ইমাম বুখারী ও মুসলিম আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণণা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যে আল্লাহর রাস্তায় দুটি জিনিষ দান করবে তাকে জান্নাতের সব দরজার প্রহরীরা ডেকে বলবে, হে অমুক, এ দরজা দিয়ে আসো। আবু বকর রাযি. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, (যাকে সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে) তার তো কোন ক্ষতি হতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আশাবাদী, *তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -সহিহ বুখারী, ২৮৪১, সহিহ মুসলিম, ১০২৭
সহিহ বুখারীর অপর বর্ণণায় এভাবে এসেছে,
এই বর্ণণা হতে বুঝা যায়, যে কোন জিনিষ হতে এক জোড়া অর্থাৎ দুটি জিনিষ জিহাদে দান করার দ্বারাই হাদিসে বর্ণিত মহান ফযীলতটি লাভ করা যাবে, চাই তা দুই দিনার, দুই দিরহাম, দুটি ঘোড়া, দুটি তলোয়ার, যাই হোক, (বর্তমান যমানা হিসেবে এক টাকার দুটি কয়েন বা দুই টাকার দুটি নোট সদকা করেও এই ফযীলত লাভ করা যাবে।
ইমাম মুহাল্লাব মালেকী বলেন,
في هذا الحديث أن الجهاد أفضل الأعمال، لأن المجاهد يعطي أجر المصلى والصائم والمتصدق وإن لم يفعل ذلك، لأن باب الريان للصائمين، وقد ذكر في هذا الحديث أن المجاهد يدعى من تلك الأبواب كلها بإنفاق قليل المال في سبيل الله. فتح الباري: 6/49 ط. دار الفكر، مصور عن الطبعة السلفية)
এই হাদিস থেকে বুঝে আসে, জিহাদ সর্বোত্তম আমল, কেননা মুজাহিদকে (নফল) নামায, রোযা ও দানের সওয়াব দেওয়া হয়, যদিও সে এগুলো না করে, কেননা রাইয়ান দরজাটি রোযাদারদের জন্য, কিন্তু এই হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে জিহাদে সামান্য দানের কল্যাণেই মুজাহিদকে জান্নাতের সব দরজা থেকে ডাকা হবে। -ফাতহুল বারী, ৬/৪৯
তাই আমাদের সকলেরই জিহাদে দানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, বেশি দান করতে না পারার কারণে দানের ব্যাপারে অবহেলা করা এবং কিছু্ই দান না করা নিতান্তই মাহরুমির কারণ। যারা ইখলাসের সাথে সামান্য দান করে আল্লাহ ও তার রাসূল তাদের প্রশংসা করেছেন, ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন,
আল্লাহ তায়ালা যখন আমাদেরকে সদকার আদেশ করেন, তখন আমরা কুলিগিরি করে সদকা করতাম, একদিন আবু আকীল আধা সা’ পরিমান খেজুর নিয়ে আসেন, অপর ব্যক্তি অনেক সদকা নিয়ে আসে, তখন মুনাফিকরা বলে, আল্লাহ তায়ালার আবু আকীলের (সামান্য) সদকার প্রয়োজন নেই, আর এ তো লোক দেখানোর জন্য (অনেক) সদকা করেছে, তখন এই আয়াত নাযিল হয়, মুমিনদের মধ্যে হতে যারা নফল সদকা করে, এবং যারা নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সামান্য দান করে, (মুনাফিকরা) তাদের সমালোচনা করে, (তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে ঠাট্টা করেন, এবং তাদের জন্য রয়েছে, কঠোর শাস্তি)। -সহিহ বুখারী, ৪৬৬৮ সহিহ মুসলিম, ১০১৮
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
এক দিরহাম দান করে লাখো দিরহাম দান করার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিভাবে? রাসূল বললেন, এক ব্যক্তির দুটি দিরহাম ছিল সে তার একটি দান করলো, অপর ব্যক্তি তার রাশি রাশি মাল থেকে এক লাখ দিরহাম দান করলো।-সুনানে নাসায়ী, ২৫২৭ মুসনাদে আহমদ, ৮৯২৮ সহিহ ইবনে খুযাইমা, ২৪৪৩ সহিহ ইবনে হিব্বান, ৩৩৪৭ মুস্তাদরাকে হাকেম, ১৫১৯ হাফেয যাহাবী ও শায়েখ শুয়াইব আরনাউত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
অর্থাৎ যে দুই দিরহামের একটি দান করেছে সে তার অর্ধেক সম্পদ দান করেছে, আর যে এক লাখ দিরহাম দান করেছে সে তার সম্পদের অর্ধেকের চেয়েও অনেক কম দান করেছে, তাই এক দিরহাম দান কারী লাখো দিরহাম দানকারীর চেয়েও বেশি সওয়াব পাবে। [/color]
সুনানে নাসায়ীর টীকায় আল্লামা সিন্দী রহ. বলেন,
এ ধরণের হাদিস থেকে বুঝে আসে, সওয়াব দেওয়া হবে দাতার অবস্থা অনুযায়ী, দানের পরিমাণ অনুযায়ী নয়। যে দুই দিরহামের একটি দান করেছে সে তার অর্ধেক সম্পদ দান করেছে, আর যে এক লাখ দিরহাম দান করেছে সে তার সম্পদের অর্ধেকের চেয়েও অনেক কম দান করেছে, তাই এক দিরহাম দান কারী লাখো দিরহাম দানকারীর চেয়েও বেশি সওয়াব পাবে।
অপর হাদিসে এসেছে,
তিন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো, তাদের একজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমার একশো দিনার ছিল, আমি তা হতে দশ দিনার দান করেছি। আরেকজন বললো, আমার দশ দিনার ছিল, আমি তা হতে একদিনার দান করেছি। তৃতীয়জন বললো, আমার একদিনার ছিল, আমি তার একদশমাংশ দান করেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের সকলে সমান সওয়াব পাবে, তোমরা সবাই তার সম্পদের একদশমাংশ দান করেছো। -মুসনাদে আহমদ, ৭৪২ এ হাদিসটির সনদ যয়ীফ, তবে যয়ীফ হাদিস দিয়ে অন্য হাদিসের ব্যাখা করা যায় । দেখুন আছারুর হাদিসিশ শরিফ, শায়েখ আওয়ামা, পৃ: ৪০
আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, কোন সদকা উত্তম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দরিদ্র ব্যক্তির সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা। -সুনানে নাসায়ী, ২৫২৬, সুনানে আবু দাউদ, ১৪৪৯ শায়েখ আহমদ শাকের ও শুয়াইব আরনাউত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
আমরা অনেকে হয়তো সাধ্যমত দানের প্রতি অবহেলা করি এই ভেবে যে, এই সামান্য দানে কি হবে, যেখানে একটি সাধারণ ক্লাশিনকোভের মূল্য লাখখানি টাকা? কিন্তু এই চিন্তাও ঠিক নয়। আসলে আমরা সবাই আল্লাহর তায়ালার কুদরতের আবরণ মাত্র। কাফেরদের শাস্তি তো আল্লাহ তায়ালা নিজেই দেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাদের পরীক্ষা করার জন্য আমাদের জানমাল দিয়ে জিহাদ করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
কাফেররা যেন ধারণা না করে না যে তারা (আল্লাহর হাত থেকে) পালিয়ে বাঁচবে, বস্তুত তারা কখনোই আল্লাহ তায়ালাকে পরাস্ত করতে পারবে না, (নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পাকড়াও করবেন এবং শাস্তি দিবেন) আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন তোমরা এর দ্বারা ভীতী সঞ্চার করতে পারো আল্লাহর শত্রু এবং তোমাদের শত্রুদের অন্তরে। আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের অন্তরে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ্ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের উপর কোন জুলুম করা হবে না। -সূরা আনফাল, ৫৯-৬০
দেখুন, এখানে আল্লাহ তায়ালা বলছেন যে, কাফেররা তার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেনই। তবে যেহেতু দুনিয়া দারুল আসবাব, আল্লাহর তায়ালার রীতী হলো আসবাব-উপকরণ গ্রহণ না করলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে কোন কিছু দেন না, তাই আমাদের দ্বায়িত্ব হলো আমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি অর্জন করা এবং জিহাদের উপকরণ অর্থাৎ ঘোড়া-অস্ত্রসস্ত্র ইত্যাদি যোগাড় করা। যদি আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি অর্জন করি এবং জিহাদের অস্ত্রসস্ত্রের যোগান দেওয়ার জন্য সাধ্যমত দান করি তাহলে আল্লাহ তায়ালাই গায়েব হতে বাকী সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিবেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমরা জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য যা কিছুই দান করবো (কম হোক বা বেশি) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার প্রতিদান দান করবেন। দুনিয়াতে গণিমত লাভের মাধ্যমে আর আখেরাতে সাওয়াব ও জান্নাতের মাধ্যমে।
সুতরাং আমার দান কম না বেশি তা মূল কথা নয়, বরং মূল বিষয় হলো, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী দান করলাম কি না? আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জিহাদের জন্য বেশি বেশি দান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
«من أنفق زوجين في سبيل الله، دعاه خزنة الجنة، كل خزنة باب: أي فل هلم، قال أبو بكر: يا رسول الله، ذاك الذي لا توى عليه، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: إني لأرجو أن تكون منهم». صحيح البخاري: (2841) صحيح مسلم: (1027)
যে আল্লাহর রাস্তায় দুটি জিনিষ দান করবে তাকে জান্নাতের সব দরজার প্রহরীরা ডেকে বলবে, হে অমুক, এ দরজা দিয়ে আসো। আবু বকর রাযি. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, (যাকে সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে) তার তো কোন ক্ষতি হতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আশাবাদী, *তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -সহিহ বুখারী, ২৮৪১, সহিহ মুসলিম, ১০২৭
সহিহ বুখারীর অপর বর্ণণায় এভাবে এসেছে,
من أنفق زوجين من شيء من الأشياء في سبيل الله
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যে কোন জিনিষ হতে এক জোড়া ব্যয় করবে’ -সহিহ বুখারী, ৩৬৬৬এই বর্ণণা হতে বুঝা যায়, যে কোন জিনিষ হতে এক জোড়া অর্থাৎ দুটি জিনিষ জিহাদে দান করার দ্বারাই হাদিসে বর্ণিত মহান ফযীলতটি লাভ করা যাবে, চাই তা দুই দিনার, দুই দিরহাম, দুটি ঘোড়া, দুটি তলোয়ার, যাই হোক, (বর্তমান যমানা হিসেবে এক টাকার দুটি কয়েন বা দুই টাকার দুটি নোট সদকা করেও এই ফযীলত লাভ করা যাবে।
ইমাম মুহাল্লাব মালেকী বলেন,
في هذا الحديث أن الجهاد أفضل الأعمال، لأن المجاهد يعطي أجر المصلى والصائم والمتصدق وإن لم يفعل ذلك، لأن باب الريان للصائمين، وقد ذكر في هذا الحديث أن المجاهد يدعى من تلك الأبواب كلها بإنفاق قليل المال في سبيل الله. فتح الباري: 6/49 ط. دار الفكر، مصور عن الطبعة السلفية)
এই হাদিস থেকে বুঝে আসে, জিহাদ সর্বোত্তম আমল, কেননা মুজাহিদকে (নফল) নামায, রোযা ও দানের সওয়াব দেওয়া হয়, যদিও সে এগুলো না করে, কেননা রাইয়ান দরজাটি রোযাদারদের জন্য, কিন্তু এই হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে জিহাদে সামান্য দানের কল্যাণেই মুজাহিদকে জান্নাতের সব দরজা থেকে ডাকা হবে। -ফাতহুল বারী, ৬/৪৯
তাই আমাদের সকলেরই জিহাদে দানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, বেশি দান করতে না পারার কারণে দানের ব্যাপারে অবহেলা করা এবং কিছু্ই দান না করা নিতান্তই মাহরুমির কারণ। যারা ইখলাসের সাথে সামান্য দান করে আল্লাহ ও তার রাসূল তাদের প্রশংসা করেছেন, ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন,
لما أمرنا بالصدقة كنا نتحامل، فجاء أبو عقيل بنصف صاع، وجاء إنسان بأكثر منه، فقال المنافقون: إن الله لغني عن صدقة هذا، وما فعل هذا الآخر إلا رئاء، فنزلت: {الذين يلمزون المطوعين من المؤمنين في الصدقات، والذين لا يجدون إلا جهدهم}. صحيح البخاري: (4668) صحيح مسلم: (1018)
আল্লাহ তায়ালা যখন আমাদেরকে সদকার আদেশ করেন, তখন আমরা কুলিগিরি করে সদকা করতাম, একদিন আবু আকীল আধা সা’ পরিমান খেজুর নিয়ে আসেন, অপর ব্যক্তি অনেক সদকা নিয়ে আসে, তখন মুনাফিকরা বলে, আল্লাহ তায়ালার আবু আকীলের (সামান্য) সদকার প্রয়োজন নেই, আর এ তো লোক দেখানোর জন্য (অনেক) সদকা করেছে, তখন এই আয়াত নাযিল হয়, মুমিনদের মধ্যে হতে যারা নফল সদকা করে, এবং যারা নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সামান্য দান করে, (মুনাফিকরা) তাদের সমালোচনা করে, (তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে ঠাট্টা করেন, এবং তাদের জন্য রয়েছে, কঠোর শাস্তি)। -সহিহ বুখারী, ৪৬৬৮ সহিহ মুসলিম, ১০১৮
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سبق درهم مائة ألف» قالوا: يا رسول الله وكيف؟ قال: «رجل له درهمان فأخذ أحدهما فتصدق به، ورجل له مال كثير فأخذ من عرض ماله مائة ألف، فتصدق بها». أخرجه النسائي: (2528) وأحمد: (8929) وابن خزيمة (2443)، وابن حبان (3347) والحاكم: (1519) وصححه ووافقه الذهبي، وقال الشيخ شعيب الأرنؤوط في تعليقه على مسند أحمد: إسناده قوي، رجاله ثقات رجال الصحيح غير ابن عجلان، فقد روى له البخاري تعليقا ومسلم في الشواهد، وهو صدوق لا بأس به.
এক দিরহাম দান করে লাখো দিরহাম দান করার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিভাবে? রাসূল বললেন, এক ব্যক্তির দুটি দিরহাম ছিল সে তার একটি দান করলো, অপর ব্যক্তি তার রাশি রাশি মাল থেকে এক লাখ দিরহাম দান করলো।-সুনানে নাসায়ী, ২৫২৭ মুসনাদে আহমদ, ৮৯২৮ সহিহ ইবনে খুযাইমা, ২৪৪৩ সহিহ ইবনে হিব্বান, ৩৩৪৭ মুস্তাদরাকে হাকেম, ১৫১৯ হাফেয যাহাবী ও শায়েখ শুয়াইব আরনাউত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
অর্থাৎ যে দুই দিরহামের একটি দান করেছে সে তার অর্ধেক সম্পদ দান করেছে, আর যে এক লাখ দিরহাম দান করেছে সে তার সম্পদের অর্ধেকের চেয়েও অনেক কম দান করেছে, তাই এক দিরহাম দান কারী লাখো দিরহাম দানকারীর চেয়েও বেশি সওয়াব পাবে। [/color]
সুনানে নাসায়ীর টীকায় আল্লামা সিন্দী রহ. বলেন,
ظاهر الأحاديث أن الأجر على قدر حال المعطي، لا على قدر المال المعطى، فصاحب الدرهمين حيث أعطى نصف ماله في حال لا يعطي فيها إلا الأقوياء، يكون أجره على قدر همته، بخلاف الغني، فإنه ما أعطى نصف ماله، ولا في حال لا يعطى فيها عادة.
এ ধরণের হাদিস থেকে বুঝে আসে, সওয়াব দেওয়া হবে দাতার অবস্থা অনুযায়ী, দানের পরিমাণ অনুযায়ী নয়। যে দুই দিরহামের একটি দান করেছে সে তার অর্ধেক সম্পদ দান করেছে, আর যে এক লাখ দিরহাম দান করেছে সে তার সম্পদের অর্ধেকের চেয়েও অনেক কম দান করেছে, তাই এক দিরহাম দান কারী লাখো দিরহাম দানকারীর চেয়েও বেশি সওয়াব পাবে।
অপর হাদিসে এসেছে,
جاء ثلاثة نفر إلى النبي صلى الله عليه وسلم، فقال أحدهم: يا رسول الله، كانت لي مائة دينار، فتصدقت منها بعشرة دنانير. وقال الآخر: يا رسول الله، كان لي عشرة دنانير، فتصدقت منها بدينار، وقال الآخر: يا رسول الله (2) كان لي دينار، فتصدقت بعشره. قال: فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: كلكم في الأجر سواء، كلكم تصدق بعشر ماله
তিন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো, তাদের একজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমার একশো দিনার ছিল, আমি তা হতে দশ দিনার দান করেছি। আরেকজন বললো, আমার দশ দিনার ছিল, আমি তা হতে একদিনার দান করেছি। তৃতীয়জন বললো, আমার একদিনার ছিল, আমি তার একদশমাংশ দান করেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের সকলে সমান সওয়াব পাবে, তোমরা সবাই তার সম্পদের একদশমাংশ দান করেছো। -মুসনাদে আহমদ, ৭৪২ এ হাদিসটির সনদ যয়ীফ, তবে যয়ীফ হাদিস দিয়ে অন্য হাদিসের ব্যাখা করা যায় । দেখুন আছারুর হাদিসিশ শরিফ, শায়েখ আওয়ামা, পৃ: ৪০
عن أبي هريرة أنه قال: يا رسول الله، أي الصدقة أفضل؟ قال: «جهد المقل». أخرجه أبو داود: (1677) وأحمد: (8702) وقال الشيخ أحمد شاكر في تعليقه على مسند أحمد: (إسناده صحيح) وقال الشيخ شعيب الأرنؤوط في تعليقاته على مسند أحمد وأبي داود: (إسناده صحيح، وقوله: جُهد المقل: أي: قدر ما يحتمله حال من قل ماله، وهو بمعنى الوسع والطاقة، والمراد: ما يعطيه المقل على قدر طاقته)
আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, কোন সদকা উত্তম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দরিদ্র ব্যক্তির সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা। -সুনানে নাসায়ী, ২৫২৬, সুনানে আবু দাউদ, ১৪৪৯ শায়েখ আহমদ শাকের ও শুয়াইব আরনাউত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
আমরা অনেকে হয়তো সাধ্যমত দানের প্রতি অবহেলা করি এই ভেবে যে, এই সামান্য দানে কি হবে, যেখানে একটি সাধারণ ক্লাশিনকোভের মূল্য লাখখানি টাকা? কিন্তু এই চিন্তাও ঠিক নয়। আসলে আমরা সবাই আল্লাহর তায়ালার কুদরতের আবরণ মাত্র। কাফেরদের শাস্তি তো আল্লাহ তায়ালা নিজেই দেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাদের পরীক্ষা করার জন্য আমাদের জানমাল দিয়ে জিহাদ করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَبَقُوا إِنَّهُمْ لَا يُعْجِزُونَ وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (سورة الأنفال: 60)
কাফেররা যেন ধারণা না করে না যে তারা (আল্লাহর হাত থেকে) পালিয়ে বাঁচবে, বস্তুত তারা কখনোই আল্লাহ তায়ালাকে পরাস্ত করতে পারবে না, (নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পাকড়াও করবেন এবং শাস্তি দিবেন) আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন তোমরা এর দ্বারা ভীতী সঞ্চার করতে পারো আল্লাহর শত্রু এবং তোমাদের শত্রুদের অন্তরে। আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের অন্তরে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ্ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের উপর কোন জুলুম করা হবে না। -সূরা আনফাল, ৫৯-৬০
দেখুন, এখানে আল্লাহ তায়ালা বলছেন যে, কাফেররা তার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেনই। তবে যেহেতু দুনিয়া দারুল আসবাব, আল্লাহর তায়ালার রীতী হলো আসবাব-উপকরণ গ্রহণ না করলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে কোন কিছু দেন না, তাই আমাদের দ্বায়িত্ব হলো আমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি অর্জন করা এবং জিহাদের উপকরণ অর্থাৎ ঘোড়া-অস্ত্রসস্ত্র ইত্যাদি যোগাড় করা। যদি আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি অর্জন করি এবং জিহাদের অস্ত্রসস্ত্রের যোগান দেওয়ার জন্য সাধ্যমত দান করি তাহলে আল্লাহ তায়ালাই গায়েব হতে বাকী সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিবেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমরা জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য যা কিছুই দান করবো (কম হোক বা বেশি) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার প্রতিদান দান করবেন। দুনিয়াতে গণিমত লাভের মাধ্যমে আর আখেরাতে সাওয়াব ও জান্নাতের মাধ্যমে।
সুতরাং আমার দান কম না বেশি তা মূল কথা নয়, বরং মূল বিষয় হলো, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী দান করলাম কি না? আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জিহাদের জন্য বেশি বেশি দান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Comment