Announcement

Collapse
No announcement yet.

'তাওয়াক' এর গল্প (শামের বরকতময় জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারী এক মুজাহিদের ডায়েরি)- পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • 'তাওয়াক' এর গল্প (শামের বরকতময় জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারী এক মুজাহিদের ডায়েরি)- পর্ব

    'তাওয়াক' এর গল্প
    (শামের বরকতময় জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারী এক মুজাহিদের ডায়েরি)
    পর্ব: ৪

    অনুবাদ: আশ-শাম মিডিয়া






    অজানা শত্রুর মুখোমুখি


    সাহসিকতার অসাধারণ একটি গল্প। ঘটনাটি হালাবের দক্ষিণাঞ্চলের রক্তক্ষয়ী তুমুল লড়াই চলাকালীন সময়ের। আল্লাহর অনেক নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে তাতে... সেটিকে বাস্তব কাহিনী মনে করার চেয়ে কাল্পনিক মনে করাটাই সহজ। আমি সরাসরি গল্পের নায়কের মুখে না শুনলে তা বর্ণনা করতাম না।

    শত্রুরা যখন রাতের অন্ধকারে ‘তাল্লাহ আল-ইস’-এর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন (শিয়া) রাফেযীদের হামলা প্রতিহত করতে সেদিকে রওয়ানা হলেন মুজাহিদদের প্রতিরক্ষা বাহিনী। সেই বাহিনীর মধ্যে সেই ভাইদের গাড়িটিও ছিল।

    হালাবের দক্ষিণাঞ্চলে যাবার পথে উত্তর হালাবের ‘কাফার হুমরাহ’-এ পৌঁছার পর আসরের আযান হয়ে গেল... ভাইয়েরা রাতের খাবার ও কিছু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অগ্রসর হল।

    চলতে চলতে মুজাহিদদের সীমানার শেষ চেকপোস্টটিও পার হয়ে গেল তারা। চেকপোস্ট পাহারায় থাকা মুজাহিদ ভেবেছিল তারা হয়তো সামনে গিয়ে ডানে অথবা বামে মোড় নেবে। তাই তাদেরকে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করে নি সে।

    মুজাহিদ জওয়ানরা আরো সামনে গিয়ে শত্রুদের এলাকায় ঢুকে পড়ল। তারা জানত না এটা শত্রুদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা... ক্যাম্প বানিয়ে থাকার জন্য একটা বাসার দিকে এগোলো। গাড়ি থেকে নেমে মাটির নিচের কক্ষে প্রবেশ করল। (বিমান হামলার সময় আশ্রয় নেয়ার জন্য এ ধরণের কক্ষ বানানো হয়।) তারপর রাতের খাবার খেতে বসল।

    গাড়িচালক মুজাহিদ অন্য একজনকে সাথে নিয়ে বের হল এলাকাটি ঘুরে দেখতে। তারা একটি টিলার কাছাকাছি যেতেই ওপর থেকে নেমে এল একজন অস্ত্রধারী। কাছে এসে গাড়ির জানালার সামনে দাঁড়াল সে।

    ভাইয়েরা বলল, ‘জওয়ানরা কোথায়?’
    : ‘কোন জওয়ানরা?’ পাল্টা জিজ্ঞেস করল সে।
    : ‘কেন, জাবহাতুন নুসরাহ!’... কথাটা বলেই ভাইয়েরা লক্ষ করল ইউনিফর্মের হাতার লোগোটার দিকে। সেখানে লেখা ছিল: ‘লাব্বাইকা ইয়া যাইনাব’!... (এটা হিযবুল্লাহ ও অন্যান্য রাফেযী/শিয়া মিলিশিয়াদের স্লোগান)

    চালক ভাই রাফেযীর দিকে তাকিয়ে চাতুরির হাসি হাসল। বোঝাতে চেল, ‘মজা করলাম একটু।’ তারপর সাথের মুজাহিদের দিকে ফিরে নিচু স্বরে বলল, ‘ফায়ার!’ কিন্তু রাফেযী সৈন্যটি আগেই সতর্ক হয়ে গেছে। ওর অস্ত্রের সিলেক্টর লিভারটি নামানোর শব্দ শোনা গেল, গুলি করতে যাচ্ছে রাফেযী... কিন্তু আমাদের ভাইটি আল্লাহর দুশমনের চেয়েও বিচক্ষণ ও তৎপর ছিল। সবসময় শত্রুর মোকাবেলার প্রস্তুতি থাকত তার। রাফেযী গুলি করার আগেই দ্রুত রাইফেল উঠিয়ে ওর ওপর ঝেড়ে দিল কয়েকটা বুলেট!

    যদি প্রথমতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ, অতঃপর আমাদের ভাইদের সার্বক্ষণিক প্রস্ততি না থাকত, সেখানেই শাহাদাতবরণ করত তারা...! গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। কী করবে বুঝতে পারছিল না। বুঝতে পারল কুফফারদের এলাকা এটা।

    ওদিকে অন্য সাথিরা ক্যাম্পে বসে ছিল একেবারে নিশ্চিন্তে, এ ব্যাপারে কিছুই জানতে পারে নি। আরামসে খাওয়া দাওয়া করছিল তারা।

    খাওয়া দাওয়া শেষে একজন ভাই ওপরে উঠে এল প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে। সুন্নাহ অনুযায়ী একটু দূরে চলে গেল... সে জানত না এটা শত্রু এলাকা!

    সালাতের সময় আরেক ভাই ওপরে উঠে এল, পাতালকক্ষে তার ভালো লাগছিল না। একটু হেটে গিয়ে বেশি একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করতে পারবে এমন একটা জায়গা বেছে নিল। সেখানে সালাত আদায় করল... সেও জানত না এটা শত্রু এলাকা!

    তাদের একজন কয়েকজন অস্ত্রধারীকে এগিয়ে আসতে দেখল। তারা কাছে এসে জিজ্ঞেস করল হুক্কার খাওয়ার কয়লা আছে কিনা। এমন প্রশ্নে অবাক হয়েছিল সে। কিন্তু পরে ভাবল, হয়তো ফ্রি সিরিয়ান আর্মির লোক হবে, যাদের অনেকেই ফেতনার শিকার।

    যে ভাই আমাকে ঘটনা শুনিয়েছে, সেও তখন পাতালকক্ষ থেকে ওপরে উঠে এল। একজন লোক তার কাছ থেকে হেটে গেল। লোকটাকে সালাম দিল সে, লোকটা জবাব দিল... কিছুক্ষণ পর প্রায় ৫০ মিটার দূরে একটা উচু জায়গায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে দেখতে পেল একজন লোককে। লোকটার পোশাক কিছুটা নুসাইরি বাহিনীর (বাশারের বাহিনী) অফিসারদের মত!

    ভাই তখন পিছন দিকে সরে এল। ম্যাগাজিনের বেল্ট আনতে আর মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে পাতালকক্ষে নেমে গেল। বুঝতে পারল, বিপদ আসন্ন... আবার ওপরে উঠে আসার চেষ্টা করল, কিন্তু সেই সুযোগ আর পেল না!

    কয়েক ধাপ ওঠা মাত্রই সেই অফিসারের একেবারে মুখোমুখি হয়ে গেল! আর যে লোকটাকে সে সালাম দিয়েছিল, তার ডান পাশে এসে দাঁড়ালো।... তারপর আরো কিছু রাফেযীর চিৎকার শোনা গেল, তাকে অস্ত্র নামাতে বলছিল ওরা...

    ভাই একটু পিছাতে লাগল, যেন একটু চিন্তা করার সময় পাওয়া যায়, সঠিক করণীয়টা নির্ণয় করা যায়। কিন্তু আল্লাহর দুশমন তাকে সেই সুযোগ দিল না। এক লাফে কাছে এসে রাইফেলের ম্যাগাজিন ধরে ফেলল, যেন গুলি ছুড়তে না পারে!

    এমন কঠিন মূহুর্তে স্লায়ুগুলোতে টান পড়ে, বু্দ্ধি লোপ পায়। চিন্তা করার শক্তি থাকে না, নড়াচড়াও কঠিন হয়ে যায়। যদি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সঠিক করণীয়টা তার মনে উদিত না হত তাহলে নিশ্চিতভাবে বন্দী হত রাফেযীদের হাতে... বন্দুকটা রাফেযীর হাতে ছেড়ে দেয়ার আগে তার সাথে সমঝোতার কথা বলতে লাগল। কথার ফাকে নল ঘুরিয়ে দিল বাম পাশে দাঁড়ানো অফিসারের দিকে!

    দুশমন বুঝতেই পারে নি, সে অফিসারের দিকে রাইফেল তাক করছে। ভেবেছিল সত্যিই সমঝোতার করতে চাইছে... ভাই অফিসারের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি করল। ঠিক মতই লাগল বুলেটগুলো। প্রশংসা কেবল আল্লাহরই...

    যে দুশমনটি রাইফেলের ম্যাগাজিন ধরে ছিল, ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে কাঁপতে কাঁপতে পিছন দিকে সরে গেল। এত দুঃসাহস সে আশা করে নি। তখন রাইফেলের নল তার দিকে ঘুরিয়ে তার ওপরেও কয়েকটি বুলেট ঝেড়ে দিল। সেও ধরাশায়ী হল। প্রশংসা কেবল আল্লাহর...

    কঠিন পরীক্ষার সময়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার আসে... ভাই যখন বন্দী বা নিহত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল, তখন আল্লাহ তাআলা সঠিক করণীয়টা শিখিয়ে দিলেন, তাকে সাহায্য করলেন। ফলে তার হাতে নিহত হল একজন রাফেযী, আহত হল আরেকজন। ফিরে আসার পথ ধরল সে।

    সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ হল ‘অজানা শত্রু’র সাথে যুদ্ধ!... তখন ওদের ফাঁদে পা দেয়াটাই স্বাভাবিক। ওদের চক্রান্তের শিকার হওয়াটা প্রায় নিশ্চিত। রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা কমই থাকে।

    সেই ভাই আরেকজন ভাইকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে এল সেখান থেকে... আসার পথে চারিদিক থেকে শত্রুর বুলেট ছুটে আসছিল তাদের দিকে। কাছের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিল তারা।

    প্রথমে একটি বাড়ির সীমানায় প্রবেশ করল, সেখান থেকে দেয়াল টপকে পরের বাড়িটাতে, সেটা থেকে তার পরেরটায়। এভাবেই এগোতে থাকল... অবশেষে উঁচু একটা বাড়ির কাছে পৌঁছুল। বাড়িটির আশেপাশের জায়গাটা পাথরে ভরা। লুকানোর উপযুক্ত জায়গা। পাথরের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল তারা।

    মাগরিবের আজানের অল্প কিছু সময় বাকি ছিল। পাথরের আড়াল থেকে মাথা ওঠানোর উপায় ছিল না। কারণ শত্রুরা যে টিলার ওপর ক্যাম্প বানিয়েছে, সেটা মাথার ঠিক ওপরে ছিল। মাথা উঠালেই ঝাক বেঁধে ছুটে আসবে শত্রুর বুলেট!

    সময় খুব ধীর গতিতে পার হচ্ছিল। খুবই কঠিন মূহুর্ত ছিল সেটা... মৃত্যুর অপেক্ষায় সময় কাটছিল। ভাইয়ের মনে হচ্ছিল, এখনি বুঝি রাফেযীদের রাইফেলগুলো দেখা যাবে মাথার ওপরে, আর তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলবে!

    মৃত্যু অথবা বন্দীত্বের অপেক্ষায় সময় কাটানো খুব কঠিন কাজ... তখন মানুষ বারবার মারা যেতে চায়... ভাইয়ের ইচ্ছা হচ্ছিল বিস্ফোরক বাঁধা একটা বেল্ট পাবার, যেন রাফেযীদের ভেতরে ঢুকে পড়ে বিস্ফোরন ঘটাতে পারে, আর তাদের হাতে বন্দী হতে না হয়।

    চারিদিকে রাতের অন্ধকার নামল। এশার সময় হয়ে এল প্রায়। তখনো গোলাগুলি চলছে। অন্ধকারে নিঃশব্দে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিল তারা, যেভাবে আটার মধ্য থেকে চুল বেরিয়ে আসে... পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। দ্রুত কেটে পড়ল সেখান থেকে।

    চারিদিকে তাকিয়ে দেখল তারা। চিন্তায় পড়ে গেল, পথ চেনা নেই। হয়তো কোন পথ ধরে এগোতে গিয়ে একেবারে রাফেযীদের আস্তানায় পৌঁছে যাবে! মহান রবের কাছে সাহায্য চেয়ে একদিকে চলতে লাগল... তারা চলছিল, কিন্তু বিপদ কাটছিল না!

    পাথরের আঘাতে ভাইয়ের পা জখম হতে লাগল। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল, মনে পড়ল বুটটি সেই ক্যাম্পেই ফেলে এসেছে। কিছুদূর হেটে যাবার পর হঠাৎ একটি সাঁজোয়া যান এগিয়ে আসার ভয়ংকর শব্দ শোনা গেল!...

    এই দৃশ্য দেখার পর শিরার ভেতরে রক্ত যেন জমে যাচ্ছিল... গাড়িটি এগিয়েই আসছে... যখন একেবারে কাছে এসে পড়ল এবং শঙ্কায় প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে গেল, আল্লাহ তাদের চোখকে অন্ধ করে দিলেন। ফিরে গেল তারা!...

    তারপর আরো কিছুদূর চলল। হঠাৎ সামনে তাদের একেবারে কাছে একজন রাফেযী সৈন্যকে দেখতে পেল। তার হাতে হালকা আলোর একটা লাইট জ্বলছিল। সেই আলোতে এলাকাটা দেখার চেষ্টা করছিল। ভাইয়েরা একেবারে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। রাফেযী আশ্বস্ত হয়ে ফিরে যাবার পর আবার চলতে শুরু করল...

    একটি ফসলের ক্ষেত পড়ল সামনে, তাতে ঢুকে পড়ল ভাইয়েরা। হঠাৎ পিছন থেকে ঝাকে ঝাকে বুলেট আসতে লাগল তাদের দিকে। দ্রুত একটি ইউক্যালিপটাস গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল তারা। কয়েক মিনিট থাকল সেখানে। ফায়ারিং বন্ধ হলে আবার চলতে শুরু করল। অজানা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, জানা নেই সামনে কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

    প্রথম দিকে গুলি আসা মাত্রই কোন কিছুর আড়ালে লুকিয়ে পড়ছিল অথবা বসে পড়ছিল। কিন্তু এত কঠিন পরিস্থিতি ও ভয়ভীতির পাশ কাটিয়ে যাবার পর তাদের এমন অবস্থা হল যে, চতুর্দিক থেকে ঝাকে ঝাকে গুলি আসলেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছিল না তাদের মধ্যে। তারা আসন্ন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিল!

    একটা এলাকায় পৌঁছার পর একটু দূরে গাড়ির হেডলাইট জ্বলতে নিভতে দেখতে পেল। খুব অস্থির হয়ে গেল তারা। কারা ওরা? ভাইয়েরা নাকি রাফেযীরা? তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। সেখানে গিয়ে বেঁচেও যেতে পারে, আবার মরতেও হতে পারে।

    আরো কাছে গেল তারা। সংঘর্ষের সম্ভাবনা আছে, তাই প্রস্তুত থাকল... চিৎকার করে বলল, ‘তোমরা কারা?’ প্রশ্নোত্তরের পর নিশ্চিত হল, ওরা মুজাহিদ। ছুটে গিয়ে সালাম ও মুআনাকা (কোলাকুলি) করতে লাগল ভাইদের সাথে।

    দীর্ঘ সময় টানটান উত্তেজনা ও মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকার পর তাদের দেহে নতুন করে রক্ত সঞ্চালিত হল। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহগুলো এলিয়ে পড়ল... বিশ্রামের জন্য সবচেয়ে কাছের জায়গাটিই বেছে নিল তারা।

    সাথিদেরকে সব ঘটনা খুলে বলল। তাদেরকে জানাল চারজন সাথিকে হারানোর খবর। একেবারে শুরুতেই হারিয়েছে দুজনকে, যারা এলাকাটা ঘুরে দেখতে গিয়েছিল। শত্রু এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার সময় ছেড়ে এসেছে আরও দুজনকে...

    সেখানে থেকে যাওয়া ভাইদের জীবিত ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম ছিল। প্রায় অসম্ভব। কারণ শত্রু বাহিনীতে প্রচন্ড হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছিল, তার মধ্যেই ছেড়ে আসা হয়েছে ওদেরকে। সবাই দোয়া করল, আল্লাহ যেন তাদের শাহাদাত কবুল করেন, জান্নাতে যেন তাদের সাথে মিলিত করেন।

    একজনের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হল, কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া গেল। ভাইয়েরা সারা রাত চেষ্টা চালাল যোগাযোগের, কিন্তু ভালো কোন সংবাদ দিতে পারল না কেউ... দুশ্চিন্তা দূর হল না ভাইদের... ভাইয়েরা ধরেই নিল, হয় নিহত নয়তো বন্দী হয়েছে তারা।

    ভোরের আলো ফুটল, সুর্য উঠল। সুর্যের আলোর ভাজে ভাজে লুকিয়ে থাকে যত খুশির খবর। আবার কল করল ভাইয়েরা। ফোন খোলা পাওয়া গেল এবার। রিসিভ করা হল ওপাশ থেকে। যে ভাইয়ের ফোন তার গলাই শোনা গেল। বলা হল: ‘আপনি কি অমুক?’

    জবাব এল: ‘হ্যাঁ, আমি অমুক... আপনাদের জন্য খুশির খবর আছে, আমরা ভালো আছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু দু’জন বাদে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তাদেরকে যেন শহীদ হিসাবে কবুল করেন!...’ মুজাহিদ জওয়ানরা ওদের বেঁচে যাওয়ার খবর শুনে খুশি হল, আবার দুজনকে হারানোর খবরে মন খারাপও করল... কিন্তু একটু পরেই সবার ব্যাপারে খুশির খবর পেল তারা!

    এপাশ থেকে জিজ্ঞেস করল, ‘শহীদ দুইজন কে কে?’ বলল, ‘অমুক আর অমুক!’ সেই দুইজনের নাম বলল যারা আগেই পৌঁছে গিয়েছিল এবং এখন তাদের সাথেই বসে আছে রুমের মধ্যে... এক মূহুর্ত নিরবতায় ছেয়ে গেল কামরাটি, তারপর তাকবীর ধ্বনিতে কেঁপে উঠল!

    কেবল খুশিই ছিল না, বরং ঈদের দিন ছিল সেটা; জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় ঈদগুলোর একটা ছিল... খবরটা শুনে সবার শরীরে একটা শিহরণ বয়ে গেল, চোখে পানি এসে গেল। শিরাগুলোতে রক্ত সঞ্চালিত হল সবেগে, প্রচণ্ড জীবনীশক্তি নিয়ে... সবার মুখে হাসির রেখা দেখা গেল!

    আল্লাহ ভাইদেরকে একেবারে সুস্থ শরীরে একত্রিত করলেন... সবাই মিলিত হল অন্য সাথিদের সাথে। আনন্দ পূর্ণতা লাভ করল... সবাই নিজ নিজ কাহিনী শোনাতে লাগল, কেমন আশ্চর্যজনকভাবে তাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা।

    প্রথমে যে দুজন এলাকা ঘুরে দেখতে বেরিয়েছিল তারা বলল, যখন তারা বুঝতে পারল এটা শত্রু এলাকা, পিছনে ফিরে গেল... সেখানে থেকে যাওয়া দুই সাথিকে দেখতে পেল, তারা কুফফারদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল।

    আল্লাহর কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখা গেল তখন... আল্লাহ ভাইদের বুলেটগুলো লক্ষ্যভেদ করাচ্ছিলেন, তাদের মনোবলও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারা কেবল বেরিয়ে আসার চেষ্টাই করছিল না, বরং হামলা করে শত্রুকে বেশি পরিমাণে হতাহত করতে সচেষ্ট ছিল!

    একজন দুশমনের সাথে প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হচ্ছিল ভাইদের। হঠাৎ তার হাত থেকে বন্দুকটা পড়ে গেল... আল্লাহ মুজাহিদ জওয়ানদের বুলেট লক্ষ্যভেদ করিয়েছেন, দুশমনের হাতে আঘাত করেছে মুজাহিদদের বুলেট!

    এক ভাই একটা বাসায় ঢুকতে যাচ্ছিল, হঠাৎ ভেতরে খস খস শব্দ শোনা গেল। পিছনে সরে এল সে, তখনই শব্দের উৎসটা দেখা গেল। বেরিয়ে এল এক দুশমন। আল্লাহর অনুগ্রহে সে ভাইয়ের উপস্থিতি টেরই পেল না।

    ফিরে আসার পথে এক জায়গায় কিছু শত্রু দেখতে পেল তারা। একজন মুজাহিদ জওয়ান এগিয়ে গেল নিঃশব্দে। বোমার পিন খুলে ছুড়ে ফেলল ওদের ঠিক মাঝখানে, পর মূহুর্তেই শোনা গেল শত্রুবাহিনীর চিৎকার ও আর্তনাদ!

    এটা এমন একটা চিত্র যা কল্পনাও করা যায় না! চতুর্দিক থেকে আপনাকে ঘিরে রেখেছে শত্রু বাহিনী, বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাই যেখানে কম, সেখানে শত্রুকে আপনার শক্তি দেখাতে চাইছেন, যেন আপনি ওদের ওপর হামলা করতেই এসেছেন। আবার এতেই ওরা ঘাবড়ে যাচ্ছে, আর আপনি ফিরে আসছেন নিরাপদে!...

    আরেকটা দৃশ্য, মুজাহিদ জওয়ানদের সাথে শত্রুবাহিনীর প্রচণ্ড গুলিবিনিময় চলছিল। হঠাৎ শত্রুপক্ষের ফায়ারিং থেমে গেল। তারপর অন্যদিকে ছুটতে লাগল ওদের বুলেটগুলো, যেদিকে আমাদের কোন ভাই ছিল না। অবাক করা ব্যাপার!

    ভেবেছেন কি, কিসের জন্য শত্রুদের বুলেটের দিক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল? হতে পারে সেদিকে আসমান থেকে নেমে আসা ফেরেশতা ছিল, আল্লাহ তাদেরকে পাঠিয়েছিলেন মুজাহিদ জওয়ানদের সাহায্যে। আর আল্লাহ তো সবকিছু করার ক্ষমতা রাখেন!

    আল্লাহ তাআলা জওয়ানদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। কেউ নিহত হয় নি। আহতও হয় নি কেউ। আর ওদিকে আল্লাহর শত্রুদের কমপক্ষে ১৫ জন হতাহত হয়েছে নিশ্চিভাবে!...

    দক্ষিণ হালাবের লড়াইগুলোতে মুসলিম যুবকদের জন্য একটা বার্তা আছে। তা হল, ‘যার সাথে আল্লাহ থাকেন তাকে আর কেউ সাহায্য না করলে কী ক্ষতি? আর আল্লাহ যাকে সাহায্য করেন না তাকে কে সাহায্য করতে পারে? অতএব মন থেকে ঝেড়ে ফেল সব ভয়ভীতি’...

    আল্লাহর মুজাহিদদের সাথে থাকার স্পষ্ট নিদর্শনে পূর্ণ এই ঘটনাগুলোতে ইসলামী আকীদা লালনকারী যুবকদের জন্য একটি বার্তা আছে। তা হল, ‘জিহাদের ময়দানের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়, কারণ তোমাদের মৃত্যুর নির্ধারিত দিনটি আল্লাহ লিখে রেখেছেন। যুদ্ধের ময়দান কখনো সেই দিনটিকে এগিয়ে দিবে না।’



    #অনুভব

    এই মূহুর্তে ভাবছি, যদি আমাদের মনগুলো বৃষ্টির পানির মত নির্মল হত... যদি আমাদের কর্মগুলো বৃষ্টির পানির মত পবিত্র হত... যদি আমাদের দৃষ্টি বৃষ্টির পানির মত নিষ্কলুষ হত।

    ভাবছি, যদি আমাদের উম্মাহ ওই শিশুদের মত মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত, যারা বৃষ্টির টিপটিপ শব্দ শুনেই দলবেঁধে মিলেমিশে ছুটে যায় বৃষ্টিতে ভিজতে, বৃষ্টির ঝরে পড়া ফোটাগুলোর নিচে! আহা কী আনন্দ!

    তাওয়াক...!

    Last edited by আবু হাফস; 11-08-2016, 07:52 PM.

  • #2
    বিন কাসিমের রণ বেশে
    কাঁপন তুলো হিন্দ দেশে!
    দিকে দিকে লাগাও নারাহ
    জিহাদেই শান্তির ফোয়ারা!!

    Comment


    • #3
      আল্লাহু আকবার কাবীরা।

      Comment


      • #4
        #অনুভব

        এই মূহুর্তে ভাবছি, যদি আমাদের মনগুলো বৃষ্টির পানির মত নির্মল হত... যদি আমাদের কর্মগুলো বৃষ্টির পানির মত পবিত্র হত... যদি আমাদের দৃষ্টি বৃষ্টির পানির মত নিষ্কলুষ হত।

        ভাবছি, যদি আমাদের উম্মাহ ওই শিশুদের মত মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত, যারা বৃষ্টির টিপটিপ শব্দ শুনেই দলবেঁধে মিলেমিশে ছুটে যায় বৃষ্টিতে ভিজতে, বৃষ্টির ঝরে পড়া ফোটাগুলোর নিচে! আহা কী আনন্দ!

        তাওয়াক...!

        ...অনুভবই বটে! মাশাআল্লাহ!! .........অব্যাহত রাখার অনুরোধ রইলো।
        বর্বর হিংস্র হায়েনার বিষাক্ত থাবায় আমাদের মা-বোন আর ভাইদের রক্তে ভেসে যাচ্ছে আমাদেরই নিজ ভূমি। আর তুমি........তবুও তুমি বসে থাকবে ? জেনে রেখো! তোমাকে অবশ্যই এ নির্যাতিত উম্মার রবের সামনে দাঁড়াতে হবে।

        Comment


        • #5
          যাজাকাল্লাহ, হায়! আমরা কখন লিখব এই রকম কাহিনী !!!!
          এখন ভাইরা লিখলেও কম যাবে না। তারপরও ...
          মুমিনদেরকে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব
          রোম- ৪৭

          Comment


          • #6
            আল্লাহু আকবার!!

            Comment


            • #7
              একটু ভয়ে ভয়ে পুরান পোস্ট টা সামনে আনলাম - হয়ত আমরা উপকৃত হতে পারবো ইনশাআল্লাহ
              মিডিয়া জিহাদের অর্ধেক কিংবা তারও বেশি

              Comment


              • #8
                যার সাথে আল্লাহ থাকেন তাকে আর কেউ সাহায্য না করলে কী ক্ষতি? আর আল্লাহ যাকে সাহায্য করেন না তাকে কে সাহায্য করতে পারে? অতএব মন থেকে ঝেড়ে ফেল সব ভয়ভীতি’...

                ‘জিহাদের ময়দানের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়, কারণ তোমাদের মৃত্যুর নির্ধারিত দিনটি আল্লাহ লিখে রেখেছেন। যুদ্ধের ময়দান কখনো সেই দিনটিকে এগিয়ে দিবে না।’
                হায়! আমরা কখন লিখব এই রকম কাহিনী !!!

                Comment


                • #9
                  এটা এমন একটা চিত্র যা কল্পনাও করা যায় না! চতুর্দিক থেকে আপনাকে ঘিরে রেখেছে শত্রু বাহিনী, বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাই যেখানে কম, সেখানে শত্রুকে আপনার শক্তি দেখাতে চাইছেন, যেন আপনি ওদের ওপর হামলা করতেই এসেছেন। আবার এতেই ওরা ঘাবড়ে যাচ্ছে, আর আপনি ফিরে আসছেন নিরাপদে!...


                  এটাই সত্য বাস্তবতা যে - যতদিন পর্যন্ত না কিতালের পবিত্র ভূমিতে রাখতে পারবো আল্লাহ প্রদত্ত কদম , ততোদিন পর্যন্ত এই অন্তর তা প্রকৃতভাবে উপলব্ধি করতে অক্ষম ।।

                  হে আল্লাহ আপনি আমাদের কে আপনার প্রদত্ত এই মর্যাদা থেকে মাহরুম করিয়েন না ।
                  আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (আলে ইমরান ১৪৬)

                  Comment


                  • #10
                    অন্তরটা জুড়িয়ে গেল। জাজাকাল্লাহ ভাইজান

                    Comment


                    • #11
                      জাযাকাল্লাহ প্রীয় ভাই।এমন গল্পে ঘুমন্ত অন্তর গুলো জেগে উঠতে শুরু করেছে।
                      অব্যাহত রাখার অনুরোধ রইল।

                      Comment


                      • #12
                        আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর।

                        Comment

                        Working...
                        X