আল মালহামা হল একটি যুদ্ধ। একটি অত্যন্ত তীব্র ও ভয়ঙ্কর মহাযুদ্ধ। আল মালাহীম হল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক যুদ্ধের সম্মীলনে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ। একটি দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত। যা বছরের পর বছর ধরে চলবে। এটা হল অনেকগুলো ছোট যুদ্ধের সম্মীলনে একটি বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এবং রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, আল মালাহীম সংঘঠিত হবে মুসলিম এবং আর রোমানদের মধ্যে। কারা এই “রোমান”? রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম]-এর সময়ে “রোমান” বলতে কোন রাজনৈতিক সত্ত্বা বা শক্তিকে বোঝানো হতো না বরং একটি জাতিকে বোঝানো হতো সেই সময়ের রোমানরা ছিল – ইউরোপিয়ানরা সুতরাং “রোমান” নামটি প্রযোজ্য হবে ইউরোপ এবং এর বর্ধিত অংশগুলোর জন্য উত্তর আমেরিকা (আমেরিকা, কানাডা) ও অস্ট্রেলিয়া। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলছেন রোমান এবং মুসলিমদের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ চলবে, এবং এর নাম আল মালাহীম এবং এসব ঘটনাবলী সংঘঠনের সময়েই আল-মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে এবং ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] অবতরন করবেন এবং দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এসবই ঘটবে আল-মালাহীমের সময়। সুবহান’আল্লাহ, আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি পশ্চিমা বিশ্ব রোমানদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে এবং আল মালাহীমের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে, আর মুসলিমরা এখনো ঘুমাচ্ছে, আলোচনা আর শান্তির গালগল্প বিশ্বাস করে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
ইউরোপীয়ানরা খ্রিস্টান ধর্মের একটি বিকৃত রূপ পেয়েছিল। তাঁরা কখনোই ঈসা [আলাইহিস সালাম] – এর প্রকৃত ধর্মে ঈমান আনেনি। তাঁরা শুরুতে ছিল মুশরিক আর তারপর তাঁরা খ্রিস্টান ধর্মের এমন একটি রূপের অনুসারী হয়েছে যা শিরক। তাঁদের অবস্থা প্রাচ্যের খ্রিস্টানদের মতো না, যারা এক সময় ঈসা [আঃ] সত্যিকার অনুসারী ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তাওহীদের আলো থেকে দূরে অন্ধকার ও অজ্ঞানতার মধ্যে ইউরোপ বসবাস করছে। ইউরোপিয়ানরা বুনিয়াদি ভাবে একটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ধর্মকে বিকৃত করেছে। আমি খ্রিস্টান ধর্মের যেই বিকৃত রূপ তাঁরা অনুসরণ করে তাঁর কথা বলছি যেটা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় একটি ধর্ম “কেউ তোমার একগালে আঘাত করলে তুমি অপর গাল পেতে দাও” [বাইবেলঃ ম্যাথিউ ৫:৩৮]। এর চাইতে বেশি শান্তিপ্রিয় হওয়াতো সম্ভব না। আর আরব ও প্রাচ্যের খ্রিস্টানরা এরকমটাই ছিলো, তাঁরা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় ছিল। যদিও তাঁরা ইতিমধ্যেই তাঁদের ধর্মে ত্রিত্ববাদ এবং শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলো। কিন্তু ইউরোপ, এই শান্তিপ্রিয় ধর্মের প্রকৃতিই বদলে দিয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মকে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে বেশি রক্তপাত ঘটানোর জন্য দায়ী ধর্মে পরিণত করার কৃতিত্ব ইউরোপীয়ানদেরই প্রাপ্য। বর্তমান পৃথিবীর বুকে এমন কোন ধর্ম নেই যা মানব ইতিহাসে এই ধর্মের চাইতে বেশি রক্ত ঝরিয়েছে এবং এ সম্পর্কিত সংখ্যাগুলো নিজেরাই এর স্বপক্ষে সাক্ষ্য দেয় ক্রুসেডের সময় কতো মুসলিমকে খ্রিষ্ট ধর্মের নামে হত্যা করা হয়ছিলো? ইউরোপিয়ানদের নিজেদের আভ্যন্তরিক ধর্ম যুদ্ধে কতো মানুষ মারা গিয়েছে? ইউরোপীয়ানদের ধর্ম যুদ্ধে শত শত লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে আর ইউরোপীয়ানরা এমন এক কাজে সফল হয়েছে যা করতে আর কেউ সক্ষম হয় নি, যে, তাঁরা তিনটি মহাদেশের আদি অধিবাসীদের পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম কিছু আগে কখনো ঘটেনি। তাঁরা উত্তর আমেরিকা, দক্ষিন আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার খাতিরে তাঁরা অতি অল্প সংখ্যক আদিবাসীদের বাঁচিয়ে রেখেছে অতীতের স্মারক হিসেবে আর বাকি সবাইকে শেষ করে দিয়েছে। আজ যেসব আদিবাসী এবং নেটিভ আমেরিকানরা বেচে আছে, সেটা হল গবেষণার স্বার্থে।
ইউরোপ এমন এক সত্ত্বা যা শয়তানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা রাখে। কারণ ইসলামের সাথে লড়াই করার জন্য শয়তান সবচাইতে খারাপদেরকেই খুঁজছে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] – এর হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে এই দীর্ঘ যুদ্ধ শুরু হবে, যার শুরুতে মুসলিমরা থাকবে খুবই দুর্বল আর এই যুদ্ধ শেষ হবে মুসলিমদের দ্বারা পুরো দুনিয়া শাসিত হবার মাধ্যমে। এটা হবে সবচেয়ে মারাত্মক ফিতানের সময় আবার একই সাথে সবচেয়ে বেশি বরকতময় সময়। এই সময়েই আল মাহদী এবং ঈসা [আলাইহিস সালাম] আসবেন এবং এই সময়েই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এখন একথাগুলোর অর্থ এই না যে সব রোমানরাই ইসলামের শত্রু হবে। কারণ ইসলাম প্রতিনিয়ত মানুষের হৃদয় জয় করে নিচ্ছে। এই ব্যাপারটা খুবই কৌতুহল উদ্দীপক যে যদিও রোমানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করছে এবং আমরা হাদীস থেকে জানি রোমান আর্মি মুসলিমদেরকে ওইসব রোমানদের হস্তান্তর করতে বলবে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মুসলিমরা বলবে, “আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না”। যদিও তাঁদের বর্ণ এবং জাতীয়তা ভিন্ন তাও তাঁরা আমাদের ভাই, কারণ এখন তাঁরা মুসলিম এবং ইসলাম প্রতি আনুগত্য অন্য যেকোন পরিচয়ের চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘটনা সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত আছে। এবং এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহীহ হাদীস বর্ণিত আছে, যেমন মুসলিম শরীফের একটি হাদীস হলঃ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- রোমানরা তোমাদের আক্রমণ করবে এবং আস শামের আল আমাকে তাঁবু খাটাবে (অবস্থান গ্রহণ করবে)। মদিনা থেকে একটি বাহিনী তাঁদের মোকাবেলা করতে যাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেন – “এবং তাঁরা হবে তাঁদের সময়কার শ্রেষ্ঠ মুমিন” এবং এই মুসলিম বাহিনী তাঁদের অবস্থান গ্রহণ করবে, এবং রোমানরা তাঁদের বলবে – “ আমাদের লোকদের আমাদের হাতে তুলে দাও”, অর্থাৎ ওইসব রোমান যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মুসলিমরা বলবে, “ আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না”। সুতরাং উভয় দল যুদ্ধ যুদ্ধ করবে, মুসলিম বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ হার স্বীকার করে পালিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – “আল্লাহ্ কখনোই তাঁদের তাওবাহ কবুল করবেন না”। জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া কবীরা গুনাহর একটি [সাহীহ বুখারী – কিতাব ৫১, হাদীসঃ২৮]। জিহাদের ময়দান থেকে পালানো সাতটি কবীরা গুনাহর একটি। “আল মু’বিকাত” – “মুবিক” অর্থ এমন কিছু যা পূর্বের সব আমল ধ্বংস করে দেয়। তাই আপনি সারা জীবন আল্লাহ-র আনুগত্য করার পর যদি মাত্র একটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান, তাহলে আপনি আপনার পূর্বের সকল আমল হারাবেন। সুতরাং আল্লাহ্ এই একতৃতীয়াংশের তাওবাহ কখনো কবুল করবেন না। “এবং এই বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ নিহত হবে, এবং তাঁরা হবে আল্লাহ-র নিকট শ্রেষ্ঠ শহীদ” “এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে”। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – এই এক তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে এবং কোন ফিতনাই তাঁদের দমাতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “এবং তাঁরা অগ্রসর হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁরা কনস্টান্টিনোপল জয় করবে”। কনস্টান্টিনোপল হল ইস্তামবুল। অর্থাৎ ইস্তাম্বুল দু’বার বিজিত হবে। প্রথম ইস্তাম্বুল বিজিত হয়েছিলো মুহাম্মাদ আল ফাতীহ-এর সময় এবং আবার বিজিত হবে, নতুন করে আল মালহামার সময়। অর্থাৎ আস শাম পর্যন্ত সব এলাকা রোমানদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ইতিমধ্যেই সেখানে পশ্চিমাদের আর্মি বেইস আছে। শুধু সেখানেই না, সব জায়গাতেই তাঁদের আর্মি বেইস ছড়িয়ে আছে। তো মুসলিমরা যখন কনস্টান্টিনোপল জয় করবে এবং গানীমাহ ভাগাভাগি করতে থাকবে। তখন তাঁরা একটি কন্ঠ শুনতে পাবে যা ঘোষণা করবে মাসীহ আদ-দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটেছে, তাই তাঁরা আবার আস শামে ফিরে যাবে এবং সেখানে গিয়ে বুঝতে পারবে ঘোষণাটা মিথ্যা ছিল। এটা হবে একটা মিথ্যা গুজব। কিন্তু তখন ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] অবতরন করবেন এবং এই সময়েই আদ-দাজ্জাল আবির্ভূত হবে এবং ঈসা [আলাইহিস সালাম] নিজ হাতে তাঁকে হত্যা করবেন [সাহীহ মুসলিম, কিতাব ৪, হাদীস নং ৬৯২৪]।
এটা হল, কনস্টান্টিনোপল বিজয়, দাজ্জালের আবির্ভাব এবং ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] এর অবতরন সম্পর্কিত একটি হাদীস। একই রকম আরেকটি হাদীস আছে যা এটার সাথে অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ। তৃতীয় আরেকটি হাদীস হল, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “একটা সময় আসবে যখন ইরাক চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হবে এবং অবরোধকারীরা কোন অর্থ বা খাবার ইরাকের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেবে না”। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এই লোকেরা কারা যারা ইরাক অবরোধ করবে?” রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বললেন- “আল আযম”। আল আযম বলতে অমুসলিম, অনারবদের বোঝানো হয়, আল-আযম – হল তাঁরা যারা আরবী বলতে পারে না। সুতরাং অনারবরা এই নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ জারি করবে এবং রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “এবং তারপর আস-শাম”…সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন এবং লেবানন আস-শামের অন্তর্ভুক্ত এবং এর কেন্দ্র হল জেরুসালেম, ফিলিস্তিন, এটাই হল আস শামের কেন্দ্রবিন্দু। ভুলবশত আস শামকে শুধু সিরিয়া হিসেবে অনুবাদ করা হয়, কিন্তু এই পুরো অঞ্চলটা মিলে আস শাম, এবং এর কেন্দ্রে আল কুদস। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- আস শাম একটি অবরোধ এর মধ্যে দিয়ে যাবে। যার ফলে কোন খাবার অথবা অর্থ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। সুতরাং সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন – “ এর জন্য কারা দায়ী হবে”। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] জবাব দিলেন – “আর রুম” – রোমানরা। এবং তারপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বললেন – আমার উম্মাহর মধ্যে একজন খলীফা থাকবে যে হিসাব ছাড়াই মানুষের মাঝে অর্থ-সম্পদ বিলিয়ে দেবে। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আর রুমের আলোচনায় কেন আমি এই হাদিসটি বর্ণনা করছি। কারণ হল, প্রথমত এই মুহুর্তে ইরাক একটি নিষেধাজ্ঞা এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অবরোধ জারি করেছে জাতিসংঘ। অর্থাৎ এর জন্য শুধু রোমানরা দায়ী না, দায়ী সবাই। কিন্তু তারপরেই রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – “আস শামের উপর আরেকটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে” এবং এটা করবে রোমানরা। অনেক উলামা আছেন যারা মনে করেন, ইরাকের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ হল আল মালহীমের সূচনার ভূমিকা, কারণ এর শুরুটা হয়েছে ইরাকের মাধ্যমে এবং তারপর এটা সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হবে, এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি আমরা আল মালাহীম নামের এই যুদ্ধগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আল্লাহু আলাম, এই সবই অনুমান, আমরা এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু ইরাকে এখন যা হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, কারণ এটাই হয়তোবা উম্মাহর জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার শুরু, এটা ভাববেন না এটা আরামদায়ক কোন ভ্রমণ হবে। প্রত্যেক প্রজন্মকেই কোন না কোন বিপর্যয় অতিক্রম করতে হয়।
প্রতিটি প্রজন্মের ক্ষেত্রেই এটা ঘটে, কিন্তু কখনো কখনো আপনি শুধুমাত্র দর্শক ভূমিকায় থাকেন এবং অন্য কেউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আমাদের বাপ-দাদারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করছেন কিন্তু তাঁরা এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনেনি। তাঁরা মাঠের বাইরে থেকে এই যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করেছেন। তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হল এবং আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম এই যুদ্ধের সাক্ষী হলেও তাঁরা এর দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হন নি। কিন্তু বর্তমানে আমারা যেই পর্যায়ে প্রবেশ করছি তাতে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে মুসলিমদেরকেই। এর আগে মুসলিমদের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের কিন্তু এখন মুসলিমরা এই সঙ্ঘাতের একদম প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। আগে তাঁরা শুধু হাত গুটিয়ে দেখছিলো, কিন্তু এখন মুসলিমরাই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করছে। সুতরাং ভবিষ্যতে যাই ঘটুক না কেন সেটা আমাদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে, কারণ ভবিষ্যতের সকল ঘটনাবলীই ঘটবে মুসলিম উম্মাহকে কেন্দ্র করে। সব কিছুর কেন্দ্রে থাকবে মুসলিম ভূখণ্ডগুলো। আপনার যারা সেসময় খবর দেখেছেন তাঁদের মনে থাকার কথা, আজ থেকে পনেরো –বিশ বছর আগে কালে ভদ্রে ইসলাম কিংবা মুসলিমরা খবরের শিরোনাম হতো। আর আজ দেখুন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, কোন না কোন ভাবে খবরে শুধু ইসলাম এবং মুসলিমদের কথাই আলোচিত হচ্ছে। সেটা ভালো সংবাদ হোক কিংবা খারাপ। কারণ এখন আমারা ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছি, অতএব যাই ঘটুক না কেন তা আমাদের উপর প্রভাব ফেলবে। এখন এই অনুমান যদি সত্যি হয়, যে মুসলিম উম্মাহ তাঁর ইতিহাসের একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। এমন এক অধ্যায় যার ঠিক পরেই আগমন ঘটবে উম্মাহর দ্বিতীয় স্বর্ণযুগের। তাহলে আপনার, আমার সকলের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন মাঠের বাইরে নিস্ক্রিয়ভাবে না বসে থেকে, মূল ঘটনাপ্রবাহের একেবারে কেন্দ্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। কেন? কেন সাহাবারা সবচাইতে সম্মানিত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রজন্ম?
সাহাবারা সম্মানিত এবং সর্বাপেক্ষা উত্তম প্রজন্ম কারণ তারাই সেই প্রজন্ম যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যখন তাবে’ঈনরা আসলেন তখন তাঁদের জন্য ইতিমধ্যেই সবকিছু প্রস্তুত ছিলো। ফলে তাঁরা ইলম শিক্ষা করা এবং দেওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করতে পেরেছিলেন। সাহাবারা কিন্তু এই বিলাসিতার সুযোগ পান নি। সাহাবাদের দিন কেটেছিল এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে, এক বিপর্যয় থেকে আরেক বিপর্যয়ের মোকাবেলায়। সাহাবাদের অভিনব বৈশিষ্ট্য হল, তাঁরা ছিলেন সংখ্যালঘু যারা স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাবে’ঈনরা স্রোতের বিপরীতে যেতে হয় নি, কিন্তু সাহাবাদের স্রোতের বিপরীতে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো। সব কিছু, সারা দুনিয়া সাহাবাদের বিপক্ষে ছিল, এমনও সময় ছিল যে সাহাবারা ঘরের বাইরে যেতে আতঙ্কিত বোধ করতেন, যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় এরূপ অবস্থা হয়েছিলো। সাহাবারা স্বতন্ত্র কারণ তারাই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন। এখন সাহাবাদের তৈরি সেই ভবন ভেঙ্গে গেছে। তাই আজ নতুন এক প্রজন্মের সামনে সুযোগ আছে এই ভবন পুনঃনির্মাণের। তাই আমাদের প্রজন্মের সামনে সুযোগ আছে আমলের দিক দিয়ে সাহাবা কেরাম [রাঃ] –এর সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী প্রজন্ম হবার।
রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] একটি হাদীসে বলেছেন- রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, মুসনাদ ইমাম আহমেদ [হাদীস ১/৩৩৩] এবং আত তাবারানী আল মুজাম আল কাবীর [১১০২৯] এ বর্ণিত হয়েছে, “ইয়েমেনের আদ’আন আব’ইয়ান থেকে বারো হাজার সৈন্যর উত্থান ঘটবে, তাঁরা সংখ্যায় হবে ১২,০০০”। রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, “তাঁরা আমার এবং তাঁদের মধ্যবর্তী সকল লোকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ”। অর্থাৎ ইসলামের সম্পূর্ণ ইতিহাসে এই প্রজন্ম হবে সাহাবা [রাঃ]-এর পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এ প্রজন্ম হবে অত্যন্ত সম্মানিত এবং গুরুত্বপূর্ণ এক প্রজন্ম। তাঁরা হবে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান, কারন রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – মুসনাদে আহমাদ [৩/১৩০], আত-তীরমীযী [হাদীস নং ২৮৭৩] এবং আহমাদ [৪/৩১৯] –এ বর্ণিত হয়েছে, “আমার উম্মাহ বৃষ্টির মতো, তুমি জানবে না এটি আঝোরে কখন ঝরবে, হোক তা শুরু কিংবা শেষ”।
এই উম্মাহর শুরু হয়েছিলো রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম]-কে দিয়ে এবং এই উম্মাহর শেষ হবে ঈসা [আলাইহিস সালাম]-কে সাথে নিয়ে। সুতরাং আপনি যদি এই ঘটনাপ্রবাহে অংশগ্রহনের কোন সুযোগ পান, তাহলে নিজে ব্যাক্তিগতভাবে এতে অংশ নিন, এবং আপনার সন্তানকে এজন্য প্রস্তুত করুন। আপনি কিংবা আপনার পরের প্রজন্ম যদি এই স্বর্ণযুগের অংশ হতে চায়, তাহলে আপনার উচিত এটা নিশ্চিত করা যে আপনারা ময়দানের একেবারে মাঝখানে আছেন। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিস্ক্রিয় দর্শক হতে। সুতরাং আজকের সকল মুসলিম, বিশেষ করে তরুণদের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেন তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। আল্লাহ্ আপনার কাছে যে কোরবানি দাবী করবেন, আপনি তাঁর জন্য তৈরী থাকুন। আমরা কোন সাধারণ সময়ে বসবাস করছি না। এটা একটা অভিনব এবং মহাগুরুত্ববহ যুগ। এবং এই গুরুতর ঘটনাগুলোতে হয় আপনি অথবা আপনার পরবর্তী প্রজন্ম অংশগ্রহণ করবে। এবং এজন্য আল্লাহ-র পক্ষ থেকে মহাপুরষ্কার দান করা হবে, তাই আপনি যেন এই পুরষ্কারের ভাগীদার হতে পারেন সেটা নিশ্চিত করুন। এটা নিশ্চিত করুন আপনি যেন এই পুরষ্কারের একটা অংশ হলেও পান। একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার সামনেই এসব ঘটছে কিন্তু আপনি এতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না – এর চাইতে বড়ো অপচয় এর কি হতে পারে ?আপনি কি বরকতয় স্বর্ণযুগে বেচে থাকার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও হাত গুটীয়ে মাঠের বাইরে বসে থাকবেন? চিন্তা করে দেখুন যারা পরের দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন সেই সাহাবারা কি রকম আক্ষেপ করতেন, কারণ তাঁরা আরো আগে ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তাঁরা কেন একদিন আগে মুসলিম হলেন না, তাঁরা এটা নিয়ে পর্যন্ত আক্ষেপ করতেন। আবারো বলছি এটা অনুমান, কিন্তু যদি এক শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে এরকম ঘটার তাহলে আপনি এই সুযোগ হারানোর ঝুকি নিতে চাইবেন না। আর এই দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আপনার কি কি প্রয়োজন? দুটো জিনিসঃ ১। থাবা’ত এবং ২। তাযকীয়া
প্রথমত। দৃঢ়সংকল্পতা
আপনাকে পর্বতের মতো দৃঢ় হতে হবে। কোন কিছুই যেন আপনাকে নড়াতে, বদলাতে না পারে। আপনার ঈমান শক্ত হতে হবে যার শেকড় আপনার হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। এটা হল এক নম্বর। কারণ এক্ষেত্রে পুরষ্কার যতো বড়ো, ফিতান ও এর থেকে ঝুঁকিও ততোটাই মারাত্মক। ব্যাপারটা ব্যবসার মতো, অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসাগুলোতে ঝুকির হারও বেশি হয়। অর্থাৎ একদিকে যেমন অনেক লাভের সম্ভাবনা থাকে তেমনিভাবে অনেক সম্পদ হারাবারও ঝুঁকি থাকে। সুতরাং আপনি অনেক ‘আযর [পুরষ্কার] পেতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি ভুল করেন তবে তাঁর জন্য মারাত্মক মাশুল দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত। আপনার যা প্রয়োজন হবে তা হল, তাযকীয়া
আত্মত্যাগের স্পৃহা। আল্লাহ্-র জন্য যাই প্রয়োজন তা ত্যাগ করার জন্য আপনার প্রস্তুত হতে হবে। এটা হতে পারে আপনার নিজের জীবন, আপনার সময়, সম্পদ, পরিবার হতে পারে আপনি যেই ইসলামী দলের সদস্য সেটা আপনাকে ত্যাগ করতে হবে হতে পারে যে উলেমাদের আপনি ভালোবাসেন তাঁদের ত্যাগ করতে হচ্ছে। যেকোন কিছু ঘটতে পারে। আপনি জানেন না কি ঘটবে। কারণ এটা হল এমন এক সময় যখন একজন ব্যক্তি সকালে বিশ্বাসী থাকবে কিন্তু রাত হতে হতে কাফিরে পরিণত হবে। সে মুসলিম হিসেবে ঘুমাতে যাবে কিন্তু জেগে উঠবে মুশরিক হিসেবে। তাই কিছুকেই নিশ্চিত হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না। আল্লাহ্ আপনার কাছে যা চান সেটা উৎসর্গ করার জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেকে আল্লাহ-র পথের একজন কর্মী হিসেবে ভাবতে শিখুন, আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করবেন, আর ফলাফল আল্লাহ্-র হাতে ছেড়ে দেবেন। এবং আপনার রব’ আপনার কাছে যাই চাইবেন, আপনি সেটা দিতে প্রস্তুত থাকবেন। আমি এটা বলছি কারণ আত্মত্যাগ অনেক ক্ষেত্রেই শুধু দুনিয়াবী বস্তু যেমন –সময়, অর্থ, সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এমনো হতে পারে যে আপনার শেইখ,তিনি যেই হোন, ভুল পথে আছেন। এরকম হলে, আপনি কি তাঁর অনুসরণ করবেন? নাকি আপনি আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যা বলেছেন সেটার অনুসরণ করবেন? তাই এই দুরূহ সময়ে আমাদের যা প্রয়োজন তা হল, নূর – যা আমাদের অন্ধকারের মধ্যে পথ দেখাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, কিতাব আল ফিতান ওয়া আল মালাহীম, সুনান আবু দাউদ, কিতাব ৩৫, নম্বর ৪২৪৬ –এ, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম], এই ফিতানকে গভীর রাতের ঘোরতর অন্ধকারের সাথে তুলনা করেছেন। এই ফিতানের অন্ধকার এতো ঘন যে আপনি কিছু দেখতে পাবেন না। তাহলে কিভাবে আপনি এর মাঝে হাটবেন? কিভাবে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেবেন? এ অবস্থায় সঠিক দিক নির্দেশনা জন্য আপনার হৃদয়ে ঈমানের আলো থাকতে হবে। এবং আপনার হৃদয়ে এই আলো তৈরি করার উপায় হল, আজ থেকেই আপনার ঈমানকে সুদৃঢ় করার জন্য কাজ শুরু করা। কারণ আমাদেরকে প্রচুর প্রতারণা এবং মিথ্যাচারের মুখোমুখি হতে হবে, এজন্যই একে “ফিতনা” বলা হয়। ফিতনা যখন আসে, তখন সবকিছু খুব ঝাপসা, অস্পস্ট এবং কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, আর যখন ফিতনা দূর হয় তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু ততোক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু যতোক্ষন ফিতনা বিদ্যমান থাকে ততোক্ষণ কোন কিছু পরিষ্কার দেখা সম্ভব হয় না। তাই আপনার হৃদয়ে ঈমানের আলো, আল্লাহ-র পক্ষ থেকে নূর থাকতে হবে।
তাই ভাই-বোনেরা আপনারা প্রস্তুতি নিন, নিজেদের তৈরী করুন, উদ্যোগী হোন। কোন কিছুকেই নিশ্চিত হিসেবে ধরে নিবেন না। দৈনন্দিন জীবনের আরাম-আয়েশে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন না। নিজেকে প্রস্তুত করুন। যে সময় আসছে তাঁর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন, বিশেষ করে ঈমানের দিক দিয়ে, কারণ আপনি যদি প্রত্যক্ষ ভাবে এ ঘটনাবলীর সাক্ষী নাও হন, আজ হল সেই সময় যখন উম্মাহ বিশ্বমঞ্চের কেন্দ্রে অবস্থান করছে । সুতরাং বর্তমানে দুনিয়াতে যাই ঘটছে সেটা কোন না কোন ভাবে আমাদের উপর প্রভাব ফেলবে এবং এই বিপর্যয়ের সময় আপনার সুদীর্ঘ পথ একাকী পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ এমনো অবস্থা দেখা দিতে পারে যে আপনার আশেপাশেও কেউই সত্যের পথে অগ্রসর হতে রাজী না, একাকী পথচলার মতো দৃঢ়তা এবং সক্ষমতা আপনার অর্জন করতে হবে।
আমরা যখন ফিতনার সময়ের আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবছি তখন আমরা উদাহরণ হিসেবে সিয়ামের কথা চিন্তা করতে পারি। ফাযরের আযানের আগেই আমাদের সাহরী খেতে হয়। মুয়াজ্জিন “আল্লাহু আকবার” বলা মাত্র সময় শেষ। তাই ফজরের আগে যদি আপনি সাহরী না খান [প্রস্তুত না হন] তাহলে একবার ফিতনা শুরু হয়ে গেলে আপনার ক্ষুধার্ত থাকতে হবে। তাই সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি সাহরী খেয়ে নিন। কুর’আনে আল্লাহ্ আযযা ওয়াজাল বলেছেন, “যেদিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে, সেদিন এমন কোন ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্য ফলপ্রসূ হবে না, যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি অথবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনরূপ সৎকর্ম করেনি। আপনি বলে দিন, অপেক্ষা করো, আমরাও অপেক্ষমান”। (সূরা আন’আম ১৫৮) আল্লাহ্র চিহ্নসমূহ যখন প্রকাশিত হয়ে যাবে তখন ঈমান এনে কারো লাভ হবে না, যদি না সে আগেই ঈমান এনে থাকে ও সৎকর্ম করে। আপনি যদি আগেই ইমান না এনে থাকেন তাহলে ফিতানের সময় উপস্থিত হলে আপনি ঈমান আনতে পারবেন না, কারণ ততক্ষনে অনেক বেশি দেরী হয়ে যাবে। একমাত্র ঈমান আনার পরেই আপনি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও অগ্রসর হতে পারবেন। সুতরাং আগামীকালের জন্য অপেক্ষায় না থেকে এখনী আপনার সাহরি গ্রহণ করুন।
আল মালাহীমের সাথে সম্পর্কিত পরবর্তী চিহ্ন হল, কিতালুল ইয়াহুদঃ মুসলিম এবং আল ইয়াহুদের মধ্যে যুদ্ধ। ইস্রাইল রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই সংঘর্ষের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হয়েছে সাহাবাদের এই ব্যাপারটা বুঝতে কষ্ট হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন [আল হায়তামী, মাজমা আল যাওয়াইদভুল এবং ইবনে হাজর আল আসকালানী] “আল ইয়াহুদের সাথে তোমাদের একটি যুদ্ধ হবে, তোমরা জর্ডান নদির পশ্চিম পাড়ে থাকবে আর ইয়াহুদরা থাকবে নদীর পূর্ব পাশে”। সাহাবাদের এই হাদিসটি বুঝতে সমস্যা হচ্ছিলো, কারণ সেই সময় ইহুদীরা শক্তিশালী ছিলো না আর তখন মুসলিমরা জর্ডান পর্যন্ত পৌঁছেনি। তাই জর্ডানে তখন কোন মুসলিম ছিল না। হাদিসটির বর্ণনাকারী বলেছেন, জর্ডান নদী কোথায় আমি তাই জানতাম না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম], এমন ঘটনার কথা বলছিলেন যেই ঘটনার সংঘটনের জায়গার নামই আমরা জানতাম না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- এই জায়গায় [জর্ডান নদী] তোমরা যুদ্ধ করবে। ইন শা আল্লাহ্, ইস্রাইল, “বৃহত্তর ইস্রাইল” গঠনে ব্যর্থ হবে।আজ তাঁদের যে সীমান্ত আছে তাঁরা এর চাইতে বেশি আর অগ্রসর হতে পারবে না। কারণ বর্তমানে তাঁদের সীমান্ত একেবারে জর্ডান নদীর তীরে এবং এখানেই যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং এই যুদ্ধের ফল হবে আন নাসর লিল মুমীনীন মুমিনরা বিজয় লাভ করবে। এই হাদীসে আরো একটি ব্যাপার উল্লেখিত আছে যা বেশ কৌতুহলউদ্দীপক। এটা হবে এমন এক যুদ্ধ যা সাক্ষ্য দেবে শুধু যারা যুদ্ধ করছে তারাই না, এমনকি প্রকৃতিও এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। গাছ ও পাথর মুসলিমকে ডেকে বলবে “আমার পেছনে এক ইহুদী লুকিয়ে আছে…”। এই গাছ ও পাথরগুলো যখন মুসলিমদের ডাকবে তখন তাঁরা আমাদের কি বলে সম্বোধন করবে? তাঁরা কি বলবে – “হে ফিলিস্তিনি’? অথবা “হে মিশরী”? বা “হে পাকিস্তানী”? – তাঁরা কি বলবে? তাঁরা বলবে “হে মুসলিম!” পাথরও জানবে আপনি মুসলিম কিন্তু আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন সেটা সে জানবে না। কারণ সে শুধু ঈমানকেই চিনতে পারবে।
সুতরাং যে যুদ্ধ “লা ইলাহা ইল্লাললাহ”-র পতাকার নিচে হয় না, সেই যুদ্ধ ব্যর্থ। বিজয় তখনই আসবে যখন এটা পরিষ্কার হবে যে আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই এবং পরিষ্কার হবে যে আপনার একমাত্র পরিচয় হল, আপনি একজন মুসলিম, একমাত্র তখনই মুসলিমরা বিজয় অর্জন করবে।
ইউরোপীয়ানরা খ্রিস্টান ধর্মের একটি বিকৃত রূপ পেয়েছিল। তাঁরা কখনোই ঈসা [আলাইহিস সালাম] – এর প্রকৃত ধর্মে ঈমান আনেনি। তাঁরা শুরুতে ছিল মুশরিক আর তারপর তাঁরা খ্রিস্টান ধর্মের এমন একটি রূপের অনুসারী হয়েছে যা শিরক। তাঁদের অবস্থা প্রাচ্যের খ্রিস্টানদের মতো না, যারা এক সময় ঈসা [আঃ] সত্যিকার অনুসারী ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তাওহীদের আলো থেকে দূরে অন্ধকার ও অজ্ঞানতার মধ্যে ইউরোপ বসবাস করছে। ইউরোপিয়ানরা বুনিয়াদি ভাবে একটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ধর্মকে বিকৃত করেছে। আমি খ্রিস্টান ধর্মের যেই বিকৃত রূপ তাঁরা অনুসরণ করে তাঁর কথা বলছি যেটা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় একটি ধর্ম “কেউ তোমার একগালে আঘাত করলে তুমি অপর গাল পেতে দাও” [বাইবেলঃ ম্যাথিউ ৫:৩৮]। এর চাইতে বেশি শান্তিপ্রিয় হওয়াতো সম্ভব না। আর আরব ও প্রাচ্যের খ্রিস্টানরা এরকমটাই ছিলো, তাঁরা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় ছিল। যদিও তাঁরা ইতিমধ্যেই তাঁদের ধর্মে ত্রিত্ববাদ এবং শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলো। কিন্তু ইউরোপ, এই শান্তিপ্রিয় ধর্মের প্রকৃতিই বদলে দিয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মকে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে বেশি রক্তপাত ঘটানোর জন্য দায়ী ধর্মে পরিণত করার কৃতিত্ব ইউরোপীয়ানদেরই প্রাপ্য। বর্তমান পৃথিবীর বুকে এমন কোন ধর্ম নেই যা মানব ইতিহাসে এই ধর্মের চাইতে বেশি রক্ত ঝরিয়েছে এবং এ সম্পর্কিত সংখ্যাগুলো নিজেরাই এর স্বপক্ষে সাক্ষ্য দেয় ক্রুসেডের সময় কতো মুসলিমকে খ্রিষ্ট ধর্মের নামে হত্যা করা হয়ছিলো? ইউরোপিয়ানদের নিজেদের আভ্যন্তরিক ধর্ম যুদ্ধে কতো মানুষ মারা গিয়েছে? ইউরোপীয়ানদের ধর্ম যুদ্ধে শত শত লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে আর ইউরোপীয়ানরা এমন এক কাজে সফল হয়েছে যা করতে আর কেউ সক্ষম হয় নি, যে, তাঁরা তিনটি মহাদেশের আদি অধিবাসীদের পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম কিছু আগে কখনো ঘটেনি। তাঁরা উত্তর আমেরিকা, দক্ষিন আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার খাতিরে তাঁরা অতি অল্প সংখ্যক আদিবাসীদের বাঁচিয়ে রেখেছে অতীতের স্মারক হিসেবে আর বাকি সবাইকে শেষ করে দিয়েছে। আজ যেসব আদিবাসী এবং নেটিভ আমেরিকানরা বেচে আছে, সেটা হল গবেষণার স্বার্থে।
ইউরোপ এমন এক সত্ত্বা যা শয়তানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা রাখে। কারণ ইসলামের সাথে লড়াই করার জন্য শয়তান সবচাইতে খারাপদেরকেই খুঁজছে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] – এর হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে এই দীর্ঘ যুদ্ধ শুরু হবে, যার শুরুতে মুসলিমরা থাকবে খুবই দুর্বল আর এই যুদ্ধ শেষ হবে মুসলিমদের দ্বারা পুরো দুনিয়া শাসিত হবার মাধ্যমে। এটা হবে সবচেয়ে মারাত্মক ফিতানের সময় আবার একই সাথে সবচেয়ে বেশি বরকতময় সময়। এই সময়েই আল মাহদী এবং ঈসা [আলাইহিস সালাম] আসবেন এবং এই সময়েই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এখন একথাগুলোর অর্থ এই না যে সব রোমানরাই ইসলামের শত্রু হবে। কারণ ইসলাম প্রতিনিয়ত মানুষের হৃদয় জয় করে নিচ্ছে। এই ব্যাপারটা খুবই কৌতুহল উদ্দীপক যে যদিও রোমানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করছে এবং আমরা হাদীস থেকে জানি রোমান আর্মি মুসলিমদেরকে ওইসব রোমানদের হস্তান্তর করতে বলবে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মুসলিমরা বলবে, “আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না”। যদিও তাঁদের বর্ণ এবং জাতীয়তা ভিন্ন তাও তাঁরা আমাদের ভাই, কারণ এখন তাঁরা মুসলিম এবং ইসলাম প্রতি আনুগত্য অন্য যেকোন পরিচয়ের চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘটনা সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত আছে। এবং এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহীহ হাদীস বর্ণিত আছে, যেমন মুসলিম শরীফের একটি হাদীস হলঃ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- রোমানরা তোমাদের আক্রমণ করবে এবং আস শামের আল আমাকে তাঁবু খাটাবে (অবস্থান গ্রহণ করবে)। মদিনা থেকে একটি বাহিনী তাঁদের মোকাবেলা করতে যাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেন – “এবং তাঁরা হবে তাঁদের সময়কার শ্রেষ্ঠ মুমিন” এবং এই মুসলিম বাহিনী তাঁদের অবস্থান গ্রহণ করবে, এবং রোমানরা তাঁদের বলবে – “ আমাদের লোকদের আমাদের হাতে তুলে দাও”, অর্থাৎ ওইসব রোমান যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মুসলিমরা বলবে, “ আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না”। সুতরাং উভয় দল যুদ্ধ যুদ্ধ করবে, মুসলিম বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ হার স্বীকার করে পালিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – “আল্লাহ্ কখনোই তাঁদের তাওবাহ কবুল করবেন না”। জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া কবীরা গুনাহর একটি [সাহীহ বুখারী – কিতাব ৫১, হাদীসঃ২৮]। জিহাদের ময়দান থেকে পালানো সাতটি কবীরা গুনাহর একটি। “আল মু’বিকাত” – “মুবিক” অর্থ এমন কিছু যা পূর্বের সব আমল ধ্বংস করে দেয়। তাই আপনি সারা জীবন আল্লাহ-র আনুগত্য করার পর যদি মাত্র একটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান, তাহলে আপনি আপনার পূর্বের সকল আমল হারাবেন। সুতরাং আল্লাহ্ এই একতৃতীয়াংশের তাওবাহ কখনো কবুল করবেন না। “এবং এই বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ নিহত হবে, এবং তাঁরা হবে আল্লাহ-র নিকট শ্রেষ্ঠ শহীদ” “এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে”। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – এই এক তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে এবং কোন ফিতনাই তাঁদের দমাতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “এবং তাঁরা অগ্রসর হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁরা কনস্টান্টিনোপল জয় করবে”। কনস্টান্টিনোপল হল ইস্তামবুল। অর্থাৎ ইস্তাম্বুল দু’বার বিজিত হবে। প্রথম ইস্তাম্বুল বিজিত হয়েছিলো মুহাম্মাদ আল ফাতীহ-এর সময় এবং আবার বিজিত হবে, নতুন করে আল মালহামার সময়। অর্থাৎ আস শাম পর্যন্ত সব এলাকা রোমানদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ইতিমধ্যেই সেখানে পশ্চিমাদের আর্মি বেইস আছে। শুধু সেখানেই না, সব জায়গাতেই তাঁদের আর্মি বেইস ছড়িয়ে আছে। তো মুসলিমরা যখন কনস্টান্টিনোপল জয় করবে এবং গানীমাহ ভাগাভাগি করতে থাকবে। তখন তাঁরা একটি কন্ঠ শুনতে পাবে যা ঘোষণা করবে মাসীহ আদ-দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটেছে, তাই তাঁরা আবার আস শামে ফিরে যাবে এবং সেখানে গিয়ে বুঝতে পারবে ঘোষণাটা মিথ্যা ছিল। এটা হবে একটা মিথ্যা গুজব। কিন্তু তখন ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] অবতরন করবেন এবং এই সময়েই আদ-দাজ্জাল আবির্ভূত হবে এবং ঈসা [আলাইহিস সালাম] নিজ হাতে তাঁকে হত্যা করবেন [সাহীহ মুসলিম, কিতাব ৪, হাদীস নং ৬৯২৪]।
এটা হল, কনস্টান্টিনোপল বিজয়, দাজ্জালের আবির্ভাব এবং ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] এর অবতরন সম্পর্কিত একটি হাদীস। একই রকম আরেকটি হাদীস আছে যা এটার সাথে অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ। তৃতীয় আরেকটি হাদীস হল, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “একটা সময় আসবে যখন ইরাক চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হবে এবং অবরোধকারীরা কোন অর্থ বা খাবার ইরাকের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেবে না”। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এই লোকেরা কারা যারা ইরাক অবরোধ করবে?” রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বললেন- “আল আযম”। আল আযম বলতে অমুসলিম, অনারবদের বোঝানো হয়, আল-আযম – হল তাঁরা যারা আরবী বলতে পারে না। সুতরাং অনারবরা এই নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ জারি করবে এবং রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “এবং তারপর আস-শাম”…সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন এবং লেবানন আস-শামের অন্তর্ভুক্ত এবং এর কেন্দ্র হল জেরুসালেম, ফিলিস্তিন, এটাই হল আস শামের কেন্দ্রবিন্দু। ভুলবশত আস শামকে শুধু সিরিয়া হিসেবে অনুবাদ করা হয়, কিন্তু এই পুরো অঞ্চলটা মিলে আস শাম, এবং এর কেন্দ্রে আল কুদস। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- আস শাম একটি অবরোধ এর মধ্যে দিয়ে যাবে। যার ফলে কোন খাবার অথবা অর্থ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। সুতরাং সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন – “ এর জন্য কারা দায়ী হবে”। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] জবাব দিলেন – “আর রুম” – রোমানরা। এবং তারপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বললেন – আমার উম্মাহর মধ্যে একজন খলীফা থাকবে যে হিসাব ছাড়াই মানুষের মাঝে অর্থ-সম্পদ বিলিয়ে দেবে। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আর রুমের আলোচনায় কেন আমি এই হাদিসটি বর্ণনা করছি। কারণ হল, প্রথমত এই মুহুর্তে ইরাক একটি নিষেধাজ্ঞা এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অবরোধ জারি করেছে জাতিসংঘ। অর্থাৎ এর জন্য শুধু রোমানরা দায়ী না, দায়ী সবাই। কিন্তু তারপরেই রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – “আস শামের উপর আরেকটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে” এবং এটা করবে রোমানরা। অনেক উলামা আছেন যারা মনে করেন, ইরাকের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ হল আল মালহীমের সূচনার ভূমিকা, কারণ এর শুরুটা হয়েছে ইরাকের মাধ্যমে এবং তারপর এটা সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হবে, এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি আমরা আল মালাহীম নামের এই যুদ্ধগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আল্লাহু আলাম, এই সবই অনুমান, আমরা এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু ইরাকে এখন যা হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, কারণ এটাই হয়তোবা উম্মাহর জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার শুরু, এটা ভাববেন না এটা আরামদায়ক কোন ভ্রমণ হবে। প্রত্যেক প্রজন্মকেই কোন না কোন বিপর্যয় অতিক্রম করতে হয়।
প্রতিটি প্রজন্মের ক্ষেত্রেই এটা ঘটে, কিন্তু কখনো কখনো আপনি শুধুমাত্র দর্শক ভূমিকায় থাকেন এবং অন্য কেউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আমাদের বাপ-দাদারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করছেন কিন্তু তাঁরা এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনেনি। তাঁরা মাঠের বাইরে থেকে এই যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করেছেন। তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হল এবং আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম এই যুদ্ধের সাক্ষী হলেও তাঁরা এর দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হন নি। কিন্তু বর্তমানে আমারা যেই পর্যায়ে প্রবেশ করছি তাতে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে মুসলিমদেরকেই। এর আগে মুসলিমদের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের কিন্তু এখন মুসলিমরা এই সঙ্ঘাতের একদম প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। আগে তাঁরা শুধু হাত গুটিয়ে দেখছিলো, কিন্তু এখন মুসলিমরাই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করছে। সুতরাং ভবিষ্যতে যাই ঘটুক না কেন সেটা আমাদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে, কারণ ভবিষ্যতের সকল ঘটনাবলীই ঘটবে মুসলিম উম্মাহকে কেন্দ্র করে। সব কিছুর কেন্দ্রে থাকবে মুসলিম ভূখণ্ডগুলো। আপনার যারা সেসময় খবর দেখেছেন তাঁদের মনে থাকার কথা, আজ থেকে পনেরো –বিশ বছর আগে কালে ভদ্রে ইসলাম কিংবা মুসলিমরা খবরের শিরোনাম হতো। আর আজ দেখুন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, কোন না কোন ভাবে খবরে শুধু ইসলাম এবং মুসলিমদের কথাই আলোচিত হচ্ছে। সেটা ভালো সংবাদ হোক কিংবা খারাপ। কারণ এখন আমারা ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছি, অতএব যাই ঘটুক না কেন তা আমাদের উপর প্রভাব ফেলবে। এখন এই অনুমান যদি সত্যি হয়, যে মুসলিম উম্মাহ তাঁর ইতিহাসের একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। এমন এক অধ্যায় যার ঠিক পরেই আগমন ঘটবে উম্মাহর দ্বিতীয় স্বর্ণযুগের। তাহলে আপনার, আমার সকলের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন মাঠের বাইরে নিস্ক্রিয়ভাবে না বসে থেকে, মূল ঘটনাপ্রবাহের একেবারে কেন্দ্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। কেন? কেন সাহাবারা সবচাইতে সম্মানিত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রজন্ম?
সাহাবারা সম্মানিত এবং সর্বাপেক্ষা উত্তম প্রজন্ম কারণ তারাই সেই প্রজন্ম যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যখন তাবে’ঈনরা আসলেন তখন তাঁদের জন্য ইতিমধ্যেই সবকিছু প্রস্তুত ছিলো। ফলে তাঁরা ইলম শিক্ষা করা এবং দেওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করতে পেরেছিলেন। সাহাবারা কিন্তু এই বিলাসিতার সুযোগ পান নি। সাহাবাদের দিন কেটেছিল এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে, এক বিপর্যয় থেকে আরেক বিপর্যয়ের মোকাবেলায়। সাহাবাদের অভিনব বৈশিষ্ট্য হল, তাঁরা ছিলেন সংখ্যালঘু যারা স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাবে’ঈনরা স্রোতের বিপরীতে যেতে হয় নি, কিন্তু সাহাবাদের স্রোতের বিপরীতে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো। সব কিছু, সারা দুনিয়া সাহাবাদের বিপক্ষে ছিল, এমনও সময় ছিল যে সাহাবারা ঘরের বাইরে যেতে আতঙ্কিত বোধ করতেন, যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় এরূপ অবস্থা হয়েছিলো। সাহাবারা স্বতন্ত্র কারণ তারাই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন। এখন সাহাবাদের তৈরি সেই ভবন ভেঙ্গে গেছে। তাই আজ নতুন এক প্রজন্মের সামনে সুযোগ আছে এই ভবন পুনঃনির্মাণের। তাই আমাদের প্রজন্মের সামনে সুযোগ আছে আমলের দিক দিয়ে সাহাবা কেরাম [রাঃ] –এর সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী প্রজন্ম হবার।
রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] একটি হাদীসে বলেছেন- রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, মুসনাদ ইমাম আহমেদ [হাদীস ১/৩৩৩] এবং আত তাবারানী আল মুজাম আল কাবীর [১১০২৯] এ বর্ণিত হয়েছে, “ইয়েমেনের আদ’আন আব’ইয়ান থেকে বারো হাজার সৈন্যর উত্থান ঘটবে, তাঁরা সংখ্যায় হবে ১২,০০০”। রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, “তাঁরা আমার এবং তাঁদের মধ্যবর্তী সকল লোকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ”। অর্থাৎ ইসলামের সম্পূর্ণ ইতিহাসে এই প্রজন্ম হবে সাহাবা [রাঃ]-এর পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এ প্রজন্ম হবে অত্যন্ত সম্মানিত এবং গুরুত্বপূর্ণ এক প্রজন্ম। তাঁরা হবে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান, কারন রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – মুসনাদে আহমাদ [৩/১৩০], আত-তীরমীযী [হাদীস নং ২৮৭৩] এবং আহমাদ [৪/৩১৯] –এ বর্ণিত হয়েছে, “আমার উম্মাহ বৃষ্টির মতো, তুমি জানবে না এটি আঝোরে কখন ঝরবে, হোক তা শুরু কিংবা শেষ”।
এই উম্মাহর শুরু হয়েছিলো রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম]-কে দিয়ে এবং এই উম্মাহর শেষ হবে ঈসা [আলাইহিস সালাম]-কে সাথে নিয়ে। সুতরাং আপনি যদি এই ঘটনাপ্রবাহে অংশগ্রহনের কোন সুযোগ পান, তাহলে নিজে ব্যাক্তিগতভাবে এতে অংশ নিন, এবং আপনার সন্তানকে এজন্য প্রস্তুত করুন। আপনি কিংবা আপনার পরের প্রজন্ম যদি এই স্বর্ণযুগের অংশ হতে চায়, তাহলে আপনার উচিত এটা নিশ্চিত করা যে আপনারা ময়দানের একেবারে মাঝখানে আছেন। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিস্ক্রিয় দর্শক হতে। সুতরাং আজকের সকল মুসলিম, বিশেষ করে তরুণদের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেন তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। আল্লাহ্ আপনার কাছে যে কোরবানি দাবী করবেন, আপনি তাঁর জন্য তৈরী থাকুন। আমরা কোন সাধারণ সময়ে বসবাস করছি না। এটা একটা অভিনব এবং মহাগুরুত্ববহ যুগ। এবং এই গুরুতর ঘটনাগুলোতে হয় আপনি অথবা আপনার পরবর্তী প্রজন্ম অংশগ্রহণ করবে। এবং এজন্য আল্লাহ-র পক্ষ থেকে মহাপুরষ্কার দান করা হবে, তাই আপনি যেন এই পুরষ্কারের ভাগীদার হতে পারেন সেটা নিশ্চিত করুন। এটা নিশ্চিত করুন আপনি যেন এই পুরষ্কারের একটা অংশ হলেও পান। একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার সামনেই এসব ঘটছে কিন্তু আপনি এতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না – এর চাইতে বড়ো অপচয় এর কি হতে পারে ?আপনি কি বরকতয় স্বর্ণযুগে বেচে থাকার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও হাত গুটীয়ে মাঠের বাইরে বসে থাকবেন? চিন্তা করে দেখুন যারা পরের দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন সেই সাহাবারা কি রকম আক্ষেপ করতেন, কারণ তাঁরা আরো আগে ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তাঁরা কেন একদিন আগে মুসলিম হলেন না, তাঁরা এটা নিয়ে পর্যন্ত আক্ষেপ করতেন। আবারো বলছি এটা অনুমান, কিন্তু যদি এক শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে এরকম ঘটার তাহলে আপনি এই সুযোগ হারানোর ঝুকি নিতে চাইবেন না। আর এই দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আপনার কি কি প্রয়োজন? দুটো জিনিসঃ ১। থাবা’ত এবং ২। তাযকীয়া
প্রথমত। দৃঢ়সংকল্পতা
আপনাকে পর্বতের মতো দৃঢ় হতে হবে। কোন কিছুই যেন আপনাকে নড়াতে, বদলাতে না পারে। আপনার ঈমান শক্ত হতে হবে যার শেকড় আপনার হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। এটা হল এক নম্বর। কারণ এক্ষেত্রে পুরষ্কার যতো বড়ো, ফিতান ও এর থেকে ঝুঁকিও ততোটাই মারাত্মক। ব্যাপারটা ব্যবসার মতো, অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসাগুলোতে ঝুকির হারও বেশি হয়। অর্থাৎ একদিকে যেমন অনেক লাভের সম্ভাবনা থাকে তেমনিভাবে অনেক সম্পদ হারাবারও ঝুঁকি থাকে। সুতরাং আপনি অনেক ‘আযর [পুরষ্কার] পেতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি ভুল করেন তবে তাঁর জন্য মারাত্মক মাশুল দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত। আপনার যা প্রয়োজন হবে তা হল, তাযকীয়া
আত্মত্যাগের স্পৃহা। আল্লাহ্-র জন্য যাই প্রয়োজন তা ত্যাগ করার জন্য আপনার প্রস্তুত হতে হবে। এটা হতে পারে আপনার নিজের জীবন, আপনার সময়, সম্পদ, পরিবার হতে পারে আপনি যেই ইসলামী দলের সদস্য সেটা আপনাকে ত্যাগ করতে হবে হতে পারে যে উলেমাদের আপনি ভালোবাসেন তাঁদের ত্যাগ করতে হচ্ছে। যেকোন কিছু ঘটতে পারে। আপনি জানেন না কি ঘটবে। কারণ এটা হল এমন এক সময় যখন একজন ব্যক্তি সকালে বিশ্বাসী থাকবে কিন্তু রাত হতে হতে কাফিরে পরিণত হবে। সে মুসলিম হিসেবে ঘুমাতে যাবে কিন্তু জেগে উঠবে মুশরিক হিসেবে। তাই কিছুকেই নিশ্চিত হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না। আল্লাহ্ আপনার কাছে যা চান সেটা উৎসর্গ করার জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেকে আল্লাহ-র পথের একজন কর্মী হিসেবে ভাবতে শিখুন, আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করবেন, আর ফলাফল আল্লাহ্-র হাতে ছেড়ে দেবেন। এবং আপনার রব’ আপনার কাছে যাই চাইবেন, আপনি সেটা দিতে প্রস্তুত থাকবেন। আমি এটা বলছি কারণ আত্মত্যাগ অনেক ক্ষেত্রেই শুধু দুনিয়াবী বস্তু যেমন –সময়, অর্থ, সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এমনো হতে পারে যে আপনার শেইখ,তিনি যেই হোন, ভুল পথে আছেন। এরকম হলে, আপনি কি তাঁর অনুসরণ করবেন? নাকি আপনি আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যা বলেছেন সেটার অনুসরণ করবেন? তাই এই দুরূহ সময়ে আমাদের যা প্রয়োজন তা হল, নূর – যা আমাদের অন্ধকারের মধ্যে পথ দেখাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, কিতাব আল ফিতান ওয়া আল মালাহীম, সুনান আবু দাউদ, কিতাব ৩৫, নম্বর ৪২৪৬ –এ, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম], এই ফিতানকে গভীর রাতের ঘোরতর অন্ধকারের সাথে তুলনা করেছেন। এই ফিতানের অন্ধকার এতো ঘন যে আপনি কিছু দেখতে পাবেন না। তাহলে কিভাবে আপনি এর মাঝে হাটবেন? কিভাবে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেবেন? এ অবস্থায় সঠিক দিক নির্দেশনা জন্য আপনার হৃদয়ে ঈমানের আলো থাকতে হবে। এবং আপনার হৃদয়ে এই আলো তৈরি করার উপায় হল, আজ থেকেই আপনার ঈমানকে সুদৃঢ় করার জন্য কাজ শুরু করা। কারণ আমাদেরকে প্রচুর প্রতারণা এবং মিথ্যাচারের মুখোমুখি হতে হবে, এজন্যই একে “ফিতনা” বলা হয়। ফিতনা যখন আসে, তখন সবকিছু খুব ঝাপসা, অস্পস্ট এবং কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, আর যখন ফিতনা দূর হয় তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু ততোক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু যতোক্ষন ফিতনা বিদ্যমান থাকে ততোক্ষণ কোন কিছু পরিষ্কার দেখা সম্ভব হয় না। তাই আপনার হৃদয়ে ঈমানের আলো, আল্লাহ-র পক্ষ থেকে নূর থাকতে হবে।
তাই ভাই-বোনেরা আপনারা প্রস্তুতি নিন, নিজেদের তৈরী করুন, উদ্যোগী হোন। কোন কিছুকেই নিশ্চিত হিসেবে ধরে নিবেন না। দৈনন্দিন জীবনের আরাম-আয়েশে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন না। নিজেকে প্রস্তুত করুন। যে সময় আসছে তাঁর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন, বিশেষ করে ঈমানের দিক দিয়ে, কারণ আপনি যদি প্রত্যক্ষ ভাবে এ ঘটনাবলীর সাক্ষী নাও হন, আজ হল সেই সময় যখন উম্মাহ বিশ্বমঞ্চের কেন্দ্রে অবস্থান করছে । সুতরাং বর্তমানে দুনিয়াতে যাই ঘটছে সেটা কোন না কোন ভাবে আমাদের উপর প্রভাব ফেলবে এবং এই বিপর্যয়ের সময় আপনার সুদীর্ঘ পথ একাকী পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ এমনো অবস্থা দেখা দিতে পারে যে আপনার আশেপাশেও কেউই সত্যের পথে অগ্রসর হতে রাজী না, একাকী পথচলার মতো দৃঢ়তা এবং সক্ষমতা আপনার অর্জন করতে হবে।
আমরা যখন ফিতনার সময়ের আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবছি তখন আমরা উদাহরণ হিসেবে সিয়ামের কথা চিন্তা করতে পারি। ফাযরের আযানের আগেই আমাদের সাহরী খেতে হয়। মুয়াজ্জিন “আল্লাহু আকবার” বলা মাত্র সময় শেষ। তাই ফজরের আগে যদি আপনি সাহরী না খান [প্রস্তুত না হন] তাহলে একবার ফিতনা শুরু হয়ে গেলে আপনার ক্ষুধার্ত থাকতে হবে। তাই সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি সাহরী খেয়ে নিন। কুর’আনে আল্লাহ্ আযযা ওয়াজাল বলেছেন, “যেদিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে, সেদিন এমন কোন ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্য ফলপ্রসূ হবে না, যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি অথবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনরূপ সৎকর্ম করেনি। আপনি বলে দিন, অপেক্ষা করো, আমরাও অপেক্ষমান”। (সূরা আন’আম ১৫৮) আল্লাহ্র চিহ্নসমূহ যখন প্রকাশিত হয়ে যাবে তখন ঈমান এনে কারো লাভ হবে না, যদি না সে আগেই ঈমান এনে থাকে ও সৎকর্ম করে। আপনি যদি আগেই ইমান না এনে থাকেন তাহলে ফিতানের সময় উপস্থিত হলে আপনি ঈমান আনতে পারবেন না, কারণ ততক্ষনে অনেক বেশি দেরী হয়ে যাবে। একমাত্র ঈমান আনার পরেই আপনি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও অগ্রসর হতে পারবেন। সুতরাং আগামীকালের জন্য অপেক্ষায় না থেকে এখনী আপনার সাহরি গ্রহণ করুন।
আল মালাহীমের সাথে সম্পর্কিত পরবর্তী চিহ্ন হল, কিতালুল ইয়াহুদঃ মুসলিম এবং আল ইয়াহুদের মধ্যে যুদ্ধ। ইস্রাইল রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই সংঘর্ষের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হয়েছে সাহাবাদের এই ব্যাপারটা বুঝতে কষ্ট হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন [আল হায়তামী, মাজমা আল যাওয়াইদভুল এবং ইবনে হাজর আল আসকালানী] “আল ইয়াহুদের সাথে তোমাদের একটি যুদ্ধ হবে, তোমরা জর্ডান নদির পশ্চিম পাড়ে থাকবে আর ইয়াহুদরা থাকবে নদীর পূর্ব পাশে”। সাহাবাদের এই হাদিসটি বুঝতে সমস্যা হচ্ছিলো, কারণ সেই সময় ইহুদীরা শক্তিশালী ছিলো না আর তখন মুসলিমরা জর্ডান পর্যন্ত পৌঁছেনি। তাই জর্ডানে তখন কোন মুসলিম ছিল না। হাদিসটির বর্ণনাকারী বলেছেন, জর্ডান নদী কোথায় আমি তাই জানতাম না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম], এমন ঘটনার কথা বলছিলেন যেই ঘটনার সংঘটনের জায়গার নামই আমরা জানতাম না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- এই জায়গায় [জর্ডান নদী] তোমরা যুদ্ধ করবে। ইন শা আল্লাহ্, ইস্রাইল, “বৃহত্তর ইস্রাইল” গঠনে ব্যর্থ হবে।আজ তাঁদের যে সীমান্ত আছে তাঁরা এর চাইতে বেশি আর অগ্রসর হতে পারবে না। কারণ বর্তমানে তাঁদের সীমান্ত একেবারে জর্ডান নদীর তীরে এবং এখানেই যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং এই যুদ্ধের ফল হবে আন নাসর লিল মুমীনীন মুমিনরা বিজয় লাভ করবে। এই হাদীসে আরো একটি ব্যাপার উল্লেখিত আছে যা বেশ কৌতুহলউদ্দীপক। এটা হবে এমন এক যুদ্ধ যা সাক্ষ্য দেবে শুধু যারা যুদ্ধ করছে তারাই না, এমনকি প্রকৃতিও এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। গাছ ও পাথর মুসলিমকে ডেকে বলবে “আমার পেছনে এক ইহুদী লুকিয়ে আছে…”। এই গাছ ও পাথরগুলো যখন মুসলিমদের ডাকবে তখন তাঁরা আমাদের কি বলে সম্বোধন করবে? তাঁরা কি বলবে – “হে ফিলিস্তিনি’? অথবা “হে মিশরী”? বা “হে পাকিস্তানী”? – তাঁরা কি বলবে? তাঁরা বলবে “হে মুসলিম!” পাথরও জানবে আপনি মুসলিম কিন্তু আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন সেটা সে জানবে না। কারণ সে শুধু ঈমানকেই চিনতে পারবে।
সুতরাং যে যুদ্ধ “লা ইলাহা ইল্লাললাহ”-র পতাকার নিচে হয় না, সেই যুদ্ধ ব্যর্থ। বিজয় তখনই আসবে যখন এটা পরিষ্কার হবে যে আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই এবং পরিষ্কার হবে যে আপনার একমাত্র পরিচয় হল, আপনি একজন মুসলিম, একমাত্র তখনই মুসলিমরা বিজয় অর্জন করবে।
Comment