কিছু কথাঃ সাম্প্রতিক ঘটনা-শাহাদাহ-খারিজি-মধ্যপন্থা-ভ্রাতৃত্ব
আস-সালামু ‘আলাইকুম,
মুহ্*তারাম ভাইয়েরা,
আল্লাহ্*র জন্যই আপনাদেরকে ভালবাসি।
... কিছু বিশ্বাস-চিন্তা-মতামত-অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। আমাদের আনন্দ-দুঃখগুলো ভাগাভাগি করার জন্য আর কারা আছে বলুন? আল্লাহ্* ‘আয্*যা ওয়া জাল্* আমাদেরকে গেঁথে দিয়েছেন ঈমানের সূত্রে, কালিমাতুত্* তাওহীদের বন্ধনে। আল্*হাম্*দুলিল্লাহ... এ এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন; পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ জড় করলেও তা এই সম্পর্কের সমান দামি হবে না; সুব্*হানল্লাহ্*, এতো আর্*-রাহ্*মানের নিদর্শনগুলোরই অন্যতম।
আল্লাহ্* আয্*যা ওয়া জাল ঐসব ভাইবোনদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিন যারা আন্তরিক ভাবে শুধু মাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই কাজ করে গেছেন- যদিও তাদের কর্মপন্থার বিষয়ে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শরী’আহ্* এর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী; কারণ এ ভাবেই দ্বীনের স্বার্থকে অন্য সব কিছুর উপরে রাখা সম্ভব। গাফুরুর রহীম আল্লাহ্* তাদের সকল গুনাহ-খতা মা’আফ করে দিন। তারা আর্*রাহ্*মানের ‘আরশে ‘আযীমের নিচে সবুজ পাখি হয়ে উড়ছেন- এই হোক তাদের কাজের প্রতিদান। আমীন। সুম্মা আমীন।... কতই না উত্তম প্রতিদান!!
সেই সাথে এই দু’আ-
আল্লাহ্* আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টির উপর চলার তৌফিক দান করুন। বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি এড়িয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বনের জ্ঞান ও হিক্*মাহ্* দান করুন। মাল ও জান দিয়ে তাঁর রাস্তায় জিহাদে শরীক হবার তৌফিক দিন। আবেগ ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় করার তৌফিক দিন। যেহেতু যমীনে আল্লাহ্*র দ্বীনকে কায়েমের কাজ একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া, সুতরাং এর জন্য আমাদের পরিকল্পনাও হওয়া চাই দীর্ঘ মেয়াদী; তা না হলে হতাশ হয়ে যেতে হবে। আল্লাহ্*র কাছে আমাদের তামান্না থাকবে সর্বোচ্চ (শাহাদাহ্*) আর পদক্ষেপ হবে বাস্তবধর্মী। তাহলেই বোঝা যাবে যে আমরা দ্বীন কায়েমের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছি। এর ফলে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কাজের ভারসাম্য বজায় থাকবে। স্থান-কাল-পাত্র-পরিস্থিতি ভেদে ‘উলামা ও উমারাগণ যে দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন, প্রতিনিয়ত আমার কর্ম-পরিকল্পনা ও কর্মে তার পূর্ণ প্রতিফলন থাকবে। তাহলেই না আমি আমার যৌবনের এই দামি সময়কে, আমার মালকে, আমার জীবনকে আমার প্রিয় রবের সন্তুষ্টির পথে বিলিয়ে দিতে পারব ইন্*-শা-আল্লাহ্*।
যারা এই দুনিয়ার হিসেব চুকিয়ে ফেলেছেন, তাদের ‘আমলের খাতাতো বন্ধ হয়ে গেছে। আল্লাহ্*র কাছে তাদের জন্য মাগফিরাত চাইতে থাকা ছাড়া আমাদের আর কী-ই বা করার আছে... আমাদের যাদের খাতা এখনও খোলা আছে- আল্লাহ্* সুব্*হানাহু তা’আলা যেন তাদের সবাইকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সীরাতুল মুস্তাকীমের উপর অটল রাখেন। আমীন... ভাইয়েরা, জীন ও মানুষ শয়তানদের চক্রান্ত তো বহুমুখী এবং অব্যাহত। আমরা যদি সেই অনুপাতে আল্লাহ্*র রাস্তায় নিজেদেরকে অটল রাখার জন্য চেষ্টা সাধনা না করি, নিজ নিজ সাধ্য মত আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদে শরীক না থাকি- শয়তান আমাদেরকে গোমরাহ্* করবে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। আমরা এমন মানুষদের কথা জানি- যারা প্রথমে অনেক আল্লাহ্* ওয়ালা ছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্য- পরবর্তীতে তারা শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে জাহান্নামী হয়েছে- আল্লাহ্* আমদের হিফাযত করুন। খোদ ইব্*লীসের পরিণতিও আমাদের জন্য অনেক বড় শিক্ষা। সে ছিল ফেরেশতাদের নেতা...
আমরা যেন এই বিষয়গুলি না ভুলি-
১। আমরা কালিমাতুত্*-তাওহীদে ঈমান এনেছি। এ সেই কালিমা যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্*র একত্বের সাক্ষ্য দেই। দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁরই একচ্ছত্র আধিপত্যকে স্বীকার করে নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর প্রেরিত সর্বশেষ রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করি।
২। এই কালিমার স্বীকৃতি যে দেয়- সে আমার ভাই। তার সাথে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারব না, তার অমঙ্গল চাইতে পারবো না- তার মধ্যে যত দোষই থাকা। তাকে হিক্*মাহ ও ধৈর্য্যের সাথে সংশোধনের চেষ্টা করব। যদি তার দ্বারা ক্ষতির আশংকা থাকে, তার থেকে সাবধানে থাকব, আল্লাহ্*র কাছে সাহায্য চাইব। কিন্তু তাকে কি কখনো শত্রুর হাতে সোপর্দ করব? না তা আমি করতে পারি না। এটা আমাদের আকাবির ‘উলামায়ে কেরামগণের শিক্ষা নয়। মুস্*লিম উম্মাহ্*র ঐক্য ধরে রাখা ফরয্* আর তা আল্লাহ্*র পবিত্র দ্বীনের স্বার্থে এখন সময়ের দাবি। আমাদের দুর্বলতা যেন কুফ্*ফারদের জন্য সুযোগ না হয়। এই বিষয়ে দায়িত্ব পালন ও সতর্ক হবার বিষয়ে যদি আমরা গাফিলতি করি- তাহলে আমদের জানা উচিত যে আল্লাহ্* ‘আয্*যা ওয়া জাল তাঁর দ্বীনকে বিজয় দানের জন্যে আমাদের খিদ্*মতের মুহতাজ নন। রব্বুল ‘আলামীন তাঁর অন্য বান্দাদেরকে সুযোগ দিবেন, যদি আমরা গাফিলতি করি। আমরা মাহ্*রুম হব। সুতরাং এখনই সময় ফুরুঈ (শাখাগত) ও ইখতিলাফি (মতানৈক্যপূর্ণ) বিষয়কে পিছনে রেখে কালিমাতুত-তাওহীদের উসিলায় নিজের ভাইয়ের সাথে বুক মিলানোর। আমি রাফ’উল ইয়াদাইন করা-না করার প্রশ্নে আমার ভাইয়ের সাথে তর্কে লিপ্ত হই; অথচ কেন এই উসিলায় কিছু ভাল কথা বলতে পারি না যে আমরা তো এক আল্লাহ্*র সামনে রুকু’-সিজদাহ করি?? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরকতময় এই উম্মাহ্*র প্রত্যেক মুস্*লিম বিবেকের কাছে এই প্রশ্ন আজ উত্তরের অপেক্ষয় কড়া নাড়ছে। কবে আমাদের ঘুম ভাংবে? আল্লাহ্* আমাদের হৃদয়গুলিকে এক করে দিন। আমীন...
৩। আল্লাহ্* বলেছেন পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করতে। আমাদের সামনে আজ সুবর্ণ সুযোগ। এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, যখন হিদায়তের দরজাকে খুলে দেয়া হয়েছে। হাসানাহ অর্জন করে নেয়াকে সহজ করে দেয়া হয়েছে। মুস্*লিম উম্মাহ্*র জান-মাল-ঈয্*যাত এখন বিপন্ন। দ্বীনের শত্রুরা একজোট হয়েছে; সত্য দ্বীনের নাম-নিশানা যমীন থেকে মিটিয়ে দিতে তারা কোন প্রচেষ্টা থেকেই খালি থাকছে না। তাহলে সত্যের সৈনিকদের প্রচেষ্টা ও ধৈর্য্যের দৃষ্টান্ত কেমন হওয়া উচিত? হ্যাঁ, আমার ভাইয়েরা! দুই দিক থেকেই আমাদেরকে পরিচয় দিতে হবে সবচেয়ে অনুপম প্রচেষ্টা ও ধৈর্য্যের- মু’মিনদের প্রতি কোমল হবার ক্ষেত্রে এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর হবার ক্ষেত্রে। আল্লাহু আকবার! আমরা কি ভুলে যাব আল্লাহ্* আমাদের কাছে কি চান? আমরা কি নিজেদের খেয়াল খুশি মতই চলতে থাকবো? আমরা কীভাবে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি যখন এমন একটা দিন আমাদেরকে আমাদের রবের সামনে দাঁড়তে হবে যেই দিনটিকে স্বয়ং আমাদের রব ভয়াবহ একটি দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন?
৪। কিতাবুল্লাহ্*, আল্লাহ্*র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ্* আর হকপন্থী ‘উলামা ও উমারাদের দিক-নির্দেশনা হোক আমাদের জীবন চলার পাথেয়। যারা নিজেদেরকে নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফতের বাস্তবায়নকারী দাবি করে, তারা “নবুয়্যাতের আদল” কথাটি সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান রাখে? নিজের মু’মিন ভাইদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করা আর তাকফির করে তাদেরকে হত্যা কি নবুয়্যাতের মান্*হাজ? মু’মিনের রক্ত কি এতই সস্তা? খিলাফত ও ইমারত এর পার্থক্য কি এই মোটা-বুদ্ধি, বিকৃত-মস্তিষ্ক খারিজিরা বোঝে?... না! তারা তা বোঝে না। তাদের ক্ষতি থেকে আল্লাহ্* আমাদেরকে হিফাযত করুন; সেই সাথে হিদায়াত বৃদ্ধি করে দিন ঐ সকল আন্তরিক ভাইদের যারা তাদের হয়ে কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য আল্লাহ্*র সন্তুষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়; আল্লাহু মুস্তা’আন ওয়াল হাম্*দুলিল্লাহ্*!...
আমাদের শেষ কথা হোক- যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্*র জন্য।
Comment