দারসুল হাদিস
মুমিনের মুসীবত মর্যাদা লাভেরই সোপান
মুহাম্মাদ আনিসুর রহমান
الحمد لله الذى وحده والصلوة والسلام على من لا نبى بعده، اما بعد: فقد قال رسول الله صلَّى الله عليه وسلّم: مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ
مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ
‘‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান; তাকে মুসীবতে আক্রান্ত করেন।” -সহীহ বুখারী: ৫৬৪৫
আল্লাহ তা‘আলার সবচেয়ে নৈকট্যশীল বান্দা নবী-রাসূলগণই সর্বাপেক্ষা বেশি বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবতে আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় এবং দ্বীনের ওপর দৃঢ়পদে অটল-অবিচল থাকার ক্ষেত্রে তাঁরা সম্মুখীন হয়েছেন একের পর এক পাহাড়সম কঠিন পরীক্ষায়। আর যারা নবী-রাসূলগণের একনিষ্ঠ অনুসারী, তাঁদের উত্তম আদর্শের আলোকে মহান আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী; তাঁদের ওপরও একের পর এক পরীক্ষা আপতিত হয়। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে - ‘‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান; তাকে মুসীবতে আক্রান্ত করেন।” -সহীহ বুখারী: ৫৬৪৫
عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً؟ قَالَ: الأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الأَمْثَلُ فَالأَمْثَلُ، فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ، وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَمَا يَبْرَحُ البَلَاءُ بِالعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
মুস‘আব ইবনে সা’দ রহ. হতে তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত, তিনি (সা’দ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! মানুষের মাঝে কার পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন নবীদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধার্মিক; তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে; তাহলে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব বান্দার ওপর বিপদ-আপদ লেগেই থাকে। অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে জমিনে চলাফেরা করে; অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না। -সুনানে তিরমিযী: ২৩৯৮
এ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, যারা আল্লাহ তা‘আলার যত অধিক নৈকট্যশীল; তাদেরকে তত বেশি কঠিন ইবতিলা তথা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যার ওপর কোন বিপদাপদই আপতিত হয় না, এটা তার জন্যে বুযুর্গীর কোন বিষয় নয়; বরং বুঝতে হবে সে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মত তাওহীদের একনিষ্ঠ বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। মুস‘আব ইবনে সা’দ রহ. হতে তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত, তিনি (সা’দ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! মানুষের মাঝে কার পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন নবীদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধার্মিক; তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে; তাহলে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব বান্দার ওপর বিপদ-আপদ লেগেই থাকে। অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে জমিনে চলাফেরা করে; অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না। -সুনানে তিরমিযী: ২৩৯৮
মুমিন বান্দার ওপর তাদের মহান রবের বিশেষ অনুগ্রহ যে, তারা সামান্য কষ্ট আর আঘাত সহ্য করার কারণে, তাদের আমলনামা থেকে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ الصَّالِحِينَ يُشَدَّدُ عَلَيْهِمْ، وَإِنَّهُ لَا يُصِيبُ مُؤْمِنًا نَكْبَةٌ مِنْ شَوْكَةٍ، فَمَا فَوْقَ ذَلِكَ إِلَّا حُطَّتْ بِهِ عَنْهُ خَطِيئَةٌ، وَرُفِعَ بِهَا دَرَجَةً
‘‘নেককার লোকেরা অধিক পরিমাণে কষ্টের সম্মুখীন হন; আর কোন মুমিনের গায়ে যদি কোন কাটার আঁচড় লাগে, তাহলে তার আমলনামা থেকে সে পরিমাণ গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” -মুসনাদে আহমাদ
إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلاءِ، وإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاهُمْ، فمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ
‘‘নিশ্চয়ই বিপদ বাড়ার সাথে সাথে প্রতিদানও বৃদ্ধি পায়, আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন; তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। যে ব্যক্তি পরীক্ষার এই কঠিন মুহূর্তেও সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তা‘আলাও তার ওপর সন্তুষ্ট থাকেন। আর যে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়, আল্লাহ তা‘আলাও তার ওপর অসন্তুষ্ট হন।” -তিরমিযী
‘‘নিশ্চয়ই বিপদ বাড়ার সাথে সাথে প্রতিদানও বৃদ্ধি পায়, আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন; তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। যে ব্যক্তি পরীক্ষার এই কঠিন মুহূর্তেও সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তা‘আলাও তার ওপর সন্তুষ্ট থাকেন। আর যে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়, আল্লাহ তা‘আলাও তার ওপর অসন্তুষ্ট হন।” -তিরমিযী
সুতরাং আমরা খুব সহজে এ কথা বুঝতে পারি মুমিনদের ওপর আপতিত যে কোন কষ্ট-ক্লেশ, বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবত তাদের জন্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়, গুনাহ মাফের মাধ্যম এবং উচ্চ মর্যাদা লাভের একেকটি সোপান। এ জন্যে আমাদেরকে সব ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত প্রতিদান লাভের আশায় সন্তুষ্ট চিত্তে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষার মাধ্যমেই যাচাই করবেন, কারা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধৈর্যধারণ করে? পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন -
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ
‘‘নাকি তোমরা মনে করেছ যে, তোমরা (এমনিতেই) জান্নাতে পৌঁছে যাবে; অথচ আল্লাহ এখনও পর্যন্ত তোমাদের মধ্য হতে সেই সকল লোককে যাচাই করে দেখেননি, যারা জিহাদ করবে এবং তাদেরকেও যাচাই করে দেখেননি, যারা ধৈর্যধারণ করবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৪২)
‘‘নাকি তোমরা মনে করেছ যে, তোমরা (এমনিতেই) জান্নাতে পৌঁছে যাবে; অথচ আল্লাহ এখনও পর্যন্ত তোমাদের মধ্য হতে সেই সকল লোককে যাচাই করে দেখেননি, যারা জিহাদ করবে এবং তাদেরকেও যাচাই করে দেখেননি, যারা ধৈর্যধারণ করবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৪২)
মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সকল বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবতে উত্তম ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
(লেখাটি আল বালাগ ম্যাগাজিনের ৩য় সংখ্যা থেকে সংগৃহীত ও অনূদিত)
Comment