ইমাম মাহদীর ব্যাপারে প্রচলিত যয়ীফ ও মওযু হাদিস
ইমাম মাহদীর পরিচয় সম্পর্কে ইতিপূর্বে সহিহ হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ইমাম মাহদীর পরিচয়ের ব্যাপারে সহিহ হাদিসের পাশাপাশি অনেক যয়ীফ ও মওযু হাদিস রয়েছে, সেগুলো আমাদের জানার তেমন প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কাযী ইবরাহীম সাহেব ইউটিউবে সেগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা করছেন। তিনি মুহাদ্দিস-আলেম হওয়ার কারণে মানুষ তার উপর আস্থা রেখে সেগুলো বিশ্বাসও করছে। অথচ সে হাদিসগুলো শুধু যয়ীফই নয়। বরং তার কিছু কিছু মওযু ও জাল। কাযী ইবরাহীম সাহেবকে আমরা অন্যান্য আহলে হাদিসের তুলনায় ভালো মনে করি। তিনি রফয়ে ইদাইনের মত মুস্তাহাব বিষয়াদী নিয়ে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেন না। তাছাড়া কেউই যখন ফিতানের ব্যাপারে তেমন চর্চা করছে না তখন তার চর্চাও প্রশংসনীয়। কিন্তু তিনি যদি হাদিসগুলো একটু যাচাই করে বলতেন তাহলে আর আমাদের এ কষ্ট করার প্রয়োজন হতো না। যাই হোক এখন যেহেতু তিনি এ ধরণের যয়ীফ ও মওযু হাদিসগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাই এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা যখন ইমাম মাহদী আসবে এবং তার সাথে যয়ীফ ও মওযু হাদিসে বর্ণিত আলামতগুলো মিলবে না তখন হয়তো আমরা অনেকেই বিভ্রান্তির শিকার হবো। তাই ধারাবাহিকভাবে এ ধরণের হাদিসগুলো নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
ইমাম মাহদীর আবির্ভাবস্থল
حدثنا محمد بن تمام بن صالح الحمصي، بحمص، حدثنا عبد الوهاب بن الضحاك، حدثنا إسماعيل بن عياش، عن صفوان بن عمرو، عن عبد الرحمن بن جبير بن نفير، عن كثير بن مرة، عن عبد الله بن عمرو بن العاص قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "يخرج المهدي من قرية باليمين يقال لها: كرعة، وعلى رأسه عمامة فيها مناد ينادي: ألا إن هذا المهدي فاتبعوه". (معجم ابن المقرئ، رقم: 90)
وعبد الوهاب بن الضحاك متهم، قال الذهبي في ميزان الاعتدال: (2/679 دار المعرفة للطباعة والنشر، بيروت – لبنان الطبعة: الأولى، 1382 هـ) :
(كذبه أبو حاتم. وقال النسائي وغيره: متروك .وقال الدارقطني: منكر الحديث. وقال البخاري: عنده عجائب). وذكر له الذهبي هذا الحديث من أوابده.
وعبد الوهاب بن الضحاك متهم، قال الذهبي في ميزان الاعتدال: (2/679 دار المعرفة للطباعة والنشر، بيروت – لبنان الطبعة: الأولى، 1382 هـ) :
(كذبه أبو حاتم. وقال النسائي وغيره: متروك .وقال الدارقطني: منكر الحديث. وقال البخاري: عنده عجائب). وذكر له الذهبي هذا الحديث من أوابده.
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মাহদী ইয়ামানের ‘কারআ’ নামক গ্রাম হতে বের হবেন। তার মাথায় একটি পাগড়ী থাকবে, যে পাগড়ীতে একজন ফেরেশতা থাকবেন, তিনি ঘোষণা করতে থাকবেন, শোন! এই হলো মাহদী, তোমরা তার অনুসরণ করো। (মু’জামু ইবনুল মুকরী, ৯০ কাযী ইবরাহীম সাহেবের বয়ানের লিংক:- https://www.youtube.com/watch?v=IHMrGZZlcFA এর ২ : ৩৪ মিনিট)
হাদিসের মান:- হাদিসটা নিতান্তই দূর্বল, বরং মওযু, হাদিসের একজন রাবী আব্দুল ওয়াহহাব বিন যাহহাক সম্পর্কে ইমাম আবু দাউদ বলেন, সে জাল হাদিস বানায়। ইমাম আবু হাতেম রাযী তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। নাসায়ী মাতরুক বা পরিত্যাজ্য বলেছেন, দারাকুতনী ‘মুনকারুল হাদিস’ বলেছেন। ইমাম বুখারী বলেন, সে বহু আশ্চর্যজনক হাদিস বর্ণনা করেছে। হাফেয যাহাবী বলেন, এই হাদিসটা তার বিরল হাদিসসমূহের একটা। (দেখুন, মিযানুল ইতিদাল, ২/৬৭৯ যখিরাতুল হুফফায, ৫/২৭৮১ দারুস সালাফ, রিয়ায, প্রথম প্রকাশনা, ১৪১৬ আলমওসুয়্যাহ ফি আহাদিসিল মাহদী আযযয়ীফাহ ওয়াল মওযুয়্যাহ, ডক্টর আব্দুল আলীম বস্তাভী, পৃ: ৩৭৬ দারু ইবনি হাযম, বৈরুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশনা, ১৪২০ হি.)
ইমাম মাহদী ২০২১ সালে আসবেন
حدثنا الوليد بن مسلم، عن صدقة بن خالد، عن عبد الرحمن بن حميد، عن مجاهد، عن تبيع، قال: «سيعوذ بمكة عائذ فيقتل، ثم يمكث الناس برهة من دهرهم، ثم يعوذ عائذ آخر، فإن أدركته فلا تغزونه، فإنه جيش الخسف». رواه نعيم بن الحماد (935)
তুবাঈ রহ. বলেন, অচিরেই মক্কায় একব্যক্তি আশ্রয়গ্রহণ করে নিহত হবে। অতপর মানুষ কিছুকাল অবস্থান করবে। এরপর আরেকব্যক্তি আশ্রয়গ্রহণ করবে। যদি তুমি তাকে পাও তবে তার বিপক্ষে যুদ্ধ করো না। কেননা তার বিপক্ষের বাহিনীকেই যমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। -আলফিতান, নুয়াইম বিন হাম্মাদ, ৯৩৫ (https://www.youtube.com/watch?v=dn3-gMOuSMg এর 9 : 25 মিনিট)
হাদিসের মান:- এটা কোন হাদিস নয়। বরং তুবাঈ বিন আমের রহ. এর বক্তব্য যিনি একজন তাবেয়ী। তিনি ইহুদী আলেম কাবে’ আহবারের সৎপুত্র, তাঁর কাছে ইলম শিখেন, তাওরাত-ইঞ্জীল ইত্যাদি আসমানী কিতাব পড়েন। তাই তার বাণীকে হাদিসরুপে বিশ্বাস করার সুযোগ নেই। কেননা হতে পারে তিনি এ বিষয়গুলো কাবে আহবারের কাছে শিখিছেন কিংবা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবাদীতে পেয়েছেন। সুতরাং এগুলো ইসরাঈলী বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত, যার ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশনা হলো,
«لا تصدقوا أهل الكتاب ولا تكذبوهم» وقولوا: [آمنا بالله وما أنزل إلينا وما أنزل إليكم]. (صحيح البخاري: 7362)
“তোমরা আহলে কিতাবদের বর্ণিত বিষয়াদী সত্যায়ন না করা এবং মিথ্যা প্রতিপন্নও করো না। বরং তোমরা বলো, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছি এবং সেই বাণীর প্রতিও যা আমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে এবং তার প্রতিও যা তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে।” -সহিহ বুখারী, ৭৩৬২ আততাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সাদ, ৭/৩১৪ সিয়ারু আলামীন নুবালা, ৭/৪৬৬
উল্লেখ্য, হাদিস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী, কোন সাহাবী বা তাবেয়ী ভবিষ্যতের বিষয়াদী বর্ণনা করলে, সেটা তারা কোন না কোন ভাবে রাসূলের তরফ থেকেই জেনেছেন বলে ধরা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে শর্ত হলো, যেই সাহাবী বা তাবেয়ী তা বর্ণনা করছেন, তিনি ইসরাঈলী রেওয়ায়েত বর্ণনাকারী না হতে হবে। আর তুবাঈ রহ. যেহেতু ইসরাঈলী রেওয়ায়েত বর্ণনায় প্রসিদ্ধ তাই তিনি ভবিষ্যতের কোন বিষয়াদী বর্ণনা করলেও সেটা রাসুলের মাধ্যমে না জেনে ইসরাঈলী রেওয়ায়েত থেকে জেনেছেন বলেই বিবেচিত হবে। -দেখুন, নুযহাতুন নযর, হাফেয ইবনে হাযার, পৃ: ১১০৬/ মাতবাআতুল মিসবাহ, দিমাশক, তৃতীয় প্রকাশনা, ১৪২১ হি.; ফাতহুল মুগিস, হাফেয সাখাভী, ১/১৬৪ মাকতাবাতুস সুন্নাহ, প্রথম প্রকাশনা, ১৪২৪ হি.
চলবে ইনশাআল্লাহ
Comment