বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আলহামদুলিল্লাহ্* ওয়াসসলাতু ওয়াসসালামুআ’লা রসুলিল্লাহ
সম্প্রতি সম্মানিত বাংলার উমর ভাইয়ের “ প্রত্যেক যুগেই সালাহ্উদ্দিন আইয়্যুবীর জন্ম হয় ! কিন্তু...” নামক গুরুত্বপূর্ণ ও খুব উপকারী একটি পোস্টের প্রেক্ষিতে আমার হৃদয় নিংড়ানো অগোছালো কিছু কথা ----
লিখাটি একটু বড় মনে হলেও সকল ভাইদের একটু ধৈর্য সহকারে পুরোটা পড়ার বিনীত অনুরোধ রইলো
ভাইয়ের পোস্টটিতে অবশ্যই সত্য বাস্তবতা ফুটে উঠেছে । পুরোটা পোস্ট-ই খুব চমৎকার হয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র একটি বাক্য আমার অন্তরকে তৃপ্তি বা প্রশান্তি দিতে পারেনি । আর তা হল ঃ
এক ঐতিহাসিক বলেছিলেনঃ “ প্রত্যেক যুগেই সালাহউদ্দিন আইয়্যুবীর জন্ম হয় কিন্তু আইয়্যুবীর সেই দূর্ধর্ষ সৈন্য বাহিনীকে আর দেখা যায়না ” ।
উক্ত কথাটি ঠিক থাকতে পারে ঐ ঐতিহাসিকের সময়কাল অনুযায়ী । হতে পারে তিনি যখন এই কথাটি বলেছিলেন তখন হয়তো পরিস্থিতি তেমন ছিল কিন্তু আমার দৃষ্টিতে বর্তমানে এই কথাটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ------
ধরণীর বুকে যদি বর্তমানে না থাকে এখনকার সালাহউদ্দিন ও তাঁর সেই দূর্ধর্ষ সৈন্য বাহিনী বিরাজমান , তবে কারা সফল করল বরকতময় আর দুঃসাহসিক ৯/১১ এর সফল অভিযান !! ( আলহামদুলিল্লাহ )
যদি ধরাতে না থেকে থাকে সেই খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং তাঁর প্রকৃত একনিষ্ঠ অনুসারীগণ দণ্ডায়মান , তাহলে কারা আত্মমর্যাদাশীল আফগান ভূমিতে রাশিয়া ও বর্তমান পরাশক্তি আমেরিকাকে করলো পরাজয়ের গ্লানিতে অপমান !! ( আলহামদুলিল্লাহ )
বর্তমানে যদি আসলেই দেখা না যায় মায়াজ ও মুয়াজ , তারিক বিন জিয়াদ , বিন কাসিম ও তাঁদের প্রকৃত অনুসারীদের এই বসুধায় করতে অবস্থান , তাহলে বাংলার জমিনে কারা সম্পন্ন করলো নিরাপত্তার চাদরে আবৃত থাকা শাতেমে রসূলদের উপর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দুঃসাহসিক সফল অভিযান !! (আলহামদুলিল্লাহ )
বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৫০ লাখেরও উপরে বর্গকিলোমিটার ভূমি শরিয়াহ অনুযায়ী শাসন করে যাচ্ছে কারা ? যা কিনা বাংলাদেশের প্রায় ৩৪ গুণ !! (আলহামদুলিল্লাহ )
তাই আমি বলি বরং প্রতি যুগেই সালাহউদ্দিন আইয়ুবিসহ তাঁর প্রকৃত অনুসারী সৈন্যরাও জন্মগ্রহন করেন এবং আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানেও আছে , কিন্তু আমরা আছি কোথায় ??
আমরা কি পেরেছি নিজেকে সেই সোনারতরী-তে আরোহণ করাতে যদিও নিজেকে সেই তরীর-ই যাত্রী বলে দাবি করি !!
এক ও অদ্বিতীয় আমার মহান রব তো সালাহউদ্দিন আইয়ুবি ও তাঁর একনিষ্ঠ সৈন্য বাহিনীকে গায়েবীভাবে আসমান থেকে প্রেরণ করেনি , তাই না !! আল্লাহ তো তাদের কে সালাহউদ্দিন , উসামা করেই দুনিয়াতে পাঠায়নি বরং দুনিয়াতে তাঁদের স্বীয় কর্মের কারনে আল্লাহ তাদেরকে সালাহউদ্দিন আর উসামা করেছেন । আল্লাহর সৃষ্টির সাধারণ প্রক্রিয়া অনুসারেই তাঁরা এ ধরায় আগমন করেছেন । আমরাও তো সেই একইভাবে এসেছি । অথচ তাঁরা মর্যাদার এভারেস্টে আরহন করেছেন আর আমাদের জায়গা এভারেস্টের পাদদেশেও হচ্ছে না কেন ??
তাঁদের সাথে আমাদের এতো বেবধানের মুল কারণ হল আল্লাহর পথে কুরবানি । তাঁদের সাথে আমাদের মৌলিক পার্থক্য হল , তাঁরা দ্বীন কায়েমের এ পথকেই জীবনের মূল বা প্রধান মিশন হিসেবে নিয়েছেন এবং তা বাস্তবে রূপ দিয়েছেন । আর আমাদের অবস্থান এর বিপরীত , যদিও মুখে মুখে নিজেকে একনিষ্ঠ আর মর্দে মুজাহিদ বলে দাবি করি না কেন ।
দ্বীন কায়েমের এ পথে যাবতীয় সাংগঠনিক কাজে আমাদের সাময়িক তৎপরতা ,নামমাত্র ত্যাগ , সামর্থ্যের অল্প-ই কুরবানি , নিজের অনুকূলে হলে সময় ও শ্রম প্রদান আর প্রতিকূলে হলে নানা অজুহাতে তা প্রত্যাখ্যান প্রভৃতি কর্মই আমার অবস্থান ভোরের শুভ্র আলোর ন্যায় স্পষ্ট করে দেয় ।
সম্মানিত ভাই আমার
সালাহউদ্দিন ও তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারীদের সাথে মিলিত হয়ে পরকালের সেই মর্যাদার এভারেস্টে আরোহণ করতে হলে কুরবানির কোন বিকল্প নেই , অবশ্যই নেই , আল্লাহর কসম করে বলি নেই । যা হবে আল্লাহর জন্য কুরবানি , আল্লাহর পথে কুরবানি । যে কুরবানি হবে স্বীয় জান এবং মালের , সময় এবং শ্রমের সর্বোচ্চ কুরবানি । হোক তা আমার অনুকূলে বা প্রতিকূলে , হোক তা আমার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় । যেমন করেছিলেন আমাদের পূর্বসূরিগণ । ( আল্লাহ তাঁদের উপর রহম করুন )
হে জিহাদপ্রিয় ভাই
আমরা তো নিজেদেরকে একনিষ্ঠ মুজাহিদ বলেই দাবি করে থাকি , এবং আল- কায়েদার একজন সক্রিয় সৈন্য বলে দাবি করি , তাহলে এখন দেখা যাক দ্বীন কায়েমের জন্য আমাদের কুরবানির কিছু নমুনা ঃ
......................!
আসলে সত্তিকার অর্থেই যারা একনিষ্ঠ মুজাহিদ তাঁরা তো মাসুলের ডাকে সারা প্রদানের জন্য বা মাসুলের আদেশ পালনার্থে দুনিয়ার সব কাজ কে পিছনে ছুঁড়ে মারে বা স্থগিত রাখে। মাসুলের একটা সাক্ষাতের জন্য মুখিয়ে থাকে । অথচ আমরা কি করি ?? একটা সাক্ষাতের জন্য কয়েকটা তারিখ পার হয়ে যায় বা পরিবর্তন করতে হয় । দুনিয়ার এই ঝামেলা , সেই ঝামেলার অজুহাত দেখিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত জিহাদি কাজের প্রোগ্রাম কেনসেল হয়ে যায় । দুনিয়ার চাকরি, বেবসা বাণিজ্য , পরিবার , স্ত্রির ভরণ- পোষণ , ছেলে – মেয়ের পড়াশুনা সব-ই তো ঠিকঠাক দিব্যি চলছে , তাহলে দীনি কাজ কেন থেমে থাকে ?? কিতাল ফি সাবিলিল্লাহার কাজ কেন পিছিয়ে পরে ?? বরং সাংগঠনিক কাজের চাপে দুনিয়া পিছিয়ে পরার কথা ছিল কিন্তু হচ্ছে তার বিপরীত । সারদিন অফিস করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেন , সেই সময়ে একটু চিন্তা করেন কি ? যে আমি দুনিয়া কামাই করে যেটুকু ক্লান্ত হচ্ছি , আখিরাত কামাই করতেও কি সেটুকু বা তার চাইতে অধিক ঘাম ঝরাচ্ছি কিনা ??
প্রিয় ভাই , একটু চিন্তা করে বলুন যে , আল্লাহ প্রদত্ত দৈনিক ২৪ ঘণ্টার মদ্ধে কয় ঘণ্টা আমি দুনিয়ার পিছনে বেয় করছি আর কয় ঘণ্টা আমি দ্বীনী কাজে বেয় করছি ? দৈনিক যেমন আমার বিভিন্ন কাজের রুটিন থাকে , যে আজ অফিস এ যাব, এই কাজ করব , অফিস থেকে বাসায় ফিরবো , এটা করতে হবে , সেটা করতে হবে , আরও কত কি !! তো সেই রুটিনের মধ্যে কি দৈনিক অন্তত একটি দীনী প্রোগ্রাম জায়গা পায় ?? যদি দৈনিক নাও পায় তাহলে সপ্তাহে কয়েকদিন কি পায় ?? তাও যদি না হয় , তাহলে আগে থেকেই এমন উত্তর প্রস্তুত করে রাখুন যা আপনার অপারগতার দরুন মৃত্যুর পর আপনার মহাক্ষমতাধর ও পরাক্রমশালী রবের নিকট পেশ করতে পারবেন ।।
আসলে এই তালিকাটা চাইলে আরও দীর্ঘ করা যেত কিন্তু আর্টিকেলটা বেশি বড় হয়ে যাওয়ার চিন্তা করেই এখানেই ইতি টানতে ইচ্ছে করছে । আর প্রকৃতই একনিষ্ঠ বা অগ্রগামীদের জন্য ইশারা-ইঙ্গিত বা অল্প-ই যথেষ্ট ।
হে হৃদয় প্রশান্তকারী প্রিয় ভাই আমার
একটু অন্তর খুলে চিন্তা করুন , ময়দানে মুজাহিদিন স্বীয় দেহের তাজা আর উত্তপ্ত রক্ত ঢেলে দিচ্ছে দ্বীনের তরে , আর আমরা কি এখানে নিজেদের শরীরের দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম-ও ঝরাতে পারবোনা আল্লাহর রাহে সাংগঠনিক কাজে বা দাওয়াতি মিশনে !! ঘাম ঝরাতে পারলেই তো আল্লাহ রক্ত ঢালার-ও সুযোগ করে দিবেন ।
যেসকল সম্মানিত ভাই দাওয়াতি কাজ করছেন , তাদের প্রতি এই অধমের উদাত্ত আহ্বান হল ঃ
• আপনারা আপনাদের ভাইদের সাধ্যমত দ্বীনের জন্য কুরবানির শিক্ষা দিন ।
• তাওহিদ বুঝানোর পাশাপাশি তাওহিদের জন্য কি পরিমাণ কুরবানি আবশ্যক তার শিক্ষা দিন
• সূরা বুরুজ , আসহাবে কাহাফ , সাইয়েদা ইব্রাহিম (আ) এবং সর্বোপরি আমাদের হৃদয় প্রশান্তকারী আর চক্ষু শীতলকারী রাসুলে আরাবি (স) ও তাঁর একনিষ্ঠ সাহাবীদের কুরবানি এবং পরীক্ষার প্রকৃত শিক্ষা দিন
• গণতন্ত্রের ভয়াবহতা , জিহাদ ও ইদাদের ফরজিয়াত এর শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি দ্বীন কায়েমের এ পথে ইখলাস , ইতায়াত , কুরবানি ও সবরের দিক্ষা দিন ।
• মনে রাখবেন একজন ভাইয়ের সামর্থ্য বা যোগ্যতাকে আপনি তখনই দ্বীনের কাজে লাগাতে পারবেন যখন তার অন্তরে আল্লাহর রাহে দ্বীন কায়েমের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ কুরবানির মন- মানসিকতা তৈরি হবে ।
আর বড় বাস্তবতা হল , তোতাপাখির ন্যায় চঞ্চূ নাড়িয়ে নাড়িয়ে বড় বড় বুলি আওড়ানো খুব-ই সহজ কিন্তু আওড়ানো সেই বুলিকে কর্মে রূপ দেওয়াই কঠিন । যেই কাজটি-ই সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছেন সালাহউদ্দিন ও তাঁর একনিষ্ঠ সৈন্যবাহিনী । যার কারনেই তাঁরা জায়গা পেয়েছেন মর্যাদার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে । যদি আমরা-ও পারি আমাদের কথায় এবং কাজে এক থাকতে তাহলে আমাদেরকেও দয়াময় রব জায়গা দিবেন সেই একই পর্বতে ।
আল্লাহ আমাদেরকেও কবুল করে নিন তাঁর একনিষ্ঠ বান্দাদের মধ্যে । এবং আমাদের কথা এবং কাজকে এক করে দিন এবং আমাদের অন্তরকে সদা-সর্বদা তাঁর পথেই নিমগ্ন রাখুন ।
হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। ( আলে ইমরান -৮ )
হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে করো ( বাকারা – ২৮৬ )
আর আমার সর্ব কথার নির্যাস হল ---
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।যিনি বিচার দিনের মালিক।আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ( ফাতিহা – ১-৪)
আপনাদের আন্তরিক দুয়ায় এই অচেনা ভাইটিকে ভুলে যাবেন না প্লিজ । আর কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষমা করে দিয়েন ।
ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ্* ওয়াসসলাতু ওয়াসসালামুআ’লা রসুলিল্লাহ
সম্প্রতি সম্মানিত বাংলার উমর ভাইয়ের “ প্রত্যেক যুগেই সালাহ্উদ্দিন আইয়্যুবীর জন্ম হয় ! কিন্তু...” নামক গুরুত্বপূর্ণ ও খুব উপকারী একটি পোস্টের প্রেক্ষিতে আমার হৃদয় নিংড়ানো অগোছালো কিছু কথা ----
লিখাটি একটু বড় মনে হলেও সকল ভাইদের একটু ধৈর্য সহকারে পুরোটা পড়ার বিনীত অনুরোধ রইলো
ভাইয়ের পোস্টটিতে অবশ্যই সত্য বাস্তবতা ফুটে উঠেছে । পুরোটা পোস্ট-ই খুব চমৎকার হয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র একটি বাক্য আমার অন্তরকে তৃপ্তি বা প্রশান্তি দিতে পারেনি । আর তা হল ঃ
এক ঐতিহাসিক বলেছিলেনঃ “ প্রত্যেক যুগেই সালাহউদ্দিন আইয়্যুবীর জন্ম হয় কিন্তু আইয়্যুবীর সেই দূর্ধর্ষ সৈন্য বাহিনীকে আর দেখা যায়না ” ।
উক্ত কথাটি ঠিক থাকতে পারে ঐ ঐতিহাসিকের সময়কাল অনুযায়ী । হতে পারে তিনি যখন এই কথাটি বলেছিলেন তখন হয়তো পরিস্থিতি তেমন ছিল কিন্তু আমার দৃষ্টিতে বর্তমানে এই কথাটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ------
ধরণীর বুকে যদি বর্তমানে না থাকে এখনকার সালাহউদ্দিন ও তাঁর সেই দূর্ধর্ষ সৈন্য বাহিনী বিরাজমান , তবে কারা সফল করল বরকতময় আর দুঃসাহসিক ৯/১১ এর সফল অভিযান !! ( আলহামদুলিল্লাহ )
যদি ধরাতে না থেকে থাকে সেই খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং তাঁর প্রকৃত একনিষ্ঠ অনুসারীগণ দণ্ডায়মান , তাহলে কারা আত্মমর্যাদাশীল আফগান ভূমিতে রাশিয়া ও বর্তমান পরাশক্তি আমেরিকাকে করলো পরাজয়ের গ্লানিতে অপমান !! ( আলহামদুলিল্লাহ )
বর্তমানে যদি আসলেই দেখা না যায় মায়াজ ও মুয়াজ , তারিক বিন জিয়াদ , বিন কাসিম ও তাঁদের প্রকৃত অনুসারীদের এই বসুধায় করতে অবস্থান , তাহলে বাংলার জমিনে কারা সম্পন্ন করলো নিরাপত্তার চাদরে আবৃত থাকা শাতেমে রসূলদের উপর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দুঃসাহসিক সফল অভিযান !! (আলহামদুলিল্লাহ )
বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৫০ লাখেরও উপরে বর্গকিলোমিটার ভূমি শরিয়াহ অনুযায়ী শাসন করে যাচ্ছে কারা ? যা কিনা বাংলাদেশের প্রায় ৩৪ গুণ !! (আলহামদুলিল্লাহ )
তাই আমি বলি বরং প্রতি যুগেই সালাহউদ্দিন আইয়ুবিসহ তাঁর প্রকৃত অনুসারী সৈন্যরাও জন্মগ্রহন করেন এবং আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানেও আছে , কিন্তু আমরা আছি কোথায় ??
আমরা কি পেরেছি নিজেকে সেই সোনারতরী-তে আরোহণ করাতে যদিও নিজেকে সেই তরীর-ই যাত্রী বলে দাবি করি !!
এক ও অদ্বিতীয় আমার মহান রব তো সালাহউদ্দিন আইয়ুবি ও তাঁর একনিষ্ঠ সৈন্য বাহিনীকে গায়েবীভাবে আসমান থেকে প্রেরণ করেনি , তাই না !! আল্লাহ তো তাদের কে সালাহউদ্দিন , উসামা করেই দুনিয়াতে পাঠায়নি বরং দুনিয়াতে তাঁদের স্বীয় কর্মের কারনে আল্লাহ তাদেরকে সালাহউদ্দিন আর উসামা করেছেন । আল্লাহর সৃষ্টির সাধারণ প্রক্রিয়া অনুসারেই তাঁরা এ ধরায় আগমন করেছেন । আমরাও তো সেই একইভাবে এসেছি । অথচ তাঁরা মর্যাদার এভারেস্টে আরহন করেছেন আর আমাদের জায়গা এভারেস্টের পাদদেশেও হচ্ছে না কেন ??
তাঁদের সাথে আমাদের এতো বেবধানের মুল কারণ হল আল্লাহর পথে কুরবানি । তাঁদের সাথে আমাদের মৌলিক পার্থক্য হল , তাঁরা দ্বীন কায়েমের এ পথকেই জীবনের মূল বা প্রধান মিশন হিসেবে নিয়েছেন এবং তা বাস্তবে রূপ দিয়েছেন । আর আমাদের অবস্থান এর বিপরীত , যদিও মুখে মুখে নিজেকে একনিষ্ঠ আর মর্দে মুজাহিদ বলে দাবি করি না কেন ।
দ্বীন কায়েমের এ পথে যাবতীয় সাংগঠনিক কাজে আমাদের সাময়িক তৎপরতা ,নামমাত্র ত্যাগ , সামর্থ্যের অল্প-ই কুরবানি , নিজের অনুকূলে হলে সময় ও শ্রম প্রদান আর প্রতিকূলে হলে নানা অজুহাতে তা প্রত্যাখ্যান প্রভৃতি কর্মই আমার অবস্থান ভোরের শুভ্র আলোর ন্যায় স্পষ্ট করে দেয় ।
সম্মানিত ভাই আমার
সালাহউদ্দিন ও তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারীদের সাথে মিলিত হয়ে পরকালের সেই মর্যাদার এভারেস্টে আরোহণ করতে হলে কুরবানির কোন বিকল্প নেই , অবশ্যই নেই , আল্লাহর কসম করে বলি নেই । যা হবে আল্লাহর জন্য কুরবানি , আল্লাহর পথে কুরবানি । যে কুরবানি হবে স্বীয় জান এবং মালের , সময় এবং শ্রমের সর্বোচ্চ কুরবানি । হোক তা আমার অনুকূলে বা প্রতিকূলে , হোক তা আমার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় । যেমন করেছিলেন আমাদের পূর্বসূরিগণ । ( আল্লাহ তাঁদের উপর রহম করুন )
হে জিহাদপ্রিয় ভাই
আমরা তো নিজেদেরকে একনিষ্ঠ মুজাহিদ বলেই দাবি করে থাকি , এবং আল- কায়েদার একজন সক্রিয় সৈন্য বলে দাবি করি , তাহলে এখন দেখা যাক দ্বীন কায়েমের জন্য আমাদের কুরবানির কিছু নমুনা ঃ
......................!
আসলে সত্তিকার অর্থেই যারা একনিষ্ঠ মুজাহিদ তাঁরা তো মাসুলের ডাকে সারা প্রদানের জন্য বা মাসুলের আদেশ পালনার্থে দুনিয়ার সব কাজ কে পিছনে ছুঁড়ে মারে বা স্থগিত রাখে। মাসুলের একটা সাক্ষাতের জন্য মুখিয়ে থাকে । অথচ আমরা কি করি ?? একটা সাক্ষাতের জন্য কয়েকটা তারিখ পার হয়ে যায় বা পরিবর্তন করতে হয় । দুনিয়ার এই ঝামেলা , সেই ঝামেলার অজুহাত দেখিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত জিহাদি কাজের প্রোগ্রাম কেনসেল হয়ে যায় । দুনিয়ার চাকরি, বেবসা বাণিজ্য , পরিবার , স্ত্রির ভরণ- পোষণ , ছেলে – মেয়ের পড়াশুনা সব-ই তো ঠিকঠাক দিব্যি চলছে , তাহলে দীনি কাজ কেন থেমে থাকে ?? কিতাল ফি সাবিলিল্লাহার কাজ কেন পিছিয়ে পরে ?? বরং সাংগঠনিক কাজের চাপে দুনিয়া পিছিয়ে পরার কথা ছিল কিন্তু হচ্ছে তার বিপরীত । সারদিন অফিস করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেন , সেই সময়ে একটু চিন্তা করেন কি ? যে আমি দুনিয়া কামাই করে যেটুকু ক্লান্ত হচ্ছি , আখিরাত কামাই করতেও কি সেটুকু বা তার চাইতে অধিক ঘাম ঝরাচ্ছি কিনা ??
প্রিয় ভাই , একটু চিন্তা করে বলুন যে , আল্লাহ প্রদত্ত দৈনিক ২৪ ঘণ্টার মদ্ধে কয় ঘণ্টা আমি দুনিয়ার পিছনে বেয় করছি আর কয় ঘণ্টা আমি দ্বীনী কাজে বেয় করছি ? দৈনিক যেমন আমার বিভিন্ন কাজের রুটিন থাকে , যে আজ অফিস এ যাব, এই কাজ করব , অফিস থেকে বাসায় ফিরবো , এটা করতে হবে , সেটা করতে হবে , আরও কত কি !! তো সেই রুটিনের মধ্যে কি দৈনিক অন্তত একটি দীনী প্রোগ্রাম জায়গা পায় ?? যদি দৈনিক নাও পায় তাহলে সপ্তাহে কয়েকদিন কি পায় ?? তাও যদি না হয় , তাহলে আগে থেকেই এমন উত্তর প্রস্তুত করে রাখুন যা আপনার অপারগতার দরুন মৃত্যুর পর আপনার মহাক্ষমতাধর ও পরাক্রমশালী রবের নিকট পেশ করতে পারবেন ।।
আসলে এই তালিকাটা চাইলে আরও দীর্ঘ করা যেত কিন্তু আর্টিকেলটা বেশি বড় হয়ে যাওয়ার চিন্তা করেই এখানেই ইতি টানতে ইচ্ছে করছে । আর প্রকৃতই একনিষ্ঠ বা অগ্রগামীদের জন্য ইশারা-ইঙ্গিত বা অল্প-ই যথেষ্ট ।
হে হৃদয় প্রশান্তকারী প্রিয় ভাই আমার
একটু অন্তর খুলে চিন্তা করুন , ময়দানে মুজাহিদিন স্বীয় দেহের তাজা আর উত্তপ্ত রক্ত ঢেলে দিচ্ছে দ্বীনের তরে , আর আমরা কি এখানে নিজেদের শরীরের দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম-ও ঝরাতে পারবোনা আল্লাহর রাহে সাংগঠনিক কাজে বা দাওয়াতি মিশনে !! ঘাম ঝরাতে পারলেই তো আল্লাহ রক্ত ঢালার-ও সুযোগ করে দিবেন ।
যেসকল সম্মানিত ভাই দাওয়াতি কাজ করছেন , তাদের প্রতি এই অধমের উদাত্ত আহ্বান হল ঃ
• আপনারা আপনাদের ভাইদের সাধ্যমত দ্বীনের জন্য কুরবানির শিক্ষা দিন ।
• তাওহিদ বুঝানোর পাশাপাশি তাওহিদের জন্য কি পরিমাণ কুরবানি আবশ্যক তার শিক্ষা দিন
• সূরা বুরুজ , আসহাবে কাহাফ , সাইয়েদা ইব্রাহিম (আ) এবং সর্বোপরি আমাদের হৃদয় প্রশান্তকারী আর চক্ষু শীতলকারী রাসুলে আরাবি (স) ও তাঁর একনিষ্ঠ সাহাবীদের কুরবানি এবং পরীক্ষার প্রকৃত শিক্ষা দিন
• গণতন্ত্রের ভয়াবহতা , জিহাদ ও ইদাদের ফরজিয়াত এর শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি দ্বীন কায়েমের এ পথে ইখলাস , ইতায়াত , কুরবানি ও সবরের দিক্ষা দিন ।
• মনে রাখবেন একজন ভাইয়ের সামর্থ্য বা যোগ্যতাকে আপনি তখনই দ্বীনের কাজে লাগাতে পারবেন যখন তার অন্তরে আল্লাহর রাহে দ্বীন কায়েমের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ কুরবানির মন- মানসিকতা তৈরি হবে ।
আর বড় বাস্তবতা হল , তোতাপাখির ন্যায় চঞ্চূ নাড়িয়ে নাড়িয়ে বড় বড় বুলি আওড়ানো খুব-ই সহজ কিন্তু আওড়ানো সেই বুলিকে কর্মে রূপ দেওয়াই কঠিন । যেই কাজটি-ই সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছেন সালাহউদ্দিন ও তাঁর একনিষ্ঠ সৈন্যবাহিনী । যার কারনেই তাঁরা জায়গা পেয়েছেন মর্যাদার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে । যদি আমরা-ও পারি আমাদের কথায় এবং কাজে এক থাকতে তাহলে আমাদেরকেও দয়াময় রব জায়গা দিবেন সেই একই পর্বতে ।
আল্লাহ আমাদেরকেও কবুল করে নিন তাঁর একনিষ্ঠ বান্দাদের মধ্যে । এবং আমাদের কথা এবং কাজকে এক করে দিন এবং আমাদের অন্তরকে সদা-সর্বদা তাঁর পথেই নিমগ্ন রাখুন ।
হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। ( আলে ইমরান -৮ )
হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে করো ( বাকারা – ২৮৬ )
আর আমার সর্ব কথার নির্যাস হল ---
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।যিনি বিচার দিনের মালিক।আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ( ফাতিহা – ১-৪)
আপনাদের আন্তরিক দুয়ায় এই অচেনা ভাইটিকে ভুলে যাবেন না প্লিজ । আর কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষমা করে দিয়েন ।
ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
Comment