Announcement

Collapse
No announcement yet.

"দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি মুজাহিদদের আবশ্যকীয় আমল " (যুহুদ বিষয়ক কতিপয় হাদিস)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • "দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি মুজাহিদদের আবশ্যকীয় আমল " (যুহুদ বিষয়ক কতিপয় হাদিস)

    আল্লাহর কাছে এই দুনিয়ার মূল্য নিতান্তই তুচ্ছ

    . জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলিয়াহ অঞ্চল থেকে মাদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে অতিক্রম করছিলেন এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উভয় পাশে বেশ লোকজন ছিল যেতে যেতে তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার পাশ দিয়ে যেতে তার কাছে গিয়ে এর কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহাম দিয়ে এটা ক্রয় করতে আগ্রহী তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বদৌলতে আমরা এটা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিনা পয়সায় তোমরা কি সেটা নিতে আগ্রহী? তারা বললেন, এ যদি জীবিত হত তবুও তো এটা দোষী কেননা এর কান হচ্ছে ছোট ছোট আর এখন তো সেটা মৃত, আমরা কিভাবে তা গ্রহণ করব? অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! এ তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশি নগণ্য
    মুসলিমঃ ৭৩০৮
    এ দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহর নিকট মশার একটি পাখার সমানও হতো, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে এখানকার পানির এক ঢোকও পান করাতেন না( ইবনে মাজাহঃ ৪১১০)
    . আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবই অভিশপ্ত, কিন্তু আল্লাহর যিকির এবং তার সাথে সংগতিপূর্ণ অনান্য আমল অথবা আলেম ও এলেম অন্বেষণকারী ব্যতীত
    ইবনে মাজাহঃ ৪১১২
    . বনূ ফিহ্রের সদস্য মুসতাওরিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া হলো এতটুকু, যেমন তোমাদের কেউ তার একটি আংগুল সমুদ্রের পানিতে ডুবিয়ে তা তুলে আনলো সে লক্ষ্য করুক তার আংগুল
    কতটুকু পানি নিয়ে ফিরেছে
    ইবনে মাজাহঃ ৪১০৮

    দুনিয়ায় রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর অবস্থা

    . উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রবেশ করলাম তিনি তখন খেজুর পাতার চাটাইয়ের উপর শোয়া ছিলেন আমি বসে পড়লাম তাঁর পরিধানে ছিলো একটি লুঙ্গি এ ছাড়া আর কোন বস্ত্র তাঁর পরিধানে ছিলো না তাঁর পাঁজরে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিলো আমি দেখলাম যে, তাঁর ঘরের এক কোণে ছিলো প্রায় একসা গম, বাবলা গাছের কিছু পাতা এবং ঝুলন্ত একটি পানির মশক এ অবস্থা দেখে আমার দু'চোখে অশ্রু প্রবাহিত হলো তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে কাত্তাবের পুত্র! তুমি কাঁদছো কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি কেন কাঁদবো না! এই চাটাই আপনার পাঁজরে দাগ কেটে দিয়েছে, আর এই হচ্ছে আপনার ধনভান্ডার, এতে যা আছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি এই কিসরা (পারস্যরাজ) ও কায়সার (রোম সম্রাট) বিরাট বিরাট উদ্যান ও ঝর্ণা সমৃদ্ধ অট্টালিকায় বিলাস-বসনে জীবন-যাপন করছে আর আপনি হলেন আল্লাহর নবী এবং তাঁর মনোনীত প্রিয় বান্দা আর আপনার ধনভান্ডারের অবস্থা এই তিনি বলেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, আমাদের জন্য রয়েছে আখেরাতের স্থায়ী সুখ-শান্তি এবং ওদের জন্য রয়েছে পার্থিব ভোগবিলাস? আমি বললাম, হ্যাঁ
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৫৩
    . আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুর পাতার মাদুরে শুয়েছিলেন তাঁর দেহের চামড়ায় (মাদুরের) দাগ বসে গেলো আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিলে আমরা আপনার জন্য মাদুরের উপর কিছু বিছিয়ে দিতাম তাহলে তা আপনাকে দাগ লাগা থেকে বাঁচিয়ে রাখতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক কী? আমি দুনিয়াতে এমন এক মুসাফির বৈ তো কিছু নই, যে একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলো, অতঃপর তা ত্যাগ করে গন্তব্যের পানে চলে গেলো
    ইবনে মাজাহঃ ৪১০৯
    . আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরী তার ভেতরে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি ছিলো
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৫১
    . কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে? সে বলল, তিনি হলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি আমাকে বলেন, হে আবূ যার! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে আমার ধারণা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন আমি জবাবে বললাম, জী-হাঁ তিনি বললেনঃ আমি পছন্দ করি না যে আমার জন্য উহুদ পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ হোক আর তা সমুদয় আমি নিজের জন্য ব্যয় করি তিনটি দ্বীনার ব্যতীত [আবূ যার (রাঃ) বলেন] তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে আল্লাহর কসম, না! না! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চাই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত দ্বীন সম্পর্কেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞেস করবো না
    বুখারীঃ ১৪০৮
    . উকবাহ ইবনু হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করে দ্রুত ঘরে প্রবেশ করলেন অতঃপর বিলম্ব না করে বের হয়ে আসলেন আমি বললাম বা তাঁকে বলা হলো, এমনটি করার কারণ কী? তখন তিনি বললেনঃ ঘরে সদাকাহর একখন্ড সোনা রেখে এসেছিলাম কিন্তু রাত পর্যন্ত তা ঘরে থাকা আমি পছন্দ করিনি কাজেই তা বণ্টন করে দিয়ে এলাম
    বুখারীঃ ১৪৩০
    . আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনকে জীবন ধারণোপযোগী রিযক দান করো
    মুসলিমঃ ৭৩৩০
    ১০. আয়িশাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে তিন দিন গমের রুটি পেট ভরে খাননি, এ অবস্থায়ই তিনি পরপারে চলে যান
    মুসলিমঃ ৭৩৩৪
    ১১. আয়িশাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি আওসাল্লাম এর পরিবার মাসের পর মাস এমনভাবে অতিবাহিত করতাম যে, আমরা (রান্না করার জন্য) আগুনও প্রজ্জ্বলন করতাম না আমরা শুধু খেজুর ও পানি খেয়েই দিনাতিপাত করতাম
    মুসলিমঃ ৭৩৩৯
    ১২. নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দিনের বেলা ক্ষুধার তাড়নায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতে দেখেছি তিনি তাঁর উদর পূর্তির জন্য এমনকি রদ্দি খেজুরও পেতেন না
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৪৬

    দরিদ্রদের সাথে রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর মিলামিশা

    ১৩. আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তোমরা মিসকীনদের মহববত করবে কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর দোয়ায় বলতে শুনেছিঃ ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীনরূপে জীবিত রাখো, মিসকীনরূপে মৃত্যুদান করো এবং মিসকীনদের দলভুক্ত করে হাশরের ময়দানে উত্থিত করো ’’
    ইবনে মাজাহঃ ৪১২৬
    ১৪. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জাফর ইবনে আবূ তালিব (রাঃ) ফকীর-মিসকীনদের মহববত করতেন, তাদের সাথে ওঠাবসা করতেন এবং তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন আর তারাও তার সাথে আলাপ-আলোচনা করতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আবুল মাসাকীন (দরিদ্রদের পিতা) উপাধি দেন
    ইবনে মাজাহঃ ৪১২৫
    ১৫. খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত মহান আল্লাহর বাণী (অনুবাদ): ‘‘যারা তাদের প্রতিপালককে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ডাকে তাদেরকে তুমি তাড়িয়ে দিও না তাদের কাজের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কাজের জবাবদিহির দায়িত্বও তাদের নয় যে, তুমি তাদের বিতাড়িত করবে, করলে তুমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবে ’’ (সূরা আনআমঃ ৫২) তিনি উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেন, আকরা ইবনে হাবেস আতম-তামীমী ও উয়াইনা ইবনে হিসন আল-ফাজারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সুহাইব, বিলাল, আম্মার ও খাববাব (রাঃ) প্রমুখ দরিদ্র অসহায় মুমিনদের সাথে বসা দেখলো

    তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চারপাশে তাদের উপবিষ্ট দেখে তাদেরকে হেয় জ্ঞান করলো তারা তাঁর সান্নিধ্যে এসে একান্তে তাঁকে বললো, আমরা চাই যে, আপনি আপনার সাথে আমাদের বিশেষ বৈঠকের ব্যবস্থা করবেন, যাতে আরবরা আমাদের মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারে কেননা আপনার নিকট আরবের প্রতিনিধিদলসমূহ আসে এই দাসদের সাথে আরবরা আমাদেরকে উপবিষ্ট দেখলে তাতে আমরা লজ্জাবোধ করি অতএব আমরা যখন আপনার নিকট আসবো তখন আপনি এদেরকে আপনার নিকট থেকে উঠিয়ে দিবেন

    আমরা আপনার নিকট থেকে বিদায় নেয়ার পর আপনি ইচ্ছা করলে তাদের সাথে বসুন তিনি বলেনঃ আচ্ছা! দেখা যাক তারা বললো, আপনি আমাদের জন্য একটি চুক্তিপত্র লিখিয়ে দিন রাবী বলেন, তিনি কাগজ আনালেন এবং আলী (রাঃ) কে লেখার জন্য ডাকলেন আমরা এক পাশে বসা ছিলাম ইত্যবসরে জিবরীল (আঃ) এই আয়াত নিয়ে অবতরণ করলেন (অনুবাদ) ‘‘যারা তাদের রবকে সকাল-সন্ধ্যায় ডাকে তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাদের তুমি তাড়িয়ে দিও না তাদের কাজের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কাজের জবাবদিহির দায়িত্বও তাদের নয় যে, তুমি তাদের বিতাড়িত করবে করলে তুমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবে ’’ (সূরা আনআমঃ ৫২)
    অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আকরা ইবনে হাবেস ও উয়াইনা ইবনে হিসন-এর সম্পর্কে নাযিল করেন (অনুবাদঃ) ‘‘এভাবেই আমি তাদের এক দলকে অন্য দল দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যেন তারা বলে, আমাদের মধ্যে কি এদের প্রতিই আল্লাহ অনুগ্রহ করলেন? আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকেদের সম্পর্কে বিশেষ অবহিত নন’’ (সূরা আনআমঃ ৫৩)?
    অতঃপর আল্লাহ বলেন, ‘‘যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে তারা যখন তোমার নিকট আসে, তখন তুমি তাদের বলোঃ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক তোমাদের প্রতিপালক দয়া করা তাঁর কর্তব্য বলে স্থির করেছেন’’ (সূরা আনআমঃ ৫৪) রাবী বলেন, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর আমরা তাঁর এতো নিকটবর্তী হলাম যে, আমাদের হাঁটু তাঁর হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসলাম
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে বসতেন এবং যখন উঠে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন আমাদের ছেড়ে দাঁড়িয়ে যেতেন তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) ‘‘তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদের সংসর্গে যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে ডাকে তাঁর সন্তোষ লাভের আশায় এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না’’ (সূরা কাহ্ফঃ ২৮) আর তুমি অভিজাতদের সাথে বসো না এবং যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি তার অনুসরণ করো না যে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং কাজেকর্মে সীমা অতিক্রম করে (অর্থাৎ উয়াইনা ও আকরা) তার কৃতকর্ম বরবাদ হয়েছে অতঃপর তিনি তাদের সামনে দু’ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত ও পার্থিব জীবনের উপমা পেশ করেন (সূরা কাহফের ৩২ নং ও ৪৫ নং আয়াত দ্রঃ) খাব্বাব (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসতাম যখন তাঁর উঠার সময় হতো তখন আমরা তাঁর আগে উঠে যেতাম, অতঃপর তিনি উঠতেন
    ইবনে মাজাহঃ ৪১২৭

    সাহাবীদের চোখে দুনিয়া এবং দুনিয়ায় সাহাবীদের অবস্থা

    ১৬. সামুরা ইবন সাহম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবূ হাশেম ইবনে উতবার (রাঃ) কাছে গেলাম তিনি বর্শার আঘাতে আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন মুআবিয়া (রাঃ) ও তাকে দেখতে এলেন আবূ হাশেম (রাঃ) কেঁদে দিলে তিনি বলেন, হে মামা! কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে আঘাতের যন্ত্রণা, নাকি পার্থিব কিছু? পার্থিব কিছু হলে তার উৎকৃষ্ট অংশ তো অতিবাহিত হয়েছে তিনি বলেন, এর কোনটিই নয় তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট থেকে একটি প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন হায়! আমি যদি তা অনুসরণ করতাম তিনি বলেছিলেনঃ ‘‘হয়তো তুমি পর্যাপ্ত সম্পদের অধিকারী হবে যা তুমি জনগণের মধ্যে বিতরণ করবে তখন তোমার জন্য একটি খাদেম এবং আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য একটি সওয়ারীই যথেষ্ট’’ আমি সেই প্রাচুর্য লাভ করেছি কিন্তু তা (বিতরণ না করে) পুঞ্জীভূত করে রেখেছি
    ইবনে মাজাহঃ ৪১০৩
    ১৭. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সালমান (রাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়লে সাদ (রাঃ) তাকে দেখতে যান তিনি তাকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, হে ভাই! আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেননি? আপনি কি এই এই (ভালো কাজ) করেননি সালমান (রাঃ) বলেন, আমি এই দু’টির কোনটির জন্যই কাঁদছি না আমি দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার আক্ষেপে বা আখেরাতের পরিণতির আশংকায় কাঁদছি না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট থেকে একটি প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, কিন্তুু মনে হয় আমি তাতে সীমালংঘন করেছি সাদ (রাঃ) বলেন, তিনি আপনার থেকে কী প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন? সালমান (রাঃ) বলেন, তিনি এই প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, ‘‘তোমাদের যে কোন ব্যক্তির একজন পর্যটকের সমপরিমাণ পাথেয় যথেষ্ট’’ কিন্তু আমি লক্ষ্য করছি যে, আমি সীমালংঘন করে ফেলেছি হে ভাই সাদ! যখন তুমি বিচার মীমাংসা করবে, ভাগ-বাঁটোয়ারা করবে এবং কোন কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করবে তখন আল্লাহকে ভয় করবে সাবিত (রাঃ) বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, (মৃত্যুর সময়) সালমান (রাঃ) তার ভরণপোষণের জন্য সঞ্চিত মাত্র বিশাধিক দিরহাম রেখে যান
    ইবনে মাজাহঃ ৪১০৪
    ১৮. আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ও ফাতিমা (রাঃ) -এর নিকট এলেন তখন তারা তাদের একটি সাদা পশমী চাদরে আবৃত ছিলেন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বিবাহের উপঢৌকন স্বরূপ দিয়েছিলেন তিনি আরও দিয়েছিলেন ইযখির ঘাস ভর্তি একটি বালিশ এবং পানির একটি মশক
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৫২
    ১৯. আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দান-খয়রাত করার নির্দেশ দিতেন তাই আমাদের কেউ শ্রমিকের কাজ করতে যেতেন এবং এক মুদ্দ উপার্জন করে নিয়ে আসতেন (অতঃপর তা থেকে দান-খয়রাত করতেন) আর আজকের দিনে তাদের কেউ কেউ লাখো দিরহামের মালিক শাকীক (রাঃ) বলেন, তিনি উক্ত কথা দ্বারা নিজের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৫৫

    সূরা তাকাসুর সম্পর্কে

    ২০. মুতাররিফ (রহঃ) এর পিতা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম তখন তিনি সূরা أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ (আত তাকা-সুর) পাঠ করছিলেন তিনি বললেন, আদাম সন্তানগণ বলে, আমার মাল আমার সম্পদ বস্তুতঃ হে আদাম সন্তান! তোমার সম্পদ সেটা যা তুমি খেয়ে নিঃশেষ করে দিয়েছ, পরিধান করে পুরাতন করে ফেলেছ এবং দান করে খরচ করছো
    মুসলিমঃ ৭৩১০
    ২১. আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন ‘‘এরপর অবশ্যই সেদিন তোমাদেরকে নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’’ (সূরা তাকাসুরঃ ৮) শীর্ষক আয়াত নাযিল হলো, তখন যুবাইর (রাঃ) বলেন, আমাদের নিকট এমন কী নিআমত আছে যে সম্পর্কে আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে? আমাদের নিকট শুধুমাত্র দু’টি কালো জিনিস অর্থাৎ খেজুর ও পানি আছে তিনি বলেনঃ তা অচিরেই (তোমাদের হস্তগত ) হবে
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৫৮

    প্রাচুর্যের অধিকারীদের জন্য ধ্বংস

    ২২. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দীনার, দিরহাম ও মূল্যবান চাদরের গোলামেরা ধ্বংস হোক আল্লাহ এদেরকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন জাহান্নামের কাঁটার খোঁচা খেয়েও সে বের হতে পারবে না
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৩৬
    ২৩. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দীনার ও দিরহামের দাসেরা ধ্বংস হোক, সুদৃশ্য চাদর ও কারুকার্যময় চাদরের দাসেরাও ধ্বংস হোক তাকে দান করা হলে খুশী হয় এবং না দেয়া হলে (কৃত অঙ্গীকার) পূর্ণ করে না
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৩৫
    ২৪. আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সম্পদশালীরা কিয়ামতের দিন সর্বনিম্ন স্তরে উপনীত হবে কিন্তু যারা নিজেদের মাল এদিক সেদিক (আল্লাহর পথে) খরচ করে এবং পবিত্র পন্থায় তা উপার্জন করে তারা এর ব্যতিক্রম
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৩০

    সম্পদের লোভ ও মানুষের আকাংখা

    ২৫. আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দু'টি জিনিসের ভালবাসায় বৃদ্ধের অন্তর চির যৌবনের অধিকারী- দীর্ঘ জীবন এবং ধন-সম্পদের মোহ
    মুসলিমঃ ২৩০১
    ২৬. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি কোন আদাম সন্তান একটি স্বর্ণের উপত্যকার মালিক হয়ে যায় তাহলে সে এরূপ আরেকটি উপত্যকা পেতে আকাজক্ষা করে মাটি ছাড়া আর কোন কিছুই তার পেট ভরাতে পারে না আর যে ব্যক্তি তাওবাহ করে আল্লাহ তা'আলা তার তাওবাহ কবুল করেন
    মুসলিমঃ ২৩০৭
    ২৭. আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদাম সন্তান যদি দুটি মাঠ ভর্তি সম্পদের অধিকারী হয়ে যায় তাহলে সে তৃতীয় মাঠ ভর্তি সম্পদ খুঁজে বেড়াবে আদাম সন্তানের পেট- মাটি ছাড়া কোন কিছুই ভরাতে পারে না যে ব্যক্তি তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করেন
    মুসলিমঃ ২৩০৫
    ২৮. মু'আবিয়াহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোন কিছু পাওয়ার ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত কাকুতি মিনতির আশ্রয় নিও না কেননা, আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তি আমার কাছে কোন কিছু চায়, আর তার মিনতিপূর্ণ আকুল প্রার্থনাই আমাকে দানে বাধ্য করে অথচ আমি তা অপছন্দ করি, তাহলে এতে কী করে বারাকাত হবে?
    মুসলিমঃ ২২৮০
    ২৯. আহনাফ ইবনু কায়স (রহ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি কুরাইশ গোত্রীয় একদল লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রুক্ষ্ম চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বললো, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের চিকন হাড্ডির ওপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসল আমিও তাঁর অনুগমন করলাম ও তাঁর কাছে বসলাম অথচ আমি জানতাম না সে কে আমি তাকে বললাম, আমার মনে হয় যে, আপনার বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি তিনি বললেন, তারা কিছুই বুঝে না
    বুখারীঃ ১৪০৭

    ইমারত নির্মান প্রসংগে

    ৩০. হারিসা ইবনে মুদাররিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা অসুস্থ খাববাব (রাঃ) কে দেখতে এলাম তখন তিনি বলেন, আমার অসুস্থাবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে না শুনতামঃ ‘‘তোমরা মৃত্যুর আকাংখা করো না’’, তাহলে অবশ্যই আমি মৃত্যু কামনা করতাম তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয় বান্দা তার প্রতিটি ব্যয়ের জন্য প্রতিদান পাবে, মাটিতে ব্যয় করার বা ইমারত নির্মাণ ব্যয় ব্যতীত
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৬৩
    ৩১. ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নিজেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে, আমি রোদ-বৃষ্টি থেকে আশ্রয়ের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করেছি কিন্তু মহান আল্লাহর সৃষ্টির কেউ আমাকে সহযোগিত করেনি
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৬২
    ৩২. আবুদল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর মেরামত করছিলাম তিনি বলেনঃ এটা কী? আমি বললাম, আমাদের কুঁড়েঘর সেটি আমরা মেরামত করছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তো দেখছি মৃত্যু তার চেয়েও দ্রুত এসে যাচ্ছে
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৬০
    ৩৩. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর গোলাকার ঘরের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এটা কী? তারা বলেন, এটা অমুকের তৈরী একটি গোলাকার ঘর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরূপ যে কোন সম্পদ কিয়ামতের দিন তার মালিকের জন্য বিপদের কারণ হবে এ কথা আনসারীর নিকট পৌঁছলে তিনি ঘরখানি ভেঙ্গে ফেলেন পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পথে যেতে ঘরটি না দেখতে পেয়ে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তাঁকে জানানো হলো, আপনার কথা তার কানে পৌঁছার পর সে তা ভেঙ্গে ফেলেছে তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৬১

    দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি

    ৩৪. সাহল ইবনে সাদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যা আমি করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালোবাসবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি অবলন্বন করো তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন মানুষের নিকট যা আছে, তুমি তার প্রতি অনাসক্ত হয়ে যাও, তাহলে তারাও তোমাকে ভালোবাসবে
    ইবনে মাজাহঃ ৪১০২

    রাসুলুল্লাহ (সঃ) এই উম্মতের দরিদ্রতার আশংকা না করে ধনাঢ্যতার আশংকা করেছেন

    ৩৫. বানু আমির ইবনু লুওয়াই এর চুক্তিবদ্ধ মিত্র ‘আমর ইবনু আওফ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বাদর যুদ্ধে শারীক হয়েছিলেন তিনি জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাযিঃ) কে বাহরাইনে জিযিয়া বা কর আদায় করতে পাঠিয়েছেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইনবাসীদের সাথে সন্ধি করেছিলেন এবং তাদের জন্য আলা ইবনু আল হাযরামী (রাযিঃ) কে শাসনকর্তা নিয়োজিত করেছিলেন এরপর আবু উবাইদাহ (রাযিঃ) বাহরাইন থেকে ধন-সম্পদ নিয়ে এলে, আনসার সহাবাগণ তাঁর আগমন সংবাদ শুনল, তারপর তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফাজরের সলাত আদায় করল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাত আদায়ন্তে মুখ ফিরিয়ে বসলে তারা তার কাছে উপস্থিত হলো
    রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, আমার মনে হচ্ছে আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু নিয়ে এসেছে, এ সংবাদ তোমরা শুনেছ? তারা বললেন, জী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন তাহলে তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করে যা তোমাদেরকে খুশী করবে আশা রাখো আল্লাহর শপথ! তোমাদের উপর দারিদ্র্য ও অভাব-অনটনের আশঙ্কা আমি করি না আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, যেমনভাবে তোমাদের উপর প্রাচুর্য ও ঐশ্বর্য ঢেলে দেয়া হবে, যেমনিভাবে পূর্ববতীদের উপরও প্রাচুর্য ও ঐশ্বর্য ঢেলে দেয়া হয়েছিল অতঃপর তোমরা তেমনিভাবে প্রতিযোগিতা করবে যেমন করে তারা প্রতিযোগিতা করেছে পরিশেষে তোমাদেরকেও ধ্বংস করে দিবে যেমনিভাবে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে
    মুসলিমঃ ৭৩১৫

    মুত্তাক্বী, আত্মনির্ভরশীল ও লোকালয় হতে নির্জনে বাসকারী বান্দাকে আল্লাহ তায়া'লা ভালোবাসেন

    ৩৬. আমির ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ওয়াক্কাস (রাযিঃ) একদা তার উটের পালের মাঝে উপবিষ্ট ছিলেন, এমতাবস্থায় তার পুত্র উমার এসে পৌছলেন সা’দ (রাযিঃ) তাকে দেখামাত্রই পাঠ করলেন, “আউযু বিল্লা-হি মিন্‌ শাররি হা-যার র-কিব" অর্থাৎ- আমি এ আরোহীর অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই তারপর সে তার আরোহী হতে নেমে বলল, আপনি লোকেদেরকে ছেড়ে দিয়ে উষ্ট্র এবং বকরীর মাঝে এসে বসে আছেন আর এদিকে কর্তৃত্ব নিয়ে লোকেরা পরস্পর একে অপরের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত এ কথা শুনে সা’দ (রাযিঃ) তার বুকে আঘাত করে বললেন, চুপ থাকে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুত্তাকী, আত্মনির্ভরশীল ও লোকালয় হতে নির্জনে বাসকারী বান্দাকে আল্লাহ তা’আলা ভালোবাসেন
    মুসলিমঃ ৭৩২২

    মানুষের মাঝে যারা অখ্যাত তাদের মর্যাদা

    ৩৭. সাহল ইবনে সাদ আল-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা এ লোকটি সম্পর্কে কী বলো? সাহাবীগণ বলেন, তার সম্পর্কে আপনার অভিমত হবে যথার্থ আমরা বলি, সে সুপারিশ করলে তা মঞ্জুর করা হয় সে কথা বললে তা শোনা হয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন ইত্যবসরে আরেক ব্যক্তি সেখান দিয়ে অতিক্রম করলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কী বলো? সাহাবীগণ বলেন, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা বলি যে, এ ব্যক্তি তো দীনহীন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত সে এতই যোগ্য যে, সে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়, সুপারিশ করলে তা মঞ্জুর করা হয় না এবং কথা বললে তার কথায় কেউ কর্ণপাত করে না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রথমোক্ত শ্রেণীর লোকের দ্বারা পৃথিবী ভরে গেলেও শেষোক্ত ব্যক্তি তাদের চেয়ে উত্তম
    ইবনে মাজাহঃ ৪১২০
    ৩৮. আবু আবদুর রহমান বলেন, একদিন তিন লোক আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) এর কাছে আসলেন তখন আমি তার কাছে বসা ছিলাম তারা এসে বলল, হে আবূ মুহাম্মাদ! আমাদের কোন কিছুই নেই, আমাদের পরিবারের ভরণ-পোষণের কোন ব্যবস্থা নেই, সওয়ারীও নেই, কোন আসবাবপত্রও নেই তারপর তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা যা চাও আমি তাই করব তোমরা যদি ইচ্ছা কর আমার কাছে চলে এসো আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যলিপিতে যা রেখেছেন আমি তোমাদেরকে তা প্রদান করব তোমরা চাইলে বাদশাহের নিকট আমি তোমাদের আলোচনা করব আর তোমাদের মনে চাইলে তোমরা সবর করো আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের দিন দরিদ্র মুহাজির ব্যক্তিগত বিত্তবানদের চেয়ে চল্লিশ বছর আগেই জান্নাতে পৌছে যাবে এ কথা শুনে তারা বললেন, আমরা ধৈর্য অবলম্বন করব, কারো কাছে কিছুই চাইব না
    মুসলিম ৭৩৫৩
    ৩৯. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দরিদ্র মুমিনগণ ধনীদের তুলনায় অর্ধ দিন আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর অর্ধ দিনের পরিমাণ হবে পাঁচ শত বছর
    ইবনে মাজাহঃ ৪১১২
    ৪০. আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মদীনার কোন দাসী নিজ প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাত ধরে তাঁকে নিজ ইচ্ছামত মদীনার কোন স্থানে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতেন না (তার সাথে যেতেন)
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৭৭

    দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার আর কাফিরের জন্য জান্নাত

    ৪১. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া মুমিনের জন্য কয়েদখান এবং কাফিরের জন্য জান্নাততুল্য
    মুসলিমঃ ৭৩০৭

    নিজের চেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করা

    ৪২. আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ যদি ধন ও সৃষ্টিগত (সুন্দরের) দিক থেকে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে সে যেন সাথে সাথে তার চেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে, যাদের উপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে
    মুসলিমঃ ৭৩১৮
    ৪৩. আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকেদের প্রতি দৃষ্টি দাও তবে তোমাদের চেয়ে উঁচু স্তরের লোকেদের দিকে লক্ষ্য করো না কেননা আল্লাহর নি’আমাতকে তুচ্ছ না ভাবার এটাই উত্তম পন্থা
    মুসলিমঃ ৭৩২০
    ৪৪. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পার্থিব ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে কম সমৃদ্ধশালী লোকেদের প্রতি দৃষ্টি দাও এবং তোমাদের চেয়ে অধিক সমৃদ্ধিশালী লোকেদের প্রতি তাকিও না তাহলে তোমাদেরকে দেয়া আল্লাহর নিয়ামত তোমাদের নিকট তুচ্ছ মনে হবে না
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৪২
    অল্পে তুষ্টি

    ৪৫. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! তুমি আল্লাহভীরু হয়ে যাও, তাহলে লোকেদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী হতে পারবে তুমি অল্পে তুষ্ট থাকো, তাহলে লোকেদের মধ্যে সর্বোত্তম কৃতজ্ঞ হতে পারবে তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ করো, অন্যদের জন্যও তাই পছন্দ করবে, তাহলে পূর্ণ মুমিন হতে পারবে তোমার প্রতিবেশীর প্রতি সদাচারী ও দয়াপরবশ হও, তাহলে মুসলিম হতে পারবে তোমার হাসি কমাও, কেননা অধিক হাসি অন্তরাত্মাকে ধ্বংস করে
    ইবনে মাজাহঃ ৪২১৭
    ৪৬. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পার্থিব সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেই ঐশ্বর্যশালী হওয়া যায় না মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৩৭
    ৪৭. আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজন মাফিক রিযিক দান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৩৮
    ৪৮. সালামা ইবনে উবায়দুল্লাহ ইবনে মিহসান আল-আনসারী (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সুস্থদেহে দিনাতিপাত করে, পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয় এবং তার নিকট যদি সারা দিনের খোরাকী থাকে, তাহলে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াই একত্র করা হলো
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৪১
    ৪৯. হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন অতঃপর বললেনঃ হে হাকীম! এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ব্যতীত) তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় হয় আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না যেন সে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না উপরের হাত নিচের হাত হতে উত্তম হাকীম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত (সওয়াল করে) আমি কাউকে সামান্যতমও ক্ষতিগ্রস্ত করবো না এরপর আবূ বকর (রাঃ) হাকীম (রাঃ)-কে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি তাঁর কাছ হতে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন অতঃপর ‘উমর (রাঃ) (তাঁর যুগে) তাঁকে কিছু দেয়ার জন্য ডাকলেন তিনি তাঁর কাছ হতেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন ‘উমার (রাঃ) বললেন, মুসলিমগণ! হাকীম (রহ.)-এর ব্যাপারে আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি আমি তাঁর এই গনীমত হতে তাঁর প্রাপ্য পেশ করেছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে (সত্য সত্যই) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পর হাকীম (রাঃ) মৃত্যু অবধি কারো নিকট কিছু চেয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করেননি
    বুখারীঃ ১৪৭২

    তাওয়াক্কুল ও ইয়াক্বীন রাখা

    ৫০. উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর উপর ভরসা করতে, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে পাখির মত রিযিক দান করতেন ভোরবেলা পাখিরা খালিপেটে (বাসা থেকে) বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যাবেলা উদর পূর্তি করে (বাসায়) ফিরে আসে
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৬৪

    পার্থিব চিন্তা পরিত্যাগ

    ৫১. আবান ইবনে উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) দুপুরের সময় মারওয়ানের নিকট থেকে বের হয়ে এলে আমি ভাবলাম, নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার জন্য এ সময় তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমাদের শ্রুত কতক হাদীস শোনার জন্য মারওয়ান আমাদের ডেকেছেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ পার্থিব চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসংগী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত, আল্লাহ তার সবকিছু সুষ্ঠু করে দিবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাযির হবে
    ইবনে মাজাহঃ ৪১০৫
    ৫২. আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হবে আখেরাত, তার পার্থিব চিন্তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার চিন্তায় মোহগ্রস্ত থাকে তার যে কোন উপত্যকায় বা প্রান্তরে ধ্বংস হয়ে যাওয়াতে আল্লাহর কোন পরোয়া নাই
    ইবনে মাজাহঃ ৪১০৬
    ৫৩. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহাপবিত্র আল্লাহ বলেনঃ হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করবো তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানী দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করবো না
    ইবনে মাজাহঃ ৪১০৭

    দুনিয়ায় যেমনিভাবে থাকা উচিত

    ৫৪. ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দেহ স্পর্শ করে বলেনঃ হে আবদুল্লাহ! দুনিয়াতে এমনভাবে বসবাস করো যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী মুসাফির তুমি নিজেকে কবরবাসীদের অন্তর্ভুক্ত মনে করো
    ইবনে মাজাহঃ ৪১১৪

    ৫৫. আবূ উমামা আল-হারিসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অনাড়ম্বর জীবন যাপনই ঈমান রাবী বলেন, ‘বাযাযাহ’-এর অর্থ কাশাফাহ অর্থাৎ বিলাস-বাসনা ত্যাগ করা, সাধামাটা জীবন নির্বাহ করা
    ইবনে মাজাহঃ ৪১১৮

    বিবিধ

    ৫৬. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সাথীরূপে তার সঙ্গে যায় অতঃপর দু'টি ফিরে আসে এবং একটি তার সঙ্গে থেকে যায় সঙ্গে গমন করে পরিবার-পরিজন, ধন সম্পদ এবং তার ‘আমাল তার জাতি গোষ্ঠী ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে আর কেবল তার ‘আমাল থেকে যায়
    মুসলিমঃ ৭৩১৪
    ৫৭. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চেহারা ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং তিনি তোমাদের কার্যকলাপ ও অন্তরের দিকে লক্ষ্য রাখেন
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৪৩
    ৫৮. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অধিক পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারী অর্থাৎ মৃত্যুকে স্মরণ করো
    ইবনে মাজাহঃ ৪২৫৮
    ৫৯. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অধিক হাসবে না কারণ অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৯৩
    ৬০. আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আমি দেখি যা তোমরা দেখো না এবং আমি শুনি যা তোমরা শোনো না আসমান চড়চড় করছে এবং চড়চড় করাই তার কর্তব্য তাতে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালি নাই, যেখানে একজন না একজন ফেরেশতা আল্লাহর জন্য সিজদায় তার কপাল লুটিয়ে দেননি আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি, তোমরা তা জানতে পারলে খুব কমই হাসতে, বরং অধিক কাঁদতে, বিছানায় স্ত্রীদের সম্ভোগ করতে না এবং চীৎকার করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে করতে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে আল্লাহর শপথ! আহা, আমি যদি একটি গাছ হতাম এবং তা কেটে ফেলা হতো
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৯০
    আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অধিক পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারী অর্থাৎ মৃত্যুকে স্মরণ করো
    ৬১.আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সংক্ষেপে শিখিয়ে দিন তিনি বলেনঃ যখন তুমি তোমার নামাযে দাঁড়াবে, তখন এমনভাবে নামায পড়ো, যেন এটাই তোমার শেষ নামায তুমি এমন কথা বলো না, যার জন্য তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে আর মানুষের হাতে যা আছে তা থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হও
    ইবনে মাজাহঃ ৪১৭১
    ৬২. আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করল যে, আমরা কি মুহাজির ফকীরদের দলভুক্ত নই? এ কথা শুনে আবদুল্লাহ তাকে বললেন, তোমার কি সহধর্মিণী নেই, যার কাছে তুমি গিয়ে থাকো? উত্তরে সে বলল, হ্যাঁ আছে অতঃপর তিনি বললেন, বসবাস করার জন্য তোমার কি আবাসস্থল নেই? সে বলল, হ্যাঁ আছে তখন তিনি বললেন, তবে তো তুমি ধনীদের পর্যায়ভুক্ত তারপর সে বলল, আমার একজন খাদিমও আছে এ কথা শুনে তিনি বললেন, তাহলে তো তুমি বাদশাহ
    মুসলিমঃ ৭৩৫২

  • #2
    দুনিয়াতে এমনিভাবে থাকতে হবে , যেমন কোন মুসাফির বা পথিক থাকে ।
    আল্লাহ আমাদের দ্বীনের জন্য কবুল করেন ।

    Comment


    • #3
      দুনিয়ার মহব্বাত সমস্ত গুনাহের মূল ।

      Comment


      • #4
        আল্লাহ মিডীয়ার ভাইদের কবুল করুন
        فَقَاتِلُوْۤا اَوْلِيَآءَ الشَّيْطٰنِ

        Comment

        Working...
        X