শায়খ নাসির আল ফাহদ। সৌদী কারাগারে বন্দি এক মুজাহিদ আলেম, আল্লাহ তাঁকে মুক্ত করুন। তিনি একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, ‘আত-তিবয়ান ফী কুফরি মান আয়ানাল আম্রিকান’ (আমেরিকার সাহায্যকারীদের সুস্পষ্ট কুফরি)। দুই খন্ডে রচিত এই আরবিগ্রন্থে তিনি আমেরিকাকে সাহায্য সুস্পষ্ট কুফরি বলেছেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর বান্দাদেরকে মহান বিজয় দান করতে চান, তখন এদের মধ্যে পরিশোধন করে নির্বাচিত প্রিয় বান্দাদের হাতেই বিজয় দান করেন। এই কথার উপর তিনি কয়েকটি উদাহরণও দেন, যেমন- হযরত দাউদ আলাইহিস সাল্লামের সময় আল্লাহ যখন তালেতের হাতে জালুতকে পরাজিত করতে চাইলেন, তখন এরমধ্যে পরিশোধন করলেন।
প্রথমে তালুতের বিশাল একটি বাহিনী যুদ্ধের জন্যে বের হয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেক ভেজালী-সুবিধাবাদীও ছিলো। আল্লাহ পথিমধ্যে নদী দ্বারা পরীক্ষা করে এদের মধ্যে ভেজালী সুবিধাবাদীদের বের করে মাত্র তিনশত তেরজনকে নির্বাচিত করেন। পরে এদের হাতেই জালুতকে পরাজিত করে মহান বিজয় দান করলেন।
এমনিভাবে বদরযুদ্ধেও আল্লাহ তাআলা অনেক ছাটাইয়ের পর নির্বাচিত বান্দাদের হাতেই মক্কার কাফিরদের পরাজিত করেন। বদরযুদ্ধের পর যখন আব্দুল্লাহ বিন উবাই মুনাফিকরা বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করলো, তখন আল্লাহ তাআলা উহুদ-খন্দকযুদ্ধের মাধ্যমে ছাটাই করলেন। পরে নির্বাতিত বান্দাদের দ্বারাই মক্কা বিজয় সম্পন্ন হলো।
পরে যখন আল্লাহর ইচ্ছা করেন, রূম-পারস্য মুসলমানদের হাতে বিজিত করবেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে গেলো। সাথে সাথে অনেক ফেতনার জন্ম হলো, যাকাত অস্বীকারকারী, ইসলাম ত্যাগকারী, নবুওতদাবিকারীসহ অনেক ফেতনা দেখা দিল। তখন হযরত আবু বকর রাজিয়াল্লাহু আনহুমের নেতৃত্বে চললো ছাটাই, আল্লাহ করলেন পরিশোধন, পরে এই নির্ভেজাল, খাঁটি ঈমানদার হাতে রূম-পারস্য বিজয় সম্পন্ন হয়।
শায়খের কথা এখানেই শেষ।
এবার আমরা যদি শায়খের কথাকে একটি প্রাথমিক মূলনীতি হিসেবে দাঁড় করাই, তাহলে ইতিহাসে ও বর্তমানে এর অনেক মিল খুঁজে পাই।
যেমন- ক্রুসেডযুদ্ধের সময় যখন সুলতান ইমাদুদ্দীন জঙ্গী ও নুরুদ্দীন জঙ্গীর নেতৃত্বে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে একের পর এক হামলা শুরু হলো, আর ক্রুসেডাররা বিভিন্ন হামলায় পর্যুদস্ত হয়ে অনেক শহর ও কেল্লা ছেড়ে পালালো, তখন অনেক ভেজালী ও সুবিধাবাদীরা এই মোবারক জিহাদে শরীক হতে লাগলো। পরে যখন নুরুদ্দীন জঙ্গির ইন্তেকাল হলো, তখন এসব ভেজালীরা বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে ক্রুসেডারদের তল্পীবাহক হয়ে ব্যবহৃত হতে লাগলো। তখন উপায়ান্তর না দেখে সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, পরে যখন মুবারক বাহিনী এই ভেজাল থেকে মুক্ত হলে গেলো, তখন আল্লাহ তাআলা সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর নেতৃত্বে নির্ভেজাল মুজাহিদদের হাতে বায়তুল মুকাদ্দসের বিজয় দান করলেন।
এভাবে আমরা যদি বর্তমান জিহাদের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে, সারা দুনিয়ার বর্তমান জিহাদের মূল গোড়া হলো আফগান জিহাদ। আর আফগান জিহাদ প্রথমে শুরু হয়েছিল কম্যুনিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে, পরে এই সরকারকে রক্ষা করতে রাশিয়া আফগানে সৈন্য মোতায়েন করে, যেভাবে আসাদকে রক্ষা করতে রাশিয়া সিরিয়ায় সৈন্য পাঠিয়েছিল। সরকারের বিরুদ্ধে এই জিহাদ শুরু হওয়ার কারণে অনেকেই এটাকে গৃহযুদ্ধ বলে চালিয়ে দেন, যার কারণে মুজাহিদদের সংখ্যা প্রথমদিকে কম ছিলো। পরে যখন বিজয় আসা শুরু হলো, তখন জিহাদের নামে দলে দলে অনেক ভেজালি এই যুদ্ধে শরীক হলো। যেহেতু এই জিহাদ শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, আল্লাহ চাচ্ছেন না এই ইসলামি শাসন এইসব ভেজালিদের হাতে প্রতিষ্ঠা হোক। সুতরাং শুরু হলো তাদের মধ্যে কাইজ্যা, লড়াই, গৃহযুদ্ধ। যারা কাল ছিল মুজাহিদ, আজ তারা হলো ডাকাত। ঠিক তখুনি আল্লাহ দাঁড় করালেন তালেবানদের মতো একদল নির্ভেজাল মুজাহিদদের, পরে এদের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান।
তালেবানরা যখন শহরের পর শহর জয় করা শুরু করলো, বিজয়ের পর বিজয় রচনা করতে লাগলো। তখন অনেক সুবিধাবাদী তালেবানদের সমর্থক হতে লাগলো। বাংলাদেশেও তখন অনেকে তালেবানদের আদলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলা হবে আফগান আর আমরা হবো তালেবান’! বিজয়ীদলে যোগ দিতে কার না ভালো লাগে? ঠিক তখন তালেবানদের উপর আসলো বিরাট পরীক্ষা, যাতে তালেবানদের মধ্যে থেকে ভেজালীরা পৃথক হয়ে যায়।
আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্বের সব দালাল-মুনাফেক-মুরতাদ-কুফরী শক্তি হামলা চালালো তালেবানদের প্রতিষ্ঠিত ইমারাতে। এতে ভেজালী তালেবানরা ক্রমান্বয়ে সরে যেতে আরম্ভ করলো, তালেবানদের সংখ্যা কমতে কমতে পনের হাজারে এসে ঠেকলো। কিন্তু প্রকৃত তালেবানরা এই ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যেতে থাকলো। আজ এই নির্ভেজাল তালেবানদের হাতেই আমেরিকা মার খাচ্ছে।
এদিকে তালেবানদের বিজয় দেখে অনেকে বুঝে না বুঝে জিহাদী হতে লাগলো। যাকে ইচ্ছা তাকে কাফির ফতোয়া দেওয়া শুরু করলো, আর সব দোষ এসে চাপলো তালেবান-আলকায়েদার ঘাড়ে। এখন প্রয়োজন এই তাকফীরীদেরকে মুজাহিদদের থেকে পৃথক করা। ব্যস, এসে গেলো আইএস। তারা পৃথক করে দিল তাকফীরী আর মুজাহিদদের মধ্যে, সবাই বুঝে গেলো কারা মুজাহিদ আর কারা খারেজি।
এই ধারাবাহিকতায় পরিশোধন হচ্ছে বাংলাদেশেও। রাশিয়াবিরোধী আফগান জিহাদ থেকে শুরু করে তালেবান শাসন পর্যন্ত আফগানিস্তানের এ পরিবর্তন বাংলাদেশেও এসে প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশে নতুনমাত্রার জিহাদের জন্ম হয় শাপলাচত্বরের পর। অনলাইনে এদের উপস্থিতি ছিল বেশি, শায়খ উসামার ছবি আর একটি জিহাদী পোষ্টের জন্যে শতাধিক লাইক বরাদ্দ ছিলো। লাফিয়ে লাফিয়ে জিহাদিদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো। এ সুযোগে অনেক সুবিধাবাদীরাও জিহাদী সাজলো।
সুতরাং প্রয়োজন এদের মধ্যেও পরিশোধন। এই পরিশোধনের প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে শায়খ আইমান জাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহের বার্তার দ্বারা। অনেক তথাকথিত জিহাদী তখন এটাকে হাওয়ায়ী বলে ছিটকে পড়ে।
২য় পরিশোধন হয় একিউআইএসের ঘোষণা দ্বারা, অনেকে জিহাদ ও মুজাহিদকে সাপোর্ট করতো, তবে এগুলো আফগান-সিরিয়ার জন্যে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাদের বুঝে আসে নি, তাই তারাও ছিটকে পড়ে।
এবার ৩য় পরিশোধন হলো, লক্ষাধিক আলেমের স্বাক্ষরিত ফতোয়ার দ্বারা। এর দ্বারা ওইসব জিহাদিরা ছিটকে পড়লো, যারা জিহাদ ও মুজাহিদদের পছন্দ করে, এদের কল্যাণ চায়, তবে মুজাহিদ উলামা ও উমারাদের মতো জিহাদ চায় না, তারা চায় যারা জীবনে কোনোদিন জিহাদে যান নি, জিহাদ-মুজাহিদদের নিয়ে যাদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই, তাদের জিহাদ। সর্বোপরি উনাদের নিজেদের সুবিধামতো জিহাদ, অথচ তাদের না আছে প্রচলিত জিহাদের প্রকৃত ধারণা আর না জানে মুজাহিদদের প্রকৃত অবস্থা। এবার এরাও ছিটকে পড়লো।
এভাবে ছাটাই আর পরিশোধন চলতে থাকবে, তবেই না আল্লাহ ইমাম মাহদী প্রকৃত বাহিনী তৈরী করবেন, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ মহান বিজয় দিবেন।
আমার মনে হয়, এইসব ভেজালি সুবিধাবাদী জিহাদীরা পরে চলে যাওয়ার চেয়ে এখুনি চলে যাওয়া ভালো, এরা পরে যদি আব্দুল্লাহ বিন উবাই যেভাবে উহুদযুদ্ধ থেকে তিন শত সৈন্য নিয়ে ফিরে এসেছিল, এরাও যদি পরে মুজাহিদদের দুর্দিনে পল্টি মারে তাহলে বর্তমানের চেয়ে ওটা হবে ভয়াবহ। তাই এরা এখন ছিটকে পড়ে এদেশের জিহাদ ও মুজাহিদদের উপর রহম করলো।
এদের স্মরণে কুরআন কারীমের কিছু কথা-
... আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক।
যদি তোমাদের সাথে তারা বের হত, তবে তোমাদের অনিষ্ট ছাড়া আর কিছু বৃদ্ধি করতো না, আর অশ্ব ছুটাতো তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশে। আর তোমাদের মাঝে রয়েছে তাদের গুপ্তচর। বস্তুতঃ আল্লাহ যালিমদের ভালভাবেই জানেন।[সুরা তাওবাহ: ৪৬-৪৭]
তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর বান্দাদেরকে মহান বিজয় দান করতে চান, তখন এদের মধ্যে পরিশোধন করে নির্বাচিত প্রিয় বান্দাদের হাতেই বিজয় দান করেন। এই কথার উপর তিনি কয়েকটি উদাহরণও দেন, যেমন- হযরত দাউদ আলাইহিস সাল্লামের সময় আল্লাহ যখন তালেতের হাতে জালুতকে পরাজিত করতে চাইলেন, তখন এরমধ্যে পরিশোধন করলেন।
প্রথমে তালুতের বিশাল একটি বাহিনী যুদ্ধের জন্যে বের হয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেক ভেজালী-সুবিধাবাদীও ছিলো। আল্লাহ পথিমধ্যে নদী দ্বারা পরীক্ষা করে এদের মধ্যে ভেজালী সুবিধাবাদীদের বের করে মাত্র তিনশত তেরজনকে নির্বাচিত করেন। পরে এদের হাতেই জালুতকে পরাজিত করে মহান বিজয় দান করলেন।
এমনিভাবে বদরযুদ্ধেও আল্লাহ তাআলা অনেক ছাটাইয়ের পর নির্বাচিত বান্দাদের হাতেই মক্কার কাফিরদের পরাজিত করেন। বদরযুদ্ধের পর যখন আব্দুল্লাহ বিন উবাই মুনাফিকরা বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করলো, তখন আল্লাহ তাআলা উহুদ-খন্দকযুদ্ধের মাধ্যমে ছাটাই করলেন। পরে নির্বাতিত বান্দাদের দ্বারাই মক্কা বিজয় সম্পন্ন হলো।
পরে যখন আল্লাহর ইচ্ছা করেন, রূম-পারস্য মুসলমানদের হাতে বিজিত করবেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে গেলো। সাথে সাথে অনেক ফেতনার জন্ম হলো, যাকাত অস্বীকারকারী, ইসলাম ত্যাগকারী, নবুওতদাবিকারীসহ অনেক ফেতনা দেখা দিল। তখন হযরত আবু বকর রাজিয়াল্লাহু আনহুমের নেতৃত্বে চললো ছাটাই, আল্লাহ করলেন পরিশোধন, পরে এই নির্ভেজাল, খাঁটি ঈমানদার হাতে রূম-পারস্য বিজয় সম্পন্ন হয়।
শায়খের কথা এখানেই শেষ।
এবার আমরা যদি শায়খের কথাকে একটি প্রাথমিক মূলনীতি হিসেবে দাঁড় করাই, তাহলে ইতিহাসে ও বর্তমানে এর অনেক মিল খুঁজে পাই।
যেমন- ক্রুসেডযুদ্ধের সময় যখন সুলতান ইমাদুদ্দীন জঙ্গী ও নুরুদ্দীন জঙ্গীর নেতৃত্বে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে একের পর এক হামলা শুরু হলো, আর ক্রুসেডাররা বিভিন্ন হামলায় পর্যুদস্ত হয়ে অনেক শহর ও কেল্লা ছেড়ে পালালো, তখন অনেক ভেজালী ও সুবিধাবাদীরা এই মোবারক জিহাদে শরীক হতে লাগলো। পরে যখন নুরুদ্দীন জঙ্গির ইন্তেকাল হলো, তখন এসব ভেজালীরা বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে ক্রুসেডারদের তল্পীবাহক হয়ে ব্যবহৃত হতে লাগলো। তখন উপায়ান্তর না দেখে সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, পরে যখন মুবারক বাহিনী এই ভেজাল থেকে মুক্ত হলে গেলো, তখন আল্লাহ তাআলা সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর নেতৃত্বে নির্ভেজাল মুজাহিদদের হাতে বায়তুল মুকাদ্দসের বিজয় দান করলেন।
এভাবে আমরা যদি বর্তমান জিহাদের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে, সারা দুনিয়ার বর্তমান জিহাদের মূল গোড়া হলো আফগান জিহাদ। আর আফগান জিহাদ প্রথমে শুরু হয়েছিল কম্যুনিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে, পরে এই সরকারকে রক্ষা করতে রাশিয়া আফগানে সৈন্য মোতায়েন করে, যেভাবে আসাদকে রক্ষা করতে রাশিয়া সিরিয়ায় সৈন্য পাঠিয়েছিল। সরকারের বিরুদ্ধে এই জিহাদ শুরু হওয়ার কারণে অনেকেই এটাকে গৃহযুদ্ধ বলে চালিয়ে দেন, যার কারণে মুজাহিদদের সংখ্যা প্রথমদিকে কম ছিলো। পরে যখন বিজয় আসা শুরু হলো, তখন জিহাদের নামে দলে দলে অনেক ভেজালি এই যুদ্ধে শরীক হলো। যেহেতু এই জিহাদ শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, আল্লাহ চাচ্ছেন না এই ইসলামি শাসন এইসব ভেজালিদের হাতে প্রতিষ্ঠা হোক। সুতরাং শুরু হলো তাদের মধ্যে কাইজ্যা, লড়াই, গৃহযুদ্ধ। যারা কাল ছিল মুজাহিদ, আজ তারা হলো ডাকাত। ঠিক তখুনি আল্লাহ দাঁড় করালেন তালেবানদের মতো একদল নির্ভেজাল মুজাহিদদের, পরে এদের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান।
তালেবানরা যখন শহরের পর শহর জয় করা শুরু করলো, বিজয়ের পর বিজয় রচনা করতে লাগলো। তখন অনেক সুবিধাবাদী তালেবানদের সমর্থক হতে লাগলো। বাংলাদেশেও তখন অনেকে তালেবানদের আদলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলা হবে আফগান আর আমরা হবো তালেবান’! বিজয়ীদলে যোগ দিতে কার না ভালো লাগে? ঠিক তখন তালেবানদের উপর আসলো বিরাট পরীক্ষা, যাতে তালেবানদের মধ্যে থেকে ভেজালীরা পৃথক হয়ে যায়।
আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্বের সব দালাল-মুনাফেক-মুরতাদ-কুফরী শক্তি হামলা চালালো তালেবানদের প্রতিষ্ঠিত ইমারাতে। এতে ভেজালী তালেবানরা ক্রমান্বয়ে সরে যেতে আরম্ভ করলো, তালেবানদের সংখ্যা কমতে কমতে পনের হাজারে এসে ঠেকলো। কিন্তু প্রকৃত তালেবানরা এই ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যেতে থাকলো। আজ এই নির্ভেজাল তালেবানদের হাতেই আমেরিকা মার খাচ্ছে।
এদিকে তালেবানদের বিজয় দেখে অনেকে বুঝে না বুঝে জিহাদী হতে লাগলো। যাকে ইচ্ছা তাকে কাফির ফতোয়া দেওয়া শুরু করলো, আর সব দোষ এসে চাপলো তালেবান-আলকায়েদার ঘাড়ে। এখন প্রয়োজন এই তাকফীরীদেরকে মুজাহিদদের থেকে পৃথক করা। ব্যস, এসে গেলো আইএস। তারা পৃথক করে দিল তাকফীরী আর মুজাহিদদের মধ্যে, সবাই বুঝে গেলো কারা মুজাহিদ আর কারা খারেজি।
এই ধারাবাহিকতায় পরিশোধন হচ্ছে বাংলাদেশেও। রাশিয়াবিরোধী আফগান জিহাদ থেকে শুরু করে তালেবান শাসন পর্যন্ত আফগানিস্তানের এ পরিবর্তন বাংলাদেশেও এসে প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশে নতুনমাত্রার জিহাদের জন্ম হয় শাপলাচত্বরের পর। অনলাইনে এদের উপস্থিতি ছিল বেশি, শায়খ উসামার ছবি আর একটি জিহাদী পোষ্টের জন্যে শতাধিক লাইক বরাদ্দ ছিলো। লাফিয়ে লাফিয়ে জিহাদিদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো। এ সুযোগে অনেক সুবিধাবাদীরাও জিহাদী সাজলো।
সুতরাং প্রয়োজন এদের মধ্যেও পরিশোধন। এই পরিশোধনের প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে শায়খ আইমান জাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহের বার্তার দ্বারা। অনেক তথাকথিত জিহাদী তখন এটাকে হাওয়ায়ী বলে ছিটকে পড়ে।
২য় পরিশোধন হয় একিউআইএসের ঘোষণা দ্বারা, অনেকে জিহাদ ও মুজাহিদকে সাপোর্ট করতো, তবে এগুলো আফগান-সিরিয়ার জন্যে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাদের বুঝে আসে নি, তাই তারাও ছিটকে পড়ে।
এবার ৩য় পরিশোধন হলো, লক্ষাধিক আলেমের স্বাক্ষরিত ফতোয়ার দ্বারা। এর দ্বারা ওইসব জিহাদিরা ছিটকে পড়লো, যারা জিহাদ ও মুজাহিদদের পছন্দ করে, এদের কল্যাণ চায়, তবে মুজাহিদ উলামা ও উমারাদের মতো জিহাদ চায় না, তারা চায় যারা জীবনে কোনোদিন জিহাদে যান নি, জিহাদ-মুজাহিদদের নিয়ে যাদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই, তাদের জিহাদ। সর্বোপরি উনাদের নিজেদের সুবিধামতো জিহাদ, অথচ তাদের না আছে প্রচলিত জিহাদের প্রকৃত ধারণা আর না জানে মুজাহিদদের প্রকৃত অবস্থা। এবার এরাও ছিটকে পড়লো।
এভাবে ছাটাই আর পরিশোধন চলতে থাকবে, তবেই না আল্লাহ ইমাম মাহদী প্রকৃত বাহিনী তৈরী করবেন, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ মহান বিজয় দিবেন।
আমার মনে হয়, এইসব ভেজালি সুবিধাবাদী জিহাদীরা পরে চলে যাওয়ার চেয়ে এখুনি চলে যাওয়া ভালো, এরা পরে যদি আব্দুল্লাহ বিন উবাই যেভাবে উহুদযুদ্ধ থেকে তিন শত সৈন্য নিয়ে ফিরে এসেছিল, এরাও যদি পরে মুজাহিদদের দুর্দিনে পল্টি মারে তাহলে বর্তমানের চেয়ে ওটা হবে ভয়াবহ। তাই এরা এখন ছিটকে পড়ে এদেশের জিহাদ ও মুজাহিদদের উপর রহম করলো।
এদের স্মরণে কুরআন কারীমের কিছু কথা-
... আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক।
যদি তোমাদের সাথে তারা বের হত, তবে তোমাদের অনিষ্ট ছাড়া আর কিছু বৃদ্ধি করতো না, আর অশ্ব ছুটাতো তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশে। আর তোমাদের মাঝে রয়েছে তাদের গুপ্তচর। বস্তুতঃ আল্লাহ যালিমদের ভালভাবেই জানেন।[সুরা তাওবাহ: ৪৬-৪৭]
Comment