(ভারতের সাথে ইতিপূর্বে যত যুদ্ধ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে সব যুদ্ধই হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য- এ ব্যাপারে গতপর্বে ইমাম আবু ইসহাক ফাযারী ও ইবনে কাসীর রহ. এর বক্তব্য পেশ করেছি। এ পর্বে আল্লামা সিন্দী, আল্লামা যফর আহমদ উসমানী ও মুফতি শফী রহ. এর বক্তব তুলে ধরছি।)
আল্লামা সিন্দী রহ. (মৃত্যু: ১১৩৮ হি.) গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিসদ্বয়ের যে ব্যাখ্যা করেছেন তা থেকেও বুঝে আসে, এ ফযিলত হিন্দুস্তানের কাফেরদের সাথে যুদ্ধকারী সকল মুমিনদের জন্য আম-ব্যাপক, নির্দিষ্ট কোন দলের সাথে খাস নয়। তিনি আবু হুরাইরা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
“পরবর্তী হাদিস (সাওবান রাযি. এর হাদিসে) বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দরবারে উপস্থিত সবাইকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে, যারা হিন্দুস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন, এর ভিত্তিতেই আবু হুরাইরা এ হাদিসে বলছেন, যদি আমি ফিরে আসি তাহলে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হবো।” -সুনানে নাসায়ীর টিকা, ৬/৪২
মুফতি শফি রহ. ‘জাওয়াহিরুল ফিকহে’ (৬/৬৪) এ বিষয়টি সুস্পষ্টরুপে তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্য দেখুন,
“উল্লিখিত দু’টি হাদিসে গাযওয়ায়ে হিন্দের যে ফযিলত বর্ণিত হয়েছে এক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে যে, হিন্দুস্তানের জিহাদ তো হিজরি প্রথম শতক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সর্বদাই চলমান ছিল। সর্বপ্রথম জিহাদ হয়েছে মুহাম্মদ বিন কাসেমের নেতৃত্বে সিন্ধু অভিমুখে, যে যুদ্ধে কয়েকজন সাহাবী ও অসংখ্য তাবেয়ী অংশগ্রহণ করেন। তাহলে হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দ দ্বারা কি শুধু প্রথম জিহাদ উদ্দেশ্য না পূর্বে যত জিহাদ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যত জিহাদ হবে সবই উদ্দেশ্য?
হাদিসের শব্দে চিন্তা করলে এটাই বুঝে আসে যে, হাদিসের শব্দ যেহেতু ব্যাপক অর্থবহ তাই তাকে কোনো নির্দিষ্ট জিহাদের সাথে খাস করার কোনো কারণ নেই। সুতরাং হিন্দুস্তানের ময়দানে যুগে যুগে যত জিহাদ হয়েছে এবং পাকিস্তানের বর্তমান জিহাদ ও ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানের কাফেরদের সাথে যত জিহাদ হবে সবই এই মহান ফযিলত সম্বলিত সুসংবাদের অন্তর্ভুক্ত।” -জাওয়াহিরুল ফিকহ, ৬/৬৪
আল্লামা যফর আহমদ উছমানী রহ. ও এলাউস সুনানে (১২/৬৮৭) এই মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি ‘গাযওয়ায়ে হিন্দের ফযিলত’ শিরোনামে আবু হুরাইরা ও সাওবান রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসদ্বয় উল্লেখ করে উভয় হাদিসকে ‘হাসান’ বলে মন্তব্য করেন। এরপর তিনি বলেন,
“এ হাদিসদু’টি থেকে গাযওয়ায়ে হিন্দের ফযিলত সুস্পষ্টরূপে বুঝে আসে। তবে এ ফযিলত কি শুধু সর্বপ্রথম হিন্দুস্তানে জিহাদকারী দলের সাথে বিশেষিত, না তাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপ্ত যারা পরবর্তীতেও সময়ে সময়ে যুদ্ধ করে তাকে দারুল ইসলামে পরিণত করেছিল? তেমনিভাবে বর্তমানে তা দারুল হারবে রূপান্তর হওয়ার পর যারা তার বিপক্ষে যুদ্ধ করবে হাদিসদু’টির ফযিলত কি তাদেরকেও শামিল করবে? সাওবান রাযি. এর হাদিস থেকে প্রথম দলের সাথে খাস হওয়া বুঝা যায়। কিন্তু আবু হুরাইরা রাযি. এর হাদিস থেকে সব দলের ক্ষেত্রেই আম-ব্যাপক হওয়া বুঝে আসে। আর আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ তো অসীম, তিনি পরম দয়ালু, (তাই যারাই হিন্দুস্তানের কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবে তাদেরকেই তিনি নিজ অনুগ্রহে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিবেন এটাই আমাদের আশা)।” -ইলাউস সুনান, ১২/৬৮৭
মজার বিষয় হলো, ‘পোশাকি শায়খ’ আবু বকর যাকারিয়া ইবনে কাসীরের বক্তব্যকে ‘গাযওয়াতুল হিন্দ হয়ে গেছে’- এ দাবীর স্বপক্ষে দলিল হিসেবে পেশ করেছে। সাথে সে আরেকটু যুক্ত করে বলেছে, “গাযওয়ায়ে হিন্দ আগেও হয়েছে, সর্বপ্রথম হয়েছে মুহাম্মদ বিন কাসেমের সময়ে, তারপর সুলতান মাহমুদ গযনবী করেছেন সতেরোবার, তারপর করেছেন সুলতান মুহাম্মদ ঘুরী। এ যুদ্ধ হয়ে গেছে এটাই ইবনে কাসীরের মত, সত্যনিষ্ঠ আলেমদের মত। ...যদি আবারো হয়, আবার হতেও পারে, তবে এটা হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দ নয়।” অর্থাৎ, সে বলতে চাচ্ছে: মুহাম্মদ বিন কাসেম, মাহমুদ গযনবী ও মুহাম্মদ ঘুরী এদের সকলের যুদ্ধই হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের মেসদাক-উদ্দেশ্য। মুহাম্মদ ঘুরী যেহেতু ইবনে কাসীরের পরের যমানার লোক তাই ইবনে কাসীর তার কথা উল্লেখ করেননি। তবে তার জিহাদও হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য। কিন্তু এই মাথামোটা শায়খকে কে বুঝাবে, যদি মুহাম্মদ বিন কাসেম থেকে শুরু করে মুহাম্মদ ঘুরী পর্যন্ত হিন্দুস্তানে সংঘটিত সব যুদ্ধই হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য হতে পারে, সুলতান মাহমুদ গযনবীর সতেরোবার ভারত আক্রমণ সবগুলো এর মেসদাক-উদ্দেশ্য হতে পারে, তবে বর্তমান বা ভবিষ্যতে সংঘটিত হিন্দুস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ কেন হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য হবে না? এখানে পূর্বে সংঘটিত যুদ্ধ এবং ভবিষ্যতে ঘটিতব্য যুদ্ধের মাঝে তো আমরা তেমন কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না। একটা পার্থক্য অবশ্য ধরা যায়। তা হলো, পূর্বে যত যুদ্ধই সংঘটিত হয়েছে সবগুলো হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য হতে মানা নেই। কারণ, তাতে যাকারিয়ার মতো জিহাদবিরোধী মুনাফিকদের অংশগ্রহণের কোনো ব্যাপার নেই। কিন্তু বর্তমান বা ভবিষ্যতে গাযওয়ায়ে হিন্দ হলে তাতে তো এই মুনাফিকদেরও জিহাদে শরিক হওয়ার মাসয়ালা আসবে, তখন ইসলামের সূচনালগ্নে যেমন জিহাদে অংশগ্রহণে গড়িমসির মাধ্যমে মুনাফিকদের নেফাক প্রকাশ পেয়েছিল, তেমনি গাযওয়ায়ে হিন্দ থেকে বসে থাকার কারণে এদের নেফাকীও প্রকাশ পেয়ে যাবে। জুব্বা ও আবা-কাবা পড়ে শায়খগিরির কপটতাপূর্ণ খোলস খসে পড়বে। তাই গাযওয়াতুল হিন্দ নিয়ে তাদের এত মাথাব্যাথা। কেউ গাযওয়ায়ে হিন্দের সব হাদিসকে যয়ীফ সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে, কেউ সহিহ মানলেও হয়ে গেছে বলে দাবী করে।
এই ভিডিওতে শায়খ যাকারিয়া আরো অনেক বস্তাপচা বক্তব্য দিয়েছে। যেমন সে বলেছে, “আপনি যু্দ্ধ যদি করেনও কিন্তু আপনার যদি আকীদা শুদ্ধ না থাকে তবে আপনার যুদ্ধের কোনো মূল্য হবে না।” অথচ সে ইতোপূর্বে মাহমুদ গযনবীর ভারত অভিযানকে হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য প্রমাণ করে এসেছে। মূর্খ লোকটি এটাও জানে না যে, মাহমুদ গযনবীর আকীদা পুরোপুরি শুদ্ধ ছিল না। তিনি আকীদার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর অনুসারী ছিলেন না। তিনি ছিলেন কাররামী। ইবনে কাসীর রহ. তাঁর ব্যাপারে বলেছেন,
“তিনি আকীদার ক্ষেত্রে কাররামিয়্যাহদের অনুসারী ছিলেন, তার সভাসদদের মধ্যে মুহাম্মদ বিন হাইযম (কাররামীও) ছিল। ইবনে হাইযম এবং উস্তায আবু বকর ফুরাকের মাঝে আল্লাহ তায়ালার আরশে সমাসীন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়। ইবনে হাইযম তার রচিত এক কিতাবে এর বিবরণ দিয়েছে। সুলতান মাহমুদ গযনবী ইবনে হাইযমের মতই গ্রহণ করেন। বরং তিনি উস্তায আবু বকর ফুরাককে তার দরবার হতে তাড়িয়ে দেন, (সুলতানের ধারণা অনুযায়ী) উস্তায আবু বকরের মত জাহমীদের মতের সাথে মিলে যাওয়ার কারণে।” -আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১২/৩৮
সে আরো বলেছে, “গাযওয়ায়ে হিন্দের জন্য কোন প্রস্তুতি নিবেন না, প্রস্তুতি নেয়া জঘন্য কাজ হবে।” সুবহানাল্লাহ, চিন্তা করুন, আল্লাহ তায়ালা ও তার দ্বীনের ব্যাপারে এরা কি চরম ধৃষ্টতা পোষণ করছে। গাযওয়ায়ে হিন্দ হোক বা না হোক, জিহাদের জন্য প্রস্ততিগ্রহণ তো সর্বাবস্থায় ফরয, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সুস্পষ্ট আদেশ দিয়েছেন। আর এ প্রস্তুতি নিতে শুধু নিষেধই করছে না, বরং একে জঘন্য কাজ বলছে!
পরিশেষে বলব, বর্তমান পরিস্থিতিতে মূলত গাযওয়ায়ে হিন্দের ব্যাপারে এসব তাত্ত্বিক আলোচনার তেমন প্রয়োজনই পড়ে না। হিন্দুরা যেভাবে ভারতের মুসলিমদের উপর প্রকাশ্যে নির্যাতন করছে আর বাংলাদেশেও ইসকনের মাধ্যমে প্রশাসনকে হাত করে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন জিহাদ ব্যতীত মুসলিমদের মুক্তির আর কী উপায় আছে? সুতরাং আহলে হাদিস ভাইদের নিকট আবেদন, আমরা আপনাদেরকে আমাদের ভাই-ই মনে করি। সামান্য কিছু মাসয়ালাতে হানাফী মাযহাবের বিপরীতে হাদিসের উপর আমল করলে আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সহিহ হাদিস অনুসরণের নামে আপনারা আসলে কাদের অনুসরণ করছেন? জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত, রাষ্ট্র শর্ত, ইমান-আকীদা বিশুদ্ধ করা শর্ত, এ বিষয়গুলো কোন হাদিসে আছে? তাই আপনারা এ শায়খদের ব্যাপারে সতর্ক হোন। মনে রাখবেন, ভারতীয় আগ্রাসন শুরু হলে জিহাদ বিরোধী এ শায়খরা আপনাদের মুক্তির জন্য কিছুই করবে না, বরং তারা বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা বন্ধ করে তাদের খোদা মুহাম্মদ বিন সালমানের দেশে পালানোর চেষ্টা করবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বিষয়গুলো বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রথম পর্বের লিংক
https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232503%3B!
আল্লামা সিন্দী রহ. (মৃত্যু: ১১৩৮ হি.) গাযওয়াতুল হিন্দের হাদিসদ্বয়ের যে ব্যাখ্যা করেছেন তা থেকেও বুঝে আসে, এ ফযিলত হিন্দুস্তানের কাফেরদের সাথে যুদ্ধকারী সকল মুমিনদের জন্য আম-ব্যাপক, নির্দিষ্ট কোন দলের সাথে খাস নয়। তিনি আবু হুরাইরা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
(المحرر أي: المعتق من النار على مقتضى ذلك العمل النجيب، … والحديث الآتي (يعني حديث ثوبان) يدل على أنه بشَّر كُلَّ من حضر بذلك، فقوله بذلك مبني على أنه حينئذ يكون مندرجا فيمن بُشروا بذلك، والله تعالى أعلم (حاشية السندي على سنن النسائي: 6/42 مكتب المطبوعات الإسلامية – حلب الطبعة: الثانية، 1406 - 1986)
“পরবর্তী হাদিস (সাওবান রাযি. এর হাদিসে) বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দরবারে উপস্থিত সবাইকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে, যারা হিন্দুস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন, এর ভিত্তিতেই আবু হুরাইরা এ হাদিসে বলছেন, যদি আমি ফিরে আসি তাহলে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হবো।” -সুনানে নাসায়ীর টিকা, ৬/৪২
মুফতি শফি রহ. ‘জাওয়াহিরুল ফিকহে’ (৬/৬৪) এ বিষয়টি সুস্পষ্টরুপে তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্য দেখুন,
هندوستان كے جهاد سے كونسا جهاد مراد هے ؟
ان دونوں حديثوں ميں جو فضائل غزو ه هند كے ارشاد فرماۓ گۓ هيں اس ميں يه سوال پيدا هوتا هے كے هندوستاں پر جهاد تو پهلي صدي هجري سے ليكر آج تك مختلف زمانوں ميں هوتے رهے هيں، أور سب سے پهلا سنده كي طرف سے محمد بن قاسم كا جهاد هے جس ميں بعض صحابه رضي الله عنهم أور اكثر تابعين كي كثرت نقل كي جاتي هے، تو كيا اس سے مراد صرف پهلا جهاد هے يا جتنے جهاد هو چكے يا آئنده هوں گے وه سب اس ميں شامل هيں؟
ألفاظ حديث ميں غور كرنے سے حاصل يهي معلوم هوتا هے كے الفاظ* حديث كے عام هيں اس كو كسي خاص جهاد كيساتھ مخصوص ومقيد كرنے كي كوئي وجه نهيں اس لے جتنے جهاد هندوستان ميں مختلف زمانوں ميں هوتے رهے هیں اور پاكستان كي حاليه جهاد بھي اور آئنده جو بھي جهاد هندوستان كے كفار كے خلاف هوگا وه سب اس عظيم الشان بشارت ميں شامل هيں – والله سبحانه وتعالى أعلم – (جواهر الفقه 6/64)
ألفاظ حديث ميں غور كرنے سے حاصل يهي معلوم هوتا هے كے الفاظ* حديث كے عام هيں اس كو كسي خاص جهاد كيساتھ مخصوص ومقيد كرنے كي كوئي وجه نهيں اس لے جتنے جهاد هندوستان ميں مختلف زمانوں ميں هوتے رهے هیں اور پاكستان كي حاليه جهاد بھي اور آئنده جو بھي جهاد هندوستان كے كفار كے خلاف هوگا وه سب اس عظيم الشان بشارت ميں شامل هيں – والله سبحانه وتعالى أعلم – (جواهر الفقه 6/64)
“উল্লিখিত দু’টি হাদিসে গাযওয়ায়ে হিন্দের যে ফযিলত বর্ণিত হয়েছে এক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে যে, হিন্দুস্তানের জিহাদ তো হিজরি প্রথম শতক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সর্বদাই চলমান ছিল। সর্বপ্রথম জিহাদ হয়েছে মুহাম্মদ বিন কাসেমের নেতৃত্বে সিন্ধু অভিমুখে, যে যুদ্ধে কয়েকজন সাহাবী ও অসংখ্য তাবেয়ী অংশগ্রহণ করেন। তাহলে হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দ দ্বারা কি শুধু প্রথম জিহাদ উদ্দেশ্য না পূর্বে যত জিহাদ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যত জিহাদ হবে সবই উদ্দেশ্য?
হাদিসের শব্দে চিন্তা করলে এটাই বুঝে আসে যে, হাদিসের শব্দ যেহেতু ব্যাপক অর্থবহ তাই তাকে কোনো নির্দিষ্ট জিহাদের সাথে খাস করার কোনো কারণ নেই। সুতরাং হিন্দুস্তানের ময়দানে যুগে যুগে যত জিহাদ হয়েছে এবং পাকিস্তানের বর্তমান জিহাদ ও ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানের কাফেরদের সাথে যত জিহাদ হবে সবই এই মহান ফযিলত সম্বলিত সুসংবাদের অন্তর্ভুক্ত।” -জাওয়াহিরুল ফিকহ, ৬/৬৪
আল্লামা যফর আহমদ উছমানী রহ. ও এলাউস সুনানে (১২/৬৮৭) এই মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি ‘গাযওয়ায়ে হিন্দের ফযিলত’ শিরোনামে আবু হুরাইরা ও সাওবান রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসদ্বয় উল্লেখ করে উভয় হাদিসকে ‘হাসান’ বলে মন্তব্য করেন। এরপর তিনি বলেন,
هل هذه الفضيلة تختص بعصابة غزت الهند أولا أو تعم كل عصابة غزته أولا أو ثانيا أو ثالثا حتى جعلتها دار الإسلام، وكذا كل عصابة تغزوها فيما بعد لصيرورتها الآن دار حرب بعد ما بقيت دار إسلام مدة ألف سنة أو نحوها؟ فظاهر حديث ثوبان الأول، وظاهر حديث أبي هريرة الثاني، والكرم عميم، والله ذو الفضل العظيم. ... جعلنا الله .... من إحدى العصابتين التين أحرزهما من النار بحرمة سيد الأبرار
“এ হাদিসদু’টি থেকে গাযওয়ায়ে হিন্দের ফযিলত সুস্পষ্টরূপে বুঝে আসে। তবে এ ফযিলত কি শুধু সর্বপ্রথম হিন্দুস্তানে জিহাদকারী দলের সাথে বিশেষিত, না তাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপ্ত যারা পরবর্তীতেও সময়ে সময়ে যুদ্ধ করে তাকে দারুল ইসলামে পরিণত করেছিল? তেমনিভাবে বর্তমানে তা দারুল হারবে রূপান্তর হওয়ার পর যারা তার বিপক্ষে যুদ্ধ করবে হাদিসদু’টির ফযিলত কি তাদেরকেও শামিল করবে? সাওবান রাযি. এর হাদিস থেকে প্রথম দলের সাথে খাস হওয়া বুঝা যায়। কিন্তু আবু হুরাইরা রাযি. এর হাদিস থেকে সব দলের ক্ষেত্রেই আম-ব্যাপক হওয়া বুঝে আসে। আর আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ তো অসীম, তিনি পরম দয়ালু, (তাই যারাই হিন্দুস্তানের কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবে তাদেরকেই তিনি নিজ অনুগ্রহে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিবেন এটাই আমাদের আশা)।” -ইলাউস সুনান, ১২/৬৮৭
মজার বিষয় হলো, ‘পোশাকি শায়খ’ আবু বকর যাকারিয়া ইবনে কাসীরের বক্তব্যকে ‘গাযওয়াতুল হিন্দ হয়ে গেছে’- এ দাবীর স্বপক্ষে দলিল হিসেবে পেশ করেছে। সাথে সে আরেকটু যুক্ত করে বলেছে, “গাযওয়ায়ে হিন্দ আগেও হয়েছে, সর্বপ্রথম হয়েছে মুহাম্মদ বিন কাসেমের সময়ে, তারপর সুলতান মাহমুদ গযনবী করেছেন সতেরোবার, তারপর করেছেন সুলতান মুহাম্মদ ঘুরী। এ যুদ্ধ হয়ে গেছে এটাই ইবনে কাসীরের মত, সত্যনিষ্ঠ আলেমদের মত। ...যদি আবারো হয়, আবার হতেও পারে, তবে এটা হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দ নয়।” অর্থাৎ, সে বলতে চাচ্ছে: মুহাম্মদ বিন কাসেম, মাহমুদ গযনবী ও মুহাম্মদ ঘুরী এদের সকলের যুদ্ধই হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের মেসদাক-উদ্দেশ্য। মুহাম্মদ ঘুরী যেহেতু ইবনে কাসীরের পরের যমানার লোক তাই ইবনে কাসীর তার কথা উল্লেখ করেননি। তবে তার জিহাদও হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য। কিন্তু এই মাথামোটা শায়খকে কে বুঝাবে, যদি মুহাম্মদ বিন কাসেম থেকে শুরু করে মুহাম্মদ ঘুরী পর্যন্ত হিন্দুস্তানে সংঘটিত সব যুদ্ধই হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য হতে পারে, সুলতান মাহমুদ গযনবীর সতেরোবার ভারত আক্রমণ সবগুলো এর মেসদাক-উদ্দেশ্য হতে পারে, তবে বর্তমান বা ভবিষ্যতে সংঘটিত হিন্দুস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ কেন হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য হবে না? এখানে পূর্বে সংঘটিত যুদ্ধ এবং ভবিষ্যতে ঘটিতব্য যুদ্ধের মাঝে তো আমরা তেমন কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না। একটা পার্থক্য অবশ্য ধরা যায়। তা হলো, পূর্বে যত যুদ্ধই সংঘটিত হয়েছে সবগুলো হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য হতে মানা নেই। কারণ, তাতে যাকারিয়ার মতো জিহাদবিরোধী মুনাফিকদের অংশগ্রহণের কোনো ব্যাপার নেই। কিন্তু বর্তমান বা ভবিষ্যতে গাযওয়ায়ে হিন্দ হলে তাতে তো এই মুনাফিকদেরও জিহাদে শরিক হওয়ার মাসয়ালা আসবে, তখন ইসলামের সূচনালগ্নে যেমন জিহাদে অংশগ্রহণে গড়িমসির মাধ্যমে মুনাফিকদের নেফাক প্রকাশ পেয়েছিল, তেমনি গাযওয়ায়ে হিন্দ থেকে বসে থাকার কারণে এদের নেফাকীও প্রকাশ পেয়ে যাবে। জুব্বা ও আবা-কাবা পড়ে শায়খগিরির কপটতাপূর্ণ খোলস খসে পড়বে। তাই গাযওয়াতুল হিন্দ নিয়ে তাদের এত মাথাব্যাথা। কেউ গাযওয়ায়ে হিন্দের সব হাদিসকে যয়ীফ সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে, কেউ সহিহ মানলেও হয়ে গেছে বলে দাবী করে।
এই ভিডিওতে শায়খ যাকারিয়া আরো অনেক বস্তাপচা বক্তব্য দিয়েছে। যেমন সে বলেছে, “আপনি যু্দ্ধ যদি করেনও কিন্তু আপনার যদি আকীদা শুদ্ধ না থাকে তবে আপনার যুদ্ধের কোনো মূল্য হবে না।” অথচ সে ইতোপূর্বে মাহমুদ গযনবীর ভারত অভিযানকে হাদিসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দের উদ্দেশ্য প্রমাণ করে এসেছে। মূর্খ লোকটি এটাও জানে না যে, মাহমুদ গযনবীর আকীদা পুরোপুরি শুদ্ধ ছিল না। তিনি আকীদার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর অনুসারী ছিলেন না। তিনি ছিলেন কাররামী। ইবনে কাসীর রহ. তাঁর ব্যাপারে বলেছেন,
وكان على مذهب الكرامية في الاعتقاد، وكان من جملة من يجالسه منهم محمد بن الهيضم، وقد جرى بينه وبين أبي بكر بن فورك مناظرات بين يدي السلطان محمود في مسألة العرش، ذكرها ابن الهيضم في مصنف له، فمال السلطان محمود إلى قول ابن الهيضم، ونقم على ابن فورك كلامه، وأمر بطرده وإخراجه، لموافقته لرأي الجهمية. (البداية والنهاية 12 : 38 الناشر: دار إحياء التراث العربي الطبعة: الأولى 1408، هـ - 1988 م)
“তিনি আকীদার ক্ষেত্রে কাররামিয়্যাহদের অনুসারী ছিলেন, তার সভাসদদের মধ্যে মুহাম্মদ বিন হাইযম (কাররামীও) ছিল। ইবনে হাইযম এবং উস্তায আবু বকর ফুরাকের মাঝে আল্লাহ তায়ালার আরশে সমাসীন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়। ইবনে হাইযম তার রচিত এক কিতাবে এর বিবরণ দিয়েছে। সুলতান মাহমুদ গযনবী ইবনে হাইযমের মতই গ্রহণ করেন। বরং তিনি উস্তায আবু বকর ফুরাককে তার দরবার হতে তাড়িয়ে দেন, (সুলতানের ধারণা অনুযায়ী) উস্তায আবু বকরের মত জাহমীদের মতের সাথে মিলে যাওয়ার কারণে।” -আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১২/৩৮
সে আরো বলেছে, “গাযওয়ায়ে হিন্দের জন্য কোন প্রস্তুতি নিবেন না, প্রস্তুতি নেয়া জঘন্য কাজ হবে।” সুবহানাল্লাহ, চিন্তা করুন, আল্লাহ তায়ালা ও তার দ্বীনের ব্যাপারে এরা কি চরম ধৃষ্টতা পোষণ করছে। গাযওয়ায়ে হিন্দ হোক বা না হোক, জিহাদের জন্য প্রস্ততিগ্রহণ তো সর্বাবস্থায় ফরয, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সুস্পষ্ট আদেশ দিয়েছেন। আর এ প্রস্তুতি নিতে শুধু নিষেধই করছে না, বরং একে জঘন্য কাজ বলছে!
পরিশেষে বলব, বর্তমান পরিস্থিতিতে মূলত গাযওয়ায়ে হিন্দের ব্যাপারে এসব তাত্ত্বিক আলোচনার তেমন প্রয়োজনই পড়ে না। হিন্দুরা যেভাবে ভারতের মুসলিমদের উপর প্রকাশ্যে নির্যাতন করছে আর বাংলাদেশেও ইসকনের মাধ্যমে প্রশাসনকে হাত করে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন জিহাদ ব্যতীত মুসলিমদের মুক্তির আর কী উপায় আছে? সুতরাং আহলে হাদিস ভাইদের নিকট আবেদন, আমরা আপনাদেরকে আমাদের ভাই-ই মনে করি। সামান্য কিছু মাসয়ালাতে হানাফী মাযহাবের বিপরীতে হাদিসের উপর আমল করলে আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সহিহ হাদিস অনুসরণের নামে আপনারা আসলে কাদের অনুসরণ করছেন? জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত, রাষ্ট্র শর্ত, ইমান-আকীদা বিশুদ্ধ করা শর্ত, এ বিষয়গুলো কোন হাদিসে আছে? তাই আপনারা এ শায়খদের ব্যাপারে সতর্ক হোন। মনে রাখবেন, ভারতীয় আগ্রাসন শুরু হলে জিহাদ বিরোধী এ শায়খরা আপনাদের মুক্তির জন্য কিছুই করবে না, বরং তারা বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা বন্ধ করে তাদের খোদা মুহাম্মদ বিন সালমানের দেশে পালানোর চেষ্টা করবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বিষয়গুলো বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রথম পর্বের লিংক
https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232503%3B!
Comment