হক্বের বিরোধী থাকা আবশ্যক, যাদের সাথে জিহাদ করা হবে
শাইখ আতিয়াতুল্লাহ লীবী রাহি:
শাইখ আতিয়াতুল্লাহ লীবী রাহি:
আল্লাহ তায়ালা বলেন: ( তারপর তাদের মধ্যে মতবাদ দেখা দিল, তখন আল্লাহ নবীদেরকে পাঠালেন সুসংবাদ দাতা সতর্ককারীরুপে এবং সাথে সত্য সম্বলিত কিতাব নাযিল করলেন, যাতে মানুষের মাঝে সে সব বিষয়ে ফায়সালা দেন, যাতে তারা মতবিরোধ করছিল। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারাই তাদের নিকট সমুজ্জল নিদর্শনাবলী আসার পরেও তাতে মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছিল।)
অর্থাৎ যখন আল্লাহ পাক রাসুলদেরকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রুপে প্রেরন করলেন তখন মানুষ বিভক্ত হয়ে গেল। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন:
( এসকল রাসুলগন, যাদের কতককে আমি কতকের উপর শ্রেষ্টত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে, যার সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন। এবং তাদের মধ্যে কাউকে তিনি বহু উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। আর আমি মারয়ামের পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী দিয়েছি ও রুহুল-কুদসের মাধ্যমে তার সাহায্য করেছি। আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তাদের পরবর্তীকালের মানুষ তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী আসার পরেও আত্নকলহে লিপ্ত হত না।)
অর্থাৎ তাদের রিসালাতের পর তাদের পরবর্তীরা।
( কিন্তু তারা নিজেরাই বিরোধ সৃষ্টি করল। ফলে তাদের কতক ঈমান আনল আর আর কতক কুফুর অবলম্বন করল। তারা চাইলে আত্নকলহে লিপ্ত হত না। কিন্তু আল্লাহ সেটাই করেন যা তিনি চান।)
তাহলে সূরা বাকারার এই পবিত্র আয়াতটি বুঝাল যে, রাসূলদের প্রেরনের পর মানুষ মুমিন ও কাফের দুদলে বিভক্ত হয়ে পরে। যারা রাসূলদের অনুসরন করল, তাদের বিশ্বাস করল, এবং আল্লাহ সুবহানাহুর আনুগত্য করল, তারাই হল মুমিন যারা একক ও শরীকহীন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করে।
যখন মানুষ মুমিন ও কাফেরে বিভক্ত হয়ে পরে, তখন তাদের মাঝে পরস্পরে যুদ্ধের সুত্রপাত হয়।আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
(আল্লাহ চাইলে তারা আত্ন কলহে লিপ্ত হত না। কিন্তু আল্লাহ সেটাই করেন, যা তিনি চান।)
তাই আয়াতটি প্রমান করে যে, মুমিন ও কাফেরদের মাঝে যুদ্ধ, এটি আল্লাহর ইচ্ছা, আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এটাই চান। এ বিষয়টি আরো অনেক আয়াতে স্পষ্টভাবে বর্ননা করেছেন।
অনেক আয়াত স্পষ্টভাবে বর্ননা করে যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টজীবের কতকের দ্বারা কতককে পরিক্ষা করেন এবং এক পক্ষকে অপর পক্ষের উপর চাপিয়ে দেন, উভয় পক্ষকে পরিক্ষা করার জন্য, যাচাই করার জন্য, নিরীক্ষা করার জন্য, ফেতনার সম্মুখিন করার জন্য। এছাড়াও আরো অনেক উদ্দেশ্যের রয়েছে। যেমন: আল্লাহ সুবহানাহুর জিহাদের মাধ্যমে তার বন্ধু, একনিষ্ট ও প্রিয়দেরকে বাছাই করে নেন, শহীদদেরকে কবুল করে নেন। এবং ঐ সকল লোকদেরকে বাছাই করেন, যারা তাকেই অবলম্বন করেছে, তাকে প্রাধান্য দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বেছে নেন। এবং তাদের মর্যাদা সুউচ্চ করেন। তাই এটা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালারই ইচ্ছা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন:
( এভাবেই আমি তাদের কতক লোক দ্বারা কতক লোককে পরিক্ষায় ফেলেছি, যাতে তারা তাদের সম্পর্কে বলে, এরাই কি সেই লোক, আমাদের সকলকে রেখে আল্লাহ যাদেরকে অনুগ্রহ করার জন্য বেছে নিয়েছেন? আল্লাহ কি তার কৃতজ্ঞ বান্দাদের সম্পর্কে অন্যদের থেকে বেশি জানেন না? (সুরা আল আনআম।))
আল্লাহ তায়ালা সূরা ফুরকানে বলেন; ( আমি তোমাদের কতককে কতকের জন্য পরীক্ষাস্বরুপ বানিয়েছি। বল তোমরা কি সবর করবে? তোমাদের প্রতিপালক সবকিছুই দেখছেন।)
তাই আল্লাহ তায়ালাই মানুষের একদলকে আরেক দলের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের একদলকে আরেকদলের দ্বারা পরিক্ষা করছেন। এটাই আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রায়। আল্লাহ তায়ালা এটাই চান। এটাই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা। কতই না সুউচ্চ, মহান, মর্যাদাময়, পূত- পবিত্র ইলাহী ইচ্ছা। তিনি পবিত্র ও মহান। তিনিই এই জিনিসটা চান।
এজন্যই তিনি মানুষদেরকে প্রেরন করেছেন, এজন্যই আমাদেরকে এত দায়ীত্বাবলী দিয়েছেন। যাতে আল্লাহ সুবহানাহু তার বন্ধুদেরকে বাছাই করে নিতে পারেন। এবং যাতে ঐসকল উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়িত হয়, যার কয়েকটি আমরা পুর্বে উল্লেখ করলাম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: যারা কুফুর অবলম্বন করেছে, তাদের সাথে যখন তোমাদের মোকাবেলা হয়। তখন তোমরা তাদের গর্দানে আঘাত করবে। তাদের গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার এবং তাদের সাথে যুদ্ধ ও জিহাদ করা আদেশ করলেন। ( ফাদারবার রিক্বাব) এখানে ফেয়েল (ক্রিয়া)র স্হলাভিষিক্ত মাসদার ( ক্রিয়ামূল) দ্বারা আদেশ করা হয়েছে -- অর্থাৎ যখন তাদের অধিক হারে হত্যা ও আহত করে ফেলতে পারবে-- অবশেষে তোমরা যখন তোমরা তাদের শক্তি চূর্ন করবে, তখন তাদেরকে শক্তভাবে বন্দী করবে, তারপর( চাইলে)তাদেরকে মুক্তি দিবে অনুকম্পা দেখিয়ে অথবা মুক্তিপন নিয়ে। তোমাদের প্রতি এটাই নির্দেশ, যাবৎ না যুদ্ধ তার অস্ত্র রেখে দেয় ( অর্থাৎ শেষ হয়ে যায়) আল্লাহ চাইলে নিজেই তাদের শাস্তি দিতেন, কিন্তু তিনি তোমাদের একজনকে অপরজন দ্বারা পরীক্ষা করতে চান।)
এটা হচ্ছে দলিলের পর্যায়ে। আর এর পূর্বে প্রথম অংশটি হচ্ছে গুরুত্তপূর্ন। সেই অংশটুকু হচ্ছে, আল্লাহ পাক বলেন: ((এটাই আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ চাইলে নিজেই তাদের শাস্তি দিতেন, কিন্তু তিনি তোমাদের একজনকে অপরজন দ্বারা পরীক্ষা করতে চান।)) অর্থাৎ তোমাদের একদলের দ্বারা অন্য সৃষ্ট জীবকে। তোমাদের মুমিন অংশের দ্বারা তোমাদের কাফের অংশকে। আল্লাহ তায়ালা চাইলে কাফেরদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। আল্লাহ পারেন, তার ক্ষমতা আছে, তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। তিনি পবিত্র মহান সত্তা। তিনি তাদের ধংশ করে দিতে পারতেন ( কুন ফায়াকুন) হও অমনি তা হয়ে যায়।
কিন্তু তিনি তাদের বাচিয়ে রেখেছেন এবং আমাদের কে তাদের দ্বারা পরীক্ষা করছেন। সুতরাং আমরা যেন পরীক্ষায় উত্তির্ণ হতে পারি আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুক। আমিন!!!!!!
Comment