বিঃ দ্রঃ: দয়া করে জেনে রাখুন যে "আল্লাহর জন্য হিজরত" শব্দগুলো হাল্কাভাবে নেওয়ার কোন বিষয় নয়। আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি হিজরত কি তা নিয়ে অনুসন্ধান করুন, বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, এমন ব্যক্তির সাথে কথা বলুন এবং এর শর্ত ও বিধিবিধান সম্পর্কে জানুন । এই পবিত্র ধর্মের বিশ্বাসযোগ্য এবং খ্যতনামা স্কলারগণ যেভাবে ব্যখ্যা দিয়েছেন সেই অনুসারে আপনার প্রত্যেকটি কাজ সুন্নাহ মোতাবেক করুন এবং আল্লাহকে ভয় করুন ।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু
"আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে ।"{ ৬:১৬২ }
প্রায় তের বছর আগে যখন থেকে আমি ইসলাম গ্রহন করলাম তখন থেকে হাজার হাজার মুসলিম এর মত এটি আমার মূলমন্ত্র ছিল । ইসলাম গ্রহনের অধিকাংশ সময় পাশ্চাত্যে বাস করার ফলে, এবং মুসলিম উম্মাহর ভয়ংকর পরিস্থিতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর আমার আর শত্রুদের মাঝে বসবাস সম্ভব ছিল না সুতরাং আমি আমার সন্তানদের নিয়ে শাম এর দিকে হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সেই সময় আমার ছিল তিনটি সন্তান এবং আমি ছিলাম একজন শহীদ ( আল্লাহ্ তাকে কবুল করুন) এর স্ত্রী, তিনি পাশ্চাত্যে থাকতেন এবং তাকে কারারুদ্ধ করা হয় সন্ত্রাসবাদ-রোধক নামক আইন দ্বারা। আলহামদুলিল্লাহ্ ,আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর করুণায় তাকে জিহাদের ভুমিতে নিয়ে যাওয়ার একটি পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন।
ইউকে ত্যাগ করার পর আমি মিশরে গেলাম, আমি এখনও আমার শেষ গন্তব্যে পৌঁছাইনি । যারা হিজরত করে তাদের সবার মত মিশর ছিল আমার জন্য হিজরত এর একটি অস্থায়ী বিরতি নেওয়ার জায়গা। এভাবে আমি আমার হিজরত সম্পূর্ণ করার চেষ্টায় থাকি এবং জিহাদের পথে অগ্রসর হতে থাকি, একজন মুসলিম হিসেবে আমার দায়িত্ব পূরণ এর জন্য এবং যতদূর সম্ভব আল্লাহকে ভয় করেছি। সেই সময়ে, উলামাগন মুসলিম নারীর হিজরত এবং জিহাদ প্রসঙ্গে বেশি কিছু বলতেন না। সুতরাং এর পর কি হতে যাচ্ছে?
আমার পরিবারের একজন অনেক ভাল বন্ধু ছিল যে আমার শাম এ হিজরত এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানত এবং আমাকে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যিনি ইতিপূর্বে শাম এ অবস্থান করছিলেন এবং যোগাযোগ এর ব্যবস্থা করিয়ে দেয়। বিস্ময় এর ব্যাপার ছিল যে উনি আমাকে বিধবা হিসেবে এবং আমার তিন সন্তানসহ গ্রহন করার ইচ্ছা পোষণ করলেন।
আলহামদুলিল্লাহ্*, আমরা সবসময় নিজেকে দ্বীনের ক্ষেত্রে উন্নত করার চেষ্টা করি তাই মুজাহিদ ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করাটা আমার জন্য প্রায় অসম্ভব। একই কারণে কাফেরদের দেশে থাকা সাধারণ মুসলিম যে মুজাহিদ হবার স্বপ্ন দেখে তাকে বিয়ে করাটা একই ভাবে প্রায় অসম্ভব।
সেই মুহূর্তে, আমি বিয়ে করার এবং সে সাথে শাম এ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে আমার একটি মেয়ে স্কুল থেকে আসার পথে গুরুতর গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। এটা ছিল আল্লাহর হুকুম যে সে এই পরিমাণে আহত হয়েছিল যে তার দুটো হাত এবং পা ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই আলহামদুলিল্লাহ্। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই ঘটনাটি আমার পরিকল্পনা বাতিল করার কোন একটি চিহ্ন । কিন্তু আমি যখন আমার রাজকন্যাকে হাসপাতাল এর বিছনায় শুয়ে থাকতে দেখতাম ,তখন ভাবতাম এটা আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। যদি ক্ষতি অথবা মৃত্যু আপনার ভাগ্যে লিখা থাকে তাহলে সেটি আপনার কাছে আসবেই আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন ! আমি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গায় (প্রথমে ইউকে তারপর মিসরে) ছিলাম, যেখানে ছিল না কোন রকেট, বোমা অথবা বন্দুকের গুলি। তা সত্ত্বেও আমার মেয়েটির প্রায় মারা যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। অতএব, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে দেরি না করে আল্লাহ্ তায়ালার ওপর ভরসা করে শাম এর দিকে রওনা দিব। যদি আমার অথবা আমার সন্তানদের কোন ক্ষতি হওয়ার থাকে তাহলে সেটা আল্লাহর জন্যই হোক; যেখানে আমরা আল্লাহ্ তায়ালার অনুগত এবং সবসময় তাঁরই সন্তুষ্টি কামনা করছি।
“আপনি একবারি মৃত্যুবরণ করবেন সুতরাং সেটা আল্লাহর জন্যই হতে দিন” - শায়েখ আব্দুল আযযাম
আমার এক ভাল বন্ধু আমাকে স্মরণ করিয়েছিল যে কিভাবে শয়তান তিন ভাবে মুমিনদের পথে বাধা দেওয়ার অপেক্ষায় থাকে। তাই আমি আমার মূল পরিকল্পনায় থাকি, আর আমি আমার কন্যার দ্রুত সুস্থতার জন্য দুয়া করতে থাকি এবং আলহামদুলিল্লাহ্ এক মাসের মধ্যেই সে আবার হাঁটা শুরু করে দেয়।
ইবরাহীম ইব্*ন ইয়াকূব (র)...... সাব্*রাতা ইব্*ন আবূ ফাকিহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ শয়তান আদম-সন্তানের রাস্তাসমূহে বসে থাকে। সে ইসলামের পথে বসে (বাধা সৃষ্টি করতে গিয়ে) বলেঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ করবে, আর তোমার ধর্ম ও তোমার বাপ দাদার ধর্ম এবং তোমার পূর্বপুরুষদের ধর্ম পরিত্যাগ করবে? কিন্তু আদম সন্তান তার কথা অমান্য করে ইসলাম গ্রহণ করবে। তারপর শয়তান তার হিজরতের রাস্তায় বসে বলেঃ তুমি হিজরত করবে, তোমার ভূমি ও আকাশ পরিত্যাগ করবে? মুহাজির তো একটি লম্বা রশিতে আবদ্ধ ঘোড়ার ন্যায় (নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনে বাধ্য)। কিন্তু সে ব্যক্তি তার কথা অমান্য করে হিজরত করে। এরপর শয়তান তার জিহাদের রাস্তায় বসে এবং বলেঃ তুমি কি জিহাদ করবে? এতো নিজেকে এবং নিজের ধন সম্পদকে ধ্বংস করা। তুমি যুদ্ধ করে নিহত হবে, তোমার স্ত্রী অন্যের বিবাহে যাবে, তোমার সম্পদ ভাগ হবে। সে ব্যক্তি তাকে অমান্য করে জিহাদে গমন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে এরূপ করবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো মহিয়ান আল্লাহ্*র (ওয়াদা অনুযায়ী জান্নাত তার) জন্য ‘অবধারিত’। আর সে শহীদ হয়, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্*র উপর অবধারিত। যদি সে ডুবে যায়, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্*র উপর অবধারিত। আর যদি তার সওয়ারী তাকে ফেলে দিয়ে তার গর্দান ভেঙ্গে দেয় বা মেরে ফেলে, তখনও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্*র উপর অবধারিত। সুনানে নাসাই, কিতাবুল জিহাদ ১৯, হাদিস নংঃ ৩০৮২
অতএব আল্লাহর আনুগত্য হতে হলে , শয়তানের অবাধ্য হয়ে প্রত্যেক মুহূর্তে আমাদের শয়তান এর সাথে যুদ্ধ করতে হবে ; আর এরই ফলশ্রুতিতে আমরা আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশা করি।
সুতরাং প্রথমত , এখানে আমি এসেছি আল্লাহ্ এবং রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করতে যেহেতু আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের আদেশ দিয়েছেন ঃ
“যারা নিজের অনিষ্ট করে, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করে বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলেঃ এ ভূখন্ডে আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলেঃ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে? অতএব, এদের বাসস্থান হল জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত মন্দ স্থান। {৪:৯৭}”
হারিছ আল-আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি। যথা: ১. জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা ২. আমীরের নির্দেশ শ্রবণ করা ৩. তার আনুগত্য করা ৪. হিজরত করা ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। যে ব্যক্তি জামা‘আত হতে এক বিঘত পরিমাণ বের হয়ে গেল তার গর্দান হ’তে ইসলামের গন্ডী ছিন্ন হল। যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। যে ব্যক্তি মানুষকে জাহিলিয়াতের দাওয়াত দ্বারা আহবান জানায় সে ব্যক্তি জাহান্নামীদের দলভুক্ত হবে। যদিও সে ছিয়াম পালন করে, ছালাত আদায় করে ও ধারণা করে যে সে একজন মুসলিম (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৬৯৪, হাদীছ ছহীহ)।
সুতরাং, হিজরত করা একটি বাধ্যতামূলক, প্রশংসনীয় ইবাদত ও আল্লাহের দাসত্বর বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু কেন শাম? এটা একটি যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে আমরা প্রতিদিন শিশু, নারী ও পুরুষদেরকে নিহত হতে দেখি। এর থেকে কি উত্তম জায়গা খুঁজে পেতে পারি না? তাহলে আমরা দেখি,
ইবনু হাওয়ালা (রা) সুত্রে বর্নিত। তিনি বলেন, আল্লাহ'র রসুল (স) বলেছেন: শিঘ্রই ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, যখন জিহাদের জন্য তিনটি সেনাবাহিনী গঠিত হবে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী ইয়ামানের সেনাবাহিনী এবং ইরাকের সেনাবাহিনী। ইবনু হাওয়ালা (রা) বলেন: হে আল্লাহ'র রসুল (স)! আমি সেই যুগ পেলে আমার জন্য কোন দলের সঙী হওয়া মংগলজনক মনে করেন? তিনি বললেন: তুমি অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে। কেননা, তখন এ এলাকাই আল্লাহ'র নিকট সবচেয়ে উত্তম গন্য হবে। আল্লাহ তার সতকর্মশীল বান্দাদের এখানে একত্র করবেন। আর যদি তোমরা সিরিয়ায় যেতে রাজী না হও তবে অবশ্যই ইয়ামানী সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দিবে। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের কুপগুলো হতে পানি উত্তোলন কর। কেননা মহান আল্লাহ আমার জন্য সিরিয়া ও এর অধিবাসীদের ভরন-পোষনের দায়িত্ব নিয়েছেন। (আবু দাউদ, সহিহ, অধ্যায় -৯: জিহাদ, হাদিস ২৪৮৩)
দ্বিতীয়ত , আমি এখানে এসেছি নিজেকে এবং আমার পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবার জন্য
যেখানে আল্লাহ্ আদেশ করেছেন ,
“মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর......{ ৬৬:৬}”
আল্লাহ্ মহান! পাশ্চাত্যে থাকাকালীন সময়ে আল্লাহ্ যা ঘৃণা করেন প্রতিদিন তার চাক্ষুস সাক্ষী দিয়েছিলাম। সবার মনে রাখা প্রয়োজন যে আমরা যা দেখছি এবং যা শুনছি এমন প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
হিজরত না করে, ভাল কাজের আদেশ না দিয়ে অথবা খারাপ দেখেও বাধা না দিয়ে কাফিরদের দেশে বাস করাটা একটা ভয়ংকর অবস্থা। কে বলতে পারবে যে আমরা আমাদের চারপাশের পাপ থেকে নিরাপদে থাকতে পারব ?
আমি অনেক বোনকেই দেখেছি যারা সমাজের সাথে মিল রাখতে গিয়ে নিজের ধর্মকে হারিয়ে ফেলেছে... যেই সমাজ বরকত থেকে অনেক দূরে, যেই সমাজ নিরিহ মানুষদের রক্ত দিয়ে তৈরি, যেই সমাজ ইসলাম এবং মুসলিমদের সাথে সর্বদা যুদ্ধ করছে।
এটা সত্যি যে আমরা এখানে প্রতিদিন পাপ করতে দেখছি কিন্তু প্রাশ্চাত্যে প্রতিদিন যা দেখছি তা থেকে সেটা খুবই সামান্য । পক্ষান্তরে ,আলহামদুলিল্লাহ্ আমরা এখানে আমাদের ধর্মকে প্রকাশ্যে পালন করতে পারছি, ভাল কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজ দেখে বাধা দিতে পারছি যেখানে আছে "আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা ", নিন্দুকের নিন্দার ভয় না করেই সত্য বলতে পারছি, এবং শরিয়া আইন বাস্তবায়ন এর জন্য সংগ্রাম করতে পারছি এবং জিহাদ করতে পারছি।
আল্লাহ্ বলেন,
“হে আমার ঈমানদার বান্দাগণ, আমার পৃথিবী প্রশস্ত। অতএব তোমরা আমারই এবাদত কর। {২৯:৫৬}”
উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার ........... আবদুল্লাহ্ ইবন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, সহসা এক হিজরতের পর অপর হিজরত পালিত হবে। তখন দুনিয়াবাসীদের মধ্যে তারাই উৎকৃষ্ট লোক হিসাবে পরিগণিত হবে, যারা হযরত ইবরাহীম (আ) এর হিজরত - স্থলে (সিরিয়াতে) হিজরত করে স্থায়ী বসতি স্থাপন করবে এবং দুনিয়ায় তখন কাফির ও পাপী অসৎ লোকেরাই বাকি থাকবে। সুনান আবু দাউদঃ২৪৭৪
তৃতীয়ত, আমি সেই মানুষদের এবং মুজাহিদিনদের সাথে শামিল হতে এসেছি যাদের থেকে ইসলামের বিজয় আসবে।
“আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।{৮:৭৪}”
মুজাহিদনরা হল পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তারা সেই মানুষ যারা নিজেদের বিশ্বাসকে কর্মের মাধ্যমে দেখিয়েছে।
তারা হচ্ছেন সেই মানুষ যাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা ভালবাসেন, অতএব মুমিনদেরও তাদেরকে ভালবাসা, সাহায্য করা, তাদেরকে এবং তাদের সম্মানকেও রক্ষা করা কর্তব্য হয়ে গিয়েছে। আমরা তাদেরকে নুসরা দিব, তাদেরকে সমর্থন করব, সান্তনা দিব এবং তাদের কাজে তাদেরকে উৎসাহ দিব যেভাবে পূর্বের মুমিন নারীগণ করে গেছেন।
আমরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই না এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি না। আমরা তাদেরকে নুসরা দিব এমনভাবে যে যতদিন এই ভূমিতে জেহাদ চলতে থাকবে ততদিন আমরা তাদের শিশুদেরকে নিজেদের ভুমিতে লালন পালন করবো, আমরা নিশ্চিত করি যে যদি আল্লাহ্ তায়ালার রহমতে তাদের শাহাদাত হয় আমরা এই পথে অটল হয়ে থাকবো তাদের সন্তানদের সাথে যতদিন না ইসলামের বিজয় আসে আল্লাহ্র ইচ্ছায়।
আমার চতুর্থ কারন হল "আল ওয়ালা-'ওয়াল - বারা " । এটি বিশ্বাসের একটি অংশ যেখানে আমরা আল্লাহর জন্যই ভালবাসি এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করি । অনুরূপভাবে আমরা বিশ্বাসীদের সাথে থাকতে এবং সত্যের পথে সংগ্রাম করতে ভালবাসি যেহেতু আপনাকে উঠানো হবে তাদের সাথে যাদেরকে আপনি ভালবাসবেন । আমরা আল্লাহর জন্য তাদেরকে ঘৃণা করব যাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা ঘৃণা করেন এবং মুমিনগণও যাদেরকে ঘৃণা করেন, আমরা কাফিরদের এবং যা কুফুরির দিকে নিয়ে যায় সেসব জিনিসকে এমনভাবে ঘৃণা করব যেভাবে আমরা জাহান্নাম এর আগুণকে ঘৃণা করি।
পঞ্চমত, আমি হিজরত করতেছি মুসলিমদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং নিজেকে ও আমার পরিবারকে কাফিরদের থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে মুসলিমদের ভূমি এই মুহূর্তে নিরাপদ নয় কিন্তু শীঘ্রই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে ইনশাল্লাহ। পাশাপাশি, কাফিরদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা, তাদের ব্যাংক সম্পদ বৃদ্ধি, সমাজ কাঠামো প্রতিষ্ঠান করা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তহবিল বৃদ্ধি করাটা থেকে আমি মুসলিমদের মাঝে বসবাস করা এবং তাদের মাঝে মৃত্যুবরণ করাটাকে শ্রেয় মনে করি। নিশ্চয়ই আমাদের চেষ্টা ও সম্পদ কাফিরদের জন্য ব্যয় না করে মুসলিমদের জন্য ব্যয় করা উচিত। যেহেতু কিভাবে আমাদের সম্পদ ব্যয় হল এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ।পশ্চিমাতে বসবাসরত অনেকেই চেষ্টা করে ইসরাইল পণ্য বর্জন করার জন্য, কতজন নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে যে আমরা কর দেওয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের রক্তপাত ঘটানো এবং তাদের সম্পদ আর ভুমি দখলে অবদান রাখছি না?
যারা বলে আমি নিজেকে এবং আমার সন্তানদেরকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছি তাদেরকে বলছি আল্লাহ্কে ভয় কর।
আপনারা কি কুরআন এর ওই আয়াতটি পড়েননিঃ
“ওরা হলো যে সব লোক, যারা বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্বদ্ধে বলে, যদি তারা আমাদের কথা শুনত, তবে নিহত হত না। তাদেরকে বলে দিন, এবার তোমাদের নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।{৩:১৬৮}”
“আমি হিজরত করতেছি মুসলিমদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং নিজেকে ও আমার পরিবারকে কাফিরদের থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য”
আল্লাহর কসম, আমরা সবাই মৃত্যুবরণ করব-
“প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।{৩:১৮৫}”
অতএব মৃত্যুকে হতে দিন আল্লাহর আনুগত্যে জন্য। আমি আপনাকে আর একটি আয়াত স্মরণ করিয়ে দেই
“আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না, কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।{৯:৫১}”
উপরন্তু,আমি হিজরত করেছি নিজেকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচানোর আশায় ।
“যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।{৯:৩৯}”
আমি আল্লাহ্র রহমতের আশা করে এখানে আছি, যেহেতু আল্লাহ্ তা'য়ালা বলেছেন ,
“আর এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে লড়াই (জেহাদ) করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী করুনাময়। {২:২১৮}”
এবং সর্বশেষে আমি আপনাদেরকে মোহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি
রাসূলুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল,”ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলুন, যা আমি সদা সর্বদা করতে পারি। রাসূলুল্লাহ ... তাকে বললেনঃ তুমি হিজরত করাকে অবধারিত করে নাও। কেননা কোন কাজই এর মত নেই। সুনানে নাসাইঃ৪১৬৮
শাম থেকে আপনার একজন বোন বলছি উম্মে আইশা মুহাজিরাহ
দৃষ্টব্যঃ বর্তমান সময়ে মুসলিম নারীদের জন্য হিজরত করা ফরজ নয় আলমদের অনুযায়ী, বিশেষ করে মুসলিম দেশ থেকে। আর মাহারাম ছাড়া হিজরত করা ইসলামে অনুমতি নাই।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু
"আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে ।"{ ৬:১৬২ }
প্রায় তের বছর আগে যখন থেকে আমি ইসলাম গ্রহন করলাম তখন থেকে হাজার হাজার মুসলিম এর মত এটি আমার মূলমন্ত্র ছিল । ইসলাম গ্রহনের অধিকাংশ সময় পাশ্চাত্যে বাস করার ফলে, এবং মুসলিম উম্মাহর ভয়ংকর পরিস্থিতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর আমার আর শত্রুদের মাঝে বসবাস সম্ভব ছিল না সুতরাং আমি আমার সন্তানদের নিয়ে শাম এর দিকে হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সেই সময় আমার ছিল তিনটি সন্তান এবং আমি ছিলাম একজন শহীদ ( আল্লাহ্ তাকে কবুল করুন) এর স্ত্রী, তিনি পাশ্চাত্যে থাকতেন এবং তাকে কারারুদ্ধ করা হয় সন্ত্রাসবাদ-রোধক নামক আইন দ্বারা। আলহামদুলিল্লাহ্ ,আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর করুণায় তাকে জিহাদের ভুমিতে নিয়ে যাওয়ার একটি পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন।
ইউকে ত্যাগ করার পর আমি মিশরে গেলাম, আমি এখনও আমার শেষ গন্তব্যে পৌঁছাইনি । যারা হিজরত করে তাদের সবার মত মিশর ছিল আমার জন্য হিজরত এর একটি অস্থায়ী বিরতি নেওয়ার জায়গা। এভাবে আমি আমার হিজরত সম্পূর্ণ করার চেষ্টায় থাকি এবং জিহাদের পথে অগ্রসর হতে থাকি, একজন মুসলিম হিসেবে আমার দায়িত্ব পূরণ এর জন্য এবং যতদূর সম্ভব আল্লাহকে ভয় করেছি। সেই সময়ে, উলামাগন মুসলিম নারীর হিজরত এবং জিহাদ প্রসঙ্গে বেশি কিছু বলতেন না। সুতরাং এর পর কি হতে যাচ্ছে?
আমার পরিবারের একজন অনেক ভাল বন্ধু ছিল যে আমার শাম এ হিজরত এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানত এবং আমাকে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যিনি ইতিপূর্বে শাম এ অবস্থান করছিলেন এবং যোগাযোগ এর ব্যবস্থা করিয়ে দেয়। বিস্ময় এর ব্যাপার ছিল যে উনি আমাকে বিধবা হিসেবে এবং আমার তিন সন্তানসহ গ্রহন করার ইচ্ছা পোষণ করলেন।
আলহামদুলিল্লাহ্*, আমরা সবসময় নিজেকে দ্বীনের ক্ষেত্রে উন্নত করার চেষ্টা করি তাই মুজাহিদ ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করাটা আমার জন্য প্রায় অসম্ভব। একই কারণে কাফেরদের দেশে থাকা সাধারণ মুসলিম যে মুজাহিদ হবার স্বপ্ন দেখে তাকে বিয়ে করাটা একই ভাবে প্রায় অসম্ভব।
সেই মুহূর্তে, আমি বিয়ে করার এবং সে সাথে শাম এ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে আমার একটি মেয়ে স্কুল থেকে আসার পথে গুরুতর গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। এটা ছিল আল্লাহর হুকুম যে সে এই পরিমাণে আহত হয়েছিল যে তার দুটো হাত এবং পা ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই আলহামদুলিল্লাহ্। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই ঘটনাটি আমার পরিকল্পনা বাতিল করার কোন একটি চিহ্ন । কিন্তু আমি যখন আমার রাজকন্যাকে হাসপাতাল এর বিছনায় শুয়ে থাকতে দেখতাম ,তখন ভাবতাম এটা আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। যদি ক্ষতি অথবা মৃত্যু আপনার ভাগ্যে লিখা থাকে তাহলে সেটি আপনার কাছে আসবেই আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন ! আমি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গায় (প্রথমে ইউকে তারপর মিসরে) ছিলাম, যেখানে ছিল না কোন রকেট, বোমা অথবা বন্দুকের গুলি। তা সত্ত্বেও আমার মেয়েটির প্রায় মারা যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। অতএব, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে দেরি না করে আল্লাহ্ তায়ালার ওপর ভরসা করে শাম এর দিকে রওনা দিব। যদি আমার অথবা আমার সন্তানদের কোন ক্ষতি হওয়ার থাকে তাহলে সেটা আল্লাহর জন্যই হোক; যেখানে আমরা আল্লাহ্ তায়ালার অনুগত এবং সবসময় তাঁরই সন্তুষ্টি কামনা করছি।
“আপনি একবারি মৃত্যুবরণ করবেন সুতরাং সেটা আল্লাহর জন্যই হতে দিন” - শায়েখ আব্দুল আযযাম
আমার এক ভাল বন্ধু আমাকে স্মরণ করিয়েছিল যে কিভাবে শয়তান তিন ভাবে মুমিনদের পথে বাধা দেওয়ার অপেক্ষায় থাকে। তাই আমি আমার মূল পরিকল্পনায় থাকি, আর আমি আমার কন্যার দ্রুত সুস্থতার জন্য দুয়া করতে থাকি এবং আলহামদুলিল্লাহ্ এক মাসের মধ্যেই সে আবার হাঁটা শুরু করে দেয়।
ইবরাহীম ইব্*ন ইয়াকূব (র)...... সাব্*রাতা ইব্*ন আবূ ফাকিহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ শয়তান আদম-সন্তানের রাস্তাসমূহে বসে থাকে। সে ইসলামের পথে বসে (বাধা সৃষ্টি করতে গিয়ে) বলেঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ করবে, আর তোমার ধর্ম ও তোমার বাপ দাদার ধর্ম এবং তোমার পূর্বপুরুষদের ধর্ম পরিত্যাগ করবে? কিন্তু আদম সন্তান তার কথা অমান্য করে ইসলাম গ্রহণ করবে। তারপর শয়তান তার হিজরতের রাস্তায় বসে বলেঃ তুমি হিজরত করবে, তোমার ভূমি ও আকাশ পরিত্যাগ করবে? মুহাজির তো একটি লম্বা রশিতে আবদ্ধ ঘোড়ার ন্যায় (নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনে বাধ্য)। কিন্তু সে ব্যক্তি তার কথা অমান্য করে হিজরত করে। এরপর শয়তান তার জিহাদের রাস্তায় বসে এবং বলেঃ তুমি কি জিহাদ করবে? এতো নিজেকে এবং নিজের ধন সম্পদকে ধ্বংস করা। তুমি যুদ্ধ করে নিহত হবে, তোমার স্ত্রী অন্যের বিবাহে যাবে, তোমার সম্পদ ভাগ হবে। সে ব্যক্তি তাকে অমান্য করে জিহাদে গমন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে এরূপ করবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো মহিয়ান আল্লাহ্*র (ওয়াদা অনুযায়ী জান্নাত তার) জন্য ‘অবধারিত’। আর সে শহীদ হয়, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্*র উপর অবধারিত। যদি সে ডুবে যায়, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্*র উপর অবধারিত। আর যদি তার সওয়ারী তাকে ফেলে দিয়ে তার গর্দান ভেঙ্গে দেয় বা মেরে ফেলে, তখনও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্*র উপর অবধারিত। সুনানে নাসাই, কিতাবুল জিহাদ ১৯, হাদিস নংঃ ৩০৮২
অতএব আল্লাহর আনুগত্য হতে হলে , শয়তানের অবাধ্য হয়ে প্রত্যেক মুহূর্তে আমাদের শয়তান এর সাথে যুদ্ধ করতে হবে ; আর এরই ফলশ্রুতিতে আমরা আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশা করি।
সুতরাং প্রথমত , এখানে আমি এসেছি আল্লাহ্ এবং রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করতে যেহেতু আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের আদেশ দিয়েছেন ঃ
“যারা নিজের অনিষ্ট করে, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করে বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলেঃ এ ভূখন্ডে আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলেঃ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে? অতএব, এদের বাসস্থান হল জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত মন্দ স্থান। {৪:৯৭}”
হারিছ আল-আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি। যথা: ১. জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা ২. আমীরের নির্দেশ শ্রবণ করা ৩. তার আনুগত্য করা ৪. হিজরত করা ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। যে ব্যক্তি জামা‘আত হতে এক বিঘত পরিমাণ বের হয়ে গেল তার গর্দান হ’তে ইসলামের গন্ডী ছিন্ন হল। যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। যে ব্যক্তি মানুষকে জাহিলিয়াতের দাওয়াত দ্বারা আহবান জানায় সে ব্যক্তি জাহান্নামীদের দলভুক্ত হবে। যদিও সে ছিয়াম পালন করে, ছালাত আদায় করে ও ধারণা করে যে সে একজন মুসলিম (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৬৯৪, হাদীছ ছহীহ)।
সুতরাং, হিজরত করা একটি বাধ্যতামূলক, প্রশংসনীয় ইবাদত ও আল্লাহের দাসত্বর বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু কেন শাম? এটা একটি যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে আমরা প্রতিদিন শিশু, নারী ও পুরুষদেরকে নিহত হতে দেখি। এর থেকে কি উত্তম জায়গা খুঁজে পেতে পারি না? তাহলে আমরা দেখি,
ইবনু হাওয়ালা (রা) সুত্রে বর্নিত। তিনি বলেন, আল্লাহ'র রসুল (স) বলেছেন: শিঘ্রই ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, যখন জিহাদের জন্য তিনটি সেনাবাহিনী গঠিত হবে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী ইয়ামানের সেনাবাহিনী এবং ইরাকের সেনাবাহিনী। ইবনু হাওয়ালা (রা) বলেন: হে আল্লাহ'র রসুল (স)! আমি সেই যুগ পেলে আমার জন্য কোন দলের সঙী হওয়া মংগলজনক মনে করেন? তিনি বললেন: তুমি অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে। কেননা, তখন এ এলাকাই আল্লাহ'র নিকট সবচেয়ে উত্তম গন্য হবে। আল্লাহ তার সতকর্মশীল বান্দাদের এখানে একত্র করবেন। আর যদি তোমরা সিরিয়ায় যেতে রাজী না হও তবে অবশ্যই ইয়ামানী সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দিবে। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের কুপগুলো হতে পানি উত্তোলন কর। কেননা মহান আল্লাহ আমার জন্য সিরিয়া ও এর অধিবাসীদের ভরন-পোষনের দায়িত্ব নিয়েছেন। (আবু দাউদ, সহিহ, অধ্যায় -৯: জিহাদ, হাদিস ২৪৮৩)
দ্বিতীয়ত , আমি এখানে এসেছি নিজেকে এবং আমার পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবার জন্য
যেখানে আল্লাহ্ আদেশ করেছেন ,
“মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর......{ ৬৬:৬}”
আল্লাহ্ মহান! পাশ্চাত্যে থাকাকালীন সময়ে আল্লাহ্ যা ঘৃণা করেন প্রতিদিন তার চাক্ষুস সাক্ষী দিয়েছিলাম। সবার মনে রাখা প্রয়োজন যে আমরা যা দেখছি এবং যা শুনছি এমন প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
হিজরত না করে, ভাল কাজের আদেশ না দিয়ে অথবা খারাপ দেখেও বাধা না দিয়ে কাফিরদের দেশে বাস করাটা একটা ভয়ংকর অবস্থা। কে বলতে পারবে যে আমরা আমাদের চারপাশের পাপ থেকে নিরাপদে থাকতে পারব ?
আমি অনেক বোনকেই দেখেছি যারা সমাজের সাথে মিল রাখতে গিয়ে নিজের ধর্মকে হারিয়ে ফেলেছে... যেই সমাজ বরকত থেকে অনেক দূরে, যেই সমাজ নিরিহ মানুষদের রক্ত দিয়ে তৈরি, যেই সমাজ ইসলাম এবং মুসলিমদের সাথে সর্বদা যুদ্ধ করছে।
এটা সত্যি যে আমরা এখানে প্রতিদিন পাপ করতে দেখছি কিন্তু প্রাশ্চাত্যে প্রতিদিন যা দেখছি তা থেকে সেটা খুবই সামান্য । পক্ষান্তরে ,আলহামদুলিল্লাহ্ আমরা এখানে আমাদের ধর্মকে প্রকাশ্যে পালন করতে পারছি, ভাল কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজ দেখে বাধা দিতে পারছি যেখানে আছে "আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা ", নিন্দুকের নিন্দার ভয় না করেই সত্য বলতে পারছি, এবং শরিয়া আইন বাস্তবায়ন এর জন্য সংগ্রাম করতে পারছি এবং জিহাদ করতে পারছি।
আল্লাহ্ বলেন,
“হে আমার ঈমানদার বান্দাগণ, আমার পৃথিবী প্রশস্ত। অতএব তোমরা আমারই এবাদত কর। {২৯:৫৬}”
উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার ........... আবদুল্লাহ্ ইবন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, সহসা এক হিজরতের পর অপর হিজরত পালিত হবে। তখন দুনিয়াবাসীদের মধ্যে তারাই উৎকৃষ্ট লোক হিসাবে পরিগণিত হবে, যারা হযরত ইবরাহীম (আ) এর হিজরত - স্থলে (সিরিয়াতে) হিজরত করে স্থায়ী বসতি স্থাপন করবে এবং দুনিয়ায় তখন কাফির ও পাপী অসৎ লোকেরাই বাকি থাকবে। সুনান আবু দাউদঃ২৪৭৪
তৃতীয়ত, আমি সেই মানুষদের এবং মুজাহিদিনদের সাথে শামিল হতে এসেছি যাদের থেকে ইসলামের বিজয় আসবে।
“আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।{৮:৭৪}”
মুজাহিদনরা হল পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তারা সেই মানুষ যারা নিজেদের বিশ্বাসকে কর্মের মাধ্যমে দেখিয়েছে।
তারা হচ্ছেন সেই মানুষ যাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা ভালবাসেন, অতএব মুমিনদেরও তাদেরকে ভালবাসা, সাহায্য করা, তাদেরকে এবং তাদের সম্মানকেও রক্ষা করা কর্তব্য হয়ে গিয়েছে। আমরা তাদেরকে নুসরা দিব, তাদেরকে সমর্থন করব, সান্তনা দিব এবং তাদের কাজে তাদেরকে উৎসাহ দিব যেভাবে পূর্বের মুমিন নারীগণ করে গেছেন।
আমরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই না এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি না। আমরা তাদেরকে নুসরা দিব এমনভাবে যে যতদিন এই ভূমিতে জেহাদ চলতে থাকবে ততদিন আমরা তাদের শিশুদেরকে নিজেদের ভুমিতে লালন পালন করবো, আমরা নিশ্চিত করি যে যদি আল্লাহ্ তায়ালার রহমতে তাদের শাহাদাত হয় আমরা এই পথে অটল হয়ে থাকবো তাদের সন্তানদের সাথে যতদিন না ইসলামের বিজয় আসে আল্লাহ্র ইচ্ছায়।
আমার চতুর্থ কারন হল "আল ওয়ালা-'ওয়াল - বারা " । এটি বিশ্বাসের একটি অংশ যেখানে আমরা আল্লাহর জন্যই ভালবাসি এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করি । অনুরূপভাবে আমরা বিশ্বাসীদের সাথে থাকতে এবং সত্যের পথে সংগ্রাম করতে ভালবাসি যেহেতু আপনাকে উঠানো হবে তাদের সাথে যাদেরকে আপনি ভালবাসবেন । আমরা আল্লাহর জন্য তাদেরকে ঘৃণা করব যাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা ঘৃণা করেন এবং মুমিনগণও যাদেরকে ঘৃণা করেন, আমরা কাফিরদের এবং যা কুফুরির দিকে নিয়ে যায় সেসব জিনিসকে এমনভাবে ঘৃণা করব যেভাবে আমরা জাহান্নাম এর আগুণকে ঘৃণা করি।
পঞ্চমত, আমি হিজরত করতেছি মুসলিমদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং নিজেকে ও আমার পরিবারকে কাফিরদের থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে মুসলিমদের ভূমি এই মুহূর্তে নিরাপদ নয় কিন্তু শীঘ্রই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে ইনশাল্লাহ। পাশাপাশি, কাফিরদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা, তাদের ব্যাংক সম্পদ বৃদ্ধি, সমাজ কাঠামো প্রতিষ্ঠান করা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তহবিল বৃদ্ধি করাটা থেকে আমি মুসলিমদের মাঝে বসবাস করা এবং তাদের মাঝে মৃত্যুবরণ করাটাকে শ্রেয় মনে করি। নিশ্চয়ই আমাদের চেষ্টা ও সম্পদ কাফিরদের জন্য ব্যয় না করে মুসলিমদের জন্য ব্যয় করা উচিত। যেহেতু কিভাবে আমাদের সম্পদ ব্যয় হল এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ।পশ্চিমাতে বসবাসরত অনেকেই চেষ্টা করে ইসরাইল পণ্য বর্জন করার জন্য, কতজন নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে যে আমরা কর দেওয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের রক্তপাত ঘটানো এবং তাদের সম্পদ আর ভুমি দখলে অবদান রাখছি না?
যারা বলে আমি নিজেকে এবং আমার সন্তানদেরকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছি তাদেরকে বলছি আল্লাহ্কে ভয় কর।
আপনারা কি কুরআন এর ওই আয়াতটি পড়েননিঃ
“ওরা হলো যে সব লোক, যারা বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্বদ্ধে বলে, যদি তারা আমাদের কথা শুনত, তবে নিহত হত না। তাদেরকে বলে দিন, এবার তোমাদের নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।{৩:১৬৮}”
“আমি হিজরত করতেছি মুসলিমদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং নিজেকে ও আমার পরিবারকে কাফিরদের থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য”
আল্লাহর কসম, আমরা সবাই মৃত্যুবরণ করব-
“প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।{৩:১৮৫}”
অতএব মৃত্যুকে হতে দিন আল্লাহর আনুগত্যে জন্য। আমি আপনাকে আর একটি আয়াত স্মরণ করিয়ে দেই
“আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না, কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।{৯:৫১}”
উপরন্তু,আমি হিজরত করেছি নিজেকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচানোর আশায় ।
“যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।{৯:৩৯}”
আমি আল্লাহ্র রহমতের আশা করে এখানে আছি, যেহেতু আল্লাহ্ তা'য়ালা বলেছেন ,
“আর এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে লড়াই (জেহাদ) করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী করুনাময়। {২:২১৮}”
এবং সর্বশেষে আমি আপনাদেরকে মোহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি
রাসূলুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল,”ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলুন, যা আমি সদা সর্বদা করতে পারি। রাসূলুল্লাহ ... তাকে বললেনঃ তুমি হিজরত করাকে অবধারিত করে নাও। কেননা কোন কাজই এর মত নেই। সুনানে নাসাইঃ৪১৬৮
শাম থেকে আপনার একজন বোন বলছি উম্মে আইশা মুহাজিরাহ
দৃষ্টব্যঃ বর্তমান সময়ে মুসলিম নারীদের জন্য হিজরত করা ফরজ নয় আলমদের অনুযায়ী, বিশেষ করে মুসলিম দেশ থেকে। আর মাহারাম ছাড়া হিজরত করা ইসলামে অনুমতি নাই।
Comment