Announcement

Collapse
No announcement yet.

তায়েফা মানসুরা কারাঃ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • তায়েফা মানসুরা কারাঃ

    তায়েফা মানসুরা কারাঃ জিহাদ করা ছাড়া কী তায়েফা মানসুরার অনর্ভূক্ত হওয়া যাবে?
    মানহাজ, সংশয় নিরসন
    কিছু দিন যাবৎ কয়েকটা আইডি থেকে জিহাদি তানজীম নাজায়েজ প্রমাণ করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। দুয়েকজন ব্যক্তির পদস্খলনসহ দুয়েকটি হাদিস ও আইম্মায়ে কেরামের কিছু বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে এ অপপ্রয়াস চালানো হয়েছিল।
    বিশেষ করে হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিস এবং হাফেয ইবনে হাজার রহ. এর বক্তব্যের ভুল ব্যাখার মাধ্যমে এ প্রয়াস চলেছিল। আলহামদু লিল্লাহ! আমরা হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা এবং হাফেয ইবনে হাজার রহ. এর বক্তব্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য তুলে ধরেছি। জিহাদি তানজীম গঠন জায়েয, বরং আবশ্যক হওয়ার দলীল প্রমাণও তুলে ধরেছি। এরপর আশাকরি ভাইদের মাঝে কোন সন্দেহ থাকবে না।
    সংশয় সৃষ্টিকারীদের খণ্ডনকল্পে তাদের কাছে কিছু ইলজামি প্রশ্ন করা হয়েছিল। তারা সেগুলোর কোনটারই কোন সহীহ জওয়াব দিতে সমর্থ্য হয়নি। প্রশ্নগুলো মৌলিকভাবে এরকম ছিল:
    ক. জিহাদের অসংখ্য আয়াত ও হাদিসের কি ব্যাখ্যা?
    খ. উম্মাহর উপর কাফেরদের আগ্রাসন হলে জিহাদ ফরযে আইন- এর কি ব্যাখ্যা?
    গ. শাসক মুরতাদ হয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয- এর কি ব্যাখ্যা?
    ঘ. তায়েফায়ে মানসূরার হাদিস; তথা যেসব হাদিসে এসেছে যে, একটা দল সব সময় হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কিতাল করতে থাকবে- এগুলোর কি ব্যাখ্যা?
    ঙ. খেলাফত না থাকার সময়ে যেসব জিহাদ হয়েছে – বিশেষত তাতারদের বিরুদ্ধে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে – সেগুলোর কি বিধান?
    মৌলিকভাবে এ প্রশ্নগুলো তাদের করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এর কোন জওয়াব দিতে পারেনি। অবশেষে মূল প্রসঙ্গ ছেড়ে অন্য একটি বিষয়ে সংশয় সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়েছে। সেটা হল, তায়েফায়ে মানসূরার হাদিস। আমরা বলেছিলাম, তায়েফায়ে মানসূরা একটা দল সব সময় হকের উপর থেকে কিতাল করতে থাকবে। এটা দলীল যে, খেলাফত না থাকার সময়েও জিহাদি তানজীম গঠন করা যাবে।
    সংশয় সৃষ্টিকারীরা এতে আপত্তি জানিয়ে বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করেছে। হাদিসে যদিও স্পষ্ট এসেছে যে, তায়েফায়ে মানসূরা যে দলটি হবে, সেটি একটি জিহাদি দল- এতদসত্ত্বেও তারা দাবি করছে, তায়েফায়ে মানুসূরা কোন জিহাদি দল নয়। বরং তায়েফায়ে মানসূরা হচ্ছে, আলেম উলামা। তারা এ দাবিটি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে করেছে এবং আমাদের উপর আপত্তি করেছে যে, আমরা সালাফের ব্যাখ্যা প্রত্যাখান করে নিজে থেকে মনমতো ব্যাখ্যা করছি।
    এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, তানজীম বৈধ হওয়ার ব্যাপারে শুধু তায়েফায়ে মানসূরার হাদিসই দলীল নয়। এর পক্ষে অনেক দলীল প্রমাণ আছে, যেগুলো ফোরামে আলোচিত হয়েছে। এতএব, তায়েফায়ে মানসূরার হাদিস যদি বাদও দিই, তাহলেও আমাদের দাবিতে কোন ফারাক পড়ে না। তবে যেহেতু একটা ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে এবং বিষয়টি জিহাদের সাথে বিশেষভাবে সম্পক্ত, এ কারণে এর সহীহ ব্যাখ্যা তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছি। যাতে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ অবশিষ্ট না থাকে। আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা, যেন তিনি আমাকে প্রকৃত বাস্তবতা উন্মোচন করে সত্যটি ফুটিয়ে তোলার তাওফিক দান করেন।
    তায়েফায়ে মানসূরা কারা?
    তায়েফায়ে মানসূরার ব্যাপারে যেসব হাদিস এসেছে, সেগুলো অর্থগতভাবে মুতাওয়াতির। অর্থাৎ এ বিষয়ে বিভিন্ন সাহাবী থেকে – বলা হয় ২০ জন সাহাবী থেকে – এত অধিক পরিমাণ হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মে যে, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত তায়েফায়ে মানসূরা একটা দল কেয়ামত অবধি দুনিয়াতে বিদ্যমান থাকবে।
    জিহাদ ছাড়া কি তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব?
    সংশয়বাদিদের দাবি হচ্ছে, তায়েফায়ে মানসূরা মূলত কোন জিহাদি দল নয়। তায়েফায়ে মানসূরা হচ্ছে: উলামা, ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিন প্রমুখ। কিন্তু সাধারণ আরবী বুঝে এমন কোন ব্যক্তিও যদি তায়েফায়ে মানসূরার হাদিসগুলোর দিকে তাকায়, তাহলে অনায়াসে বুঝতে পারবে, তায়েফায়ে মানসূরা মূলত একটা জিহাদি দল। তারা হকের উপর থেকে কিতাল করতে থাকবে। তাদের মাঝে উলামা, ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিন, সাধারণ মুসলমান- সকলেই থাকতে পারেন। সকলে মিলেই এ তায়েফায়ে গঠিত। জিহাদের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ায় রত।
    যারা জিহাদে জড়িত নন- তারা উলামা, ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিন যাই হোন না কেন, তায়েফায়ে মানসূরা নন। তারা আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত এবং হকপন্থী হতে পারেন, কিন্তু তায়েফায়ে মানসূরা নন। তায়েফায়ে মানসূরা উম্মাহর আহলুস সুন্নাহর একটা অংশ। আহলুস সুন্নাহর সকলেই তায়েফায়ে মানসূরা নন। আহলুস সুন্নাহর যারা হক জিহাদে লিপ্ত, তারাই কেবল তায়েফায়ে মানসূরা। অন্যরাও আহলুস সুন্নাহ এবং হকপন্থী, কিন্তু তায়েফায়ে মানসূরা নন। তায়েফায়ে মানসূরা হতে হলে জিহাদে জড়িত হতে হবে। হাদিসে বিষয়টা সুস্পষ্ট।
    সারকথা:
    – তায়েফায়ে মানসূরা আহলুস সুন্নাহর একটা অংশ। আহলুস সুন্নাহর সকলেই তায়েফায়ে মানসূরা নন। আহলুস সুন্নাহর যারা হক জিহাদে জড়িত, তারাই কেবল তায়েফায়ে মানসূরা।
    – কেউ তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তিনি আহলুস সুন্নাহ ও আহলে হক থেকে বহিষ্কৃত। যদি আহলুস সুন্নাহ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ভিন্ন কোন কারণ না থাকে, তাহলে তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত না হয়েও আহলুস সুন্নাহ হতে পারেন।
    তায়েফায়ে মানসূরা সংক্রান্ত হাদিস
    উপরোক্ত কথাগুলো বুঝার পর আমরা তায়েফায়ে মানসূরা সংক্রান্ত কিছু হাদিসের দিকে নজর দিই। ইমাম মুসলিম রহ. সহীহ মুসলিমের কিতাবুল ইমারাতে এ সংক্রান্ত অনেকগুলো হাদিস উল্লেখ করেছেন। কিতাবুল ঈমানেও একটি হাদিস এনেছেন। প্রথমে সহীহ মুসলিমের হাদিসগুলো উল্লেখ করছি। তারপর অন্যান্য কিতাব থেকে কয়েকটা হাদিস উল্লেখ করছি।
    হাদিস ১:
    « ﻻ ﺗﺰﺍﻝ ﻃﺎﺋﻔﺔ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻰ ﻳﻘﺎﺗﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﻇﺎﻫﺮﻳﻦ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ – ﻗﺎﻝ – ﻓﻴﻨﺰﻝ ﻋﻴﺴﻰ ﺍﺑﻦ ﻣﺮﻳﻢ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺃﻣﻴﺮﻫﻢ ﺗﻌﺎﻝ ﺻﻞ ﻟﻨﺎ . ﻓﻴﻘﻮﻝ ﻻ . ﺇﻥ ﺑﻌﻀﻜﻢ ﻋﻠﻰ ﺑﻌﺾ ﺃﻣﺮﺍﺀ . ﺗﻜﺮﻣﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻣﺔ ».
    “আমার উম্মতের একটা দল কেয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে। তারা থাকবে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। (তাদের শত্রুদের উপর) হবে প্রতাপশালী। (এই ধারাবাহিকতা চলতে চলতে) অবশেষে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম (তাদের মাঝে) অবতরণ করবেন। তখন তাদের আমীর (অর্থাৎ ইমাম মাহদি) তাঁকে বলবেন, ‘আসুন, আমাদের নিয়ে নামায পড়ান।’ তিন বলবেন, না। তোমরা নিজেরাই পরস্পর পরস্পরের আমীর। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এ উম্মতের সম্মানস্বরূপ।” – সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং ৪১২
    হাদিস ২:
    « ﻟﻦ ﻳﺒﺮﺡ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻗﺎﺋﻤﺎ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﻋﺼﺎﺑﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺣﺘﻰ ﺗﻘﻮﻡ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ».
    “এ দ্বীন সর্বদাই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। (কারণ,) কেয়ামাত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত মুসলমানদের একটা দল বিজয়ী বেশে (দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে) কিতাল করতে থাকবে।” – সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ইমারা, হাদিস নং ৫০৬২
    হাদিস ৩:
    « ﻻ ﺗﺰﺍﻝ ﻃﺎﺋﻔﺔ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻰ ﻳﻘﺎﺗﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﻇﺎﻫﺮﻳﻦ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ».
    “আমার উম্মতের একটা দল কেয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে। তারা থাকবে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। (তাদের শত্রুদের উপর) হবে প্রতাপশালী।” – সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ইমারা, হাদিস নং ৫০৬৩
    হাদিস ৪:
    « ﻣﻦ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ ﺧﻴﺮﺍ ﻳﻔﻘﻬﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﻻ ﺗﺰﺍﻝ ﻋﺼﺎﺑﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻳﻘﺎﺗﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﻇﺎﻫﺮﻳﻦ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﻧﺎﻭﺃﻫﻢ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ »
    “আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনি ইলমের সঠিক বুঝ দান করেন। আর মুসলমানদের একটা দল কেয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে। তারা থাকবে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের বিরোধীদের উপর হবে প্রতাপশালী।” – সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ইমারা, হাদিস নং ৫০৬৫
    হাদিস ৫:
    « ﻻ ﺗﺰﺍﻝ ﻋﺼﺎﺑﺔ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻰ ﻳﻘﺎﺗﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻫﺮﻳﻦ ﻟﻌﺪﻭﻫﻢ ﻻ ﻳﻀﺮﻫﻢ ﻣﻦ ﺧﺎﻟﻔﻬﻢ ﺣﺘﻰ ﺗﺄﺗﻴﻬﻢ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﻭﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ».
    “আমার উম্মতের একটা দল কেয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে। তারা থাকবে আল্লাহর আদেশের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের শত্রুদের উপর হবে প্রতাপশালী। তাদের বিরোধীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাদের উপর কেয়ামত আসা পর্যন্ত তারা এ অবস্থার উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” – সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ইমারা, হাদিস নং ৫০৬৬
    এগুলো মুসলিম শরীফের হাদিস। সবগুলো হাদিসেই এসেছে যে, তারা কিতাল করতে থাকবে।
    ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেন,
    হাদিস ৬:
    « ﻻ ﺗﺰﺍﻝ ﻃﺎﺋﻔﺔ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻰ ﻳﻘﺎﺗﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﻇﺎﻫﺮﻳﻦ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﻧﺎﻭﺃﻫﻢ ﺣﺘﻰ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﺁﺧﺮﻫﻢ ﺍﻟﻤﺴﻴﺢ ﺍﻟﺪﺟﺎﻝ ».
    “আমার উম্মতের একটা দল কেয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে। তারা থাকবে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের বিরোধীদের উপর হবে প্রতাপশালী। (এ ধারাবাহিকতা চলতে চলতে) তাদের সর্বশেষ দলটি মাসিহে দাজ্জালের সাথে কিতাল করবে।” – সুনানে আবু দাউদ, বাবু: ফি দাওয়ামিল জিহাদ, হাদিস নং ২৪৮৬
    ইমাম নাসায়ী রহ. বর্ণনা করেন,
    হাদিস ৭:
    ﻋﻦ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻧﻔﻴﻞ ﺍﻟﻜﻨﺪﻱ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺖ ﺟﺎﻟﺴﺎ ﻋﻨﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺟﻞ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺫﺍﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻟﺨﻴﻞ ﻭﻭﺿﻌﻮﺍ ﺍﻟﺴﻼﺡ ﻭﻗﺎﻟﻮﺍ ﻻ ﺟﻬﺎﺩ ﻗﺪ ﻭﺿﻌﺖ ﺍﻟﺤﺮﺏ ﺃﻭﺯﺍﺭﻫﺎ ﻓﺄﻗﺒﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻮﺟﻬﻪ ﻭﻗﺎﻝ ﻛﺬﺑﻮﺍ ﺍﻵﻥ ﺍﻵﻥ ﺟﺎﺀ ﺍﻟﻘﺘﺎﻝ ﻭﻻ ﻳﺰﺍﻝ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻲ ﺃﻣﺔ ﻳﻘﺎﺗﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﻭﻳﺰﻳﻎ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻬﻢ ﻗﻠﻮﺏ ﺃﻗﻮﺍﻡ ﻭﻳﺮﺯﻗﻬﻢ ﻣﻨﻬﻢ ﺣﺘﻰ ﺗﻘﻮﻡ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﻭﺣﺘﻰ ﻳﺄﺗﻲ ﻭﻋﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺨﻴﻞ ﻣﻌﻘﻮﺩ ﻓﻲ ﻧﻮﺍﺻﻴﻬﺎ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ‏[ ﺍﻟﻤﺠﺘﺒﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﻟﻠﻨﺴﺎﺋﻲ : 3561]
    “হযরত সালামা ইবনে নুফাইল আলকিন্দি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকজন ঘোড়া গুটিয়ে নিয়েছে। অস্ত্র রেখে দিয়েছে। বলছে, এখন আর কোন জিহাদ নেই। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারা মোবারকসমেত আমাদের দিকে ফিরে ইরশাদ করলেন, ‘তারা ভুল বলেছে। এখন তো মাত্র কিতালের যামানা শুরু হল।
    আমার উম্মতের একটা দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে সর্বদা কিতাল করতে থাকবে। তাদের সাথে কিতালের জন্য আল্লাহ তাআলা কতক সম্প্রদায়ের অন্তর ঘুরিয়ে দেবেন এবং এদের থেকে তাদেরকে রিযিক দেবেন। কিয়ামত অবধি এবং আল্লাহ তাআলার ফায়সালাকৃত বিষয়টি (তথা কেয়ামতের আগে যে বাতাসের দ্বারা মু’মিনগণের মৃত্যু হবে সেটি) আসা পর্যন্তই এই ধারাবাহিকতা চলবে। আর (শুনে রাখ,) কিয়ামত অবধিই ঘোড়ার অগ্রকেশে কল্যাণ নিহিত রাখা হয়েছে’।” – সুনানে নাসায়ী (সুগরা); হাদিস নং ৩৫৬১
    উপরোক্ত সবগুলো হাদিসেই আমরা দেখেছি, তায়েফায়ে মানসূরার বিশেষ যে সিফাতটি বলা হয়েছে, তা হলো, তারা কিতাল করতে থাকবে। অতএব, কিতালবিহীন কোন দল তায়েফায়ে মানসূরা হতে পারে না। সামনে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে ইনশাআল্লাহ।
    তায়েফায়ে মানসূরার উপরোক্ত হাদিসগুলো দেখার পর এবার আমরা এগুলো থেকে সাব্যস্ত কয়েকটি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করবো:
    এক. হকপন্থী একটা দল সর্বদাই জিহাদ করতে থাকবে
    তায়েফায়ে মানসূরার উপরোক্ত হাদিসগুলোতে এ কথাটি দিবালোকের মতোই স্পষ্ট যে, হকপন্থী একটা দল সর্বদাই কিতালরত থাকবে। খেলাফত থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় হকের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি দল কিতাল করতে থাকবে।
    পূর্বোক্ত ২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনুল মালাক রহ. (৮৫৪ হি.) বলেন,
    ﻻ ﻳﺨﻠﻮ ﻭﺟﻪ ﺍﻷﺭﺽ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻓﻲ ﻧﺎﺣﻴﺔ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﻧﺎﺣﻴﺔ ﺃﺧﺮﻯ . ﺍﻫـ
    “ভূপৃষ্ঠ কখনোই জিহাদশূন্য হবে না। এক ভূখণ্ডে না হলে অন্য ভূখণ্ডে হবে।” – শরহুল মাসাবিহ লি ইবনিল মালাক: ৪/৩১২
    আল্লামা তিবি রহ. (৭৪৩ হি.) বলেন,
    ﻭﻓﻴﻪ ﻣﻌﺠﺰﺓ ﻇﺎﻫﺮﺓ؛ ﻓﺈﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻮﺻﻒ ﻟﻢ ﻳﺰﻝ ﺑﺤﻤﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻣﻦ ﺯﻣﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻟﻲ ﺍﻵﻥ، ﻭﻻ ﻳﺰﺍﻝ ﺣﺘﻰ ﻳﺄﺗﻲ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ . ﺍﻫـ
    “এ হাদিস একটি সুস্পষ্ট মু’জিযা। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানা থেকে এখন পর্যন্ত সর্বদাই এই অবস্থাটি চলে আসছে এবং আল্লাহ তাআলার ফায়সালাকৃত বিষয়টি (তথা কেয়ামতের আগে যে বাতাসের দ্বারা মু’মিনগণের মৃত্যু হবে সেটি) আসা পর্যন্ত চলতেই থাকবে।” – আলকাশিফ আন হাকায়িকিস সুনান; পৃষ্ঠা ২৬৩২
    উপরোক্ত ৬ নং হাদিসের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,
    (( ﻳﻘﺎﺗﻞ ﺁﺧﺮﻫﻢ ﺍﻟﻤﺴﻴﺢ ﺍﻟﺪﺟﺎﻝ (( ﺃﻱ ﻻ ﺗﻨﻘﻄﻊ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻄﺎﺋﻔﺔ ﺍﻟﻤﻨﺼﻮﺭﺓ، ﺑﻞ ﺗﺒﻘﻰ ﺇﻟﻲ ﺃﻥ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﺁﺧﺮﻫﻢ ﺍﻟﺪﺟﺎﻝ . ﺍﻫـ
    “তাদের সর্বশেষ দলটি মাসিহে দাজ্জালের সাথে কিতাল করবে। অর্থাৎ ঐ তায়েফায়ে মানসূরা কখনোও বিলুপ্ত হবে না। বরং তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের সাথে কিতাল করা পর্যন্তই তারা বিদ্যমান থাকবে।” – আলকাশিফ আন হাকায়িকিস সুনান; পৃষ্ঠা ২৬৪৪
    আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলেন,
    ﻻ ﻳﺨﻠﻮ ﺯﻣﺎﻥ ﺇﻻ ﻭﺗﻮﺟﺪ ﻓﻴﻪ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻄﺎﺋﻔﺔ ﺍﻟﻘﺎﺋﻤﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻖ . ﺍﻫـ
    “কোনো যামানাই উক্ত তায়েফাশূন্য হবে না। প্রত্যেক যামানাতেই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত উক্ত তায়েফাটি বিদ্যমান থাকবে।” – ফায়জুল বারী; ১/১৭১, কিতাবুল ইলম, বাব: মান ইউরিদিল্লাহু বিহি খাইরান …, ছাপা: আলমাকতাবাতুল আশরাফিয়া, দেউবন্দ
    খেলাফত না থাকাবস্থায় জিহাদি তানজীম বৈধ
    তায়েফায়ে মানসূরার হাদিস এবং মুহাদ্দিসিনে কেরামের ব্যাখ্যা থেকে দেখলাম, একটা হকপন্থী দল সর্বদা জিহাদ করতেই থাকবে। অপরদিকে বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত, এমন এক সময় আসবে, যখন খেলাফত থাকবে না। যেমন, বর্তমানে নেই। উভয় শ্রেণীর হাদিস সমন্বয় করলে ফলাফল দাঁড়ায়, খেলাফত না থাকাবস্থায়ও একটা হকপন্থী দল কিতালরত থাকবে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, খেলাফত না থাকাবস্থায় জিহাদি তানজীম গঠন ও তাতে যোগ দেয়া বৈধ। এমন সুস্পষ্ট বিষয়টি যারা অস্বীকার করতে চায়, তাদের জন্য বড়ই আপসোস!
    দুই. তায়েফায়ে মানসূরা আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে পরিচালিত
    হাদিসে তায়েফায়ে মানসূরার বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে যে, তারা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং কেয়ামত অবধিই তারা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এ থেকে স্পষ্ট যে, তারা কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত আহলুস সুন্নাহর একটা জামাত হবে। এও স্পষ্ট যে, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হলে হক বুঝা জরুরী। অতএব, তায়েফায়ে মানসূরা এমন একটি দল হবে, যাদের মাঝে দ্বীনের সঠিক বুঝসম্পন্ন আহলুস সুন্নাহর বিশিষ্ট আলেম উলামা, মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ফুকাহা থাকবেন, যারা এ দলটিকে সর্বদা হকের উপর পরিচালিত করবেন। এ থেকে স্পষ্ট, আহলুস সুন্নাহর বহির্ভূত – যেমন, রাফেজি, খারেজী, মু’তাজেলী, মুরজিয়া ইত্যাদি – বিদআতি ফেরকা তায়েফায়ে মানসূরা হতে পারবে না। এ হিসেবেই সালাফের অনেকে বলেছেন, তায়েফায়ে মানসূরা হচ্ছে- আহলে ইলম, আহলুস সুন্নাহ ও মুহাদ্দিসিনে কেরাম। যেমন,
    ইমাম বুখারী রহ. বলেন,
    ﻫﻢ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ . ﺍﻫـ
    “তারা হচ্ছেন আহলে ইলমগণ।”
    ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন,
    ﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻜﻮﻧﻮﺍ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻼ ﺃﺩﺭﻱ ﻣﻦ ﻫﻢ . ﺍﻫـ
    “তারা যদি মুহাদ্দিসগণ না হয়ে থাকেন, তাহলে আমার বুঝে আসে না যে, আর কারা হবে।”
    কাযি ইয়াজ রহ. বলেন,
    ﺇﻧﻤﺎ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﺣﻤﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻭﻣﻦ ﻳﻌﺘﻘﺪ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ . ﺍﻫـ
    “ইমাম আহমাদের উদ্দেশ্য, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ এবং মুহাদ্দিসগণের মত-পথের বিশ্বাসীরা।”
    [দেখুন, বদরুদ্দীন আইনী রহ. কৃত সহীহ বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ: উমদাতুল ক্বারী; ১৩/৬৬]
    ইমাম আহামদ রহ. এর যামানায় হাদিস বিশারদ মুহাদ্দিসগণই ছিলেন আহলুস সুন্নাহর প্রতীক। তাই মুহাদ্দিসগণ দ্বারা তার উদ্দেশ্য, আহলুস সুন্নাহ- যেমনটা কাযি ইয়াজ রহ. বলেছেন।
    সালাফের এসব বক্তব্যে আহলে ইলম ও মুহাদ্দিসগণ তথা আহলুস সুন্নাহকে তায়েফায়ে মানসূরা বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য, তায়েফায়ে মানসূরা আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত হবে। কোন বিদআতি ফিরকা তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। সামনে আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. এর বক্তব্য থেকে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
    তিন. জিহাদ ব্যতীত তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব নয়
    তায়েফায়ে মানসূরার একান্ত বিশিষ্ট যে গুণটির কথা বলা হয়েছে তা হল, তারা কিতাল করতে থাকবে এবং তাদের দুশমনদেরকে বিভিন্নভাবে পর্যদুস্ত করতে থাকবে। এ থেকে সুস্পষ্ট যে, এ বিশেষ গুণটি – তথা কাফেরদের বিরুদ্ধে কিতাল – ছাড়া তায়েফায়ে মানসূরা হওয়া সম্ভব নয়। তায়েফায়ে মানসূরা হতে হলে অবশ্যই কিতালে জড়িত হতে হবে। ইলম ছাড়া যেমন আলেম হওয়া যায় না, হাদিস ছাড়া মুহাদ্দিস হওয়া যায় না, তাফসীর ছাড়া মুফাসসির হওয়া যায় না, ফিকহ ছাড়া ফকিহ হওয়া যায় না- তদ্রূপ কিতাল ছাড়া তায়েফায়ে মানসূরা হওয়া যায় না।
    মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন,
    ﻓﺎﻟﺘﺤﻘﻴﻖ ﺃﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﺎﻟﻄﺎﺋﻔﺔ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺠﺎﻫﺪﺓ . ﺍﻫـ
    “তাহকিকি ও বাস্তবসম্মত কথা হচ্ছে, তায়েফায়ে মানসূরা দ্বারা মুজাহিদ জামাত উদ্দেশ্য।” – মিরকাত: ১১/৪৪১
    বি.দ্র.
    আমি আগেও বলেছি, তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আহলুস সুন্নাহ থেকে বহিষ্কৃত। এমনও হতে পারে যে, কোন ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত কিন্তু তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন ধরুন, জিহাদ যখন ফরযে কেফায়া থাকবে, তখন জিহাদে না যাওযার সুযোগ আছে। আহলুস সুন্নাহর মধ্যে যারা তখন জিহাদে যাবে, তারা তায়েফায়ে মানসূরা। তারা যাবে না, তারা তায়েফায়ে মানসূরা নয়; কিন্তু আহলুস সুন্নাহ। অতএব, ক্ষেত্র বিশেষে তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত না হয়েও আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায়। কাজেই, লক্ষ রাখবো, দু’টোর মাঝে গরমিল যেন না করে ফেলি। এমন অভিযোগ যেন কেউ না করে যে, মুজাহিদগণ বাকি সকলকে আহলুস সুন্নাহ থেকে বহিষ্কৃত দাবি করে। তবে আহলুস সুন্নাহ থেকে বহিষ্কার হওয়ার মতো কোন আকীদা পাওয়া গেলে তখন ভিন্ন কথা। তখন সে ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ থেকে বহিষ্কৃত। তবে জিহাদে না যাওয়ার কারণে নয়, বিদআতি আকীদার কারণে। তদ্রূপ, জিহাদ যখন ফরযে আইন থাকে, তখন জিহাদে না গেলে এবং তায়েফায়ে মানসূরার অন্তর্ভুক্ত না হলে গোনাহগার হবে।
    ** ইমাম আহমাদ রহ. এর বক্তব্য এবং একটি বিভ্রান্তির নিরসন
    আমরা দেখেছি, তায়েফায়ে মানসূরা আহলুস সুন্নাহর একটা দল। আহলুস সুন্নাহর সকলেই তায়েফায়ে মানসূরা নয়। হাদিস থেকে বিষয়টা একেবারেই সুস্পষ্ট। কিন্তু সালাফের কারো কারো বক্তব্য থেকে কেউ কেউ বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। যেমন, একটু আগেই ইমাম আহমাদ রহ., ইমাম বুখারী রহ. এবং কাযি ইয়াজ রহ. এর বক্তব্য উল্লেখ করেছি। বাহ্যত তাদের কথার সারমর্ম, আহলুস সুন্নাহ কিংবা আহলুস সুন্নাহর আহলে ইলম ও মুহাদ্দিসগণ হচ্ছেন তায়েফায়ে মানসূরা। বাহ্যত তাদের কথা থেকে বুঝা যায়, তায়েফায়ে মানসূরা হওয়ার জন্য জিহাদ শর্ত নয়। কিন্তু পাঠক মাত্রই দেখতে পাচ্ছেন, এ কথা হাদিসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তায়েফায়ে মানসূরার জন্য জিহাদ শর্তের কথাটা হাদিসে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে এসেছে। ইমাম আহমাদ ও ইমাম বুখারীর মতো ব্যক্তিদের কাছে বিষয়টা অজানা নয়। এমন সুস্পষ্ট হাদিস থাকার পরও তারা কিছুতেই বলতে পারেন না যে, জিহাদ ছাড়াও তায়েফায়ে মানসূরা হওয়া যাবে। বরং তাদের কথা উদ্দেশ্য – যেমনটা একটু আগেও উল্লেখ করা হয়েছে – তায়েফায়ে মানসূরা আহলে ইলম ও আহলুস সুন্নাহ থেকে হবে। কোন বিদআতি ফিরকা তায়েফায়ে মানসূরা হতে পারবে না। তাদের কথার এ অর্থ করলে তখন হাদিসের সাথে আর কোন বিরোধ থাকে না।
    আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বিষয়টি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেন,
    ﻭﺍﺧﺘﻠﻒ ﻓﻲ ﺗﻌﻴﻴﻦ ﻣﺼﺪﺍﻗِﻪِ ﻭﻛﻞٌّ ﺍﺩّﻋﻰ ﺑﻤﺎ ﺑﺪﺍ ﻟﻪ . ﻗﻠﺖ : ﻛﻴﻒ ﻣﻊ ﺃﻧﻪ ﻣﻨﺼﻮﺹٌ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﻫﻢ ﺍﻟﻤﺠﺎﻫﺪﻭﻥ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ؟ ﺛﻢ ﺭﺃﻳﺖ ﻋﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻄﺎﺋﻔﺔ ﺇﻥ ﻟﻢ ﺗﻜﻦ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻓﻼ ﺃﺩﺭﻱ ﻣﻦ ﻫﻲ؟ ﻭﻟﻢ ﺃﻛﻦ ﺃﻓﻬﻢ ﻣﺮﺍﺩﻩ ﻷﻧﻚ ﻗﺪ ﻋﻠﻤﺖ ﺃﻧﻬﺎ ﺍﻟﻤﺠﺎﻫﺪﻭﻥ ﺑﻨﺺ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ . ﻭﻻ ﻳﻤﻜﻦ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﻐﻔﻠﺔ ﻟﻤﺜﻞ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻜﻴﻒ ﻗﺎﻝ ﺇﻧﻬﺎ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ؟ ﺛﻢ ﺑﺪﺍ ﻟﻲ ﻣﺮﺍﺩﻩ : ﻭﻫﻮ ﺃﻥ ﺍﻟﻤﺠﺎﻫﺪﻳﻦ ﻟﻴﺴﻮﺍ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ، ﻓﻌﻠﻤﺖ ﺃﻧﻪ ﻋﻴَّﻨَﻬﻢ ﻣﻦ ﺗﻠﻘﺎﺀ ﺟﻬﺎﺩﻫﻢ ﻻ ﻣﻦ ﺟﻬﺔ ﻋﻘﺎﺋِﺪِﻫﻢ، ﻭﻳﺸﻬﺪ ﻟﻪ ﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻢ ﻳُﻮﻓَّﻖ ﻟﻠﺠﻬﺎﺩ ﺃﺣﺪ ﻏﻴﺮُ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻄﺎﺋﻔﺔ . ﻭﺃﻛﺜﺮ ﺗﺨﺮﻳﺐ ﺍﻟﺴﻠﻄﻨﺔ ﺍﻹﺳﻼﻣﻴﺔ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﺃﻳﺪﻱ ﺍﻟﺮﻭﺍﻓﺾ ﺧﺬﻟﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻟﻌﻨﻬﻢ . ﺍﻫـ
    “তায়েফায়ে মানসূরা কারা এ নিয়ে মতভেদ আছে। প্রত্যেকে নিজের বুঝ অনুযায়ী একেকটাকে তায়েফায়ে মানসূরা দাবি করেছে। (আশ্চর্য যে,) কিভাবে এখানে মতভেদ করা সম্ভব, অথচ হাদিসের সুস্পষ্ট ভাষ্য হচ্ছে, তারা হচ্ছেন আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদগণ?! ইমাম আহমাদ রহ. থেকে দেখেছি যে, তিনি বলেছেন, ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ যদি ঐ তায়েফা না হয়, তাহলে আমার বুঝে আসে না যে, আর কারা হবে’! আমি আহমাদ রহ. এর কথার উদ্দেশ্য বুঝতে পারছিলাম না। কারণ, আপনি দেখেছেন, হাদিসের সুস্পষ্ট ভাষ্য, তারা হচ্ছেন মুজাহিদগণ। আহমাদ রহ. এর মতো ব্যক্তির কাছে বিষয়টা অজানা থাকতে পারে না। এরপরও তিনি কিভাবে বলতে পারেন, সে তায়েফা হচ্ছে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ?! পরে আমার আহমাদ রহ. এর উদ্দেশ্য বুঝে আসলো। তা হলো, মুজাহিদগণ কেবল আহলুস সুন্নাহর মধ্য থেকেই হয়ে থাকেন। কাজেই, আপনি বুঝতে পারছেন, তিনি আহলুস সুন্নাহকে তায়েফায়ে মানসূরা বলেছেন, তাদের জিহাদের দিকটি বিবেচনা করে; (শুধুমাত্র) আকীদার দিকে লক্ষ করে নয়। আর ইতিহাসও এর সাক্ষী। আহলুস সুন্নাহ ছাড়া আর কারো জিহাদের তাওফিক হয়নি। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ইসলামী সালতানাত তো রাফেজীদের হাতেই ধ্বংস হয়েছে। আল্লাহ তাদের অপদস্ত ও অভিশপ্ত করুন।” – ফায়জুল বারী; ১/১৭১, কিতাবুল ইলম, বাব: মান ইউরিদিল্লাহু বিহি খাইরান …, ছাপা: আলমাকতাবাতুল আশরাফিয়া, দেউবন্দ
    চার. তায়েফায়ে মানসূরা শুধু শামে সীমাবদ্ধ নয়
    তায়েফায়ে মানসূরার ব্যাপারে বর্ণিত সহীহ হাদিসসমূহে ‘তায়েফায়ে মানসূরা কোন ভূখণ্ডে থাকবে’- এমন কোন সুনির্দিষ্ট নাম আসেনি। এ থেকে স্পষ্ট যে, পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের যে কোন হকপন্থী মুজাহিদ জামাতই তায়েফায়ে মানসূরা। তবে কোনো কোনো হাদিসে এসেছে যে, তারা বাইতুল মুকাদ্দাস এবং তার আশেপাশের এলাকায় তথা শামে থাকবে। যেমন,
    ইমাম আহমাদ
    ইবনে হাম্বল রহ. এর বর্ণনায় এসেছে,
    ﻻ ﺗﺰﺍﻝ ﻃﺎﺋﻔﺔ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻇﺎﻫﺮﻳﻦ، ﻟﻌﺪﻭﻫﻢ ﻗﺎﻫﺮﻳﻦ، ﻻ ﻳﻀﺮﻫﻢ ﻣﻦ ﺧﺎﻟﻔﻬﻢ ﺍﻻ ﻣﺎ ﺃﺻﺎﺑﻬﻢ ﻣﻦ ﻷﻭﺍﺀ ﺣﺘﻰ ﻳﺄﺗﻴﻬﻢ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻫﻢ ﻛﺬﻟﻚ . ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺃﻳﻦ ﻫﻢ؟ ﻗﺎﻝ ﺑﺒﻴﺖ ﺍﻟﻤﻘﺪﺱ ﻭﺃﻛﻨﺎﻑ ﺑﻴﺖ ﺍﻟﻤﻘﺪﺱ . ‏[ ﺗﻌﻠﻴﻖ ﺷﻌﻴﺐ ﺍﻷﺭﻧﺆﻭﻁ : ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﻟﻐﻴﺮﻩ ﺩﻭﻥ ﻗﻮﻟﻪ : ” ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺃﻳﻦ ﻫﻢ … ﺇﻟﺦ ” ﻭﻫﺬﺍ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﺿﻌﻴﻒ ﻟﺠﻬﺎﻟﺔ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺴﻴﺒﺎﻧﻲ ﺍﻟﺤﻀﺮﻣﻲ ]
    “আমার উম্মতের একটা দল সর্বদা দ্বীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। তারা তাদের শত্রুদের উপর হবে প্রতাপশালী। তাদের বিরোধীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, (অনেক সময়) তারা কষ্ট ও সংকীর্ণতার শিকার হবে। আল্লাহ তাআলার ফায়সালাকৃত বিষয়টি (তথা কেয়ামতের আগে যে বাতাসের দ্বারা মু’মিনগণের মৃত্যু হবে সেটি) আসা পর্যন্তই তাদের এ ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কোথায়? তিনি উত্তর দিলেন, বাইতুল মাকদিস ও বাইতুল মাকদিসের আশেপাশে।” – মুসনাদে আহমাদ; হাদিস নং ২২৩৭
    এ হাদিস এবং এ জাতীয় আরো কিছু হাদিস, যেগুলোতে বাইতুল মুকাদ্দাস ও শামের কথা এসেছে, সেগুলো যদি সহীহ হয়ে থাকে, তাহলে এর উদ্দেশ্য: বাইতুল মুকাদ্দাস ও পূণ্যভূমি শামের সাথে তায়েফায়ে মানসূরার বিশেষ সম্পৃক্ততা থাকবে এবং সেখানে সর্বদাই তায়েফায়ে মানসূরার একটা জামাত থাকবে। অন্যান্য ভূখণ্ডে তায়েফায়ে মানসূরার কোন জামাত না থাকলেও শামে একটা জামাত থাকবে। এটা উদ্দেশ্য নয় যে, তায়েফায়ে মানসূরা কেবল শামেই থাকবে আর কোথাও থাকবে না।
    মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন,
    ﻗﻴﻞ : ﻫﻢ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺸﺎﻡ ﻭﻣﺎ ﻭﺭﺍﺀ ﺫﻟﻚ . ﻗﻠﺖ : ﻓﻴﻪ ﺑﺤﺚ ﻓﺈﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﺃﻳﻀﺎ ﻣﻦ ﺍﻷﺭﻭﺍﻡ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻳﺤﺎﺭﺑﻮﻥ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ; ﺃﻳﺪﻫﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ . ﻓﺎﻟﺘﺤﻘﻴﻖ ﺃﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﺎﻟﻄﺎﺋﻔﺔ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺠﺎﻫﺪﺓ ﻻ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻌﻴﻴﻦ، ﻓﺈﻥ ﻓﻴﻤﺎ ﻭﺭﺍﺀ ﺍﻟﻨﻬﺮ ﺃﻳﻀﺎ ﻃﺎﺋﻔﺔ ﻳﻘﺎﺗﻠﻮﻥ ﺍﻟﻜﻔﺮﺓ ﻗﻮﺍﻫﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ، ﻭﺟﺰﻯ ﺍﻟﻤﺠﺎﻫﺪﻳﻦ ﻋﻨﺎ ﺧﻴﺮﺍ ﺣﻴﺚ ﻗﺎﻣﻮﺍ ﺑﻔﺮﺽ ﺍﻟﻜﻔﺎﻳﺔ ﻭﺃﻋﻄﻮﺍ ﺍﻟﺘﻮﻓﻴﻖ ﻭﺍﻟﻌﻨﺎﻳﺔ . ﺍﻫـ
    “কেউ কেউ বলেন, তায়েফায়ে মানসূরা হল শাম এবং তৎপরবর্তী এলাকার অধিবাসীগণ। তবে আমি বলি, এতে আপত্তি আছে। কেননা, মাগরিবের রোম ও অন্যান্য এলাকার অধিবাসীগণও কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের নুসরত করুন। তাই, তাহকিকি ও বাস্তবসম্মত কথা হল, তায়েফায়ে মানসূরা দ্বারা মুজাহিদ জামাত উদ্দেশ্য; তবে (সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ডের) সুনির্দিষ্ট কোন জামাত নয়। কেননা, মাওয়ারাউন নহরেও একটা দল আছে, যারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কিতাল করছে। আল্লাহ তাআলা তাদের শক্তিশালী করুন। তারা ফরযে কেফায়ার দায়িত্ব আদায় করছেন। আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে তাওফিক ও কৃপা লাভ করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের পক্ষ থেকে মুজাহিদগণকে উত্তম বিনিময় দান করুন।” – মিরকাত: ১১/৪৪১
    অতএব, এ কথা বলা যায়, শামে তায়েফায়ে মানসূরার একটা জামাত সব সময় থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য ভূখণ্ডেও থাকতে পারে। তায়েফায়ে মানসূরা শুধু শামেই সীমাবদ্ধ নয়। বাস্তবতাও এর সাক্ষী। শামের ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, শামে সব সময়ই কোনো না কোনো জামাত জিহাদে লিপ্ত ছিল। বাইতুল মুকাদ্দাস যখন ক্রুসেডারদের দখলে ছিল, তখনও শামে জিহাদ চলমান ছিল। পাশাপাশি অন্যান্য অনেক ভূখণ্ডেও আমরা দেখছি যে, আলহামদু লিল্লাহ, জিহাদ চলে আসছিল এবং এখনও চলছে।
    পাঁচ. তায়েফায়ে মানসূরার জিহাদের বরকতেই দ্বীন টিকে আছে
    তায়েফায়ে মানসূরা সংক্রান্ত উল্লিখিত হাদিসগুলোর ২ নং হাদিসটি ছিল,
    « ﻟﻦ ﻳﺒﺮﺡ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻗﺎﺋﻤﺎ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﻋﺼﺎﺑﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺣﺘﻰ ﺗﻘﻮﻡ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ».
    “এ দ্বীন সর্বদাই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। (কারণ,) কেয়ামাত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত মুসলমানদের একটা দল বিজয়ী বেশে (দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে) কিতাল করতে থাকবে।” – সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ইমারা, হাদিস নং ৫০৬২
    এ হাদিসের দু’টি অংশ;
    ক. ﻟﻦ ﻳﺒﺮﺡ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻗﺎﺋﻤﺎ ‘এ দ্বীন সর্বদাই প্রতিষ্ঠিত থাকবে’।
    খ. ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﻋﺼﺎﺑﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ‘মুসলমানদের একটা দল বিজয়ী বেশে (দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে) কিতাল করতে থাকবে’।
    হাদিসের দ্বিতীয় অংশটি প্রথম অংশের কারণ বর্ণনা করছে। অর্থাৎ এ দ্বীন এ কারণে প্রতিষ্ঠিত থাকবে যে, মুসলমানদের একটা জামাত সর্বদা কিতাল করতে থাকবে। তাদের কিতালের বদৌলতে আল্লাহ তাআলা এ দ্বীন টিকিয়ে রাখবেন।
    আরেকটু স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, যখন বলা হল, ‘এ দ্বীন সর্বদাই প্রতিষ্ঠিত থাকবে’ তখন যেন একটা প্রশ্নের উদ্রেগ হল যে, এ দ্বীন কেন প্রতিষ্ঠিত থাকবে? এ প্রশ্নের *উত্তরে দ্বিতীয় বাক্যটি বলা হল। অর্থাৎ এ দ্বীন টিকে থাকার কারণ হচ্ছে, মুসলমানদের একটা জামাত সর্বদাই দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে থাকবে। তাদের কিতালের বদৌলতেই দ্বীন টিকে থাকবে।
    আল্লামা তিবি রহ. (৭৪৩ হি.) বলেন,
    (( ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻋﻠﻴﻪ (( ﺟﻤﻠﺔ ﻣﺴﺘﺄﻧﻔﺔ ﺑﻴﺎﻧﺎ ﻟﻠﺠﻤﻠﺔ ﺍﻷﻭﻟﻲ … ﺃﻱ ﻳﻈﺎﻫﺮﻭﻥ ﺑﺎﻟﻤﻘﺎﺗﻠﺔ ﻋﻠﻲ ﺃﻋﺪﺍﺀ ﺍﻟﺪﻳﻦ، ﻳﻌﻨﻲ ﺃﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻟﻢ ﻳﺰﻝ ﻗﺎﺋﻤﺎ ﺑﺴﺒﺐ ﻣﻘﺎﺗﻠﺔ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻄﺎﺋﻘﺔ . ﺍﻫـ
    “ … ‘কিতাল করতে থাকবে’ বাক্যটি একটি নতুন বাক্য, যা প্রথম বাক্যটির (তথা তা থেকে সৃষ্ট প্রশ্নের উত্তরের) বিবরণ দিচ্ছে। … উদ্দেশ্য, এই তায়েফার কিতালের বদৌলতে এ দ্বীন সর্বদা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” – আলকাশিফ আন হাকায়িকিস সুনান; পৃষ্ঠা ২৬৩২
    এখানে ইমাম জাসসাস রহ. এর সেই অবিস্মরণীয় কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যেখানে তিনি জিহাদের বাস্তবতাটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,
    ﻭﻟﻴﺲ ﺑﻌﺪ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻓﺮﺽ ﺁﻛﺪ ﻭﻻ ﺃﻭﻟﻰ ﺑﺎﻹﻳﺠﺎﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ، ﻭﺫﻟﻚ ﺃﻧﻪ ﺑﺎﻟﺠﻬﺎﺩ ﻳﻤﻜﻦ ﺇﻇﻬﺎﺭ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﻭﺃﺩﺍﺀ ﺍﻟﻔﺮﺍﺋﺾ، ﻭﻓﻲ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﻏﻠﺒﺔ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻭﺩﺭﻭﺱ ﺍﻟﺪﻳﻦ، ﻭﺫﻫﺎﺏ ﺍﻹﺳﻼﻡ . ﺍﻫـ
    “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনার পর জিহাদের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যক কোন ফরজ নেই। তা এ কারণে যে, জিহাদের দ্বারাই ইসলামের বিজয় এবং ফারায়েযগুলো আদায় করা সম্ভব। আর জিহাদ ছেড়ে দিলেই শত্রু বিজয়ী হয়ে যাবে, দ্বীন মিটে যাবে এবং ইসলাম নিঃশেষ হয়ে যাবে।” – আহকামুল কুরআন; খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৯
    আজ যারা নির্বিঘ্নে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে যাচ্ছেন, মাদ্রাসায় নিরাপদে দরস দিতে পারছেন, মসজিদে নিশ্চিন্তে রবের ইবাদত করতে পারছেন, আর দাবি করছেন- এগুলো তাদের নেক আমলের ফসল: তাদের উচিৎ এ হাদিসটি নিয়ে চিন্তা করা। একটু ভাবা উচিৎ, আসলে কি এগুলো শুধু তাদের নেক আমলেরই ফসল, না’কি মুজাহিদিনে কেরামের কুরবানী আর শহীদানের রক্তের বরকত।
    ***
    সারকথা:
    – তায়েফায়ে মানসূরা আহলুস সুন্নাহর মধ্য থেকে হবে; বিদআতিদের মধ্য থেকে হবে না। ইমাম আহমাদ রহ. সহ আরো যাদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা হচ্ছে আহলুস সুন্নাহ- এর দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য।
    – তারা কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত ও অটল থাকবে।
    – তারা একটি জিহাদি জামাত হবে। যারা জিহাদে জড়িত হবে না, তারা আহলুস সুন্নাহ হওয়া সম্ভব হলেও তায়েফায়ে মানসূরা হতে পারবে না।
    – তায়েফায়ে মানসূরা শুধু শামেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য ভূখণ্ডের হকপন্থী জিহাদি জামাতগুলোও তায়েফায়ে মানসূরার অংশ।
    – তায়েফায়ে মানসূরা সর্বদাই বিদ্যমান থাকবে। কোন যামানাই তায়েফায়ে মানসূরাশূন্য হবে না। এক ভূখণ্ডে না থাকলে অন্য ভূখণ্ডে থাকবে। তাদের সর্বশেষ দলটি ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে মিলে দাজ্জালের বিরুদ্ধে কিতাল করা পর্যন্তই তারা কিতাল করে যেতে থাকবে।
    – তাদের জিহাদের বদৌলতে এ দ্বীন টিকে থাকবে।
    – তায়েফায়ে মানসূরা সর্বদা বিদ্যমান থাকাটা এ বিষয়ের একটা দলীল যে, খেলাফত না থাকাবস্থায় জিহাদি তানজীম গড়ে তোলা এবং তাতে যোগ দেয়া যাবে। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসে খেলাফত না থাকাবস্থায় যেসকল দল পরিত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তার দ্বারা না-হক্ব দল উদ্দেশ্য। আহলুস সুন্নাহর অনুসারি হক দল উদ্দেশ্য নয়।

  • #2
    আল্লাহ আপনার কাজকে কবুল করুন,আমিন।

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ আখি, পোষ্টটি পড়ে খুশি হয়েছি। এ ধরণের সংশয় নিরসনে কাজ করা বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত জরুরী। আল্লাহ আপনার ইলম ও আমলে বরকত দান করুন।
      الجهاد محك الإيمان

      জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

      Comment


      • #4
        জাজাকাল্লাহ খাইরান
        মুহতারাম ভাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করার কারনে ও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট করার কারনে
        অনেক ভালো লাগল ভাই
        জিহাদই হলো মুমিন ও মুনাফিকের মাঝে
        পার্থক্যকারী একটি ইবাদাহ

        Comment

        Working...
        X