রাসূলুল্লাহ সা. পবিত্র মসজিদে নববীতে বসা ছিলেন। হঠাৎ করে মসজিদে নববীতে এক যুবকের আগমন। যুবকের মুখে বসন্তের কালো দাগ। চেহারাও খুব কালো। শরীরের গঠনপ্রণালীও অসুন্দর।যুবক রাসূলুল্লাহ সা. কে সালাম দিয়ে রাসূলের কাছেই বসলো। রাসূলে কারীম সা. সালামের জবাব দিয়ে দরদমাখা কন্ঠে যুবকের অবস্থা জানতে
চাইলেন, হে যুবক! কেমন আছ? কি তোমার
পরিচয়? রাসূলের আদরমাখা কথায় যুবকের হৃদয়ে প্রাণ ফিরে এলো। যুবক নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে কাঁদতে শুরু করলো।
রাসূল সা. তাঁর এ অবস্থা দেখে তাকে শান্তনা দিয়ে কাছে টেনে নিলেন। তখন যুবক কেঁদে কেঁদে প্রশ্নের জবাব দেয়া শুরু করলো। হে আল্লাহর রাসূল! আমি বনু সুলাইম গোত্রের সাঈদ সুলাইমি।আমি খুব দরিদ্র। দেখতে কুৎসিত। চেহারায় বসন্তের দাগ ও গরীবের গঠনপ্রণালী অসুন্দরের
কারণে কেউ আমাকে পছন্দ করে না। আমার মন চায় রাসূলের সুন্নত (নিকাহ) সম্পাদন করতে।কিন্তু আমি হতদরিদ্রের কাছে কে দেবে তার আদরের দুলালীকে? আমাকে কোনো মেয়ের পিতা জামাতা হিসেবে মেনে নিবে কি? স্বামী হিসেবে কেউ
গ্রহণ করবে কি? এই কথাগুলো বলে যুবক আবারও কাঁদতে শুরু করলো। রাহমাতুল্লিল আলামিন যুবকের কথাগুলো এতক্ষণ খুব গুরুত্ব ও মনযোগসহকারে শুনছিলেন। এবার যুবককে জিজ্ঞাসা করলেন, হে যুবক! তোমার আর কিছু বলার আছে কি? তোমার কথা কি এখানে শেষ? তিনি হ্যাঁ সুচক জবাব দিলেন। তখন নবীয়ে রহমা
তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি কাউকে পছন্দ হয়েছে? তুমি কোন ধরনের মেয়েকে বিয়ে করতে চাও? যুবক বললো, আমার কোন পছন্দ নেই।তখন রাসূল সা. যুবককে বললেন, হে যুবক! এখনকার সময়ে মদীনার সবচেয়ে সুন্দর ও ধনবতী যুবতী কে? তিনি জবাব দিলেন তা তো আমার
জানা নেই। তখন রাসূল সা. বললেন, হে সাঈদ সুলাইমি! তুমি না জানলেও আমি জানি। আমর বিন ওয়হ্হাবই মদীনার মধ্যে সবচেয়ে বেশী সম্পদশালী এবং তাঁর
মেয়েই মদীনার সর্বাধিক সুন্দরী। হে সাইদ সুলাইম! তুমি আমরের বাড়িতে যাও। গিয়ে তাকে বলবে যে, আমি তাঁর মেয়েকে সাইদ সুলাইমির সঙ্গে বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে তোমাকে পাঠিয়েছি। এ কথা শুনে যুবক হতবাক। এটা কি করে সম্ভব! কুৎসিত
ও হতদরিদ্রের কাছে এত সম্পদশালী ও মদীনার সর্বাধিক সুন্দরী মেয়েকে তুলে দেয়া! কিছুক্ষণ নিরবতা ও ভাবনার পর যুবক ভাবলেন এটা তো আমার কথা নয়, বরং বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. মুখ নিঃসৃত কথা। রাসূলের নির্দেশকে কিভাবে
অমান্য করবো? তা হতেই পারে না। রাসূলের প্রস্তাব নিয়ে তিনি আমরের বাড়িতে উপস্থিত হলেন। বাড়ি থেকে আমর বেরিয়ে এসে সালাম কুশলাদী জিজ্ঞেস করলেন। পরিচয় পর্ব শেষে
সাইদ সুলাইমি কন্যার বাবার কাছে রাসূলের প্রস্তাব পেশ করলেন। সাইদ সুলাইমির প্রস্তাব শুনার পরই আমর ক্ষুব্ধ হয়ে তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। যুবক নিরাশ হয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মসজিদে নববীর পথ ধরলেন। এ দিকে ঘরের
ভেতর থেকে আমর বিন ওয়াহ্হাবের মেয়ে বাড়ির বাহিরে সাইদ সুলাইমি ও আমরের উচ্চস্বরের কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। সাইদ সুলাইমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমরের মেয়ে
তাঁর বাবাকে বললো, আব্বাজান! মনে হয় আপনি ভুল করে ফেলেছেন; কারণ এই দুনিয়াতো মাত্র ক’দিনের। এর সুখ-শান্তি ধনসম্পদ সাময়িক। এগুলো অস্থায়ি। সাময়িক সুখ-শান্তি, আনন্দের মোহে পড়ে পরকালীন চিরস্থায়ী জগতকে ভুলে গেলে
চলবে না। এগুলো আমাদেরকে পরকালে শান্তি দিবে না। সুখ-শান্তি পেতে হলে পরিপূর্ণ দ্বীন মানতে হবে। মনের ভেতরে সামান্য অহঙ্কার সারাজীবনের আমলকে ধ্বংস করে দেয়। ধনী- গরীব, সাদা-কালো এগুলোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ইসলামে সবাই সমান। সুন্দর অসুন্দর সব দয়াময় আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। আল্লাহ যাকে
ইচ্ছে ধনী বানান আবার যাকে ইচ্ছে ফকির বানান। কাজেই আল্লাহর ওপর ভরসা করে রাসূলের সেই প্রস্তাবকে আমি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিলাম।আল্লাহর রাসূল এই হতদরিদ্র ও কুৎসিত যুবককে পছন্দ করেছেন, আমি কেন তাকে অপছন্দ করবো। আমি মনেপ্রাণে গরীব ও কুৎসিত যুবককে আমার
স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। এছাড়া রাসূল সা. যাকে স্বয়ং মনোনীত করেছেন এবং আপনার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তাঁর প্রস্তাব কিভাবে আপনি ফিরিয়ে দিলেন? রাসূলের নির্দেশ ফিরিয়ে দেয়া মানেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করা।মেয়ে এপর্যন্ত বলে থেমে গেল। এবার তিনি হতাশ
হয়ে গেলেন। আর চিন্তা করতে লাগলেন আমি সাইদকে ফিরিয়ে দিয়েছি, রাসূলের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছি এটা আমার জন্য কল্যাণকর হয়নি। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। রাসূলের অন্তরে কষ্ট দিয়েছি। সাঈদ সুলাইমিও ব্যথিত হয়েছেন।
রাসূল আমাকে ক্ষমা করবেন তো? তাই তিনি কালবিলম্ব না করে রাসূলের দরবারে গিয়ে উপস্থিত। তিনি প্রথমেই নিজের অনাকাক্সিক্ষত ভুল স্বীকার করে এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। সাথে সাথে খুশির খবর (বিয়ের প্রস্তাব কবুল) এটাও সুস্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, আমার
মেয়ে সাইদ সুলাইমিকে স্বামী হিসেবে পছন্দ করেছে। তার পছন্দই আমার পছন্দ। এছাড়া আপনি যাকে পছন্দ করেছেন তা আমরা কীভাবে অপছন্দ করবো! কাজেই আমরা তাকে জামাতা হিসেবে মনেপ্রাণে মেনে নিতে আর কোন আপত্তি নেই। রাসূল সা. আমরের অনাকাক্সিক্ষত ভুল মার্জনা করে তার জন্য দোআ করলেন এবং এই
আনন্দের সংবাদ শুনে শোকরিয়া আদায় করত: আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠলেন।
সাইদ সুলাইমিও অপ্রত্যাশিত সংবাদ শুনে
শোকরিয়া আদায় করলেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে আখিযুগল সিক্ত হয়ে ওঠলো। (এই অশ্রু ছিল আনন্দের) তখন সাইদ সুলাইমীকে হযরত উসমান রা. কাছে ডেকে নিয়ে বললেন- সাইদ এই নাও এ থলি; এতে দুহাজার দিরহাম আছে। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন এদিরহাম তোমাকে দিতে। সাইদ দুহাজার দিরহাম নিয়ে রাসূলের দরবারে হাজির। রাসূলের সাথে সাক্ষাতের পর তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন যাও এ দিরহাম নিয়ে বাজারে গিয়ে
বিবাহের পোষাক বানাও। বিয়ের জন্য তৈরি হও। প্রয়োজনীয় খরচ কর। সাইদ সুলাইমি সুখময় জীবনের স্বপ্ন বুনতে বুনতে বাজার পথে চলছেন।
সেই কাক্সিক্ষত রাজরাণীর কল্পনা করতে করতে এগিয়ে চলছেন বাজারের দিকে। এভাবে দ্রুতই চলে আসলেন বাজারে। বাজারে মানুষের শোরগোল ও হৈহুল্লোড় তার কানে আটকাতে পারেনি ঘোষকের
ঘোষণা।হঠাৎ তার কানে আওয়াজ এলো কে যেন ঘোষণা করছে ‘আর রাহিল, আর রাহিল’ বলে। তখন সাইদ একটু সম্মুখপানে অগ্রসর হয়ে এক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলেন কী হয়েছে? জবাব এলো মদীনা মুনাওয়ারায় মক্কার কাফেররা
আক্রমণ করেছে। এখন প্রয়োজন এমুহুর্তে
রণপ্রস্তুতির। যুদ্ধের জন্য তৈরি হওয়ার।
জিহাদে শরীক হওয়ার। তখন সাইদ ভুলে গেলেন তাঁর বিয়ের কথা। তিনি বিয়ের পোষাকের পরিবর্তে এবার খুঁজতে লাগলেন ঘোড়া ও তলোয়ার। কারণ তিনি সিদ্ধান্ত বদল করে নিয়েছেন। দুহাজার দিরহাম দিয়ে ভালো একটি ঘোড়া ও ধারালো তলোয়ার ক্রয় করে সোজা গিয়ে যুদ্ধের ময়দানে হাজির। তখন যুদ্ধময়দানে
উভয়দলের সৈন্যবাহিনী লড়াইয়ের জন্য পূর্ণ পস্তুত। শুধু দলনেতাদের নির্দেশের অপেক্ষায়। মুসলিম সৈন্যবাহিনীর সামনে রাসূল সা. বক্তব্য রাখছেন। রাসূলের বক্তব্য চলাকালীন সময়ে ময়দানে সুনসান নিরবতা। প্রত্যেকেই একাগ্রতার
সাথে খুব মনযোগসহকারে রাসূলের গূরুত্বপূর্ণ বক্তব্য শুনছেন। বক্তব্যের শেষ মুহুর্তে, যুদ্ধের শুরুলগ্নে হঠাৎ সকলের দৃষ্টি পড়লো হিজাব পরিহিত এক সওয়ারির দিকে। উপস্থিত সৈন্যরা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালেন নেকাব পরিহিত সওয়ারির দিকে। তারা দেখলেন সওয়ারিটি মুসলিম
সৈন্যবাহিনীর দিকে এগিয়ে আসছে। এসেই উচ্চ স্বরে আল্লাহু আকবার ধ্বনি তুললো। মুসলিম সৈন্যবাহিনীরা তাঁর তাকবীরের জবাব দিলেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সওয়ারিটি কাফির বাহিনীর ওপর সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
তাঁর অতর্কিত হামলার প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিল না কাফের বাহিনী। তাঁর অতর্কিত আক্রমণের ফলে কাফের বাহিনীদের মাঝে প্রচন্ড ভয় ঢুকে গেল। এক হামলায় তিনি কাফের বাহিনীর অনেক সৈন্যদের চিরতরে দুনিয়া থেকে নিঃশেষ করে দিলেন। নেকাব পরিহিত যুবকটি ছিল একা। তাঁর
আক্রমণ প্রতিরোধ করতে এসে যখন অনেকে নিহত হল তখন কাফেরদের মাঝে প্রতিশোধের আগুণ দাউদাউ করে জ্বলে ওঠলো। কাফির বাহিনীর শক্তিশালী কয়েকজন সৈন্য তাঁর ওপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো। অনেক তীর এসে
যুবকটির শরীরে বিদ্ধ হল। কয়েকটি তীর তাঁর গায়ের একদিকে প্রবিষ্টহয়ে অপরদিকে বেরিয়ে গেল। ফলে যুবক রক্তক্ষরণ হয়ে যন্ত্রণায় যমীনে লুটিয়ে পড়লো। এ নির্মম দৃশ্য প্রত্যক্ষ্য করে মুসলিম সৈন্যরা নিজেদেরকে সংবরণ করতে না পেরে সবাই ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে শাহাদতের
দৃপ্ত শপথ নিয়ে কাফির বাহিনীর ওপর
সম্মিলিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রতিশোধের দৃপ্ত শপথ নিয়ে তারা কাফের বাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নেয়া শুরু করল। শাহাদতের চেতনায় উজ্জিবীত
হয়ে ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে লড়াই করার ফলে কাফির বাহিনীর সৈন্যরা পিছপা হতে লাগলো। এই যুদ্ধে কাফেরদের পরাজয় এবং মুসলমানদের বিজয়
এসেছিলো। এবার লড়াই শেষ। বিজয়ের পর মুসলমানরা প্রচুর গণীমতের মাল অর্জন করেন। রাসূল সা. ধীরে ধীরে নেকাব পরিহিত যুবকের কাছে এগিয়ে গেলেন। নিজ হাতে নেকাব সরালেন। চেহারা
দেখার পর রাসূলের চোঁখ যুগল অশ্রু সিক্ত হয়ে গেল। এ যুবকটি তো আর কেউ নয়, আমার অত্যন্ত প্রিয় সাঈদ সুলাইমি। রাসূলের দু’চোখের পানি টপটপ করে যমীনে পড়তে লাগলো। রাসূল সা. বললেন এই যুবকের বিয়ে ঠিকঠাক করে আমি কিছু দেরহাম দিয়ে বিয়ের খরচের জন্য
বাজারে পাঠিয়েছিলাম, আর সে বাজারে এসে ঘোষকের কাছে থেকে যুদ্ধের আহব্বান শুনে, বিয়ের পোশাকের পরিবর্তে যুদ্ধের পোষাক কিনে, যুদ্ধে এসে সশরীরে শরীক হয়ে, শাহাদতের অমিয় পেয়ালা
পান করলো। তারমত সৌভাগ্যবান যুবক আর কে হতে পারে! তখন রাসূল সা. অন্যান্য সাহাবীদের নিয়ে তার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করলেন। লাশ
নিয়ে দাফনের জন্য সবাই এগিয়ে চলছেন।
রাসূলও হেঁটে হেঁটে চলছেন সবার সঙ্গে। রাসূল সা. তাঁর জুতা খুলে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে হাঁটছেন। জানাযা সমাপ্ত। রাসূল সা. নিজ হাতে সাঈদ সুলাইমির লাশ কবরে রাখলেন। এখনও লাশ
কবরে ভালোভাবে রাখা হয়নি। প্রিয়নবী মুচকি হেঁসে কবর থেকে মাথা ওঠালেন। কিছু সময় পর আবারও মাথা ঝুকিয়ে লাশ ভাল করে কবরে রাখেন। লাশ দাফন শেষে সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলের কাছে জানতে চাইলেন- মুচকি হাসার
কারণ। প্রতি উত্তরে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন
সাঈদের জানাযার সাথে এতবেশি ফেরেশতা চলছিল যে, মাটিতে পা রাখার জন্য যমীনের একটু জায়গাও খালি ছিল না। অপরদিকে জান্নাত থেকে হুরের
কাফেলা নেমে এসেছিল তাকে স্বাগত জানাবার লক্ষ্যে। হুরের দলের একজন তার হাত প্রসারিত করে বলছিল, হে রাসূল! এ বরকে (জামাই) আমার কোলে তুলে দিন।
আর এ কারণেই আমি পায়ের জুতা খুলে আঙ্গুল দিয়ে হাটছিলাম এবং লাশ কবরে রেখে মুচকি হাসছিলাম। (সুবহানাল্লাহ)
এই হতদরিদ্র ও কুৎসিত যুবককে নিয়ে জান্নাতের হুররা তাদের হাতকে প্রসারিত করে দিল। আল্লাহর রাসূল এই যুবকের জন্য অশ্রুসিক্ত করলেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর সন্তুষ্ট, জান্নাতের হুরদের তার সেবায় নিয়োজিত
রাখলেন।এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ইসলামে সাদা-কালো উচুঁ-নিচু, ধনী-গরীব সকলেই সমান। সুশ্রী-কুশ্রী সব আল্লাহর সৃষ্টি। কুশ্রী ও দরিদ্র বলে কাউকে হেয় পতিপন্ন বা হিংসা করা
যাবে না। অসুন্দর বা গরীব হওয়ার কারণে কাউকে ঘৃণা করা যাবে না।
কারণ মানুষের আসল সৌন্দর্য হল তাঁর ‘নেক আমল’। যার আমল যত বেশি, যার ঈমান-আমল যত মজবুত সে মহান রবের কাছে ততই প্রিয়। হোক সে কুৎসিত, হোক না সে হতদরিদ্র; কিন্ত এতে কি আসেযায়! তার নেক আমলের মাধ্যমে তো
সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যাবে।
নেক আমল নিয়ে প্রতিযোগিতা জরুরি।
ধন- সম্পদ, অবয়বের সৌন্দর্য দিয়ে নয়। অর্থকড়ি ও সৌন্দর্য আছে বলেই লাফ দেয়া যাবে না। আহঙ্কার বা হিংসা করা যাবে না। কারণ অহঙ্কারই পতনের মূল। যার ভেতরে সামান্য অহঙ্কার থাকবে তার কোন আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। ঐগুলো তো সবই আল্লাহর দান। কাজেই এগুলোর জন্য আল্লাহর
কৃতজ্ঞতা আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য।
অল্প ক’দিনের জিন্দেগীর সুখ-শান্তি পেয়ে
অনন্তকালের জিন্দেগীর কথা ভুলে যাওয়া নিছক বোকামি বৈকি। দুনিয়ার আরাম-আয়েশ মাত্র ক’দিনের। হঠাৎ করে তা শেষ হয়ে যাবে। এর কোন গ্যারান্টি নেই। কাজেই দুনিয়া দুনিয়া বলে এর
পেছনে সময় নষ্ট করা বুদ্ধিমান মুমিনের কাজ নয়। বুদ্ধিমান মুমিন তারাই যারা আখেরাতের জন্য সঞ্চয় (প্রস্তুতি গ্রহণ) করে। বিয়ে- শাদী,ব্যবসা-বাণিজ্য সবক্ষেত্রেই ইসলামকে
প্রাধান্য দিতে হবে।
কালেক্টেড।
চাইলেন, হে যুবক! কেমন আছ? কি তোমার
পরিচয়? রাসূলের আদরমাখা কথায় যুবকের হৃদয়ে প্রাণ ফিরে এলো। যুবক নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে কাঁদতে শুরু করলো।
রাসূল সা. তাঁর এ অবস্থা দেখে তাকে শান্তনা দিয়ে কাছে টেনে নিলেন। তখন যুবক কেঁদে কেঁদে প্রশ্নের জবাব দেয়া শুরু করলো। হে আল্লাহর রাসূল! আমি বনু সুলাইম গোত্রের সাঈদ সুলাইমি।আমি খুব দরিদ্র। দেখতে কুৎসিত। চেহারায় বসন্তের দাগ ও গরীবের গঠনপ্রণালী অসুন্দরের
কারণে কেউ আমাকে পছন্দ করে না। আমার মন চায় রাসূলের সুন্নত (নিকাহ) সম্পাদন করতে।কিন্তু আমি হতদরিদ্রের কাছে কে দেবে তার আদরের দুলালীকে? আমাকে কোনো মেয়ের পিতা জামাতা হিসেবে মেনে নিবে কি? স্বামী হিসেবে কেউ
গ্রহণ করবে কি? এই কথাগুলো বলে যুবক আবারও কাঁদতে শুরু করলো। রাহমাতুল্লিল আলামিন যুবকের কথাগুলো এতক্ষণ খুব গুরুত্ব ও মনযোগসহকারে শুনছিলেন। এবার যুবককে জিজ্ঞাসা করলেন, হে যুবক! তোমার আর কিছু বলার আছে কি? তোমার কথা কি এখানে শেষ? তিনি হ্যাঁ সুচক জবাব দিলেন। তখন নবীয়ে রহমা
তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি কাউকে পছন্দ হয়েছে? তুমি কোন ধরনের মেয়েকে বিয়ে করতে চাও? যুবক বললো, আমার কোন পছন্দ নেই।তখন রাসূল সা. যুবককে বললেন, হে যুবক! এখনকার সময়ে মদীনার সবচেয়ে সুন্দর ও ধনবতী যুবতী কে? তিনি জবাব দিলেন তা তো আমার
জানা নেই। তখন রাসূল সা. বললেন, হে সাঈদ সুলাইমি! তুমি না জানলেও আমি জানি। আমর বিন ওয়হ্হাবই মদীনার মধ্যে সবচেয়ে বেশী সম্পদশালী এবং তাঁর
মেয়েই মদীনার সর্বাধিক সুন্দরী। হে সাইদ সুলাইম! তুমি আমরের বাড়িতে যাও। গিয়ে তাকে বলবে যে, আমি তাঁর মেয়েকে সাইদ সুলাইমির সঙ্গে বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে তোমাকে পাঠিয়েছি। এ কথা শুনে যুবক হতবাক। এটা কি করে সম্ভব! কুৎসিত
ও হতদরিদ্রের কাছে এত সম্পদশালী ও মদীনার সর্বাধিক সুন্দরী মেয়েকে তুলে দেয়া! কিছুক্ষণ নিরবতা ও ভাবনার পর যুবক ভাবলেন এটা তো আমার কথা নয়, বরং বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. মুখ নিঃসৃত কথা। রাসূলের নির্দেশকে কিভাবে
অমান্য করবো? তা হতেই পারে না। রাসূলের প্রস্তাব নিয়ে তিনি আমরের বাড়িতে উপস্থিত হলেন। বাড়ি থেকে আমর বেরিয়ে এসে সালাম কুশলাদী জিজ্ঞেস করলেন। পরিচয় পর্ব শেষে
সাইদ সুলাইমি কন্যার বাবার কাছে রাসূলের প্রস্তাব পেশ করলেন। সাইদ সুলাইমির প্রস্তাব শুনার পরই আমর ক্ষুব্ধ হয়ে তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। যুবক নিরাশ হয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মসজিদে নববীর পথ ধরলেন। এ দিকে ঘরের
ভেতর থেকে আমর বিন ওয়াহ্হাবের মেয়ে বাড়ির বাহিরে সাইদ সুলাইমি ও আমরের উচ্চস্বরের কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। সাইদ সুলাইমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমরের মেয়ে
তাঁর বাবাকে বললো, আব্বাজান! মনে হয় আপনি ভুল করে ফেলেছেন; কারণ এই দুনিয়াতো মাত্র ক’দিনের। এর সুখ-শান্তি ধনসম্পদ সাময়িক। এগুলো অস্থায়ি। সাময়িক সুখ-শান্তি, আনন্দের মোহে পড়ে পরকালীন চিরস্থায়ী জগতকে ভুলে গেলে
চলবে না। এগুলো আমাদেরকে পরকালে শান্তি দিবে না। সুখ-শান্তি পেতে হলে পরিপূর্ণ দ্বীন মানতে হবে। মনের ভেতরে সামান্য অহঙ্কার সারাজীবনের আমলকে ধ্বংস করে দেয়। ধনী- গরীব, সাদা-কালো এগুলোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ইসলামে সবাই সমান। সুন্দর অসুন্দর সব দয়াময় আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। আল্লাহ যাকে
ইচ্ছে ধনী বানান আবার যাকে ইচ্ছে ফকির বানান। কাজেই আল্লাহর ওপর ভরসা করে রাসূলের সেই প্রস্তাবকে আমি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিলাম।আল্লাহর রাসূল এই হতদরিদ্র ও কুৎসিত যুবককে পছন্দ করেছেন, আমি কেন তাকে অপছন্দ করবো। আমি মনেপ্রাণে গরীব ও কুৎসিত যুবককে আমার
স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। এছাড়া রাসূল সা. যাকে স্বয়ং মনোনীত করেছেন এবং আপনার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তাঁর প্রস্তাব কিভাবে আপনি ফিরিয়ে দিলেন? রাসূলের নির্দেশ ফিরিয়ে দেয়া মানেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করা।মেয়ে এপর্যন্ত বলে থেমে গেল। এবার তিনি হতাশ
হয়ে গেলেন। আর চিন্তা করতে লাগলেন আমি সাইদকে ফিরিয়ে দিয়েছি, রাসূলের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছি এটা আমার জন্য কল্যাণকর হয়নি। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। রাসূলের অন্তরে কষ্ট দিয়েছি। সাঈদ সুলাইমিও ব্যথিত হয়েছেন।
রাসূল আমাকে ক্ষমা করবেন তো? তাই তিনি কালবিলম্ব না করে রাসূলের দরবারে গিয়ে উপস্থিত। তিনি প্রথমেই নিজের অনাকাক্সিক্ষত ভুল স্বীকার করে এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। সাথে সাথে খুশির খবর (বিয়ের প্রস্তাব কবুল) এটাও সুস্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, আমার
মেয়ে সাইদ সুলাইমিকে স্বামী হিসেবে পছন্দ করেছে। তার পছন্দই আমার পছন্দ। এছাড়া আপনি যাকে পছন্দ করেছেন তা আমরা কীভাবে অপছন্দ করবো! কাজেই আমরা তাকে জামাতা হিসেবে মনেপ্রাণে মেনে নিতে আর কোন আপত্তি নেই। রাসূল সা. আমরের অনাকাক্সিক্ষত ভুল মার্জনা করে তার জন্য দোআ করলেন এবং এই
আনন্দের সংবাদ শুনে শোকরিয়া আদায় করত: আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠলেন।
সাইদ সুলাইমিও অপ্রত্যাশিত সংবাদ শুনে
শোকরিয়া আদায় করলেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে আখিযুগল সিক্ত হয়ে ওঠলো। (এই অশ্রু ছিল আনন্দের) তখন সাইদ সুলাইমীকে হযরত উসমান রা. কাছে ডেকে নিয়ে বললেন- সাইদ এই নাও এ থলি; এতে দুহাজার দিরহাম আছে। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন এদিরহাম তোমাকে দিতে। সাইদ দুহাজার দিরহাম নিয়ে রাসূলের দরবারে হাজির। রাসূলের সাথে সাক্ষাতের পর তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন যাও এ দিরহাম নিয়ে বাজারে গিয়ে
বিবাহের পোষাক বানাও। বিয়ের জন্য তৈরি হও। প্রয়োজনীয় খরচ কর। সাইদ সুলাইমি সুখময় জীবনের স্বপ্ন বুনতে বুনতে বাজার পথে চলছেন।
সেই কাক্সিক্ষত রাজরাণীর কল্পনা করতে করতে এগিয়ে চলছেন বাজারের দিকে। এভাবে দ্রুতই চলে আসলেন বাজারে। বাজারে মানুষের শোরগোল ও হৈহুল্লোড় তার কানে আটকাতে পারেনি ঘোষকের
ঘোষণা।হঠাৎ তার কানে আওয়াজ এলো কে যেন ঘোষণা করছে ‘আর রাহিল, আর রাহিল’ বলে। তখন সাইদ একটু সম্মুখপানে অগ্রসর হয়ে এক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলেন কী হয়েছে? জবাব এলো মদীনা মুনাওয়ারায় মক্কার কাফেররা
আক্রমণ করেছে। এখন প্রয়োজন এমুহুর্তে
রণপ্রস্তুতির। যুদ্ধের জন্য তৈরি হওয়ার।
জিহাদে শরীক হওয়ার। তখন সাইদ ভুলে গেলেন তাঁর বিয়ের কথা। তিনি বিয়ের পোষাকের পরিবর্তে এবার খুঁজতে লাগলেন ঘোড়া ও তলোয়ার। কারণ তিনি সিদ্ধান্ত বদল করে নিয়েছেন। দুহাজার দিরহাম দিয়ে ভালো একটি ঘোড়া ও ধারালো তলোয়ার ক্রয় করে সোজা গিয়ে যুদ্ধের ময়দানে হাজির। তখন যুদ্ধময়দানে
উভয়দলের সৈন্যবাহিনী লড়াইয়ের জন্য পূর্ণ পস্তুত। শুধু দলনেতাদের নির্দেশের অপেক্ষায়। মুসলিম সৈন্যবাহিনীর সামনে রাসূল সা. বক্তব্য রাখছেন। রাসূলের বক্তব্য চলাকালীন সময়ে ময়দানে সুনসান নিরবতা। প্রত্যেকেই একাগ্রতার
সাথে খুব মনযোগসহকারে রাসূলের গূরুত্বপূর্ণ বক্তব্য শুনছেন। বক্তব্যের শেষ মুহুর্তে, যুদ্ধের শুরুলগ্নে হঠাৎ সকলের দৃষ্টি পড়লো হিজাব পরিহিত এক সওয়ারির দিকে। উপস্থিত সৈন্যরা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালেন নেকাব পরিহিত সওয়ারির দিকে। তারা দেখলেন সওয়ারিটি মুসলিম
সৈন্যবাহিনীর দিকে এগিয়ে আসছে। এসেই উচ্চ স্বরে আল্লাহু আকবার ধ্বনি তুললো। মুসলিম সৈন্যবাহিনীরা তাঁর তাকবীরের জবাব দিলেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সওয়ারিটি কাফির বাহিনীর ওপর সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
তাঁর অতর্কিত হামলার প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিল না কাফের বাহিনী। তাঁর অতর্কিত আক্রমণের ফলে কাফের বাহিনীদের মাঝে প্রচন্ড ভয় ঢুকে গেল। এক হামলায় তিনি কাফের বাহিনীর অনেক সৈন্যদের চিরতরে দুনিয়া থেকে নিঃশেষ করে দিলেন। নেকাব পরিহিত যুবকটি ছিল একা। তাঁর
আক্রমণ প্রতিরোধ করতে এসে যখন অনেকে নিহত হল তখন কাফেরদের মাঝে প্রতিশোধের আগুণ দাউদাউ করে জ্বলে ওঠলো। কাফির বাহিনীর শক্তিশালী কয়েকজন সৈন্য তাঁর ওপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো। অনেক তীর এসে
যুবকটির শরীরে বিদ্ধ হল। কয়েকটি তীর তাঁর গায়ের একদিকে প্রবিষ্টহয়ে অপরদিকে বেরিয়ে গেল। ফলে যুবক রক্তক্ষরণ হয়ে যন্ত্রণায় যমীনে লুটিয়ে পড়লো। এ নির্মম দৃশ্য প্রত্যক্ষ্য করে মুসলিম সৈন্যরা নিজেদেরকে সংবরণ করতে না পেরে সবাই ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে শাহাদতের
দৃপ্ত শপথ নিয়ে কাফির বাহিনীর ওপর
সম্মিলিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রতিশোধের দৃপ্ত শপথ নিয়ে তারা কাফের বাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নেয়া শুরু করল। শাহাদতের চেতনায় উজ্জিবীত
হয়ে ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে লড়াই করার ফলে কাফির বাহিনীর সৈন্যরা পিছপা হতে লাগলো। এই যুদ্ধে কাফেরদের পরাজয় এবং মুসলমানদের বিজয়
এসেছিলো। এবার লড়াই শেষ। বিজয়ের পর মুসলমানরা প্রচুর গণীমতের মাল অর্জন করেন। রাসূল সা. ধীরে ধীরে নেকাব পরিহিত যুবকের কাছে এগিয়ে গেলেন। নিজ হাতে নেকাব সরালেন। চেহারা
দেখার পর রাসূলের চোঁখ যুগল অশ্রু সিক্ত হয়ে গেল। এ যুবকটি তো আর কেউ নয়, আমার অত্যন্ত প্রিয় সাঈদ সুলাইমি। রাসূলের দু’চোখের পানি টপটপ করে যমীনে পড়তে লাগলো। রাসূল সা. বললেন এই যুবকের বিয়ে ঠিকঠাক করে আমি কিছু দেরহাম দিয়ে বিয়ের খরচের জন্য
বাজারে পাঠিয়েছিলাম, আর সে বাজারে এসে ঘোষকের কাছে থেকে যুদ্ধের আহব্বান শুনে, বিয়ের পোশাকের পরিবর্তে যুদ্ধের পোষাক কিনে, যুদ্ধে এসে সশরীরে শরীক হয়ে, শাহাদতের অমিয় পেয়ালা
পান করলো। তারমত সৌভাগ্যবান যুবক আর কে হতে পারে! তখন রাসূল সা. অন্যান্য সাহাবীদের নিয়ে তার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করলেন। লাশ
নিয়ে দাফনের জন্য সবাই এগিয়ে চলছেন।
রাসূলও হেঁটে হেঁটে চলছেন সবার সঙ্গে। রাসূল সা. তাঁর জুতা খুলে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে হাঁটছেন। জানাযা সমাপ্ত। রাসূল সা. নিজ হাতে সাঈদ সুলাইমির লাশ কবরে রাখলেন। এখনও লাশ
কবরে ভালোভাবে রাখা হয়নি। প্রিয়নবী মুচকি হেঁসে কবর থেকে মাথা ওঠালেন। কিছু সময় পর আবারও মাথা ঝুকিয়ে লাশ ভাল করে কবরে রাখেন। লাশ দাফন শেষে সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলের কাছে জানতে চাইলেন- মুচকি হাসার
কারণ। প্রতি উত্তরে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন
সাঈদের জানাযার সাথে এতবেশি ফেরেশতা চলছিল যে, মাটিতে পা রাখার জন্য যমীনের একটু জায়গাও খালি ছিল না। অপরদিকে জান্নাত থেকে হুরের
কাফেলা নেমে এসেছিল তাকে স্বাগত জানাবার লক্ষ্যে। হুরের দলের একজন তার হাত প্রসারিত করে বলছিল, হে রাসূল! এ বরকে (জামাই) আমার কোলে তুলে দিন।
আর এ কারণেই আমি পায়ের জুতা খুলে আঙ্গুল দিয়ে হাটছিলাম এবং লাশ কবরে রেখে মুচকি হাসছিলাম। (সুবহানাল্লাহ)
এই হতদরিদ্র ও কুৎসিত যুবককে নিয়ে জান্নাতের হুররা তাদের হাতকে প্রসারিত করে দিল। আল্লাহর রাসূল এই যুবকের জন্য অশ্রুসিক্ত করলেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর সন্তুষ্ট, জান্নাতের হুরদের তার সেবায় নিয়োজিত
রাখলেন।এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ইসলামে সাদা-কালো উচুঁ-নিচু, ধনী-গরীব সকলেই সমান। সুশ্রী-কুশ্রী সব আল্লাহর সৃষ্টি। কুশ্রী ও দরিদ্র বলে কাউকে হেয় পতিপন্ন বা হিংসা করা
যাবে না। অসুন্দর বা গরীব হওয়ার কারণে কাউকে ঘৃণা করা যাবে না।
কারণ মানুষের আসল সৌন্দর্য হল তাঁর ‘নেক আমল’। যার আমল যত বেশি, যার ঈমান-আমল যত মজবুত সে মহান রবের কাছে ততই প্রিয়। হোক সে কুৎসিত, হোক না সে হতদরিদ্র; কিন্ত এতে কি আসেযায়! তার নেক আমলের মাধ্যমে তো
সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যাবে।
নেক আমল নিয়ে প্রতিযোগিতা জরুরি।
ধন- সম্পদ, অবয়বের সৌন্দর্য দিয়ে নয়। অর্থকড়ি ও সৌন্দর্য আছে বলেই লাফ দেয়া যাবে না। আহঙ্কার বা হিংসা করা যাবে না। কারণ অহঙ্কারই পতনের মূল। যার ভেতরে সামান্য অহঙ্কার থাকবে তার কোন আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। ঐগুলো তো সবই আল্লাহর দান। কাজেই এগুলোর জন্য আল্লাহর
কৃতজ্ঞতা আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য।
অল্প ক’দিনের জিন্দেগীর সুখ-শান্তি পেয়ে
অনন্তকালের জিন্দেগীর কথা ভুলে যাওয়া নিছক বোকামি বৈকি। দুনিয়ার আরাম-আয়েশ মাত্র ক’দিনের। হঠাৎ করে তা শেষ হয়ে যাবে। এর কোন গ্যারান্টি নেই। কাজেই দুনিয়া দুনিয়া বলে এর
পেছনে সময় নষ্ট করা বুদ্ধিমান মুমিনের কাজ নয়। বুদ্ধিমান মুমিন তারাই যারা আখেরাতের জন্য সঞ্চয় (প্রস্তুতি গ্রহণ) করে। বিয়ে- শাদী,ব্যবসা-বাণিজ্য সবক্ষেত্রেই ইসলামকে
প্রাধান্য দিতে হবে।
কালেক্টেড।
Comment