জিহাদ বিমুখতায় তালেবে ইলমরা কি হারাল ?
বর্তমানে আমদের মাদ্রাসা গুলোতে ব্যপক ভাবে দেখা যায় যদি কোন ছাত্রকে কোন উস্তাদ জিহাদ সম্বলীত কোন কিতাব, বই-পুস্তক পড়তে দেখে কিংবা চেক করে পাওয়া যায়, তখন তাকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় যা সে কল্পনাও করতে পারেনা৷ কিছু জায়গায় তো তাকে মাদ্রাসা থেকে ইখরাজও করে দেয়া হয় ৷ অথচ একই সাথে যদি অন্য এক জন ছাত্র টিভিতে খেলা কিংবা গান বাজনা, ছবি, নাটক ইত্যাদি দেখা অবস্থায় ধরা পড়ে তাকেও এমন শাস্তি দেয়া হয়না যা ঐ ছাত্রকে দেয়া হয় ৷ অথচ জিহাদ হল নামাজ রোজার মতই একটি ফরজ বিধান আর গান বাজনা, ছবি নাটক ইত্যাদি দেখা হারাম। যখন কেহ একটি ফরজ বিধান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চাচ্ছে তখন তাকে সাহায্য করা উচিত ছিল। অথচ তাকে দেয়া হচ্ছে তিরস্কার , ভৎসনাসহ আরো কত কি!?
এমন কি যথারীতি নিষেধ করা হচ্ছে যে, কেহ যাতে জিহাদী কিতাব মুতালাআ না করে এবং নিজের কাছেও না রাখে৷ আর যুক্তি দিচ্ছে যে, "জিহাদ হল জযবা ওয়ালা জিনিস, তাই এই সংক্রান্ত কোন কিতাবাদি ছাত্র জামানায় পড়া যাবেনা। কেননা এতে করে পড়াশুনা থেকে একছুয়ী, ইনহেমাক ও একনিষ্টতা দূর হয়ে যায়৷ পড়া শুনায় আর মন থাকেনা৷ দেমাগ বিকৃত হয়ে যায় ইত্যাদি...৷ "
আসলেই কি বিষয়টা এমন? জিহাদের কিতাব পড়া বা জিহাদের জযবা রাখা কি পড়া শুনার জন্য ক্ষতিকর? এর ফলে কি পড়া শুনার ইনহেমাক, একছুয়ী ও একনিষ্ঠতা খতম হয়ে যায়? তাহলে চলুন আমরা এখন দেখবো উল্লেখিত যুক্তিটি কোরআন হাদিসের আলোকে কতটুকু সহীহ৷
পৃথিবীতে যত তালেবে ইলম আছেন সকলের জন্য মূল কুদওয়াহ হলেন আসহাবে সুফফার তালেবে ইলমগন৷ সেই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগন কি জিহাদকে নিজেদের পড়া শুনার জন্য বাধা সৃষ্টিকারী মনে করতেন!? দেখা যাক এ ব্যপারে কোরআন হাদিস আমাদেরকে কি বলে?
স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই তাঁদের বৈশিষ্ট এভাবে বর্ণনা করছেন যে:
للفقراء اللذين احصروا في سبيل الله لايستطيعون ضربا في الارض...... الخ
জালালাইন শরীফে উল্লেখিত আয়াতের যে তাফসীর করা হয়েছে তা হল :
(للفقراء) اي الصدقات (الذين احصرو في سبيل الله) اي حسبوا انفسهم علي الجهاد. ونزلت في اهل السفة وهم اربعماءة من المهاجرين ارصدوا لتعليم القرآن والخروج مع السرايا (لا يستطيعون ضربا) سفرا (في الارض) للتجارة والمعاشي لشغلهم عنه بالجهاد (يحسبهم الجاهل) بحالهم (اغنياء من التعفف) عن السؤال وتركه. (تعرفهم) يا مخاطبا (بسيمهم) علامتهم من التواضع واثر الجهد. (لايسألون الناس) شيء فيحلفون (إلحافا)
লক্ষ করুন, আল্লাহ তাআলা এখানে তালেবে ইলমদের শ্রেষ্ঠ মডেল আসহাবে সুফ্ফার যে গুনটি বর্ণনা করেন তাহল তাঁরা নিজেদেরকে জিহাদের ময়দানে আবদ্ধ করে রাখে ৷ অতপর তাঁদের চারটি অবস্থার কথা উল্লেখ করেন৷
২) তাঁরা জিহাদ ব্যতিত অন্য কোন জিনিসের জন্য সফর করতেন না৷ এমন কি ব্যবসা বানিজ্য, জিবিকার জন্যও না ৷
( উল্লেখ্য: মানুষ মসজিদে নববীতে এসে খেজুরের থোকা ঝুলিয়ে যেত, তাঁরা এগুলোই খেতেন ৷)
2) তারা কারো নিকট হাত প্রসারিত করতেন না, বিধায় তাঁদের ব্যপারে অনবহীত লোকেরা তাঁদেরকে ধনী বলে মনে করতো ৷
3) তাঁদেরকে স্বীয় বিনম্রতা ও তাকওয়ার মাধ্যমে চিনা যাবে৷
4) তাঁরা স্বভাবগত ভাবেই কখনো কারো নিকট কিছু চায়না, হাত পাতেন না বা যাচনা করেন না ৷
সুতরাং বুঝা গেল যে তাঁরা শুধু জিহাদের জযবা বা জিহাদের ইলম রাখা পর্যন্তই সিমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং জিহাদের কাজে সর্বদাই নিজেকে জুড়ে রাখতেন৷ অর্থাৎ তাঁরা আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিলেন ৷
এবার আপনিই বলুন, তালেবে ইলমদের জন্য জিহাদের বই পড়া , জিহাদের জযবা রাখা, জিহাদের সাথে (যে কোন ভাবে) সম্পর্ক রাখা ইত্যাদি যদি পড়া শুনার জন্য প্রতিবন্ধকই হত তাহলে আমাদের মডেলগন ( আসহাবে সুফফা) কেন এ কাজ করলেন? ছাত্র জামানায় এ কাজ করার কারনে যদি পড়া লেখার জন্য ক্ষতিকরই হত তাহলে কেন আল্লাহ তাআলা ছাত্র জামানায় এ কাজ করার কারনে তাঁদের প্রশংসা করলেন?
আমাদের আর সাহাবাদের চিন্তা চেতনার মাঝে পর্থক্য তো দেখুন, তাঁরা জিহাদের জন্য বের হওয়াকে কখনো তা'লীমের জন্য প্রতিবন্ধক মনে করতেন না, বরং এটাকে আল্লাহ তা'য়ালার নৈকট্যের সহজ মাধ্যম মনে করতেন৷ জিহাদ ব্যতীত অন্য কোন কাজের জন্য বের হওয়াকে পড়াশুনার জন্য প্রতিবন্ধক মনে করতেন৷ চাই তা ব্যবসার হোক কিংবা জিবিকা উপার্জনের জন্য।
পক্ষান্তরে আমাদের অবস্থা হল সম্পূর্ণরুপে এর বিপরীত৷ আমরা জিহাদকে মনে করি পড়াশুনার পথে প্রতিবন্ধকতা, আর জীবিকা উপার্জন তথা চান্দা উঠানো, কালেকশন করা ইত্যাদিকে বানিয়ে নিয়েছি পড়ালেখার অবিচ্ছেদ্য অংশ ৷ অথচ তাঁরা এটাকেই পড়া শুনার মাঝে খলল সৃষ্টিকারী মনে করতেন৷
হযরত আবু হুরায়রা রা: এর ছাত্র জামানা দেখুন, তিনি রাসুল সা: এর দরবার ছেড়ে খাবার কালেকশনের জন্যও বের হতেন না এই আশংকায় যে, যদি ওই মুহুর্তে রাসুল সা: কোন হাদিস বর্ণনা করেন আর তিনি সেটা থেকে বঞ্চিত হয়ে যান? রাসুল সা: এর দরবার ছেড়ে খাবার কালেকশনে যাওয়াটা তাঁর নিকট ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে খলল সৃষ্টিকারী মনে হত ৷ কিন্তু জিহাদের ডাক এলে ঠিকই বের হয়ে যেতেন ৷ কেননা জিহাদকে তাঁরা ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি কারী মনে করতেন না ৷ বরং আল্লাহর অধিকতর নৈকট্যের মাধ্যম মনে করতেন ৷
কিন্তু হায় আফসুস! আমরা আজ সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ থেকে কত দূরে সরে গেছি!!!
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
يا ايها النبي حرض المؤمنين علي القتال
হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে জিহাদের জন্য উদ্ভুদ্ধ করুন৷আমাদের জন্য উচিত আমরা নিজেরা এই ফরজ আদায় করব, তালেবে ইলমদেরকে এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, উৎসাহিদেরকে সাহায্য করা ও অভয় দেয়া৷ এবং নিরুৎসাহিতকরী ও জিহাদের পুস্তক পড়ার কারনে কিংবা জিহাদের জযবা রাখার কারনে কোন তালিবে ইলমকে তিরস্কার কারীদেরকে দমন করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বিষয় বুঝার ও সে অনুযায়ে আমল করার তাওফিক দান করুন৷ আমিন !!!
আযহার আযযম
Comment