... "এখানে মুল যে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার তা হচ্ছে প্রোপ্যাগান্ডা কাজ করে একটি সমাজ বা জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস বা আদর্শ নিয়ে। প্রোপ্যাগান্ডা শব্দটিই এসেছে “Propagating Faith” থেকে। তাহলে এটি আরো পরিষ্কার হয়ে গেলো যে তাদের এই যুদ্ধ বাস্তবিকে ইসলামের সাথেই যুদ্ধ" ...
এত কথার মূল উদ্দেশ্য কি ছিল? যেহেতু আমরা যুদ্ধে লিপ্ত এবং আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপ্যাগান্ডা বা যেটার আরও বৃহৎ রুপ হচ্ছে সাইকোলজিক্যাল ওয়ার পরিচালনা করা হচ্ছে, তাই এই যুদ্ধের স্বরূপ সঠিক ভাবে না বুঝতে পারলে আমাদের পদক্ষেপ গুলো ভুল প্রমানিত হতে পারে। যেমন একটা বাস্তব উদাহরন নিয়ে আসতে চাই, আমাদের নিজস্ব কিছু মিডিয়া আছে- যেখান থেকে আলহামদুলিল্লাহ সাধ্যমত মিডিয়া প্রোডাকশন রিলিজ করে আমদের দাওয়াতি কার্যক্রম এবং তাগুতের বিভিন্ন আক্রমনের জবাব দেয়া হয়। এখানে আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে থাকে তাগুতের মিডিয়া, যেমন বলা হয় এটি একটি মিডিয়া যুদ্ধ। বাস্তবে সাইকোলজিক্যাল ওয়ার ফেয়ারের একটি অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মিডিয়া, কিন্তু তার মানে এই নয় যে মিডিয়াই সব! যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে আম্যেরিকাতে ৭৫ হাজার সিভিল লিডার কে বিভিন্ন চার্চে, থিয়েটারে, এবং সিভিল গ্রুপ গুলোতে পাবলিকলি যুদ্ধের পক্ষে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিলো, ৬০০০০০ স্কুল শিক্ষকের কাছে বিভিন্ন আর্টিকেল পৌছিয়ে দেয়া হয়েছিলো স্কুলগুলোতে প্রচার করার জন্য, বয়েজ স্কাউট ওপেন করা হয়ছিলো। এখন যদি আমরা বর্তমানে তাকাই তাহলে দেখা যাবে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীরা জ্বালাময়ী বক্তব্যের কাজ করছে, মসজিদের ইমাম গন মিম্বার থেকে ইসলামের ভুল ব্যখ্যা প্রচার করছেন, স্কুল কলেজে যাদের ইসলাম সম্পর্কে ন্যুনতম জ্ঞান টুকুও নাই তারাও ইসলামের আহকাম এবং শরইয়ী দিকগুলোর পর্যালোচনা করছে, ছাত্রসমাজ কে ভুল শিক্ষা দিচ্ছে, জঙ্গিবাদ থেকে যুবসমাজ কে দূরে রাখার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত রাখার কথা বলা হচ্ছে! কত অদ্ভুত রকমের মিল তাইনা!
এই কাজ গুলো কিন্তু সরাসরি মিডিয়া দ্বারা করা হচ্ছে এমন না, শুধু মাত্র বুদ্ধিজীবীদের টকশো গুল ব্যাতিত। এছাড়া এখানে আরো একটি কাজ হয়, তা হচ্ছে এই প্রোপ্যাগান্ডা আসলে পানির ঢেউ এর মত কাজ করে, স্থির পানিতে একটি ছোট ঢিল ছুড়লেও সেই ঢিলের কারনে সৃষ্ট ঢেউ অনেক দূর ছড়িয়ে যায়। এমনি ভাবে তাদের এই প্রোপ্যাগান্ডা বা সাইকোলজিক্যাল ওয়ার এর যেকোন একটি আক্রমণ পানিতে ঢিল ছুড়ার মত, এরা আমাদের এতদিনের বিশ্বাস এবং ঈমান যা আপনি স্থির পানির সাথে তুলনা করতে পারেন, সেই বিশ্বাসে ছোট ছোট ঢিল বা শুবুহাত ছুড়ে দেয়। এরপর এগুলো আমাদের মনে শুবুহাতের ঢেউ তৈরি করে এবং আমরা নিজেরাই নিজেদের অজান্তে এই ঢেউ আরেকজনের কাছে হস্তান্তর করি। আমরা নিজেরাই নিজেদের অজান্তে তাদের সাইকোলজিক্যাল ওয়ার এর সৈন্য হিসেবে কাজ করি। আর এজন্য আমাদের জানা দরকার আমাদের শত্রু কিভাবে আমাদের আঘাত করছে।
কোন একটি বিষয় ভালমত বুঝার জন্য এর শিকড়ে ফিরে যাওয়া দরকার যেখান থেকে এর জন্ম। একই ভাবে বর্তমানে কাফিরদের সাথে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ করতে হলে এর মূল কারন পরিষ্কার থাকা দরকার। কাফেরদের মূল লক্ষ্য এদেশের মুসলিমের ঈমান কে নস্ট করে দেয়া, ইসলামী আকিদাহ কে বিনষ্ট করে দেয়া। তাই আমরা যখন তাদের সাথে যুদ্ধে নামবো তখন আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে কোন জায়গা আমাদের অধিক সুরক্ষা দেয়া প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ। লক্ষ্য করলে দেখবেন কাফিরদের আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ, তারা চায় আমরা তাদের মত হয়ে যাই, তারা চায় আমরা এমন সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে তুলি যেখানে পতিতাবৃত্তি হালাল, সুদ হালাল, জিনা হালাল, মদ হালাল, আর এগুলোকে হারাম আপনি বলতে পারবেন না! যেমন টা আল্লাহ বলেছেন, “তারা আকাঙ্খা করে যে, তারা নিজেরা যেমন কুফরি করেছে তোমরাও তেমন কুফরি কর, যাতে তোমরা তাদের মত হয়ে যাও-“ কিন্তু কোন দিনও কি তারা এই কথা বলেছে বাংলাদেশে “মদ হালাল” “জিনা হালাল”? বলেনি – তারা এটি করেছে আমাদেরকে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে বিকৃত করে দেয়ার মাধ্যমে, এখন সবাই এটাকে গ্রহন করে নিয়েছে। তাই এই যুদ্ধে আমাদের নজর দিতে হবে শত্রু আসলে আমাদের কোন অংশ কে টার্গেট করেছে, আমাদের সেই অংশ কে আগে সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের কাজগুলো সেই অংশ অর্থাৎ আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ কে রক্ষা করার উদ্দশ্যে হতে হবে।
সন্দেহ নাই যে শত্রুর সাথে আমরা অসম যুদ্ধে লিপ্ত আছি। বলতে গেলে একতরফা ভাবে তারাই সমস্ত প্রোপ্যাগান্ডা হাতিয়ার গুলোকে নিয়ন্ত্রন করে। যেমন ধরা যাক মিডিয়া। এই মিডিয়া কত টুকু আমরা নিয়ন্ত্রন করি আর কত টুকু শত্রু নিয়ন্ত্রন করে? এমনকি আমাদের নিজেদের মিডিয়াগুলোও শত্রুরা নিয়ন্ত্রন করতে পারে, আমাদের মিডিয়ার প্রবাহ কে তারা সংকুচিত করে দিতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আমাদের মিডিয়াতে পরিশ্রম দেয়ার পরেও এর প্রভাব আশানুরুপ নয়! কখনো কখনো এটা শক্তি ক্ষয়ের যুদ্ধে পরিনত হয়। কারন আমার মিডিয়া আউটলেট ৫ টা, প্রোডাকশন ৫০ টা, তাদের আউটলেট শয়ে শয়ে, প্রোডাকশন হাজার হাজার। তাহলে এটা কিভাবে সমতা আনবে? উপরন্তু আমাদের এই প্রোডাকশন গুলোও সংকুচিত ভাবে আম মানুষের কাছে যায়। কিন্তু তাদের আউটলেট গুলো একসাথে সমন্বয় করে সব গুলো এক সাথে কাজ করে, একটা অপ্স এর পরে তাগুতের নেতারা বিবৃতি দেয়, সমস্ত মিডিয়া সেটা কাভার করে, সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা সেটাতে সার ঢালে, সমস্ত পতিতারা সেটাকে উৎসবের আমেজ দেয়, মসজিদ থেকে ফতয়া আসে, দিনের পর দিন পত্রিকায় আর্টিকেল আসতে থাকে, এক সময়ে মানুষ এভাবে চিন্তা করতে বাধ্য হয়, আচ্ছা এত গুলো মানুষ কি তাহলে ভুল! প্রোপ্যাগান্ডাতে যা প্রচার করা হয় তা পুরা মিথ্যা না, পুরাটাই মিথ্যা হলে মানুষ ধরে ফেলতো, তারা প্রোপ্যাগান্ডার সাথে কিছু সত্য রাখে আর অধিকাংশই মিথ্যা। যেমন তারা প্রচার করে “ইসলাম সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করেনা” এটিতো অবশ্যই সত্য, তবে এই সত্য কথাটিকে তারা নিজেদের সেট আপে নিজেদের মত করে মানুষকে বিশ্বাস করতে শেখাচ্ছে, কথা এটি সত্যই আছে, তারা এই কথাকে পরিবর্তন করেনি, তারা পরিবর্তন করেছে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা কে! এমন সেট আপের বিরুদ্ধে আমাদের যৌক্তিক ভাবে কতটুকু কি করার আছে! এটা আবেগের জায়গা নয়, এটা যুদ্ধের ময়দান, এখানে বাস্তবতা কে যত দ্রুত মেনে নেয়া যায় ততই উত্তম! একথার দ্বারা আমি এমন বলছিনা যে, আমাদের কে মিডিয়ার কাজ বন্ধ করে দিতে হবে বরং আমি বলছি আমাদের কাজকে আরো প্রসারিত করতে হবে সম্ভবত আরো গুরুত্বপূর্ণ কোন জায়গায় যা সামনে আলোচনায় আসবে ইনশাআল্লাহ।
বর্তমানে মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে প্রচারনা এমন তুঙ্গে চলে গেছে আর মানুষের বিশ্বাস কে তারা এই পরিমান কলুষিত করতে পেরেছে যে এখন মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিজেদের ঈমান এবং আকিদাহ বিক্রি করে দিয়ে কাফিরদের হাত শক্ত করছে। নিজের সন্তানের লাশ গ্রহন করতে ভয় পাচ্ছে কিংবা লজ্জিত হচ্ছে, নিজের সন্তানের দাফন করাকে মান সম্মানের প্রশ্ন মনে করছে! কিন্তু কেন? বাস্তবে মুজাহদিনগন আসলে এমন কি করেছে - তারা নিহত হবার আগে কিছু কুলাঙ্গার পুলিশ র্যানব কে হত্যা করেছে, কখনো হয়ত আশে পাশের ২-১ জন সাধারন মানুষ আহত নিহত হয়েছে। আমি এই ঘটনার পক্ষ নিচ্ছি এমন না, কথা হচ্ছে তাদের চেয়ে অনেক বড় বড় অপরাধ এদেশের রাজনীতিবিদ, পুলিশ, র্যা ব, আওয়ামী লীগ করে যাচ্ছে। জঙ্গিরা কত জন সাধারন মানুষ কে মেরেছে আর পুলিশ আওয়ামী ক্যাডার বাহিনি কতজন সাধারন মানুষ কে মেরেছে? মুজাহিদিনরা কত জন নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করেছে আর পুলিশ আওয়ামী ক্যাডার বাহিনি কতজন নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করেছে? মুজাহিদিনরা কত টাকা ছিনতাই লুটপাট করেছে আর পুলিশ আওয়ামী ক্যাডার বাহিনি কত টাকা লুটপাট ছিনতাই করেছে? এমন চলতেই থাকবে, তাদের অপরাধের তুলনায় মুজাহিদিনরা কিছুই করেনি, একদম কিছুই না। বরং সারা দেশের মানুষ পুলিশ, র্যা ব, আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারে নাজেহাল, নিষ্পেষিত তবুও কেন মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে তারা সেই পুলিশ বাহিনীকেই মদদ দেয়? কারন প্রোপ্যাগান্ডা তাদের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে, এটা সমাজের ক্যান্সার, এটা দেশের ধ্বংস, এটা অপমান। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে মানুষ তার নিজের জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া জুলুমকে ভুলে যা তাকে শেখানো হচ্ছে সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে! আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন মুজাহিদিনরা/জঙ্গিরা কি করে? তার বলবে, বোমা মারে, মানুষ মারে। আপনি এবার জিজ্ঞেস করেন মুজাহিদিনরা গত ৫ বছরে কতজন মানুষ মেরেছে আর পুলিশ, আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী কত মানুষ মেরেছে? নিঃসন্দেহে তারা লা জবাব হয়ে যাবে! কিন্তু তাহলে কেন মানুষ এমন সম্মোহিত হয়ে গেছে? কারন প্রোপ্যাগান্ডার মাধ্যমে মানুষের ভিতরে নতুন এক আকিদাহ, বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
* চলবে ইনশাআল্লাহ
Comment