Announcement

Collapse
No announcement yet.

যে চিঠি আজও লক্ষ যুবকের প্রেরণা যোগায়

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যে চিঠি আজও লক্ষ যুবকের প্রেরণা যোগায়

    আল-&#248
    (তুর্কী বীর গাজী আনোয়ার পাশা শহীদ রহ.-এর রণাঙ্গন থেকে নিজ স্ত্রীকে লেখা জীবনের শেষ চিঠি)
    .
    প্রাণপ্রিয়া জীবন সঙ্গিনী নাজিয়া!
    মহান আল্লাহ তা'আলা তোমার হিফাজতকারী। তোমার লিখা সর্বশেষ পত্রটি এ মুহূর্তে আমার সামনেই আছে। মনে রেখো!তোমার এ চিঠি আজীবন আমার অন্তরে গেঁথে থাকবে। তোমার সে মায়াবী চেহারা আজ আমি দেখতে পাচ্ছিনা, কিন্তু তোমার হাতের লিখা পত্রটির প্রতিটি লাইনে লাইনে অক্ষরে অক্ষরে দৃষ্টিপাত করলেই তোমার আঙ্গুলগুলো নাড়াচাড়ার দৃশ্য দুই নয়নে ভেসে ওঠে; যেগুলো একসময় আমার চুল নিয়ে খেলা করতো। মাঝে মধ্যে তাবুর প্রকোষ্ঠ ও বিষণ্ণ পরিবেশে তোমার চেহারা ও নয়নযুগল ভেসে ওঠে।
    হায়! তুমি লিখেছো আমি কি না তোমায় ভুলে বসে আছি। তোমার ভালবাসার কোন মূল্য দেইনি। তুমি বলেছো আমি তোমার প্রেমময় হৃদয়কে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দূরদেশে এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আগুন আর রক্তের খেলায় মেতে আছি। আমি মোটেও ভাবছি না যে, একজন হতভাগা নারী নিস্তব্ধ রজনীতে আমার বিরহের বেদনায় অস্থির হয়ে আছে, আর আকাশের তারা গুনছে। তুমি আরো বলেছো যে, আমি নিছক তরবারীর প্রতিই আসক্ত ও অনুরক্ত। কিন্তু এ কথাগুলো লেখার সময় তুমি মোটেও ভেবে দেখোনি যে, তোমার এ শব্দগুচ্ছ যা তুমি নিঃসন্দেহে খাঁটি ভালবাসার টানে লিখেছো- আমার অন্তরকে কি বীভৎস ভাবে রক্তাক্ত করে দেবে। আমি তোমাকে কী করে বোঝাববো যে, পৃথিবীতে আমি তোমার চেয়ে অধিক কাউকে ভালবাসিনা। তুমিই আমার সকল প্রেম ও ভালবাসার শুরু-শেষ। ইতিপূর্বে আমি কখনও কাউকে ভালবাসিনি।তুমি, তুমিই আমার অন্তরকে ছিনিয়ে নিয়েছো।
    .
    তবুও আজ কেন আমি এত দূরে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন? হে প্রাণপ্রিয়া! এ প্রশ্ন তুমি অবশ্যই করতে পারো। তাহলে শোনো! ধন সম্পদের মোহে আমি তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন নই। ক্ষমতার লিপ্সা কিংবা মসনদের লোভেও আমি আজ দূরে নই; যেমনটি শত্রুরা আমার নামে রটিয়েছে। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে অর্পিত কর্তব্যের টানেই আমি আজ তোমার থেকে পৃথক। আল্লাহর রাহে জিহাদের চাইতে বড় কোন ফরজ হতে পারেনা। এটি এমনই মহিমাময় ফরজ, যার প্রতিজ্ঞা করলেই মানুষ জান্নাতুল ফিরদাউসের উপযুক্ত হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ! আমি শুধু তা প্রতিজ্ঞাতেই সীমাবদ্ধ রাখিনি বরং নিখুঁত বাস্তবতায় পরিণত করছি।
    তোমার বিরহ ব্যথা আমায় সর্বক্ষণ পীড়া দেয়। কিন্তু এই বিরহে আমি সীমাহীন আনন্দিত। কেননা শুধুমাত্র তোমার ভালবাসাই আমার সংকল্প বাস্তবায়নে বড় পরীক্ষার ব্যাপার ছিল। আল্লাহ তা'আলার নিকট হাজারও শুকরিয়া যে, এ পরীক্ষায় আমি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি আল্লাহ তা'আলার মুহাব্বাত ও নির্দেশকে নিজের ইচ্ছা ও চাহিদার উপর প্রাধান্য দিতে পেরেছি। এজন্য তোমার আনন্দিত হওয়া উচিত। কেননা তোমার স্বামী এত মজবুত ঈমানের অধিকারী যে, স্বয়ং তোমার ভালবাসাকেও আল্লাহর ভালবাসার জন্য উৎসর্গ করতে পারে।
    .
    তোমার উপর তরবারীর সংগ্রাম ফরজ নয়। তবে তুমিও এ বিধানের আওতামুক্ত নও। নারী কিংবা পুরুষ কোন মুসলমানই আল্লাহর পথে জিহাদের বিধানের বাইরে নয়। তোমার কর্তব্য হল তুমি নিজের চাহিদা ও ভালবাসাকে আল্লাহ তা'আলার ভালবাসার উপর প্রাধান্য দিবে। সর্বক্ষণ এ দুয়া করবে যেন, আল্লাহ তা'আলা তোমার স্বামীকে কবুল করেন। হয় তাকে বিজয়ীর বেশে ফিরিয়ে আনুক নতুবা শাহাদাতের অমিয় সুধা পানে ধন্য করুক। তুমি জানো, আমার এ ঠোঁট কখনো নাপাক মদ কে স্পর্শ না করে বরং আল্লাহর জিকির ও তিলাওয়াতে সর্বদা সতেজ ছিল।
    প্রিয়া! আহ! সে মুহূর্তটি কতইনা মোবারক ও মহিমাময় হবে, যখন এ শির দেহ হতে বিচ্ছিন্ন হবে। যাকে তুমি অত্যন্ত চমৎকার বলতে। যা তোমার দৃষ্টিতে কোনো যোদ্ধার দেহ ছিল না, ছিল একজন লাবন্যময় প্রিয়দর্শী পুরুষের দেহ।
    এ মুহূর্তে আমার সবচেয়ে প্রবল ইচ্ছা ও বাসনা হল শহীদ হওয়া। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) এর সঙ্গে হাশরে উত্থিত হওয়া। এ দুনিয়ার তৃপ্তি ও প্রাপ্তি যেহেতু ক্ষণস্থায়ী, তবে মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কী অর্থ?
    মৃত্যু যখন সুনিশ্চিত তখন মানুষ কেন বিছানায় শুয়ে মরবে? শাহাদাতের মৃত্যু, মৃত্যু নয়; বরং প্রকৃত বেঁচে থাকা। অনাদি অনন্ত কালের জীবন লাভ করা।
    নাজিয়া! তোমার প্রতি আমার প্রথম অসিয়ত, আমি শহীদ হয়ে গেলে তোমার দেবর; আমার ছোট ভাই নূরী পাশার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। তোমার পরে আমার চোখে সর্বাধিক প্রিয় পাত্র হল নূরী।আমি চাই, আমার আখিরাতের যাত্রার পর থেকে নিয়ে সে আজীবন বিশ্বস্ততার সঙ্গে তোমার খিদমাত করুক।
    .
    আমার দ্বিতীয় অসিয়ত, তোমার যত সন্তান হবে তাদের সকল কে আমার জীবনের ইতিহাস শোনাবে। ইসলাম ও দেশপ্রেমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে পাঠিয়ে দেবে। যদি তুমি আমার এ অসিয়ত কে রক্ষা না করো, তবে মনে রেখো, জান্নাতে আমি তোমার থেকে পৃথক থাকবো।
    আমার তৃতীয় অসিয়ত, মুস্তাফা কামাল পাশার সঙ্গে সদা সুন্দর আচরণ করবে।সাধ্যমত তার সাহায্য করবে। কেননা, এ মুহূর্তে মহান আল্লাহ তা'আলা দেশের স্বাধীনতা অর্জন তার উপরই নির্ভরশীল রেখেছেন।
    প্রিয়া! এবার তাহলে বিদায়। কেন যেন মনে হচ্ছে, এ চিঠিই তোমার প্রতি আমার শেষ চিঠি। এরপর আর কখনো কোনো চিঠি লেখার সুযোগ হবেনা। কি আশ্চর্য! আগামী কালই শহীদ হয়ে যাবো। দেখো, ধৈর্য্য হারাবে না। আমার শাহাদাতের পর পেরেশান ও ব্যাকুল হওয়ার স্থলে খুশি ও আনন্দিত হবে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাস্তায় আমাকে কবুল করেছেন। এটা তোমার জন্য গৌরবের বিষয়।
    নাজিয়া! এখন বিদায় নিচ্ছি। আমার কল্পনা ও স্বপ্নের জগতে তোমাকে আলিঙ্গন করছি। ইনশাআল্লাহ, জান্নাতে দেখা হবে। তারপর আর কখনো বিচ্ছিন্ন হবো না।
    সংগৃহিত।

  • #2
    zajakallah

    Comment


    • #3
      দু গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল

      আ্সলেই এমন ইতিহাস এখন কুবই বিরল

      আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কবুল করুন

      Comment


      • #4
        jajakallah

        Comment


        • #5
          চাই ত্যাগ বিরহের কান্না চাইনা ৷ বলা যতটা সহজ করে দেখানো ততটা সহজ নয় ৷

          Comment


          • #6
            চিঠি পড়তে পড়তে কখন চোখ অশ্রুসিক্ত হলো বুঝলামও না।
            [ গুরাবা হয়ে লড়তে চাই, গুরাবা হয়েই শাহাদাহ চাই ]

            Comment


            • #7
              Originally posted by musab313 View Post
              চিঠি পড়তে পড়তে কখন চোখ অশ্রুসিক্ত হলো বুঝলামও না।
              আসলেই ভাই! আমারও চোখের কোণে অজান্তেই অশ্রু চলে এলো!
              যাক বুঝলাম যে, মুজাহিদগণই তো দেখছি যে, কঠিন প্রেমিক পুরুষ।
              প্রকৃত সফল তো সেই, যে তার আখেরাতকে দুনিয়ার উপর প্রাধান্য দিতে পেরেছে!

              Comment


              • #8
                আনোয়ার পাশা শহীদ রহ.-এর সম্পর্কে জানার জন্য কোন ভাই কী আমাকে সাহায্য করতে পারেন!
                আসলে উনার শুধু নামই শুনে গেলাম, কিন্তু আফসোস উনার ইতিহাস কিছুই জানিনা!

                Comment

                Working...
                X