''তাদের অবরোধ কর!'' - আদম ইয়াহিয়া গাদাহন
Resurgence ম্যাগাজিনের মূল প্রতিবেদন
ফিলিস্তিন মুক্ত করা এবং খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বাস্তবিক পদক্ষেপ (বাংলা অনুবাদ)
''তাদের অবরোধ কর!'' - আদম ইয়াহিয়া গাদাহন
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মুসলিমদের বলা হচ্ছে যে, ইহুদী দখলকৃত ফিলিস্তিনের ন্যায্য সমাধান হচ্ছে পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূমির একটি খন্ডাংশ নিয়ে আরবদের জন্য একটি ক্ষীণকায়, অরক্ষিত এবং নামে মাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন, যদিও সিংহভাগ ভূমি থাকবে ইহুদীদের যেখানে তারা খেয়াল-খুশী অনুযায়ী নিয়ন্ত্রন ও কর্তৃ্ত্ব বজায় রাখতে পারবে। এই তথাকথিত “দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান” - যা প্রকৃতপক্ষে দেড়-রাষ্ট্র সমাধান, ফিলিস্তিনিদের কাছে মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়, এটা ইসলামের আইন এবং নীতিরও বিরোধী, এবং এটা অস্বীকার করে যে একদা ফিলিস্তিন ছিল একটি ইসলামি ভূখন্ড এবং তা সর্বদাই ইসলামি ভূখন্ড থাকবে; এবং একারনেই একটি পথই সামনে আছে এবং একমাত্র ন্যায্য উত্তর এই ফিলিস্তিনি ‘প্রশ্নের’ আর তা হল –
অখন্ড ইসরাইল এর অপসারন এবং সম্পূর্ন মুসলিম ফিলিস্তিনকে মুসলিমদের দ্বারা, মুসলিমদের জন্য উদ্ধার করা।
ফিলিস্তিন মুসলিমদের জন্য, কারন এই ফিলিস্তিন রাসূলদের ভূমি, আর মুসলিমরাই হচ্ছে রাসূলদের প্রকৃত উত্তরাধিকার, ইহুদীরা নয়। তাওরাত, ইঞ্জিল এবং কুর’আনে স্পষ্টই বলা হয়েছে আল্লাহর অঙ্গীকার অত্যাচারীর জন্য নয়, এমনকি যদি তারা রাসূলের উত্তরাধিকারও হয়, তাহলে কোন যুক্তিতে ইহুদীরা দাবি করে যে ফিলিস্তিন তাদের জন্ম অধিকার?
ইহুদীরা যাদের থেকে উদ্ভুত – সেই বনি ইসরাইল কেবলমাত্র তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থই হয়নি – যা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা, শুধু তাঁর জন্যই সৎ কাজ করা, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা এবং তাঁর দ্বীনকে ছড়িয়ে দেওয়া, বরং তারা তাদের প্রতি প্রেরিত কিছু রাসূল ও নবীদের উপর অবিশ্বাস করেছে যাদের পাঠানো হয়েছিল তাদের সংশোধন ও গঠনের জন্য, তাদের কাউকে হত্যা পর্যন্ত করেছে আবার কাউকে ইলাহ বানিয়ে ইবাদাত করেছে।
তাহলে কীভাবে (ইসলামি রাষ্ট্রের বাধ্যগত প্রজা হিসেবে ছাড়া) ইহুদীরা – যারা রাসূলদের হত্যাকারী ও তাদের বানী বিকৃতকারী – বলতে পারে যে রাসূলদের ভূমির উপর তাদের যথার্থ দাবী আছে? সহিহ মুসলিমের একটি হাদিস অনুযায়ী, আল-কুদসের মসজিদ আল-আকসা নির্মিত হয় পৃথিবীর প্রথম মসজিদ, মক্কায় অবস্থিত মসজিদ আল-হারাম থেকে চল্লিশ বছর পরে। যদিও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে কোন রাসূল কবে তাদের নির্মান করেছেন কিন্তু এই বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই যে, দুটোই নির্মান এবং সংস্কার করেছেন রাসূলগন। আল-মসজিদ আল-হারাম এর ভিত্তি স্থাপন করেছেন রাসূল ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর ছেলে রাসূল ইসমাইল (আলাইহিস সালাম), শেষোক্ত জনকে ইহুদী (এবং খ্রিস্টানরা) তাদের পাদ্রী , পুরোহিত ও লেখকদের সংযোগ ও বিয়োজনের ভিত্তিতে পবিত্র গ্রন্থে এবং আল্লাহর গুনাবলীর ক্ষেত্রে মিথ্যাচার, অপমান ও অবজ্ঞা করে চলেছে।
এদিকে, আল-মসজিদ আল-আকসা সংস্কার ও সম্প্রসারন করেন উন্নত চরিত্র রাসূল সুলাইমান (আলাইহিস সালাম), যার উপর ইহুদীরা (এবং খ্রিস্টানরা) শুধু যাদুবিদ্যা ও মূর্তি পূজার অপবাদই দেয় না, তাঁর পিতার উপরে ব্যাভিচার ও অন্যান্য কদর্য অভিযোগও করে, এমনকি তারা এটাও অস্বীকার করে যে, তিনি এবং তাঁর পিতা রাসূল ছিলেন, উপহাসের ভঙ্গিতে তাদের নাম বলে ‘রাজা’ সুলাইমান এবং ‘রাজা’ দাউদ।
তাই এই সব রাসূলদের শত্রুরা কিভাবে এই রাসূলদের ভূমির উপর অধিকার দাবী করতে পারে? ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর আগমনের পূর্বে হিব্রুভাষী রাসূলদের আগমন হত, এবং এর কয়েক শতাব্দী পর পর্যন্ত, ফিলিস্তিন শাসন করত মুশরিক (বহু-ঈশ্বরবাদী) ও জালিম শাসক, অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে, এভাবেই চলে আসছিল ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যখন মুসলিমদের নেতা দ্বিতীয় খলিফা উমর বিন আল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি ছিলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উত্তরসূরি, তাঁর নেতৃত্বে মুসলিমরা তা স্বাধীন করে। উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মসজিদ আল-আকসা এর পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারের দায়িত্ব নেন, যেটাকে খ্রিস্টানরা (তখন কোন ইহুদী আল-কুদসে ছিল না) ময়লা ফেলার আস্তাকুঁড় হিসেবে ব্যাবহার করত। ১০৯৯ সালে প্রথম ক্রুসেডের সময় বাইবেল বিশ্বাসী, পোপের অনুসারি বা আরও ভাল করে বলতে হয় পোপের ইবাদতকারী মৌলবাদি খ্রিস্টানদের দ্বারা আল-আকসা দখলের এবং এর অধিবাসীদের (যার মধ্যে ইহুদীরাও ছিল, মুসলিম শাসনের অধীনে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আবাস ছিল) বহিস্কার ও হত্যা করার পূর্ব পর্যন্ত ফিলিস্তিন এবং আল-আকসা মুসলিমদের হাতেই সমৃদ্ধি লাভ করেছে। ৮৮ বছর পর, ১১৮৭ সালে, মহান মুসলিম সেনাপতি সালাহ উদ্দিন আল-আইয়ুবি ইসলামের জন্য আল-কুদস পুনরুদ্ধার করেন। তিনি আল-মসজিদ আল-আকসাকে পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করেন যা ক্রুসেডাররা তাদের ঘোড়ার আস্তাবল হিসেবে ব্যবহার করত। এরপরে ১৯১৬ সালে ফিলিস্তিন আবারও ইহুদী এবং ক্রুসেডারদের হাতে দখল হয়ে যায়, এবার বেলফোর ঘোষনা এবং সাইক্স-পিকো চুক্তির মাধ্যমে।
পাঠকরা হয়ত ভাবছেন কেন আমি ফিলিস্তিন এবং আল-আকসার এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস উল্লেখ করলাম। আমার উত্তর হচ্ছে আপনি অবাক হয়ে যাবেন এটা জেনে যে কত বিশাল সংখ্যক মুসলিম ফিলিস্তিনের ইসলামি ইতিহাসের ব্যাপারে অজ্ঞ, অসচেতন এবং এর ফলে ইহুদীবাদী প্রোপাগান্ডা দ্বারা প্রভাবিত। ফিলিস্তিনের ইহুদী দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনিদের উপর শৃঙ্খলাবদ্ধ ও গনহত্যা-মূলক নিপীড়ন হচ্ছে সাইক্স-পিকো ঐক্যের অনিবার্য পরিনতি, যা ১৯১৬ সালে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া গোপনভাবে প্রনয়ণ করে এবং বিশ্বের সামনে ১৯১৭ সালে প্রকাশ করে – যার সর্ব সাম্প্রতিক উদাহরন হচ্ছে গাযায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন যার ফলে ২০০০ এরও অধিক মুসলিম প্রান হারিয়েছেন এবং ৮০০০ এরও অধিক আহত হয়েছেন। একদা পরাশক্তি, একদা ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতিকে এই অশুভ জোট ক্ষীণ, খন্ড খন্ড রাষ্ট্রে বিভক্ত করেছে যা শাসন করছে পশ্চিমাদেরই প্রতিনিধি ও দালালরা।
ইহুদীদের ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব চিরস্থায়ী করার সক্ষমতা এবং তাদের নির্দয় দখলদারিত্ব বজায় রাখা ও এর জনসাধারনের উপর অব্যাহত অত্যাচার এবং তাদের অপরাধের জবাবদিহিতার অভাব বা এর জন্য প্রতিহিংসার ভয়হীনতা হচ্ছে এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো দ্বারা জাতিসঙ্ঘ গঠনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের সরাসরি ফলাফল, এর ফলে জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্র গুলো আমেরিকার নেতৃত্বাধীন, ইসরাইলি প্রভাবিত নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশ্য পূরনে বাধ্য হয় এবং অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র বিশেষত ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ও ভূখন্ডগত সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে বাধ্য করা হয়।
শুধুমাত্র সাইক্স-পিকো, জাতিসঙ্ঘ সনদ এবং এরকম সকল মৈত্রী চুক্তির বিলুপ্তিই পারবে ফিলিস্তিন এবং স্পেইন থেকে পূর্ব তুর্কিস্তান পর্যন্ত সমস্ত দখলীকৃত মুসলিম ভূমিসমূহকে পুনরুদ্ধার করতে এবং এইসব ভূখন্ডের মুসলিম জনগণ নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদার জীবন যাপন করতে পারবে ইসলামি খিলাফতের সুরক্ষায়।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, গাযা হবে আমেরিকার পৃষ্ঠপোষন ও অনুমোদনে একটি আধুনিক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এবং যেকোন অযুহাতে ইহুদীরা এর উপর নির্বিচারে গোলাবর্ষন করে যাবে।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, ফিলিস্তিনের শিশুরা বড় হবে অবিরত ভয়ের এক পরিবেশে, ইসরাইলি বোমাবর্ষনের আতঙ্কে এবং মৃত্যুর মিছিল ও ধ্বংসযজ্ঞে তাদের অনুভুতিপ্রবন মন চিরস্থায়ীভাবে জখম হয়ে যাবে।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, ফিলিস্তিনের শিশুরা দারিদ্র্য ও বঞ্চনার কষ্ট ভোগ করবে, এমন এক বঞ্চনা যাতে তারা শুধু তাদের বাড়ি এবং সুস্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত থাকবে না, তারা তাদের জীবন ও প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকেও বঞ্চিত হবে।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, ফিলিস্তিনের শিশুরা দেখতেই থাকবে যে তাদের বাবা-মা এবং ভাই-বোন তাদের চোখের সামনে গুলিতে মারা যাচ্ছে, তাদের বাবা-মা দেখবে যে তাদের সন্তানরা তাদের কোলেই নিহত হচ্ছে।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, গাযার ফিলিস্তিনি মা এবং বাবারা দেখবে তাদের সন্তানের ধুঁকে ধুঁকে ও করুণভাবে মৃত্যু বরণ করতে, কারন গাযাতে চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল, হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় কর্মী ও সাপ্লাই এর অভাবে সঠিক চিকিৎসা প্রদানে অক্ষম; আর এটা অনুমান করছি যে এই হাসপাতালগুলোকে ইসরাইলি বিমান হামলা থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে, আশ-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স এর মত ঈদ-উল-ফিতর এর দিনে টার্গেট করে হামলা করা হয়নি (একটি প্লে-গ্রাউন্ডে হামলা করা হয়, এতে কমপক্ষে ৮ জন শিশু মারা যান)।
‘ইসরাইল’কে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার বাস্তব পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির ছত্রছায়ায় এই ধরনের অবর্ণনীয় অপরাধ ঘটতেই থাকবে যা বেগবান করছে প্রকাশ্য আঁতাত ও মর্যাদাহানীকর নীরবতার; এখানে আমি আমিরুল মু'মিনিন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ (আল্লাহ তাকে সুরক্ষা দিন) এর একটি উদ্ধৃতি দিতে চাই – যা তিনি ১৪৩৫ হিজরি ঈদ-উল-ফিতরে বলেছিলেন,
‘আমরা নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দখলদার ইসরাইলিদের অসভ্য আগ্রাসনের নিন্দা ও প্রকাশ্য বিরোধিতা করছি যাতে হাজারো-লক্ষ মানুষ হত্যা, আহত বা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এই পবিত্র রমযান মাসে। আমরা পৃথিবীকে জানাতে চাই – বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বকে জানাতে চাই – এই অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলুন, চুপ থাকবেন না, কারন তাদের ক্ষেত্রে নীরব থাকলে তা হবে অন্যায় এবং তার মানে দাঁড়াবে সকলের পরাজয়; এবং জরুরী ও বাস্তব পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে যাতে এই অত্যাচার ও আগ্রাসন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে না ফেলে।’
বর্তমানে আমরা এমন এক বর্বর শত্রু-জোটের মুকাবিলা করছি যার কাজ মানবতা, সহাবস্থান এবং যুক্তিসঙ্গত সংলাপের পরিভাষার সম্পূর্ন বিপরীত বরং এই উপাদানগুলো সে ভন্ডামির সাথে ব্যবহার করে এবং বাকি পৃথিবী যেন তা মেনে নেয় তার দাবী করে, যদিও সে মানবতা ও সহাবস্থানের প্রত্যেকটি নীতিকে অবজ্ঞা করে।
গাযার বাড়িঘর, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ও শিশুদের খেলার জায়গার উপর নিষ্ঠুর ও নির্দয় বোমা হামলা এবং এই উপত্যকার উপর ইহুদী, ক্রুসেডার এবং এদের মিত্রদের আন্তর্জাতিক নির্মম অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে আগ্রাসন এবং এই আগ্রাসনের ও ফিলিস্তিনের উপর মিথ্যা দাবীর সমর্থনে আছে ইহুদীরা, এবং এ কারনেই কোন মুসলিমের পক্ষেই তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
যাই হোক, অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে নিয়মসম্মত ও কার্যকর সামরিক কৌশল যখন তা সত্য ও পক্ষের লোকেদের নিরাপত্তায় আনুপাতিক হারে ব্যবহার করা হয় । ইতিহাসে মুসলিম সেনাবাহিনী এই কৌশল অসংখ্যবার সফলভাবে প্রয়োগ করেছে, বনু কুরাইযার ইহুদিদের উপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবরোধ, কনস্টান্টিনোপল এর উপর অটোমানদের অবরোধ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত, এবং ইরাকি মুজাহিদিনদের বাগদাদ ও গ্রিন জোনে ক্রুসেডার ও এর দালালদের বিরুদ্ধে অবরোধ, যে অবরোধ এই কোয়ালিশনকে দূর্বল ও কার্যকরভাবে পরাজিত করতে মূখ্য ভূমিকা রেখেছে।
ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামের উপর ইসরাইলের উপর্যুপরি আগ্রাসন এবং গাযার অরক্ষিত জনগনের উপর দমনমূলক নিষেধাজ্ঞা এভাবে চলতে পারে না যেভাবে মুসলিম বিশ্বকে দূঃখজনকভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
আমাদের সময় এসেছে আগুনকে আগুন দিয়ে মুকাবিলা করার, ইহুদী ও ক্রুসেডারদের উপর আমাদের নিজস্ব অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার এবং তাদের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড ও রক্তপ্রবাহ, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থায়ন দ্বারা উপস্থাপিত হয়, তার উপর আঘাত করা, সেখানেই আঘাত করা যেখানে ব্যাথা লাগে।
শত্রু রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বানিজ্যকে মুজাহিদিনদের অকার্যকর করে দিতে হবে, অথবা কমপক্ষে, এর খরচ বাড়িয়ে দিতে হবে, ইসলামি সামুদ্রিক এলাকা, বন্দর, খাল এবং প্রনালীতে তাদের মালবাহী জাহাজ ও নৌ-বানিজ্যের উপর আঘাত হেনে, গভীর সমুদ্রে, এবং তাদের নিজস্ব সমুদ্রসীমায়, এবং তাদের শিপিং রুটকে যখন, যেখানে, যেভাবে পারা যায় বিপর্যস্ত করে।
তাদের যেকোন জাহাজ আক্রমনের জন্য বৈধ নিশানা, আর রপ্তানী হচ্ছে যেকোন দেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান উপাদান, এমনকি পশ্চিমাদের অর্থনীতির জন্যও। অমূল্য তেল ও খনিজ সম্পদ যা শত্রুরা আমাদের থেকে চুরি করছে এবং তা দিয়ে তাদের যুদ্ধনীতি সচল রাখছে, মুজাহিদিনদের তার সরবরাহকে বন্ধ করতে হবে, মুজাহিদিনদের ইসলামি ভূমিতে ক্রুসেডারদের পরিচালিত তেল-কূপ স্যাবোটাজ করতে হবে এবং পাইপ লাইনগুলোর মাধ্যমে তেল উপকূলীয় এলাকাতে পৌছানো ও শত্রুর হাতে পড়ার পূর্বেই তা ধ্বংস করতে হবে, শত্রুর নিজস্ব সমুদ্রসীমায় তাদের সুপার-ট্যাঙ্কার ডুবিয়ে দিয়ে ও অয়েল-রিগ গুলো স্যাবোটাজ করে, এবং এভাবে, তাদের আকর্ষনীয় লাভজনক ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস করে দিতে হবে যেভাবে তারা আমাদেরটা করেছে গাযা, সোমালিয়া ও অন্যান্য স্থানে।
একই সাথে, মুসলিমদের অবশ্যই আমেরিকান, ক্রুসেডার ও ইহুদী পন্য, গাড়ি থেকে কম্পিউটার থেকে চকলেট থেকে পোশাক, বয়কট করতে হবে এবং আমাদের অবশ্যই সর্বতোভাবে স্থানীয় বিকল্প পন্য উৎপাদন, ক্রয় ও সমর্থন করতে হবে।
প্রধান পশ্চিমা কোম্পানি ও বহুজাতিক কর্পোরেশন যেমন ওয়াল মার্ট, ম্যাকডোনাল্ড’স, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, মাইক্রোসফট, নেসলে, ইউনিলিভার ইত্যাদি হচ্ছে আধিপত্যবাদী বিশ্বায়নের প্রতীক যা চিহ্নিত হয় দূর্বল ও দরিদ্রের শোষনের মাধ্যমে, এবং স্থানীয় অর্থনীতির ধ্বংসের মাধ্যমে। মুসলিম হিসেবে এবং মুজাহিদিন হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যেকোন মূল্যে এটা থামানো। মুসলিমদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিত্যাগ করতে হবে, কারন শুধু এই নয় যে এগুলো তথাকথিত ‘ইন্টারেস্ট/ইউজুয়ারি’ (সুদ/চক্রবৃদ্ধি সুদ) এর উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যার ব্যবহারকারি, অপ-ব্যবহারকারি ও সুবিধাভোগিদেরকে আল্লাহ তাঁর সাথে যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন (দেখুন কুর’আন ০২ : ২৭৫-২৮১)।
পশ্চিম-চালিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আরেকটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হোল ব্যাংক যা মুসলিম ও পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষদের দাস বানিয়ে রাখার এক কার্যকর উপায়। প্রকৃত পক্ষে, মুসলিমদের অবশ্যই সোনা, রূপা ও অন্যান্য মৌলিক পণ্যসামগ্রীকে বিনিময়ের মান ও মাধ্যম হিসেবে পুনঃপ্রবর্তনের জন্য চেষ্টা শুরু করতে হবে, শিল্প উৎপাদনকে আকৃষ্ট করার জন্য পণ্য-বিনিময় প্রথা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করতে হবে যার ভিত্তি হবে স্থানীয় ইসলামি অর্থনীতি এবং যাতে করে শত্রুর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উপর সক্ষমতা অর্জন করতে পারি।
স্বর্নমান বিনিময় ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন দরকার এই জন্য যাতে ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপরে আমরা জয়ী হতে পারি যা শূন্য থেকে মুদ্রা তৈরী করে, আমাদের বাজার ও অর্থনীতিকে পশ্চিমাদের সাথে বেধে ফেলে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, International Monetary Fund, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ইত্যাদি সংগঠনের করুনার উপর আমাদের নির্ভরশীল করে তোলে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক অবরোধ এবং অন্যান্য অসংখ্য ধরনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, সরকার ও ধর্মকে অরক্ষিত করে রাখে।
কেউ বলতে পারে, ‘কুফরের আন্তর্জাতিক জোটের পরাজয় ও বৃহত্তর ইসলামি রাষ্ট্র গঠন ছাড়া কী মুসলিমদের এই আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার জাঁতাকল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা যৌক্তিক হবে?’ আমার উত্তর হবে, ‘হ্যাঁ, ইসলামের বিজয়ের জন্য মুসলিমদের নিজেদেরকে আর্থিক এবং অর্থনৈতিকভাবে (financially and economically) প্রস্তুত করা সম্পূর্ন ভাবে যৌক্তিক, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য যেভাবে নিজেদেরকে ধর্মীয়, সামরিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রস্তুতি, সংগঠিত ও শিক্ষিত করতে উৎসাহ দেই ঠিক সেভাবেই!’
আজ, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে মুসলিমরা খুব ভালভাবে বুঝতে পারছে, তারা কোন দিনও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না যার স্বপ্ন তারা দেখে, যদি না তারা সুদভিত্তিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং বৃহৎ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর প্রভাব-প্রতিপত্তি থেকে তাদের দেশগুলোকে মুক্ত করতে না পারে। সুমাইয়া গানৌশি, The Guardian পত্রিকায় “Backstage, it’s business as usual” শিরনামের প্রবন্ধে লেখেন, যা তিন বছর আগে আরব বিশ্বের জনসমর্থিত বিদ্রোহ শুরুর পরেই প্রকাশ পায়, এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান সচেতনতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করে উপরে উল্লিখিত ব্যাবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ব্যবহার করে আরব অঞ্চলের প্রকাশঃমান বিদ্রোহের ধ্বংস সাধন ও অন্তর্ঘাত (sabotage) এর পশ্চিমা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।
তার প্রবন্ধ থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু অংশ উল্লেখ করছি –
“পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য পশ্চিমারা শুধু কঠোর সামরিক শক্তি মোতায়েন করছে না। বিশ্বব্যাংক ও IMF এর মাধ্যমে এটা তার অর্থনৈতিক বাহুকেও প্রসারিত করেছে। সম্প্রতি, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট যোয়েলিক একদল আরব অ্যাক্টিভিস্ট-দের উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলের এই পরিবর্তনকে ‘নিজস্ব গতিপথের আকর্ষনীয় মূহুর্ত’ (striking moment engendering its own momentum) বলে প্রশংসা করে। উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নিয়ে তাকে যখন বলতে শুনি, কেউ তাকে নিষ্পাপ, স্বাধীন একজন বিশ্লেষক ভাবতে পারে যার অর্থনৈতিক ফাঁদগুলোর ব্যাপারে কোন ধারনাই নেই যার কবলে পড়ে এই অঞ্চলগুলো সংগ্রাম করছে। এই প্রচারনা হচ্ছে যা ঘটছে তার একটি মৌলিক অংশ লুকিয়ে রাখার ছলনা – জনগন কেবলমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত রাজনৈতিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেনি, বরং IMF ও বিশ্বব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক মডেলের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে এবং তিউনিসিয়া ও ঈজিপ্টের ক্ষেত্রে EU (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) এর কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে বিদ্রোহ করেছে। তিউনিসিয়াতে, প্রথম আরব দেশ যেটা ১৯৯৫ সালে ইউরো-মেডিটারনিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এগ্রিমেন্টে সই করে, ৬৭ শতাংশেরও অধিক সরকার নিয়ন্ত্রিত ফার্ম এখন বেসরকারি-করণ হয়েছে, যেখানে ঈজিপ্টে এই সংখ্যা ৩১৪ এর মধ্যে ১৬৪টি। এই পদক্ষেপগুলো দেশগুলোর অর্থনীতিকে ঋণে একেবারে ডুবিয়ে দিয়েছে, এভাবে আমেরিকা ও EU এর হাতে জিম্মী হয়ে গেছে।’’
এবং এটা হচ্ছে মুসলিম বিশ্বকে পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রনে রাখার অশুভ চক্রের প্রথম ধাপ! সরকারি মালিকানাধীন ফার্মের বেসরকারি-করণ নীতির প্রকৃত মানে কি তা বোঝার জন্য এবং অন্যান্য নব্য-ঔপনিবেশিক নীতি যে কতটা নিপীড়ন মূলক তা বোঝার জন্য আমি জন পারকিন্স এর ‘কনফেশন অফ অ্যান ইকোনোমিক হিটম্যান’ ও ‘দা সিক্রেট হিস্টোরি অফ আমেরিকান এম্পায়ার’ এই দুটি বই এর কথা বলবো।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সুমাইয়া গানৌশি উল্লিখিত জনগনের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা সত্ত্বেও, তিউনিসিয়ার তথাকথিত বিপ্লবী সরকার (যার নেতৃত্বে আছে ছদ্ম-ইসলামিক রেঁনেসা পার্টি যার নেতৃত্বে আছে সুমাইয়ার পিতা রশিদ গানৌশি ও স্বামী রফিক আব্দুস সালাম) এবং তার সাথে নতুন/পুরোন মোড়কের ঈজিপ্ট, লিবিয়া ও ইয়েমেন, সাবেক শাসকগুলোর বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও IMF এর কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার অভ্যাস বজায় রাখার চাইতেও বেশি করছে এবং আমেরিকা, EU ও অন্যান্য দাতা দেশগুলো থেকে আরও বেশি করে শর্ত-যুক্ত অনুদান গ্রহন করছে (সাবেক শাসকদের কাউন্টার-টেররিজম নীতির ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়ার কথা বাদ দিলাম, এটার আলোচনা অন্য দিন হবে), এতে করে প্রকৃত পরিবর্তনের প্রতি জনগনের আশাকে বিলম্বিত করছে এবং সেই সাবেক অভিজাতদের শাসনের পুনরুত্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই বিদ্রোহের যে উদ্দেশ্য তা ভুলিয়ে দিচ্ছে।
তবে যাই হোক, পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে একটা ঐকমত্য আছে যে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন সর্বাধিক ভঙ্গুর ও অরক্ষিত অবস্থায় আছে, বিশেষ করে আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশ গুলোতে যে উত্থান ঘটছে তার আলোকে এবং বিশাল পরিমানে চক্রবৃদ্ধি সুদের বৃদ্ধিতে ইউরোপে ও আমেরিকায় যা প্রচন্ড রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় এর দিকে পশ্চিমা বিশ্বকে ধাবিত করছে।
এই কারনেই পশ্চিমা নেতারা এই ব্যবস্থার যোগ্যতা এবং ভবিষ্যত পশ্চিমা সভ্যতার উপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেই যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কেউ তো এটাও বলছে যে এই ব্যবস্থার গোড়াতেই গলদ আছে এবং এতে করে ব্রিটন-উডস মডেলের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। এই রকম একটি সংস্কার অবশ্যই পশ্চিমা আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রনের কিছু অপূরনীয় হাতিয়ারকে ফেলে দিতে হবে, আমেরিকা ও তার ক্রুসেডার জোট এটা কখনই মেনে নিবে না, তার মানে এই তিলে তিলে ধ্বংস করার যুদ্ধ চলতেই থাকবে, যা ইনশা আল্লাহ তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শেষ করে দিবে, এবং এরই সাথে তাদের আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্য-ও। অর্থনৈতিক অস্ত্র হোল এমন এক তলোয়ার যার দুই পাশেই ধার রয়েছে, মুসলিম বিশ্বের মতই পশ্চিমা বিশ্বও এই ধরনের যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে আছে।
এই ঐতিহাসিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মুহূর্তে প্রত্যেক মুসলিমের কাছে এটাই দাবী যে সে লড়াইয়ে অংশ গ্রহন করবে এবং তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ইহুদীবাদী ও ক্রুসেডারদের জীবন বিপর্যস্ত করবে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে অবদান রাখবে। আজকে, আমরা ধন্যবাদ জানাই আল্লাহকে, তারপরে, মুজাহিদিনদের আত্মত্যাগ ও মরণপণ সংকল্পকে এবং তাদের দূরদর্শী নেতৃত্বকে যেমন, আমির-উল-মু’মিনিন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমর (আল্লাহ তাঁকে সুরক্ষা দিন), শহীদ শায়খ উসামা বিন লাদিন (আল্লাহ তাঁর উপর রহমত বর্ষন করুন), এবং আমাদের মুজাহিদ আমির শায়খ আইমান আল জাওয়াহিরি (আল্লাহ তাঁকে সুরক্ষা দিন), আন্তর্জাতিক কুফরের মাথা, আমেরিকা, আজ এমন-ই এক অভূতপূর্ব দূর্বল অবস্থানে আছে যে এর সাম্রাজ্যের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে গেছে।
আল্লাহর অনুগ্রহে, মুসলিমরা আমেরিকা এবং পাপিষ্ঠদের জোটকে অন্ততপক্ষে দুইটি গুরুত্বপূর্ন যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই বিভ্রমে পড়ে যাওয়া যাবে না যে ক্রুসেডারদের ইরাক থেকে বিতাড়ন এবং এই বছরেই আফগানিস্তান থেকে সম্ভাব্য বিতাড়ন মানেই বৃহত্তর আন্তর্জাতিক যুদ্ধের সমাপ্তি।
ইসলামিক উম্মাহ আজ অসংখ্য দখলদারিত্ব ও নিষেধাজ্ঞার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে আর ফিলিস্তিন এখনও নির্দয় ইহুদীদের দয়া ও নিয়ন্ত্রনে বেঁচে আছে , রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসারিরা আক্রমনের মুখে আছে মালি, নাইজেরিয়া এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে পশ্চিমে সিরিয়া, ইরাক আর পূর্বে বার্মা, থাইল্যান্ডে এবং মুসলিমরা আছে নব্য-উপনিবেশবাদ, স্বৈরতন্ত্র, দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, দ্বীনহীনতা, এবং কুফরের অন্ধ অনুকরন ও অনুসরনের পথে, আমাদের সামনে যে পথ তা মোটেও সহজ নয়।
কিন্তু যদি প্রত্যেকেই ইসলামের শত্রু ও মুসলিমদের নির্যাতকদের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে আন্তরিকতার সাথে অংশ নেয়, একই সাথে তার দ্বীন প্রয়োগের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেয় এবং নিজেকে ও নিজের আশে-পাশের মানুষদের শিক্ষিত ও সংশোধন করে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) ইনশা আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করবেন এবং আমাদের বিজয় দান করবেন শত্রুদের উপরে এবং আমাদের নফসের উপর, এবং আমাদের ঐক্য দান করবেন এবং আমাদের জন্য প্রতিষ্টা করবেন খিলাফত যার জন্যই আমরা কাজ করছি।
প্রিয় মুসলিম, শত্রুদের উপরে জয়ী হওয়া এবং খিলাফত প্রতিষ্টার পদ্ধতি শুধু সশস্ত্র লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সকল হালাল উপায় ও উপকরন এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যার মাধ্যমে সামরিক প্রচেষ্টা সমর্থন পাবে, শক্তিশালী হবে ও অগ্রগামী হবে এবং মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যতের জন্য এই যুদ্ধে আমাদের সফলতা দান করবে।
তাই, কেন দেরী করছেন?
জিহাদে আপনার দায়িত্ব পালন করুন এখনই...
সেটা সামরিক, আর্থিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, অনুপ্রেরনামূলক বা অন্য যা-ই হোক না কেন।
ধৈর্য্যশীল ও অটল থাকুন, এবং আপনার ভাইদের অন্তরে তা ধীরে ধীরে প্রবেশ করান,
কারন, যুদ্ধ কিন্তু এখনও শেষ হয়নি...
ওয়াল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন।
সংগ্রহীত।
Resurgence ম্যাগাজিনের মূল প্রতিবেদন
ফিলিস্তিন মুক্ত করা এবং খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বাস্তবিক পদক্ষেপ (বাংলা অনুবাদ)
''তাদের অবরোধ কর!'' - আদম ইয়াহিয়া গাদাহন
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মুসলিমদের বলা হচ্ছে যে, ইহুদী দখলকৃত ফিলিস্তিনের ন্যায্য সমাধান হচ্ছে পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূমির একটি খন্ডাংশ নিয়ে আরবদের জন্য একটি ক্ষীণকায়, অরক্ষিত এবং নামে মাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন, যদিও সিংহভাগ ভূমি থাকবে ইহুদীদের যেখানে তারা খেয়াল-খুশী অনুযায়ী নিয়ন্ত্রন ও কর্তৃ্ত্ব বজায় রাখতে পারবে। এই তথাকথিত “দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান” - যা প্রকৃতপক্ষে দেড়-রাষ্ট্র সমাধান, ফিলিস্তিনিদের কাছে মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়, এটা ইসলামের আইন এবং নীতিরও বিরোধী, এবং এটা অস্বীকার করে যে একদা ফিলিস্তিন ছিল একটি ইসলামি ভূখন্ড এবং তা সর্বদাই ইসলামি ভূখন্ড থাকবে; এবং একারনেই একটি পথই সামনে আছে এবং একমাত্র ন্যায্য উত্তর এই ফিলিস্তিনি ‘প্রশ্নের’ আর তা হল –
অখন্ড ইসরাইল এর অপসারন এবং সম্পূর্ন মুসলিম ফিলিস্তিনকে মুসলিমদের দ্বারা, মুসলিমদের জন্য উদ্ধার করা।
ফিলিস্তিন মুসলিমদের জন্য, কারন এই ফিলিস্তিন রাসূলদের ভূমি, আর মুসলিমরাই হচ্ছে রাসূলদের প্রকৃত উত্তরাধিকার, ইহুদীরা নয়। তাওরাত, ইঞ্জিল এবং কুর’আনে স্পষ্টই বলা হয়েছে আল্লাহর অঙ্গীকার অত্যাচারীর জন্য নয়, এমনকি যদি তারা রাসূলের উত্তরাধিকারও হয়, তাহলে কোন যুক্তিতে ইহুদীরা দাবি করে যে ফিলিস্তিন তাদের জন্ম অধিকার?
ইহুদীরা যাদের থেকে উদ্ভুত – সেই বনি ইসরাইল কেবলমাত্র তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থই হয়নি – যা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা, শুধু তাঁর জন্যই সৎ কাজ করা, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা এবং তাঁর দ্বীনকে ছড়িয়ে দেওয়া, বরং তারা তাদের প্রতি প্রেরিত কিছু রাসূল ও নবীদের উপর অবিশ্বাস করেছে যাদের পাঠানো হয়েছিল তাদের সংশোধন ও গঠনের জন্য, তাদের কাউকে হত্যা পর্যন্ত করেছে আবার কাউকে ইলাহ বানিয়ে ইবাদাত করেছে।
তাহলে কীভাবে (ইসলামি রাষ্ট্রের বাধ্যগত প্রজা হিসেবে ছাড়া) ইহুদীরা – যারা রাসূলদের হত্যাকারী ও তাদের বানী বিকৃতকারী – বলতে পারে যে রাসূলদের ভূমির উপর তাদের যথার্থ দাবী আছে? সহিহ মুসলিমের একটি হাদিস অনুযায়ী, আল-কুদসের মসজিদ আল-আকসা নির্মিত হয় পৃথিবীর প্রথম মসজিদ, মক্কায় অবস্থিত মসজিদ আল-হারাম থেকে চল্লিশ বছর পরে। যদিও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে কোন রাসূল কবে তাদের নির্মান করেছেন কিন্তু এই বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই যে, দুটোই নির্মান এবং সংস্কার করেছেন রাসূলগন। আল-মসজিদ আল-হারাম এর ভিত্তি স্থাপন করেছেন রাসূল ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর ছেলে রাসূল ইসমাইল (আলাইহিস সালাম), শেষোক্ত জনকে ইহুদী (এবং খ্রিস্টানরা) তাদের পাদ্রী , পুরোহিত ও লেখকদের সংযোগ ও বিয়োজনের ভিত্তিতে পবিত্র গ্রন্থে এবং আল্লাহর গুনাবলীর ক্ষেত্রে মিথ্যাচার, অপমান ও অবজ্ঞা করে চলেছে।
এদিকে, আল-মসজিদ আল-আকসা সংস্কার ও সম্প্রসারন করেন উন্নত চরিত্র রাসূল সুলাইমান (আলাইহিস সালাম), যার উপর ইহুদীরা (এবং খ্রিস্টানরা) শুধু যাদুবিদ্যা ও মূর্তি পূজার অপবাদই দেয় না, তাঁর পিতার উপরে ব্যাভিচার ও অন্যান্য কদর্য অভিযোগও করে, এমনকি তারা এটাও অস্বীকার করে যে, তিনি এবং তাঁর পিতা রাসূল ছিলেন, উপহাসের ভঙ্গিতে তাদের নাম বলে ‘রাজা’ সুলাইমান এবং ‘রাজা’ দাউদ।
তাই এই সব রাসূলদের শত্রুরা কিভাবে এই রাসূলদের ভূমির উপর অধিকার দাবী করতে পারে? ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর আগমনের পূর্বে হিব্রুভাষী রাসূলদের আগমন হত, এবং এর কয়েক শতাব্দী পর পর্যন্ত, ফিলিস্তিন শাসন করত মুশরিক (বহু-ঈশ্বরবাদী) ও জালিম শাসক, অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে, এভাবেই চলে আসছিল ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যখন মুসলিমদের নেতা দ্বিতীয় খলিফা উমর বিন আল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি ছিলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উত্তরসূরি, তাঁর নেতৃত্বে মুসলিমরা তা স্বাধীন করে। উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মসজিদ আল-আকসা এর পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারের দায়িত্ব নেন, যেটাকে খ্রিস্টানরা (তখন কোন ইহুদী আল-কুদসে ছিল না) ময়লা ফেলার আস্তাকুঁড় হিসেবে ব্যাবহার করত। ১০৯৯ সালে প্রথম ক্রুসেডের সময় বাইবেল বিশ্বাসী, পোপের অনুসারি বা আরও ভাল করে বলতে হয় পোপের ইবাদতকারী মৌলবাদি খ্রিস্টানদের দ্বারা আল-আকসা দখলের এবং এর অধিবাসীদের (যার মধ্যে ইহুদীরাও ছিল, মুসলিম শাসনের অধীনে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আবাস ছিল) বহিস্কার ও হত্যা করার পূর্ব পর্যন্ত ফিলিস্তিন এবং আল-আকসা মুসলিমদের হাতেই সমৃদ্ধি লাভ করেছে। ৮৮ বছর পর, ১১৮৭ সালে, মহান মুসলিম সেনাপতি সালাহ উদ্দিন আল-আইয়ুবি ইসলামের জন্য আল-কুদস পুনরুদ্ধার করেন। তিনি আল-মসজিদ আল-আকসাকে পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করেন যা ক্রুসেডাররা তাদের ঘোড়ার আস্তাবল হিসেবে ব্যবহার করত। এরপরে ১৯১৬ সালে ফিলিস্তিন আবারও ইহুদী এবং ক্রুসেডারদের হাতে দখল হয়ে যায়, এবার বেলফোর ঘোষনা এবং সাইক্স-পিকো চুক্তির মাধ্যমে।
পাঠকরা হয়ত ভাবছেন কেন আমি ফিলিস্তিন এবং আল-আকসার এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস উল্লেখ করলাম। আমার উত্তর হচ্ছে আপনি অবাক হয়ে যাবেন এটা জেনে যে কত বিশাল সংখ্যক মুসলিম ফিলিস্তিনের ইসলামি ইতিহাসের ব্যাপারে অজ্ঞ, অসচেতন এবং এর ফলে ইহুদীবাদী প্রোপাগান্ডা দ্বারা প্রভাবিত। ফিলিস্তিনের ইহুদী দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনিদের উপর শৃঙ্খলাবদ্ধ ও গনহত্যা-মূলক নিপীড়ন হচ্ছে সাইক্স-পিকো ঐক্যের অনিবার্য পরিনতি, যা ১৯১৬ সালে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া গোপনভাবে প্রনয়ণ করে এবং বিশ্বের সামনে ১৯১৭ সালে প্রকাশ করে – যার সর্ব সাম্প্রতিক উদাহরন হচ্ছে গাযায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন যার ফলে ২০০০ এরও অধিক মুসলিম প্রান হারিয়েছেন এবং ৮০০০ এরও অধিক আহত হয়েছেন। একদা পরাশক্তি, একদা ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতিকে এই অশুভ জোট ক্ষীণ, খন্ড খন্ড রাষ্ট্রে বিভক্ত করেছে যা শাসন করছে পশ্চিমাদেরই প্রতিনিধি ও দালালরা।
ইহুদীদের ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব চিরস্থায়ী করার সক্ষমতা এবং তাদের নির্দয় দখলদারিত্ব বজায় রাখা ও এর জনসাধারনের উপর অব্যাহত অত্যাচার এবং তাদের অপরাধের জবাবদিহিতার অভাব বা এর জন্য প্রতিহিংসার ভয়হীনতা হচ্ছে এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো দ্বারা জাতিসঙ্ঘ গঠনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের সরাসরি ফলাফল, এর ফলে জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্র গুলো আমেরিকার নেতৃত্বাধীন, ইসরাইলি প্রভাবিত নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশ্য পূরনে বাধ্য হয় এবং অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র বিশেষত ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ও ভূখন্ডগত সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে বাধ্য করা হয়।
শুধুমাত্র সাইক্স-পিকো, জাতিসঙ্ঘ সনদ এবং এরকম সকল মৈত্রী চুক্তির বিলুপ্তিই পারবে ফিলিস্তিন এবং স্পেইন থেকে পূর্ব তুর্কিস্তান পর্যন্ত সমস্ত দখলীকৃত মুসলিম ভূমিসমূহকে পুনরুদ্ধার করতে এবং এইসব ভূখন্ডের মুসলিম জনগণ নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদার জীবন যাপন করতে পারবে ইসলামি খিলাফতের সুরক্ষায়।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, গাযা হবে আমেরিকার পৃষ্ঠপোষন ও অনুমোদনে একটি আধুনিক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এবং যেকোন অযুহাতে ইহুদীরা এর উপর নির্বিচারে গোলাবর্ষন করে যাবে।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, ফিলিস্তিনের শিশুরা বড় হবে অবিরত ভয়ের এক পরিবেশে, ইসরাইলি বোমাবর্ষনের আতঙ্কে এবং মৃত্যুর মিছিল ও ধ্বংসযজ্ঞে তাদের অনুভুতিপ্রবন মন চিরস্থায়ীভাবে জখম হয়ে যাবে।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, ফিলিস্তিনের শিশুরা দারিদ্র্য ও বঞ্চনার কষ্ট ভোগ করবে, এমন এক বঞ্চনা যাতে তারা শুধু তাদের বাড়ি এবং সুস্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত থাকবে না, তারা তাদের জীবন ও প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকেও বঞ্চিত হবে।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, ফিলিস্তিনের শিশুরা দেখতেই থাকবে যে তাদের বাবা-মা এবং ভাই-বোন তাদের চোখের সামনে গুলিতে মারা যাচ্ছে, তাদের বাবা-মা দেখবে যে তাদের সন্তানরা তাদের কোলেই নিহত হচ্ছে।
মানচিত্র থেকে ‘ইসরাইল’ মুছে না যাওয়া পর্যন্ত, গাযার ফিলিস্তিনি মা এবং বাবারা দেখবে তাদের সন্তানের ধুঁকে ধুঁকে ও করুণভাবে মৃত্যু বরণ করতে, কারন গাযাতে চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল, হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় কর্মী ও সাপ্লাই এর অভাবে সঠিক চিকিৎসা প্রদানে অক্ষম; আর এটা অনুমান করছি যে এই হাসপাতালগুলোকে ইসরাইলি বিমান হামলা থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে, আশ-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স এর মত ঈদ-উল-ফিতর এর দিনে টার্গেট করে হামলা করা হয়নি (একটি প্লে-গ্রাউন্ডে হামলা করা হয়, এতে কমপক্ষে ৮ জন শিশু মারা যান)।
‘ইসরাইল’কে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার বাস্তব পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির ছত্রছায়ায় এই ধরনের অবর্ণনীয় অপরাধ ঘটতেই থাকবে যা বেগবান করছে প্রকাশ্য আঁতাত ও মর্যাদাহানীকর নীরবতার; এখানে আমি আমিরুল মু'মিনিন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ (আল্লাহ তাকে সুরক্ষা দিন) এর একটি উদ্ধৃতি দিতে চাই – যা তিনি ১৪৩৫ হিজরি ঈদ-উল-ফিতরে বলেছিলেন,
‘আমরা নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দখলদার ইসরাইলিদের অসভ্য আগ্রাসনের নিন্দা ও প্রকাশ্য বিরোধিতা করছি যাতে হাজারো-লক্ষ মানুষ হত্যা, আহত বা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এই পবিত্র রমযান মাসে। আমরা পৃথিবীকে জানাতে চাই – বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বকে জানাতে চাই – এই অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলুন, চুপ থাকবেন না, কারন তাদের ক্ষেত্রে নীরব থাকলে তা হবে অন্যায় এবং তার মানে দাঁড়াবে সকলের পরাজয়; এবং জরুরী ও বাস্তব পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে যাতে এই অত্যাচার ও আগ্রাসন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে না ফেলে।’
বর্তমানে আমরা এমন এক বর্বর শত্রু-জোটের মুকাবিলা করছি যার কাজ মানবতা, সহাবস্থান এবং যুক্তিসঙ্গত সংলাপের পরিভাষার সম্পূর্ন বিপরীত বরং এই উপাদানগুলো সে ভন্ডামির সাথে ব্যবহার করে এবং বাকি পৃথিবী যেন তা মেনে নেয় তার দাবী করে, যদিও সে মানবতা ও সহাবস্থানের প্রত্যেকটি নীতিকে অবজ্ঞা করে।
গাযার বাড়িঘর, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ও শিশুদের খেলার জায়গার উপর নিষ্ঠুর ও নির্দয় বোমা হামলা এবং এই উপত্যকার উপর ইহুদী, ক্রুসেডার এবং এদের মিত্রদের আন্তর্জাতিক নির্মম অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে আগ্রাসন এবং এই আগ্রাসনের ও ফিলিস্তিনের উপর মিথ্যা দাবীর সমর্থনে আছে ইহুদীরা, এবং এ কারনেই কোন মুসলিমের পক্ষেই তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
যাই হোক, অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে নিয়মসম্মত ও কার্যকর সামরিক কৌশল যখন তা সত্য ও পক্ষের লোকেদের নিরাপত্তায় আনুপাতিক হারে ব্যবহার করা হয় । ইতিহাসে মুসলিম সেনাবাহিনী এই কৌশল অসংখ্যবার সফলভাবে প্রয়োগ করেছে, বনু কুরাইযার ইহুদিদের উপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবরোধ, কনস্টান্টিনোপল এর উপর অটোমানদের অবরোধ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত, এবং ইরাকি মুজাহিদিনদের বাগদাদ ও গ্রিন জোনে ক্রুসেডার ও এর দালালদের বিরুদ্ধে অবরোধ, যে অবরোধ এই কোয়ালিশনকে দূর্বল ও কার্যকরভাবে পরাজিত করতে মূখ্য ভূমিকা রেখেছে।
ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামের উপর ইসরাইলের উপর্যুপরি আগ্রাসন এবং গাযার অরক্ষিত জনগনের উপর দমনমূলক নিষেধাজ্ঞা এভাবে চলতে পারে না যেভাবে মুসলিম বিশ্বকে দূঃখজনকভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
আমাদের সময় এসেছে আগুনকে আগুন দিয়ে মুকাবিলা করার, ইহুদী ও ক্রুসেডারদের উপর আমাদের নিজস্ব অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার এবং তাদের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড ও রক্তপ্রবাহ, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থায়ন দ্বারা উপস্থাপিত হয়, তার উপর আঘাত করা, সেখানেই আঘাত করা যেখানে ব্যাথা লাগে।
শত্রু রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বানিজ্যকে মুজাহিদিনদের অকার্যকর করে দিতে হবে, অথবা কমপক্ষে, এর খরচ বাড়িয়ে দিতে হবে, ইসলামি সামুদ্রিক এলাকা, বন্দর, খাল এবং প্রনালীতে তাদের মালবাহী জাহাজ ও নৌ-বানিজ্যের উপর আঘাত হেনে, গভীর সমুদ্রে, এবং তাদের নিজস্ব সমুদ্রসীমায়, এবং তাদের শিপিং রুটকে যখন, যেখানে, যেভাবে পারা যায় বিপর্যস্ত করে।
তাদের যেকোন জাহাজ আক্রমনের জন্য বৈধ নিশানা, আর রপ্তানী হচ্ছে যেকোন দেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান উপাদান, এমনকি পশ্চিমাদের অর্থনীতির জন্যও। অমূল্য তেল ও খনিজ সম্পদ যা শত্রুরা আমাদের থেকে চুরি করছে এবং তা দিয়ে তাদের যুদ্ধনীতি সচল রাখছে, মুজাহিদিনদের তার সরবরাহকে বন্ধ করতে হবে, মুজাহিদিনদের ইসলামি ভূমিতে ক্রুসেডারদের পরিচালিত তেল-কূপ স্যাবোটাজ করতে হবে এবং পাইপ লাইনগুলোর মাধ্যমে তেল উপকূলীয় এলাকাতে পৌছানো ও শত্রুর হাতে পড়ার পূর্বেই তা ধ্বংস করতে হবে, শত্রুর নিজস্ব সমুদ্রসীমায় তাদের সুপার-ট্যাঙ্কার ডুবিয়ে দিয়ে ও অয়েল-রিগ গুলো স্যাবোটাজ করে, এবং এভাবে, তাদের আকর্ষনীয় লাভজনক ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস করে দিতে হবে যেভাবে তারা আমাদেরটা করেছে গাযা, সোমালিয়া ও অন্যান্য স্থানে।
একই সাথে, মুসলিমদের অবশ্যই আমেরিকান, ক্রুসেডার ও ইহুদী পন্য, গাড়ি থেকে কম্পিউটার থেকে চকলেট থেকে পোশাক, বয়কট করতে হবে এবং আমাদের অবশ্যই সর্বতোভাবে স্থানীয় বিকল্প পন্য উৎপাদন, ক্রয় ও সমর্থন করতে হবে।
প্রধান পশ্চিমা কোম্পানি ও বহুজাতিক কর্পোরেশন যেমন ওয়াল মার্ট, ম্যাকডোনাল্ড’স, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, মাইক্রোসফট, নেসলে, ইউনিলিভার ইত্যাদি হচ্ছে আধিপত্যবাদী বিশ্বায়নের প্রতীক যা চিহ্নিত হয় দূর্বল ও দরিদ্রের শোষনের মাধ্যমে, এবং স্থানীয় অর্থনীতির ধ্বংসের মাধ্যমে। মুসলিম হিসেবে এবং মুজাহিদিন হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যেকোন মূল্যে এটা থামানো। মুসলিমদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিত্যাগ করতে হবে, কারন শুধু এই নয় যে এগুলো তথাকথিত ‘ইন্টারেস্ট/ইউজুয়ারি’ (সুদ/চক্রবৃদ্ধি সুদ) এর উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যার ব্যবহারকারি, অপ-ব্যবহারকারি ও সুবিধাভোগিদেরকে আল্লাহ তাঁর সাথে যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন (দেখুন কুর’আন ০২ : ২৭৫-২৮১)।
পশ্চিম-চালিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আরেকটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হোল ব্যাংক যা মুসলিম ও পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষদের দাস বানিয়ে রাখার এক কার্যকর উপায়। প্রকৃত পক্ষে, মুসলিমদের অবশ্যই সোনা, রূপা ও অন্যান্য মৌলিক পণ্যসামগ্রীকে বিনিময়ের মান ও মাধ্যম হিসেবে পুনঃপ্রবর্তনের জন্য চেষ্টা শুরু করতে হবে, শিল্প উৎপাদনকে আকৃষ্ট করার জন্য পণ্য-বিনিময় প্রথা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করতে হবে যার ভিত্তি হবে স্থানীয় ইসলামি অর্থনীতি এবং যাতে করে শত্রুর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উপর সক্ষমতা অর্জন করতে পারি।
স্বর্নমান বিনিময় ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন দরকার এই জন্য যাতে ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপরে আমরা জয়ী হতে পারি যা শূন্য থেকে মুদ্রা তৈরী করে, আমাদের বাজার ও অর্থনীতিকে পশ্চিমাদের সাথে বেধে ফেলে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, International Monetary Fund, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ইত্যাদি সংগঠনের করুনার উপর আমাদের নির্ভরশীল করে তোলে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক অবরোধ এবং অন্যান্য অসংখ্য ধরনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, সরকার ও ধর্মকে অরক্ষিত করে রাখে।
কেউ বলতে পারে, ‘কুফরের আন্তর্জাতিক জোটের পরাজয় ও বৃহত্তর ইসলামি রাষ্ট্র গঠন ছাড়া কী মুসলিমদের এই আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার জাঁতাকল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা যৌক্তিক হবে?’ আমার উত্তর হবে, ‘হ্যাঁ, ইসলামের বিজয়ের জন্য মুসলিমদের নিজেদেরকে আর্থিক এবং অর্থনৈতিকভাবে (financially and economically) প্রস্তুত করা সম্পূর্ন ভাবে যৌক্তিক, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য যেভাবে নিজেদেরকে ধর্মীয়, সামরিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রস্তুতি, সংগঠিত ও শিক্ষিত করতে উৎসাহ দেই ঠিক সেভাবেই!’
আজ, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে মুসলিমরা খুব ভালভাবে বুঝতে পারছে, তারা কোন দিনও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না যার স্বপ্ন তারা দেখে, যদি না তারা সুদভিত্তিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং বৃহৎ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর প্রভাব-প্রতিপত্তি থেকে তাদের দেশগুলোকে মুক্ত করতে না পারে। সুমাইয়া গানৌশি, The Guardian পত্রিকায় “Backstage, it’s business as usual” শিরনামের প্রবন্ধে লেখেন, যা তিন বছর আগে আরব বিশ্বের জনসমর্থিত বিদ্রোহ শুরুর পরেই প্রকাশ পায়, এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান সচেতনতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করে উপরে উল্লিখিত ব্যাবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ব্যবহার করে আরব অঞ্চলের প্রকাশঃমান বিদ্রোহের ধ্বংস সাধন ও অন্তর্ঘাত (sabotage) এর পশ্চিমা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।
তার প্রবন্ধ থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু অংশ উল্লেখ করছি –
“পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য পশ্চিমারা শুধু কঠোর সামরিক শক্তি মোতায়েন করছে না। বিশ্বব্যাংক ও IMF এর মাধ্যমে এটা তার অর্থনৈতিক বাহুকেও প্রসারিত করেছে। সম্প্রতি, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট যোয়েলিক একদল আরব অ্যাক্টিভিস্ট-দের উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলের এই পরিবর্তনকে ‘নিজস্ব গতিপথের আকর্ষনীয় মূহুর্ত’ (striking moment engendering its own momentum) বলে প্রশংসা করে। উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নিয়ে তাকে যখন বলতে শুনি, কেউ তাকে নিষ্পাপ, স্বাধীন একজন বিশ্লেষক ভাবতে পারে যার অর্থনৈতিক ফাঁদগুলোর ব্যাপারে কোন ধারনাই নেই যার কবলে পড়ে এই অঞ্চলগুলো সংগ্রাম করছে। এই প্রচারনা হচ্ছে যা ঘটছে তার একটি মৌলিক অংশ লুকিয়ে রাখার ছলনা – জনগন কেবলমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত রাজনৈতিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেনি, বরং IMF ও বিশ্বব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক মডেলের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে এবং তিউনিসিয়া ও ঈজিপ্টের ক্ষেত্রে EU (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) এর কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে বিদ্রোহ করেছে। তিউনিসিয়াতে, প্রথম আরব দেশ যেটা ১৯৯৫ সালে ইউরো-মেডিটারনিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এগ্রিমেন্টে সই করে, ৬৭ শতাংশেরও অধিক সরকার নিয়ন্ত্রিত ফার্ম এখন বেসরকারি-করণ হয়েছে, যেখানে ঈজিপ্টে এই সংখ্যা ৩১৪ এর মধ্যে ১৬৪টি। এই পদক্ষেপগুলো দেশগুলোর অর্থনীতিকে ঋণে একেবারে ডুবিয়ে দিয়েছে, এভাবে আমেরিকা ও EU এর হাতে জিম্মী হয়ে গেছে।’’
এবং এটা হচ্ছে মুসলিম বিশ্বকে পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রনে রাখার অশুভ চক্রের প্রথম ধাপ! সরকারি মালিকানাধীন ফার্মের বেসরকারি-করণ নীতির প্রকৃত মানে কি তা বোঝার জন্য এবং অন্যান্য নব্য-ঔপনিবেশিক নীতি যে কতটা নিপীড়ন মূলক তা বোঝার জন্য আমি জন পারকিন্স এর ‘কনফেশন অফ অ্যান ইকোনোমিক হিটম্যান’ ও ‘দা সিক্রেট হিস্টোরি অফ আমেরিকান এম্পায়ার’ এই দুটি বই এর কথা বলবো।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সুমাইয়া গানৌশি উল্লিখিত জনগনের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা সত্ত্বেও, তিউনিসিয়ার তথাকথিত বিপ্লবী সরকার (যার নেতৃত্বে আছে ছদ্ম-ইসলামিক রেঁনেসা পার্টি যার নেতৃত্বে আছে সুমাইয়ার পিতা রশিদ গানৌশি ও স্বামী রফিক আব্দুস সালাম) এবং তার সাথে নতুন/পুরোন মোড়কের ঈজিপ্ট, লিবিয়া ও ইয়েমেন, সাবেক শাসকগুলোর বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও IMF এর কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার অভ্যাস বজায় রাখার চাইতেও বেশি করছে এবং আমেরিকা, EU ও অন্যান্য দাতা দেশগুলো থেকে আরও বেশি করে শর্ত-যুক্ত অনুদান গ্রহন করছে (সাবেক শাসকদের কাউন্টার-টেররিজম নীতির ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়ার কথা বাদ দিলাম, এটার আলোচনা অন্য দিন হবে), এতে করে প্রকৃত পরিবর্তনের প্রতি জনগনের আশাকে বিলম্বিত করছে এবং সেই সাবেক অভিজাতদের শাসনের পুনরুত্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই বিদ্রোহের যে উদ্দেশ্য তা ভুলিয়ে দিচ্ছে।
তবে যাই হোক, পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে একটা ঐকমত্য আছে যে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন সর্বাধিক ভঙ্গুর ও অরক্ষিত অবস্থায় আছে, বিশেষ করে আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশ গুলোতে যে উত্থান ঘটছে তার আলোকে এবং বিশাল পরিমানে চক্রবৃদ্ধি সুদের বৃদ্ধিতে ইউরোপে ও আমেরিকায় যা প্রচন্ড রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় এর দিকে পশ্চিমা বিশ্বকে ধাবিত করছে।
এই কারনেই পশ্চিমা নেতারা এই ব্যবস্থার যোগ্যতা এবং ভবিষ্যত পশ্চিমা সভ্যতার উপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেই যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কেউ তো এটাও বলছে যে এই ব্যবস্থার গোড়াতেই গলদ আছে এবং এতে করে ব্রিটন-উডস মডেলের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। এই রকম একটি সংস্কার অবশ্যই পশ্চিমা আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রনের কিছু অপূরনীয় হাতিয়ারকে ফেলে দিতে হবে, আমেরিকা ও তার ক্রুসেডার জোট এটা কখনই মেনে নিবে না, তার মানে এই তিলে তিলে ধ্বংস করার যুদ্ধ চলতেই থাকবে, যা ইনশা আল্লাহ তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শেষ করে দিবে, এবং এরই সাথে তাদের আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্য-ও। অর্থনৈতিক অস্ত্র হোল এমন এক তলোয়ার যার দুই পাশেই ধার রয়েছে, মুসলিম বিশ্বের মতই পশ্চিমা বিশ্বও এই ধরনের যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে আছে।
এই ঐতিহাসিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মুহূর্তে প্রত্যেক মুসলিমের কাছে এটাই দাবী যে সে লড়াইয়ে অংশ গ্রহন করবে এবং তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ইহুদীবাদী ও ক্রুসেডারদের জীবন বিপর্যস্ত করবে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে অবদান রাখবে। আজকে, আমরা ধন্যবাদ জানাই আল্লাহকে, তারপরে, মুজাহিদিনদের আত্মত্যাগ ও মরণপণ সংকল্পকে এবং তাদের দূরদর্শী নেতৃত্বকে যেমন, আমির-উল-মু’মিনিন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমর (আল্লাহ তাঁকে সুরক্ষা দিন), শহীদ শায়খ উসামা বিন লাদিন (আল্লাহ তাঁর উপর রহমত বর্ষন করুন), এবং আমাদের মুজাহিদ আমির শায়খ আইমান আল জাওয়াহিরি (আল্লাহ তাঁকে সুরক্ষা দিন), আন্তর্জাতিক কুফরের মাথা, আমেরিকা, আজ এমন-ই এক অভূতপূর্ব দূর্বল অবস্থানে আছে যে এর সাম্রাজ্যের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে গেছে।
আল্লাহর অনুগ্রহে, মুসলিমরা আমেরিকা এবং পাপিষ্ঠদের জোটকে অন্ততপক্ষে দুইটি গুরুত্বপূর্ন যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই বিভ্রমে পড়ে যাওয়া যাবে না যে ক্রুসেডারদের ইরাক থেকে বিতাড়ন এবং এই বছরেই আফগানিস্তান থেকে সম্ভাব্য বিতাড়ন মানেই বৃহত্তর আন্তর্জাতিক যুদ্ধের সমাপ্তি।
ইসলামিক উম্মাহ আজ অসংখ্য দখলদারিত্ব ও নিষেধাজ্ঞার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে আর ফিলিস্তিন এখনও নির্দয় ইহুদীদের দয়া ও নিয়ন্ত্রনে বেঁচে আছে , রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসারিরা আক্রমনের মুখে আছে মালি, নাইজেরিয়া এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে পশ্চিমে সিরিয়া, ইরাক আর পূর্বে বার্মা, থাইল্যান্ডে এবং মুসলিমরা আছে নব্য-উপনিবেশবাদ, স্বৈরতন্ত্র, দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, দ্বীনহীনতা, এবং কুফরের অন্ধ অনুকরন ও অনুসরনের পথে, আমাদের সামনে যে পথ তা মোটেও সহজ নয়।
কিন্তু যদি প্রত্যেকেই ইসলামের শত্রু ও মুসলিমদের নির্যাতকদের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে আন্তরিকতার সাথে অংশ নেয়, একই সাথে তার দ্বীন প্রয়োগের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেয় এবং নিজেকে ও নিজের আশে-পাশের মানুষদের শিক্ষিত ও সংশোধন করে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) ইনশা আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করবেন এবং আমাদের বিজয় দান করবেন শত্রুদের উপরে এবং আমাদের নফসের উপর, এবং আমাদের ঐক্য দান করবেন এবং আমাদের জন্য প্রতিষ্টা করবেন খিলাফত যার জন্যই আমরা কাজ করছি।
প্রিয় মুসলিম, শত্রুদের উপরে জয়ী হওয়া এবং খিলাফত প্রতিষ্টার পদ্ধতি শুধু সশস্ত্র লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সকল হালাল উপায় ও উপকরন এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যার মাধ্যমে সামরিক প্রচেষ্টা সমর্থন পাবে, শক্তিশালী হবে ও অগ্রগামী হবে এবং মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যতের জন্য এই যুদ্ধে আমাদের সফলতা দান করবে।
তাই, কেন দেরী করছেন?
জিহাদে আপনার দায়িত্ব পালন করুন এখনই...
সেটা সামরিক, আর্থিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, অনুপ্রেরনামূলক বা অন্য যা-ই হোক না কেন।
ধৈর্য্যশীল ও অটল থাকুন, এবং আপনার ভাইদের অন্তরে তা ধীরে ধীরে প্রবেশ করান,
কারন, যুদ্ধ কিন্তু এখনও শেষ হয়নি...
ওয়াল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন।
সংগ্রহীত।
Comment