💟 জঙ্গ, জঙ্গি ও জঙ্গিবাদের পরিচয় 💟
জঙ্গ (جنگ) এটি ফার্সী শব্দ, শব্দটি উর্দূতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এর অর্থ হলো যুদ্ধ বা যুদ্ধ করা, আর জঙ্গি বলা হয় সে ব্যক্তিকে যে যুদ্ধ করে তথা যুদ্ধাকেই জঙ্গি বলা হয় ।
👉 জঙ্গ (جنگ) শব্দটির আরবী প্রতিশব্দ হলো الحرب তথা যুদ্ধ করা, আর যে বা যারা الحرب তথা যুদ্ধ কর্মটির সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে حارب তথা যোদ্ধা বলা হয়। মু’জামুল অসিত গ্রন্থপ্রনেতা الحرب এর অর্থ লিখেছেন - الحرب القتال بين الفأتين তথা যুদ্ধ (الحرب) হলো দুটি দলের মাঝে সংঘটিত লড়াই৷ এখানে উল্লেখিত দুটি দলের প্রত্যেককেই الحارب তথা যোদ্ধা বলা হবে, দুটি দলের কোন একটিকে স্বতন্ত্রভাবে উগ্রবাদী বা চরমপন্থী বলা আদৌ উচিত হবেনা । অতএব কেউ যদি এমনটি করে থাকে বা করতে চায়, তবে সুস্থ বিবেক তাকেই Militant তথা উগ্র, চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করবে ।
➡প্রিয় পাঠক! মু’জামুল অসিত গ্রন্থপ্রণেতার ভাষ্যানুযায়ী একথাই সুস্পষ্ট হয় যে জঙ্গ (جنگ) এর অর্থ القتال তথা যুদ্ধ, লড়াই । এবং জঙ্গি (جنگی ) এর অর্থ হলো المقاتل তথা যোদ্ধা, লড়াইকারী। এবং জঙ্গিদের জামাত বা দলকে যোদ্ধাদের দল বলা হবে ।
💟 আসুন জেনে নেই জঙ্গ (جنگ) এর ইংরেজী প্রতিশব্দ 💟
জঙ্গ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ হলো War তথা যুদ্ধ বা যুদ্ধ করা। এবং এর (War) সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে (Warrior) যোদ্ধা বলা হয় । প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সকল অমুসলিম, কুফুরবাদীরা ও তথাকথিত মুসলিম নামধারি, মুশরিকদের সমর্থনকারীরা জঙ্গ (جنگ) তথা যুদ্ধ শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ হিসেবে Militancy তথা উগ্রতা এবং জঙ্গি (جنگ)তথা যোদ্ধা শব্দটির প্রতিশব্দ হিসাবে Militant তথা উগ্র অর্থে ব্যবহার ও প্রচার করে থাকে । নিঃসন্দেহে তাদের এ-প্রতিশব্দ গ্রহন কখনোই বিশুদ্ধ হতে পারেনা, কেননা অভিধান তাদের এ কথার অসত্যতা ও অসারতা প্রমাণ করেছে। যারা এমনটি করে থাকে, তারা মুসলমানদের পবিত্র হৃদয় থেকে পবিত্র জিহাদের ভালবাসাকে মুছে ফেলার জন্য পরোক্ষভাবে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে ।
🌹প্রিয় পাঠক! আপনি গভীরভাবে লক্ষ করুন! উর্দূ অভিধানগুলো জঙ্গ (جنگ)শব্দটিকে لڑائ کرنا যুদ্ধ করা অর্থে ব্যবহার করেছে। এবং আরবী অভিধানগুলোতে জঙ্গ (جنگ) এর প্রতিশব্দ হিসেবে الحرب (যুদ্ধ করা) القتال (লড়াই করা) শব্দদ্বয়কে নির্বাচন করা হয়েছে । উগ্রতা, উগ্র, উগ্রপন্থা, উগ্রবাদ ও উগ্রবাদীতা এসব অর্থে কোন অভিধানই জঙ্গ (جنگ) শব্দটিকে ব্যবহার করেনি । অবএব, কোন শব্দকে তার প্রকৃত অর্থ থেকে বিকৃতিসাধন করে বিকৃত অর্থকে প্রচার করে সাধারন জনমনে দ্বিধা-দ্বন্দ সৃষ্টি করা “মতলব” খারাপ হওয়া ছাড়া কখনোই ভাল হতে পারেনা ।
🌿আমি প্রিয় পাঠকবৃন্দকে অনুরোধ করবো, আরবী-ইংরেজী অভিধানগুলো খুলে দেখুন! সেখানে উগ্রতা, উগ্র, উগ্রবাদ, উগ্রবাদী এসকল অর্থ প্রকাশ করার জন্য স্বতন্ত্র শব্দ রয়েছে ।
আরবী
বাংলা
ইংরেজী
تَطَرُّفٌ- شدَّةٌ
উগ্রতা, উগ্রপন্থা
Extremity, militancy
تَطَرُّفىٌّ- شَديْدٌ
উগ্র, উগ্রপন্থী
Extreme, militant
تَطَرُّفيَّةٌ
উগ্রবাদ
extremism
تَطَرُّفىٌّ - مُتَطَرّفٌ
উগ্রবাদী
extremist
إرْهَابىٌّ
সন্ত্রাসবাদী
Militants, terrorist
🌿আশা করি সম্মানিত পাঠকবৃন্দ উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে “জঙ্গ, জঙ্গি, জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদী” এগুলোর সাথে “উগ্রতা, উগ্র, উগ্রবাদ ও উগ্রবাদী” এর কোনও সম্পর্ক নেই এবং দুইটি পৃথক পৃথক ভিন্ন দুটি বিষয়, তা অনুধাবন করতে পেরেছেন ।
🌹প্রিয় পাঠক! আসুন এবার আমরা ফারসী অভিধান থেকে উগ্রতা, উগ্র, উগ্রবাদ ও উগ্রবাদী এর জন্য সুনির্দিষ্ট শব্দগুলো জেনে নিই ।
“উগ্রতার” ফারসী প্রতিশব্দ হলো- شدت - انتھا এবং এ ফারসী ভাষায় “উগ্র” শব্দটিকে প্রকাশ করা হয় مفرط শব্দটি দ্বারা । আর ফারসীতে “উগ্রবাদকে” বলা হয় افراط کاری এবং উগ্রবাদীর জন্য ব্যবহার করা হয় مفرط শব্দটিকে ।
🌿বড় আশ্চর্য হলেও সত্য! সমগ্র কুফুরী বিশ্ব যে ফারসী শব্দটির (জঙ্গ, জঙ্গি) মাধ্যমে আজকে মুজাহিদীনদের পবিত্র কায়ে উগ্রতার মতো অপবিত্র দোষ নিক্ষেপ করার প্রয়াস চালাচ্ছে, স্বয়ং ফারসী অভিধানই তাদের এই মিথ্যাচারকে তাদের গায়ে লেপন করে দিয়েছে । ফলশ্রুতিতে তারা তাদের উগ্রতায় ঘুরপাক খাচ্ছে । আর প্রতিনিয়তই নিজেদের ধ্বংসের দুয়ার ব্যপক পরিমাণে উন্মুক্ত করছে । ইনশাআল্লাহ! অচিরেই আল্লাহ তা’আলা মুজাহিদীনদের হাতে তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বেন । (আমীন)
💟 আসুন আরেকটু জেনে নিই 💟
প্রিয় পাঠক! যদি আমরা ফারসী-আরবী অভিধানের দিকে তাকাই, তবে দেখতে পাই জঙ্গ( جنگ) শব্দটিকে الحرب – القتال তথা যুদ্ধ করা, লড়াই করা দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে । আর যদি আমরা লক্ষ করি ফারসী-উর্দূ অভিধানের দিকে, তবে পরিলক্ষিত হয় সেখানে জঙ্গ (جنگ) শব্দটিকে পরিচয় করানো হয়েছে لڑائ کرنا তথা যুদ্ধ করা দ্বারা । আর যদি আমরা ফারসী-ইংরেজী অভিধারেন দিকে তাকাই, তবে সেখানে ( جنگ) শব্দটিকে war তথা যুদ্ধ করা দ্বারা প্রকাশ করতে দেখতে পাই ।
🌹প্রিয় পাঠক! জঙ্গ (جنگ) শব্দটির অর্থ কোন অভিধানেই আমরা উগ্রবাদ, উগ্রতার অর্থে পাইনি । সুতরাং যে সমস্থ লোক আজকে কুফুরী মিডিয়ার প্রপাগান্ডায় পড়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলছেন তারা কাদের বুলি নিজের মুখে আওড়াচ্ছেন একটু ভেবে দেখেছেন কি ? ঈমানের পথ বড়ই পিচ্ছিল । এপথে চলতে গেলে অবশ্যই আপনাকে, আমাকে প্রতিটি কদম বুঝে-শুনে ফেলতে হবে । যেন, পিছলে পড়ে ঈমান বিনষ্ট না হয়ে যায় । আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সকল চক্রান্তবাজের চক্রান্ত হতে হিফাযত করুন । আমীন!!
💟 জঙ্গ ও জঙ্গি এবং জঙ্গিবাদ শব্দগুলো যাদের উপর প্রয়োগ করা হয় 💟
প্রিয় পাঠক! পূর্বোল্লিখিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে জঙ্গ, জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ শব্দগুলো ব্যপক । ব্যপকভাবেই তা যুদ্ধরত সকল দলের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায় । কোন কোন ক্ষেত্রে عرف তথা প্রচলনের ভিত্তিতে একটি ব্যপক শব্দ নির্দিষ্ট শব্দে রূপান্তরিত হয়ে যায়, আর এমনটিই ঘটেছে এ জঙ্গ, জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ শব্দগুলোর ক্ষেত্রে ।
🌿কেননা আমেরিকা, রাশিয়া, কোরিয়া, ফ্রান্স, জাপান, চীন, ইন্ডিয়া এবং পৃথিবীর অন্যান্য কুফুরী রাষ্ট্রের অমুসলিম হিংস্র হায়েনারা যখন নিরপরাধ, নিরস্ত্র ও অসহায় মুসলমানদের উপর কিংবা অন্যান্য দূর্বল জনতার উপর অন্যায় ও অমানবিকভাবে ঝাপিয়ে পড়ে অস্ত্রের বাহাদুরী প্রকাশের জন্য অবাধ হত্যাযজ্ঞের ষ্টীমরোলার চালাতে থাকে, তখন তাদের এই হীন কর্মকান্ডকে জঙ্গিবাদ বলা হয় না । বরং তখন তাদেরকে দেওয়া হয় আর্শিবাদ আর ধন্যবাদ । কিন্তু যখনই ইসলামের মর্দে মুজাহিদীনরা দ্বীন ও ইসলামের স্বার্থে, এসকল তাগুতী কুকুর সেনাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং মানুষকে মানুষের দাসত্ব হতে মুক্ত করে এক আল্লাহর গোলামে পরিণত করার চেষ্টা করে, তখনই তাদেরকে জঙ্গি বলা হয় । বেশ বলো! আরো বলতে থাকো!! এ শব্দ আমাদের জন্য বেমানান নয়!
🌿 কেননা, এ উম্মতের নবী ছিলেন نبي الملحمة তথা প্রচন্ড যুদ্ধবাজ নবী । তিনি ছিলেন نبي السيف তথা তরবারিধারী নবী । রব্বে যুল-জালালের কসম! ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলান! সকল অমুসলিম কাফেররা ও সমগ্র বিশ্ব অতিতেও জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ দ্বারা মুজাহিদীন ও তাদের কর্মকান্ডকেই উদ্দেশ্য করেছে । আজও তাই করা হচ্ছে । এবং অবস্থা দৃষ্টে বুঝা যায়, ভবিষ্যতেও মুজাহিদীনদেরকে এ জঙ্গি শব্দ দ্বারাই পরিচয় করানোর কাজটা কুফুরী মিডিয়াগুলো আঞ্জাম দিতে থাকবে ।
👉 অত এব এরপরও যারা জেনে-শুনে অস্বীকার করেন যে, ইসলামে জঙ্গিবাদ তথা যুদ্ধ-জিহাদের মতাদর্শ নেই, তবে তারা যেন তাদের ঈমানকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক প্রদত্ত ঈমানের মাপকাঠি দ্বারা মেপে নেন ।
💟 জঙ্গিবাদ বলতে আপনি যা বুঝবেন! 💟
জঙ্গিবাদ দ্বারা তাদের মতবাদ, কর্মপন্থা ও কর্মকান্ডকে বুঝায় । এক কথায় আমরা তাদের কর্মোদ্দেশ্য বলতে পারি । প্রিয় পাঠক! আপনি একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি! সুতরাং আপনি হাঁ কিংবা না বলার পূর্বে জেনে নিন, তাঁদের কর্মোদ্দেশ্য কি ? বর্তমান প্রচলিত অর্থে জঙ্গিগোষ্ঠি এবং প্রকৃতার্থে মুজাহিদীনদের কর্মোদ্দেশ্য হলো, সকল ফিৎনা তথা কুফর, শিরক, নিফাক, বিদআত ও সমস্ত পাপাচার নির্মূল হওয়া পর্যন্ত, এবং আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জন্য পূর্নাঙ্গরূপে হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ-জিহাদ করতে থাকা । যেমনটি রব্বুল আলামিন পবিত্র কালামুল্লায় এরশাদ করেছেন-
. وقاتلوهم حتي لا تكون فتنة ويكون الدين كله لله🌿
আর তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। (সূরা আনফাল-৩৯)
⬇➡জঙ্গিদেরকে নিয়ে কেন এতো মাথা ব্যথা?⬅⬆
প্রিয় পাঠক! বাস্তব কথা হলো এই যে, "যখন বিশ্ব কুফ্ফার গোষ্ঠী" বুঝতে পারলো, সুনিশ্চিতভাবে এসকল মুজাহিদীনের হাতেই তাদের কফুরবাদী সাম্রাজ্য ও সকল অনৈতিকতা, অরাজকত এবং সকল অপশাসন ও শোষণের পতন ঘটবে, তখনই তারা নিজেদের নৈরাজ্যতা ও কফুরী সাম্রাজ্যের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে, উম্মতে মুসলিমার এসকল শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পেছনে মাথা ঘামিয়ে "চান্দি" গরম করে ফেলেছে। কিন্তু "আলহামদুলিল্লাহ" তারা না মুজাহিদীনদের কোন ক্ষতি করতে পেরেছে আর না ইসলামের কোন ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে!
🌿অতীতে সুপার পাওয়ার রাশিয়া "লাল কুত্তার বাহিনীর" আর চলমান সময়ের সুপার পাওয়ার আমেরিকার "দালাল বাহিনীর" কোমড়টা উম্মতে মুসলিমার সূর্য সন্তানেরা এমনভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে যে, কিয়ামত পর্যন্ত এসকল "কুফ্ফার দালাল বাহিনী" সোঁজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ!!
Comment