ইসলামের দৃষ্টিতে #সন্ত্রাস- #জিহাদ তার বিধি-বিধান
★★★★★★★★★★
★★★★★★★★★★
পর্ব-১
বস্তুত "সন্ত্রাস" শব্দটি ত্রাসের সাথে 'স' অব্যয় যুক্ত করে গঠিত একটা শব্দ। ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে কারো জান-মাল,সম্পদ ও সম্মানের উপর অনধিকার হস্তক্ষেপকে বলা হয় সন্ত্রাস। বস্তুত ভাগ্যের উপর যারা প্রকৃত অর্থে বিশ্বাসী নয় তারাই ত্রাস সৃষ্টি করে কার্যসাধন করতে প্রবৃত্ত হয়।অতিলোভ,রাতারাতি বড় হওয়ার বিলাসী স্বপ্ন, অসহিষ্ণুতা ও উগ্রবাদ সৃষ্ট অতি বাড়াবাড়িমূলক মানসিকতা থেকে সন্ত্রাসের জন্ম। অবশ্য কেউ কেউ আর্থিক সংকটে ধৈর্যহারা হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। পেশীশক্তি প্রদর্শন করে অন্যায়ভাবে ক্ষমতালাভ,সম্পদ উপার্জন, সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার এবং নিজের কাম্যবস্তুকে আয়ত্ত করার এই মানসিকতা পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই লক্ষ্য করা যায়। হাবিল-কাবিলের ঘটনার মাঝ দিয়েই এর শুরু হয়। সন্ত্রাসের উপস্থিতি বলতে গেলে সর্বকালেই বিদ্যমান ছিল। আর সর্বযুগেই মানুষ এই সন্ত্রাস মোকাবেলা করে শান্তির পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সংগ্রামরত ছিল, এখনো আছে। তবে এই সন্ত্রাস সর্বকালে একই রুপে, একই রঙে বিরাজিত থাকে না এবং প্রক্রিয়াগত দিক থেকেও তা অভিন্ন নয়। সন্ত্রাস বিভিন্নভাবে হতে পারে এবং হয়েছে। যেমন, সন্ত্রাস কখনো ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যথা, ডাকাত,বাটপার, রাহজান,বখাটেদের সৃষ্ট সন্ত্রাস। আবার কখনো তা শ্রেণীগতরুপে আত্নপ্রকাশ করেছে। এক শ্রেণীর মানুষ আরেক শ্রেণীর মানুষের বিরুদ্ধে ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়িয়েছে। যেমন, মালিক ও শ্রমিকের মাঝে বিরাজমান সত্রাস। আবার কখনো তা গৌত্রিকরুপে আত্নপ্রকাশ করেছে যেমন এক গোত্রের লোক অন্যগোত্রের লোককে ত্রাসে ফেলে রেখেছে। যেমন ফির'আউন বংশীয় কিবতীরা বনী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে ত্রাস সৃষ্টি করে তাদেরকে বেগার খাটিয়ে মেরেছে, জীবিন জীবিকার অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করেছে।আবার সন্ত্রাস অনেক ক্ষেত্রে জাতিগতরুপ নিয়ে বিকশিত হয়েছে।যেমন, হিটলারের ন্যাৎসি বাহিনীর জাতিগত উন্মত্তার শিকার হয়েছে তৎকালের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের ইয়াহুদীরা। মিশরের কিবতীদের জাতিগত দম্ভ, রোমানদের জাত্যাভিমান,ইরানি পাহলভীদের রাজ্যজয়ের লিপ্সা, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী চেতনা ইত্যাদির পিছনে মৌলিকভাবে বিশ্বময় জাতিগত সন্ত্রাসের ইতিহাস লুকিয়ে আছে। আবার কখনো এই সন্ত্রাস বিমূর্ত হয়েছে বর্ণ বৈষম্যের মাঝ দিয়ে। আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ'রা শুধুমাত্র বর্ণবৈষম্যের কারণেই শ্বেতাঙ্গদের সন্ত্রাসী তৎপরতার শিকার হয়েছে, আজও হচ্ছে। আবার কখনো এই সন্ত্রাসের পিছনের কারণ হিসাবে কাজ করেছে ভাষাগত বৈষম্য। শুধুমাত্র ভাষাগত কারণেই এক ভাষাভাষীদের নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে আরেক ভাষাভাষী মানুষকে। যেমন বিহারী ও বাঙালির মাঝে সংঘটিত সন্ত্রাস। আবার অনেক সময় এই সন্ত্রাস খোদ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও করা হয়। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সন্ত্রাসের শিকার হয় সাধারণ নাগরিকরা। একনায়কতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থার স্থলে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, আজকের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও দলীয় সন্ত্রাসের যাঁতাকলে পিষ্ট। যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তারা প্রশাসনকে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার করে। ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদলীয় লোকের উপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। টেন্ডার, ব্যবসা-বানিজ্য, সরকারী সম্পদের আত্নসাৎ,চাকুরী-বাকুরি সকল ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায়। মিথ্যা মামলা-হামলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণ করে স্বার্থ লুটার পথ সুগম করা হয়। অধুনা মিডিয়া সন্ত্রাস সবচে বড় সন্ত্রাস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে নিজের অপরাধকে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার হীন তৎপরতাকে বলা হয় #মিডিয়া_সন্ত্রাস। বর্তমানে এজাতীয় সন্ত্রাস ব্যাপক বিত্তিতে শুরু হয়েছে। প্রতিপক্ষের বক্তব্যের উপর সেন্সর আরোপ করে তাদের আত্নরক্ষার পথকে রুদ্ধ করা হয়। একেও বলা হয় মিডিয়া সন্ত্রাস। অনেক ক্ষেত্রে টাকার জোরে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেও এই তথ্য সন্ত্রাস চালানো হয়। সন্ত্রাসের আরেক রূপ হলো #আন্তর্জাতিক_সন্ত্রাস। বর্তমানে এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস শান্তিকামী বিশ্বের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বস্তুত ক্ষমতাশালী কোন রাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোন রাষ্টের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং তাদের স্বাধিকারের উপর যখন অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং ক্ষমতার জোরে নিজেদের ইচ্ছা-অভিপ্রায়কে অন্যের দেয়, তখন তা হয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস। এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা। কারণ সেসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নিজেরা যেমন সন্ত্রাস করেছে,তারা বিশ্বের নির্যাতিত দেশসমূহে সন্ত্রাসের ইন্ধনও যোগাচ্ছে। বিষয়টার ব্যাখ্যা এই যে, যখন কোন রাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রের উপর সন্ত্রাস চালায়, তখন সে দেশের সরকার দুর্বল হওয়ার কারণে এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের মোকাবেলা করতে স্বাভাবিক কারণেই পেরে উঠে না। ফলে তাকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের অন্যায় ভাবে চাপিয়ে দেওয়া বিষয়ে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আনুকূল্য প্রধান করে চলতে হয়।
কিন্তু জন্মগতভাবে স্বাধীন মানুষ তথা দেশের সাধারণ নাগরিকরা তা মেনে নিতে পারে না। এর বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং করে প্রতিবাদ করেও যখন কোন ফলোদয় হয়না, তখন তারা সন্ত্রাসকে তাদের প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে ব্যবহার করে। আগ্রাসী রাষ্ট্রের দূতাবাস, ট্রেড সেন্টার, বাণিজ্যিক স্থাপনা ইত্যাদির উপর আক্রমণ চালায়। এমনকি ঐ আগ্রাসী শক্তির দোসররুপে যারা কাজ করে তারাও এসব ক্ষেপে উঠা জনগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়। একারণেই বলতে হয় যে, অপরাশক্তিগুলোর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী তৎপরতাই মৌলিক ভাবে পৃথিবীতে সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছে। আজকের বিশ্বের মানচিত্র সে দিকেই অঙুলি নির্দেশ করে। বসনিয়া, চেচনিয়া,আফগান, ইরাক, কাশ্মীর, আরাকান, পাকিস্তানসহ বিশ্বের যে দেশগুলোতে সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার পিছনে আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদীদের সন্ত্রাসী তৎপরতাই মৌলিক কারণ হিসাবে কাজ করছে। অধিকারবঞ্চিত মানুষ যখন প্রতিকারের আশা হারিয়ে ফেলে তখন হয়ত সে ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করে, না হয় সে হয়ে উঠে চরম উচ্ছৃঙ্খল। বিশ্বে সন্ত্রাস কেন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এর কারণ উদঘাটনের জন্য যারা উদগ্রীব তাদের চোখে আঙুল দিয়ে বিগত কমনওয়েলথ সম্মেলনে "মাহাথির মোহাম্মদ বোধ হয় এসত্যটিকে অনুধাবন করার প্রতিই ইঙ্গিত করেছিলেন। কেননা, বুশ সাহেব সন্ত্রাস দমনের জন্য যে যুদ্ধ করেছিলেন তাতে সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া কমেনি। তাই "মাহাথির মোহাম্মদ" বলেছিলেন, "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেই সন্ত্রাসকে নির্মুল করা যাবে না, বরং যারা সন্ত্রাস করছে তারা কেন সন্ত্রাস করছে এ কারণটি উদঘাটন করতে হবে।" মাহাথিরের মতো একটি ক্ষুদ্র ও পারমাণবিক ক্ষমতাহীন রাষ্টের রাষ্ট্র প্রধানের জন্য আরো বেশি স্পষ্ট করে এ কথা বলা যে, বুশ সাহেব! তোমরা বিশ্বময় যে অনধিকার ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছ,যার প্রতিরোধ করতে রাষ্টপ্রধানরা অক্ষম, এটাই মূলত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছে তা বোধ হয় সম্ভব ছিল না। খোলা চোখে তাকালেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, বর্তমান বিশ্বে যে সন্ত্রাস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে এর পিছনে ধর্মীয় কোন উন্মাদনার পাশাপাশি আছে আধিপত্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির অনধিকার ও অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে সৃষ্ট ঘৃণা ও ক্ষোভের অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশ। সারা বিশ্বকে গোলাম বানিয়ে ফেলার উন্মত্ততা নিয়ে পরাশক্তিগুলো মানুষের স্বাধীনতা ও স্বাধিকারে যেভাবে নগ্ন সন্ত্রাসী হস্তক্ষেপ করছে, তার নিয়মতান্ত্রিক মোকাবেলা করার শক্তি নেই বলেই মানুষ তাদের মনের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য সন্ত্রাসের ভাষাকে ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বন্ধ হলে এসব সন্ত্রাসী তৎপরতাও বন্ধ হয়ে যাবে। এরা কোন বিশেষ শ্রেণীগোষ্ঠীর মানুষ নয়, যেমন বুশ সাহেবরা মনে করেন। বরং তারা হলো তাবৎ বিশ্বের দুর্বল রাষ্ট্রের অসহায় নাগরিক যারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের যাঁতাকলে পিষ্ট, আপন রাষ্ট্রের বেহাল অবস্থা দৃষ্টে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। অথচ এর প্রতিকারের বৈধ কোন উপায় তাদের নেই।পরাশক্তির দাপটের কাছে তারা সন্ত্রস্ত। অস্ত্র ও ক্ষমতার বলে কাউকে পদানত করা গেলেও অন্তরে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ নির্বাপিত হয়না। সেই ক্ষোভ প্রকাশের জন্য মানুষ ভাষা খোঁজে। প্রতিকারের পথ রুদ্ধ দেখলে সে ক্ষোভ স্তিমিত হয়ে যায় না। বরং তা আরো তীব্র ভাবে গর্জাতে থাকে। অতঃপর একদিন এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেই। প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে একদিন তা প্রকাশিত হয়ই। এটা মানুষের স্বাধীনচেতা মনোবৃত্তির স্বাভাবিক পরিণতি। এটাকে আইন দিয়ে প্রতিহত করা যায় না, চোখ রাঙিয়ে দমানো যায় না। সে যাই হোক জান-জীবন, অর্থ-সম্পদ, মান-সম্মান যে ক্ষেত্রেই সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হোক এবং যে কারণে এবং যে ভাবেই ত্রাস সৃষ্টি করা হোক এবং যাদের পক্ষ থেকে এই ত্রাস ছড়ানো হোক, স্থিতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয় এবং তা সমর্থনযোগ্যও নয়। এমনকি যদি ধর্মের নামেও সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয় তবুও তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং যমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সন্ত্রাসের এই বহুমাত্রিকতার কারণে তাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে নামকরণ করা গেলেও পবিত্র কুরআনে কারীমে তাকে
فساد فی الارض
"যমিনে বিপর্যয় সৃষ্টির শিরোনাম দিয়ে প্রকাশ করেছে। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
"انما جزاء اللذين يحاربون الله و رسوله و يسعون فى الأرض فسادا ان يقتلوا او يصلبوا او يقطع أيديهم و ارجلهم من خلاف او ينفوا من الأرض ذلك لهم خزى فى الدنيا و لهم فى اﻷخرة عذاب عظيم. "
অর্থাৎ : "যারা আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আর ভূপৃষ্ঠে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের একদিকের হাত ও অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে; এটা ইহলোকে তাদের জন্য লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো কঠিন শাস্তি। (সূরা মায়েদা:৩২)
উপরোক্ত আয়াতে ইসলাম সন্ত্রাসকে কতটা ঘৃণা করে তার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে:
إنما جزء اللذين يحاربون الله و رسوله
বলার পর
و يسعون فى الأرض فسادا
বলা হয়েছে। এর মর্মার্থ এই যে,
فساد فى الأرض
বা ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় সৃষ্টি ও সন্ত্রাস ছড়ানো, রাহাজানি ও খুনখারাবী করা এগুলোকে আল্লাহ ও তার তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ ঘোষণার সয়ার্থক বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা এহেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে তারা প্রকারান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গেই যেন যুদ্ধে লিপ্ত হলো। আয়াতে সন্ত্রাসীদের চার ধরণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যথা
★১ يقتلوا তাদেরকে হত্যা করা হবে।
★২ يصلبوا শূলে বিদ্ধ করা হবে।
★৩ تقطع أيديهم و ارجلهم من خلاف
বিপরীত দিক থেকে হাত পা কর্তন করে দেয়া হবে।
★৪ ينفوا من الأرض
দেশান্তর, মতান্তরে কারারুদ্ধ করা হবে। এই চার ধরনণের শাস্তির কথা বলা হলো কেন?
তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফিকাহবিদগণ সন্ত্রাসকে চারটি মাত্রা প্রদান করেছেন। যথা:
১★ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করার পর কাউকে বধ করা হবে। কিন্তু মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হবে না। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রথম প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ তাকে হত্যা করা হবে।
২★ ত্রাস সৃষ্টির পর কাউকে হত্যা করবে এবং মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নিবে। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দ্বিতীয় প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ সন্ত্রাসীকে শূলে বিদ্ধ করা হবে।
৩★ ত্রাস সৃষ্টি করে মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নিবে। তবে কাউকে হত্যা করবে না। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তৃতীয় প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ বিপরীত দিক থেকে হাত পা কর্তন করে দেওয়া হবে।
৪★ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ত্রাস সৃষ্টি করবে, কিন্তু কাউকে বধও করবে না এবং মাল-সম্পদও ছিনিয়ে নিবে না। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য চতুর্থ প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ তাকে কারারুদ্ধ করা হবে মতান্তরে দেশান্তরিত করা হবে।
ولهم فى الأخيرة عذاب اليم
বলে এই কথা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এটা কেবল পার্থিব জগতের বিষয় নয় বরং এর সাথে পরকালের শাস্তিও রয়েছে।আর সে শাস্তি খুবই কঠোর হবে। এ দ্বারা বিষয়টি যে ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট তার প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই একটি মাত্র আয়াত থেকে সন্ত্রাস সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কার হয়ে যায়। অবশ্য কুরআন কারীমে
فساد فی الارض
সম্পর্কে আরো অনেক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। যথা:
"যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (জিহাদ) করো।কিন্তু সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না।" (সূরা: বাকারা, ১৯১)
অপর এক আয়াতে
"যখন সে পৃথিবীতে প্রস্থান করে, তখন সে সেখানে দৌড়ঝাপ করে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং শস্যক্ষেত্র ও জীব-জন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।"
(সূরা: বাকারা, ২০৫)।
এছাড়াও বহু আয়াতে ফিতনা-ফাসাদ (সন্ত্রাসী) বর্জন করে চলতে বলা হয়েছে। বহু আয়াতে সীমালঙ্ঘন ও ভাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। মোদ্দাকথা, ইসলামে সন্ত্রাসী তৎপরতার কোনরুপ সুযোগ নেই। বরং সন্ত্রাসে বিশ্বাস ঈমানের পরিপন্থী। এজন্য রাসূল সা. এরশাদ করেছেন,
من حمل علينا السلاح فليس منا
যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। বস্তুত রাসূল সা. এসেছিলেন গোটা বিশ্বের শান্তির দূতরুপে। তিনি চরম সন্ত্রাস কবলিত তৎকালের পৃথিবীতে বিশেষ করে আরব ভূখণ্ডকে কীভাবে সন্ত্রাসমুক্ত করেছিলেন এ বিষয়টি দীর্ঘ পর্যালোচনা সাপেক্ষ একটি বিষয়। তবে সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে, তিনি সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য অন্তত তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন।
★১ تصحیح اعتقاد
তাসহীহে এ'তেকাদ। (মানসিকতা পরিশুদ্ধায়ন)
★২ ترغيب তারগীব (সুস্থ ও সুন্দর জীবনের পথে উৎসাহিত করণ)
★৩ ترهيب তারহীব (কঠোর শাস্তির হুশিয়ারী)
★তাসহীহে এ'তেকাদঃ চূড়ান্তভাবে তাকদীরে বিশ্বাসী মানুষ কোন উদ্দেশ্যেই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে পারে না। কেননা, যখন সবকিছুর মূলে আল্লাহর কুদরতের হাত কাজ করে বলে কেউ বিশ্বাস রাখে সে আল্লাহর কুদরতকে আনুকূলে পাওয়ার চেষ্টা চালাতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় কোন পন্থা অবশ্যই নয়। সুতরাং প্রতিশোধ স্পৃহাই হোক, লোভ লালসাই হোক, বড় হওয়ার উদগ্র বাসনাই হোক কিংবা চরম অর্থসংকটই হোক কোন অবস্থাতেই সে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতে পারে না। কেননা, সে বিশ্বাস করে সবকিছু আল্লাহর কুদরতি হাতের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বস্তুত রাসূল সা. মানুষের এ'তেকাদ ও বিশ্বাসকে এই আঙিকে গড়ে তুলেছিলেন। তাই এই শিক্ষার বদৌলতেই হযরত #উমর_রাযিঃ- এর মত ব্যক্তি এক অতুলনীয় ন্যায়পরায়ণ সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন।
২★ তারগীবঃ অর্থাৎ সুস্থ জীবনের প্রতি অনুপ্রেরণা দান। এরও বিভিন্ন পন্থা রয়েছে।
ক. তাকদীর ও তাওয়াক্কুলের চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে।
খ. আখেরাতের পুরস্কার প্রাপ্তির আশ্বাস কদান করে।
গ. সুস্থ জীবনের সামাজিক সুফল ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে ব্যক্তির মাঝে চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে।
৩★ তারহীবঃ অর্থাৎ ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে। এরও বিভিন্ন পন্থা হতে পারে। যথাঃ
ক. পরপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় দেখিয়ে।
খ. জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভয় দেখিয়ে।
গ. অন্ধকার জীবনের ক্ষতিকর দিকগুলো ব্যাখ্যা করে সে জীবনের পরিণাম সম্পর্কে সচেতন করার মাধ্যমে।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে ইসলামে জিহাদের অধ্যায়টা আসল কোত্থেকে?
বস্তুত ইসলামে জিহাদকে যেসব উদ্দেশ্যে বৈধ করা হয়েছে তার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ফিৎনা-ফাসাদ নির্মূল করা। পবিত্র কোরআন এই বিষয়টা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেঃ
وقاتلوهم حتى لاتكون فتنة ويكون الدين لله
"অর্থাৎ তাদের সাথে ঐ পর্যন্ত যুদ্ধ করো, যে পর্যন্ত না ফিৎনা নির্মূল হয়। এবং দ্বীন কেবল আল্লাহরই জন্য হয়ে যায়।
(সূরা বাকারা:১৯৩)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:
فإن انتهوا فلا عدوان إلا على الظالمين.
ولو لا دفع الله الناس بعضهم ببعض لفسدت الأرض ولكن الله ذو فضل على العالمين.
"আর যদি আল্লাহ তা'আলা একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রদমিত না করতে থাকতেন, তবে বিশ্ব অশান্তিপূর্ণ হয়ে যেত,কিন্তু আল্লাহ খুবই অনুগ্রহশীল বিশ্বাসীদের প্রতি। (সূরা বাকারা)
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যারা সন্ত্রাসী কর্ম-কাণ্ডে লিপ্ত তারা মূলত আল্লাহ ও রাসূলের দুশমন। আর আল্লাহ রাসূলের দুশমনদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম, আসবাব-উপকরণ ও অস্ত্রসস্ত্রের যোগান মওজুদ রাখতে হবে।যেন তারা এই আতংকেই সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে দেয়। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
وادعوا لهم ما استطعتم من قوة و من رباط الخيل ترهبون به عدو الله و عدو كم و أخرين من دونهم لا تعلمونهم الله يعلمهم
"ইসলামবিদ্বেষী তাবৎ সন্ত্রাসীদের তোমাদের সাধ্যানুযায়ী অস্ত্রাদি এবং প্রতিপালিত অশ্বাদির সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখ, যাতে তোমরা প্রভাব বিস্তার লাভ করতে পার, সে সকল লোকদের উপর, যারা আল্লাহর শত্রু এবং তাদের ব্যতীত অন্যাদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না।কিন্তু তাদের আল্লাহ জানেন।
বস্তুত ফিতনা-ফাসাদ নির্মূল করা, জালিম স্বৈরাচারীদের দমন করা, আগ্রাসী শক্তিকে প্রতিহত করা, অন্যায়-অবিচার ও শোষণ-নির্যাতনকে প্রতিহত করার জন্য একটি চলমান কর্মতৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে, এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম ও আসবাব উপকরণে সমৃদ্ধ একটি বাহিনীকে সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। যেন তাবৎ সন্ত্রাসীরা বুঝতে পারে অনাচারের পথে পা বাড়ালেই সে বাহীনীর কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় থাকবে না।
ইসলামের এই কর্মসূচীর নাম #জিহাদ। আর এই কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাই হলেন #মুজাহিদ। ন্যায়ের পক্ষে যদি একটি শক্তি প্রস্তুত না থাকে তাহলেই অন্যায়কারীরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়।
কুরআন কারীমে জিহাদের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে যেসব আয়াত নাযিল অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর প্রতি গভীরভাবে নযর বুলালেই পরিস্কার হয়ে যাবে যে, #জিহাদ কখনোই সন্ত্রাস নয়। বরং বহুমাত্রিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই জিহাদের মূল উদ্দেশ্য।
বাকি অংশ চান কী না। আমাকে জানাবেন। ইন শা আল্লাহ আপনাদের খেদমতে বাকি অংশও পেশ করার চেষ্টা করবো।
উক্ত পোষ্টের তাৎপর্য, লক্ষ্য ও সারনির্যাস বুঝতে পরবর্তী পোষ্টে চোখ রাখুন
চলবে→→→→→→→→→®
★★★★★★★★★★
★★★★★★★★★★
পর্ব-১
বস্তুত "সন্ত্রাস" শব্দটি ত্রাসের সাথে 'স' অব্যয় যুক্ত করে গঠিত একটা শব্দ। ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে কারো জান-মাল,সম্পদ ও সম্মানের উপর অনধিকার হস্তক্ষেপকে বলা হয় সন্ত্রাস। বস্তুত ভাগ্যের উপর যারা প্রকৃত অর্থে বিশ্বাসী নয় তারাই ত্রাস সৃষ্টি করে কার্যসাধন করতে প্রবৃত্ত হয়।অতিলোভ,রাতারাতি বড় হওয়ার বিলাসী স্বপ্ন, অসহিষ্ণুতা ও উগ্রবাদ সৃষ্ট অতি বাড়াবাড়িমূলক মানসিকতা থেকে সন্ত্রাসের জন্ম। অবশ্য কেউ কেউ আর্থিক সংকটে ধৈর্যহারা হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। পেশীশক্তি প্রদর্শন করে অন্যায়ভাবে ক্ষমতালাভ,সম্পদ উপার্জন, সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার এবং নিজের কাম্যবস্তুকে আয়ত্ত করার এই মানসিকতা পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই লক্ষ্য করা যায়। হাবিল-কাবিলের ঘটনার মাঝ দিয়েই এর শুরু হয়। সন্ত্রাসের উপস্থিতি বলতে গেলে সর্বকালেই বিদ্যমান ছিল। আর সর্বযুগেই মানুষ এই সন্ত্রাস মোকাবেলা করে শান্তির পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সংগ্রামরত ছিল, এখনো আছে। তবে এই সন্ত্রাস সর্বকালে একই রুপে, একই রঙে বিরাজিত থাকে না এবং প্রক্রিয়াগত দিক থেকেও তা অভিন্ন নয়। সন্ত্রাস বিভিন্নভাবে হতে পারে এবং হয়েছে। যেমন, সন্ত্রাস কখনো ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যথা, ডাকাত,বাটপার, রাহজান,বখাটেদের সৃষ্ট সন্ত্রাস। আবার কখনো তা শ্রেণীগতরুপে আত্নপ্রকাশ করেছে। এক শ্রেণীর মানুষ আরেক শ্রেণীর মানুষের বিরুদ্ধে ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়িয়েছে। যেমন, মালিক ও শ্রমিকের মাঝে বিরাজমান সত্রাস। আবার কখনো তা গৌত্রিকরুপে আত্নপ্রকাশ করেছে যেমন এক গোত্রের লোক অন্যগোত্রের লোককে ত্রাসে ফেলে রেখেছে। যেমন ফির'আউন বংশীয় কিবতীরা বনী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে ত্রাস সৃষ্টি করে তাদেরকে বেগার খাটিয়ে মেরেছে, জীবিন জীবিকার অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করেছে।আবার সন্ত্রাস অনেক ক্ষেত্রে জাতিগতরুপ নিয়ে বিকশিত হয়েছে।যেমন, হিটলারের ন্যাৎসি বাহিনীর জাতিগত উন্মত্তার শিকার হয়েছে তৎকালের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের ইয়াহুদীরা। মিশরের কিবতীদের জাতিগত দম্ভ, রোমানদের জাত্যাভিমান,ইরানি পাহলভীদের রাজ্যজয়ের লিপ্সা, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী চেতনা ইত্যাদির পিছনে মৌলিকভাবে বিশ্বময় জাতিগত সন্ত্রাসের ইতিহাস লুকিয়ে আছে। আবার কখনো এই সন্ত্রাস বিমূর্ত হয়েছে বর্ণ বৈষম্যের মাঝ দিয়ে। আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ'রা শুধুমাত্র বর্ণবৈষম্যের কারণেই শ্বেতাঙ্গদের সন্ত্রাসী তৎপরতার শিকার হয়েছে, আজও হচ্ছে। আবার কখনো এই সন্ত্রাসের পিছনের কারণ হিসাবে কাজ করেছে ভাষাগত বৈষম্য। শুধুমাত্র ভাষাগত কারণেই এক ভাষাভাষীদের নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে আরেক ভাষাভাষী মানুষকে। যেমন বিহারী ও বাঙালির মাঝে সংঘটিত সন্ত্রাস। আবার অনেক সময় এই সন্ত্রাস খোদ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও করা হয়। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সন্ত্রাসের শিকার হয় সাধারণ নাগরিকরা। একনায়কতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থার স্থলে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, আজকের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও দলীয় সন্ত্রাসের যাঁতাকলে পিষ্ট। যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তারা প্রশাসনকে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার করে। ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদলীয় লোকের উপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। টেন্ডার, ব্যবসা-বানিজ্য, সরকারী সম্পদের আত্নসাৎ,চাকুরী-বাকুরি সকল ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায়। মিথ্যা মামলা-হামলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণ করে স্বার্থ লুটার পথ সুগম করা হয়। অধুনা মিডিয়া সন্ত্রাস সবচে বড় সন্ত্রাস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে নিজের অপরাধকে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার হীন তৎপরতাকে বলা হয় #মিডিয়া_সন্ত্রাস। বর্তমানে এজাতীয় সন্ত্রাস ব্যাপক বিত্তিতে শুরু হয়েছে। প্রতিপক্ষের বক্তব্যের উপর সেন্সর আরোপ করে তাদের আত্নরক্ষার পথকে রুদ্ধ করা হয়। একেও বলা হয় মিডিয়া সন্ত্রাস। অনেক ক্ষেত্রে টাকার জোরে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেও এই তথ্য সন্ত্রাস চালানো হয়। সন্ত্রাসের আরেক রূপ হলো #আন্তর্জাতিক_সন্ত্রাস। বর্তমানে এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস শান্তিকামী বিশ্বের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বস্তুত ক্ষমতাশালী কোন রাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোন রাষ্টের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং তাদের স্বাধিকারের উপর যখন অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং ক্ষমতার জোরে নিজেদের ইচ্ছা-অভিপ্রায়কে অন্যের দেয়, তখন তা হয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস। এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা। কারণ সেসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নিজেরা যেমন সন্ত্রাস করেছে,তারা বিশ্বের নির্যাতিত দেশসমূহে সন্ত্রাসের ইন্ধনও যোগাচ্ছে। বিষয়টার ব্যাখ্যা এই যে, যখন কোন রাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রের উপর সন্ত্রাস চালায়, তখন সে দেশের সরকার দুর্বল হওয়ার কারণে এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের মোকাবেলা করতে স্বাভাবিক কারণেই পেরে উঠে না। ফলে তাকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের অন্যায় ভাবে চাপিয়ে দেওয়া বিষয়ে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আনুকূল্য প্রধান করে চলতে হয়।
কিন্তু জন্মগতভাবে স্বাধীন মানুষ তথা দেশের সাধারণ নাগরিকরা তা মেনে নিতে পারে না। এর বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং করে প্রতিবাদ করেও যখন কোন ফলোদয় হয়না, তখন তারা সন্ত্রাসকে তাদের প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে ব্যবহার করে। আগ্রাসী রাষ্ট্রের দূতাবাস, ট্রেড সেন্টার, বাণিজ্যিক স্থাপনা ইত্যাদির উপর আক্রমণ চালায়। এমনকি ঐ আগ্রাসী শক্তির দোসররুপে যারা কাজ করে তারাও এসব ক্ষেপে উঠা জনগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়। একারণেই বলতে হয় যে, অপরাশক্তিগুলোর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী তৎপরতাই মৌলিক ভাবে পৃথিবীতে সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছে। আজকের বিশ্বের মানচিত্র সে দিকেই অঙুলি নির্দেশ করে। বসনিয়া, চেচনিয়া,আফগান, ইরাক, কাশ্মীর, আরাকান, পাকিস্তানসহ বিশ্বের যে দেশগুলোতে সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার পিছনে আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদীদের সন্ত্রাসী তৎপরতাই মৌলিক কারণ হিসাবে কাজ করছে। অধিকারবঞ্চিত মানুষ যখন প্রতিকারের আশা হারিয়ে ফেলে তখন হয়ত সে ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করে, না হয় সে হয়ে উঠে চরম উচ্ছৃঙ্খল। বিশ্বে সন্ত্রাস কেন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এর কারণ উদঘাটনের জন্য যারা উদগ্রীব তাদের চোখে আঙুল দিয়ে বিগত কমনওয়েলথ সম্মেলনে "মাহাথির মোহাম্মদ বোধ হয় এসত্যটিকে অনুধাবন করার প্রতিই ইঙ্গিত করেছিলেন। কেননা, বুশ সাহেব সন্ত্রাস দমনের জন্য যে যুদ্ধ করেছিলেন তাতে সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া কমেনি। তাই "মাহাথির মোহাম্মদ" বলেছিলেন, "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেই সন্ত্রাসকে নির্মুল করা যাবে না, বরং যারা সন্ত্রাস করছে তারা কেন সন্ত্রাস করছে এ কারণটি উদঘাটন করতে হবে।" মাহাথিরের মতো একটি ক্ষুদ্র ও পারমাণবিক ক্ষমতাহীন রাষ্টের রাষ্ট্র প্রধানের জন্য আরো বেশি স্পষ্ট করে এ কথা বলা যে, বুশ সাহেব! তোমরা বিশ্বময় যে অনধিকার ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছ,যার প্রতিরোধ করতে রাষ্টপ্রধানরা অক্ষম, এটাই মূলত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছে তা বোধ হয় সম্ভব ছিল না। খোলা চোখে তাকালেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, বর্তমান বিশ্বে যে সন্ত্রাস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে এর পিছনে ধর্মীয় কোন উন্মাদনার পাশাপাশি আছে আধিপত্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির অনধিকার ও অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে সৃষ্ট ঘৃণা ও ক্ষোভের অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশ। সারা বিশ্বকে গোলাম বানিয়ে ফেলার উন্মত্ততা নিয়ে পরাশক্তিগুলো মানুষের স্বাধীনতা ও স্বাধিকারে যেভাবে নগ্ন সন্ত্রাসী হস্তক্ষেপ করছে, তার নিয়মতান্ত্রিক মোকাবেলা করার শক্তি নেই বলেই মানুষ তাদের মনের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য সন্ত্রাসের ভাষাকে ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বন্ধ হলে এসব সন্ত্রাসী তৎপরতাও বন্ধ হয়ে যাবে। এরা কোন বিশেষ শ্রেণীগোষ্ঠীর মানুষ নয়, যেমন বুশ সাহেবরা মনে করেন। বরং তারা হলো তাবৎ বিশ্বের দুর্বল রাষ্ট্রের অসহায় নাগরিক যারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের যাঁতাকলে পিষ্ট, আপন রাষ্ট্রের বেহাল অবস্থা দৃষ্টে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। অথচ এর প্রতিকারের বৈধ কোন উপায় তাদের নেই।পরাশক্তির দাপটের কাছে তারা সন্ত্রস্ত। অস্ত্র ও ক্ষমতার বলে কাউকে পদানত করা গেলেও অন্তরে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ নির্বাপিত হয়না। সেই ক্ষোভ প্রকাশের জন্য মানুষ ভাষা খোঁজে। প্রতিকারের পথ রুদ্ধ দেখলে সে ক্ষোভ স্তিমিত হয়ে যায় না। বরং তা আরো তীব্র ভাবে গর্জাতে থাকে। অতঃপর একদিন এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেই। প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে একদিন তা প্রকাশিত হয়ই। এটা মানুষের স্বাধীনচেতা মনোবৃত্তির স্বাভাবিক পরিণতি। এটাকে আইন দিয়ে প্রতিহত করা যায় না, চোখ রাঙিয়ে দমানো যায় না। সে যাই হোক জান-জীবন, অর্থ-সম্পদ, মান-সম্মান যে ক্ষেত্রেই সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হোক এবং যে কারণে এবং যে ভাবেই ত্রাস সৃষ্টি করা হোক এবং যাদের পক্ষ থেকে এই ত্রাস ছড়ানো হোক, স্থিতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয় এবং তা সমর্থনযোগ্যও নয়। এমনকি যদি ধর্মের নামেও সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয় তবুও তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং যমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সন্ত্রাসের এই বহুমাত্রিকতার কারণে তাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে নামকরণ করা গেলেও পবিত্র কুরআনে কারীমে তাকে
فساد فی الارض
"যমিনে বিপর্যয় সৃষ্টির শিরোনাম দিয়ে প্রকাশ করেছে। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
"انما جزاء اللذين يحاربون الله و رسوله و يسعون فى الأرض فسادا ان يقتلوا او يصلبوا او يقطع أيديهم و ارجلهم من خلاف او ينفوا من الأرض ذلك لهم خزى فى الدنيا و لهم فى اﻷخرة عذاب عظيم. "
অর্থাৎ : "যারা আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আর ভূপৃষ্ঠে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের একদিকের হাত ও অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে; এটা ইহলোকে তাদের জন্য লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো কঠিন শাস্তি। (সূরা মায়েদা:৩২)
উপরোক্ত আয়াতে ইসলাম সন্ত্রাসকে কতটা ঘৃণা করে তার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে:
إنما جزء اللذين يحاربون الله و رسوله
বলার পর
و يسعون فى الأرض فسادا
বলা হয়েছে। এর মর্মার্থ এই যে,
فساد فى الأرض
বা ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় সৃষ্টি ও সন্ত্রাস ছড়ানো, রাহাজানি ও খুনখারাবী করা এগুলোকে আল্লাহ ও তার তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ ঘোষণার সয়ার্থক বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা এহেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে তারা প্রকারান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গেই যেন যুদ্ধে লিপ্ত হলো। আয়াতে সন্ত্রাসীদের চার ধরণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যথা
★১ يقتلوا তাদেরকে হত্যা করা হবে।
★২ يصلبوا শূলে বিদ্ধ করা হবে।
★৩ تقطع أيديهم و ارجلهم من خلاف
বিপরীত দিক থেকে হাত পা কর্তন করে দেয়া হবে।
★৪ ينفوا من الأرض
দেশান্তর, মতান্তরে কারারুদ্ধ করা হবে। এই চার ধরনণের শাস্তির কথা বলা হলো কেন?
তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফিকাহবিদগণ সন্ত্রাসকে চারটি মাত্রা প্রদান করেছেন। যথা:
১★ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করার পর কাউকে বধ করা হবে। কিন্তু মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হবে না। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রথম প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ তাকে হত্যা করা হবে।
২★ ত্রাস সৃষ্টির পর কাউকে হত্যা করবে এবং মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নিবে। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দ্বিতীয় প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ সন্ত্রাসীকে শূলে বিদ্ধ করা হবে।
৩★ ত্রাস সৃষ্টি করে মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নিবে। তবে কাউকে হত্যা করবে না। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তৃতীয় প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ বিপরীত দিক থেকে হাত পা কর্তন করে দেওয়া হবে।
৪★ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ত্রাস সৃষ্টি করবে, কিন্তু কাউকে বধও করবে না এবং মাল-সম্পদও ছিনিয়ে নিবে না। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য চতুর্থ প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ তাকে কারারুদ্ধ করা হবে মতান্তরে দেশান্তরিত করা হবে।
ولهم فى الأخيرة عذاب اليم
বলে এই কথা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এটা কেবল পার্থিব জগতের বিষয় নয় বরং এর সাথে পরকালের শাস্তিও রয়েছে।আর সে শাস্তি খুবই কঠোর হবে। এ দ্বারা বিষয়টি যে ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট তার প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই একটি মাত্র আয়াত থেকে সন্ত্রাস সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কার হয়ে যায়। অবশ্য কুরআন কারীমে
فساد فی الارض
সম্পর্কে আরো অনেক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। যথা:
"যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (জিহাদ) করো।কিন্তু সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না।" (সূরা: বাকারা, ১৯১)
অপর এক আয়াতে
"যখন সে পৃথিবীতে প্রস্থান করে, তখন সে সেখানে দৌড়ঝাপ করে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং শস্যক্ষেত্র ও জীব-জন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।"
(সূরা: বাকারা, ২০৫)।
এছাড়াও বহু আয়াতে ফিতনা-ফাসাদ (সন্ত্রাসী) বর্জন করে চলতে বলা হয়েছে। বহু আয়াতে সীমালঙ্ঘন ও ভাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। মোদ্দাকথা, ইসলামে সন্ত্রাসী তৎপরতার কোনরুপ সুযোগ নেই। বরং সন্ত্রাসে বিশ্বাস ঈমানের পরিপন্থী। এজন্য রাসূল সা. এরশাদ করেছেন,
من حمل علينا السلاح فليس منا
যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। বস্তুত রাসূল সা. এসেছিলেন গোটা বিশ্বের শান্তির দূতরুপে। তিনি চরম সন্ত্রাস কবলিত তৎকালের পৃথিবীতে বিশেষ করে আরব ভূখণ্ডকে কীভাবে সন্ত্রাসমুক্ত করেছিলেন এ বিষয়টি দীর্ঘ পর্যালোচনা সাপেক্ষ একটি বিষয়। তবে সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে, তিনি সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য অন্তত তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন।
★১ تصحیح اعتقاد
তাসহীহে এ'তেকাদ। (মানসিকতা পরিশুদ্ধায়ন)
★২ ترغيب তারগীব (সুস্থ ও সুন্দর জীবনের পথে উৎসাহিত করণ)
★৩ ترهيب তারহীব (কঠোর শাস্তির হুশিয়ারী)
★তাসহীহে এ'তেকাদঃ চূড়ান্তভাবে তাকদীরে বিশ্বাসী মানুষ কোন উদ্দেশ্যেই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে পারে না। কেননা, যখন সবকিছুর মূলে আল্লাহর কুদরতের হাত কাজ করে বলে কেউ বিশ্বাস রাখে সে আল্লাহর কুদরতকে আনুকূলে পাওয়ার চেষ্টা চালাতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় কোন পন্থা অবশ্যই নয়। সুতরাং প্রতিশোধ স্পৃহাই হোক, লোভ লালসাই হোক, বড় হওয়ার উদগ্র বাসনাই হোক কিংবা চরম অর্থসংকটই হোক কোন অবস্থাতেই সে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতে পারে না। কেননা, সে বিশ্বাস করে সবকিছু আল্লাহর কুদরতি হাতের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বস্তুত রাসূল সা. মানুষের এ'তেকাদ ও বিশ্বাসকে এই আঙিকে গড়ে তুলেছিলেন। তাই এই শিক্ষার বদৌলতেই হযরত #উমর_রাযিঃ- এর মত ব্যক্তি এক অতুলনীয় ন্যায়পরায়ণ সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন।
২★ তারগীবঃ অর্থাৎ সুস্থ জীবনের প্রতি অনুপ্রেরণা দান। এরও বিভিন্ন পন্থা রয়েছে।
ক. তাকদীর ও তাওয়াক্কুলের চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে।
খ. আখেরাতের পুরস্কার প্রাপ্তির আশ্বাস কদান করে।
গ. সুস্থ জীবনের সামাজিক সুফল ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে ব্যক্তির মাঝে চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে।
৩★ তারহীবঃ অর্থাৎ ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে। এরও বিভিন্ন পন্থা হতে পারে। যথাঃ
ক. পরপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় দেখিয়ে।
খ. জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভয় দেখিয়ে।
গ. অন্ধকার জীবনের ক্ষতিকর দিকগুলো ব্যাখ্যা করে সে জীবনের পরিণাম সম্পর্কে সচেতন করার মাধ্যমে।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে ইসলামে জিহাদের অধ্যায়টা আসল কোত্থেকে?
বস্তুত ইসলামে জিহাদকে যেসব উদ্দেশ্যে বৈধ করা হয়েছে তার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ফিৎনা-ফাসাদ নির্মূল করা। পবিত্র কোরআন এই বিষয়টা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেঃ
وقاتلوهم حتى لاتكون فتنة ويكون الدين لله
"অর্থাৎ তাদের সাথে ঐ পর্যন্ত যুদ্ধ করো, যে পর্যন্ত না ফিৎনা নির্মূল হয়। এবং দ্বীন কেবল আল্লাহরই জন্য হয়ে যায়।
(সূরা বাকারা:১৯৩)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:
فإن انتهوا فلا عدوان إلا على الظالمين.
ولو لا دفع الله الناس بعضهم ببعض لفسدت الأرض ولكن الله ذو فضل على العالمين.
"আর যদি আল্লাহ তা'আলা একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রদমিত না করতে থাকতেন, তবে বিশ্ব অশান্তিপূর্ণ হয়ে যেত,কিন্তু আল্লাহ খুবই অনুগ্রহশীল বিশ্বাসীদের প্রতি। (সূরা বাকারা)
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যারা সন্ত্রাসী কর্ম-কাণ্ডে লিপ্ত তারা মূলত আল্লাহ ও রাসূলের দুশমন। আর আল্লাহ রাসূলের দুশমনদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম, আসবাব-উপকরণ ও অস্ত্রসস্ত্রের যোগান মওজুদ রাখতে হবে।যেন তারা এই আতংকেই সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে দেয়। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
وادعوا لهم ما استطعتم من قوة و من رباط الخيل ترهبون به عدو الله و عدو كم و أخرين من دونهم لا تعلمونهم الله يعلمهم
"ইসলামবিদ্বেষী তাবৎ সন্ত্রাসীদের তোমাদের সাধ্যানুযায়ী অস্ত্রাদি এবং প্রতিপালিত অশ্বাদির সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখ, যাতে তোমরা প্রভাব বিস্তার লাভ করতে পার, সে সকল লোকদের উপর, যারা আল্লাহর শত্রু এবং তাদের ব্যতীত অন্যাদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না।কিন্তু তাদের আল্লাহ জানেন।
বস্তুত ফিতনা-ফাসাদ নির্মূল করা, জালিম স্বৈরাচারীদের দমন করা, আগ্রাসী শক্তিকে প্রতিহত করা, অন্যায়-অবিচার ও শোষণ-নির্যাতনকে প্রতিহত করার জন্য একটি চলমান কর্মতৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে, এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম ও আসবাব উপকরণে সমৃদ্ধ একটি বাহিনীকে সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। যেন তাবৎ সন্ত্রাসীরা বুঝতে পারে অনাচারের পথে পা বাড়ালেই সে বাহীনীর কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় থাকবে না।
ইসলামের এই কর্মসূচীর নাম #জিহাদ। আর এই কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাই হলেন #মুজাহিদ। ন্যায়ের পক্ষে যদি একটি শক্তি প্রস্তুত না থাকে তাহলেই অন্যায়কারীরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়।
কুরআন কারীমে জিহাদের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে যেসব আয়াত নাযিল অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর প্রতি গভীরভাবে নযর বুলালেই পরিস্কার হয়ে যাবে যে, #জিহাদ কখনোই সন্ত্রাস নয়। বরং বহুমাত্রিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই জিহাদের মূল উদ্দেশ্য।
বাকি অংশ চান কী না। আমাকে জানাবেন। ইন শা আল্লাহ আপনাদের খেদমতে বাকি অংশও পেশ করার চেষ্টা করবো।
উক্ত পোষ্টের তাৎপর্য, লক্ষ্য ও সারনির্যাস বুঝতে পরবর্তী পোষ্টে চোখ রাখুন
চলবে→→→→→→→→→®
Comment