হাদীসের আলোকে রমাদান মাসের রোযা পালনের পর শাওয়াল মাসে ৬টি রোযা রাখার ফযীলত
-----------------------------------------------
-----------------------------------------------
আরবী মাসের গণনা অনুযায়ী নবম মাস হলো রমাদান। তারপরের মাসের নাম হলো- শাওয়াল। এই শাওয়াল মাসের একটি বিশেষ আমল হচ্ছে–এ মাসে ছয়টি রোযা রাখা। শাওয়াল মাসের ১ তারিখে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। আর ঈদুল ফিতরের দিন রোযা রাখা হারাম। তাই ঈদুল ফিতরের পর দিন থেকে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো বিরতি না দিয়ে অথবা ভেঙ্গে ভেঙ্গে এ রোযা রাখা যায়। আমাদের দেশীয় ভাষায় এ রোযাকে “শাওয়ালের ছয় রোযা” বলা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য-আমাদের দেশে কোথাও কোথাও শাওয়াল মাসের ৬ রোযাকে সাক্ষী রোযা বলা হয়, এটা ভুল। কারণ, কুরআন ও হাদীসের কোথাও একে সাক্ষী রোযা বলা হয় নি।
এ ছয়টি রোযা রাখা নফল বা মুস্তাহাব। তবে এ রোযা রাখা নফল বা মুস্তাহাব হলেও এর অত্যধিক ফযীলত হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
“শাওয়ালের ছয় রোযা” রাখার ফযীলত
عن أَبي أيوب - رضي الله عنه - : أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - ، قَالَ : (( مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أتْبَعَهُ سِتّاً مِنْ شَوَّالٍ ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ )) رواه مسلم
হযরত আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন–“যে ব্যক্তি রমাদানের রোযা রাখল, অতঃপর তার পিছে পিছে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখল, তা পূর্ণ বছর রোযা রাখার মতো গণ্য হবে। ”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১১৬৪/ জামি‘ তিরমিযী, হাদীস নং ৭৫৯/ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ২৪৩৩ প্রভৃতি)
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১১৬৪/ জামি‘ তিরমিযী, হাদীস নং ৭৫৯/ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ২৪৩৩ প্রভৃতি)
উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র তারাই শাওয়ালের ৬ রোযার ছাওয়াব পরিপূর্ণভাবে লাভ করবেন তথা রমাদানের রোযার পর শাওয়ালের ৬টি রোযা রাখার দ্বারা এক বছরের রোযার ছাওয়াব লাভ তারাই লাভ করবেন–যারা রমাদানের রোযা সঠিকভাবে পালন করেছেন, তারপর শাওয়ালের রোযা রেখেছেন। হাদীস শরীফে ثُمَّ أَتْبَعَهُ বলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অন্য একটি হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
عن ثوبان مولى رسول الله صلى الله عليه وسلم ، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، أنه قال " من صام ستة أيام بعد الفطر ،كان تمام السنة . مَنْ جَاء بالحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أمْثَالِهَا "
হযরত ছাওবান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন–“যে ব্যক্তি রমাদানের রোযা শেষ করে (শাওয়াল মাসে) ছয়দিন রোযা রাখবে, তা পুরো বছর রোযা গণ্য হবে। (আল্লাহ তা‘আলা বলেন,) যে ব্যক্তি নেক আমল করবে, তার জন্য সেই আমলের দশগুণ লাভ হবে।”
(মুসনাদে আহমাদ, ৫ম খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা/ সুনানে দারিমী, হাদীস নং- ১৭)
(মুসনাদে আহমাদ, ৫ম খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা/ সুনানে দারিমী, হাদীস নং- ১৭)
এ হাদীসসমূহে বর্ণিত উক্ত রমাদান ও শাওয়ালের রোযাসমূহের ছাওয়াব এভাবে নির্ণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরাহ আন‘আমের ১৬০ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন–
مَنْ جَاء بالحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أمْثَالِهَا
“যে ব্যক্তি নেক কর্ম করবে, তার জন্য তার দশ সমতুল্য প্রতিদান রয়েছে।”
“যে ব্যক্তি নেক কর্ম করবে, তার জন্য তার দশ সমতুল্য প্রতিদান রয়েছে।”
এই ভিত্তিতে ৩০+৬ = ৩৬টি রোযা রাখলে ৩৬×১০ = ৩৬০ অর্থাৎ চন্দ্র মাস অনুযায়ী সারা বছর রোযা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে শাওয়াল মাসের ৬টি রোযা রেখে সারা বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব অর্জন করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
--------------------------------------------------
প্রসঙ্গক্রমে এখানে আইয়্যামে বীজের রোযা তথা প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের রোযা ও প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের রোযা রাখার ফলীযত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা যুক্ত করে দেওয়ার ইচ্ছা করছি। আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র তাওফীকদাতা।
আইয়্যামে বীজের রোযা
প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি একাধিক সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে তিনটি হাদীস নিচে উল্লেখ করা হলো।
প্রথম হাদীস:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلَاثٍ لَا أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ صَوْمِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَصَلَاةِ الضُّحَى وَنَوْمٍ عَلَى وِتْرٍ.
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন – যা আমি মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ছাড়বো না। ১. প্রতি মাসের তিন রোযা, ২. চাশতের নামায (সালাতুদ্* দুহা), ৩. এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতর নামায আদায় করা।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ১১২৪; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ৭২১)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন – যা আমি মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ছাড়বো না। ১. প্রতি মাসের তিন রোযা, ২. চাশতের নামায (সালাতুদ্* দুহা), ৩. এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতর নামায আদায় করা।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ১১২৪; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ৭২১)
দ্বিতীয় হাদীস:
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِىِّ ( قَالَ « صِيَامُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صِيَامُ الدَّهْرِ وَأَيَّامُ الْبِيضِ صَبِيحَةَ ثَلاَثَ عَشْرَةَ وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ وَخَمْسَ عَشْرَةَ.
হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “প্রতি মাসের তিনটি রোযা হলো: সওমে দাহর আর সওমে আইয়ামে বীজ হল ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযা।”(সুনানে নাসাঈ, হাদিস ২৪২০; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ১০৪০)
হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “প্রতি মাসের তিনটি রোযা হলো: সওমে দাহর আর সওমে আইয়ামে বীজ হল ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযা।”(সুনানে নাসাঈ, হাদিস ২৪২০; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ১০৪০)
তৃতীয় হাদীস:
عن حفصة أم المؤمنين قالت أربع لم يكن يدعهن النبي صلى الله عليه و سلم صيام عاشوراء والعشر وثلاثة أيام من كل شهر وركعتان قبل الغداة.
আম্মাজান হযরত হাফসা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি বিষয় কখনো ছাড়তেন না। (১) আশুরার দিনের রোযা (২) জিল হজ্জের প্রথম দশ দিনের রোযা (৩) প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা (৪) ফজরের পূর্বের দু’রাকাত (সুন্নাত) নামায।” (সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং-২৭২৪)
আম্মাজান হযরত হাফসা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি বিষয় কখনো ছাড়তেন না। (১) আশুরার দিনের রোযা (২) জিল হজ্জের প্রথম দশ দিনের রোযা (৩) প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা (৪) ফজরের পূর্বের দু’রাকাত (সুন্নাত) নামায।” (সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং-২৭২৪)
উল্লেখিত হাদীসসমূহের দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, আইয়্যামে বীজের রোযা রাখা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ও আমলযোগ্য একটি বিষয়।
সুতরাং আমরা এই আমলের ইহতিমাম করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন
-----------------------------------------------------
সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের রোযা
আর সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের রোযা রাখার বিষয়টিও একাধিক সহিহ হাদিসে এসেছে। তন্মধ্যে দু’টি হাদীস নিচে উল্লেখ করা হলো।
প্রথম হাদীস:
عن عائشة رَضِيَ اللهُ عنها ، قالت : كَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - يَتَحَرَّى صَومَ الإثْنَيْنِ وَالخَمِيس . رواه الترمذي
আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,“ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন।”(তিরমিযী, হাদীস নং-৭৪৫)
আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,“ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন।”(তিরমিযী, হাদীস নং-৭৪৫)
দ্বিতীয় হাদীস:
عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - ، عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ، قَالَ : (( تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَومَ الإثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ ، فَأُحِبُّ أنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأنَا صَائِمٌ )) رواه الترمذي
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোযাদার থাকব।” (তিরমিযী, হাদিস নং- ৭৪৭; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস নং- ১০৪১)
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোযাদার থাকব।” (তিরমিযী, হাদিস নং- ৭৪৭; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস নং- ১০৪১)
এ দু’টি হাদীসের মাধ্যমেও আমাদের নিকট এটা সুস্পষ্ট যে, সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখাও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আমল করেছেন।
অতএব, রাসূলের অনুসরণে আমাদেরও এ দু’টি রোযা রাখা উচিত।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকল ভাই-বোনদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন
*****************************
শেষ কথা:
কেন এই লেখা?
আজকে মনে হয়েছে শাওয়াল মাস তো অর্ধেক অতিবাহিত হয়ে গেল। কিন্তু ফোরামে শাওয়ালের ছয় রোযার ফযীলত সংক্রান্ত কোন পোস্ট দৃষ্টিগোচর হয়নি। তাই ভাবলাম মুহতারাম ভাই-বোনদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ছোট একটি লেখা তৈরী করি। যেই ভাবা সেই কাজ।
পাশাপাশি মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর উপর আমলও হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-
وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ ﴿الذاريات: ٥٥﴾
“এবং বোঝাতে থাকুন; কেননা, বোঝানো মুমিনদের উপকারে আসবে।” (সূরা যারিয়াত: ৫৫) [/center]
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন-
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ﴿المائدة: ٢﴾
“সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদা: ০২)[/center]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَعَنْ أَبِي مَسعُودٍ عُقبةَ بنِ عَمرٍو الأَنصَارِي البَدرِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أجْرِ فَاعِلِهِ».
হযরত আবূ মাসউদ উক্ববাহ ইবনি ‘আমর আনসারী রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ভাল কাজের পথ দেখাবে, সে তার প্রতি আমলকারীর সমান নেকী পাবে।’’
[মুসলিম ১৮৯৩, তিরমিযী ২৬৭১, আবূ দাউদ ৫১২৯, আহমাদ ২৭৫৮৫, ২১৮৩৪, ২১৮৪৬, ২১৮৫৫]
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدَىً، كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أجُورِ مَنْ تَبِعَه، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أجُورِهمْ شَيئاً، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيهِ مِنَ الإثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيئاً».
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি [কাউকে] সৎপথের দিকে আহ্বান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কমিয়ে দিবে না। আর যে ব্যক্তি [কাউকে] ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কমিয়ে দিবে না।’’
[মুসলিম ২৬৭৪, তিরমিযী ২৬৭৪, আবূ দাউদ ৪৬১৯, আহমাদ ৮৯১৫, দারেমী ৫১৩]
وَعَنْ أَبِي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيْ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ يَومَ خَيبَر: «لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَداً رَجلاً يَفْتَحُ الله عَلَى يَدَيهِ، يُحبُّ اللهَ وَرَسولَهُ، ويُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ»، فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أيُّهُمْ يُعْطَاهَا . فَلَمَّا أصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رسولِ الله ﷺ كُلُّهُمْ يَرْجُو أنْ يُعْطَاهَا. فَقَالَ: «أينَ عَلِيُّ ابنُ أَبي طالب ؟»فقيلَ: يَا رسولَ الله، هُوَ يَشْتَكي عَيْنَيهِ . قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْه»فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رسولُ الله ﷺ في عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ فَبَرِىءَ حَتَّى كأنْ لَمْ يكُن بِهِ وَجَعٌ، فأعْطاهُ الرَّايَةَ . فقَالَ عَليٌّ رضي الله عنه: يَا رَسُول اللهِ، أقاتِلُهمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا ؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بسَاحَتهمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإسْلاَمِ، وَأخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللهِ تَعَالَى فِيهِ، فَوَالله لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَم». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
হযরত আবূল আব্বাস সাহল ইবনি সা‘দ সায়েদী রাযি. হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার [যুদ্ধের] দিন বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি আগামীকাল যুদ্ধ-পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দিব, যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন, আর সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসে।’’ অতঃপর লোকেরা এই আলোচনা করতে করতে রাত কাটিয়ে দিল যে, তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তিকে এটা দেওয়া হবে। অতঃপর সকালে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট গেল। তাদের প্রত্যেকেরই এই আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, পতাকা তাকে দেওয়া হোক। কিন্তু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আলী ইবনি আবী ত্বালিব কোথায়?’’ তাঁকে বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাঁর চক্ষুদ্বয়ে ব্যথা হচ্ছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে ডেকে পাঠাও।’’ সুতরাং তাঁকে ডেকে আনা হল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চক্ষুদ্বয়ে থুতু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। ফলে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন; যেন তাঁর কোন ব্যথাই ছিল না। অতঃপর তিনি তাঁকে যুদ্ধ-পতাকা দিলেন। আলী রাযি. বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তারা আমাদের মত [মুসলিম] না হওয়া পর্যন্ত কি আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি প্রশান্ত হয়ে চলতে থাক; যতক্ষণ না তাহাদের নগর-প্রাঙ্গনে অবতরণ করেছ। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান কর এবং তাদের উপর ইসলামে আল্লাহর যে জরুরী হক রয়েছে তাদেরকে সে ব্যাপারে অবগত করাও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার দ্বারা একটি মানুষকে হিদায়াত করেন, তাহলে তা তোমার জন্য [আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ] লাল উটনী অপেক্ষাও উত্তম।’’
[সহীহুল বুখারী ২৯৪২, ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, মুসলিম ২৪০৬, আবূ দাউদ ৩৬৬১, আহমাদ ২২৩১৪]
হযরত আবূ মাসউদ উক্ববাহ ইবনি ‘আমর আনসারী রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ভাল কাজের পথ দেখাবে, সে তার প্রতি আমলকারীর সমান নেকী পাবে।’’
[মুসলিম ১৮৯৩, তিরমিযী ২৬৭১, আবূ দাউদ ৫১২৯, আহমাদ ২৭৫৮৫, ২১৮৩৪, ২১৮৪৬, ২১৮৫৫]
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدَىً، كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أجُورِ مَنْ تَبِعَه، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أجُورِهمْ شَيئاً، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيهِ مِنَ الإثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيئاً».
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি [কাউকে] সৎপথের দিকে আহ্বান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কমিয়ে দিবে না। আর যে ব্যক্তি [কাউকে] ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কমিয়ে দিবে না।’’
[মুসলিম ২৬৭৪, তিরমিযী ২৬৭৪, আবূ দাউদ ৪৬১৯, আহমাদ ৮৯১৫, দারেমী ৫১৩]
وَعَنْ أَبِي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيْ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ يَومَ خَيبَر: «لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَداً رَجلاً يَفْتَحُ الله عَلَى يَدَيهِ، يُحبُّ اللهَ وَرَسولَهُ، ويُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ»، فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أيُّهُمْ يُعْطَاهَا . فَلَمَّا أصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رسولِ الله ﷺ كُلُّهُمْ يَرْجُو أنْ يُعْطَاهَا. فَقَالَ: «أينَ عَلِيُّ ابنُ أَبي طالب ؟»فقيلَ: يَا رسولَ الله، هُوَ يَشْتَكي عَيْنَيهِ . قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْه»فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رسولُ الله ﷺ في عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ فَبَرِىءَ حَتَّى كأنْ لَمْ يكُن بِهِ وَجَعٌ، فأعْطاهُ الرَّايَةَ . فقَالَ عَليٌّ رضي الله عنه: يَا رَسُول اللهِ، أقاتِلُهمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا ؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بسَاحَتهمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإسْلاَمِ، وَأخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللهِ تَعَالَى فِيهِ، فَوَالله لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَم». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
হযরত আবূল আব্বাস সাহল ইবনি সা‘দ সায়েদী রাযি. হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার [যুদ্ধের] দিন বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি আগামীকাল যুদ্ধ-পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দিব, যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন, আর সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসে।’’ অতঃপর লোকেরা এই আলোচনা করতে করতে রাত কাটিয়ে দিল যে, তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তিকে এটা দেওয়া হবে। অতঃপর সকালে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট গেল। তাদের প্রত্যেকেরই এই আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, পতাকা তাকে দেওয়া হোক। কিন্তু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আলী ইবনি আবী ত্বালিব কোথায়?’’ তাঁকে বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাঁর চক্ষুদ্বয়ে ব্যথা হচ্ছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে ডেকে পাঠাও।’’ সুতরাং তাঁকে ডেকে আনা হল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চক্ষুদ্বয়ে থুতু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। ফলে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন; যেন তাঁর কোন ব্যথাই ছিল না। অতঃপর তিনি তাঁকে যুদ্ধ-পতাকা দিলেন। আলী রাযি. বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তারা আমাদের মত [মুসলিম] না হওয়া পর্যন্ত কি আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি প্রশান্ত হয়ে চলতে থাক; যতক্ষণ না তাহাদের নগর-প্রাঙ্গনে অবতরণ করেছ। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান কর এবং তাদের উপর ইসলামে আল্লাহর যে জরুরী হক রয়েছে তাদেরকে সে ব্যাপারে অবগত করাও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার দ্বারা একটি মানুষকে হিদায়াত করেন, তাহলে তা তোমার জন্য [আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ] লাল উটনী অপেক্ষাও উত্তম।’’
[সহীহুল বুখারী ২৯৪২, ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, মুসলিম ২৪০৬, আবূ দাউদ ৩৬৬১, আহমাদ ২২৩১৪]
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ فتىً مِنْ أَسلَمَ، قَالَ : يَا رَسُولَ الله، إنِّي أُرِيدُ الغَزْوَ وَلَيْسَ معي مَا أتَجَهَّز بِهِ، قَالَ: «ائتِ فُلاَناً فإنَّهُ قَدْ كَانَ تَجَهَّزَ فَمَرِضَ»فَأتَاهُ، فَقَالَ: إنَّ رسولَ الله ﷺ يُقْرِئُكَ السَّلامَ، وَيَقُولُ : أعْطني الَّذِي تَجَهَّزْتَ بِهِ، فَقَالَ : يَا فُلاَنَةُ، أعْطِيهِ الَّذِي تَجَهَّزْتُ بِهِ، وَلا تَحْبِسي مِنْهُ شَيئاً، فَواللهِ لاَ تَحْبِسِين مِنْهُ شَيئاً فَيُبَاركَ لَكِ فِيهِ .
হযরত আনাস রাযি. হইতে বর্ণিত, আসলাম গোত্রের এক যুবক বলিল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করছি; কিন্তু আমার কাছে তার প্রস্তুতির সরঞ্জাম নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি অমুকের কাছে যাও। কেননা সে [জিহাদের জন্য] প্রস্তুতি নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’’ সুতরাং সে [যুবকটি] তার নিকট এসে বলল, ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলছেন যে, যে সরঞ্জাম তুমি [জিহাদের জন্য] প্রস্তুত করেছ, তা তুমি আমাকে দাও।’ অতএব সে [তার স্ত্রীকে] বলল, ‘হে অমুক! আমি জিহাদের জন্য যে সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছিলাম, তুমি সব একে দিয়ে দাও এবং তা হতে কোন জিনিস আটকে রেখো না। আল্লাহর কসম! তুমি তার মধ্য হতে কোন জিনিস আটকে রাখলে, তোমার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না।”
[মুসলিম ১৮৯৪, আবূ দাউদ ২৭৮০, আহমাদ ১২৭৪৮]
=================================================
[মুসলিম ১৮৯৪, আবূ দাউদ ২৭৮০, আহমাদ ১২৭৪৮]
=================================================
সুতরাং কোন ভাই-বোন যদি এখনো আমল শুরু করে না থাকেন, তাহলে এই পোস্টের দ্বারা হয়তো উনাদের এই আমলের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরী হবে এবং আমল শুরু করে দিবেন। আর আমি ছাওয়াবের অংশীদার হব, ইনশা আল্লাহ। এই নেক নিয়তেই লেখা হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে ইখলাসের সাথে সকল আমল করার তাওফীক দান করুন এবং কবুল করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
আপনাদের নেক দু‘আয় আপনাদের মুজাহিদ ভাইদের কথা ভুলে যাবেন না।
*****************************
Comment