আল্লাহর রাস্তায় বের হতে প্রস্তুতি নিন!
আমরা প্রকৃতিগত ভাবেই আমাদের বসবাস স্থলের প্রতি আসক্ত, বিশেষ করে আমাদের ঘরের প্রতি। আমাদের মাতৃভূমিও এর আওতায় পরে। আপনি ঘরের প্রতি টান অনুভব করবেন কারণ আমরা আমাদের বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাই – যে খাবার খাই, যে বিছানায় ঘুমাই। যখন কোন কিছু আপনার এই রুটিনকে ব্যাহত করে তখন আপনি অনিরাপদ বোধ করেন যা প্রশান্তির বিপরীত। বাড়িতে থাকলে আপনি প্রশান্তি অনুভব করেন এবং আপনার রুটিন যদি ব্যাহত হয় তবে আপনি অনিরাপদ বোধ করেন।
একজন মুজাহিদ এই রুটিন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। যে খাবার খান তা তার মা বা স্ত্রীর রান্না করা খাবার থেকে ভিন্ন, যে বিছানায় ঘুমান তা তেমন আরামদায়ক নয়, আবহাওয়া ভিন্ন হতে পারে এবং ঘুমানোর সময় পালটে যেতে পারে। এসব আপনাকে বাড়ি ফিরে যেতে ব্যকুল করে তোলে। যখন একজন আরব মুজাহিদ কাশ্মিরে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন তার কাছে সেখানকার খাবার খুব ঝাঁজালো মনে হয়। আবার একজন পাকিস্তানি মুজাহিদ যখন ইরাক বা অন্য কোথাও জিহাদে অংশগ্রহণ করেন তখন তার কাছে খাবার খুব নমনীয় মনে হয়, রুটিন পালটে যায়, তাপমাত্রাও পালটে যায়।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের কথা যদি চিন্তা করি যখন তিনি আরমেনিয়াতে জিহাদ করছিলেন, যদিও এ ব্যপারটি আরও অনেক সাহাবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি আরবে বড় হয়েছেন যেখানে আবহাওয়া খুব গরম, অথচ তিনি যুদ্ধ করছিলেন এমন এক জায়গায় যা কয়েক ফিট তুষারে ঢাকা থাকে। এই ধরণের রুটিন পরিবর্তন মেনে নেয়া কিন্তু সহজ নয় – এটা খুব বড় একটা ত্যাগ।
সম্ভবত একারণেই হজ্ব জিহাদের সাথে সম্পর্কিত। কিছু কিছু হাদিসে আপনি দেখবেন যে জিহাদ ও হজ্বের কথা একই হাদিসে এসেছে। যেমন – যখন আয়েশা (রা) রাসুল (স) কে জিজ্ঞেস করলেন যে পুরুষরা আপনার সাথে জামাআতে নামাজ পড়ে, আপনার সাথে জুম্মার নামাজ পড়ে, আপনার সাথে জিহাদে যোগদান করে, মহিলাদের ব্যপারে কী হবে? রাসুল (স) বললেন আপনাদের জিহাদ হচ্ছে হজ্ব।
কারণ একটু নিচের স্তরের হলেও হজ্বের সাথে জিহাদের কিছুটা সামঞ্জ্যশ্য আছে। হজ্বের জন্য আপনাকে ভ্রমণ করতে হয়, জিহাদেও অনেক ক্ষেত্রে ভ্রমণ করতে হয়। হজ্বে আপনার রুটিন পরিবর্তন হয়। যেমন – হজ্বের সময় ভিন্ন পোষাক পরিধান করতে হয়, তারপর আপনি হজ্ব চলাকালীন সময় নখ ও চুল কাটতে পারবেন না, সেখানকার খাবার ভিন্ন, মীনা ও আরাফায় ঘুমানোর ব্যবস্থা তেমন আরামদায়ক নয়, এরকম ভাবে আপনার রুটিন পালটে যায়। আপনাকে অনেক টাকাও খরচ করতে হয় কারণ হজ্ব বেশ ব্যয়বহুল। সুতরাং হজ্ব ও জিহাদের মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে যদিও জিহাদের ত্যাগ অনেক বড় মাপের ত্যাগ।
যদি আপনার বাসস্থানের প্রতি আপনার ভালবাসা আপনাকে আল্লাহর পথে জিহাদ থেকে দূরে রাখে, তাহলে তা প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়। তাবুক যুদ্ধের কথা যদি বলি, তাবুক প্রান্তরে যাওয়ার জন্য অনেক দূরের পথ পারি দিতে হয়েছিল, তখন উত্তপ্ত গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম, ফসল ঘরে তোলার সময় তখন। সবাই যখন ফসল ঘরে তোলার পরিকল্পনা করছিলেন রাসুল (স) তাদের বললেন যে আমাদের এখন রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। সুতরাং, তা ছিল খুবই বড় একটা ত্যাগ।
সেসময় একজন সাহাবা তার ঘরে গিয়ে দেখলেন যে তার স্ত্রী বাড়ির উঠান পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখেছে যাতে গরম কম লাগে। তখন তিনি তার আরেক ঘরে গিয়ে দেখলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রীও একই কাজ করেছে। ঘরের প্রতি টান তাকে যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত রাখল। যে তিনজন তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তিনি তাদের মধ্যে একজন যিনি ঘরের টানে যুদ্ধে যান নি।
যাদের এমন রুটিন পরিবর্তনের ব্যপারে অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন যে এ বিষয়টি এক সময় না এক সময় ঘরের প্রতি দুর্বল করে তুলবে। কোন কোন মুজাহিদ বাড়ি না ফিরে, তাদের পরিবারের কাছে ফিরে না গিয়ে বছরের পর বছর যুদ্ধের ময়দানে কাটিয়ে দেন। এতে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন। অতএব, একজন মুজাহিদের অন্যতম একটি গুণ হচ্ছে সবর।
শাইখ ইউসুফ আল উয়াইরি রহঃ এর একটি আলোচনা অবলম্বনে
আমরা প্রকৃতিগত ভাবেই আমাদের বসবাস স্থলের প্রতি আসক্ত, বিশেষ করে আমাদের ঘরের প্রতি। আমাদের মাতৃভূমিও এর আওতায় পরে। আপনি ঘরের প্রতি টান অনুভব করবেন কারণ আমরা আমাদের বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাই – যে খাবার খাই, যে বিছানায় ঘুমাই। যখন কোন কিছু আপনার এই রুটিনকে ব্যাহত করে তখন আপনি অনিরাপদ বোধ করেন যা প্রশান্তির বিপরীত। বাড়িতে থাকলে আপনি প্রশান্তি অনুভব করেন এবং আপনার রুটিন যদি ব্যাহত হয় তবে আপনি অনিরাপদ বোধ করেন।
একজন মুজাহিদ এই রুটিন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। যে খাবার খান তা তার মা বা স্ত্রীর রান্না করা খাবার থেকে ভিন্ন, যে বিছানায় ঘুমান তা তেমন আরামদায়ক নয়, আবহাওয়া ভিন্ন হতে পারে এবং ঘুমানোর সময় পালটে যেতে পারে। এসব আপনাকে বাড়ি ফিরে যেতে ব্যকুল করে তোলে। যখন একজন আরব মুজাহিদ কাশ্মিরে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন তার কাছে সেখানকার খাবার খুব ঝাঁজালো মনে হয়। আবার একজন পাকিস্তানি মুজাহিদ যখন ইরাক বা অন্য কোথাও জিহাদে অংশগ্রহণ করেন তখন তার কাছে খাবার খুব নমনীয় মনে হয়, রুটিন পালটে যায়, তাপমাত্রাও পালটে যায়।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের কথা যদি চিন্তা করি যখন তিনি আরমেনিয়াতে জিহাদ করছিলেন, যদিও এ ব্যপারটি আরও অনেক সাহাবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি আরবে বড় হয়েছেন যেখানে আবহাওয়া খুব গরম, অথচ তিনি যুদ্ধ করছিলেন এমন এক জায়গায় যা কয়েক ফিট তুষারে ঢাকা থাকে। এই ধরণের রুটিন পরিবর্তন মেনে নেয়া কিন্তু সহজ নয় – এটা খুব বড় একটা ত্যাগ।
সম্ভবত একারণেই হজ্ব জিহাদের সাথে সম্পর্কিত। কিছু কিছু হাদিসে আপনি দেখবেন যে জিহাদ ও হজ্বের কথা একই হাদিসে এসেছে। যেমন – যখন আয়েশা (রা) রাসুল (স) কে জিজ্ঞেস করলেন যে পুরুষরা আপনার সাথে জামাআতে নামাজ পড়ে, আপনার সাথে জুম্মার নামাজ পড়ে, আপনার সাথে জিহাদে যোগদান করে, মহিলাদের ব্যপারে কী হবে? রাসুল (স) বললেন আপনাদের জিহাদ হচ্ছে হজ্ব।
কারণ একটু নিচের স্তরের হলেও হজ্বের সাথে জিহাদের কিছুটা সামঞ্জ্যশ্য আছে। হজ্বের জন্য আপনাকে ভ্রমণ করতে হয়, জিহাদেও অনেক ক্ষেত্রে ভ্রমণ করতে হয়। হজ্বে আপনার রুটিন পরিবর্তন হয়। যেমন – হজ্বের সময় ভিন্ন পোষাক পরিধান করতে হয়, তারপর আপনি হজ্ব চলাকালীন সময় নখ ও চুল কাটতে পারবেন না, সেখানকার খাবার ভিন্ন, মীনা ও আরাফায় ঘুমানোর ব্যবস্থা তেমন আরামদায়ক নয়, এরকম ভাবে আপনার রুটিন পালটে যায়। আপনাকে অনেক টাকাও খরচ করতে হয় কারণ হজ্ব বেশ ব্যয়বহুল। সুতরাং হজ্ব ও জিহাদের মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে যদিও জিহাদের ত্যাগ অনেক বড় মাপের ত্যাগ।
যদি আপনার বাসস্থানের প্রতি আপনার ভালবাসা আপনাকে আল্লাহর পথে জিহাদ থেকে দূরে রাখে, তাহলে তা প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়। তাবুক যুদ্ধের কথা যদি বলি, তাবুক প্রান্তরে যাওয়ার জন্য অনেক দূরের পথ পারি দিতে হয়েছিল, তখন উত্তপ্ত গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম, ফসল ঘরে তোলার সময় তখন। সবাই যখন ফসল ঘরে তোলার পরিকল্পনা করছিলেন রাসুল (স) তাদের বললেন যে আমাদের এখন রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। সুতরাং, তা ছিল খুবই বড় একটা ত্যাগ।
সেসময় একজন সাহাবা তার ঘরে গিয়ে দেখলেন যে তার স্ত্রী বাড়ির উঠান পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখেছে যাতে গরম কম লাগে। তখন তিনি তার আরেক ঘরে গিয়ে দেখলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রীও একই কাজ করেছে। ঘরের প্রতি টান তাকে যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত রাখল। যে তিনজন তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তিনি তাদের মধ্যে একজন যিনি ঘরের টানে যুদ্ধে যান নি।
যাদের এমন রুটিন পরিবর্তনের ব্যপারে অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন যে এ বিষয়টি এক সময় না এক সময় ঘরের প্রতি দুর্বল করে তুলবে। কোন কোন মুজাহিদ বাড়ি না ফিরে, তাদের পরিবারের কাছে ফিরে না গিয়ে বছরের পর বছর যুদ্ধের ময়দানে কাটিয়ে দেন। এতে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন। অতএব, একজন মুজাহিদের অন্যতম একটি গুণ হচ্ছে সবর।
শাইখ ইউসুফ আল উয়াইরি রহঃ এর একটি আলোচনা অবলম্বনে
Comment