জিহাদকে পরিত্যাগ করে কীভাবে আমি পূর্ণ ঈমানদার দাবী করি !
ঈমান মুসলমানের কাছে প্রানের চেয়েও প্রিয় । ঈমানদার সকল কষ্ট সহ্য করতে পারে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে, কিন্তু ঈমান ছাড়তে পারেনা । ঈমান-ই তার কাছে সব কিছু থেকে বড় । ঈমান শুধু মুখে কালেমা পড়ার নাম নয় বরং ইসলামকে তার সকল অপরিহার্য অনুসঙ্গ সহ মনে প্রানে কবুল করার নাম হল ঈমান । আর এ কারনে মুমিনকে হতে হবে সুদৃঢ়, সত্যবাদী ও সত্যনিষ্ঠ । মু’মিন কখনো শৈথিল্যবাদী হতে পারেনা । কুফরির সাথে যেমন তার সন্ধি হতে পারেনা তেমনি মুরতাদ ও অমুসলিমের সাথেও বন্ধুত্ব হতে পারেনা ।
ঈমানতো অবিচল ও দৃঢ় বিশ্বাসের নাম । সংশয় ও দোদুল্যমানতার মিশ্রন ও হতে পারেনা । সংশয় যদি থাকে তবে আকীদ্বাই কীভাবে হয় ? বিশ্বাস যদি দৃঢ়ই না হয় তবে তা ইমান কীভাবে হয় ? কুরআন মাজিদের ইরশাদ-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
অর্থ :- তারাই মুমিন যারা আল্লাহ ও তার রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে অতপর কোনো সন্দেহ পোষন করেনা এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জীহাদ করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ ।
সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত নং:- ১৫
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লমা তবারি (রহঃ) বলেন, অবশ্যই মুমিন জাতি তারা আল্লাহ্ ও তার রাসূলের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে ; কোনো প্রকার সংশয় রাখবেনা । আর তিনি বলেন, আল্লাহর “ওয়াহাদানীয়্যাতের” ( অর্থাৎ আল্লাহ এক অ-দ্বিতীয় ) মধ্যে কোনো প্রকার সংশয় ও তার রাসুলের “নবুবিয়্যাতের” (আল্লাহর প্রেরীত নবী ও রাসূল ) মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহ রাখবেনা এবং নিজের উপরে লাজেম ( আবশ্যকীয় ) করে নিবে ( অর্থাৎ মেনে নিবে ) । আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে এবং আল্লাহ বান্দার উপর যা আবশ্যক করেছেন তার ফরজ ইবাদত থেকে তা সংশয় ও সন্দেহ ছাড়া নিজের উপর (লাজেম ) জরুরী হিসেবে মেনে নিবে ও দৃঢ় রাখবে নিজেকে । এবং মুশরিকদের সাথে জীহাদ করবে নিজের জান ও মালকে খরচ করার দ্বারা এবং আল্লাহ-তায়ালা যেই জীহাদের প্রতি আদেশ করেছেন, সেই জীহাদের জন্য নিজের পুর্ন শক্তি ব্যয় করবে ।
আর এটা এ কারনে যে, আল্লাহর কালিমাকে উচু করবে ও কাফেরদের কালিমাকে নিচু করে দিবে ।
তাফসীরে তবারি, সুরা হুজুরাত আয়াত :- ১৫
সংশয় ও দোদুল্যমানতা কাফের ও মুনাফেকের বৈশিষ্ট্য আর এটা মুমিনের নয় ।
আল্লাহ-তায়ালা বলেন,
لَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ . إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ .
অর্থ :- যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদে অব্যাহতি পাওয়ার প্রার্থনা তোমার নিকট করেনা । আল্লাহ মুত্তাক্বীদের স্বার্থে স-বিশেষ অবহীত । তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা শুধু তারাই করে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনেনা এবং যাদের চিন্তা সংশয় যুক্ত । ওরাতো আপন সংশয়ে দিধাগ্রস্ত ।
সুরা তাওবা, আয়াত নং :- ৪৪-৪৫
তাফসিরুল মুয়াস্সারের ব্যাখ্যা কারক বলেন :- ও নবি মুমিনের শান এটা কখনো হতে পারেনা যে, তারা আল্লাহ ও রাসুল ও কিয়ামাতকে বিশ্বাস করবে কিন্তু আপনার নিকটে নিজ সম্পাদ ও জীবন দ্বারা জিহাদে অব্যাহতি পাওয়ার প্রার্থনা করবে । আর আবশ্যই এটাতো মুনাফিকদের শান, আর আল্লাহ জানেন মুত্তাক্বী কে ! মুত্তাকী তো সে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর ফরজ ইবাদত সমূহকে পুর্ণ ভাবে পালন করে এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকে ।
একটি লক্ষনীয় বিষয়, আর তা হলো যারা জিহাদে না গিয়ে জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি তলব করে তাহারা সত্যিকারী ভাবে আল্লাহ ও কিয়ামাতকে বিশ্বাস করেনা এবং তার আমলে ছালিহীনদের মতো হবেনা । (এবং) হে-নবী ! তাহাদের কলবে সংশয় হয় সঠিক জিনিসের মধ্যে যা আপনি নিয়ে এসেছেন ইসলাম ও শরীয়তে এবং তাহারা সংশয়ে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে ।
সুরা তাওবা, আয়াত নং :- ৪৪-৪৫
জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ হল ঈমান । ঈমানের বিপরীত কুফর । ঈমান সত্য, কুফর মিথ্যা । ঈমান আলো, কুফর অন্ধকার । ঈমান জীবন, কুফর মৃত্যু । ঈমান পূর্ণ কল্যাণ আর কুফর পূর্ণ অকল্যাণ । ঈমান সরল পথ, আর কুফর ভ্রষ্টতার রাস্তা ।
ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোকন হল, কোনো বিষয়কে শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে সন্দেহাতীত ভাবে মেনে নেয়া ও বিশ্বাস করা । মুমিনতো শুধূ জানতে চায় যে, অমুক বিষয়ে আল্লাহ তা’য়ালার হুকুম কি ? অমুক আয়াতের অর্থ ও মর্ম কী ? অমুক বিষয়ে রাসুলের শিক্ষা বা সুন্নাহ্ কি ? কোনো আলেমে দ্বীনের কাছে যখন সে জানতে পারে এটি শরিয়াতের হুকুম কিংবা আল্লাহ্ ও তার রাসুলের সংবাদ তখন আর তা কবুল করে নিতে বিলম্ব করা সে কিছুতেই বরদাশত করতে পারেনা । সাহাবা রাযি আল্লাহু তায়ালা আনহুমদের নীতিমালা ছিলো , سَمِعْنَا وَ أَطَعْنَا সুনলাম ও মেনে নিলাম” এটা মহান প্রতিপালকের ফরমান ।
সূরা নূর,আয়াত নং :- ২৪
অন্য আয়াতে বলেন, اٰمَنَّا بِهٖ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا আমরা তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি ও সব কিছুই আমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে ।
সুরা আল-ইমরান, আয়াত নং :- ০৭
কিছু বিষয় পরিত্যাগ করা অপরিহার্জ :-
০১) ইসলামী শারিয়াতের কোনো বিধানকে অপন্দ করা ।
০২) ইসলামের ও ইসলামের নবীর ও ইসলামের কিতাবের ও ইসলামী নিদশর্নের কিংবা সৃষ্ট-কর্মের কিছু অবিশ্বাস ও বিধানের বিদ্রূপ বা অবজ্ঞা করা ।
০৩) ইসলামের কিছু বিশ্বাস ও বিধানকে মানা আর কিছু না মানা ।
০৪ ) শরিয়াতের কোনো বিধানের উপর আপত্ত্বি করা বা তাকে সংস্কার যোগ্য মনে করা ।
০৫) ইসলামের কোনো অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন আকিদ্বাহ্ বা বিধানের অপব্যাখ্যা করা ।
সর্বশেষ কথা এই যে, কুরআন- সুন্নাহ্-য় সিরাতে মুসতাক্বীম ও হেদায়েতের উপর অবস্থিত নাজাত প্রাপ্ত লোকদের পথকে সাবীলুল মু’মিনীন বলা হয়েছে এবং এ পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারন সাব্যস্ত করা হয়েছে । ইরশাদ হয়েছে –
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
অর্থ :- কারো কাছে সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচারন করে এবং মুমিনের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরে যায় আমি সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব । এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব । আর তা কতইনা মন্দ আবাস । সুরা আন-নিসা, আয়াত নং :- ১১৫
অর্থাৎ যারা হক্ব মো’জেজাত স্পষ্ট হওয়ার পরেও আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে আসছেন তাতে বিরুদ্ধাচারন করে এবং মুক্তির পথ ছেড়ে অন্য পথকে অবলম্বন করে, স্পষ্ট হক্ব রাস্তা ছেড়ে অস্পষ্ট রাস্তাকে গ্রহন করে আমি তাদেরকে ফাছেদ ইখতিয়ারে ছেড়ে দেই এবং আমি তাদেরকে কষ্টদায়ক জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো ।
সফওয়াতুত্তাফাছির, সুরা নিছা, আয়াত নং :- ১১৫
হে-মুসলিম উম্মাহ ! আমি সাবীলুল মুমিন থেকে বিচ্যুত হচ্ছিনা তো ? দেখুন আমাদের এই সামান্য আলোচনার দ্বারা আমি আমাকে কিভাবে একজন পু্র্ণ কামেল মুমিন দাবি করি ? জিহাদকে বাদ দিয়ে আমি মুমিন এই শব্দটি কিভাবে জবানে স্বীকার করি ?
কিছু পালন করে আর কিছু পালন না করে কীভাবে মু’মিন দাবি করি ? পূর্ণ ইসলামের বিধানকে পালন করা কি আল্লাহর আদেশ নয় ? কুরাআন পাঠ করলে আল্লাহর বিধান-সমূহের আয়াত সমূহ কি আমাদের নজরে পরেনা ?
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক দ্বীনের উপর পূর্ণ ভাবে চলার তাওফিক দান করুন ।
আমিন !!!!
An-nafir । 1438 । 2017 । issue-1
ঈমান মুসলমানের কাছে প্রানের চেয়েও প্রিয় । ঈমানদার সকল কষ্ট সহ্য করতে পারে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে, কিন্তু ঈমান ছাড়তে পারেনা । ঈমান-ই তার কাছে সব কিছু থেকে বড় । ঈমান শুধু মুখে কালেমা পড়ার নাম নয় বরং ইসলামকে তার সকল অপরিহার্য অনুসঙ্গ সহ মনে প্রানে কবুল করার নাম হল ঈমান । আর এ কারনে মুমিনকে হতে হবে সুদৃঢ়, সত্যবাদী ও সত্যনিষ্ঠ । মু’মিন কখনো শৈথিল্যবাদী হতে পারেনা । কুফরির সাথে যেমন তার সন্ধি হতে পারেনা তেমনি মুরতাদ ও অমুসলিমের সাথেও বন্ধুত্ব হতে পারেনা ।
ঈমানতো অবিচল ও দৃঢ় বিশ্বাসের নাম । সংশয় ও দোদুল্যমানতার মিশ্রন ও হতে পারেনা । সংশয় যদি থাকে তবে আকীদ্বাই কীভাবে হয় ? বিশ্বাস যদি দৃঢ়ই না হয় তবে তা ইমান কীভাবে হয় ? কুরআন মাজিদের ইরশাদ-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
অর্থ :- তারাই মুমিন যারা আল্লাহ ও তার রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে অতপর কোনো সন্দেহ পোষন করেনা এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জীহাদ করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ ।
সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত নং:- ১৫
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লমা তবারি (রহঃ) বলেন, অবশ্যই মুমিন জাতি তারা আল্লাহ্ ও তার রাসূলের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে ; কোনো প্রকার সংশয় রাখবেনা । আর তিনি বলেন, আল্লাহর “ওয়াহাদানীয়্যাতের” ( অর্থাৎ আল্লাহ এক অ-দ্বিতীয় ) মধ্যে কোনো প্রকার সংশয় ও তার রাসুলের “নবুবিয়্যাতের” (আল্লাহর প্রেরীত নবী ও রাসূল ) মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহ রাখবেনা এবং নিজের উপরে লাজেম ( আবশ্যকীয় ) করে নিবে ( অর্থাৎ মেনে নিবে ) । আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে এবং আল্লাহ বান্দার উপর যা আবশ্যক করেছেন তার ফরজ ইবাদত থেকে তা সংশয় ও সন্দেহ ছাড়া নিজের উপর (লাজেম ) জরুরী হিসেবে মেনে নিবে ও দৃঢ় রাখবে নিজেকে । এবং মুশরিকদের সাথে জীহাদ করবে নিজের জান ও মালকে খরচ করার দ্বারা এবং আল্লাহ-তায়ালা যেই জীহাদের প্রতি আদেশ করেছেন, সেই জীহাদের জন্য নিজের পুর্ন শক্তি ব্যয় করবে ।
আর এটা এ কারনে যে, আল্লাহর কালিমাকে উচু করবে ও কাফেরদের কালিমাকে নিচু করে দিবে ।
তাফসীরে তবারি, সুরা হুজুরাত আয়াত :- ১৫
সংশয় ও দোদুল্যমানতা কাফের ও মুনাফেকের বৈশিষ্ট্য আর এটা মুমিনের নয় ।
আল্লাহ-তায়ালা বলেন,
لَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ . إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ .
অর্থ :- যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদে অব্যাহতি পাওয়ার প্রার্থনা তোমার নিকট করেনা । আল্লাহ মুত্তাক্বীদের স্বার্থে স-বিশেষ অবহীত । তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা শুধু তারাই করে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনেনা এবং যাদের চিন্তা সংশয় যুক্ত । ওরাতো আপন সংশয়ে দিধাগ্রস্ত ।
সুরা তাওবা, আয়াত নং :- ৪৪-৪৫
তাফসিরুল মুয়াস্সারের ব্যাখ্যা কারক বলেন :- ও নবি মুমিনের শান এটা কখনো হতে পারেনা যে, তারা আল্লাহ ও রাসুল ও কিয়ামাতকে বিশ্বাস করবে কিন্তু আপনার নিকটে নিজ সম্পাদ ও জীবন দ্বারা জিহাদে অব্যাহতি পাওয়ার প্রার্থনা করবে । আর আবশ্যই এটাতো মুনাফিকদের শান, আর আল্লাহ জানেন মুত্তাক্বী কে ! মুত্তাকী তো সে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর ফরজ ইবাদত সমূহকে পুর্ণ ভাবে পালন করে এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকে ।
একটি লক্ষনীয় বিষয়, আর তা হলো যারা জিহাদে না গিয়ে জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি তলব করে তাহারা সত্যিকারী ভাবে আল্লাহ ও কিয়ামাতকে বিশ্বাস করেনা এবং তার আমলে ছালিহীনদের মতো হবেনা । (এবং) হে-নবী ! তাহাদের কলবে সংশয় হয় সঠিক জিনিসের মধ্যে যা আপনি নিয়ে এসেছেন ইসলাম ও শরীয়তে এবং তাহারা সংশয়ে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে ।
সুরা তাওবা, আয়াত নং :- ৪৪-৪৫
জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ হল ঈমান । ঈমানের বিপরীত কুফর । ঈমান সত্য, কুফর মিথ্যা । ঈমান আলো, কুফর অন্ধকার । ঈমান জীবন, কুফর মৃত্যু । ঈমান পূর্ণ কল্যাণ আর কুফর পূর্ণ অকল্যাণ । ঈমান সরল পথ, আর কুফর ভ্রষ্টতার রাস্তা ।
ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোকন হল, কোনো বিষয়কে শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে সন্দেহাতীত ভাবে মেনে নেয়া ও বিশ্বাস করা । মুমিনতো শুধূ জানতে চায় যে, অমুক বিষয়ে আল্লাহ তা’য়ালার হুকুম কি ? অমুক আয়াতের অর্থ ও মর্ম কী ? অমুক বিষয়ে রাসুলের শিক্ষা বা সুন্নাহ্ কি ? কোনো আলেমে দ্বীনের কাছে যখন সে জানতে পারে এটি শরিয়াতের হুকুম কিংবা আল্লাহ্ ও তার রাসুলের সংবাদ তখন আর তা কবুল করে নিতে বিলম্ব করা সে কিছুতেই বরদাশত করতে পারেনা । সাহাবা রাযি আল্লাহু তায়ালা আনহুমদের নীতিমালা ছিলো , سَمِعْنَا وَ أَطَعْنَا সুনলাম ও মেনে নিলাম” এটা মহান প্রতিপালকের ফরমান ।
সূরা নূর,আয়াত নং :- ২৪
অন্য আয়াতে বলেন, اٰمَنَّا بِهٖ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا আমরা তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি ও সব কিছুই আমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে ।
সুরা আল-ইমরান, আয়াত নং :- ০৭
কিছু বিষয় পরিত্যাগ করা অপরিহার্জ :-
০১) ইসলামী শারিয়াতের কোনো বিধানকে অপন্দ করা ।
০২) ইসলামের ও ইসলামের নবীর ও ইসলামের কিতাবের ও ইসলামী নিদশর্নের কিংবা সৃষ্ট-কর্মের কিছু অবিশ্বাস ও বিধানের বিদ্রূপ বা অবজ্ঞা করা ।
০৩) ইসলামের কিছু বিশ্বাস ও বিধানকে মানা আর কিছু না মানা ।
০৪ ) শরিয়াতের কোনো বিধানের উপর আপত্ত্বি করা বা তাকে সংস্কার যোগ্য মনে করা ।
০৫) ইসলামের কোনো অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন আকিদ্বাহ্ বা বিধানের অপব্যাখ্যা করা ।
সর্বশেষ কথা এই যে, কুরআন- সুন্নাহ্-য় সিরাতে মুসতাক্বীম ও হেদায়েতের উপর অবস্থিত নাজাত প্রাপ্ত লোকদের পথকে সাবীলুল মু’মিনীন বলা হয়েছে এবং এ পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারন সাব্যস্ত করা হয়েছে । ইরশাদ হয়েছে –
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
অর্থ :- কারো কাছে সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচারন করে এবং মুমিনের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরে যায় আমি সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব । এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব । আর তা কতইনা মন্দ আবাস । সুরা আন-নিসা, আয়াত নং :- ১১৫
অর্থাৎ যারা হক্ব মো’জেজাত স্পষ্ট হওয়ার পরেও আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে আসছেন তাতে বিরুদ্ধাচারন করে এবং মুক্তির পথ ছেড়ে অন্য পথকে অবলম্বন করে, স্পষ্ট হক্ব রাস্তা ছেড়ে অস্পষ্ট রাস্তাকে গ্রহন করে আমি তাদেরকে ফাছেদ ইখতিয়ারে ছেড়ে দেই এবং আমি তাদেরকে কষ্টদায়ক জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো ।
সফওয়াতুত্তাফাছির, সুরা নিছা, আয়াত নং :- ১১৫
হে-মুসলিম উম্মাহ ! আমি সাবীলুল মুমিন থেকে বিচ্যুত হচ্ছিনা তো ? দেখুন আমাদের এই সামান্য আলোচনার দ্বারা আমি আমাকে কিভাবে একজন পু্র্ণ কামেল মুমিন দাবি করি ? জিহাদকে বাদ দিয়ে আমি মুমিন এই শব্দটি কিভাবে জবানে স্বীকার করি ?
কিছু পালন করে আর কিছু পালন না করে কীভাবে মু’মিন দাবি করি ? পূর্ণ ইসলামের বিধানকে পালন করা কি আল্লাহর আদেশ নয় ? কুরাআন পাঠ করলে আল্লাহর বিধান-সমূহের আয়াত সমূহ কি আমাদের নজরে পরেনা ?
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক দ্বীনের উপর পূর্ণ ভাবে চলার তাওফিক দান করুন ।
আমিন !!!!
An-nafir । 1438 । 2017 । issue-1
Comment