আত্মমর্যাদা সম্পন্ন আল্লাহ (সুব) সকল প্রকার অশ্লীলতা হারাম করেছেন
১. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মপ্রশংসা পছন্দকারী কেউ নেই। এজন্যই তিনি তার স্বীয় সত্তার প্রশংসা করেছেন। এমনিভাবে আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্ম-মর্যাদাবোধ সম্পন্নও কোন লোক নেই। এজন্যই তিনি সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। আল্লাহর চেয়ে বেশি পরিমাণে ওযর-আপত্তি গ্রহণকারীও আর কেউ নেই। এজন্যই তিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং রসূল পাঠিয়েছেন।
মুসলিমঃ ৬৮৮৭
২. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করেন এবং মুমিনগণও স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করে। আল্লাহর আত্মমর্যাদায় আঘাত আসে যখন মুমিন আল্লাহ কর্তৃক হারাম কর্মে অগ্রসর হয়।
মুসলিমঃ ৬৮৮৮
৩. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিনাকারী যিনায় লিপ্ত থাকাবস্থায় মুমিন থাকে না, চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না। তবে তওবা করার সুযোগ আছে।
তিরমিযিঃ ২৬২৫
আল্লাহর রহমতের ব্যপকতা এবং তা তার ক্রোধ অপেক্ষা অগ্রগামী
৪. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন আল্লাহ তা’আলা মাখলুক সৃষ্টি করলেন তখন তিনি তার কিতাবে লিপিবদ্ধ করলেন এবং তা তার নিকট আরশের উপরে রয়েছে। (তিনি লিখেছে) আমার গোস্বার উপর রহমাত বিজয়ী থাকবে।
মুসলিমঃ ৬৮৬২
৫. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর একশ’ ভাগ রহমাত আছে। তন্মধ্যে একভাগ রহমাত তিনি জিন, ইনসান, চতুষ্পদ জন্তু ও কীট-পতঙ্গের মধ্যে ভাগ করে
দিয়েছেন। এ এক ভাগ রহমাতের কারণেই সৃষ্ট জীব পরস্পর একে অপরের প্রতি দয়া করে এবং এ এক ভাগ রাহমাতের মাধ্যমে বন্য পশু নিজ সন্তানের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে। মহান আল্লাহ তার একশ’ ভাগ রহমাতের নিরানব্বই ভাগ রহমাত নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি কিয়ামাতের দিন স্বীয় বান্দাদের প্রতি দয়া করবেন।
মুসলিমঃ ৬৮৬৭
৬. উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় কয়েকজন বন্দী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসা হলো। বন্দীদের মধ্যে থেকে একজন নারী কেবলই অনুসন্ধানে রত ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশুকে পাওয়া মাত্র তাকে কোলে নিয়ে পেটের সাথে জড়িয়ে ধরে তাকে দুগ্ধ পান করাত। এ দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রশ্ন করলেন, এ মহিলাটি কি তার সন্তানদেরকে আগুনে ফেলতে রাজি হবে? আমরা বললাম, না। আল্লাহর শপথ! সে কোন সময় তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারবে না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সন্তানের উপর এ মহিলাটির দয়া হতেও আল্লাহ বেশি দয়ালু।
মুসলিমঃ ৬৮৭১
৭.আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে যে কি পরিমাণ শাস্তি রয়েছে, ঈমানদারগণ যদি তা জানত তবে কেউ তার কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করত না। এমনিভাবে আল্লাহর কাছে যে পরিমাণ দয়া আছে, অবিশ্বাসীরা যদি তা জানত তবে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না।
মুসলিমঃ ৬৮৭২
৮. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় রব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনৈক বান্দা পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মার্জনা করে দাও। তারপর আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে ধরেন। এ কথা বলার পর সে আবার পাপ করল এবং বলল, হে আমার রব! আমার পাপ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার এক বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের
কারণে শাস্তি দিতে পারেন। তারপর সে পুনরায় পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মাফ করে দাও। এ কথা শুনে আল্লাহ তা’আলা পুনরায় বলেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রভু আছে, যিনি বান্দার পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমাল করো। আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি। বর্ণনাকারী আবদুল আ’লা বলেন, "এখন যা ইচ্ছা তুমি আমাল করো" কথাটি আল্লাহ তা’আলা তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের পর বলেছেন, তা আমি জানি না।
মুসলিমঃ ৬৮৭৯
৯. আবূ মূসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতে আল্লাহ তা’আলা তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ করে এমনিভাবে দিনে তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।
মুসলিমঃ ৬৮৮২
(গুনাহের নিয়তে গুনাহ নেই করলে ১ টি গুনাহ, সওয়াবের নিয়ত করলেই কাজটি করার ১টি সওয়াব রয়েছে করলে ১০-৭০ গুন সওয়াব)
(কেউ নিজ আমল দ্বারা জান্নাতে যেতে পারবে না.. আল্লার রাসূল(সও না)
আল্লাহ তা'য়ালা এমন সম্প্রদায় পছন্দ করেন যারা গুনাহ করে ক্ষমা চায়
১০. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সত্তার হাতে আমার জীবন, আমি তার কসম করে বলছি, তোমরা যদি পাপ না করতে তবে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে এমন সম্প্রদায় বানাতেন যারা পাপ করে ক্ষমা চাইতো এবং তিনি তাদের মাফ করে দিতেন।
মুসলিমঃ ৬৮৫৮
অনুতপ্ত হওয়াই তওবা
১১.ইবনে মা‘কিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সাথে আব্দুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি তাকে বলতে শুনলাম,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’। আমার পিতা তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি নিজে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’? তিনি বলেন, হাঁ।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৫২
বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তা'য়ালা আনন্দিত হন
১২. হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সানাদে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ রববুল আলামীন ইরশাদ করেছেনঃ আমার উপর বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে আছি। সে যেখানেই আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে আছি। আল্লাহর কসম, যে লোক ছায়াপানিহীন আশঙ্কাপূর্ণ বিজন মাঠে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার সাথে থাকে খাদ্য পানীয় সহ একটি সওয়ারী। এরপর ঘুম হতে সজাগ হয়ে দেখে যে, সওয়ার কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর সে সেটি খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল এবং বলে, আমি আমার পূর্বের জায়গায় গিয়ে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যাব। (এ কথা বলে) সে মৃত্যুর জন্য বাহুতে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে সে দেখল, পানাহার সামগ্রী বহনকারী সওয়ারীটি তার কাছে, অমনিই সে, তার লাগাম ধরে ফেলে। এরপর সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে ভুল করে ফেলেছে।(মুসলিমঃ৬৮৫৩) (সওয়ারী এবং পানাহার সামগ্ৰী পেয়ে) লোকটি যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, মু’মিন বান্দার তাওবার কারণে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। (মুসলিমঃ৬৮৪৮)যদি কেউ একবিঘত সমান আমার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। যদি কেউ একহাত সমান আমার প্রতি অগ্রসর হয়, তাহলে আমি একগজ সমান তার প্রতি অগ্রসর হই। যদি কেউ আমার দিকে পায়ে হেঁটে আসে তবে আমি তার দিকে দৌড়ে আসি।
মুসলিমঃ ৬৮৪৫
আল্লাহই বান্দার পাপসমূহ মোচন করে থাকেন এবং তওবা কবুল করে থাকেন
এবং যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। আল্লাহ
ছাড়া পাপ ক্ষমা করবে কে? আর তারা জেনেশুনে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জিদ ধরে থাকে না।
তাদের প্রতিদান হল তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা আর এমনসব জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল বাস করবে। সৎকর্মশীলদের এই প্রতিদান কত উত্তম! (আলে ইমরানঃ ১৩৫-১৩৬)
১৩. আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রাচুর্যময় মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি যাদের ক্ষমা করেছি তারা ব্যতীত তোমাদের সকলেই গুনাহগার। অতএব তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করবো। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জানে যে, আমি ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখি, অতঃপর সে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আমি তাকে ক্ষমা করে দেই। আমি যাদের হেদায়াত করেছি তারা ব্যতীত তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। অতএব তোমরা আমার নিকট সৎপথ প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের সৎপথ প্রদর্শন করবো। আমি যাদের ধনবান করেছি তারা ব্যতীত তোমরা সকলেই দরিদ্র। তোমরা আমার নিকট প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের রিযিক দান করবো। তোমাদের জীবিত, মৃত, আগের ও পরের, সিক্ত ও শুষ্ক (সচ্ছল-অসচ্ছল) নির্বিশেষে সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক তাক্বওয়ার অধিকারী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে না।
পক্ষান্তরে তারা সকলে যদি একত্রে আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক পাপী বান্দার মত হয়ে যায়, তবুও তাতে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের সৌন্দর্যহানি ঘটবে না। তোমাদের জীবিত, মৃত, আগের ও পরের, সিক্ত ও শুষ্ক সকলে যদি একত্র হয়ে প্রত্যেকে তার পূর্ণ চাহিদামত আমার নিকট প্রার্থনা করে এবং আমি তাদের চাহিদামত সবকিছু দান করি, তবুও আমার রাজত্বের কিছুই কমবে না, তবে এতটুকু পরিমাণ যে, তোমাদের কেউ সমুদ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকালে তাতে একটি সুঁই ডুবিয়ে তা তুলে নিলে তাতে সমুদ্রের পানি যতটুকু হ্রাস পাবে। কারণ আমি হলাম দাতা, দয়ালু ও মহান। আমি যা চাই তাই করি। আমার দান হলো আমার কথা (এবং আমার আযাব হলো আমার নির্দেশ)। আমার ব্যাপার এই যে, আমি যখন কিছু ইচ্ছা করি তখন বলি, ‘‘হয়ে যাও’’, অমনি তা হয়ে যায়।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৫৭
১৪. সাফওয়ান ইবনু মুহরিয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক ইবনু উমর (রাযিঃ) কে প্রশ্ন করলেন, নাজওয়া (আল্লাহ ও বান্দার গোপন কথা) সম্পর্কে আপনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিভাবে শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিনে মুমিন ব্যক্তিকে তার প্রভুর নিকটবর্তী করা হবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা তার উপর পর্দা ঢেলে দিবেন এবং তার পাপের ব্যাপারে তার থেকে জবানবন্দি নিবেন। তিনি প্রশ্ন করবেন, তুমি তোমার পাপ সম্বন্ধে জান কি? সে বলবে, হে রব! আমি জানি। এরপর তিনি বলবেন, তোমার এ পাপ দুনিয়ায় আমি লুক্কায়িত রেখেছিলাম। আজ তোমার এ পাপগুলোকে আমি মাফ করে দিলাম।
মুসলিমঃ৬৯০৮
১৫. আবু বুরদাহ (রহঃ) এর সূত্রে তার পিতা হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিছু মুসলিম পাহাড়সম পাপ নিয়ে কিয়ামাতের মাঠে আসবে এবং আল্লাহ তা’আলা তাদের পাপ মার্জন করে দিবেন। আর তা ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের উপর রেখে দিবেন।
মুসলিমঃ৬৯০৭
১৬. ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা বান্দার তওবা কবুল করেন।
তিরমিযিঃ ৩৫৩৭
১৭. যাইদ (রাযিঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ যে লোক বলে, “মহান আল্লাহ তা'আলার নিকট আমি ক্ষমা চাই যিনি ছাড়া কোন মা'বূদ নেই, যিনি চিরজীবি, চিরস্থায়ী এবং আমি তার কাছে তওবা করি”, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র হতে পলায়ন করে থাকে।
তিরমিযিঃ ৩৫৭৭
১৮. আবূ শায়বাহ-এর দু' পুত্র উসমান ও আবূ বাকর এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ আল খুদরী ও আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা অবকাশ দেন বা দেরী করেন না। এভাবে যখন রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম হয়ে যায় তখন তিনি দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেনঃ কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি (যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব)? কোন তাওবাহকারী আছে কি (যে তাওবাহ করবে আর আমি তার তাওবাহ কবুল করব)? কোন প্রার্থনাকারী আছে কি (যে প্রার্থনা করবে আর আমি তার প্রার্থনা কুবুল করব)? কোন আহবানকারী আছে কি (আমি যার আহবানে দিব)? এভাবে ফাজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন।
মুসলিমঃ ১৬৬২
আল্লাহ তা'য়ালা তওবাকারীর পাপসমূহ পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করেন
সেই সব লোকেরা ব্যতীত যারা তওবা করে, বিশ্বাস রাখে এবং সৎকাজ করে; আল্লাহ এমন লোকদের পাপসমূহ পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সূরা ফুরক্বানঃ ৭০
তওবাকারীর মর্যাদা
১৯. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীগণ উত্তম।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৫১
২০. আবূ উবায়দা ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৫০
২১. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা যদি পাপাচার করতে, এমনকি তোমাদের পাপ আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যেতো, অতঃপর তোমরা তওবা করতে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের তওবা কবুল করতেন।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৪৮
তওবা অন্তরের মরিচা দূর করে
২২. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা'আলা যার বর্ণনা করেছেনঃ “কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে”— (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)।
তিরমিযিঃ ৩৩৩৪
সৎকর্ম গুনাহ সমূহ দূর করে দেয়
২৩.জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই আল্লাহ্র নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।
ইবনে মাজাহঃ ১০৮১
২৪. আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! মাদীনার এক প্রান্তে এক মহিলাকে কাবু করার জন্যে চেষ্টা তদবীর করেছি। সহবাস ব্যতিরেকে তার সাথে আমি একান্তে মিলিত হয়েছি। আমিই সে, লোক। আপনি আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছা সিদ্ধান্ত দিন। তখন উমর (রাযিঃ) তাকে বললেন, আল্লাহ তো তোমার অন্যায়কে লুক্কায়িত রেখেছেন। তুমিও যদি তোমার স্বীয় বিষয়টি গোপন রাখতে। রাবী বলেন, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আর কোন জবাব দেননি। এরপর লোকটি উঠে যেতে লাগল। এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে তার পিছনে পাঠালেন। যেন সে তাকে ডেকে আনে। অতঃপর তিনি তার সামনে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ “সলাত প্রতিষ্ঠা করবে দিনের দু’ প্রান্তে এবং
রাতের কিয়দংশে। অবশ্যই নেককর্ম অসৎকর্মকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ হলো তাদের জন্য এক উপদেশ।”(সূরা হুদ ১১ঃ ১১৪)। তখন লোকেদের মধ্য হতে জনৈক লোক বলল, হে আল্লাহর নাবী! এ বিধান কি তার জন্য নির্দিষ্ট? জবাবে তিনি বললেন, না; বরং সকল মানুষের জন্যই এ বিধান কার্যকর।
মুসলিমঃ ৬৮৯৭
রসুলুল্লাহ (সঃ) এর তওবা
২৫.ইবনু উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, প্রতিটি মাজলিসে হিসাব করে দেখা গেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মাজলিস হতে উঠে যাওয়ার আগে এক শতবার বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার তাওবা গ্রহণ কর। কারণ তুমিই তওবা কবুলকারী, ক্ষমাকারী”।
তিরমিযিঃ ৩৪৩৪
তওবা সংক্রান্ত কতিপয় ঘটনা
২৬. আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের আগেকার লোকেদের মধ্যে এক লোক ছিল। সে নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছে। তারপর জিজ্ঞেস করল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান লোক কে? তাকে এক আলিম দেখিয়ে দেয়া হয়। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে নিরাব্বই লোককে হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় তার জন্য কি তাওবাহ আছে? আলিম বলল, না। তখন সে আলিমকেও হত্যা করে ফেলল। সুতরাং সে আলিমকে হত্যা করে একশ’ সম্পূর্ণ করল। অতঃপর সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তখন তাকে জনৈক ‘আলিম লোকের সন্ধান দেয়া হলো। সে ‘আলিমকে বলল যে, সে একশ’ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তাওবাহ্ আছে? আলিম লোক বললেন, হ্যাঁ। এমন কে আছে যে ব্যক্তি তার মাঝে ও তার তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদাতে নিমগ্ন আছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত হও। নিজের ভূমিতে আর কক্ষনো প্রত্যাবর্তন করো না। কেননা এ দেশটি ভয়ঙ্কর খারাপ। তারপর সে চলতে লাগল। এমনকি যখন সে মাঝপথে পৌছে তখন তার মৃত্যু আসলো। এবার রহমাতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতার মধ্যে তার ব্যাপারে বাক-বিতণ্ডা দেখা গেল।
রহমাতের ফেরেশতারা বললেন, সে আন্তরিকভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাওবার উদ্দেশে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশতারা বললেন, সে তো কক্ষনো কোন সৎ কাজ করেনি। এমতাবস্থায় মানুষের আকৃতিতে এক ফেরেশতা আসলেন। তারা তাকে তাদের মাঝে মধ্যস্থতা বানালেন। তিনি উভয়কে বললেন, তোমরা উভয় স্থান পরিমাপ কর (নিজ ভূখণ্ড ও যাত্রাকৃত ভূখণ্ড)। এ দুটি ভূখণ্ডের মধ্যে যা সন্নিকটবর্তী হবে সে অনুযায়ী তার ফায়সালা হবে।কাতাদাহ (রহঃ) এ সানাদে মুআয ইবনু মুআয এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (তখন আল্লাহ এ ভূমির প্রতি আদেশ করলেন যেন তা দূরবর্তী হয়ে যায় এবং ঐ ভূমির প্রতি আদেশ করলেন যেন তা নিকটবর্তী হয়ে যায়। মুসলিমঃ ৬৯০৩)। তারপর উভয়ে পরিমাপ করে দেখলেন যে, সে ঐ ভূখণ্ডেরই বেশি নিকটবর্তী যেখানে পৌছার জন্যে সংকল্প করেছে। অতঃপর রহমাতের ফেরেশতা তার রূহ কবয করে নিলেন।
মুসলিমঃ ৬৯০১
২৭. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক লোক যে জীবনে কক্ষনো কোন প্রকার সাওয়াবের কাজ করেনি, যখন সে মারা যাবে তার পরিবার পরিজনকে ডেকে বলল, মৃত্যুর পর তোমরা তাকে পুড়ে ফেলবে সেটার অর্ধেক স্থলভাগে বাতাসে উড়িয়ে দিবে এবং অর্ধেক পানিতে নিক্ষেপ করবে। কারণ আল্লাহর কসম! আমাকে যদি আল্লাহ পুনঃ একত্রিত করতে পারেন তাহলে তিনি আমাকে অবশ্যই এমন আযাব দিবেন, যা পৃথিবীর অন্য কাউকে কখনো দেননি। তারপর লোকটি যখন ইন্তিকাল করল তখন তার পরিবারের লোকেরা তার নির্দেশ অনুযায়ী তদ্রুপ করল। তখন আল্লাহ তা’আলা স্থলভাগকে আদেশ দিলে সে তার মধ্যস্থিত যা কিছু আছে (ছাই) একত্রিত করলো। এরপর পানিতে মিশ্রিত ভাগকে নির্দেশ দিলেন। সেও তার মধ্যস্থিত সব কিছু একত্রিত করে দিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি এমনটি কেন করলে? সে বলল, হে আমার রব! আপনার ভয়ে। আপনি তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তা’আলা সদয় হয়ে তাকে মাফ করে দিলেন।
মুসলিমঃ ৬৮৭৩
১. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মপ্রশংসা পছন্দকারী কেউ নেই। এজন্যই তিনি তার স্বীয় সত্তার প্রশংসা করেছেন। এমনিভাবে আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্ম-মর্যাদাবোধ সম্পন্নও কোন লোক নেই। এজন্যই তিনি সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। আল্লাহর চেয়ে বেশি পরিমাণে ওযর-আপত্তি গ্রহণকারীও আর কেউ নেই। এজন্যই তিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং রসূল পাঠিয়েছেন।
মুসলিমঃ ৬৮৮৭
২. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করেন এবং মুমিনগণও স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করে। আল্লাহর আত্মমর্যাদায় আঘাত আসে যখন মুমিন আল্লাহ কর্তৃক হারাম কর্মে অগ্রসর হয়।
মুসলিমঃ ৬৮৮৮
৩. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিনাকারী যিনায় লিপ্ত থাকাবস্থায় মুমিন থাকে না, চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না। তবে তওবা করার সুযোগ আছে।
তিরমিযিঃ ২৬২৫
আল্লাহর রহমতের ব্যপকতা এবং তা তার ক্রোধ অপেক্ষা অগ্রগামী
৪. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন আল্লাহ তা’আলা মাখলুক সৃষ্টি করলেন তখন তিনি তার কিতাবে লিপিবদ্ধ করলেন এবং তা তার নিকট আরশের উপরে রয়েছে। (তিনি লিখেছে) আমার গোস্বার উপর রহমাত বিজয়ী থাকবে।
মুসলিমঃ ৬৮৬২
৫. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর একশ’ ভাগ রহমাত আছে। তন্মধ্যে একভাগ রহমাত তিনি জিন, ইনসান, চতুষ্পদ জন্তু ও কীট-পতঙ্গের মধ্যে ভাগ করে
দিয়েছেন। এ এক ভাগ রহমাতের কারণেই সৃষ্ট জীব পরস্পর একে অপরের প্রতি দয়া করে এবং এ এক ভাগ রাহমাতের মাধ্যমে বন্য পশু নিজ সন্তানের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে। মহান আল্লাহ তার একশ’ ভাগ রহমাতের নিরানব্বই ভাগ রহমাত নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি কিয়ামাতের দিন স্বীয় বান্দাদের প্রতি দয়া করবেন।
মুসলিমঃ ৬৮৬৭
৬. উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় কয়েকজন বন্দী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসা হলো। বন্দীদের মধ্যে থেকে একজন নারী কেবলই অনুসন্ধানে রত ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশুকে পাওয়া মাত্র তাকে কোলে নিয়ে পেটের সাথে জড়িয়ে ধরে তাকে দুগ্ধ পান করাত। এ দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রশ্ন করলেন, এ মহিলাটি কি তার সন্তানদেরকে আগুনে ফেলতে রাজি হবে? আমরা বললাম, না। আল্লাহর শপথ! সে কোন সময় তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারবে না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সন্তানের উপর এ মহিলাটির দয়া হতেও আল্লাহ বেশি দয়ালু।
মুসলিমঃ ৬৮৭১
৭.আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে যে কি পরিমাণ শাস্তি রয়েছে, ঈমানদারগণ যদি তা জানত তবে কেউ তার কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করত না। এমনিভাবে আল্লাহর কাছে যে পরিমাণ দয়া আছে, অবিশ্বাসীরা যদি তা জানত তবে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না।
মুসলিমঃ ৬৮৭২
৮. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় রব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনৈক বান্দা পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মার্জনা করে দাও। তারপর আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে ধরেন। এ কথা বলার পর সে আবার পাপ করল এবং বলল, হে আমার রব! আমার পাপ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার এক বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের
কারণে শাস্তি দিতে পারেন। তারপর সে পুনরায় পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মাফ করে দাও। এ কথা শুনে আল্লাহ তা’আলা পুনরায় বলেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রভু আছে, যিনি বান্দার পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমাল করো। আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি। বর্ণনাকারী আবদুল আ’লা বলেন, "এখন যা ইচ্ছা তুমি আমাল করো" কথাটি আল্লাহ তা’আলা তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের পর বলেছেন, তা আমি জানি না।
মুসলিমঃ ৬৮৭৯
৯. আবূ মূসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতে আল্লাহ তা’আলা তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ করে এমনিভাবে দিনে তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।
মুসলিমঃ ৬৮৮২
(গুনাহের নিয়তে গুনাহ নেই করলে ১ টি গুনাহ, সওয়াবের নিয়ত করলেই কাজটি করার ১টি সওয়াব রয়েছে করলে ১০-৭০ গুন সওয়াব)
(কেউ নিজ আমল দ্বারা জান্নাতে যেতে পারবে না.. আল্লার রাসূল(সও না)
আল্লাহ তা'য়ালা এমন সম্প্রদায় পছন্দ করেন যারা গুনাহ করে ক্ষমা চায়
১০. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সত্তার হাতে আমার জীবন, আমি তার কসম করে বলছি, তোমরা যদি পাপ না করতে তবে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে এমন সম্প্রদায় বানাতেন যারা পাপ করে ক্ষমা চাইতো এবং তিনি তাদের মাফ করে দিতেন।
মুসলিমঃ ৬৮৫৮
অনুতপ্ত হওয়াই তওবা
১১.ইবনে মা‘কিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সাথে আব্দুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি তাকে বলতে শুনলাম,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’। আমার পিতা তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি নিজে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’? তিনি বলেন, হাঁ।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৫২
বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তা'য়ালা আনন্দিত হন
১২. হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সানাদে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ রববুল আলামীন ইরশাদ করেছেনঃ আমার উপর বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে আছি। সে যেখানেই আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে আছি। আল্লাহর কসম, যে লোক ছায়াপানিহীন আশঙ্কাপূর্ণ বিজন মাঠে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার সাথে থাকে খাদ্য পানীয় সহ একটি সওয়ারী। এরপর ঘুম হতে সজাগ হয়ে দেখে যে, সওয়ার কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর সে সেটি খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল এবং বলে, আমি আমার পূর্বের জায়গায় গিয়ে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যাব। (এ কথা বলে) সে মৃত্যুর জন্য বাহুতে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে সে দেখল, পানাহার সামগ্রী বহনকারী সওয়ারীটি তার কাছে, অমনিই সে, তার লাগাম ধরে ফেলে। এরপর সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে ভুল করে ফেলেছে।(মুসলিমঃ৬৮৫৩) (সওয়ারী এবং পানাহার সামগ্ৰী পেয়ে) লোকটি যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, মু’মিন বান্দার তাওবার কারণে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। (মুসলিমঃ৬৮৪৮)যদি কেউ একবিঘত সমান আমার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। যদি কেউ একহাত সমান আমার প্রতি অগ্রসর হয়, তাহলে আমি একগজ সমান তার প্রতি অগ্রসর হই। যদি কেউ আমার দিকে পায়ে হেঁটে আসে তবে আমি তার দিকে দৌড়ে আসি।
মুসলিমঃ ৬৮৪৫
আল্লাহই বান্দার পাপসমূহ মোচন করে থাকেন এবং তওবা কবুল করে থাকেন
এবং যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। আল্লাহ
ছাড়া পাপ ক্ষমা করবে কে? আর তারা জেনেশুনে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জিদ ধরে থাকে না।
তাদের প্রতিদান হল তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা আর এমনসব জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল বাস করবে। সৎকর্মশীলদের এই প্রতিদান কত উত্তম! (আলে ইমরানঃ ১৩৫-১৩৬)
১৩. আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রাচুর্যময় মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি যাদের ক্ষমা করেছি তারা ব্যতীত তোমাদের সকলেই গুনাহগার। অতএব তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করবো। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জানে যে, আমি ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখি, অতঃপর সে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আমি তাকে ক্ষমা করে দেই। আমি যাদের হেদায়াত করেছি তারা ব্যতীত তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। অতএব তোমরা আমার নিকট সৎপথ প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের সৎপথ প্রদর্শন করবো। আমি যাদের ধনবান করেছি তারা ব্যতীত তোমরা সকলেই দরিদ্র। তোমরা আমার নিকট প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের রিযিক দান করবো। তোমাদের জীবিত, মৃত, আগের ও পরের, সিক্ত ও শুষ্ক (সচ্ছল-অসচ্ছল) নির্বিশেষে সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক তাক্বওয়ার অধিকারী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে না।
পক্ষান্তরে তারা সকলে যদি একত্রে আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক পাপী বান্দার মত হয়ে যায়, তবুও তাতে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের সৌন্দর্যহানি ঘটবে না। তোমাদের জীবিত, মৃত, আগের ও পরের, সিক্ত ও শুষ্ক সকলে যদি একত্র হয়ে প্রত্যেকে তার পূর্ণ চাহিদামত আমার নিকট প্রার্থনা করে এবং আমি তাদের চাহিদামত সবকিছু দান করি, তবুও আমার রাজত্বের কিছুই কমবে না, তবে এতটুকু পরিমাণ যে, তোমাদের কেউ সমুদ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকালে তাতে একটি সুঁই ডুবিয়ে তা তুলে নিলে তাতে সমুদ্রের পানি যতটুকু হ্রাস পাবে। কারণ আমি হলাম দাতা, দয়ালু ও মহান। আমি যা চাই তাই করি। আমার দান হলো আমার কথা (এবং আমার আযাব হলো আমার নির্দেশ)। আমার ব্যাপার এই যে, আমি যখন কিছু ইচ্ছা করি তখন বলি, ‘‘হয়ে যাও’’, অমনি তা হয়ে যায়।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৫৭
১৪. সাফওয়ান ইবনু মুহরিয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক ইবনু উমর (রাযিঃ) কে প্রশ্ন করলেন, নাজওয়া (আল্লাহ ও বান্দার গোপন কথা) সম্পর্কে আপনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিভাবে শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিনে মুমিন ব্যক্তিকে তার প্রভুর নিকটবর্তী করা হবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা তার উপর পর্দা ঢেলে দিবেন এবং তার পাপের ব্যাপারে তার থেকে জবানবন্দি নিবেন। তিনি প্রশ্ন করবেন, তুমি তোমার পাপ সম্বন্ধে জান কি? সে বলবে, হে রব! আমি জানি। এরপর তিনি বলবেন, তোমার এ পাপ দুনিয়ায় আমি লুক্কায়িত রেখেছিলাম। আজ তোমার এ পাপগুলোকে আমি মাফ করে দিলাম।
মুসলিমঃ৬৯০৮
১৫. আবু বুরদাহ (রহঃ) এর সূত্রে তার পিতা হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিছু মুসলিম পাহাড়সম পাপ নিয়ে কিয়ামাতের মাঠে আসবে এবং আল্লাহ তা’আলা তাদের পাপ মার্জন করে দিবেন। আর তা ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের উপর রেখে দিবেন।
মুসলিমঃ৬৯০৭
১৬. ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা বান্দার তওবা কবুল করেন।
তিরমিযিঃ ৩৫৩৭
১৭. যাইদ (রাযিঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ যে লোক বলে, “মহান আল্লাহ তা'আলার নিকট আমি ক্ষমা চাই যিনি ছাড়া কোন মা'বূদ নেই, যিনি চিরজীবি, চিরস্থায়ী এবং আমি তার কাছে তওবা করি”, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র হতে পলায়ন করে থাকে।
তিরমিযিঃ ৩৫৭৭
১৮. আবূ শায়বাহ-এর দু' পুত্র উসমান ও আবূ বাকর এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ আল খুদরী ও আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা অবকাশ দেন বা দেরী করেন না। এভাবে যখন রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম হয়ে যায় তখন তিনি দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেনঃ কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি (যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব)? কোন তাওবাহকারী আছে কি (যে তাওবাহ করবে আর আমি তার তাওবাহ কবুল করব)? কোন প্রার্থনাকারী আছে কি (যে প্রার্থনা করবে আর আমি তার প্রার্থনা কুবুল করব)? কোন আহবানকারী আছে কি (আমি যার আহবানে দিব)? এভাবে ফাজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন।
মুসলিমঃ ১৬৬২
আল্লাহ তা'য়ালা তওবাকারীর পাপসমূহ পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করেন
সেই সব লোকেরা ব্যতীত যারা তওবা করে, বিশ্বাস রাখে এবং সৎকাজ করে; আল্লাহ এমন লোকদের পাপসমূহ পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সূরা ফুরক্বানঃ ৭০
তওবাকারীর মর্যাদা
১৯. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীগণ উত্তম।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৫১
২০. আবূ উবায়দা ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৫০
২১. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা যদি পাপাচার করতে, এমনকি তোমাদের পাপ আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যেতো, অতঃপর তোমরা তওবা করতে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের তওবা কবুল করতেন।
ইবনে মাজাহঃ ৪২৪৮
তওবা অন্তরের মরিচা দূর করে
২২. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা'আলা যার বর্ণনা করেছেনঃ “কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে”— (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)।
তিরমিযিঃ ৩৩৩৪
সৎকর্ম গুনাহ সমূহ দূর করে দেয়
২৩.জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই আল্লাহ্র নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।
ইবনে মাজাহঃ ১০৮১
২৪. আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! মাদীনার এক প্রান্তে এক মহিলাকে কাবু করার জন্যে চেষ্টা তদবীর করেছি। সহবাস ব্যতিরেকে তার সাথে আমি একান্তে মিলিত হয়েছি। আমিই সে, লোক। আপনি আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছা সিদ্ধান্ত দিন। তখন উমর (রাযিঃ) তাকে বললেন, আল্লাহ তো তোমার অন্যায়কে লুক্কায়িত রেখেছেন। তুমিও যদি তোমার স্বীয় বিষয়টি গোপন রাখতে। রাবী বলেন, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আর কোন জবাব দেননি। এরপর লোকটি উঠে যেতে লাগল। এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে তার পিছনে পাঠালেন। যেন সে তাকে ডেকে আনে। অতঃপর তিনি তার সামনে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ “সলাত প্রতিষ্ঠা করবে দিনের দু’ প্রান্তে এবং
রাতের কিয়দংশে। অবশ্যই নেককর্ম অসৎকর্মকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ হলো তাদের জন্য এক উপদেশ।”(সূরা হুদ ১১ঃ ১১৪)। তখন লোকেদের মধ্য হতে জনৈক লোক বলল, হে আল্লাহর নাবী! এ বিধান কি তার জন্য নির্দিষ্ট? জবাবে তিনি বললেন, না; বরং সকল মানুষের জন্যই এ বিধান কার্যকর।
মুসলিমঃ ৬৮৯৭
রসুলুল্লাহ (সঃ) এর তওবা
২৫.ইবনু উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, প্রতিটি মাজলিসে হিসাব করে দেখা গেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মাজলিস হতে উঠে যাওয়ার আগে এক শতবার বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার তাওবা গ্রহণ কর। কারণ তুমিই তওবা কবুলকারী, ক্ষমাকারী”।
তিরমিযিঃ ৩৪৩৪
তওবা সংক্রান্ত কতিপয় ঘটনা
২৬. আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের আগেকার লোকেদের মধ্যে এক লোক ছিল। সে নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছে। তারপর জিজ্ঞেস করল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান লোক কে? তাকে এক আলিম দেখিয়ে দেয়া হয়। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে নিরাব্বই লোককে হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় তার জন্য কি তাওবাহ আছে? আলিম বলল, না। তখন সে আলিমকেও হত্যা করে ফেলল। সুতরাং সে আলিমকে হত্যা করে একশ’ সম্পূর্ণ করল। অতঃপর সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তখন তাকে জনৈক ‘আলিম লোকের সন্ধান দেয়া হলো। সে ‘আলিমকে বলল যে, সে একশ’ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তাওবাহ্ আছে? আলিম লোক বললেন, হ্যাঁ। এমন কে আছে যে ব্যক্তি তার মাঝে ও তার তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদাতে নিমগ্ন আছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত হও। নিজের ভূমিতে আর কক্ষনো প্রত্যাবর্তন করো না। কেননা এ দেশটি ভয়ঙ্কর খারাপ। তারপর সে চলতে লাগল। এমনকি যখন সে মাঝপথে পৌছে তখন তার মৃত্যু আসলো। এবার রহমাতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতার মধ্যে তার ব্যাপারে বাক-বিতণ্ডা দেখা গেল।
রহমাতের ফেরেশতারা বললেন, সে আন্তরিকভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাওবার উদ্দেশে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশতারা বললেন, সে তো কক্ষনো কোন সৎ কাজ করেনি। এমতাবস্থায় মানুষের আকৃতিতে এক ফেরেশতা আসলেন। তারা তাকে তাদের মাঝে মধ্যস্থতা বানালেন। তিনি উভয়কে বললেন, তোমরা উভয় স্থান পরিমাপ কর (নিজ ভূখণ্ড ও যাত্রাকৃত ভূখণ্ড)। এ দুটি ভূখণ্ডের মধ্যে যা সন্নিকটবর্তী হবে সে অনুযায়ী তার ফায়সালা হবে।কাতাদাহ (রহঃ) এ সানাদে মুআয ইবনু মুআয এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (তখন আল্লাহ এ ভূমির প্রতি আদেশ করলেন যেন তা দূরবর্তী হয়ে যায় এবং ঐ ভূমির প্রতি আদেশ করলেন যেন তা নিকটবর্তী হয়ে যায়। মুসলিমঃ ৬৯০৩)। তারপর উভয়ে পরিমাপ করে দেখলেন যে, সে ঐ ভূখণ্ডেরই বেশি নিকটবর্তী যেখানে পৌছার জন্যে সংকল্প করেছে। অতঃপর রহমাতের ফেরেশতা তার রূহ কবয করে নিলেন।
মুসলিমঃ ৬৯০১
২৭. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক লোক যে জীবনে কক্ষনো কোন প্রকার সাওয়াবের কাজ করেনি, যখন সে মারা যাবে তার পরিবার পরিজনকে ডেকে বলল, মৃত্যুর পর তোমরা তাকে পুড়ে ফেলবে সেটার অর্ধেক স্থলভাগে বাতাসে উড়িয়ে দিবে এবং অর্ধেক পানিতে নিক্ষেপ করবে। কারণ আল্লাহর কসম! আমাকে যদি আল্লাহ পুনঃ একত্রিত করতে পারেন তাহলে তিনি আমাকে অবশ্যই এমন আযাব দিবেন, যা পৃথিবীর অন্য কাউকে কখনো দেননি। তারপর লোকটি যখন ইন্তিকাল করল তখন তার পরিবারের লোকেরা তার নির্দেশ অনুযায়ী তদ্রুপ করল। তখন আল্লাহ তা’আলা স্থলভাগকে আদেশ দিলে সে তার মধ্যস্থিত যা কিছু আছে (ছাই) একত্রিত করলো। এরপর পানিতে মিশ্রিত ভাগকে নির্দেশ দিলেন। সেও তার মধ্যস্থিত সব কিছু একত্রিত করে দিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি এমনটি কেন করলে? সে বলল, হে আমার রব! আপনার ভয়ে। আপনি তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তা’আলা সদয় হয়ে তাকে মাফ করে দিলেন।
মুসলিমঃ ৬৮৭৩
Comment