(চীনা মিলিটারি ক্লাসিক আর্ট অফ ওয়ারের অতি সংক্ষিপ্ত আক্ষরিক অনুবাদ এটি। আড়াই হাজার বছরের এই ক্লাসিকটি শুধু যুদ্ধবিদ্যা নয়, জীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। আজ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুবাদ দেয়া হল)
এক) যুদ্ধ করার ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই যুদ্ধের খরচ হিসেব করতে হবে
দুই) সত্যিকারের যুদ্ধে বিজয় যখন দেরিতে আসে, সৈন্যদের অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যায়, বর্মে মরচে ধরে। কোন নগর অবরোধ করে থাকলে আক্রমণকারী সেনাদলের শক্তি ক্ষয় হয়ে আসবে।
তিন) যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে রাষ্ট্রের ধনসম্পদ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
চার) প্রলম্বিত যুদ্ধে জড়ালে অস্ত্র ভোঁতা হয়ে পড়বে, সম্পদ নি:শেষ হয়ে যাবে, শক্তি ক্ষয় হবে , মনোবল পড়ে আসবে- তখন আপনার অন্য শত্রুরা এর সুযোগ নেবে। এমন অবস্থা হলে যত বিজ্ঞ পরামর্শদাতাই পক্ষে থাকুক, ভয়াবহ ফলাফল এড়ানো যাবেনা।
পাঁচ) তাই, যুদ্ধে মাঝে মাঝে বোকার মত তাড়াহুড়ো করার কথা শোনা গেলেও লম্বা সময় ধরে যুদ্ধ চালানো মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ না।
ছয়) লম্বা সময় ধরে চালানো যুদ্ধ কখনোই কোন দেশের জন্যে সুফল বয়ে আনেনি। এমন কোন উদাহরণ ইতিহাসে নেই।
( আমেরিকার ইরাক এবং আফগান যুদ্ধ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ)
সাত) যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যে ভালভাবে জানে, কেবল তার পক্ষেই লাভজনকভাবে যুদ্ধ চালানো সম্ভব।
আট) দক্ষ যোদ্ধা কখনো দ্বিতীয়বার লড়বার আশা করেনা, একবারেই সে যুদ্ধ জয় করে। প্রয়োজনের দ্বিগুনের বেশি সে কখনো তার সরবরাহ ট্রাক বোঝাই করেনা।
নয়) স্বদেশ থেকে সরঞ্জাম আনুন, কিন্তু শত্রুর সরবরাহ ব্যবহার করুন। ওতে আপনার সেনাদলের কখনো অভাব থাকবেনা।
( একাত্তরে টাঙ্গাইলের কাদেরীয়া বাহিনীর মূলমন্ত্রই ছিল “শত্রুর অস্ত্রই আমাদের অস্ত্র” )
দশ) দূর দেশে যুদ্ধ চালাতে গেলে প্রচুর খরচ হবে, ওতে যুদ্ধবাজ দেশের অর্থনীতি ধ্বসে পড়বে।
( এবারও আমেরিকার অবস্থা চিন্তা করুন)
এগারো) যুদ্ধ চললে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়, ওতে সাধারণ মানুষের সঞ্চিত সম্পদ নি:শেষ হয়।
বার) একই সাথে, যুদ্ধের খরচ চালাতে ট্যাক্স বসানো লাগে।
তের) জিনিসপত্রের দাম বাড়া এবং ট্যাক্স- এ দুই মিলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
চোদ্দ) যেহেতু রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার জনগণ, এই জনগণের উপর যুদ্ধের বোঝা চাপিয়ে দেবার আগে কর্তৃপক্ষের কি উচিৎ না যথাসম্ভব সতর্কভাবে বিবেচনা করা?
পনের) শত্রুর কাছ থেকে উদ্ধার করা এক বাক্স সরঞ্জামের মূল্য নিজেদের বিশ বাক্স সরঞ্জামের সমান।
ষোল) শত্রুকে হত্যা করতে হলে নিজ সেনাদের তাদের বিরূদ্ধে রাগিয়ে তুলতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, যুদ্ধজয়ের পুরষ্কার রয়েছে। পুরষ্কারের আশায় তখন তারা প্রাণ দিয়ে লড়বে।
( একাত্তরে পাক সেনাদের পুরষ্কার ছিল লুট আর ধর্ষণের অধিকার, আর মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল স্বাধীনতা। যুদ্ধের ফলাফল দেখেই বোঝা যায় কাদের পুরষ্কার বেশি আকর্ষনীয় ছিল! )
সতের) রথের লড়াইয়ে শত্রুর প্রথম রথ যে জয় করবে তাকে পুরষ্কৃত করুন। শত্রুর রথে নিজের পতাকা লাগিয়ে সেটা তাদের বিরূদ্ধে কাজে লাগান, ধৃত শত্রুসেনাদের সাথে মানবিক আচরণ করুন।
আঠার ) এভাবে শত্রুর শক্তি দিয়ে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করুন।
উনিশ) যুদ্ধে আপনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জয়লাভ, লম্বা চওড়া যুদ্ধ চালানো নয়। যুদ্ধ কোন খেলা নয়, এতে কোন রানারআপ নেই।
বিশ) কাজেই যুদ্ধে জড়ানো জাতির ভাগ্যবিধাতা হচ্ছেন তাদের সেনাবাহিনীর জেনারেলগন। সাধারণ মানুষের শান্তি বা ধ্বংস এই সমরনায়কদের উপরেই নির্ভর করে।
#অনুবাদকের_কথা
এ অধ্যায়ে যুদ্ধের খরচ, দ্রুততা এবং নেতৃত্বের উপর জোর দেয়া হয়েছে। বাস্তব জীবনে কোন শত্রুর সাথে লাগতে গেলে আবেগের বশবর্তী না হয়ে প্রাকটিকাল দিকগুলো খুব ভালভাবে বিচার করুন- এটাই হচ্ছে এ অধ্যায়ের সারমর্ম।
প্রথম পর্বের লিংক
এক) যুদ্ধ করার ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই যুদ্ধের খরচ হিসেব করতে হবে
দুই) সত্যিকারের যুদ্ধে বিজয় যখন দেরিতে আসে, সৈন্যদের অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যায়, বর্মে মরচে ধরে। কোন নগর অবরোধ করে থাকলে আক্রমণকারী সেনাদলের শক্তি ক্ষয় হয়ে আসবে।
তিন) যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে রাষ্ট্রের ধনসম্পদ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
চার) প্রলম্বিত যুদ্ধে জড়ালে অস্ত্র ভোঁতা হয়ে পড়বে, সম্পদ নি:শেষ হয়ে যাবে, শক্তি ক্ষয় হবে , মনোবল পড়ে আসবে- তখন আপনার অন্য শত্রুরা এর সুযোগ নেবে। এমন অবস্থা হলে যত বিজ্ঞ পরামর্শদাতাই পক্ষে থাকুক, ভয়াবহ ফলাফল এড়ানো যাবেনা।
পাঁচ) তাই, যুদ্ধে মাঝে মাঝে বোকার মত তাড়াহুড়ো করার কথা শোনা গেলেও লম্বা সময় ধরে যুদ্ধ চালানো মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ না।
ছয়) লম্বা সময় ধরে চালানো যুদ্ধ কখনোই কোন দেশের জন্যে সুফল বয়ে আনেনি। এমন কোন উদাহরণ ইতিহাসে নেই।
( আমেরিকার ইরাক এবং আফগান যুদ্ধ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ)
সাত) যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যে ভালভাবে জানে, কেবল তার পক্ষেই লাভজনকভাবে যুদ্ধ চালানো সম্ভব।
আট) দক্ষ যোদ্ধা কখনো দ্বিতীয়বার লড়বার আশা করেনা, একবারেই সে যুদ্ধ জয় করে। প্রয়োজনের দ্বিগুনের বেশি সে কখনো তার সরবরাহ ট্রাক বোঝাই করেনা।
নয়) স্বদেশ থেকে সরঞ্জাম আনুন, কিন্তু শত্রুর সরবরাহ ব্যবহার করুন। ওতে আপনার সেনাদলের কখনো অভাব থাকবেনা।
( একাত্তরে টাঙ্গাইলের কাদেরীয়া বাহিনীর মূলমন্ত্রই ছিল “শত্রুর অস্ত্রই আমাদের অস্ত্র” )
দশ) দূর দেশে যুদ্ধ চালাতে গেলে প্রচুর খরচ হবে, ওতে যুদ্ধবাজ দেশের অর্থনীতি ধ্বসে পড়বে।
( এবারও আমেরিকার অবস্থা চিন্তা করুন)
এগারো) যুদ্ধ চললে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়, ওতে সাধারণ মানুষের সঞ্চিত সম্পদ নি:শেষ হয়।
বার) একই সাথে, যুদ্ধের খরচ চালাতে ট্যাক্স বসানো লাগে।
তের) জিনিসপত্রের দাম বাড়া এবং ট্যাক্স- এ দুই মিলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
চোদ্দ) যেহেতু রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার জনগণ, এই জনগণের উপর যুদ্ধের বোঝা চাপিয়ে দেবার আগে কর্তৃপক্ষের কি উচিৎ না যথাসম্ভব সতর্কভাবে বিবেচনা করা?
পনের) শত্রুর কাছ থেকে উদ্ধার করা এক বাক্স সরঞ্জামের মূল্য নিজেদের বিশ বাক্স সরঞ্জামের সমান।
ষোল) শত্রুকে হত্যা করতে হলে নিজ সেনাদের তাদের বিরূদ্ধে রাগিয়ে তুলতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, যুদ্ধজয়ের পুরষ্কার রয়েছে। পুরষ্কারের আশায় তখন তারা প্রাণ দিয়ে লড়বে।
( একাত্তরে পাক সেনাদের পুরষ্কার ছিল লুট আর ধর্ষণের অধিকার, আর মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল স্বাধীনতা। যুদ্ধের ফলাফল দেখেই বোঝা যায় কাদের পুরষ্কার বেশি আকর্ষনীয় ছিল! )
সতের) রথের লড়াইয়ে শত্রুর প্রথম রথ যে জয় করবে তাকে পুরষ্কৃত করুন। শত্রুর রথে নিজের পতাকা লাগিয়ে সেটা তাদের বিরূদ্ধে কাজে লাগান, ধৃত শত্রুসেনাদের সাথে মানবিক আচরণ করুন।
আঠার ) এভাবে শত্রুর শক্তি দিয়ে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করুন।
উনিশ) যুদ্ধে আপনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জয়লাভ, লম্বা চওড়া যুদ্ধ চালানো নয়। যুদ্ধ কোন খেলা নয়, এতে কোন রানারআপ নেই।
বিশ) কাজেই যুদ্ধে জড়ানো জাতির ভাগ্যবিধাতা হচ্ছেন তাদের সেনাবাহিনীর জেনারেলগন। সাধারণ মানুষের শান্তি বা ধ্বংস এই সমরনায়কদের উপরেই নির্ভর করে।
#অনুবাদকের_কথা
এ অধ্যায়ে যুদ্ধের খরচ, দ্রুততা এবং নেতৃত্বের উপর জোর দেয়া হয়েছে। বাস্তব জীবনে কোন শত্রুর সাথে লাগতে গেলে আবেগের বশবর্তী না হয়ে প্রাকটিকাল দিকগুলো খুব ভালভাবে বিচার করুন- এটাই হচ্ছে এ অধ্যায়ের সারমর্ম।
প্রথম পর্বের লিংক
Comment