জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তগুতের আদালতে দাঁড়িয়ে তগুতের আইনকে প্রত্যাখ্যান || শাইখ সালাহুদ্দীন হাফিজাহুল্লাহ || সাহম আল-হিন্দ মিডিয়া
ভূমিকা:
জামা‘আতুল মুজাহিদীন এর প্রতিষ্ঠাতা শূরা সদস্য ও বর্তমান আমীর শাইখ সালাহুদ্দীন হাফিজাহুল্লাহ। যিনি তাঞ্জিমের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বার বার ত্বগুত দ্বারা বন্দি হওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ২০০০ সালের ১৯ অগাস্ট ঢাকার একটি মুয়াসকার ক্যাম্প থেকে তিনি সহ ৫ জন বন্দি হন। অতঃপর ১৯ দিন পর তিনি মুক্তি লাভ করেন। তারপর ২০০৩ সালে ১৪ অগাস্ট জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল থানায় এক বাড়িতে মিটিং চলাকালে ত্বগুতের নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা ঘেরাও হলে তাদের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তিনি সহ আরও ১৮ জন বন্দি হন। পরবর্তীতে ৬ মাস ১০ দিন পর তিনি মুক্তি লাভ করেন। অতঃপর ২০০৬ সালে ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম কর্নেল হাট এলাকাতে ত্বগুতদের সাথে সংঘর্ষে পুনরায় বন্দি হন। বন্দি হওয়ার পর রিমান্ডের নামে মাসের পর মাস ত্বগুতের জেআইসি সেলে বন্দি রেখে তার উপর অকথ্য নির্যাতন চলে। তারপর তার বিরুদ্ধে তৎকালীন ত্বগুত সরকার ৫০ এর অধিক মামলা দায়ের করে। ত্বগুতের আদালতে তাকে ৩ টি মামলাতে ৩ টি ফাঁসির আদেশ দেয় এবং আরও বিভিন্ন মামলাতে ২০৩ বছর সাজা ঘোষণা করে। এবং আরও ২৪টি মামলা কথিত বিচারাধীন থাকে। তার বন্দি জীবনের ৭ বছর ১০ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ২০১৪ সালে ২৩ শে ফেব্রুয়ারী জামা‘আতুল মুজাহিদীন এর ইসাবাহ’র নাসরুল্লাহ (রহঃ) ব্রিগেড তাকে সহ আরও ২ জনকে ময়মনসিংহ কোর্টে হাজিরা দেয়ার পথে ত্রিশাল এলাকাতে ত্বগুতের পুলিশ ভ্যানে এক দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে মুক্ত করেন। তিনি যখন বন্দি ছিলেন তার বিরুদ্ধে ফাঁসি সহ যত রায় হয়েছিল তার কোনটির বিরুদ্ধে কথিত উচ্চ আদালতে আপিল করেননি, বরং ফাঁসির রায় হওয়ার পরও জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ত্বগুতের আদালতে দাঁড়িয়ে তাওহীদের বাণী উচ্চারণ করে ব্রিটিশ আইনকে শত্রুতা ও ঘৃণা সহকারে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং কোন আপিল করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম যে ফাঁসির রায় হয়েছিল সেই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল না করে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন পাঠকদের সামনে তা তুলে ধরা হল। এই লিখা থেকে পাঠক শিক্ষা অর্জন করে আল্লাহর আইনের বাস্তবায়নে প্রয়োজনে নিজের জীবনকে কোরবানি করার পাথেয় পাবেন এটাই মহান রব এর নিকট কামনা করি। আমীন!
জেল আপিল নং– ১/২০০৭ ইং।
বরাবর,
সহকারী রেজিস্ট্রার,
সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ, আপীল অধিক্ষেত্র, ঢাকা।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
বিষয় : মুহাম্মদ সালেহীন সালাহুদ্দীন এর পক্ষ থেকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতি।
সূত্র : দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলা নং–১৮/১৬, জামালপুর থানার মামলা নং–৫০(৯)২০০৪, ধারা ৩০২/১২০/৩৪ দঃ বিঃ।
ঐ ব্যক্তির প্রতি সালাম যে হেদায়েতের অনুসরণ করে। অতঃপর সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন মহান আল্লাহ পাকের প্রতি যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পরিচালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের মহান আদর্শ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর প্রতি। যিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল।
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে আমি একজন মুসলিম। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের যে দন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমার অবস্থান সম্পর্কে বলার পূর্বে আমার কর্মনীতি সম্পর্কে জানাতে চাই। জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ এর মজলিশে শূরার একজন নগণ্য সদস্য হিসেবে আমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর এই দ্বীন তথা তাওহীদকে তার জমিনে প্রতিষ্ঠা করার মধ্যে দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির মধ্যে দিয়ে জান্নাত লাভ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
অর্থঃ তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারণ করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। (সূরা আল–শূরা ৪২ : ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন–
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
অর্থঃ তিনিই তাঁর রাসূলকে সুস্পষ্ট পথনির্দেশ ও সঠিক জীবন বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সব ধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা আস ছফ ৬১ : ৯)
যেহেতু আল্লাহর এই জমিনে তাওহীদ তথা দ্বীন প্রতিষ্ঠা নেই সেহেতু আমরা আল্লাহ প্রদত্ত তিন দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মরত আছি।
এক : দাওয়াত।
দুই : প্রশিক্ষণ।
তিন : ক্বিতাল (জিহাদ/সশস্ত্র যুদ্ধ)।
এক. দাওয়াত– এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন–
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ
অর্থঃ হে নবী আপনি মুমিনদেরকে কিতালের জন্য উৎসাহিত করুন।
(সূরা আনফাল ৮ : ৬৫)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ بِهٖ نَفْسَهٗ مَاتَ عَلٰى شُعْبَةٍ مِنْ نِفَاقٍ
অর্থঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে মুসলিম জীবনে কোন গাজওয়া (দ্বীন প্রতিষ্ঠার জিহাদ) করল না কিংবা গাজওয়া করার কোন দৃঢ় সংকল্পও করল না, এ অবস্থায় মারা গেলে, সে মুনাফিক অবস্থায় মারা গেল। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, ইসে হা: ৪৭৭৯। সুনানু আবু দাঊদ, কিতাবুল জিহাদ, ইফাবা হা: ২৪৯৪)
দুই. প্রশিক্ষণ– এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন–
وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ
অর্থঃ আর প্রস্তুত করো তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পারো নিজের শক্তি সামর্থের মধ্য থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে।
(সূরা আনফাল ৮ : ৬০)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ যুদ্ধের জন্য অস্ত্রের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের জন্য অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করা ফরজ করেছেন।(দেখুন তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, ৫৪২ পৃ.)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন–
بُعِثْتُ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ بِالسَّيْفِ وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي
অর্থঃ আমাকে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত সকল যুগের জন্য তরবারি দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আর আমার রিযিক বল্লমের ছায়ার নিচে (গণিমতের পন্তায়) রেখে দেয়া হয়েছে। (সহিহ বুখারি, কিতাবুল জিহাদ ৫৬/৮৮ ‘তীর নিক্ষেপ প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে অধ্যায়’। মুসনাদে আহমাদ ৫০৯৪।)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন–
اِرْمُوْا بَنِي إِسْمَاعِيْلَ فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا
অর্থঃ হে ঈসমাইলের বংশধর! নিক্ষেপ করা শিখ, কেননা তোমাদের পূর্ব পুরুষেরা ভাল নিক্ষেপকারী ছিলেন।(সহিহ বুখারি ২৮৯৯, ইফাবা হা: ২৬৯৬)
তিন. ক্বিতাল (জিহাদ/সশস্ত্র যুদ্ধ)। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন–
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ
অর্থঃ আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ভ্রান্তি (ফিৎনা) শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। (সূরা আনফাল ৮ : ৩৯)
এই আয়াতে ফিৎনাকে শিরক বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
অর্থঃ অতএব যে ব্যক্তি তার রবের সাথে সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।
(সূরা কাহফ ১৮ : ১১০)
আল্লাহ যেভাবে রমজানের সিয়ামকে ফরজ করেছেন, তিনি বলেন–
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ
অথঃ হে ইমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।
(সূরা বাকারা ২ : ১৮৩)
ঠিক তেমনি আল্লাহ তা‘আলা একই শব্দ দ্বারা ক্বিতাল তথা সশস্ত্র জিহাদকে ফরজ করেছেন। তিনি বলেন–
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ
অর্থঃ তোমাদের উপর ক্বিতাল (সশস্ত্র যুদ্ধ) ফরজ করা হয়েছে।
(সূরা বাকারা ২ : ২১৬)
এমনিভাবে অসংখ্য আয়াত ও সহীহ হাদিস রয়েছে যা এই তিন দফা কর্মসূচির পক্ষে দলিল বহন করে। যা এই সংক্ষিপ্ত আসরে লিখে শেষ করা যাবে না।
বাংলাদেশের সংবিধান ত্বগুতী সংবিধান। ত্বগুত সম্পর্কে বলতে চাই যে, তুগইয়ান থেকে ত্বগুত শব্দ এসেছে। যা সীমা অতিক্রম করে। অর্থাৎ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয় সেই ত্বগুত। আল কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিধি–বিধানের সীমা অতিক্রম করে এমন ব্যক্তি, পরিবার বা রাষ্ট্রের সরকার তাহলে প্রত্যেকে ব্যক্তিগত ভাবে বা সমষ্টিগত ভাবে ত্বগুত হবে। অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে ত্বগুত বা শয়তানের হুকুম পালন করে। এদেশের শাসনগত যে নীতি রয়েছে তা কুরআন ও সহীহ হাদিস বিরোধী মানব রচিত শয়তানের আইনের দ্বারা পরিপূর্ণ একটি বিধি বিধান। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا
অর্থঃ যারা ত্বগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ঈমান (আল্লাহতে বিশ্বাস) স্থাপন করবে সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাঙবার নয়। (সূরা বাকারা ২ : ২৫৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
অর্থঃ আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং ত্বগুতকে অস্বীকার করো। (সূরা নাহল ১৬ : ৩৬)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে ঈমান এনেছি দাবি করলে অবশ্যই প্রথমে ত্বগুতকে অস্বীকার করতে হবে। এবং ইবাদতের সাথে ত্বগুতকে শরীক করা যাবে না।
বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, একজন রাষ্ট্র প্রধান বা আমীরুল মু’মিনীন পাচঁটি কূফর জনিত অপরাধের কারণে তার শাসন ক্ষমতা হারায়। তাকে শাসন ক্ষমতা থেকে তরবারীর মাধ্যমে উৎখাত করা ফরজ হয়ে যায়।
এক. শাসক যদি ব্যক্তিগত ভাবে নামায না পড়েন।
দুই. শাসক যদি ব্যক্তিগত ভাবে রোযা না রাখেন।
তিন. রাষ্ট্রে যদি আল্লাহর দ্বীন কায়েম না করেন।
চার. রাষ্ট্রের মধ্যে যদি নামাজ কায়েম না করেন।
পাচঁ. স্পষ্ট কূফরী যদি পরিলক্ষিত হয়। যেমন অশ্লীলতার অনুমোদন দান করা বা অশ্লীলতায় বাধা দান না করা।
এছাড়াও আরো একটি বড় কারণ আছে যা এই পাচঁটি অপরাধের চেয়েও জঘন্য তা হলো শরীয়তের রদবদল করা। বর্তমানে আমাদের ভূখন্ডে এই জঘন্য কারণটি পুরোপুরি কায়েম রয়েছে। কুরআন আমাদের শরীয়ত। এই শরীয়ত পরিবর্তন করে বিচার ব্যবস্থায় বৃটিশের অনুসৃত আইন গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
অর্থঃ তিনি তার শাসন কর্তৃত্বে কাউকে শরীক করেন না। (সূরা কাহাফ ১৮ : ২৬)
দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ শাখা বিচার বিভাগ এখানেই শিরক করা হচ্ছে। কুফর জনিত পাঁচটি অপরাধে এটি সহ তাগুত সরকার পুরোপুরি জড়িত।
এক. তারা ব্যক্তিগত ভাবে পূর্ণ নামায আদায় করে না।
দুই. তারা ব্যক্তিগত ভাবে রোযা রাখে না।
তিন. রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন কায়েম করে না।
চার. রাষ্ট্রের মধ্যে নামাজ কায়েম করে নাই।
পাঁচ. স্পষ্ট কুফুরী পুরোপুরি কায়েম করেছে। যেমন, অশ্লীলতার অবাধ বিচরণ চলছে। যথাঃ মাইকে গান বাজনা প্রচার, বেপর্দা বেহায়াপনা চলছে অবাধে, অশ্লীলতার অনুমোদন বা লাইসেন্স প্রদান করছে, হারাম সুদকে হালাল করা হয়েছে।
যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতির ব্যবস্থা পরিহার করে সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি করা হয়েছে। মদের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে, অথচ মদকে আল্লাহ তা‘আলা হারাম করেছেন। জুয়ার লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। সুদ–ঘুষকে পরোক্ষ হালাল করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় যিনা ব্যভিচারকে জায়েজ করা হয়েছে। পতিতা বৃত্তির লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। মাজার গুলোতে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে পাহারা দেওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে নিরাপদ শিরক করানো হচ্ছে। এতে করে সরকার কিভাবে তার ক্ষমতায় থাকার অধিকার রাখে।
আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন এই সমস্ত বিষয় আমাদের বলে কি হবে ? আমরা তো চাকুরী করছি মাত্র। সরকার পরিবর্তন হলে আমাদের যে আইনে বিচার করতে বলবে আমরা সেই আইনেই বিচার করব। উত্তর হলো, আপনারা চাকুরীর ছলে বর্তমানে কোন আইন দিয়ে বিচার করছেন? আল্লাহর হুকুমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
অর্থঃ যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই কাফির। (সূরা আল মায়েদা ৫ : ৪৪)।
তিঁনি আরো বলেন,
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ
অর্থঃ আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তদানুযায়ী ফায়সালা করুন। (সূরা মায়েদা ৫ : ৪৯)
আপনারা যে বিচার করেন সে বিচারে কি আল্লাহর আইন অনুসৃত হয়? চাকুরীর বাহানায় কাফের হয়ে জাহান্নামে যেতে চান? বিচারের ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঁচটি হুদুদ রয়েছে যা কোন শাসনকর্তা বা বিচারকই সামান্যতম পরিবর্তন, লঘু বা কঠোর করার অধিকারী নয়। স্থান কাল ভেদেও এতে কোন পার্থক্য হয় না। এবং কোন শাসক বা বিচারক ক্ষমাও করতে পারে না। শরীয়তের হুদুদ মাত্র পাঁচটি। যথাঃ
এক. ডাকাতি
দুই. চুরি
তিন. ব্যভিচার
চার. ব্যভিচারের অপবাদ, এই চারটি শাস্তি কুরআনে বর্ণিত রয়েছে।
পাচঁ. মদ্যপানের হদ। (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন – ৩২৬ প. দ্র.।
আপনারা আল্লাহর হুদুদকে কিভাবে পরিবর্তন করেছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণিত শাস্তির বর্ণনা কি রয়েছে এবং আপনাদের মানব রচিত শাস্তির বর্ণনার পার্থক্য তুলে ধরলে বুঝতে সহজ হবে।
এক. ডাকাতির শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহর বিধান হলো অপরাধীকে বিপরীত দিক থেকে হস্তপদ সমূহ কেটে ফেলতে হবে। পক্ষান্তরে আপনাদের বিধান হলো বিভিন্ন মেয়াদের জেল।
দুই. চুরির শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহর বিধান হলো চোর ও চোরনীকে তাদের উভয় হস্ত কেটে ফেলতে হবে। পক্ষান্তরে আপনাদের বিধান হলো বিভিন্ন মেয়াদের জেল।
তিন. ব্যভিচারের শাস্তির বিধান হলো ব্যভিচারী অবিবাহিত হলে পুরুষ অথবা নারী তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে। যদি বিবাহিত ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণী হয় তবে তাদেরকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করতে হবে। পক্ষান্তরে আপনাদের মানব রচিত বিধানে স্বেচ্ছায় ব্যভিচার করলে কোন শাস্তি প্রদান করা হয় না। এটাকে জায়েজ মনে করা হয়। কুরআনী আইনের সাথে কত বড় ধৃষ্টতা!
যদি কেউ জোরপূর্বক ব্যভিচার করে তবে তাকে শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের জেল দেওয়া হয়। অথবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়া হয়। অথচ মৃত্যুদন্ডের রায় দিলে তাকে প্রস্তর বর্ষণেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। কুরআনী আইনের বিন্দু মাত্র পরিবর্তন করার কোন অধিকার আল্লাহ তা‘আলা কাউকে প্রদান করেননি।
চার. ব্যভিচারের অপবাদ সম্পর্কে আল্লাহর বিধান হলো, যারা সতী–সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর তার স্বপক্ষে চারজন পুরুষ স্বাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করতে হবে। অথচ আপনাদের মানব রচিত ত্বাগুতী আইনে সতী–সাধ্বী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদের কোন শাস্তির বিধান নেই।
পাচঁ. ইসলামী বিধান মতে মদ্যপানকারীকে আশিটি বেত্রাঘাত করেতে হবে। পক্ষান্তরে মদ্যপানের শাস্তি আপনাদের ত্বাগুতী আইনে নেই বরং এটাকে হালাল করা হয়েছে।
এখন বলুন কিভাবে আপনারা মুসলমান থাকতে পারেন? কুরআন বিরোধী মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার করে আল্লাহর সাথে শিরক করেছেন। আপনাদের উচিত ছিল “জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ” এর পক্ষ থেকে ৮/১৭ অর্থাৎ ২০০৫ সালের ১৭ ই অগাস্ট যে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল তাকে গ্রহণ করা এবং এই শিরকী বিচারকার্য পরিত্যাগ করা এবং তাওবা করে ফিরে আসা। এদেশের সহীহ ওলামা মাশায়েখদেরকে ইসলামী বিচারকার্য পরিচালনার আহ্বান করা। পাশাপাশি ইসলামী আইনে বিচারের আইন প্রনয়ণ করতে ত্বগুতী সরকারকে বাধ্য করা।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিচার বিভাগ যদি অচল হয়ে যায় তবে যেকোন ত্বগুত সরকারই তার কাছে নতী স্বীকার করতে বাধ্য হবে। তাই তো আপনারা এই ঘৃণ্য কর্ম থেকে বিরত না থাকার কারণে জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ তার সশস্ত্র জিহাদের তগুতের বিরুদ্ধে একশনমুখী বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ বিশেষ হিসেবে বিচার ব্যবস্থায় আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। আপনারা যদি আমার বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হন তবে আমাকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করুন, ইনশাআল্লাহ উত্তর দেওয়ার তাওফীক আল্লাহ আমাকে দিবেন। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সকল দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব বলে মনে করছি না।
যাই হোক, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হুকুম পালন করার অপরাধে আমাকে যে দন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছুটা পূর্ব থেকে আলোকপাত করতে চাই। আমাদের দেশ এক সময় ছিল ভারতবর্ষ। তখন মুসলমানরা এদেশ শাসন করতো। ১৫০০ সালের শেষ দিকে এই ভূখন্ডে বৃটিশরা সর্বপ্রথম আসে। তখন তারা ব্যবসায়িক ছদ্মাবরণে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নাম করণে এদেশে বাণিজ্য শুরু করে। ধীরে ধীরে তারা ঔপনিবেশিক শাসন কায়েমের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা মুসলমানদেরকে যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করে এদেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে। এবং মুসলমানদেরকে তাদের গোলামে পরিণত করে।
অতঃপর বৃটিশরা তাদের রীতি–নীতি, আইন–কানুন এ দেশের সকল স্তরে পৌঁছাতে আরম্ভ করে এবং সফল হয়। তৎকালীন সময়ে তাদের উৎখাত করার জন্য এদেশের বীর মুজাহিদীনরা তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে যা পৃথিবীর ইতিহাসে সশস্ত্র জিহাদের বিস্ময়কর ইতিহাসের সৃষ্টি করেছে। আমরা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিঃ), সৈয়দ আহমেদ শহীদ (রাহিঃ) এর বালাকোটের জিহাদ, শহীদ তীতুমীরের বাঁশের কেল্লার জিহাদ, হাজী শরীয়তুল্লাহ এর জিহাদ ইত্যাদি অনেক রক্ত পিচ্ছিল পথের ঘটনা জানি। বৃটিশরা যখন ১৯৪৭ সালে এদেশ ছেড়ে চলে গেল তখন তারা তাদের পূর্ণাঙ্গ দেহটা নিয়ে চলে যায়।
কিন্তু তাদের তৈরীকৃত আইন–কানুন, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, বিচার ব্যবস্থা সমস্ত কিছুই রেখে যায়। যাহা বর্তমানে আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রে পুরোপুরি অনুসরণ হচ্ছে। এদেশে শাসন ব্যবস্থায়, বিচার ব্যবস্থায় যারা কর্মরত আছেন তারা তাদের কর্মকে পবিত্র দায়িত্ব হিসেবেই গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে এই ইয়াহুদ নাসারা বৃটিশ আমেরিকানরা যে তাদের নব্য ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে আমাদের ভূখন্ডে সেবার নাম করে অনৈসলামীক এন.জি.ও. গঠন করার মধ্য দিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার ঘটাচ্ছে তার খোঁজ–খবর আমরা ক’জনইবা রাখি।
বাংলাদেশকে একটা খ্রীষ্টান রাজ্যে পরিণত করার জন্য বর্তমানে পাশ্চাত্যের অর্থে পুষ্ট হাজার হাজার অনৈসলামীক এন.জি.ও. বাংলাদেশে কাজ করছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, প্রশিকা, সিডপস, কারিতাস, কেয়ার, অক্সফাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন, সালভেশন আর্মী, মিশন ইত্যাদি। তারা বাংলাদেশের সরলমনা মুসলিমদেরকে ঋণ দেওয়ার নাম করে তাদের উপার্জনে সুদ নামক হারামকে প্রবেশ করিয়ে সরলমনা মহিলাদেরকে বেপর্দা বেহায়াপনার দিকে ধাবিত করে অর্থের লোভ দেখিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে রুপান্তরিত করার কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে।
সচেতন মহলের তাদের ঘৃণ্য চক্রান্তের ইতিবৃত্ত অবশ্যই অজানা থাকার কথা নয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখে মনে হবে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে এবং লক্ষ লক্ষ লোককে কর্মসংস্থান এর পাশাপাশি সাবলম্বী করছে। কিন্তু তারা আমাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডে কত বড় আঘাত হানছে তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? তারা যে হারে খ্রিষ্টান বানাচ্ছে তাতে করে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বতিমুর যা এক সময় মুসলমানদের প্রদেশ ছিলো, খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মান্তরের কাজ করে সেখানে রেবুলেশন এর মাধ্যমে খ্রিষ্টান রাজ্য ঘোষণা করে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অবস্থা সেরূপ হবে না তা বলা মুশকিল। কারণ বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের পরিসংখ্যানে প্রায় ১ লক্ষ খ্রিষ্টান ছিলো। কিন্তু বর্তমানে পরিসংখ্যানে প্রায় এক কোটি খ্রিষ্টান বাংলাদেশে আছে। আশ্চর্যের বিষয় তারা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাদের মধ্যে অবশ্যই লক্ষ লক্ষ যুবক রয়েছে। তাদের উপাসনালয় গীর্জা বা চার্চ গুলো কত সুরক্ষিত। সেখানে লিখা থাকে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। যারা পাশ্চাত্যের অর্থে পরিচালিত তারা যে তাদের যুবকদেরকে গোপনে তাদের চার্চ বা গীর্জায় অস্ত্রের ট্র্রেনিং দিচ্ছে না, বা অস্ত্র ভান্ডার মজুদ করছে না তা আমরা কি করে নিশ্চিত বলতে পারি। অথচ এদেশের হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছোট ছোট বালকদের ট্রাংক ভেঙ্গে এদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা তল্লাশী চালায় কোন অস্ত্র খুজে পাওয়া যায় কিনা? কোন মুজাহিদ আছে কিনা।
আফসোস, কোন দিন তো খ্রিষ্টানদের গীর্জা বা চার্চে কেউ তল্লাশী করল না। তাদের কর্মনীতি তো সরকারি ভাবে জনগণকে কেউ জানালো না। এদেশকে তো তারা রেবুলেশন করে একটি নব্য খ্রিষ্টান রাজ্যে পরিণত করার ঘৃণ্য চক্রান্তের যৌবনকাল চালাচ্ছে তা অনৈসলামীক এন.জি.ও. দের দৌরাত্ব দেখেই অনুমান করা যায়। এন.জি.ও. দের ঘৃণ্য অপকর্মের দীর্ঘ আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে লিখে শেষ করা যাবে না, তাই মূল বিষয়ে আসি। জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ এর সশস্ত্র জিহাদের ভিন্ন মুখী অভিযানের অংশ বিশেষ হিসেবে অনৈসলামীক এন. জি. ও উৎখাত ও ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানদের যারা প্রধান খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতি মুসলমানদের আহবান করে তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
জামালপুরের হাজিপুর বাজারের অদূরে দুয়ারী পাড়ার যে লোকটিকে হত্যা করা হয় তার নাম গনি গোমেজ ওরফে জোসেফ মন্ডল। সে এক সময় মুসলমান ছিল। অতঃপর সে খ্রিষ্টান ধর্মগ্রহণ করে। ধীরে ধীরে খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন জামালপুর শাখার আহবায়ক হয় এবং তার এলাকাসহ জামালপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় মুসলমান থেকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে প্রায় ১৪০০ মুসলমানকে। রিলিফ দেওয়ার নাম করে গরীব মুসলমানদেরকে ধর্ম পরিবর্তনের আহবান করতে থাকে। তার এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য এলাকার ওলামায়ে দ্বীন তাকে অনেক ওয়াজ নসীহত করে যেন এই ইসলাম বিধ্বংসী কর্মকান্ড থেকে সে বিরত থাকে। এবং পুনরায় ঈমান আনয়ন করে। কিন্তু তাওবা করে ঈমান আনা তো দূরের কথা সে আরো ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে এবং তার কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে।
অতঃপর আমরা যখন জানতে পারলাম যে সে এই ভাবে তার ঘৃণ্য কর্মনীতিতে অটল আছে। তখন জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ এর প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানকে তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানালে তার পক্ষ থেকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয় যে, যেহেতু সে ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান অর্থাৎ সত্য ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদে পরিণত হয়েছে। তখন তাকে বেঁচে থাকার অধিকার দেওয়া আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ বিরোধী কাজ হবে। কারণ অন্যায় হত্যা সম্পর্কিত কুরআনের সুরা বনী ইসরাইল এর ৩৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
“সে প্রাণ কে হত্যা করনা, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন, কিন্তু ন্যায় ভাবে” এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে রেওয়ায়েত করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে মুসলমান আল্লাহ এক এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়, তার রক্ত হালাল নয়। কিন্তু তিনটি কারণে তা হালাল হয়ে যায়,
এক. বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সে যদি যিনা করে, তবে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করাই তার শরীয়ত সম্মত শাস্তি।
দুই. সে যদি অন্যায় ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করে, তবে তার শাস্তি এই যে, নিহত ব্যক্তির ওলী তাকে কিসাস হিসেবে হত্যা করতে পারে।
তিন. যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে তার শাস্তি ও হত্যা। ( বুখারী ও মুসলিম) ( তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন–৭৭৬ পৃঃ)। এছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ بَدَّلَ دِيْنَهٗ فَاقْتُلُوْهُ
অর্থঃ যে তার দ্বীনকে পরিবর্তন করবে তাকে হত্যা কর। ( সহিহ *বুখারি ৩০১৭, ইফাবা হা: ২৮০৫)
এছাড়া আরো দলীল উপস্থাপন ও বিবেচনার পর শায়খ আব্দুর রহমান আমাদেরকে গনি গোমেজ বা জোসেফ মন্ডলকে হত্যা করার আদেশ প্রদান করেন। আমি তাকে হত্যা করতে সহযোগীতা করি এবং আমার উপস্থিতিতে আমারই নির্দেশে জবাই করা হয়। কাউকে হত্যা করা বা বিচার করার দায়িত্ব যদিও রাষ্ট্রের সরকারের উপর ন্যস্ত। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার অনৈসলামী এক কাফের–মুরতাদ সরকার। এদেশে কোন আমীরুল মুমিনীন নেই, তাই এদেশকে ইসলামী হুকুমত করার লক্ষ্যে আমরা শায়খ আব্দুর রহমানকে আমীরুল জিহাদ নিযুক্ত করেছি। তাই তার আনুগত্য করা আমাদের জন্য ফরজ। (যদি কুরআন ও সহীহ হাদীসের বাহিরে আদেশ না করেন) এবং আল্লাহর সন্তষ্টি বিধানের লক্ষ্যেই ধর্মান্তরিত মুসলমান থেকে খ্রিষ্টান গনি গোমেজ ওরফে জোসেফ মন্ডলকে শায়খের নির্দেশে হত্যা করা হয়।
আশ্চর্য্যের বিষয় হল যে, বুশ, ব্লেয়ার ইয়াহুদী খ্রিষ্টানরা পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখন্ডে মুসলমানদেরকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে, মুসলিম মা বোনদের ইজ্জত নষ্ট করে দিচ্ছে। মুসলমানদের তার জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করছে। ফিলিস্থিন, বসনিয়া, চেচনীয়া, আফগানিস্থান, ইরাক, কাশ্মির, আরাকান সহ আরো অনেক মুসলিম ভূখন্ডের উদাহরণ রয়েছে। আর আমরা কিনা তাদেরই একজন অনুচরকে হত্যা করলাম তার বিনিময়ে আমাদের মৃত্যুদন্ড উপহার দেওয়া হল।
হায়! আফসোস আপনাদের জন্য। একজন মুসলমান মু’মিনকে মৃত্যুদন্ড দিলেন। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ” যে ব্যক্তি একজন মু‘মিনের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করল সে আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “যে ব্যক্তি একজন মু’মিনকে একটি কথা দ্বারাও হত্যা করার সহযোগীতা করল, অতঃপর সে যখন কিয়ামত দিবসে দন্ডায়মান হবে তার দুই চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে” এই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ।” (ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
إِنَّهُ لَا يَيْئَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফ ১২ : ৮৭)
একটি বারের জন্য ভেবে দেখুন আপনারা কোন অবস্থানে আছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
الَّذِينَ آَمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ
অর্থঃ যারা ঈমানদার তারা কিত্বাল (সশস্ত্র জিহাদ) করে আল্লাহর পথে। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে। (সূরা নিসা ৪ : ৭৬)
নিশ্চয় নিজের পক্ষকে বেছে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আপনাদের ত্বগুতী বিচার ব্যবস্থায় নিম্ন কোর্টের রায়ের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ দান করা হয়েছে। প্রথমত আমি বলব আমিতো আলহামদুলিল্লাহ এই হত্যাকান্ড করে কোন প্রকার অপরাধ করিনি। আমি আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হুকুম পালন করেছি মাত্র। তবে কেন আপিল করব। কেউ যদি কোন অপরাধও করে সেও এই ত্বাগুতী বিচার ব্যবস্থার কাছে আপিল করার অধিকার রাখে না।
যেহেতু সুযোগ রয়েছে আপনাদের কাছে দুটি কথা পৌঁছিয়ে দেওয়ার, তাই ঈমানের তাগিদে ঈমান রক্ষায় বলতে হয় মানব রচিত তগুতী আইনের কাছে কেউ যদি বিচার ফয়সালা প্রার্থনা করে তবে তার ঈমান আনার পর ঈমান বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমি আমার ঈমানকে হারাতে চাই না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آَمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ
অর্থঃ আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার উপরও। তারা ত্বগুতের কাছে বিচার ফায়সালা প্রার্থনা করে অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে যাতে তারা ওকে মান্য না করে। (সূরা নিসা ৪ : ৬০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন–
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ
অর্থঃ অতএব তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায় বিচারক বলে মনে করে।
(সূরা নিসা ৪ : ৬৫)
এবার বলুন একজন মুসলিম হয়ে আমি কিভাবে এই মানব রচিত ত্বগুতী আইনের কাছে বিচার প্রার্থনা করতে পারি? মুসলিম ধর্ম থেকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার অপরাধে গনি গোমেজ ওরফে জোসেফ মন্ডলকে হত্যা করাটা যদি অপরাধই হয়ে থাকে তবে আল্লাহর আইনে বিচারের কাছে আমার আপিল রয়েছে। এদেশের ওলামায়ে দ্বীন যারা সত্য ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন তাদের নিয়ে বিচারের বোর্ড গঠন করুন এবং কুরআন সুন্নাহর আইনের মাধ্যমে বিচার কার্য পরিচালনা করুন।
আপনারা যারা ত্বাগুতী আইন তথা ফেরাউনী আদালতের বিচারক রয়েছেন তাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের উপর অন্যায় ভাবে যে বিচার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তার আপিল আমরা আল্লাহর কোর্টে সমর্পণ করলাম। আমাদের জীবদ্দশায় আল্লাহ যদি সত্যকে ফুটিয়ে না তোলেন ইনশাআল্লাহ কাল কিয়ামতের কোর্টে আল্লাহ প্রমাণ করবেন কারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সর্বশেষ আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান করছি ফিরে আসুন। আমরা যদি নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করি তবে একই কিবলার অনুসারী হয়ে আমাদের পথ কেন ভিন্ন হল? কোথায় কোন ষড়যন্ত্রের স্বীকার হলাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
يَا أَيُّهَا الْإِنْسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ
অর্থঃ হে মানুষ কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল ? (সূরা ইনফিতার ৮২ : ৬)
আফসোস করে বলতে হয়, আপনারা তগুত দ্বারা এত বেশি মটিভেট হয়েছেন যে রিজিকদাতা আল্লাহ তা‘আলা একজন আছেন তাঁকে ভূলে গিয়ে আমেরিকা বৃটেনকেই রিজিকের মালিক মনে করছেন। আমরা কি পারি না আমাদের মুসলমানদের রীতিনীতি গ্রহণ করতে। কেন আমরা ইয়াহুদ নাসারাদের কাছ থেকে ধার করে রীতিনীতি গ্রহণ করব। যার মধ্যে শুধু মিথ্যা ও জুলুমের ছড়াছড়ি।
আপনাদের যদি বুঝের বেলায় এখনও ভ্রান্তি থাকে তবে আপনারা সহ এদেশের ওলামায়ে দ্বীন যারা রয়েছেন তাদের সাথে জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ এর আমীর শায়খ আব্দুর রহমান সহ আমাদেরকে (শুরা সদস্য) এক টেবিলে উপস্থাপন করুন এবং মিডিয়াকে নিয়ে আসুন। অতপর আমরা আমাদের সশস্ত্র জিহাদের দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করি। ওলামাগণ আমাদের দলীলকে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করুক। সারা দেশ সহ বিশ্বের সকল মুসলমান অবলোকন করুক কারা সত্য পথের অনুসারী। সকলের ভূল ভেঙ্গে যাক, কারা সঠিক ভাবে সশস্ত্র জিহাদের কাজ করছে।
আল্লাহ আমাদের হেদায়েতের একটি পথ বের করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। এবং আল্লাহর আইনের সুমহান বিচারের নিয়ামত ভূষিত হোক এদেশ সহ সারা বিশ্বের সকল মুসলিম অমুসলিম জাতির নিকট। পরিশেষে আমি আমার অবস্থান সম্পর্কে আমাদের মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর উক্তিকেই যথার্থ মনে করছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآَءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
অর্থঃ তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তার সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চির শত্রুতা থাকবে। (সূরা মুমতাহিনা ৬০ : ৪)।
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
প্রেরণ করা হইল।
স্বা/অস্পষ্ট।
১৬–১১–০৬।
সিনিয়র জেল সুপার।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার–১
গাজীপুর।
আহবানে
স্বা/- মুহাম্মদ সালেহীন
কয়েদী নং–৩৮৫২/এ
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার–১
গাজীপুর।
সত্যায়িত
স্বা/-অস্পষ্ট
১৬–১১–০৬
ডেপুটি জেলার
কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুর
গাজীপুর।
PDF DOWNLOAD (13.7 MB)
WORD DOWNLOAD (52.8 MB)
WORDPRESS
YOUTUBE
WORD DOWNLOAD (52.8 MB)
অনলাইনে নিচের লিংকটি ছড়িয়ে দিন।
https://justpaste.it/message-
https://justpaste.it/message-
WORDPRESS
YOUTUBE
Comment