ইয়াওমুল জুমু’আর মর্যাদা
১। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সূর্য উদিত হয় এমন সকল দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হ’ল জুমু’আর দিন। এই দিনেই আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান হয়। এই দিনেই তাঁকে তা থেকে বের করা হয়। আর এই জুমুআর দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -- সহিহ আবু দাউদ ৯৬১, মুসলিম, তিরমিজী ৪৮৮
২। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহ ১০৯৮
জুমু’আ এই উম্মতের জন্য একটি উপঢৌকন
৩। আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা সবশেষে আগত উম্মাত, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা হব সর্বগ্রবর্তী, আমরাই প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব। অথচ তাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদেরকে তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। তারা বিরোধে লিপ্ত হয়ে পড়ল কিন্তু তারা যে সত্য দীনের ব্যাপারে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিল, আল্লাহ আমাদেরকে সে দিন সম্পর্কে হিদায়াত দান করেছেন। তিনি বলেনঃ আমাদের জন্য আজকে জুমুআর দিন আর ইয়াহুদীদের জন্য পরের দিন এবং খৃষ্টানদের জন্য তারও পরের দিন।
তাহক্বীকঃ সহীহ -মুসলিমঃ ১৮৬৫
জুমু’আর ফজিলত
৪। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযু করে জুমু’আর নামায আদায় করতে আসে, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে মনোযোগ সহকারে নীরবে খুতবা শুনে, তার এ জুমুআ হতে ঐ জুমুআ পর্যন্ত এবং আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি কাকর-বালি ইত্যাদি নাড়াচাড়া করল সে বাজে কাজ করল।
তাহক্বীকঃ সহীহ— ইবনু মাজাহ (১০৯০), মুসলিম।
৫।আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু’আর দিন অথবা জুমু’আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --মিশকাতঃ ১৩৬৭, তিরমিযিঃ ১০৭৪
৬। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন প্রকারের লোক জুমু’আর সালাতে উপস্থিত হয়। এক প্রকার হলো, যারা বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ে হাজির হয়। জুমু’আর দ্বারা তাদের এটাই হয় লাভ। দ্বিতীয় প্রকারের লোক হলো, আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে চাইতে হাজির হয়। এরা এমন লোক, যারা আল্লাহর কাছে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করতে চায়। আল্লাহ চাইলে তাদের তা দান করতে পারেন। আর ইচ্ছা না করলে নাও দিতে পারেন। তৃতীয় প্রকারের লোক হলো, শুধু জুমু’আর সালাতের উদ্দেশে নিরবতার সাথে মসজিদে উপস্থিত হয়। সামনে যাবার জন্য কারো ঘাড় টপকায় না। কাউকে কোন কষ্ট দেয় না। এ ধরনের লোকদের এ জুমু’আহ্ থেকে পরবর্তী জুমু’আহ্ পর্যন্ত সময়ে (সগীরাহ্) গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যায়। তাছাড়া আরো অতিরিক্ত তিন দিনের কাফফারাহ্ হবে এজন্য যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’যে ব্যক্তি কোন উত্তম কাজ করবে তার জন্য এর দশ গুণ প্রতিদান রয়েছে’’- (সূরাহ্ আল আন্’আম ৬: ১৬০)।
তাহক্বীকঃ সহীহ --আবু দাঊদঃ ১১১৩, মিশকাত ১৩৯৬
৭। সালমান ফারিসী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। -বুখারীঃ ৮৮৩ ইবনে মাজাহ
প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছরের সিয়াম ও কিয়ামের সওয়াব হয়। তাহক্বীকঃ সহীহ --তিরমিযিঃ ৪৯৬
জুমু’আর দিন ফজরে যে সুরা পাঠ করবেঃ
৮। আবু হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুক্রবার ফজরের সালাতে الم تَنْزِيلُ সূরাহ আস সিজদা এবং هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ সূরাহ ইনসান তিলাওয়াত করতেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ -বুখারীঃ৮৯১, মুসলিম, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, আবু দাঊদ
জুমু’আর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা, তৈল ব্যাবহার করা ও সুগন্ধি লাগানোঃ
৯। সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তা তার জন্য যথেষ্ট এবং তা উত্তম কাজ আর যে ব্যক্তি গোসল করে তবে তা পরমোত্তম কাজ।
তাহক্বীকঃ সহীহ -নাসাঈঃ১৩৭৪, ইবনে মাজাহ
১০। আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ জুমু‘আহর সালাতে আসলে সে যেন গোসল করে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -বুখারীঃ ৮৭৭, মুসলিম, তিরমিযি, আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ্, নাসাঈ
১১। ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.) জুমু‘আহর দিন দাঁড়িয়ে খুত্বা দিচ্ছিলেন, এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবা এলেন। ‘উমার (রাযি.) তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আযান শুনে কেবল উযূ করে নিলাম। ‘উমার (রাযি.) বললেন, কেবল উযূই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসলের নির্দেশ দিতেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ -- বুখারীঃ ৮৭৮, মুসলিম, তিরমিযি, আবু দাঊদ
১২। ‘আমর ইবনু সুলাইম আনসারী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিস্ওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -- বুখারীঃ ৮৮০, মুসলিম
১৩। সালমান ফারিসী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৮৮৩ ইবনে মাজাহ
মহিলা, বালক-বালিকাএবংঅন্যযারাজুমু‘আয়উপস্থিতহয়না, তাদেরগোসলকরাঃ
১৪। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন প্রত্যেক মুসলিমের উপর হাক্ব রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ৮৯৭, মুসলিম ,আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
জুমু’আর দিন উত্তম পোশাক পরিধান করাঃ
১৫। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জুমুআহর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছেনঃ তোমরা যদি তোমাদের কাজকর্মের পেশাকদ্বয় ছাড়া জুমুআহর দিনের জন্য আরো দুটি পরিধেয় বস্ত্র ক্রয় করতে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহঃ ১০৯৫, আবু দাঊদ
জুমু’আর সালাতের অপরিহার্যতাঃ
১৬। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমু’আর জন্য মধ্যাহ্নের পর যাত্রা করা প্রত্যেক সাবালক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব।
তাহক্বীকঃ সহীহ --নাসাঈঃ ১৩৭৪, আবু দাঊদ
১৭। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর আযান শুনতে পাবে, তার ওপর জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফরয হয়ে যায়।
তাহক্বীকঃ সহীহ --আবু দাঊদঃ ১০৫৬, মিশকা্তঃ ১৩৭৫
১৮। ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক। জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার ব্যক্তি ছাড়া প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জামা’আতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। ওই চার ব্যক্তি হলো (১) গোলাম যে কারো মালিকানায় আছে, (২) নারী, (৩) বাচ্চা, (৪) রুগ্ন ব্যক্তি।
তাহক্বীকঃ সহীহ -মিশকাতঃ ১৩৭৭, আবু দাঊদ
ওজর বিহীন জুমু’আ পরিত্যাগের পরিনতিঃ
১৯। আবুল জা’দ আয-যমরী মুহাম্মাদ ইবনু "আমরের ধারণানুযায়ী তিনি একজন সাহাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক নিছক অলসতা ও গাফলতি করে পর পর তিন জুমুআ ছেড়ে দেয় আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ -তিরমিযিঃ ৫০০, ইবনে মাজাহ
২০। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই আল্লাহ্র নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।
তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার এই স্থানে আমার এই দিনে, আমার এই মাসে এবং আমার এই বছরে তোমাদের উপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আমার জীবদ্দশায় বা আমার ইন্তেকালের পরে, ন্যায়পরায়ণ অথবা যালেম শাসক থাকা সত্ত্বেও জুমুআহর সালাত তুচ্ছ মনে করে বা অস্বীকার করে তা বর্জন করবে, আল্লাহ তার বিক্ষিপ্ত বিষয়কে একত্রে গুছিয়ে দিবেন না এবং তার কাজে বরকত দান করবেন না।
সাবধান! তার সালাত, যাকাত, হাজ্জ (হজ্জ), সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এবং অন্য কোন নেক আমল গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ না সে তওবা করে। যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবূল করেন। সাবধান! নারী পুরুষের, বেদুইন মুহাজিরের এবং পাপাচারী মুমিন ব্যক্তির ইমামতি করবে না। তবে স্বৈরাচারী শাসক তাকে বাধ্য করলে এবং তার তরবারি ও চাবুকের ভয় থাকলে স্বতন্ত্র কথা।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহঃ ১০৮১
২১। সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) ত্যাগ করলো, সে যেন এক দ্বীনার দান-খয়রাত করে। যদি সে তা না পায়, তাহলে যেন অর্ধ দ্বীনার দান-খয়রাত করে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহঃ ১১২৮, নাসাঈঃ ১৩৭২,আবু দাঊদঃ ১০৫৬, মিশকাত
প্রবল বর্ষন কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগে এই ব্যাপারে শিথিলতাঃ
২২। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর মুয়ায্যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্ সালাহ্’ বলবে না, বলবে, ‘‘সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম’’ (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তা করেছেন। জুমু‘আহ নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -বুখারীঃ ৯০১
জুমু’আর দিন আগে আগে মসজিদে আসাঃ
২৩। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকারা মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৮৮১, মুসলিম , তিরমিযি, আবু দাঊদ , ইবনে মাজাহ
বাহনে আরোহন না করে পায়ে হেটে মসজিদে আসাঃ
২৪। আওস ইবনু আওস আস-সাক্বা্ফী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমুআর জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর সালাত আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -আবু দাঊদঃ ৩৪৫,তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ
মসজিদে উপস্থিত হয়ে বসার পূর্বে দুই রাকা’আত সালাত আদায় করাঃ
২৫। জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় একটি লোক এসে উপস্থিত হল। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি (তাহিয়াতুল মাসজিদ) নামায আদায় করেছ? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ ওঠো এবং নামায আদায় কর।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারী, মুসলিম, তিরমিজিঃ৫১০, ইবনে মাজাহ
২৬। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমুআর দিন সুলায়ক আল গাত্বাফানী এসে উপস্থিত হ’ল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে বসে পড়লে তিনি তাকে বলেনঃ হে সুলায়ক উঠে সংক্ষেপে দু’ রাকাআত সালাত আদায় কর। ..... অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, জুমুআর দিন তোমাদের কেউ যখন আসে এমতাবস্থায় যে, ইমাম খুতবাহ দিচ্ছেন তখন সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --মুসলিম ১৯০৯, আবু দাঊদ
ইমামের কাছাকাছি বসাঃ
২৭। সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু’আর দিন খুতবার সময় উপস্থিত থাকবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসবে। কারণ কোন ব্যক্তি পেছনে থাকতে থাকতে (অর্থাৎ প্রথম সারিতে না গিয়ে পেছনের সারিতে থাকে) অবশেষে জান্নাতে প্রবেশেও পেছনে পড়ে যাবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -মিশকাতঃ ১৩৯১, আবু দাঊদঃ ১১০৮
২৪ নং হাদীসও
জুমু’আর সালাতের ওয়াক্তঃ
২৮। আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আহর সালাত আদায় করতেন, যখন সূর্য হেলে যেতো।
তাহক্বীকঃ সহীহ -বুখারীঃ ৯০৪, মুসলিম, তিরমিযি
২৯। আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীতের সময় প্রথম ওয়াক্তেই সালাত আদায় করতেন। আর তীব্র গরমের সময় ঠান্ডা করে অর্থাৎ বিলম্ব করে- জুমু’আর সালাত আদায় করতেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯০৬
৩০। সালামাহ ইবনে আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে জুমু’আর সালাত আদায়ের পর যখন ফিরে আসতাম তখন আমাদের ছায়া গ্রহনের উপযোগী প্রাচীরের কোন ছায়া পড়তো না ।
তাহক্বীকঃ সহীহ --আবু দাঊদঃ ১৮৭৮
দেয়ালের এতটুকু ছায়াও দেখতাম না যার ছায়া আমরা গ্রহন করতে পারি। -ইবনে মাজাহঃ ১১০০
জুমু’আর সালাতের আযানঃ
৩১। সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাযি.) এবং উমর (রাযি.)-এর সময় জুমু‘আহর দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। পরে যখন ‘উসমান (রাযি.) খলীফাহ হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি ‘যাওরাহ’ হতে তৃতীয়* আযান বৃদ্ধি করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, ‘যাওরাহ’ হল মাদ্বীনার অদূরে বাজারের একটি স্থান।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯১২, তিরমিযিঃ ৫১৬, ইবনে মাজাহ
৩২। সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। মদিনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমু‘আহর দিন তৃতীয় আযান যিনি বৃদ্ধি করলেন, তিনি হলেন, উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাযি.)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় (জুমু‘আহর জন্য) একজন ব্যতীত মুয়ায্যিন ছিল না এবং জুমু‘আহর দিন আযান দেয়া হত যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের উপর খুৎবাহর পূর্বে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯১৩
৩৩। সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিনে মিম্বরের উপর বসতেন, তখন বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন এবং যখন তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করতেন তখন ইকামাত দিতেন। তারপর এরূপ আবূ বকর এবং উমর (রাঃ)-এর যুগেও (প্রচলিত) ছিল।
তাহক্বীকঃ সহীহ --নাসাঈঃ ১৩৯৭
জুমু’আর আযানের পর বেচাকেনা হারামঃ
হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।( সূরা জুমু’আঃ ৯)
ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রব্ণ করা ও চুপ থাকাঃ
৩৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে বক্তৃতায় আল্লাহর একত্ব ও রিসালাতের সাক্ষ্য থাকে না তা পঙ্গু হাতের ন্যায়। ---আবু দাউদঃ ৪৮৪১
৩৪। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিনে ইমামের খুতবা দানকালে (অন্যকে) বলল, "চুপ কর সে অকারণে কথা বলল
তাহক্বীকঃ সহীহ --তিরমিযিঃ ৫১২, আবু দাঊদ
৩৫। সালমান ফারসী (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, যখন ইমাম কথা বলবেন, তখন চুপ থাকবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯৩৪
৩৫.৫। সালমান ফারিসী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৮৮৩
ইমাম খুতবা প্রদান কালে ইহতিবা (তিনমাথা/দুই হাটু উঠিয়ে নিতম্বের উপর বসা) হয়ে বসাঃ
৩৬। মু’আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রাঃ)বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন ইমামের খুতবার সময় হাঁটু উচিয়ে দু’হাত দিয়ে তা জড়িয়ে ধরে বসতে নিষেধ করেছেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --মিশকাতঃ ১৩৯৩, আবু দাঊদ, তিরমিযি
৩৭। আমর ইবনে শু’আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সুত্রে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সঃ) জুমু’আর দিন ইমামের খুতবা দান কালে নিতম্বের উপর বসতে নিষেধ করেছেন
তাহক্বীকঃ সহীহ --আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪
জুমু’আর দিনে মসজিদে কতিপয় আদবঃ
৩৮। ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইবনু জুরাইজ (রহ.) বলেন, আমি নাফি‘ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুমু‘আহর ব্যাপারে? তিনি বললেন, জুমু‘আহ ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯১১
আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কবিতা আবৃতি করতে, কেনা-বেচা করতে এবং জুমুআর দিন জুমুআর নামাযের আগে বৃত্তাকারে গোল হয়ে বসতে নিষেধ করেছেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --তিরমিযিঃ ৩২২, আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ।
৩৯। সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খুতবাহ দেয়ার জন্য) মিম্বারে উঠে দাঁড়ালে তাঁর সাহাবীগণ তাঁর দিকে তাদের মুখ ঘুরিয়ে বসতেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহঃ ১১৩৬
৪০। আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুক্রবারে তার পাশে বসা ছিলাম, তারপর তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙিয়ে আসছিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, বসে পড়, তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ।
-- নাসাঈঃ ১৪০২, আবু দাঊদ
৪১। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমু’আর সালাতের দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে বসে বললেন, তোমরা বসো। ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) এ নির্দেশ শুনে মসজিদের দরজায় বসে পড়লেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখলেন এবং বললেন, হে ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ! এগিয়ে এসো।
--মিশকাতঃ ১৪১৮, আবু দাঊদঃ ১০৯১
৪২। ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআর দিন তোমাদের কোন ব্যক্তির ঘুমের আবেশ আসলে সে যেন নিজ জায়গা হতে উঠে যায়।
--তিরমিযিঃ ৫২৬
খুতবাহ মিম্বার থেকে দিতে হয়ঃ
৪৩। ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছের গুড়ির সাথে ভর দিয়ে জুমু’আর বক্তৃতা করতেন। যখন মিম্বার তৈরী করা হল খেজুরের গুড়িটা কাঁদতে লাগল। তিনি গাছটির নিকট গেলেন এবং তা স্পর্শ করলেন। ফলে এটা চুপ করল।
--তিরমিযিঃ ৫০৫, বুখারী
দাঁড়িয়ে খুতবা দেয়াঃ
৪৪। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিতেন। অতঃপর বসতেন এবং পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন তোমরা এখন করে থাক। ---বুখারীঃ ৯২০, তিরমিযি
৪৫। আমর ইবনুল হুরাইস (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতে দেখেছি, তাঁর পাগড়ির দু’ পাশ তাঁর কাঁধের উপর ঝুলছিল। --আবু দাঊদঃ ৪০৭৭, মুসলিম, নাসাঈ
খুতবাহ সংক্ষেপ করাঃ
৪৬। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) থেকে বণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করতাম। তার সালাত ও খুতবাহ ছিল মধ্যম (দীর্ঘও নয় অতি সংক্ষিপ্তও নয়)। --মুসলিমঃ ১৮৮৮, তিরমিযি
৪৭। আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আম্মার (রাযিঃ) আমাদের উদ্দেশে সংক্ষেপে একটি সারগর্ভ ভাষণ দিলেন। তিনি মিম্বার থেকে নামলে আমরা বললাম, হে আবূল ইয়াকযান। আপনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ ভাষণ দিয়েছেন, তবে যদি তা কিছুটা দীর্ঘ করতেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তির দীর্ঘ সালাত ও সংক্ষিপ্ত ভাষণ তার প্রজ্ঞার পরিচায়ক। অতএব, তোমরা সালাতকে দীর্ঘ এবং ভাষণকে সংক্ষিপ্ত কর। অবশ্যই কোন কোন ভাষণে যাদুকরি প্রভাব থাকে।
--মুসলিমঃ ১৮৯৪, আবু দাঊদ
৪৮। জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন, তারপর বসতেন, পূনরায় দাঁড়াতেন ও কিছু আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আল্লাহ তা’আলার যিকির করতেন। আর তার খুতবা হত পরিমিত আকারের, এবং তার সালাত হত মধ্যম প্রকারের। -নাসাঈঃ ১৪২১, মুসলিম, ইবনে মাজাহ
খুতবায় হামদের পর আম্মা বা’দ বলাঃ
৪৮.৫। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর আরোহণ করলেন। এ ছিল তাঁর জীবনের শেষ মাজলিস। তিনি বসেছিলেন, তাঁর দু’ কাঁধের উপর বড় চাদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্টি। তিনি আল্লাহর গুণকীর্তন করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার নিকট আস। লোকজন তাঁর নিকট একত্র হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘আম্মা বা’দ’।
--বুখারীঃ ৯২৭
খুতবায় যা পড়া হয়ঃ
৪৯। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে সালাম দিতেন। --ইবনে মাজাহঃ ১১০৯
৫০। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি খুতবাহ দিতেন, উভয় খুতবার মাঝখানে বসতেন এবং (খুতবায়) কুরআন পড়তেন এবং জনগণকে উপদেশ দিতেন। --মুসলিমঃ ১৮৮০
৫১। আমরাহ বিনতু আবদুর রহমান (রাযিঃ) থেকে তার এক বোনের সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুমুআর দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ থেকে শুনে সূরাহ কাফ মুখস্থ করেছি। তিনি প্রতি জুমুআর দিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে এ সূরাহ পড়তেন।
--মুসলিমঃ ১৮৯৭, আবু দাঊদ
৫২। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবাহ (ভাষণ) দিতেন যখন তার চক্ষুদ্বয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করত, কণ্ঠস্বর জোরালো হ’ত এবং তার রাগ বেড়ে যেত, এমনকি মনে হ’ত, তিনি যেন শত্রুবাহিনী সম্পর্কে সতর্ক করছেন আর বলছেনঃ তোমরা ভোরেই আক্রান্ত হবে, তোমরা সন্ধ্যায়ই আক্রান্ত হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলতেনঃ আমি ও কিয়ামত এ দুটির ন্যায় (স্বল্প ব্যবধান) প্রেরিত হয়েছি, তিনি মধ্যম ও তর্জনী আঙ্গুল মিলিয়ে দেখাতেন।
(আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করে তাকে কেউ বিপথগামী করতে পারে না, এবং তিনি যাকে বিপথগামী করেন তাকে কেউ হিদায়াত দিতে পারেন না। --আবু দাঊদ)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলতেনঃ অতঃপর উত্তম বাণী হ’ল- আল্লাহর কিতাব এবং উত্তম পথ হ’ল মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রদর্শিত পথ। অতীব নিকৃষ্ট বিষয় হ’ল (ধর্মের মধ্যে) নতুন উদ্ভাবন (বিদ’আত)। প্রতিটি বিদ’আদ ভ্রষ্ট। তিনি আরো বলতেনঃ আমি প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তির জন্য তার নিজের থেকে অধিক উত্তম (কল্যাণকামী)। কোন ব্যক্তি সম্পদ রেখে গেলে তা তার পরিবার-পরিজনের প্রাপ্য। আর কোন ব্যক্তি ঋণ অথবা অসহায় সন্তান রেখে গেলে সেগুলোর দায়িত্ব আমার।
--মুসলিমঃ ১৮৯০
৫৩। আব্দুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খুতবায়ে হাজাত শিক্ষা দিলেনঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ نَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَسَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
এরপর তিন আয়াত পাঠ করলেনঃ
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ)
(يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا)
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيدًا)
অর্থঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্নসমর্পণকারী না হয়ে কোন অবস্থায় মর না। (৩ঃ ১০২)
হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালক কে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে করেছেন ও যিনি তা হতে তার সংগিনী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; এবং আল্লাহ কে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা কর এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি বন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। (৪ঃ ১)
--নাসাঈঃ ১৪০৭
খুতবায় দুই হাত তোলা নিন্দনীয়ঃ
৫৪। উমারা ইবনু রুওয়াইবা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একদিন বিশর ইবনু মারওয়ান জুমুআর খুতবা দেওয়াকালে দু’আ করার সময় উভয় হাত উপরে তুললেন। এতে উমারা বললেন, আল্লাহ এই বেঁটে হাত দুটিকে কুৎসিত করুন। আমি নিশ্চিতরূপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নিজের হাত দিয়ে এর বেশি কিছু করতেন না। (অধঃস্তন রাবী) হুশাইম এ কথা বলার সময় নিজের তর্জনী দ্বারা ইঙ্গিত করলেন
--তিরমিযিঃ ৫১৫, মুসলিম
খুতবায় বিশেষ প্রয়োজনে দু’আ করাঃ
৫৫। আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক জুমু‘আহর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (পানির অভাবে) ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরীও মরে যাচ্ছে। কাজেই আপনি দু’আ করুন, যেন আল্লাহ্ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তখন তিনি দু’ হাত প্রসারিত করলেন এবং দু‘আ করলেন।
--বুখারীঃ ৯৩২
জুমু’আর সালাতঃ
৫৬। আব্দুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, জুমু’আর সালাত দু’রাকআত, ঈদুল ফিতরের সালাত দু’রাকআত, ঈদুল আযহার সালাত দু’রাকআত এবং সফরের অবস্থার সালাতও দু’রাকআত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষ্য মতে সে দু’রাকআতই পূর্ণ সালাত, সংক্ষেপ নয়।
--নাসাঈঃ ১৪২৩, ইবনে মাজাহ
৫৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম আবু রাফি (রাঃ)-এর পুত্র উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একবার মারওয়ান আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে মদীনায় তার প্রতিনিধি করে মক্কায় চলে গেলেন। আবু হুরাইরা (রাঃ) আমাদের জুমু’আর নামায আদায় করালেন। তিনি প্রথম রাকাআতে সূরা জুমুআ এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ইযা জাআকাল মুনাফিকূন পাঠ করলেন। উবাইদুল্লাহ বলেন, আমি আবু হুরাইরার সাথে দেখা করে তাকে বললাম, আপনি এমন দুটি সূরা পাঠ করলেন যা আলী (রাঃ) কুফায় পাঠ করতেন। আবু হুরাইরা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ দুটো সূরা পাঠ করতে শুনেছি। --তিরমিযিঃ ৫১৯, মুসলিম ,আবু দাঊদ
৫৮। নু’মান ইবনু বাশীর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ ঈদের সালাতে ও জুমুআর সালাতে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-" ও "হাল আতা-কা হাদীসুল গ-শিয়াহ" সূরাদ্বয় পাঠ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, ঈদ ও জুমুআহ একই দিন হলেও তিনি উভয় সালাতে ঐ সূরাদ্বয় পাঠ করতেন।
--মুসলিমঃ ১৯১৩, আবু দাঊদ
জুমু’আর সালাতের পর সালাতঃ
৫৯। আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বে দু’ রাক‘আত ও পরে দু’ রাক‘আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’ রাক‘আত এবং ‘ইশার পর দু‘ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আর জুমু‘আহর দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন । -- বুখারীঃ ৯৩৭, মুসলিম,তিরমিজি
৬০। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমু’আর নামাযের পর নামায আদায় করতে চায় সে যেন চার রাকাআত আদায় করে। --তিরমিযিঃ ৫২৩,
৬১। উমর ইবনু আতা ইবনু আবূল খুওয়ার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নাফি ইবনু জুবায়র (রহঃ) তাকে নামির-এর ভাগ্নে সায়িব-এর নিকট একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পাঠান যা মু’আবিয়াহ (রাযিঃ) তার সালাতের ব্যাপারে লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি মাকসূরায় দাঁড়িয়ে তার সাথে জুমুআর সালাত আদায় করলাম। ইমামের সালাম ফিরানোর পর আমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে (সুন্নাত) সালাত আদায় করলাম। তিনি প্রবেশ করে আমাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি বললেন, তুমি যা করেছে তার পুনরাবৃত্তি করো না। তুমি জুমুআর সালাত আদায় করার পর কথা না বলা পর্যন্ত অথবা বের না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত কোনরূপ সালাত আদায় করো না। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এরূপ নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা কথা না বলা অথবা বের হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত যেন সালাত না আদায় করি।
--মুসলিমঃ ১৯২৭, আবু দাঊদ
জুমু’আর সালাত এক রাকাআত পেলেঃ
৬২। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও। --বুখারীঃ ৯০৮
৬৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ)এর এক রাকআত পেলো, সে যেন তার সাথে আরো এক রাকআত মিলায় (পড়ে) । আর যার দুই রাকা’আতই ছুটে গেছে সে যেন চার রাকা’আত আদায় করে অথবা বলেছেন ,সে যেন যুহরের সালাত আদায় করে।
--মিশকাতঃ ১৯১৪,ইবনে মাজাহ
জুমু’আর সালাতের পর আহার গ্রহন করাঃ
৬৪। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও। --বুখারীঃ ৯৩৯, মুসলিম,তিরমিজি, আবু দাঊদ
একই দিনে জুমু’আ ও ঈদ হলেঃ
৬৫। ইয়াস ইবনু আবূ রামলাহ আশ্-শামী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফয়ান (রাঃ) যখন যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করছিলেন আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মু’আবিয়াহ বললেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একই দিনে দুই ’ঈদ (অর্থাৎ জুমু’আহ ও ’ঈদ) উদযাপন করেছেন। তিনি (যায়িদ) বললেন, হ্যাঁ। মু’আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, তিনি তা কিভাবে আদায় করেছেন? যায়িদ ইবনু আরক্বাম বললেন, তিনি ’ঈদের সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর জুমু’আহর সালাত আদায়ের ব্যাপার অবকাশ দিয়ে বলেছেনঃ কেউ জুমু’আহর সালাত আদায় করতে চাইলে আদায় করে নিবে।
--আবু দাঊদঃ ১০৭০, ইবনে মাজাহ
জুমু’আর দিনে দু’আ কবুলের মুহূর্তঃ
৬৬। আবূ মূসা আল আশ’আর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার পিতাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জুমুআর দিনের বিশেষ মুহুর্তটি সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ইমামের বসা থেকে সালাত শেষ করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে মুহুর্তটি নিহিত। --মুসলিমঃ ১৮৬০
৬৭। আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জুমাবারের যে মুহূর্তটিতে দু’আ কবূলের আশা করা যায়, তোমার সে মুহূর্তটিকে বাদ আসর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টিতে তালাশ কর।
--তিরমিযিঃ ৪৮৯, মিশকাত
৬৮। আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জুমাবারের যে মুহূর্তটিতে দু’আ কবূলের আশা করা যায়, তোমার সে মুহূর্তটিকে বাদ আসর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টিতে তালাশ কর।
--তিরমিযিঃ ৪৯০, ইবনে মাজাহ
৬৯। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সূর্য উদিত হয় এমন সব দিনের মধ্যে শেষ্ঠ দিন হ’ল ইয়াওমূল জুমুআহ। এই দিনেই আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সৃষ্ঠি করা হয়। এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে দাখিল করা হয়, এই দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হয়। এই দিনের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত বিদ্যামান কোন মুসলিম বান্দা যখন সালাতরত অবস্থায় এই মুহূর্তটি পায়, আর সে আল্লাহর কাছে কিছু যাঞ্ছা করে, তখন অবশ্যই আল্লাহ তার এই যাঞ্ছা পূরণ করেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু -এর সাথে আমার মুলাকাত হলে তাঁকে আমি এই হাদীসটি বর্ণনা করি। তখন তিনি বললেনঃ আমি এই মুহূর্তটি সম্পর্কে সমধিক অবহিত। আমি বললাম, আমাকে এই সম্পর্কে অবহিত করুন। এই বিষয়ে আমার সঙ্গে কার্পন্য করবেন না। তিনি বললেনঃ বাদ আসর কেমন করে হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, সালাত (নামায/নামাজ) রত অবস্থায় যদি কোন মুসলিম বান্দা এই মুহূর্তটি পায়। অথচ বাদ আসর তো (নফল) সালাত হয় না। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এই কথা বলেননি যে, সালাতের অপেক্ষায় যে ব্যক্তি বসা থাকবে, তাকে সালাত রত বলে গণ্য করা হবে? বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ-ও তা-ই।
--তিরমিযিঃ ৪৯১, ইবনে মাজাহ
জুমু’আর দিন রসুলুল্লাহ(সঃ) এর উপর দুরুদ পাঠঃ
৭০। শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সর্বোত্তম দিন হলো জুমুআহর দিন। এ দিন আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে এবং তাতে বিকট শব্দ হবে। অতএব তোমরা এ দিন আমার উপর প্রচুর পরিমাণে দুরূদ পাঠ করো। তোমাদের দুরূদ অবশ্যই আমার নিকট পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! কিভাবে আমাদের দুরূদ আপনার নিকট পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো অচিরেই মাটির সাথে একাকার হয়ে যাবেন? তিনি বলেনঃ আল্লাহ নবীগণের দেহ ভক্ষণ মাটির জন্য হারাম করেছেন।
--ইবনে মাজাহঃ ১০৮৫, আবু দাঊদ
জুমু’আর দিন সুরা কাহাফ পাঠঃ
৭১। আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। --মিশকাতঃ ২১৭৫
জুমু’আর দিন সাওম রাখা সম্পর্কেঃ
৭২। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অন্যান্য রাতগুলোর মধ্যে লায়লাতুল জুমাকে ’ইবাদাত বন্দেগীর জন্য খাস করো না। আর ইয়াওমুল জুমাকেও (জুমার দিন) অন্যান্য দিনের মধ্যে সওমের জন্য নির্দিষ্ট করে নিও না। তবে তোমাদের কেউ যদি আগে থেকেই অভ্যস্ত থাকে, জুমাহ্ ওর মধ্যে পড়ে যায়, তাহলে জুমার দিন সওমে অসুবিধা নেই। (মুসলিম)
মিশকাতঃ ২০৫২
১। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সূর্য উদিত হয় এমন সকল দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হ’ল জুমু’আর দিন। এই দিনেই আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান হয়। এই দিনেই তাঁকে তা থেকে বের করা হয়। আর এই জুমুআর দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -- সহিহ আবু দাউদ ৯৬১, মুসলিম, তিরমিজী ৪৮৮
২। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহ ১০৯৮
জুমু’আ এই উম্মতের জন্য একটি উপঢৌকন
৩। আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা সবশেষে আগত উম্মাত, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা হব সর্বগ্রবর্তী, আমরাই প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব। অথচ তাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদেরকে তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। তারা বিরোধে লিপ্ত হয়ে পড়ল কিন্তু তারা যে সত্য দীনের ব্যাপারে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিল, আল্লাহ আমাদেরকে সে দিন সম্পর্কে হিদায়াত দান করেছেন। তিনি বলেনঃ আমাদের জন্য আজকে জুমুআর দিন আর ইয়াহুদীদের জন্য পরের দিন এবং খৃষ্টানদের জন্য তারও পরের দিন।
তাহক্বীকঃ সহীহ -মুসলিমঃ ১৮৬৫
জুমু’আর ফজিলত
৪। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযু করে জুমু’আর নামায আদায় করতে আসে, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে মনোযোগ সহকারে নীরবে খুতবা শুনে, তার এ জুমুআ হতে ঐ জুমুআ পর্যন্ত এবং আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি কাকর-বালি ইত্যাদি নাড়াচাড়া করল সে বাজে কাজ করল।
তাহক্বীকঃ সহীহ— ইবনু মাজাহ (১০৯০), মুসলিম।
৫।আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু’আর দিন অথবা জুমু’আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --মিশকাতঃ ১৩৬৭, তিরমিযিঃ ১০৭৪
৬। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন প্রকারের লোক জুমু’আর সালাতে উপস্থিত হয়। এক প্রকার হলো, যারা বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ে হাজির হয়। জুমু’আর দ্বারা তাদের এটাই হয় লাভ। দ্বিতীয় প্রকারের লোক হলো, আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে চাইতে হাজির হয়। এরা এমন লোক, যারা আল্লাহর কাছে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করতে চায়। আল্লাহ চাইলে তাদের তা দান করতে পারেন। আর ইচ্ছা না করলে নাও দিতে পারেন। তৃতীয় প্রকারের লোক হলো, শুধু জুমু’আর সালাতের উদ্দেশে নিরবতার সাথে মসজিদে উপস্থিত হয়। সামনে যাবার জন্য কারো ঘাড় টপকায় না। কাউকে কোন কষ্ট দেয় না। এ ধরনের লোকদের এ জুমু’আহ্ থেকে পরবর্তী জুমু’আহ্ পর্যন্ত সময়ে (সগীরাহ্) গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যায়। তাছাড়া আরো অতিরিক্ত তিন দিনের কাফফারাহ্ হবে এজন্য যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’যে ব্যক্তি কোন উত্তম কাজ করবে তার জন্য এর দশ গুণ প্রতিদান রয়েছে’’- (সূরাহ্ আল আন্’আম ৬: ১৬০)।
তাহক্বীকঃ সহীহ --আবু দাঊদঃ ১১১৩, মিশকাত ১৩৯৬
৭। সালমান ফারিসী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। -বুখারীঃ ৮৮৩ ইবনে মাজাহ
প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছরের সিয়াম ও কিয়ামের সওয়াব হয়। তাহক্বীকঃ সহীহ --তিরমিযিঃ ৪৯৬
জুমু’আর দিনে করনীয় বর্জনীয়
জুমু’আর দিন ফজরে যে সুরা পাঠ করবেঃ
৮। আবু হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুক্রবার ফজরের সালাতে الم تَنْزِيلُ সূরাহ আস সিজদা এবং هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ সূরাহ ইনসান তিলাওয়াত করতেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ -বুখারীঃ৮৯১, মুসলিম, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, আবু দাঊদ
জুমু’আর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা, তৈল ব্যাবহার করা ও সুগন্ধি লাগানোঃ
৯। সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তা তার জন্য যথেষ্ট এবং তা উত্তম কাজ আর যে ব্যক্তি গোসল করে তবে তা পরমোত্তম কাজ।
তাহক্বীকঃ সহীহ -নাসাঈঃ১৩৭৪, ইবনে মাজাহ
১০। আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ জুমু‘আহর সালাতে আসলে সে যেন গোসল করে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -বুখারীঃ ৮৭৭, মুসলিম, তিরমিযি, আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ্, নাসাঈ
১১। ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.) জুমু‘আহর দিন দাঁড়িয়ে খুত্বা দিচ্ছিলেন, এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবা এলেন। ‘উমার (রাযি.) তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আযান শুনে কেবল উযূ করে নিলাম। ‘উমার (রাযি.) বললেন, কেবল উযূই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসলের নির্দেশ দিতেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ -- বুখারীঃ ৮৭৮, মুসলিম, তিরমিযি, আবু দাঊদ
১২। ‘আমর ইবনু সুলাইম আনসারী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিস্ওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -- বুখারীঃ ৮৮০, মুসলিম
১৩। সালমান ফারিসী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৮৮৩ ইবনে মাজাহ
মহিলা, বালক-বালিকাএবংঅন্যযারাজুমু‘আয়উপস্থিতহয়না, তাদেরগোসলকরাঃ
১৪। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন প্রত্যেক মুসলিমের উপর হাক্ব রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ৮৯৭, মুসলিম ,আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
জুমু’আর দিন উত্তম পোশাক পরিধান করাঃ
১৫। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জুমুআহর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছেনঃ তোমরা যদি তোমাদের কাজকর্মের পেশাকদ্বয় ছাড়া জুমুআহর দিনের জন্য আরো দুটি পরিধেয় বস্ত্র ক্রয় করতে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহঃ ১০৯৫, আবু দাঊদ
জুমু’আর সালাতের অপরিহার্যতাঃ
১৬। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমু’আর জন্য মধ্যাহ্নের পর যাত্রা করা প্রত্যেক সাবালক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব।
তাহক্বীকঃ সহীহ --নাসাঈঃ ১৩৭৪, আবু দাঊদ
১৭। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর আযান শুনতে পাবে, তার ওপর জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফরয হয়ে যায়।
তাহক্বীকঃ সহীহ --আবু দাঊদঃ ১০৫৬, মিশকা্তঃ ১৩৭৫
১৮। ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক। জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার ব্যক্তি ছাড়া প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জামা’আতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। ওই চার ব্যক্তি হলো (১) গোলাম যে কারো মালিকানায় আছে, (২) নারী, (৩) বাচ্চা, (৪) রুগ্ন ব্যক্তি।
তাহক্বীকঃ সহীহ -মিশকাতঃ ১৩৭৭, আবু দাঊদ
ওজর বিহীন জুমু’আ পরিত্যাগের পরিনতিঃ
১৯। আবুল জা’দ আয-যমরী মুহাম্মাদ ইবনু "আমরের ধারণানুযায়ী তিনি একজন সাহাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক নিছক অলসতা ও গাফলতি করে পর পর তিন জুমুআ ছেড়ে দেয় আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ -তিরমিযিঃ ৫০০, ইবনে মাজাহ
২০। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই আল্লাহ্র নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।
তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার এই স্থানে আমার এই দিনে, আমার এই মাসে এবং আমার এই বছরে তোমাদের উপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আমার জীবদ্দশায় বা আমার ইন্তেকালের পরে, ন্যায়পরায়ণ অথবা যালেম শাসক থাকা সত্ত্বেও জুমুআহর সালাত তুচ্ছ মনে করে বা অস্বীকার করে তা বর্জন করবে, আল্লাহ তার বিক্ষিপ্ত বিষয়কে একত্রে গুছিয়ে দিবেন না এবং তার কাজে বরকত দান করবেন না।
সাবধান! তার সালাত, যাকাত, হাজ্জ (হজ্জ), সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এবং অন্য কোন নেক আমল গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ না সে তওবা করে। যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবূল করেন। সাবধান! নারী পুরুষের, বেদুইন মুহাজিরের এবং পাপাচারী মুমিন ব্যক্তির ইমামতি করবে না। তবে স্বৈরাচারী শাসক তাকে বাধ্য করলে এবং তার তরবারি ও চাবুকের ভয় থাকলে স্বতন্ত্র কথা।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহঃ ১০৮১
২১। সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) ত্যাগ করলো, সে যেন এক দ্বীনার দান-খয়রাত করে। যদি সে তা না পায়, তাহলে যেন অর্ধ দ্বীনার দান-খয়রাত করে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহঃ ১১২৮, নাসাঈঃ ১৩৭২,আবু দাঊদঃ ১০৫৬, মিশকাত
প্রবল বর্ষন কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগে এই ব্যাপারে শিথিলতাঃ
২২। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর মুয়ায্যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্ সালাহ্’ বলবে না, বলবে, ‘‘সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম’’ (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তা করেছেন। জুমু‘আহ নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -বুখারীঃ ৯০১
জুমু’আর দিন আগে আগে মসজিদে আসাঃ
২৩। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকারা মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৮৮১, মুসলিম , তিরমিযি, আবু দাঊদ , ইবনে মাজাহ
বাহনে আরোহন না করে পায়ে হেটে মসজিদে আসাঃ
২৪। আওস ইবনু আওস আস-সাক্বা্ফী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমুআর জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর সালাত আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -আবু দাঊদঃ ৩৪৫,তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ
মসজিদে উপস্থিত হয়ে বসার পূর্বে দুই রাকা’আত সালাত আদায় করাঃ
২৫। জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় একটি লোক এসে উপস্থিত হল। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি (তাহিয়াতুল মাসজিদ) নামায আদায় করেছ? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ ওঠো এবং নামায আদায় কর।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারী, মুসলিম, তিরমিজিঃ৫১০, ইবনে মাজাহ
২৬। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমুআর দিন সুলায়ক আল গাত্বাফানী এসে উপস্থিত হ’ল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে বসে পড়লে তিনি তাকে বলেনঃ হে সুলায়ক উঠে সংক্ষেপে দু’ রাকাআত সালাত আদায় কর। ..... অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, জুমুআর দিন তোমাদের কেউ যখন আসে এমতাবস্থায় যে, ইমাম খুতবাহ দিচ্ছেন তখন সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --মুসলিম ১৯০৯, আবু দাঊদ
ইমামের কাছাকাছি বসাঃ
২৭। সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু’আর দিন খুতবার সময় উপস্থিত থাকবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসবে। কারণ কোন ব্যক্তি পেছনে থাকতে থাকতে (অর্থাৎ প্রথম সারিতে না গিয়ে পেছনের সারিতে থাকে) অবশেষে জান্নাতে প্রবেশেও পেছনে পড়ে যাবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ -মিশকাতঃ ১৩৯১, আবু দাঊদঃ ১১০৮
২৪ নং হাদীসও
জুমু’আর সালাতের ওয়াক্তঃ
২৮। আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আহর সালাত আদায় করতেন, যখন সূর্য হেলে যেতো।
তাহক্বীকঃ সহীহ -বুখারীঃ ৯০৪, মুসলিম, তিরমিযি
২৯। আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীতের সময় প্রথম ওয়াক্তেই সালাত আদায় করতেন। আর তীব্র গরমের সময় ঠান্ডা করে অর্থাৎ বিলম্ব করে- জুমু’আর সালাত আদায় করতেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯০৬
৩০। সালামাহ ইবনে আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে জুমু’আর সালাত আদায়ের পর যখন ফিরে আসতাম তখন আমাদের ছায়া গ্রহনের উপযোগী প্রাচীরের কোন ছায়া পড়তো না ।
তাহক্বীকঃ সহীহ --আবু দাঊদঃ ১৮৭৮
দেয়ালের এতটুকু ছায়াও দেখতাম না যার ছায়া আমরা গ্রহন করতে পারি। -ইবনে মাজাহঃ ১১০০
জুমু’আর সালাতের আযানঃ
৩১। সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাযি.) এবং উমর (রাযি.)-এর সময় জুমু‘আহর দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। পরে যখন ‘উসমান (রাযি.) খলীফাহ হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি ‘যাওরাহ’ হতে তৃতীয়* আযান বৃদ্ধি করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, ‘যাওরাহ’ হল মাদ্বীনার অদূরে বাজারের একটি স্থান।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯১২, তিরমিযিঃ ৫১৬, ইবনে মাজাহ
৩২। সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। মদিনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমু‘আহর দিন তৃতীয় আযান যিনি বৃদ্ধি করলেন, তিনি হলেন, উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাযি.)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় (জুমু‘আহর জন্য) একজন ব্যতীত মুয়ায্যিন ছিল না এবং জুমু‘আহর দিন আযান দেয়া হত যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের উপর খুৎবাহর পূর্বে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯১৩
৩৩। সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিনে মিম্বরের উপর বসতেন, তখন বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন এবং যখন তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করতেন তখন ইকামাত দিতেন। তারপর এরূপ আবূ বকর এবং উমর (রাঃ)-এর যুগেও (প্রচলিত) ছিল।
তাহক্বীকঃ সহীহ --নাসাঈঃ ১৩৯৭
জুমু’আর আযানের পর বেচাকেনা হারামঃ
হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।( সূরা জুমু’আঃ ৯)
ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রব্ণ করা ও চুপ থাকাঃ
৩৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে বক্তৃতায় আল্লাহর একত্ব ও রিসালাতের সাক্ষ্য থাকে না তা পঙ্গু হাতের ন্যায়। ---আবু দাউদঃ ৪৮৪১
৩৪। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিনে ইমামের খুতবা দানকালে (অন্যকে) বলল, "চুপ কর সে অকারণে কথা বলল
তাহক্বীকঃ সহীহ --তিরমিযিঃ ৫১২, আবু দাঊদ
৩৫। সালমান ফারসী (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, যখন ইমাম কথা বলবেন, তখন চুপ থাকবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯৩৪
৩৫.৫। সালমান ফারিসী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৮৮৩
ইমাম খুতবা প্রদান কালে ইহতিবা (তিনমাথা/দুই হাটু উঠিয়ে নিতম্বের উপর বসা) হয়ে বসাঃ
৩৬। মু’আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রাঃ)বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন ইমামের খুতবার সময় হাঁটু উচিয়ে দু’হাত দিয়ে তা জড়িয়ে ধরে বসতে নিষেধ করেছেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --মিশকাতঃ ১৩৯৩, আবু দাঊদ, তিরমিযি
৩৭। আমর ইবনে শু’আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সুত্রে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সঃ) জুমু’আর দিন ইমামের খুতবা দান কালে নিতম্বের উপর বসতে নিষেধ করেছেন
তাহক্বীকঃ সহীহ --আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪
জুমু’আর দিনে মসজিদে কতিপয় আদবঃ
৩৮। ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইবনু জুরাইজ (রহ.) বলেন, আমি নাফি‘ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুমু‘আহর ব্যাপারে? তিনি বললেন, জুমু‘আহ ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও।
তাহক্বীকঃ সহীহ --বুখারীঃ ৯১১
আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কবিতা আবৃতি করতে, কেনা-বেচা করতে এবং জুমুআর দিন জুমুআর নামাযের আগে বৃত্তাকারে গোল হয়ে বসতে নিষেধ করেছেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --তিরমিযিঃ ৩২২, আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ।
৩৯। সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খুতবাহ দেয়ার জন্য) মিম্বারে উঠে দাঁড়ালে তাঁর সাহাবীগণ তাঁর দিকে তাদের মুখ ঘুরিয়ে বসতেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ --ইবনে মাজাহঃ ১১৩৬
৪০। আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুক্রবারে তার পাশে বসা ছিলাম, তারপর তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙিয়ে আসছিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, বসে পড়, তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ।
-- নাসাঈঃ ১৪০২, আবু দাঊদ
৪১। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমু’আর সালাতের দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে বসে বললেন, তোমরা বসো। ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) এ নির্দেশ শুনে মসজিদের দরজায় বসে পড়লেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখলেন এবং বললেন, হে ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ! এগিয়ে এসো।
--মিশকাতঃ ১৪১৮, আবু দাঊদঃ ১০৯১
৪২। ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআর দিন তোমাদের কোন ব্যক্তির ঘুমের আবেশ আসলে সে যেন নিজ জায়গা হতে উঠে যায়।
--তিরমিযিঃ ৫২৬
খুতবাহ মিম্বার থেকে দিতে হয়ঃ
৪৩। ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছের গুড়ির সাথে ভর দিয়ে জুমু’আর বক্তৃতা করতেন। যখন মিম্বার তৈরী করা হল খেজুরের গুড়িটা কাঁদতে লাগল। তিনি গাছটির নিকট গেলেন এবং তা স্পর্শ করলেন। ফলে এটা চুপ করল।
--তিরমিযিঃ ৫০৫, বুখারী
দাঁড়িয়ে খুতবা দেয়াঃ
৪৪। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিতেন। অতঃপর বসতেন এবং পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন তোমরা এখন করে থাক। ---বুখারীঃ ৯২০, তিরমিযি
৪৫। আমর ইবনুল হুরাইস (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতে দেখেছি, তাঁর পাগড়ির দু’ পাশ তাঁর কাঁধের উপর ঝুলছিল। --আবু দাঊদঃ ৪০৭৭, মুসলিম, নাসাঈ
খুতবাহ সংক্ষেপ করাঃ
৪৬। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) থেকে বণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করতাম। তার সালাত ও খুতবাহ ছিল মধ্যম (দীর্ঘও নয় অতি সংক্ষিপ্তও নয়)। --মুসলিমঃ ১৮৮৮, তিরমিযি
৪৭। আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আম্মার (রাযিঃ) আমাদের উদ্দেশে সংক্ষেপে একটি সারগর্ভ ভাষণ দিলেন। তিনি মিম্বার থেকে নামলে আমরা বললাম, হে আবূল ইয়াকযান। আপনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ ভাষণ দিয়েছেন, তবে যদি তা কিছুটা দীর্ঘ করতেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তির দীর্ঘ সালাত ও সংক্ষিপ্ত ভাষণ তার প্রজ্ঞার পরিচায়ক। অতএব, তোমরা সালাতকে দীর্ঘ এবং ভাষণকে সংক্ষিপ্ত কর। অবশ্যই কোন কোন ভাষণে যাদুকরি প্রভাব থাকে।
--মুসলিমঃ ১৮৯৪, আবু দাঊদ
৪৮। জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন, তারপর বসতেন, পূনরায় দাঁড়াতেন ও কিছু আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আল্লাহ তা’আলার যিকির করতেন। আর তার খুতবা হত পরিমিত আকারের, এবং তার সালাত হত মধ্যম প্রকারের। -নাসাঈঃ ১৪২১, মুসলিম, ইবনে মাজাহ
খুতবায় হামদের পর আম্মা বা’দ বলাঃ
৪৮.৫। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর আরোহণ করলেন। এ ছিল তাঁর জীবনের শেষ মাজলিস। তিনি বসেছিলেন, তাঁর দু’ কাঁধের উপর বড় চাদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্টি। তিনি আল্লাহর গুণকীর্তন করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার নিকট আস। লোকজন তাঁর নিকট একত্র হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘আম্মা বা’দ’।
--বুখারীঃ ৯২৭
খুতবায় যা পড়া হয়ঃ
৪৯। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে সালাম দিতেন। --ইবনে মাজাহঃ ১১০৯
৫০। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি খুতবাহ দিতেন, উভয় খুতবার মাঝখানে বসতেন এবং (খুতবায়) কুরআন পড়তেন এবং জনগণকে উপদেশ দিতেন। --মুসলিমঃ ১৮৮০
৫১। আমরাহ বিনতু আবদুর রহমান (রাযিঃ) থেকে তার এক বোনের সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুমুআর দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ থেকে শুনে সূরাহ কাফ মুখস্থ করেছি। তিনি প্রতি জুমুআর দিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে এ সূরাহ পড়তেন।
--মুসলিমঃ ১৮৯৭, আবু দাঊদ
৫২। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবাহ (ভাষণ) দিতেন যখন তার চক্ষুদ্বয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করত, কণ্ঠস্বর জোরালো হ’ত এবং তার রাগ বেড়ে যেত, এমনকি মনে হ’ত, তিনি যেন শত্রুবাহিনী সম্পর্কে সতর্ক করছেন আর বলছেনঃ তোমরা ভোরেই আক্রান্ত হবে, তোমরা সন্ধ্যায়ই আক্রান্ত হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলতেনঃ আমি ও কিয়ামত এ দুটির ন্যায় (স্বল্প ব্যবধান) প্রেরিত হয়েছি, তিনি মধ্যম ও তর্জনী আঙ্গুল মিলিয়ে দেখাতেন।
(আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করে তাকে কেউ বিপথগামী করতে পারে না, এবং তিনি যাকে বিপথগামী করেন তাকে কেউ হিদায়াত দিতে পারেন না। --আবু দাঊদ)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলতেনঃ অতঃপর উত্তম বাণী হ’ল- আল্লাহর কিতাব এবং উত্তম পথ হ’ল মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রদর্শিত পথ। অতীব নিকৃষ্ট বিষয় হ’ল (ধর্মের মধ্যে) নতুন উদ্ভাবন (বিদ’আত)। প্রতিটি বিদ’আদ ভ্রষ্ট। তিনি আরো বলতেনঃ আমি প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তির জন্য তার নিজের থেকে অধিক উত্তম (কল্যাণকামী)। কোন ব্যক্তি সম্পদ রেখে গেলে তা তার পরিবার-পরিজনের প্রাপ্য। আর কোন ব্যক্তি ঋণ অথবা অসহায় সন্তান রেখে গেলে সেগুলোর দায়িত্ব আমার।
--মুসলিমঃ ১৮৯০
৫৩। আব্দুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খুতবায়ে হাজাত শিক্ষা দিলেনঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ نَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَسَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
এরপর তিন আয়াত পাঠ করলেনঃ
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ)
(يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا)
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيدًا)
অর্থঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্নসমর্পণকারী না হয়ে কোন অবস্থায় মর না। (৩ঃ ১০২)
হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালক কে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে করেছেন ও যিনি তা হতে তার সংগিনী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; এবং আল্লাহ কে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা কর এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি বন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। (৪ঃ ১)
--নাসাঈঃ ১৪০৭
খুতবায় দুই হাত তোলা নিন্দনীয়ঃ
৫৪। উমারা ইবনু রুওয়াইবা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একদিন বিশর ইবনু মারওয়ান জুমুআর খুতবা দেওয়াকালে দু’আ করার সময় উভয় হাত উপরে তুললেন। এতে উমারা বললেন, আল্লাহ এই বেঁটে হাত দুটিকে কুৎসিত করুন। আমি নিশ্চিতরূপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নিজের হাত দিয়ে এর বেশি কিছু করতেন না। (অধঃস্তন রাবী) হুশাইম এ কথা বলার সময় নিজের তর্জনী দ্বারা ইঙ্গিত করলেন
--তিরমিযিঃ ৫১৫, মুসলিম
খুতবায় বিশেষ প্রয়োজনে দু’আ করাঃ
৫৫। আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক জুমু‘আহর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (পানির অভাবে) ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরীও মরে যাচ্ছে। কাজেই আপনি দু’আ করুন, যেন আল্লাহ্ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তখন তিনি দু’ হাত প্রসারিত করলেন এবং দু‘আ করলেন।
--বুখারীঃ ৯৩২
জুমু’আর সালাতঃ
৫৬। আব্দুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, জুমু’আর সালাত দু’রাকআত, ঈদুল ফিতরের সালাত দু’রাকআত, ঈদুল আযহার সালাত দু’রাকআত এবং সফরের অবস্থার সালাতও দু’রাকআত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষ্য মতে সে দু’রাকআতই পূর্ণ সালাত, সংক্ষেপ নয়।
--নাসাঈঃ ১৪২৩, ইবনে মাজাহ
৫৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম আবু রাফি (রাঃ)-এর পুত্র উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একবার মারওয়ান আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে মদীনায় তার প্রতিনিধি করে মক্কায় চলে গেলেন। আবু হুরাইরা (রাঃ) আমাদের জুমু’আর নামায আদায় করালেন। তিনি প্রথম রাকাআতে সূরা জুমুআ এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ইযা জাআকাল মুনাফিকূন পাঠ করলেন। উবাইদুল্লাহ বলেন, আমি আবু হুরাইরার সাথে দেখা করে তাকে বললাম, আপনি এমন দুটি সূরা পাঠ করলেন যা আলী (রাঃ) কুফায় পাঠ করতেন। আবু হুরাইরা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ দুটো সূরা পাঠ করতে শুনেছি। --তিরমিযিঃ ৫১৯, মুসলিম ,আবু দাঊদ
৫৮। নু’মান ইবনু বাশীর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ ঈদের সালাতে ও জুমুআর সালাতে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-" ও "হাল আতা-কা হাদীসুল গ-শিয়াহ" সূরাদ্বয় পাঠ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, ঈদ ও জুমুআহ একই দিন হলেও তিনি উভয় সালাতে ঐ সূরাদ্বয় পাঠ করতেন।
--মুসলিমঃ ১৯১৩, আবু দাঊদ
জুমু’আর সালাতের পর সালাতঃ
৫৯। আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বে দু’ রাক‘আত ও পরে দু’ রাক‘আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’ রাক‘আত এবং ‘ইশার পর দু‘ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আর জুমু‘আহর দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন । -- বুখারীঃ ৯৩৭, মুসলিম,তিরমিজি
৬০। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমু’আর নামাযের পর নামায আদায় করতে চায় সে যেন চার রাকাআত আদায় করে। --তিরমিযিঃ ৫২৩,
৬১। উমর ইবনু আতা ইবনু আবূল খুওয়ার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নাফি ইবনু জুবায়র (রহঃ) তাকে নামির-এর ভাগ্নে সায়িব-এর নিকট একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পাঠান যা মু’আবিয়াহ (রাযিঃ) তার সালাতের ব্যাপারে লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি মাকসূরায় দাঁড়িয়ে তার সাথে জুমুআর সালাত আদায় করলাম। ইমামের সালাম ফিরানোর পর আমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে (সুন্নাত) সালাত আদায় করলাম। তিনি প্রবেশ করে আমাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি বললেন, তুমি যা করেছে তার পুনরাবৃত্তি করো না। তুমি জুমুআর সালাত আদায় করার পর কথা না বলা পর্যন্ত অথবা বের না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত কোনরূপ সালাত আদায় করো না। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এরূপ নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা কথা না বলা অথবা বের হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত যেন সালাত না আদায় করি।
--মুসলিমঃ ১৯২৭, আবু দাঊদ
জুমু’আর সালাত এক রাকাআত পেলেঃ
৬২। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও। --বুখারীঃ ৯০৮
৬৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ)এর এক রাকআত পেলো, সে যেন তার সাথে আরো এক রাকআত মিলায় (পড়ে) । আর যার দুই রাকা’আতই ছুটে গেছে সে যেন চার রাকা’আত আদায় করে অথবা বলেছেন ,সে যেন যুহরের সালাত আদায় করে।
--মিশকাতঃ ১৯১৪,ইবনে মাজাহ
জুমু’আর সালাতের পর আহার গ্রহন করাঃ
৬৪। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও। --বুখারীঃ ৯৩৯, মুসলিম,তিরমিজি, আবু দাঊদ
একই দিনে জুমু’আ ও ঈদ হলেঃ
৬৫। ইয়াস ইবনু আবূ রামলাহ আশ্-শামী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফয়ান (রাঃ) যখন যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করছিলেন আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মু’আবিয়াহ বললেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একই দিনে দুই ’ঈদ (অর্থাৎ জুমু’আহ ও ’ঈদ) উদযাপন করেছেন। তিনি (যায়িদ) বললেন, হ্যাঁ। মু’আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, তিনি তা কিভাবে আদায় করেছেন? যায়িদ ইবনু আরক্বাম বললেন, তিনি ’ঈদের সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর জুমু’আহর সালাত আদায়ের ব্যাপার অবকাশ দিয়ে বলেছেনঃ কেউ জুমু’আহর সালাত আদায় করতে চাইলে আদায় করে নিবে।
--আবু দাঊদঃ ১০৭০, ইবনে মাজাহ
জুমু’আর দিনে দু’আ কবুলের মুহূর্তঃ
৬৬। আবূ মূসা আল আশ’আর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার পিতাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জুমুআর দিনের বিশেষ মুহুর্তটি সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ইমামের বসা থেকে সালাত শেষ করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে মুহুর্তটি নিহিত। --মুসলিমঃ ১৮৬০
৬৭। আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জুমাবারের যে মুহূর্তটিতে দু’আ কবূলের আশা করা যায়, তোমার সে মুহূর্তটিকে বাদ আসর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টিতে তালাশ কর।
--তিরমিযিঃ ৪৮৯, মিশকাত
৬৮। আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জুমাবারের যে মুহূর্তটিতে দু’আ কবূলের আশা করা যায়, তোমার সে মুহূর্তটিকে বাদ আসর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টিতে তালাশ কর।
--তিরমিযিঃ ৪৯০, ইবনে মাজাহ
৬৯। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সূর্য উদিত হয় এমন সব দিনের মধ্যে শেষ্ঠ দিন হ’ল ইয়াওমূল জুমুআহ। এই দিনেই আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সৃষ্ঠি করা হয়। এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে দাখিল করা হয়, এই দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হয়। এই দিনের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত বিদ্যামান কোন মুসলিম বান্দা যখন সালাতরত অবস্থায় এই মুহূর্তটি পায়, আর সে আল্লাহর কাছে কিছু যাঞ্ছা করে, তখন অবশ্যই আল্লাহ তার এই যাঞ্ছা পূরণ করেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু -এর সাথে আমার মুলাকাত হলে তাঁকে আমি এই হাদীসটি বর্ণনা করি। তখন তিনি বললেনঃ আমি এই মুহূর্তটি সম্পর্কে সমধিক অবহিত। আমি বললাম, আমাকে এই সম্পর্কে অবহিত করুন। এই বিষয়ে আমার সঙ্গে কার্পন্য করবেন না। তিনি বললেনঃ বাদ আসর কেমন করে হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, সালাত (নামায/নামাজ) রত অবস্থায় যদি কোন মুসলিম বান্দা এই মুহূর্তটি পায়। অথচ বাদ আসর তো (নফল) সালাত হয় না। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এই কথা বলেননি যে, সালাতের অপেক্ষায় যে ব্যক্তি বসা থাকবে, তাকে সালাত রত বলে গণ্য করা হবে? বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ-ও তা-ই।
--তিরমিযিঃ ৪৯১, ইবনে মাজাহ
জুমু’আর দিন রসুলুল্লাহ(সঃ) এর উপর দুরুদ পাঠঃ
৭০। শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সর্বোত্তম দিন হলো জুমুআহর দিন। এ দিন আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে এবং তাতে বিকট শব্দ হবে। অতএব তোমরা এ দিন আমার উপর প্রচুর পরিমাণে দুরূদ পাঠ করো। তোমাদের দুরূদ অবশ্যই আমার নিকট পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! কিভাবে আমাদের দুরূদ আপনার নিকট পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো অচিরেই মাটির সাথে একাকার হয়ে যাবেন? তিনি বলেনঃ আল্লাহ নবীগণের দেহ ভক্ষণ মাটির জন্য হারাম করেছেন।
--ইবনে মাজাহঃ ১০৮৫, আবু দাঊদ
জুমু’আর দিন সুরা কাহাফ পাঠঃ
৭১। আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। --মিশকাতঃ ২১৭৫
জুমু’আর দিন সাওম রাখা সম্পর্কেঃ
৭২। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অন্যান্য রাতগুলোর মধ্যে লায়লাতুল জুমাকে ’ইবাদাত বন্দেগীর জন্য খাস করো না। আর ইয়াওমুল জুমাকেও (জুমার দিন) অন্যান্য দিনের মধ্যে সওমের জন্য নির্দিষ্ট করে নিও না। তবে তোমাদের কেউ যদি আগে থেকেই অভ্যস্ত থাকে, জুমাহ্ ওর মধ্যে পড়ে যায়, তাহলে জুমার দিন সওমে অসুবিধা নেই। (মুসলিম)
মিশকাতঃ ২০৫২