নবীদের ভূমি আপনার অপেক্ষায় রয়েছে...
মুসলিমদের হৃদয়ে সিরিয়ার জন্য একটি বিশেষ স্থান রয়েছে, আর কেন-ই বা থাকবে না যখন স্বয়ং আল্লাহ এই ভূমিকে এমন সমস্ত গুনে গুণান্বিত করেছেন এবং এমন উঁচু মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন, যা অন্য কোন ভূমিকে করেন নি। সিরিয়ার অতীত ইতিহাস এই ইলাহি ফয়সালার স্বাক্ষর বহন করে। আমাদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও করবে। সিরিয়ার ফযীলত বর্ণনা করে ও সেখানে বসবাস করার উৎসাহ প্রদান করে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিরিয়ার জন্য বিশেষ বরকতের দু’আ করেছেন। সিরিয়া এমন এক ভূমি যা হাজারো নবীর পদস্পর্শে ধন্য হয়েছে। এটা সেই ভূমি যেখানে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি’রাজের রাত্রিতে সফর করেছিলেন। আর কিয়ামতের পূর্বে এখানেই মুমিনদের সেনাবাহিনীর হেড-কোয়ার্টার অবস্থিত হবে। সমস্ত উম্মাহ যখন ফিতনায় আক্রান্ত থাকে, তখনও সিরিয়ার ভূমি ঈমানের সতেজতায় সজীব থাকে।
কিয়ামতের পূর্বে এখানেই মুসলিমীন ও কুফফারদের ভয়াবহ কিছু যুদ্ধ সংঘটিত হবে। আর সত্য ও মিথ্যার সর্বশেষ লড়াইয়ের ফয়সালাও এখানেই হবে। মহাযুদ্ধের (মালহামা) সময় সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ‘গুতা’ শহরে মুসলিমরা অবস্থান নিবে। সিরিয়ার পবিত্র ভূমিতেই ইমাম মাহদীর সেনাবাহিনী রোমানদের (ইউরোপিয়ান/পশ্চিমা বাহিনী) মোকাবেলা করার জন্য একত্রিত হবে, আর হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এই সিরিয়ারই দামেস্ক শহরের সাদা মিনারে আসমান থেকে অবতরণ করবেন। এখানে মুসলিম বাহিনী দাজ্জালের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং অবশেষে ঈসা( আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন। কিয়ামতের পূর্বে এই সিরিয়া থেকেই মুসলমানদের রূহ কবয করা হবে। এমনকি হাদীসে এ-ও বর্ণিত হয়েছে, শেষ বিচারের দিন সিরিয়ার ভূমিতেই হাশরের ময়দান কায়েম হবে।
তবে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে তা হল- এই উম্মাহর বিজয়ী দল (ত্বাইফাতুল মানসুরাহ) কিয়ামত এসে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সিরিয়াতেই অবস্থান করবে। কোন বিশ্বাসঘাতকের বিশ্বাসঘাতকতা কিংবা শত্রুর শত্রুতা যে দলের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
ইসলামের ইতিহাসে সিরিয়া দীনের দুশমনদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জিহাদে অসাধারণ কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে। ক্রুসেডারদের আক্রমণের সময়, এমনকি পরবর্তীতে তাতারদের আক্রমণের সময়ও সিরিয়ার ভূমি অভেদ্য দুর্গ হিসেবে দণ্ডায়মান ছিল। আজকেও সিরিয়াতে যে অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে, কৌশলগত কারণে তা অসামান্য তাৎপর্য বহন করে। কারণ সিরিয়া ইহুদী রাষ্ট্র ইজরায়েলের একেবারে পাশ ঘেঁষে অবস্থিত। যেই অবৈধ রাষ্ট্রটি সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আরবের দালাল শাসকদের সরাসরি মদদে টিকে আছে।
উম্মাহর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক রক্তপাত, বরং সমগ্র মানব ইতিহাসেরই সবচেয়ে বীভৎস রক্তপাতের পর আজকে সিরিয়াতে এমন একটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে যার সুদূর প্রসারী প্রভাব সমস্ত চেনা-জানা পট পরিস্থিতিকে পালটে দিতে সক্ষম। আর এমনটা হওয়া আল্লাহরই ইচ্ছা ছিল। বিশ্বের তাবৎ ‘শক্তিধর’রা বহু আগেই সিরিয়ার নাজুক পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ফেলেছে। আর তাই, তারা আজ পাল্লা দিয়ে এই অঞ্চলে নিজ স্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একের পর এক কূট-কৌশল ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা এই পুণ্যময় ভূমিকে ঘায়েল করে যাচ্ছে। ইজরায়েল ও ইরানের প্রতি হুমকি হয়ে যাওয়ার কারণে তারা সিরিয়ার যুদ্ধে বাগড়া দিয়েছে। তাই আমরা দেখছি আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে, আর যায়োনিস্ট রাষ্ট্রটিকে রক্ষা করতে তারা সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করছে।
সিআইএ’র সাবেক ডিরেক্টর কিছুদিন আগেই বলেছে, আসাদকে টিকিয়ে রাখতে পারাটাই এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল। তার উক্তিতে,
“সম্ভাব্য ফলাফলগুলোর দিকে তাকিয়ে আমাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই বলে ইতি টানতে হচ্ছে যে- আসাদের ক্ষমতায় টিকে থাকাটা মোটেও খারাপ কিছু নয়... পরিস্থিতি এতই জটিল ও অন্ধকারাচ্ছন্ন যা কি-না মাসের পর মাস ও বছরের পর বছর ধরে এই অঞ্চলে আমাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাকে বলতে হচ্ছে, আসাদের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার চাইতেও জঘন্য কিছু ঘটতে পারে।”
অন্য দিকে, সিরিয়া এখনো আমাদের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে যার প্রয়োজন , এই যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই ছিল। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, গ্লোবাল জিহাদের ( আল-কায়দা নেতৃত্বাধীন ) বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলমান ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিতে চাইলে সিরিয়ার জিহাদকে সাপোর্ট করা অতীব প্রয়োজন।
আর এটাও আল্লাহর ইচ্ছা ছিল যে, সিরিয়াতে চলমান দ্বন্দ্ব সত্যিকারের পরিস্থিতিকে আমাদের সামনে তুলে ধরবে এবং আর শত্রুরা গোপনে গোপনে আমাদের বিরুদ্ধে কী জঘন্য ষড়যন্ত্র করেছে তা দিবালোকের মত পরিষ্কার করে দিবে।
প্রথমত, সিরিয়ার যুদ্ধ শিয়া রাফেযীদের প্রকৃত চেহারা উম্মাহর সামনে উন্মোচন করে ফেলেছে, এবং ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি তাদের সীমাহীন বিদ্বেষ প্রকাশ করে দিয়েছে। উম্মাহকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ পর্যন্ত তারা যত ফাঁকা বুলি ছেড়েছে, সিরিয়ার যুদ্ধ তার সবগুলোর অসাড়তা প্রমাণ করে দিয়েছে, তাদের লুকিয়ে রাখা সমস্ত মুনাফিকী সবার সামনে ফাঁস করে দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সিরিয়ার দ্বন্দ্ব এ-ও প্রমাণ করেছে যে, ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে শত্রুতার বেলায় সমস্ত কুফফাররা একক জাতির ন্যায় জোটবদ্ধ। মুসলিমদের ব্যাপারে পূর্ব-পশ্চিমের সকল কাফির তাদের অবস্থান এতটুকুও বদলায় নি। ইরাক, সোমালিয়া, চেচনিয়া, পূর্ব তুর্কিস্তান, মালিতে যারা মুসলিমদের জবাই করেছে, তারা সিরিয়ার মুসলিমদের সাথেও ঠিক একই আচরণ করছে। পৃথিবীর যেকোনো স্থানের মুসলিমদের সাথে তারা অভিন্ন আচরণই করবে। প্রকাশ থাকে- সারা বিশ্বের সমস্ত মুসলিমদের সাথে তারা ভবিষ্যতে এই আচরণই করবে।
আজকে যখন আমরা সেই দাসত্বের শিকল ভেঙে মুক্ত হতে চাচ্ছি যা এই উম্মাহকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে, আমরা আবিষ্কার করি- এই শৃঙ্খল মুক্তি সিরিয়াতে আমাদের বিরুদ্ধে করা সমস্ত চক্রান্তের মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এত বড় ঐতিহাসিক ও পট পরিবর্তনকারী ইস্যুতেও উম্মাহ নির্বিকার। কিভাবে শত্রুর অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সম্ভব, যখন সমস্ত উম্মাহর মধ্য কেবল ছোট্ট একটি অংশ এই ইস্যুতে বিচলিত হয়? সারা মুসলিম জাহান আসাদ বাহিনীর তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের হাতে একের পর এক অভূতপূর্ব নির্বিচার গণহত্যার সাক্ষী হয়েছে। সিরিয়াতে আমাদের ভাই-বোনেরা বড় আশা নিয়ে উম্মাহর দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহ যে সামান্য প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সত্যিই সেটা তাদের ভাই ও বোনদের প্রতি সুবিচার হয় নি। পুরো বিশ্ব, আমি এই অঞ্চলে যাদের স্বার্থ নিহিত আছে তাদেরকে নিয়েই বলছি, আসাদের সরকারকে দীর্ঘস্থায়ী করার ব্যাপারে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। যেন সিরিয়ার মুসলিমরা রক্ত ঝরাতে ঝরাতে এক কষ্টদায়ক নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। কেন কোটি কোটি সদস্যের এই উম্মাহ এখনও সিরিয়ান যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না?
সিরিয়ার যুদ্ধের ফলাফল যে কতটা সুদূরপ্রসারী, কেন সেটা তারা এখনো বুঝতে পারছে না?
এই সবকিছু বলার পরেও আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই উম্মাহর মাঝ থেকে কল্যাণ ও হিতকামনা কখনো শেষ হয়ে যাবে না, বরং চিরকাল বাকি থাকবে, এবং সিরিয়ার বরকতময় ভূমিও স্বীয় ফযীলতসহ স্থায়ীভাবে টিকে থাকবে। ইনশাআল্লাহ! মুজাহিদগণ আল্লাহর ইচ্ছায় অবশ্যই সিরিয়ার অত্যাচারিত মুসলিমদের রক্ষা করতে সফল হবেন, আল্লাহর দীনকে বিজয় এনে দিবেন, এবং পরিশেষে আল আকসাকে মুক্ত করে তবেই ক্ষান্ত হবেন।
আমরা দৃঢ় আশা রাখি, মুজাহিদগণ শরীয়াহর শাসনকে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাবেন, কুফরের আধিপত্যের অবসান ঘটাবেন, এবং শত্রুর সমস্ত চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, সিরিয়ার মুজাহিদদের আমাদের নৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি আমাদের বস্তুগত সমর্থনেরও তীব্র প্রয়োজন রয়েছে। সহজ ভাষায় বললে- আমরা বিশ্বাস করি উম্মাহর বর্তমান জ্বলন্ত পরিস্থিতিতে, প্রতিটি মুসলিমের কাঁধে অত্যন্ত ভারী দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু, যদি কেবল সিরিয়ার যুদ্ধের কথাই বিবেচনায় আনা হয়, যা এই যুগের সবচেয়ে সংকটপূর্ণ ইস্যু। আমাদের দায়িত্বের ভার অত্যন্ত গুরুতর হয়ে যায়। এখানে আমি সিরিয়ান ইস্যুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যেগুলো সম্পন্ন করতে প্রত্যেক মুসলিমের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
•সিরিয়া সহ সারা বিশ্বের সমস্ত নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য দু'আ করা, এবং বিশেষ করে মুজাহিদদের জন্য দু’আ করা যারা এই দীনের খাতিরে লড়ে যাচ্ছে । এ ব্যাপারে কারো কোনও অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ আল্লাহকে ডাকতে কারো কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।
•অর্থের মাধ্যমে সিরিয়ার জিহাদকে সাহায্য করা, কারণ অর্থব্যয়ই জিহাদের প্রাণশক্তি। আর এটি ছাড়া জিহাদ পরিচালনা করা আদৌ সম্ভব নয়।
•সশরীরে এই জিহাদে অংশগ্রহণ করা, যা ইসলামের জন্য ত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত, এবং যা একজন মুমিনের ঈমান ও ঈমানের দাবীর প্রতি সত্যবাদিতার অগ্নিপরীক্ষা। আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করার দ্বারাই আল্লাহর নিকট সর্বোচ্চ মর্যাদা অর্জন করা, এবং জান্নাতে চিরকালের অনাবিল সুখ লাভ করা সম্ভব।
•কথার মাধ্যমে জিহাদে অংশ নেয়া, মুসলিমদেরকে স্বীয় দীনের হিফাযত করার লক্ষ্যে সিরিয়ার জিহাদে সম্ভাব্য সকল উপায়ে সর্বাত্মকভাবে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করা।
•মুজাহিদদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে, এবং তাদের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করা।
•কোন্দল রত দলগুলোকে কুরআন ও সুন্নাহর ফয়সালা মেনে নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
নিশ্চয়ই প্রত্যেক মুসলিমকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে যে- সে এই দীনের সাহায্যের জন্য কী সাহায্য করেছে, এবং সিরিয়া ও অন্যান্য জায়গার অত্যাচারিত মুসলিমদের সাহায্য করতে কী প্রচেষ্টা ব্যয় করেছে। যারা এদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে দুনিয়াবি ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে আছে, কিংবা মুনাফিক শাসকদের বেতন ভুক্ত দরবারী আলেমদের কথা শুনে নির্বিকার হয়ে আছে, কিংবা আরামের ঘরে বসে থেকে নিজ আরাম আয়েশের জন্য জিহাদ ও মুজাহিদদের বিরোধিতা করে যাচ্ছে তারা শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে কোন জবাব দিতে পারবে না। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হচ্ছে তাদের, যারা উম্মাহর এই ক্রান্তি লগ্নে জিহাদে অংশগ্রহণ না করে উম্মাহর প্রতি নৈতিক বাধ্যবাধকতা পালনে ব্যর্থ হয়ে চরম হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু এতেও ক্ষান্ত না হয়ে উল্টো জিহাদ ও মুজাহিদদের বিরোধিতায় সচেষ্ট হওয়ার মত জঘন্যতম অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করা উচিৎ, এবং আল্লাহর কাছে জবাব দেয়ার আগে নিজের কাছেই জবাবদিহিতা করে নিজ নিজ অবস্থা ও পরিণতি যাচাই করা উচিৎ।
পরিশেষে, আমি আপনাদের প্রত্যেককে নবীদের ভূমির দিকে রওয়ানা হওয়ার জন্য আহ্বান করছি, সাথে সাথে উৎসাহও দিচ্ছি। যে ভূমির ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন-তিন বার বলেছেন, “সিরিয়ার জন্য সুসংবাদ!” সাহাবীরা তখন জিজ্ঞেস করেছিল, “কেন? ইয়া রাসুলাল্লাহ!” আল্লাহর রাসুল উত্তর দিয়েছিলেন, “কারণ আল্লাহর ফেরেশতারা সিরিয়ার উপর নিজদের ডানা বিছিয়ে রেখেছেন।” তারপর তিনি বলেছিলেন, ইয়েমেনে একটি বাহিনী থাকবে, সিরিয়াতে একটি বাহিনী থাকবে, আর ইরাকেও একটি বাহিনী থাকবে। কিন্তু সিরিয়ার বাহিনীতে যোগ দেয়াটাই রাসুলুল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ছিল। তিনি বলেছিলেন, “সিরিয়া আল্লাহর যমীনের সর্বোৎকৃষ্ট ভূমি যেখানে আল্লাহ তাঁর সর্বোৎকৃষ্ট বান্দাদেরকেই নিয়ে আসবেন!”
সুতরাং, আল্লাহর যমীনের সর্বোৎকৃষ্ট ভূমির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান! যেন আপনিও আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট বান্দাদের একজন হতে পারেন!
আল্লাহ তাঁর নবীর উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।
ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লাম।।
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ বিন মাহমুদ বাহতীতী (আবু দুজানা আল-পাশা) হাফিযাহুল্লাহ
অনুবাদঃ সংগৃহীত
মুসলিমদের হৃদয়ে সিরিয়ার জন্য একটি বিশেষ স্থান রয়েছে, আর কেন-ই বা থাকবে না যখন স্বয়ং আল্লাহ এই ভূমিকে এমন সমস্ত গুনে গুণান্বিত করেছেন এবং এমন উঁচু মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন, যা অন্য কোন ভূমিকে করেন নি। সিরিয়ার অতীত ইতিহাস এই ইলাহি ফয়সালার স্বাক্ষর বহন করে। আমাদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও করবে। সিরিয়ার ফযীলত বর্ণনা করে ও সেখানে বসবাস করার উৎসাহ প্রদান করে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিরিয়ার জন্য বিশেষ বরকতের দু’আ করেছেন। সিরিয়া এমন এক ভূমি যা হাজারো নবীর পদস্পর্শে ধন্য হয়েছে। এটা সেই ভূমি যেখানে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি’রাজের রাত্রিতে সফর করেছিলেন। আর কিয়ামতের পূর্বে এখানেই মুমিনদের সেনাবাহিনীর হেড-কোয়ার্টার অবস্থিত হবে। সমস্ত উম্মাহ যখন ফিতনায় আক্রান্ত থাকে, তখনও সিরিয়ার ভূমি ঈমানের সতেজতায় সজীব থাকে।
কিয়ামতের পূর্বে এখানেই মুসলিমীন ও কুফফারদের ভয়াবহ কিছু যুদ্ধ সংঘটিত হবে। আর সত্য ও মিথ্যার সর্বশেষ লড়াইয়ের ফয়সালাও এখানেই হবে। মহাযুদ্ধের (মালহামা) সময় সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ‘গুতা’ শহরে মুসলিমরা অবস্থান নিবে। সিরিয়ার পবিত্র ভূমিতেই ইমাম মাহদীর সেনাবাহিনী রোমানদের (ইউরোপিয়ান/পশ্চিমা বাহিনী) মোকাবেলা করার জন্য একত্রিত হবে, আর হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এই সিরিয়ারই দামেস্ক শহরের সাদা মিনারে আসমান থেকে অবতরণ করবেন। এখানে মুসলিম বাহিনী দাজ্জালের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং অবশেষে ঈসা( আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন। কিয়ামতের পূর্বে এই সিরিয়া থেকেই মুসলমানদের রূহ কবয করা হবে। এমনকি হাদীসে এ-ও বর্ণিত হয়েছে, শেষ বিচারের দিন সিরিয়ার ভূমিতেই হাশরের ময়দান কায়েম হবে।
তবে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে তা হল- এই উম্মাহর বিজয়ী দল (ত্বাইফাতুল মানসুরাহ) কিয়ামত এসে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সিরিয়াতেই অবস্থান করবে। কোন বিশ্বাসঘাতকের বিশ্বাসঘাতকতা কিংবা শত্রুর শত্রুতা যে দলের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
ইসলামের ইতিহাসে সিরিয়া দীনের দুশমনদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জিহাদে অসাধারণ কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে। ক্রুসেডারদের আক্রমণের সময়, এমনকি পরবর্তীতে তাতারদের আক্রমণের সময়ও সিরিয়ার ভূমি অভেদ্য দুর্গ হিসেবে দণ্ডায়মান ছিল। আজকেও সিরিয়াতে যে অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে, কৌশলগত কারণে তা অসামান্য তাৎপর্য বহন করে। কারণ সিরিয়া ইহুদী রাষ্ট্র ইজরায়েলের একেবারে পাশ ঘেঁষে অবস্থিত। যেই অবৈধ রাষ্ট্রটি সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আরবের দালাল শাসকদের সরাসরি মদদে টিকে আছে।
উম্মাহর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক রক্তপাত, বরং সমগ্র মানব ইতিহাসেরই সবচেয়ে বীভৎস রক্তপাতের পর আজকে সিরিয়াতে এমন একটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে যার সুদূর প্রসারী প্রভাব সমস্ত চেনা-জানা পট পরিস্থিতিকে পালটে দিতে সক্ষম। আর এমনটা হওয়া আল্লাহরই ইচ্ছা ছিল। বিশ্বের তাবৎ ‘শক্তিধর’রা বহু আগেই সিরিয়ার নাজুক পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ফেলেছে। আর তাই, তারা আজ পাল্লা দিয়ে এই অঞ্চলে নিজ স্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একের পর এক কূট-কৌশল ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা এই পুণ্যময় ভূমিকে ঘায়েল করে যাচ্ছে। ইজরায়েল ও ইরানের প্রতি হুমকি হয়ে যাওয়ার কারণে তারা সিরিয়ার যুদ্ধে বাগড়া দিয়েছে। তাই আমরা দেখছি আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে, আর যায়োনিস্ট রাষ্ট্রটিকে রক্ষা করতে তারা সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করছে।
সিআইএ’র সাবেক ডিরেক্টর কিছুদিন আগেই বলেছে, আসাদকে টিকিয়ে রাখতে পারাটাই এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল। তার উক্তিতে,
“সম্ভাব্য ফলাফলগুলোর দিকে তাকিয়ে আমাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই বলে ইতি টানতে হচ্ছে যে- আসাদের ক্ষমতায় টিকে থাকাটা মোটেও খারাপ কিছু নয়... পরিস্থিতি এতই জটিল ও অন্ধকারাচ্ছন্ন যা কি-না মাসের পর মাস ও বছরের পর বছর ধরে এই অঞ্চলে আমাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাকে বলতে হচ্ছে, আসাদের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার চাইতেও জঘন্য কিছু ঘটতে পারে।”
অন্য দিকে, সিরিয়া এখনো আমাদের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে যার প্রয়োজন , এই যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই ছিল। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, গ্লোবাল জিহাদের ( আল-কায়দা নেতৃত্বাধীন ) বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলমান ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিতে চাইলে সিরিয়ার জিহাদকে সাপোর্ট করা অতীব প্রয়োজন।
আর এটাও আল্লাহর ইচ্ছা ছিল যে, সিরিয়াতে চলমান দ্বন্দ্ব সত্যিকারের পরিস্থিতিকে আমাদের সামনে তুলে ধরবে এবং আর শত্রুরা গোপনে গোপনে আমাদের বিরুদ্ধে কী জঘন্য ষড়যন্ত্র করেছে তা দিবালোকের মত পরিষ্কার করে দিবে।
প্রথমত, সিরিয়ার যুদ্ধ শিয়া রাফেযীদের প্রকৃত চেহারা উম্মাহর সামনে উন্মোচন করে ফেলেছে, এবং ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি তাদের সীমাহীন বিদ্বেষ প্রকাশ করে দিয়েছে। উম্মাহকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ পর্যন্ত তারা যত ফাঁকা বুলি ছেড়েছে, সিরিয়ার যুদ্ধ তার সবগুলোর অসাড়তা প্রমাণ করে দিয়েছে, তাদের লুকিয়ে রাখা সমস্ত মুনাফিকী সবার সামনে ফাঁস করে দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সিরিয়ার দ্বন্দ্ব এ-ও প্রমাণ করেছে যে, ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে শত্রুতার বেলায় সমস্ত কুফফাররা একক জাতির ন্যায় জোটবদ্ধ। মুসলিমদের ব্যাপারে পূর্ব-পশ্চিমের সকল কাফির তাদের অবস্থান এতটুকুও বদলায় নি। ইরাক, সোমালিয়া, চেচনিয়া, পূর্ব তুর্কিস্তান, মালিতে যারা মুসলিমদের জবাই করেছে, তারা সিরিয়ার মুসলিমদের সাথেও ঠিক একই আচরণ করছে। পৃথিবীর যেকোনো স্থানের মুসলিমদের সাথে তারা অভিন্ন আচরণই করবে। প্রকাশ থাকে- সারা বিশ্বের সমস্ত মুসলিমদের সাথে তারা ভবিষ্যতে এই আচরণই করবে।
আজকে যখন আমরা সেই দাসত্বের শিকল ভেঙে মুক্ত হতে চাচ্ছি যা এই উম্মাহকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে, আমরা আবিষ্কার করি- এই শৃঙ্খল মুক্তি সিরিয়াতে আমাদের বিরুদ্ধে করা সমস্ত চক্রান্তের মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এত বড় ঐতিহাসিক ও পট পরিবর্তনকারী ইস্যুতেও উম্মাহ নির্বিকার। কিভাবে শত্রুর অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সম্ভব, যখন সমস্ত উম্মাহর মধ্য কেবল ছোট্ট একটি অংশ এই ইস্যুতে বিচলিত হয়? সারা মুসলিম জাহান আসাদ বাহিনীর তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের হাতে একের পর এক অভূতপূর্ব নির্বিচার গণহত্যার সাক্ষী হয়েছে। সিরিয়াতে আমাদের ভাই-বোনেরা বড় আশা নিয়ে উম্মাহর দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহ যে সামান্য প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সত্যিই সেটা তাদের ভাই ও বোনদের প্রতি সুবিচার হয় নি। পুরো বিশ্ব, আমি এই অঞ্চলে যাদের স্বার্থ নিহিত আছে তাদেরকে নিয়েই বলছি, আসাদের সরকারকে দীর্ঘস্থায়ী করার ব্যাপারে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। যেন সিরিয়ার মুসলিমরা রক্ত ঝরাতে ঝরাতে এক কষ্টদায়ক নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। কেন কোটি কোটি সদস্যের এই উম্মাহ এখনও সিরিয়ান যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না?
সিরিয়ার যুদ্ধের ফলাফল যে কতটা সুদূরপ্রসারী, কেন সেটা তারা এখনো বুঝতে পারছে না?
এই সবকিছু বলার পরেও আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই উম্মাহর মাঝ থেকে কল্যাণ ও হিতকামনা কখনো শেষ হয়ে যাবে না, বরং চিরকাল বাকি থাকবে, এবং সিরিয়ার বরকতময় ভূমিও স্বীয় ফযীলতসহ স্থায়ীভাবে টিকে থাকবে। ইনশাআল্লাহ! মুজাহিদগণ আল্লাহর ইচ্ছায় অবশ্যই সিরিয়ার অত্যাচারিত মুসলিমদের রক্ষা করতে সফল হবেন, আল্লাহর দীনকে বিজয় এনে দিবেন, এবং পরিশেষে আল আকসাকে মুক্ত করে তবেই ক্ষান্ত হবেন।
আমরা দৃঢ় আশা রাখি, মুজাহিদগণ শরীয়াহর শাসনকে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাবেন, কুফরের আধিপত্যের অবসান ঘটাবেন, এবং শত্রুর সমস্ত চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, সিরিয়ার মুজাহিদদের আমাদের নৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি আমাদের বস্তুগত সমর্থনেরও তীব্র প্রয়োজন রয়েছে। সহজ ভাষায় বললে- আমরা বিশ্বাস করি উম্মাহর বর্তমান জ্বলন্ত পরিস্থিতিতে, প্রতিটি মুসলিমের কাঁধে অত্যন্ত ভারী দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু, যদি কেবল সিরিয়ার যুদ্ধের কথাই বিবেচনায় আনা হয়, যা এই যুগের সবচেয়ে সংকটপূর্ণ ইস্যু। আমাদের দায়িত্বের ভার অত্যন্ত গুরুতর হয়ে যায়। এখানে আমি সিরিয়ান ইস্যুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যেগুলো সম্পন্ন করতে প্রত্যেক মুসলিমের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
•সিরিয়া সহ সারা বিশ্বের সমস্ত নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য দু'আ করা, এবং বিশেষ করে মুজাহিদদের জন্য দু’আ করা যারা এই দীনের খাতিরে লড়ে যাচ্ছে । এ ব্যাপারে কারো কোনও অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ আল্লাহকে ডাকতে কারো কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।
•অর্থের মাধ্যমে সিরিয়ার জিহাদকে সাহায্য করা, কারণ অর্থব্যয়ই জিহাদের প্রাণশক্তি। আর এটি ছাড়া জিহাদ পরিচালনা করা আদৌ সম্ভব নয়।
•সশরীরে এই জিহাদে অংশগ্রহণ করা, যা ইসলামের জন্য ত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত, এবং যা একজন মুমিনের ঈমান ও ঈমানের দাবীর প্রতি সত্যবাদিতার অগ্নিপরীক্ষা। আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করার দ্বারাই আল্লাহর নিকট সর্বোচ্চ মর্যাদা অর্জন করা, এবং জান্নাতে চিরকালের অনাবিল সুখ লাভ করা সম্ভব।
•কথার মাধ্যমে জিহাদে অংশ নেয়া, মুসলিমদেরকে স্বীয় দীনের হিফাযত করার লক্ষ্যে সিরিয়ার জিহাদে সম্ভাব্য সকল উপায়ে সর্বাত্মকভাবে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করা।
•মুজাহিদদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে, এবং তাদের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করা।
•কোন্দল রত দলগুলোকে কুরআন ও সুন্নাহর ফয়সালা মেনে নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
নিশ্চয়ই প্রত্যেক মুসলিমকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে যে- সে এই দীনের সাহায্যের জন্য কী সাহায্য করেছে, এবং সিরিয়া ও অন্যান্য জায়গার অত্যাচারিত মুসলিমদের সাহায্য করতে কী প্রচেষ্টা ব্যয় করেছে। যারা এদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে দুনিয়াবি ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে আছে, কিংবা মুনাফিক শাসকদের বেতন ভুক্ত দরবারী আলেমদের কথা শুনে নির্বিকার হয়ে আছে, কিংবা আরামের ঘরে বসে থেকে নিজ আরাম আয়েশের জন্য জিহাদ ও মুজাহিদদের বিরোধিতা করে যাচ্ছে তারা শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে কোন জবাব দিতে পারবে না। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হচ্ছে তাদের, যারা উম্মাহর এই ক্রান্তি লগ্নে জিহাদে অংশগ্রহণ না করে উম্মাহর প্রতি নৈতিক বাধ্যবাধকতা পালনে ব্যর্থ হয়ে চরম হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু এতেও ক্ষান্ত না হয়ে উল্টো জিহাদ ও মুজাহিদদের বিরোধিতায় সচেষ্ট হওয়ার মত জঘন্যতম অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করা উচিৎ, এবং আল্লাহর কাছে জবাব দেয়ার আগে নিজের কাছেই জবাবদিহিতা করে নিজ নিজ অবস্থা ও পরিণতি যাচাই করা উচিৎ।
পরিশেষে, আমি আপনাদের প্রত্যেককে নবীদের ভূমির দিকে রওয়ানা হওয়ার জন্য আহ্বান করছি, সাথে সাথে উৎসাহও দিচ্ছি। যে ভূমির ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন-তিন বার বলেছেন, “সিরিয়ার জন্য সুসংবাদ!” সাহাবীরা তখন জিজ্ঞেস করেছিল, “কেন? ইয়া রাসুলাল্লাহ!” আল্লাহর রাসুল উত্তর দিয়েছিলেন, “কারণ আল্লাহর ফেরেশতারা সিরিয়ার উপর নিজদের ডানা বিছিয়ে রেখেছেন।” তারপর তিনি বলেছিলেন, ইয়েমেনে একটি বাহিনী থাকবে, সিরিয়াতে একটি বাহিনী থাকবে, আর ইরাকেও একটি বাহিনী থাকবে। কিন্তু সিরিয়ার বাহিনীতে যোগ দেয়াটাই রাসুলুল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ছিল। তিনি বলেছিলেন, “সিরিয়া আল্লাহর যমীনের সর্বোৎকৃষ্ট ভূমি যেখানে আল্লাহ তাঁর সর্বোৎকৃষ্ট বান্দাদেরকেই নিয়ে আসবেন!”
সুতরাং, আল্লাহর যমীনের সর্বোৎকৃষ্ট ভূমির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান! যেন আপনিও আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট বান্দাদের একজন হতে পারেন!
আল্লাহ তাঁর নবীর উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।
ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লাম।।
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ বিন মাহমুদ বাহতীতী (আবু দুজানা আল-পাশা) হাফিযাহুল্লাহ
অনুবাদঃ সংগৃহীত
Comment