকল না। ভাইরা ফিরে এল... ফিরে আসা ভাইদের সাথে মুসাফাহা করলাম। তারা ছিল ধুলা মলিন ও ক্লান্ত, একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়ছিল। একজন তো অচেতন হয়ে পড়েই গেলেন মাটিতে!

    ক্লান্ত দেহগুলোকে আলিঙ্গন করলাম। এমন অসাধারণ কুরবানী ও ত্যাগের কারণে সবার মাথায় চুমু খেতে ইচ্ছা করছিল।

    আমার মনে পড়ল আরেক শ্রেণীর মানুষের কথা। এই মুজাহিদরা যখন শত্রুর মোকাবেলায় মগ্ন ওরা তখন পিছন থেকে এদের পিঠে ছুরিকাঘাত করছে। ভাবতেই মাথা নিচু হয়ে গেল।

    দীনের সংরক্ষিত জলাধারকে রক্ষা করতে ক্ষুধা ও ক্লান্তিতে একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছে ভাইয়েরা। মনে পড়ছে ওইসব লোকের কথা যারা এদেরকেই গাদ্দার বলছে, এদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা করছে, সমালোচনার পাত্র বানিয়েছে এদেরকে... মনে মনে বললাম, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন!’

    শহীদদের দেহগুলো আর আহত মুজাহিদদের রক্ত দেখে আমার মনে হতে লাগল, মুমিনদের এই দলটিই পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে পবিত্র দল, কারণ এদের ত্যাগ অনেক বেশি।

    এদের জীবনকাহিনী ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখা উচিত। উম্মাহর কর্তব্য এদেরকে যোগ্য মর্যাদা দেয়া, নতুন প্রজন্মকে এদেরকে ভালোবাসার দীক্ষা দেয়া। তাদের পাওনা এটাই, তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে জেলখানার ভূ-গর্ভস্থ সেলে ফেলে রাখা নয়।

    আল্লাহর কসম, শহীদদের পায়ের জুতাগুলো তাবেদার রাষ্ট্রপ্রধানদের রাজমুকুটের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যারা দীনকে সাহায্য করছে তাদের নখের অগ্রভাগের কেটে ফেলা অংশটুকুও তাদের চেয়ে উত্তম, যারা দীনের নাম ব্যবহার করে দীনের সাথে গাদ্দারী করছে।

    পাহারার জন্য প্রত্যেকের দুই ঘন্টা করে পিছন দিকের ভবনগুলোতে থাকার কথা। দুই ঘন্টা পাহারা দেবার পর তারা বিশ্রামের জন্য চলে যাবে, আর সেখানে আসবে অন্য কয়েকজন। কিন্তু আমার বন্ধু আবুল বারা’ ছয় ঘন্টা করে পাহারায় থাকত। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কারণ কী?’ ও বলেছিল, ‘আমি শাহাদাতের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি, হয়তো একসময় এভাবেই শাহাদাত এসে যাবে’

    ময়দান থেকে ফিরে আসার পর আবুল বারা’ আমাকে বলেছিল, কত অপারেশনে অংশগ্রহণ করলাম, শাহাদাত এল না। শহীদী হামলার মাধ্যমেই হয়তো এই অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটবে।

    অপারেশনের পর ক্যাম্পে ফিরে আসার পথে সবার মনে হচ্ছিল গোনাহের বোঝার একটা বড় অংশ যেন আমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে... সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন, তিনি যেন কবুল করেন...

    সালাম...



    #অনুভব

    আমাদের কলিজা শত্রুদের ধারালো অস্ত্রের খোঁচায় রক্তাক্ত... ওদের সীমালঙ্ঘন দেখে আমাদের অন্তর ব্যথিত... ওদেরকে আহলুস সুন্নাহ-এর মসজিদের মিম্বারগুলো নাপাক করতে দেখে আমাদের হৃদয় পীড়িত... সম্ভ্রান্ত নারীদের ও সন্তানহারা মা-দের চিৎকারে আমাদের মন তীব্র যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছে।

    ওহে মুজাহিদীন, আল্লাহর পরে তোমরাই তো আমাদের আশা, আমাদের হৃদয় প্রশান্ত করতে কিছু কর... আমাদের হৃদয়ের ক্ষত অনেক বড়। সুসংবাদ শুনিয়ে একটু কমিয়ে দাও আমাদের ব্যথা... ওদের ওপর হামলা চালিয়ে হৃদয়ের ক্ষতগুলো সারিয়ে দাও... ইনগিমাসি হামলা করে আমাদের হৃদয় জুড়িয়ে দাও।

    বিপদগ্রস্ত মানুষের দৃষ্টি তোমাদের ওপর নিবদ্ধ... ক্লান্ত চোখগুলো তোমাদের সুসংবাদ পাবার অপেক্ষায় আছে... আহত হৃদয়গুলো তোমাদের বিজয়ের খবর শুনতে অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছে... গাড়ি বোমা হামলা কর ওদের ওপর... মাইন পেতে রাখ ওদের জন্য... ওদেরকে উড়িয়ে দাও... বিনাশ করে ফেল... ওদের পায়ের নিচের মাটিতে আগুন জ্বালিয়ে দাও... তোমাদের হাতের গাইতিগুলো ওদের ওপর ব্যবহার কর, হত্যা কর ওদেরকে, জখম কর, বন্দী কর... হালাবের (আলেপ্পো) দক্ষিণাঞ্চলের মাটিকে ওদের কবরস্থান বানিয়ে দাও। ওহে গৌরবের পানীয় পরিবেশনকারী, একটু পান করাও আমাদেরকে।

    ওহে বিজয়ের সুসংবাদদাতা, নতুন কোন খবর আছে কি?

    তাওয়াক...!


  • #2
    জাযাকাল্লাহ।
    বর্বর হিংস্র হায়েনার বিষাক্ত থাবায় আমাদের মা-বোন আর ভাইদের রক্তে ভেসে যাচ্ছে আমাদেরই নিজ ভূমি। আর তুমি........তবুও তুমি বসে থাকবে ? জেনে রেখো! তোমাকে অবশ্যই এ নির্যাতিত উম্মার রবের সামনে দাঁড়াতে হবে।

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ, আবু হাফস ভাই!...অতি চমৎকার একটি পোস্ট।
      سبيلنا سبيلنا الجهاد الجهاد
      طريقنا طريقنا الجهاد الجهاد

      Comment


      • #4
        আশ-শাম মিডিয়ার ভাইদের জাযাকুমুল্লাহ...।
        মাশা-আল্লাহ চমতকার লেখা
        তবে ভাই নিয়মিত হলে ভাল হয়
        shahin2016

        Comment


        • #5
          ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে কি যেন বের হতেচাচ্ছে, কিন্তু বেরহতে পারতেছেনা।

          Comment


          • #6
            জাযাকাল্লাহু খাইরান আখি। আরো বেশি বেশি চাই। ফেসবুকে প্রচুর শেয়ার হচ্ছে এগুলো। এই পিকটি ইউজ করতে পারেন আগামী পর্বগুলোতে, এক ভাইয়ের ফেবু ওয়াল থেকে নেওয়া...
            বিন কাসিমের রণ বেশে
            কাঁপন তুলো হিন্দ দেশে!
            দিকে দিকে লাগাও নারাহ
            জিহাদেই শান্তির ফোয়ারা!!

            Comment


            • #7
              Originally posted by abu_mujahid View Post
              এই পিকটি ইউজ করতে পারেন আগামী পর্বগুলোতে...
              আপনাকেও জাযাকাল্লাহ!!

              Comment


              • #8
                জাজাকাল্লাহ ভাই। পুরা ডাইরিটাই ধারাবাহিক ভাবে অনুবাদ করবেন আশা রাখি। এতে করে আমরা উপকৃত হব।
                শহীদি সুধার খোঁজে মোরা
                ছুটে চলি বিশ্বময়!

                Comment


                • #9
                  Originally posted by বিদ্রোহী View Post
                  জাজাকাল্লাহ ভাই। পুরা ডাইরিটাই ধারাবাহিক ভাবে অনুবাদ করবেন আশা রাখি। এতে করে আমরা উপকৃত হব।
                  ...আল্লাহ্* ভাইকে তাওফীক দিন।
                  বর্বর হিংস্র হায়েনার বিষাক্ত থাবায় আমাদের মা-বোন আর ভাইদের রক্তে ভেসে যাচ্ছে আমাদেরই নিজ ভূমি। আর তুমি........তবুও তুমি বসে থাকবে ? জেনে রেখো! তোমাকে অবশ্যই এ নির্যাতিত উম্মার রবের সামনে দাঁড়াতে হবে।

                  Comment


                  • #10
                    একটু ভয়ে ভয়ে পুরান পোস্ট টা সামনে আনলাম - হয়ত আমরা উপকৃত হতে পারবো ইনশাআল্লাহ
                    মিডিয়া জিহাদের অর্ধেক কিংবা তারও বেশি

                    Comment

                    Working...
                    X