Announcement

Collapse
No announcement yet.

হে বালয়াম বায়ূরার মুরিদগণ।

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হে বালয়াম বায়ূরার মুরিদগণ।

    একদিন এ দুনিয়ার সবকিছুই ধ্বঃস হয়ে যাবে। সত্যিকার অর্থেই ধ্বঃস হয়ে যাবে। রূপক অর্থে নয়। যেমনটি আমরা মৃত্যুর ক্ষেত্রে বলে থাকি। কারণ কোরআন ও হাদিসে রূপকয়ার্থে মৃত্যুকে কিয়ামত বলা হয়েছে। যা হাদিসের ভাষায় কিয়ামতে সূগরাও বটে। এইযে রূপক অর্থ, একদিন আর এই রূপক অর্থের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। তখন বাস্তবতার ব্যস ব্যসার্ধই শুধু আমাদের সামনে থাকবে। চোখ খুলে শুধু সত্য আর বাস্তবতাকেই উপলব্ধি করতে পারব আমরা। যখন সত্যিকার কিয়ামতই আমাদের উপর সংগঠিত হবে। যে কিয়ামতের ভয়াবহতার অনেক কথাই আমরা কুরআন-হাদিস থেকে জেনেছি। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে জোরাল আলোচনা করেছেন। যা আমরা একটু কষ্ট করে কুরআনুল কারীম থেকে জেনে নিতে পারি। এখানে কিয়ামতের ভয়াবহতা নিয়ে কোন কিছু লেখা আমার উদ্দেশ্য নয়। এখনে আমি কিয়ামতের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’চারটে বিষয় লিখব। ইনশাল্লাহ
    এখানে প্রারম্ভিকতা হিসেবে আমরা একটি বিষয় জেনে নিতে পারি। আর তা হলো, আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে নিজ সত্তার যে পরিচয় আমাদের সামনে তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি তার যেসব গুণকীর্তন আমাদেরকে শুনিয়েছেন। তন্মদ্ধে তাঁর গুরুত্বপূ্র্ণ একটি গুণ হলো:
    وهو سريع الحساب
    অর্থ: তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
    এর তাফসিরে মুফাসসিরীনগণ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা অতিদ্রুত হিসাব গ্রহণ করার অর্থ হলো, তিনি দুনিয়ার সময়ের হিসাবে ফজরের নামাজের পরবর্তী সময় হতে ধরে জুহুরের নামাজের পূর্বেই সমস্ত মানবজাতি ও জ্বিনজাতির হিসাব-নিকাসের কাজ সমাপ্ত করে ফেলবেন। অতপর জুহুরের পরবর্তী সময়ে দুনিয়ার ন্যায় জান্নাতেও জান্নাতিগণ দ্বিপ্রহরের খাবার-দাবার শেষ করার পর তারা হালকা সময় বিশ্রাম করবেন। হাদিসের ভাষায় যে কাজটিকে আমরা ক্বাইলুলা বলে থাকি।
    তো এখানে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন জাগে। আর তা হলো, “এতো অল্প সময়েই যদি আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হিসাব-নিকাসের কাজ শেষ করে দেন তাহলে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ হাজার বছর কেন মানবজাতিকে হাশরের ময়দানে দন্ডায়মান থাকতে হবে?
    উক্ত প্রশ্নের অতি সাধারণ একটি উত্তর এটিও হতে পারে যে, কিয়ামতের ঘটনা শুধু মানবজাতির হিসাব-নিকাসের সাথেই সম্পৃক্ত নয়। বরং কিয়ামতের বিষয়টি আরো অনেক বিষয়াবলীর সাথে সম্পৃক্ত। কিয়ামতের বিষয়টি যেসব ঘটনাবলী ও বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ত তন্মদ্ধে এটিও একটি বিষয় যে, রোজ-কিয়ামতের দিনটি হলো মানবজাতির জন্যে অনুতাপ-অনুসূচনার দিন। সকল সৃষ্টিকূলের সামনে মানবজাতির অপমান ও লাঞ্ছনার দিন। প্রকৃত সত্যবাদী আর মিথ্যাবাদীদের আসল পরিচয় পর্বের দিন। সেদিন মানবজাতিকে পদে পদে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হবে। সেদিন আল্লাহ তায়ালা আসল হতে নকলকে পৃথক করে দিবেন। নকলকে আসল হতে আলাদা করে ফেলবেন। উক্ত মানদন্ডের আলোকে মুমিন ও মুসলিমদের প্রতিটা শ্রেণী ও বিভাগেই আল্লাহ তায়ালা ন্যায় ইনসাফপূর্ণ ফায়সালা প্রতিষ্ঠা করবেন। যার বিবরণ আমরা কুরআন-হাদিসের প্রতিনিয়তই দেখতে পাই।
    কিয়ামতের দিন যেসব কারণে একজন মুমিন ও মুসলিমকে সমগ্র হাশরবাসীর সামনে অপমানিত হতে হবে সেগুলোর অন্যতম একটি দিক হলো, নবী মুহাম্মাদুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুক্ত হস্তে হাউজে কাউসারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পানির মেহমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়া। কারণ কুরআন হাদিসের আলোকে যা আমরা বলতে পারি তা হলো, রোজ-কিয়ামতের ময়দানে প্রতিটি বনী-আদম পিপাসায় কাতড়াবে। তৃষ্ণায় চটপট করবে। তখন তারা পিপাসার তীব্রতা মেটানোর জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাউজে কাউসারের কাছে সমভেত হবে। তখন অনেকেই যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুক্ত হস্তে পানি পান করে ধন্য হবেন ঠিক তদ্ররূপ অনেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে পানি পান করতে এসে বিতাড়িত হবেন।
    এখন আমি তাদেরই একটি শ্রেণীর আলোচনা করছি। যারা হাশরের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে পানি পান করতে দাঁড়িয়ে অবশেষে বিতাড়িত হবেন। সকল হাশরবাসীর সামনে অপমানিত হয়ে ফিরে যাবেন। নিন্মোক্ত হাদিসে আলোচ্য শ্রেণীটির বিবরণ এসেছে।
    হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাযি: বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
    أعيذك بالله يا كعب بن عجرة من أمراء يكونون من بعدي فمن غشي أبوابهم فصدقهم في كذبهم ، وأعانهم على ظلمهم فليس مني و لست منه و لا يرد علىّ الحوض ، ومن غشي أبوابهم أو لم يغش فلم يصدقهم في كذبهم و لم يعنهم على ظلمهم فهو منى وأنا منه وسيرد علىَ الحوض يا كعب بن عجرة!
    “হে কাব ইবনে উজরাহ আমি আমার পরে নেতাদের হতে তোমার জন্যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। যে কেউ তাদের কাছে যাবে তাদের অত্যাচার-অনাচারে তাদেরকে সাহায্য করবে, তাদের মিথ্যা কথাকে সত্যায়ন করবে, সে আমার থেকে নয় আমিও তার থেকে নই। আর সে হাউজে কাউছারে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যে কেউ তাদের কাছে যাবে অথবা না যাবে, তাদের অন্যায়-অনাচারে তাদেরকে সাহায্য করবে না, তাদের মিথ্যা দাবীসমূহে তাদেরকে সত্যায়ন ও সমর্থন করবে না। সে আমার থেকে আর আমিও তার থেকে। সে হাউজে কাউছারে প্রবেশ করবে, হে কাব ইবনে উজরাহ!
    (সুনানে তিরমিজি-৫৫৮, তাবারানী-২১২)
    উক্ত হাদিসের শাব্দিক অর্থ জানার পর আমরা প্রথমত যে বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করবো তা হলো, উল্লিখিত হাদিসটি কোন শ্রেণী-পেশার লোকদের সাথে সম্পৃক্ত। আলোচ্য হাদিসটি খুব স্বাভাবিকভাবেই সকল উম্মতকে সম্মোধন করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। যদ্দোরুন এটিই বলা শ্রেয় যে, উম্মতে মুহাম্মদীর কোনো সাধারণ ফরদও উক্ত হাদিসের সম্মোধনের বাহিরে নয়। কিন্তু উক্ত হাদিসের সাথে বিষয়বস্তুর দিক থেকে মিল রাখা অন্যান্য হাদিসসমূহের প্রতিও যদি আমরা নজর দেই তাহলে সর্ব প্রকার দ্বিধা সংকোচ জেড়ে ফেলে চেতা কন্ঠে এ কথা আমরা বলতে পারবো যে, উল্লিখিত হাদিস অর্থাৎ হযরত কাব বিন উজরাহ রাযি: এর হাদিস ও এ সংক্রান্ত অন্য সকল হাদিসগুলোতে উলামায়ে কেরামকে বিশেষভাবে সম্মোধন করা হয়েছে।
    তাছাড়া হযরত কাব বিন উজরাহ বাযি: এর হাদিস ছাড়াও এ সংক্রান্ত আরো বহুহাদিসে সরাসরি কড়াকড়িভাবে উলামায়ে কেরামকেই সম্মোধন করা হয়েছে। হাদিসসমূহে উলামায়ে কেরামকে সম্মোধন করে বলা হয়েছে, যেন তারা রাজা-বাদশাহ, সরকার ও এমপি মন্ত্রীদের নিকট যাতায়াত না করে। তাদের সাথে বন্ধুত্ব ও হৃদ্রতার সম্পর্ক এড়িয়ে চলে। শুধু এ জন্যেই যে, এতে একজন আলেমের দ্বীন ও ইমান ফেতনায় পড়ার আশঙ্খা বিদ্যমান।
    কিন্তু আজ খুব আক্ষেপ ও আফসোসের সাথেই বলতে হয়। আমাদের উলামায়ে কেরামগণ কেমন যেন হাদিসের এসব শিক্ষা ও সুন্নাহ বে-মালুম ভুলে গিয়েছেন। কিংবা অনেকাংশে এসবের বিপরীত কিছুকেই আদর্শ ও অনুসরণ যোগ্য বলে প্রতিনিয়তই গলধগরণ করছেন। শুধু মাত্র নিজেদের হীন স্বার্থের জন্যেই তারা আজ এমনও অনেক দুর্নীতিবাজ, জুলুমবাজ, আল্লাহদ্রহী মুরতাদ শাসক গোষ্ঠীর গোলামী করছেন। যাদের কর্মকান্ডে খোদ শয়তানও আজ লজ্জায় লোক চক্ষুর আড়ালে গা ঢাকা দেয়।
    অতচ সালাফের জীবন চরিত্র আমাদের জন্যে কত উজ্জ্বল। খোদ ইমাম আজম আবু হানিফা রহ: এর কথা আমরা স্মরণ করি। তিনি উম্মতের মধ্যে কেমন সম্মান ও ইজ্জতের অধিকারী ছিলেন। তিনি আমাদের জন্যে যে দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন পৃথিবীর সকল মুসলমানও যদি তার শ্রেষ্ঠত্ব ভুলে যায়, তার কোরবানীকে ভুলে যায়, জালিমের বিরোদ্ধে প্রদান করা তার কালজয়ী সেই ফতুয়া ও পদক্ষেপের কথাও যদি আমরা ভুলে যায়। তবোও আল্লাহর ফেরেস্তাকুল তাকে ও তার সেসব পদক্ষেপকে ভুলবে না।
    কত লজ্জার কথা, যে সরকার বা রাষ্টনায়ক মানবরচিত মতবাদে বিশ্বাসী। আল্লাহর আইনের বিরোদ্ধে অবস্থান গ্রহণ কারী। আল্লাহর শরীয়াকে আস্তাবলে পরিণত কারী। আল্লাহর ইচ্ছা অভিপায়কে বাগাড়ে নিক্ষেপ কারী। ইমান ও মুমিনের গুরতর শত্রু। আল্লাহর নবীর দুশমন। যার কৃতকর্মের বদলা স্বরূপ সময় ও সযোগে তার গর্দান দেহ থেকে বিচ্চিন্ন করা মহান আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরিযাহ। অতচ সে সকল সরকার ও রাষ্টনায়কদেরকেই আজ আমরা আমাদের বড় আপন জনের খেতাবে ভূষিত করছি। তাদেরকে আমাদের জননী বলে আখ্যায়িত করছি। অতচ এই জননীরাই আজ পৃথিবীর পুরো উঠান-আঙ্গিনায় প্রতিনিয়তই নাস্তিক বৈইমান প্রশ্রব করছে। যাদের বুকের দুগ্ধপান কারী কুকুর ও শৃগালগুলো বহুকাল আগেই ইসলামের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে মুসলমানদের পায়ের নিচের মাটি সরিয়ে ফেলতে একযোগ হয়ে কাজ করছে।
    যাক এখানে আর একটি বিষয় বলে রাখি, হে বালয়াম বায়ূরার মুখলিস মুরিদগণ। তোমরা শুনে রেখো। তোমাদের কাছ হতে অপেক্ষার অনেক বেশীই আজ আমরা পেয়ে ফেলেছি। এখন তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পার। ففروا الى الله.
Working...
X