عَنْ أَبِي أُمَامَةَ البَاهِلِيِّ، قَالَ: وَرَأَى سِكَّةً وَشَيْئًا مِنْ آلَةِ الحَرْثِ، فَقَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لاَ يَدْخُلُ هَذَا بَيْتَ قَوْمٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللَّهُ الذُّلَّ». صحيح البخاري: 2321
আবু উমামা বাহেলী রাযিআল্লাহু আনহু একদিন লাঙ্গল ও চাষাবাদের কিছু যন্ত্রপাতি দেখতে পান, তখন তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে জাতির ঘরেই এই জিনিষগুলো প্রবেশ করে তাদেরকেই আল্লাহ তায়ালা লাঞ্চিত করেন। -সহিহ বুখারী, ২৩২১।ইমাম সারাখসী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৪৮৩ হি.) বলেন,
المراد أن المسلمين إذا اشتغلوا بالزراعة واتبعوا أذناب البقر وقعدوا عن الجهاد كر عليهم عدوهم فجعلوهم أذلة. (المبسوط: 10/83 ط. دار المعرفة)
হাদিসের অর্থ হলো যখন মুসলিমরা চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, গাভীর লেজের পেছনে পড়ে থাকবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে তখন শত্রুরা তাদের উপর আক্রমণ করবে এবং তাদের লাঞ্চিত-অপদস্থ করবে। -মাবসুতে সারাখসী, ১০/৮৩
ইমাম ইবনুল হুমাম রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৮৬১ হি.) ও হেদায়ার শরাহ ফাতহুল কাদীরে হাদিসের এই ব্যাখাই করেছেন, তিনি বলেন,
(ويجوز أن يشتري المسلم أرض الخراج من الذمي ويؤخذ منه الخراج لما قلنا)، وقد صح أن الصحابة اشتروا أراضي الخراج وكانوا يؤدون خراجها، فدل على جواز الشراء، وأخذ الخراج، وأدائه للمسلم من غير كراهة) … لا كما يقول بعض المتقشفة - رحمه الله - عليهم ورحمنا بهم من كراهة ذلك؛ لما روي «أنه - عليه الصلاة والسلام - رأى شيئا من آلات الحراثة فقال: ما دخل هذا بيت قوم إلا ذلوا». ظنا منهم أن الذل بالتزام الخراج، وليس كذلك، بل المراد أن المسلمين إذا اشتغلوا بالزراعة واتبعوا أذناب البقر قعدوا عن الغزو فكر عليهم عدوهم فجعلوهم أذلة. (فتح القدير: 6/40 ط. دار الفكر)
মুসলিমের জন্য যিম্মীর জমি ক্রয় করা জায়েয এবং মুসলিম তা ক্রয় করলে তার কাছে কর উসুল করা হবে, কেননা সাহাবায়ে কেরাম যিম্মীদের জমি ক্রয় করেছেন এবং তারা এর করও আদায় করতেন, … কিছু যাহেদ-সূফী কর আদায় করা মাকরুহ বলেন, তাদের ধারণা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হাদিসে চাষাবাদকে লাঞ্চনার কারণ বলেছেন, এখানে লাঞ্চনা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কর আদায় করা, কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয়, বরং হাদিসের উদ্দেশ্য হলো যখন মুসলিমরা চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, গাভীর লেজের পেছনে পড়ে থাকবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে তখন শত্রুরা তাদের উপর আক্রমণ করবে এবং তাদের লাঞ্চিত-অপদস্থ করবে। ফাতহুল কাদীর, ৬/৪০
মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ১০১৪ হি.) বলেন,
ظاهر هذا الحديث أن الزراعة تورث المذلة، وليس كذلك لأن الزراعة مستحبة لأن فيها نفعا للناس، بل إنما قال ذلك لئلا يشتغل الصحابة بالعمارات وبترك الجهاد فيغلب عليهم الكفار. وأي ذل أشد من ذلك. (مرقاة المفاتيح: 5/1989 ط. دار الفكر: 1422)
হাদিসের বাহ্যিক বিবরণ থেকে বুঝা যায়, চাষাবাদ লাঞ্চনার কারণ, কিন্তু বিষয়টি এমন নয়, কেননা চাষাবাদের দ্বারা মানুষের উপকার হয়, তাই তা মুস্তাহাব, বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন, যেন সাহাবায়ে কেরাম চাষাবাদে লিপ্ত হয়ে জিহাদ পরিত্যাগ না করেন, অন্যথায় কাফেররা তাদের উপর বিজয়ী হয়ে যাবে, আর এর চেয়ে বড় যিল্লতি আর কি হতে পারে?। -মিরকাতুল মাফাতীহ, ৫/১৯৮৯
সারাখসী রহিমাহুল্লাহ মাবসূত গ্রন্থে (৩০/২৫৯) হাদিসের এই ব্যাখার সমর্থণে ইবনে উমর রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নিম্মোক্ত হাদিসটি পেশ করেন,
إذا تبايعتُم بالعِينَةِ، وأخذتم أذنابَ البقرِ، ورضيتُم بالزَّرْع، وتركتُم الجهادَ، سَلَّط اللهُ عليكم ذُلاًّ لا ينزِعُه حتى تَرجِعُوا إلى دينكم.
أخرجه أحمد (4825) وأبو داود: (3462) وقال الشيخ أحمد شاكر في تعليقه على مسند أحمد: (4/414 ط. دار الحديث) : إسناده صحيح. وقال الشيخ الألباني في السلسلة الصحيحة (1/42 ط. مكتبة المعارف) : (حديث صحيح لمجموع طرقه) وحَسَّنه الشيخ شعيب الأرنؤوط في تعليقه على سنن أبي داود: (5/333 ط. دار الرسالة العالمية)
যখন তোমরা বাইয়ে ঈনা (একপ্রকার নিষিদ্ধ ক্রয়-বিক্রয়) করবে, গাভীর লেজ ধরে (হালচাষে) ব্যস্ত থাকবে, চাষাবাদ নিয়েই তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে, তখন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর লাঞ্চনা চাপিয়ে দিবেন, এবং তোমরা দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত লাঞ্চনা হতে মুক্তি দিবেন না। -সুনানে আবু দাউদ, ৩৪৬২ মুসনাদে আহমদ, ৪৮২৫ শায়েখ আহমদ শাকের ও শায়েখ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, শায়েখ শুয়াইব আরনাউত হাসান বলেছেন, (দেখুন, মুসনাদে আহমদ, তাহকীক, শায়েখ আহমদ শাকের, ৪/৪১৪; আসসিলসিলাতুস সহিহাহ, ১/৪২; সুনানে আবু দাউদ, তাহকীক, শায়েখ শুয়াইব আরনাউত, ৫/৩৩৩)
আকাবিরে দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব শায়েখ খলিল আহমদ সাহারানপুরী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ১৩৪৬ হি.) ইবনে উমর রাযিআল্লাহু আনহুর হাদিসের ব্যাখায় বলেন,
(وأخذتم أذناب البقر) يريد به اشتغالهم بالزرع عن الجهاد (ورضيتم بالزرع، وتركتم الجهاد، سلط الله عليكم ذلا لا ينزعه) أي: الذل (حتى ترجعوا إلى دينكم) أي: اعملوا على شريعة الإسلام، وجاهدوا في سبيل الله. (11/180 ط. مركز الشيخ أبي الحسن الندوي: 1427 هـ)
‘গাভীর লেজ ধরে থাকবে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জিহাদ পরিত্যাগ করে চাষাবাদে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
‘তোমরা দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত লাঞ্চনা হতে মুক্তি দিবেন না’ অর্থাৎ যতদিন না তোমরা শরিয়ত অনুযায়ী আমল করছো এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করছো ততদিন পর্যন্ত তিনি তোমাদেরকে লাঞ্চনা থেকে উদ্ধার করবেন না। -বজলুল মাজহুদ, ১১/১৮০
খেলাফতের দ্বায়িত্ব লাভের পর প্রদত্ত সর্বপ্রথম ভাষণে আবু বকর রাযিআল্লাহু আনহু বলেন,
لَا يَدعُ قَوْمٌ الْجِهَادَ فِى سَبِيلِ الله إِلَّا ضَرَبَهُمْ الله بالذُّلِّ، وَلَا تَشِيعُ الْفَاحِشَةُ فِى قَوْمٍ قَطُّ إِلَّا عَمَّهُمُ الله بالْبَلَاءِ. رواه ابن إسحاق في السيرة، قال: وحدثني الزهري، قال: حدثني أنس بن مالك، قال: لما بويع أبو بكر في السقيفة وكان الغد، جلس أبو بكر على المنبر، (ص: 718 ط. دار الكتب العلمية) وقال ابن كثير في البداية والنهاية (5/248 ط. دار الفكر): وهذا إسناد صحيح.
যে জাতিই জিহাদ পরিত্যাগ করে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপরই লাঞ্চনা চাপিয়ে দেন, আর যে জাতির মাঝেই অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে আল্লাহ তাদের (নেককার ও বদকার সবাইকেই) ব্যাপকভাবে শাস্তি দেন। - সীরাতে ইবনে ইসহাক, পৃ: ৭১৮, ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৭৭৪ হি.) আলবিদায়া ওয়াননিহায়াতে (৫/২৪৮) এই হাদিসটির সনদকে সহিহ বলেছেন।
জিহাদ পরিত্যাগের উপর কুরআন শরিফের একাধিক আয়াতেও শাস্তির ধমকী এসেছে, ইরশাদ হয়েছে,
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ (24)
যদি তোমাদের পিতা-পুত্র, ভাই-স্ত্রী ও (অন্যান্য) আত্মীয়স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, এবং ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশংকা তোমরা করো, এবং তোমাদের পছন্দের বাসস্থান তোমাদের নিকট আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল ও আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে পছন্দনীয় হয় তাহলে তোমরা অপেক্ষা করো, যতক্ষণ না তিনি তোমাদের ব্যাপারে ফায়সালা করেন, আল্লাহ তায়ালা ফাসেকদের হেদায়াত দান করেন না। সূরা তাওবা, আয়াত, ২৪
আয়াতের ব্যখ্যায় ইমাম ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ বলেন,
)فتربصوا) أي: فانتظروا ماذا يحل بكم من عقابه ونكاله بكم؛ ولهذا قال: (حتى يأتي الله بأمره والله لا يهدي القوم الفاسقين) وروى الإمام أحمد، وأبو داود -واللفظ له -من حديث أبي عبد الرحمن الخراساني، عن عطاء الخراساني، عن نافع، عن ابن عمر قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إذا تبايعتم بالعينة، وأخذتم بأذناب البقر، ورضيتم بالزرع، وتركتم الجهاد، سلط الله عليكم ذلا لا ينزعه حتى ترجعوا إلى دينكم. وروى الإمام أحمد أيضا عن يزيد بن هارون، عن أبي جناب، عن شهر بن حوشب أنه سمع عبد الله ابن عمرو عن رسول الله صلى الله عليه وسلم بنحو ذلك، وهذا شاهد للذي قبله، والله أعلم. (تفسير القرآن العظيم: 4/124 ط. دار طيبة: 1420 ه.)
অর্থাৎ ‘তোমরা শাস্তির অপেক্ষা করো’, এরপর তিনি উপরে বর্ণিত ইবনে উমর রাযিআল্লাহু আনহুর হাদিস ‘যখন তোমরা বাইয়ে ঈনা করবে ...’ বর্ণণা করেন, যা প্রমাণ করে এখানে আল্লাহ তায়ালার বাণী ‘তোমাদের ব্যাপারে ফায়সালা’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কাফেরদের নিকট পরাজয় ও লাঞ্চনা-যিল্লতি। (দেখুন, তাফসীর ইবনে কাসীর, ৪/১২৪)
গত শতাব্দীর বরেণ্য আলেম আবু যুহরা মিসরী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ১৩৯৪ হি.) বলেন,
(فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ) أي ترقبوا، حتى تنزل المذلة إن استرخيتم تحت ظل النعيم. (زهرة التفاسير: 6/3263 ط. دار الفكر العربي)
অর্থাৎ যদি তোমরা (জিহাদ ছেড়ে দিয়ে) আরাম আয়েশে থাকতেই পছন্দ করো, তাহলে যিল্লতি ও লাঞ্চনার শিকার হওয়ার অপেক্ষা করো। (যুহরাতুত তাফাসীর, ৬/৩২৬৩)
অন্য আয়াতে এসেছে,
إِلَّا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
যদি তোমরা জিহাদে বের না হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতি নিয়ে আসবেন। তোমরা তার কোনই ক্ষতিই করতে পারবে না। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম । -সূরা তাওবা, আয়াত, ৯ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৬৭১ হি.) বলেন,
قال ابن العربي: العذاب الأليم هو في الدنيا باستيلاء العدو وبالنار في الآخرة. (تفسير القرطبي: 8/142 ط. دار الكتب المصرية: 1384هـ)
ইবনুল আরবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হবে দুনিয়াতে কাফেররা (মুসলিমদের উপর) চড়াও হওয়া এবং আখেরাতে আগুণের দ্বারা। -তাফসীরে কুরতুবী, ৮/১৪২
আল্লামা শানকীতী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ১৩৯৩ হি.) বলেন,
{يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا} الظاهرُ أن هذا العذابَ شاملٌ لعذابِ الدنيا وعذابِ الآخرةِ، لأن التكاسلَ عن مقاومةِ الأعداءِ في دارِ الدنيا من أسبابِ عذابِ الدنيا؛ لأنه يُضْعِفُ المسلمينَ ويقوي أعداءَهم فيُهينونهم في قعرِ بيوتِهم كما هو واقعٌ الآنَ؛ لأن المسلمينَ، أو من يتسمونَ باسمِ المسلمينَ معذبونَ في أقطارِ الدنيا من جهةِ الكفرةِ، يضطهدونَهم، ويظلمونَهم، ويقتلونَهم، ويتحكمونَ في خيراتِ بلادِهم، وهذا كُلُّهُ من أنواعِ عذابِ الدنيا لتركِهم الجهادَ وإعلاءَ كلمةِ اللَّهِ (جلَّ وعلا). (العَذْبُ النَّمِيرُ مِنْ مَجَالِسِ الشَّنْقِيطِيِّ فِي التَّفْسِيرِ: 5/509 دار عالم الفوائد: 1426 هـ)
আয়াতে আযাব দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়জগতের শাস্তি উদ্দেশ্য, কেননা শত্রুর মোকাবেলা না করলে মুসলমানরা দূর্বল হয়ে যাবে, শত্রুরা শক্তিশালী হয়ে যাবে, ফলে তারা মুসলিমভূমিতে এসে তাদের লাঞ্চিত-অপদস্থ করবে, যেমনটা বর্তমানে ঘটছে, মুসলিমরা কিংবা (বলা ভালো) মুসলিম নামধারী লোকেরা (চাই ইসলামের সাথে তাদের সম্পর্ক যতই দূর্বল হোক) পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কাফেরদের হাতে আযাব ভোগ করছে, কাফেররা তাদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে, তাদের হত্যা ও বন্দী করছে এবং তাদের সম্পদ লুট করছে, এই সবকিছুই জিহাদ পরিত্যাগের কারণে মুসলমানদের দুনিয়াবী শাস্তি। (আলআযবুন নামির, ৫/৫০৯)
এখানে লক্ষ্যনীয় হলো, হাদিসে জিহাদ পরিত্যাগ ও লাঞ্চনাকে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ উম্মাহ যখনই জিহাদ ছেড়ে দিবে তখনই তার ভাগ্যাকাশ লাঞ্চনার কালোমেঘে ছেয়ে যাবে, যদিও শক্তি না থাকা, ইমাম না থাকা বা এ জাতীয় শত বাহানায় সে জিহাদ পরিত্যাগ করে।
সুতরাং প্রিয় পাঠক, আমাদের সামনে শুধু দুটি পথই রয়েছে, হাদিসের বর্ণণা অনুযায়ী তৃতীয় এমন কোন পদ্ধতি নেই যার মাধ্যমে আমরা জিহাদও করবো না আবার সম্মান মর্যাদার সাথেও জীবনযাপন করতে পারবো, সুতরাং আপনি চিন্তা করুন, কোনটি বেছে নিবেন,
১. শক্তি না থাকার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন, না শক্তি অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন?
২. মুসলমানদের জন্য শক্তি অর্জনের গুরুত্ব তো বর্ণনা করবেন কিন্তু সাথে সাথেই এ দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হয়ে যাবেন, নাকি নিজেরাও যথাসাধ্য শক্তি অর্জন করবেন?
৩. জিহাদের পূর্বে আত্মশুদ্ধি কিংবা আকিদার পরিশুদ্ধি করতে হবে, এ কথা বলবেন না জিহাদের মাধ্যমেই এবং জিহাদের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি ও আকিদার পরিশুদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাবেন?
৪. ইমাম নেই বলে জিহাদ করা যাবে না, একথা বলবেন, না ইমাম না থাকলে দলগঠন করে একজনকে ইমাম বা আমির বানিয়ে নিবেন এবং প্রস্তুতি অর্জনের পর আমিরের অধীনে জিহাদ শুরু করবেন?
যদি প্রথমটা করা হয় তাহলে হাদিসের সুষ্পষ্ট ভাষ্য অনুযায়ী আমাদের লাঞ্চনা কখনোই ঘুচবে না, দু:খদূর্দশার এই ঘোর অমানিশা কিছুতেই কাটবে না। আর যদি দ্বিতীয় পন্থাটি অবলম্বন করা হয় তাহলে সম্মান ও মর্যাদার দিকে আমাদের পথচলা শুরু হবে, এবং ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই আমাদের হারানো গৌরব ফিরে আসবে, এটাই আল্লাহর তায়ালার ওয়াদা, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (10) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (11) يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (12) وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক ব্যবসার সন্ধান দিবো যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে মুক্তি দিবে, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ইমান আনবে এবং আল্লাহর রাস্তায় জানমাল দিয়ে জিহাদ করবে, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, (হায়) যদি তোমরা তা জানতে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন উদ্যানে যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে, এবং (প্রবেশ করাবেন) চিরস্থায়ী জান্নাতের উৎকৃষ্ট বাসস্থানে। এটাই মহা সফলতা। এবং তোমাদের দান করবেন এমন একটি নেয়ামত যা তোমরা (খুবই) পছন্দ করো, (অর্থাৎ) আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্য এবং অত্যাসন্ন বিজয়। -সূরা সফ, ১০-১২
Comment