সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর জন্য, দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসুল (সাঃ) এবং তার পরিবার বর্গের উপর।
এ দেশে জিহাদের কাজ সফল করার জন্য জনগনের সম্পৃক্ততা অনেক জরুরী। জনগন ব্যাতিত এই জিহাদ সফলতার মুখ দেখবেনা। যদিও এখানে কথাটা একটু কেমন যেন শোনায় যে, আল্লাহর জিহাদ কি জনগনের উপরে এতই নির্ভরশীল হয়ে গেল যাদের অধিকাংশই কিনা আকন্ঠ এই দুনিয়ার মায়াজালে ডুবে আছে! আসলে ব্যাপারটা যদি অন্য ভাবে দেখি – মনে আছে রাবি ইবনে আমর (রাঃ) এর সেই কথাটি, "আমরা মানুষ কে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি” আমাদের এখানেও জিহাদের মাকসাদ কি সেটাই না? মানুষ কে তাগুতের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাতের দাসত্বের দিকে ফিরিয়ে নেয়া। মানুষ কে সবচেয়ে বড় পাপ শির্কের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ফিরিয়ে নেয়া। নিঃসন্দেহে তাই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যার জন্য এই জিহাদ, যাদের মুক্ত করতে এই জিহাদ, যাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এই জিহাদ, যাদের সম্মানিত করতে এই জিহাদ, যাদের জান এবং মালের নিরাপত্তা দিতে এই জিহাদ, যাদের মা-বোনদের ইজ্জতের হেফাজত করতে এই জিহাদ তারাই যদি এই জিহাদের স্বরূপ না বুঝে তাহলে এই জিহাদ কিভাবে সফল হতে পারে! এটা এমন যে, আমি কাউকে একটা উপহার দিচ্ছি কিন্তু সে জানেনা যে এটা কত মুল্যবান উপহার তাই এটা ফিরিয়ে দিচ্ছে কিংবা হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। মুজাহিদিন রা যে জিহাদ করেন তারা কি নিজেদের শান-শওকত, আলিশান জিন্দেগী, ক্ষমতা এই সবের লোভে জিহাদ করেন? তারা তো জিহাদ করেন, আল্লাহ জমিনের অসহায় নারী শিশুদের জন্য, ন্যায় এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য, বাতিল কে দূর করার জন্য এবং হাক্ক প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
কিন্তু আপনি তাকিয়ে দেখেন আমাদের আশে পাশের কয়জন এই বুঝে কে উপলব্ধি করতে পেরেছেন?
আপনি যদি পুরা জমিনের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন মানুষ আজ তাগুতের কাছে নিজদের ঈমান এবং আমল কে বিক্রি করে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘরে বসে আছে!এর চেয়ে ভয়ঙ্কর হালত আর কি হতে পারে! এদেশের মানুষের উপরে সবচেয়ে বেশি জুলুম করে পুলিশ এবং র্যাহব বাহিনী এবং আওয়ামী কুত্তা বাহিনী, অথচ দেখেন মানুষ এদের জুলুমের কথা ভুলে যায়, কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে এই তাগুত বাহিনীর হাত শক্ত করে। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর টি ছোট হবেনা বরং কিছুটা বড় হবে – কারন এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গেলে কিছুটা গভীরে যেতে হবে।
... "দাওয়াতি কাজের প্রস্তুতির ব্যাপারে আমরা সবাই যদি একমত হই তাহলে এরপর আমাদের আগে দেখা দরকার এই কাজের পথে সবচেয়ে বড় বাধা কি? এছাড়া বর্তমানে যুদ্ধের অন্যতম একটি নীরব ঘাতক আছে, বর্তমানে একটি বিশেষ পদ্ধতির যুদ্ধ চালু হয়েছে যা কাজ করে চোখের আড়ালে, কিন্তু ফলাফল ভয়ঙ্কর!" ...
আমরা সবাই জানি যে তাগুত বাহিনি কিছুদিন আগেও জনবিচ্ছিন্ন ছিলো। দেরিতে হলেও তারা বুঝতে পেরেছে যে জন বিচ্ছিন্ন থাকলে তাদের ধংস আরো দ্রুত হবে, এবং দ্বিতীয়ত জন বিচ্ছিন্ন থাকলে আমাদের বিরুদ্ধে তারা কখনই পেরে উঠবে না, এক কথায় অসম্ভব! এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে তারা জনগন কে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেস্টা করছে।
এই কাজটি তারা করছে একটি প্রোপাগান্ডা ক্যামপেইনের সাহায্যে। আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, এই ক্যাম্পেইনের প্রধান ভাবে দুই ধরনের কাজ আছে। একটি হচ্ছে র্যাআপিড রেস্পন্স আরেকটি হচ্ছে লং টার্ম রেসপন্স। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে তারা সরাসরি পাবলিক কে অ্যাড্রেস করে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা মেসেজ প্রচার করে, পরিস্থিতির উপরে নিয়ন্ত্রন থাকার জন্য তারা পরিস্থিতিকে কাজে লাগায় এবং তাদের মেসেজ এর তাৎক্ষনিক প্রভাব পাবলিকের উপরে পড়ে। আরেকটি হচ্ছে লংটার্ম রেস্পন্স আর এই কাজটি করে, বলতে গেলে আসলে সমাজের পুরা সিস্টেমটাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ, বুদ্ধিজীবী, ভ্রান্ত আলিম সমাজ, পরিবার, মিডিয়া, সমস্ত কিছুই এই প্রোপাগান্ডা ক্যামপেইনের হয়ে কাজ করছে। এই প্রোপাগান্ডার রেস্পন্স তাৎক্ষনিক ভাবে দেখা যায়না, তবে এটা ধীরে ধীরে মুল্যবোধকে পরিবর্তন করে ফেলে। এবং বিশেষ কোন এক ট্রিগারিং পয়েন্টে তা বের হয়ে আসে। এর উদাহরন হিসেবে বলা যায়, আমাদের আশে পাশের আম ভাবে ইসলামের আহকাম সমুহকে ভালোবাসে এমন বয়স্ক মানুষদের কথা বলা যেতে পারে, যারা হয়ত কিছু দিন আগেও অন্ধ ভাবেই আল্লাহর দ্বীন কে ভালোবাসতেন কিন্তু এখন তারা ডিমোটিভেটেড হয়ে গেছেন, ডিমোটিভেটেড এজন্য বললাম কারন এখনও তারা মনে করেন তারা আল্লহর দ্বীনকে ভালোবাসছেন, কিন্তু আসলে তারা তাগুতের প্রোপাগান্ডা ক্যামপেইনের শিকার হয়ে বায়বীয় ধারনার জগতে চলে গেছেন।
এখানে মুল যে বিষয়ে দেখা দরকার তা হচ্ছে প্রোপাগান্ডার লক্ষ্য কি? আপাত দৃষ্টিতে মোটা দাগে দেখলে মনে হবে তারা আসলে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বা র্যাআডিকাল ইসলামিস্টদের (যদিও ইসলামে র্যা ডিকাল বলে কিছু নাই) বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাচ্ছে, (যেটা তারা সবার সামনে উপস্থাপন করতে চায়) যা এক কথায় ব্যাক্তি বা দলের বিরুদ্ধে কিন্তু বাস্তবে আসলে তা ভুল। তাদের এই আগ্রাসন আসলে দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে, যা বাস্তবে আমাদের মুল ভিত্তি ঈমান এবং আকিদাহ’র বিরুদ্ধে। কিন্তু সাধারন মানুষ যদি জেনে যায় বা দিব্য চোখে দেখে ফেলে যে, তারা আসলে ইসলামের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে, এবং আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ’র বিরুদ্ধেই যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে তাহলে তারা সামনে আগাতে পারবেনা। আর এই জন্যই দরকার হয় প্রোপ্যাগান্ডা। প্রোপ্যাগান্ডা এর মুল মাকসাদ হচ্ছে মানুষকে তাই ভাবতে শেখানো যা আপনি চান সে ভাবুক, প্রোপ্যাগান্ডা’র মাকসাদ হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস এবং আদর্শ কে নিয়ন্ত্রন করা। তাগুতের লক্ষ্য আমাদের কাছে ঘোলাটেই থাকবে যদি আমরা প্রোপ্যাগান্ডার মাকসাদের দিকে না তাকাই, প্রোপ্যাগান্ডা কেন কাজ করে এবং কিভাবে কাজ করে সেটা না বুঝি। কিছু ফিজিক্যাল জঙ্গীকে রিমুভ করা হয়ত কঠিন কিছুনা তবে জঙ্গীদের আদর্শ কে রিমুভ করা কঠিন, তারা আসলে কিছু জঙ্গীকে রিমুভ করে আরো লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের কাছে প্রোপ্যাগান্ডার মুল মেসেজ পৌছিয়ে দিচ্ছে! তারা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে, আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারবেনা বা বললেও তা আম মুসলিম মানবে কেন? এজন্য তারা ইসলাম কে জঙ্গী ট্যাগ দিয়ে আক্রমন করছে। সারা দুনিয়াতে কাফিররা আসলে ইসলাম নামের একটি আদর্শের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, তাদের দুশ্চিন্তাও এই আদর্শকে নিয়েই, অর্থাৎ ইসলাম কে নিয়েই।
ব্যাটল অফ হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডে এই আলোচনা বিস্তারিত এসেছে। কিভাবে তারা আদর্শগত ভাবে ইসলামের সাথে যুদ্ধ করছে। এছাড়া আমার এই কথাকে আরো শক্ত ভাবে বিশ্বাস করার জন্য আমি কুরআনের একটি আয়াতের দিকে তাকিয়েছি, আল্লাহ তায়ালা সুরা আল ইসরার ৮১ নাম্বার আয়াতে বলছেন, “আর বল, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবারই” অর্থাৎ বাতিল সবসময়ে সত্যের ভয়ে তটস্থ থাকে, সত্য প্রকাশিত হলেই বাতিল কে দূর হতে হবে, যেমনটা শাইখ আওলাকি (রহ) তাঁর লেকচারে উল্লেখ করেছেন। তাই বাতিল সত্যের নিশানাও দেখতে চায়না, সত্য কে চাপিয়ে রাখতে চায়, সত্য কে আক্রমন করতে চায়। আর যেহেতু হাক্ক হচ্ছে হাক্কই তাই হাক্ক এর আসল রুপে যদি তাতে আঘাত হানা হয় তবে তা সবার সামনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য কাফিররা আগে হাক্ক এর গায়ে অন্য লেবেল চাপিয়ে দেয়ার চেস্টা করে, এরপর সেই আবরনের আড়ালে আক্রমন করে, আর এই কাজটিই হচ্ছে প্রোপ্যাগান্ডা। প্রপাগ্যান্ডা হচ্ছে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ারের প্রধান অস্ত্র, সুতরাং এদিক থেকেও স্পস্ট হয়ে যায় যে কাফির রা আসলে আমদের বিশ্বাস এবং আকিদাহ এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত।
একটি বাস্তব উদাহরন দেই, আপনারা জানেন বাংলা অভিধানে জঙ্গি শব্দ নতুন নয়, এমন না যে কেউ আগে কখনো এই শব্দ শুনেনি। এই শব্দ আগেও ছিলো, এমনকি সামরিক বাহিনীর সিলেবাসে জঙ্গী শব্দটি অহরহ ব্যাবহার হয়, আম ভাবে জঙ্গী তাদের বলা হয় যারা হচ্ছে মারদাঙ্গা টাইপের সৈন্য, এমন সৈন্যদল কে জঙ্গীদল বলা হয়। কিন্তু এই জঙ্গী নিয়ে কারো কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে কেন মানুষের জঙ্গী শব্দ নিয়ে মানুষের এত পেরেশানী! কারন এভাবেই আম মানুষকে ভাবতে শেখানো হচ্ছে, চিন্তা করতে শেখানো হচ্ছে। এটাই তাদের প্রোপ্যাগান্ডা এর মাকসাদ। এখন এদেশের তাগুতরা “জঙ্গী” ধারনাটাকে তাদের চাওয়া অনুযায়ী মানুষের মনে বদ্ধমুল করে দিতে পেরেছে, এখন এই জঙ্গী ট্যাগটির আড়ালে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। একটি বাস্তব উদাহরন দেই, পেপারে দেখলাম, রাজিব হায়দার হত্যার রায় ঘোষণার সাথে নতুন বক্তব্য যুক্ত করেছে, “মসজিদেরর ইমাম গন নামাজ পড়াবেন, মুসল্লিদের ধর্মীয় শিক্ষা দিবেন, রাষ্ট্রের আইনের পরিপন্থী কোন কথা বলতে পারবেন না” রায় ঘোষণা টি হচ্ছিল জঙ্গী ট্যাগ এর আড়ালে কিন্তু আক্রমন টা হয়েছে কোথায় তা কি বুঝতে পারছেন? সরাসরি বলে দেয়া হল, রাষ্ট্রের আইনের সামনে ইসলাম কিছুই না! এটা কিসের উপরে আঘাত? এটা কি ইসলামের উপরে আঘাত নয়? কিন্তু এই কথাটি যদি সরাসরি বলা হত তাহলে আম মুসলিম হয়ত প্রতিবাদ করত, কিন্তু সেই একই মেসেজ একটি প্রোপ্যাগান্ডা হিসেবে যখন চালিয়ে দেয়া হল তখন কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়াই হলোনা, আর এর অর্থ হচ্ছে আম মুসলিম সেটাকে সয়ে নিলো। আর এভাবেই প্রোপ্যাগান্ডা ধীরে ধীরে মানুষের আদর্শ এবং চিন্তা ভাবনা কে কলুষিত করে ফেলে। যেমন এই প্রোপ্যাগান্ডা সফল হলে মানুষ ভাববে মাসজিদের ইমাম গন দেশের আইন পরিপন্থী কিছু বলতে পারবেন না! এখানে মুল যে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার তা হচ্ছে প্রোপ্যাগান্ডা কাজ করে একটি সমাজ বা জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস বা আদর্শ নিয়ে। প্রোপ্যাগান্ডা শব্দটিই এসেছে “Propagating Faith” থেকে। তাহলে এটি আরো পরিষ্কার হয়ে গেলো যে তাদের এই যুদ্ধ বাস্তবিকে ইসলামের সাথেই যুদ্ধ।
* চলবে ইনশাআল্লাহ
এ দেশে জিহাদের কাজ সফল করার জন্য জনগনের সম্পৃক্ততা অনেক জরুরী। জনগন ব্যাতিত এই জিহাদ সফলতার মুখ দেখবেনা। যদিও এখানে কথাটা একটু কেমন যেন শোনায় যে, আল্লাহর জিহাদ কি জনগনের উপরে এতই নির্ভরশীল হয়ে গেল যাদের অধিকাংশই কিনা আকন্ঠ এই দুনিয়ার মায়াজালে ডুবে আছে! আসলে ব্যাপারটা যদি অন্য ভাবে দেখি – মনে আছে রাবি ইবনে আমর (রাঃ) এর সেই কথাটি, "আমরা মানুষ কে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি” আমাদের এখানেও জিহাদের মাকসাদ কি সেটাই না? মানুষ কে তাগুতের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাতের দাসত্বের দিকে ফিরিয়ে নেয়া। মানুষ কে সবচেয়ে বড় পাপ শির্কের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ফিরিয়ে নেয়া। নিঃসন্দেহে তাই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যার জন্য এই জিহাদ, যাদের মুক্ত করতে এই জিহাদ, যাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এই জিহাদ, যাদের সম্মানিত করতে এই জিহাদ, যাদের জান এবং মালের নিরাপত্তা দিতে এই জিহাদ, যাদের মা-বোনদের ইজ্জতের হেফাজত করতে এই জিহাদ তারাই যদি এই জিহাদের স্বরূপ না বুঝে তাহলে এই জিহাদ কিভাবে সফল হতে পারে! এটা এমন যে, আমি কাউকে একটা উপহার দিচ্ছি কিন্তু সে জানেনা যে এটা কত মুল্যবান উপহার তাই এটা ফিরিয়ে দিচ্ছে কিংবা হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। মুজাহিদিন রা যে জিহাদ করেন তারা কি নিজেদের শান-শওকত, আলিশান জিন্দেগী, ক্ষমতা এই সবের লোভে জিহাদ করেন? তারা তো জিহাদ করেন, আল্লাহ জমিনের অসহায় নারী শিশুদের জন্য, ন্যায় এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য, বাতিল কে দূর করার জন্য এবং হাক্ক প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
কিন্তু আপনি তাকিয়ে দেখেন আমাদের আশে পাশের কয়জন এই বুঝে কে উপলব্ধি করতে পেরেছেন?
আপনি যদি পুরা জমিনের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন মানুষ আজ তাগুতের কাছে নিজদের ঈমান এবং আমল কে বিক্রি করে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘরে বসে আছে!এর চেয়ে ভয়ঙ্কর হালত আর কি হতে পারে! এদেশের মানুষের উপরে সবচেয়ে বেশি জুলুম করে পুলিশ এবং র্যাহব বাহিনী এবং আওয়ামী কুত্তা বাহিনী, অথচ দেখেন মানুষ এদের জুলুমের কথা ভুলে যায়, কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে এই তাগুত বাহিনীর হাত শক্ত করে। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর টি ছোট হবেনা বরং কিছুটা বড় হবে – কারন এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গেলে কিছুটা গভীরে যেতে হবে।
... "দাওয়াতি কাজের প্রস্তুতির ব্যাপারে আমরা সবাই যদি একমত হই তাহলে এরপর আমাদের আগে দেখা দরকার এই কাজের পথে সবচেয়ে বড় বাধা কি? এছাড়া বর্তমানে যুদ্ধের অন্যতম একটি নীরব ঘাতক আছে, বর্তমানে একটি বিশেষ পদ্ধতির যুদ্ধ চালু হয়েছে যা কাজ করে চোখের আড়ালে, কিন্তু ফলাফল ভয়ঙ্কর!" ...
আমরা সবাই জানি যে তাগুত বাহিনি কিছুদিন আগেও জনবিচ্ছিন্ন ছিলো। দেরিতে হলেও তারা বুঝতে পেরেছে যে জন বিচ্ছিন্ন থাকলে তাদের ধংস আরো দ্রুত হবে, এবং দ্বিতীয়ত জন বিচ্ছিন্ন থাকলে আমাদের বিরুদ্ধে তারা কখনই পেরে উঠবে না, এক কথায় অসম্ভব! এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে তারা জনগন কে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেস্টা করছে।
এই কাজটি তারা করছে একটি প্রোপাগান্ডা ক্যামপেইনের সাহায্যে। আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, এই ক্যাম্পেইনের প্রধান ভাবে দুই ধরনের কাজ আছে। একটি হচ্ছে র্যাআপিড রেস্পন্স আরেকটি হচ্ছে লং টার্ম রেসপন্স। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে তারা সরাসরি পাবলিক কে অ্যাড্রেস করে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা মেসেজ প্রচার করে, পরিস্থিতির উপরে নিয়ন্ত্রন থাকার জন্য তারা পরিস্থিতিকে কাজে লাগায় এবং তাদের মেসেজ এর তাৎক্ষনিক প্রভাব পাবলিকের উপরে পড়ে। আরেকটি হচ্ছে লংটার্ম রেস্পন্স আর এই কাজটি করে, বলতে গেলে আসলে সমাজের পুরা সিস্টেমটাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ, বুদ্ধিজীবী, ভ্রান্ত আলিম সমাজ, পরিবার, মিডিয়া, সমস্ত কিছুই এই প্রোপাগান্ডা ক্যামপেইনের হয়ে কাজ করছে। এই প্রোপাগান্ডার রেস্পন্স তাৎক্ষনিক ভাবে দেখা যায়না, তবে এটা ধীরে ধীরে মুল্যবোধকে পরিবর্তন করে ফেলে। এবং বিশেষ কোন এক ট্রিগারিং পয়েন্টে তা বের হয়ে আসে। এর উদাহরন হিসেবে বলা যায়, আমাদের আশে পাশের আম ভাবে ইসলামের আহকাম সমুহকে ভালোবাসে এমন বয়স্ক মানুষদের কথা বলা যেতে পারে, যারা হয়ত কিছু দিন আগেও অন্ধ ভাবেই আল্লাহর দ্বীন কে ভালোবাসতেন কিন্তু এখন তারা ডিমোটিভেটেড হয়ে গেছেন, ডিমোটিভেটেড এজন্য বললাম কারন এখনও তারা মনে করেন তারা আল্লহর দ্বীনকে ভালোবাসছেন, কিন্তু আসলে তারা তাগুতের প্রোপাগান্ডা ক্যামপেইনের শিকার হয়ে বায়বীয় ধারনার জগতে চলে গেছেন।
এখানে মুল যে বিষয়ে দেখা দরকার তা হচ্ছে প্রোপাগান্ডার লক্ষ্য কি? আপাত দৃষ্টিতে মোটা দাগে দেখলে মনে হবে তারা আসলে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বা র্যাআডিকাল ইসলামিস্টদের (যদিও ইসলামে র্যা ডিকাল বলে কিছু নাই) বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাচ্ছে, (যেটা তারা সবার সামনে উপস্থাপন করতে চায়) যা এক কথায় ব্যাক্তি বা দলের বিরুদ্ধে কিন্তু বাস্তবে আসলে তা ভুল। তাদের এই আগ্রাসন আসলে দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে, যা বাস্তবে আমাদের মুল ভিত্তি ঈমান এবং আকিদাহ’র বিরুদ্ধে। কিন্তু সাধারন মানুষ যদি জেনে যায় বা দিব্য চোখে দেখে ফেলে যে, তারা আসলে ইসলামের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে, এবং আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ’র বিরুদ্ধেই যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে তাহলে তারা সামনে আগাতে পারবেনা। আর এই জন্যই দরকার হয় প্রোপ্যাগান্ডা। প্রোপ্যাগান্ডা এর মুল মাকসাদ হচ্ছে মানুষকে তাই ভাবতে শেখানো যা আপনি চান সে ভাবুক, প্রোপ্যাগান্ডা’র মাকসাদ হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস এবং আদর্শ কে নিয়ন্ত্রন করা। তাগুতের লক্ষ্য আমাদের কাছে ঘোলাটেই থাকবে যদি আমরা প্রোপ্যাগান্ডার মাকসাদের দিকে না তাকাই, প্রোপ্যাগান্ডা কেন কাজ করে এবং কিভাবে কাজ করে সেটা না বুঝি। কিছু ফিজিক্যাল জঙ্গীকে রিমুভ করা হয়ত কঠিন কিছুনা তবে জঙ্গীদের আদর্শ কে রিমুভ করা কঠিন, তারা আসলে কিছু জঙ্গীকে রিমুভ করে আরো লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের কাছে প্রোপ্যাগান্ডার মুল মেসেজ পৌছিয়ে দিচ্ছে! তারা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে, আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারবেনা বা বললেও তা আম মুসলিম মানবে কেন? এজন্য তারা ইসলাম কে জঙ্গী ট্যাগ দিয়ে আক্রমন করছে। সারা দুনিয়াতে কাফিররা আসলে ইসলাম নামের একটি আদর্শের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, তাদের দুশ্চিন্তাও এই আদর্শকে নিয়েই, অর্থাৎ ইসলাম কে নিয়েই।
ব্যাটল অফ হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডে এই আলোচনা বিস্তারিত এসেছে। কিভাবে তারা আদর্শগত ভাবে ইসলামের সাথে যুদ্ধ করছে। এছাড়া আমার এই কথাকে আরো শক্ত ভাবে বিশ্বাস করার জন্য আমি কুরআনের একটি আয়াতের দিকে তাকিয়েছি, আল্লাহ তায়ালা সুরা আল ইসরার ৮১ নাম্বার আয়াতে বলছেন, “আর বল, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবারই” অর্থাৎ বাতিল সবসময়ে সত্যের ভয়ে তটস্থ থাকে, সত্য প্রকাশিত হলেই বাতিল কে দূর হতে হবে, যেমনটা শাইখ আওলাকি (রহ) তাঁর লেকচারে উল্লেখ করেছেন। তাই বাতিল সত্যের নিশানাও দেখতে চায়না, সত্য কে চাপিয়ে রাখতে চায়, সত্য কে আক্রমন করতে চায়। আর যেহেতু হাক্ক হচ্ছে হাক্কই তাই হাক্ক এর আসল রুপে যদি তাতে আঘাত হানা হয় তবে তা সবার সামনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য কাফিররা আগে হাক্ক এর গায়ে অন্য লেবেল চাপিয়ে দেয়ার চেস্টা করে, এরপর সেই আবরনের আড়ালে আক্রমন করে, আর এই কাজটিই হচ্ছে প্রোপ্যাগান্ডা। প্রপাগ্যান্ডা হচ্ছে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ারের প্রধান অস্ত্র, সুতরাং এদিক থেকেও স্পস্ট হয়ে যায় যে কাফির রা আসলে আমদের বিশ্বাস এবং আকিদাহ এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত।
একটি বাস্তব উদাহরন দেই, আপনারা জানেন বাংলা অভিধানে জঙ্গি শব্দ নতুন নয়, এমন না যে কেউ আগে কখনো এই শব্দ শুনেনি। এই শব্দ আগেও ছিলো, এমনকি সামরিক বাহিনীর সিলেবাসে জঙ্গী শব্দটি অহরহ ব্যাবহার হয়, আম ভাবে জঙ্গী তাদের বলা হয় যারা হচ্ছে মারদাঙ্গা টাইপের সৈন্য, এমন সৈন্যদল কে জঙ্গীদল বলা হয়। কিন্তু এই জঙ্গী নিয়ে কারো কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে কেন মানুষের জঙ্গী শব্দ নিয়ে মানুষের এত পেরেশানী! কারন এভাবেই আম মানুষকে ভাবতে শেখানো হচ্ছে, চিন্তা করতে শেখানো হচ্ছে। এটাই তাদের প্রোপ্যাগান্ডা এর মাকসাদ। এখন এদেশের তাগুতরা “জঙ্গী” ধারনাটাকে তাদের চাওয়া অনুযায়ী মানুষের মনে বদ্ধমুল করে দিতে পেরেছে, এখন এই জঙ্গী ট্যাগটির আড়ালে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। একটি বাস্তব উদাহরন দেই, পেপারে দেখলাম, রাজিব হায়দার হত্যার রায় ঘোষণার সাথে নতুন বক্তব্য যুক্ত করেছে, “মসজিদেরর ইমাম গন নামাজ পড়াবেন, মুসল্লিদের ধর্মীয় শিক্ষা দিবেন, রাষ্ট্রের আইনের পরিপন্থী কোন কথা বলতে পারবেন না” রায় ঘোষণা টি হচ্ছিল জঙ্গী ট্যাগ এর আড়ালে কিন্তু আক্রমন টা হয়েছে কোথায় তা কি বুঝতে পারছেন? সরাসরি বলে দেয়া হল, রাষ্ট্রের আইনের সামনে ইসলাম কিছুই না! এটা কিসের উপরে আঘাত? এটা কি ইসলামের উপরে আঘাত নয়? কিন্তু এই কথাটি যদি সরাসরি বলা হত তাহলে আম মুসলিম হয়ত প্রতিবাদ করত, কিন্তু সেই একই মেসেজ একটি প্রোপ্যাগান্ডা হিসেবে যখন চালিয়ে দেয়া হল তখন কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়াই হলোনা, আর এর অর্থ হচ্ছে আম মুসলিম সেটাকে সয়ে নিলো। আর এভাবেই প্রোপ্যাগান্ডা ধীরে ধীরে মানুষের আদর্শ এবং চিন্তা ভাবনা কে কলুষিত করে ফেলে। যেমন এই প্রোপ্যাগান্ডা সফল হলে মানুষ ভাববে মাসজিদের ইমাম গন দেশের আইন পরিপন্থী কিছু বলতে পারবেন না! এখানে মুল যে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার তা হচ্ছে প্রোপ্যাগান্ডা কাজ করে একটি সমাজ বা জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস বা আদর্শ নিয়ে। প্রোপ্যাগান্ডা শব্দটিই এসেছে “Propagating Faith” থেকে। তাহলে এটি আরো পরিষ্কার হয়ে গেলো যে তাদের এই যুদ্ধ বাস্তবিকে ইসলামের সাথেই যুদ্ধ।
* চলবে ইনশাআল্লাহ
Comment