জিহাদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহ তায়ালা মানুষের উপর যত বিধি-বিধান নাযিল করেছেন এ সবই করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্য, কোন একটি বিধান ও এমন নাই যা মনুষের কল্যাণ বয়ে আনে না, বা মানুষকে ক্ষতি থেকে বাঁচায় না। যেমনঃনামাজ একটি ইবাদাত এর দ্বারা মানুষের শরীর মন উভয়টাই সুস্থ ও প্রশান্ত থাকে।
জাকাতঃ এই ইবাদাতের দ্বারা মানুষ নিজের নফসকে বিশেষ ভাবে দুনিয়ার মুহাব্বত থেকে রক্ষা করে কারণ মানুষের দুবিয়ার প্রতি বেশি মুহাববতের অন্যতম একটি কারণ হল “মাল” আর যখন সে এই মাল দান করে তখন তার মধ্য থেকে এই মালের মুহাব্বত, লোভ কমে যায়। ফলে সে সহজেই হারাম থেকে বাঁচতে পারে।
রোযাঃ ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদাত। এর দ্বারা বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং এর দ্বারা বান্দার ভিতর থেকে গুনাহের খাহেশাত দূর হয় আল্লাহর ভয় বৃদ্ধি পায়।
হজ্বঃ আল্লাহর একটি ফরজ বিধান এটা বান্দাকে আল্লাহর কাছে নত বানায়, নিজের মধ্য হতে অহংকার দূর হয়ে যায়।
এগুলো হল দুনিয়ার লাভ ও উপকার, আর আখেরাতের মহা পুরুস্কার তো আল্লাহই দান করেবেন।
তো আমরা এর উপর লক্ষ্য করলে দেখতে পাই প্রতিটা ইবাদাতই মানুষের উপকারের জন্য সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং এখন একথা পরিস্কারা হয়ে গেলো যে আরো অন্য যত বিধান আছে তা উপকারের জন্যই সাব্যস্ত করা হয়েছে। এখন আমরা লক্ষ্য করলে আরো দেখতে পাই জিহাদ ও একটি ফরজ ইবাদাত সুতরাং এর ক্ষেত্রে ও আমাদের মেনে নিতে হবে যে ইহা ও মানষের কোন উপকারের জন্যই আল্লাহ তায়ালা নির্দারণ করেছেন। কিন্ত সে উপকার টা কি, তা আমাদের জানা প্রয়োজন। এটা জানতে হলে আমাদের আগে পুর্বের ইবাদাত গুলোতে দেখতে হবে যে উক্ত ইবাদাতের মধ্য মানুষের কোন উপকারটি পাওয়া যায় না্। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নামাজ, রোযা, হজ্ব ,যাকাত এই গুলোর মধ্য অনেক উপকার র্যেছে কিন্তু একটি উপকার পাওয়া যায় না। তা হল, কিভাবে মানুষের মাঝে পুর্ণ শান্তী ফিরে আসবে, কিভাবে আল্লাহর দ্বীন কায়েম হবে, কি ভাবে ফেতনা নির্মুল হবে। কারন উক্ত ইবাদাত গুলো দ্বারা তো শুধু নিজের কিছু উপকার হয়, এখানে তো দরকার সমস্ত উম্মাহর উপকার, শান্তী, নিরাপত্তা। সুতরাং আমরা এখন মিলিয়ে দেখি কোন ইবাদাতের মধ্য নিজের ও সমস্ত উম্মাহর দুনিয়াবী ও আখেরাতের ফায়দা বেশি পাওয়া যায়। তবে আমি একথা বলছি না যে, এগুলোর দরকার নেই,বরং আমি বলতে চাচ্ছি এগুলোর সাথে অন্য বিধান গুলো ও পালন করতে হবে,করা দরকার।
উক্ত ইবাদাত গুলোর ফায়দা কিছুটা এরকমঃ
নামাজ= যে আদায় করবে সে দুনিয়াতে আমান (নিরাপত্তা) ও আখেরাতে নাজাত(মুক্তি) পাবে কিন্ত উম্মাহ কিছুই পায় না
হজ্ব= যে আদায় করবে সে দুনিয়াতে আমান ও আখেরাতে নাজাত পাবে, তবে উম্মাহ কিছু পায় না।
রোজা= যে আদায় করবে দুনিয়াতে আমান ও আখেরাতে নাজাত পাবে কিন্ত উম্মাহ কিছু পায় না।
জাকাত= যে আদায় করবে সে আখেরাতে নাজাত পাবে দুনিয়াতে তেমন কিছু পাবে না,(সে নিজের মাল অন্যকে দিচ্ছে নিজে পাচ্ছে না) তবে উম্মাহ এর দ্বারা দুনিয়াতে আমান পাবে কিন্ত আখেরাতে নাজাত পায় না।
জিহাদ= যে করবে সে দুনিয়াতে আমান ও আখেরাতে নাজাত পাবে আর উম্মাহ ও দুনিয়াতে আমান পাবে আখেরাতে নাজাতের রাস্তা খুজে পাবে, কারণ, যখন জিহাদের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্ঠা হবে তখন মানুষ সুখ-শান্তী ন্যায়বিচার পাবে অর্থাৎ আমান পাবে আর যখন মানুষের মধ্য ন্যায় বিচার ও খোদা ভীতি বৃদ্ধি পাবে তখন মানুষ আল্লাহর দিকে দলে দলে ধাবীত হবে যা মানুষকে জান্নাতের দিকে অগ্রগামী করবে কারণ আল্লাহ তায়ালা তখন মানুষের তাওবা কবুল করবেন যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন,
اذا جاء نصر الله والفتح * ورأيت الناس يدخلون في دين الله افواجا * فسبح بحمد ربك واستغفره , انه كان توابا * (الكوثر)
অর্থঃ যখন আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় আসবে, সুতরাং তুমি দলে দলে মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করিও এবং তাহার নিকটে ক্ষমা প্রার্থণা করিও, তিনি তো তওবা কবুলকারী। (সূরা কাওসার)
সুতরাং এর দ্বারা জানা গেলো যে যখন জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় ও নুসরত আসবে মানুষেরা কোন আপত্তি সংশয় ছাড়াই দ্বীনে প্রবেশ করবে, আর তখন আল্লাহ তায়ালা মানুষের তাওবা কবুল করবেন আর যার তাওবা কবুল হবে আল্লাহ তায়ালা তো তাকেই জান্নাত দান করবেন আর এর চেয়ে বড় সফলতা কি হতে পারে যে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাওবা কবুলের ঘোষণা দিয়েছেন, তাই একথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, নিজের এবং উম্মাহর সব থেকে বেশি উপকার এই বিধানের মধ্যই রয়েছে, যা উম্মাহর প্রত্যেকের জন্যই প্রয়োজন।
এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে তা হলঃ নামাজ রোজা দ্বারা তো এই উপকার উম্মাহ পাবে না এটা তো বুঝলাম, কিন্ত জিহাদের মাধ্যমে কিভাবে পাওয়া সম্ভব, তা তো বুঝলাম না,?কারোণ জিহাদ মানে তো শুধু মারামারি, রক্ত ঝরানো।?
উত্তরঃ বর্তমান সমাজে অশান্তীর মুল কারণ হল ফেতনা-ফাসাদ। আর এই ফেতনা বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমন ধণীদের কতৃক গরীবের উপর নির্যাতন, বেহায়াপনা, ইসলাম বিদ্বেষীদের উন্নতি, নাস্তিক মুরতাদের অবৈধ ক্ষমতার ব্যবহার যার মাধ্যমে জনগণ নির্যাতীত,শোষিত। কুফফার কতৃক মুসলিমদের উপর জুলুম, ঘর-বাড়ি হারা, মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হনন সহ আরও অনেক কিছু। এখন যদি শান্তী পেতে হয় তবে এই সকল ফেতনাকে অবশ্যই মুলৎপাটন করতে হবে এবং আল্লাহর দ্বীন কায়েম করতে হবে আর ফেতনা দূর করার ও আল্লাহর দ্বীন পূর্ণভাবে কায়েম করার একমাত্র পথ হল “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ” যা আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, وقاتلواهم حتي لاتكون فتنة ويكون الدين كله لله
অর্থঃ তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের (কাফের) বিরূদ্ধে কিতাল কর, যতক্ষণ না; ফেতনা দূরভূত হয় এবং পূর্ণভাবে দ্বীন আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় ।
এই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে জানা গেল, যে ফেতনা দূর করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে হলে জিহাদের কোন বিকল্প নাই।
সুতরাং জিহাদে করতে গিয়ে যে মারামারি করতে হয় এটা আমাদের নিজেদের মধ্যকার ব্যক্তি স্বার্থের লড়াই নয় বরং এটা জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের লড়াই,বাতিলের বিরুদ্ধে হকের লড়াই যার অনুমতি আল্লাহ তায়ালা সরাসরি দিয়েছেন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম রাঃ শশরীরে ময়দানে গিয়ে প্রমান করে দিয়েছেন, সুতরাং যাতে উম্মাহর জন্য এত বেশি ফায়দা তা জানার পরেও নির্বোধ ছাড়া কে এর বিরধীতা করে, আর কে ফিরে থাকে…!?
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই মোবারকময় কাজে জান,মাল দিয়ে শরীক হওয়ার তাওফিক দান করুন...(আমীন)
Comment