একজন মুজাহিদ দ্বীনের সর্বোচ্চ চূড়ার কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। সর্বোচ্চ চূড়া তথা ছাদের স্থায়ীত্ব ও গুনগত মান অক্ষুন্ন তখনই থাকে যখন এর ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি পরিকল্পিত ও সুদৃঢ় হয়। অতএব মুজাহিদদের ইলমি ভিত্তি যদি মজবুত না হয় তবে তা ধ্বসে পড়ার কিংবা বিচ্যুতি হওয়ার আশংকা থাকে ।
আলিমগণই নবীগণের উত্তরাধিকারী। তাঁরা জ্ঞানের উত্তরাধিকারী হয়েছেন। যে জ্ঞান অর্জন করে সে বিরাট অংশ লাভ করে। আর যে ব্যক্তি ’ইল্ম অর্জনের জন্য পথ চলে, আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ ’আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই তাঁকে ভয় করে- (সূরাহ্ ফাতির ৩৫/২৮)। আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’আলিমগণ ব্যতীত তা কেউ অনুধাবন করে না’’- (সূরাহ্ আল-’আনকাবুত ২৯/৩৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ তারা বলবে, ’আমরা যদি শুনতাম অথবা উপলব্ধি করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না- (সূরাহ্ মুল্ক ৬৭/১০)। অন্যত্র তিনি বলেনঃ ’’বল, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরাহ্ যুমার ৩৯/৯)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের ’ইল্ম দান করেন। আর অধ্যয়নের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয়। আবূ যার (রাযি.) তাঁর ঘাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, যদি তোমরা এখানে তরবারী রাখ, অতঃপর আমি বুঝতে পারি যে, তোমরা সে তরবারী আমার উপর চালাবার পূর্বে আমি একটু কথা বলার সুযোগ পাব, তবে আমি যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, অবশ্যই তা বলে ফেলব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়। ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) বলেন, كُونُوا رَبَّانِيِّينَ ’’তোমরা রববানী হও।’’ (সূরাহ আলু ’ইমরানঃ ৩/৭৯)। এখানে رَبَّانِيِّينَ অর্থ প্রজ্ঞাবান, আলিম ও ফকীহগণ। আরো বলা হয় رَبَّانِي সে ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি মানুষকে জ্ঞানের বড় বড় বিষয়ের পূর্বে ছোট ছোট বিষয় শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
বুখারীঃ অধ্যায়ঃ ৩, অনুচ্ছেদঃ১০
ইলম অর্জনের ফজিলত
১। কাসীর ইবনু কায়স (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবূ দারদা (রাঃ)-এর সঙ্গে দামেশকের মসজিদে বসা ছিলাম। তখন তার নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ দারদা! আমি একটি হাদীসের জন্য সুদূর মদীনাতুর রাসূল থেকে এসেছি। জানতে পারলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমি আসিনি। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার পরিবর্তে তাকে জান্নাতের পথসমূহের মধ্যে কোনো একটি পথে পৌঁছে দেন।
ফিরিশতারা জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। জ্ঞানীর জন্য আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও দু’আ প্রার্থনা করে, এমন কি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও। আবেদ (সাধারণ ইবাদাতগুজারী) ব্যক্তির উপর ’আলিমের ফাযীলাত হলো যেমন সমস্ত তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা। জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরসুরি। নবীগণ কোনো দীনার বা দিরহাম মীরাসরূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে।
আবু দাউদঃ ৩৬৪১
২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। যার আমল তাকে পিছিয়ে রেখেছে, তার বংশ গৌরব তাকে এগিয়ে দিতে পারে না।
আবু দাউদঃ ৩৬৪৩
আল্লাহ যার কল্যান চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন
৩। হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মু‘আবিয়াহ (রাযি.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ‘ইল্ম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহ্ই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর কায়িম থাকবে, বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
বুখারীঃ ৭১
ইলম অর্জনের প্রতি তৃষ্ণা
৪। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মু’মিন ব্যক্তি কখনো কল্যাণকর কথা শুনে জান্নাতে না যাওয়া পর্যন্ত তৃপ্তি পাবে না।
তিরমিযিঃ ২৬৮৬
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইলম অর্জন
৫। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ইলমের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা যায়, কোনো লোক যদি দুনিয়াবী স্বার্থ লাভের জন্য তা শিক্ষা করে, তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না।
আবু দাউদঃ ৩৬৬৪
ইলম অর্জন ও বিতরনের দৃষ্টান্ত
৬। আবূ মূসা (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যে হিদায়াত ও ‘ইল্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ তা‘আলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে) পান করায় এবং তা দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জমি রয়েছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন ঘাসপাতা উৎপাদন করে। এই হল সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিখায়। আর সে ব্যক্তিরও দৃষ্টান্ত- যে সে দিকে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহর যে হিদায়াত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণও করে না।
বুখারীঃ ৭৯
অধীনস্তদের ইলম শিক্ষা দেয়া
৭। আবূ বুরদাহ, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের জন্য দুটি পুণ্য রয়েছেঃ (১) আহলে কিতাব- যে ব্যক্তি তার নবীর উপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপরও ঈমান এনেছে। (২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হাক আদায় করে এবং তার মালিকের হাকও (আদায় করে)। (৩) যার বাঁদী ছিল, যার সাথে সে মিলিত হত। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালভাবে দ্বীনি ইল্ম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে; তার জন্য দু’টি পুণ্য রয়েছে। অতঃপর বর্ণনাকারী ‘আমির (রহ.) (তাঁর ছাত্রকে) বলেন, তোমাকে কোন কিছুর বিনিময় ব্যতীতই হাদীসটি শিক্ষা দিলাম, অথচ পূর্বে এর চেয়ে ছোট হাদীসের জন্যও লোকেরা (দূর-দূরান্ত থেকে) সওয়ার হয়ে মদিনা্য় আসত।
বুখারীঃ ৯৭
ইলম লিপিবদ্ধ করা
৮। আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাযি.) ব্যতীত আর কারো নিকট আমার চেয়ে অধিক হাদীস নেই। কারণ তিনি লিখতেন, আর আমি লিখতাম না।
বুখারীঃ ১১৩
আকর্ষন থাকা পর্যন্ত ইলম অর্জন
৯। জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মনের মধ্যে আকর্ষণ থাকে ততক্ষণ কুরআন পাঠ করো। আর যখন (মন) বিকর্ষিত হয়ে পড়ে তখন উঠে যাবে।
মুসলিমঃ ৬৬৭১
পার্থিব স্বার্থে ইলম
১০। ইবনু উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করে অথবা এর দ্বারা আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কিছু অর্জনের ইচ্ছা করে সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্দিষ্ট করে নেয়।
তিরমিযিঃ ২৬৫৫
১১। কাব ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক আলিমদের সাথে তর্ক বাহাস করা অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে বাকবিতণ্ডা করার জন্য এবং মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশে ইলম অধ্যয়ন করেছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
তিরমিযিঃ ২৬৫৪
রাসুল (সঃ) এর বাণী মেনে নেওয়া
১২। মিকদাম ইবনু মাদীকারিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! খুব শীঘ্রই এমন ব্যক্তির আগমন ঘটবে যে, সে তার সুসজ্জিত গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকবে, তখন তার নিকট আমার কোন হাদীস পৌছলে সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের সামনে তো আল্লাহ তা’আলার কিতাবই আছে। আমরা তাতে যা হালাল পাব সেগুলো হালাল বলে মেনে নিব এবং যেগুলো হারাম পাব সেগুলো হারাম বলে মনে নিব। সাবধান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম ঘোষণা করেছেন তা আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক হারামকৃত বস্তুর মতোই হারাম।
তিরমিযিঃ ২৬৬৪
ইলম প্রচার
১৩। আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না।
মুসলিমঃ ৬৬৯৭
১৪। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে হাদিস শুনে তা মুখস্থ রাখলো এবং অন্যের নিকটও তা পৌঁছে দিলো, আল্লাহ তাকে চিরউজ্জ্বল করে রাখবেন। জ্ঞানের অনেক বাহক তার চেয়ে অধিক সমঝদার লোকের নিকট তার বহন নিয়ে যায়; যদিও জ্ঞানের বহু বাহক নিজেরা জ্ঞানী নয়।
আবু দাউদঃ ৩৬৬০
১৫। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ "-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তিকে আলোকোজ্জ্বল করুন, যে আমার কোন কথা শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে সেভাবেই অন্যের নিকট তা (জ্ঞান) পৌছে দিয়েছে। এমন অনেক ব্যক্তি আছে যার নিকট ইলম পৌছানো হয় তিনি শ্রোতার চেয়ে বেশি হৃদয়ঙ্গমকারী হয়ে থাকেন।
তিরমিযিঃ ২৬৫৬
১৬। আবূ বকরাহ (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের জান তোমাদের মাল বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেনঃ এবং তোমাদের মান-সম্মান (অন্য মুসলিমের জন্য) এ শহরে এ দিনের মতই মর্যাদা সম্পন্ন। শোন, (আমার এ বাণী যেন) তোমাদের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দেয়। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ (রহ.) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন, তা-ই হয়েছে। তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ দু’বার করে বললেন, হে লোক সকল! ‘আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?’
বুখারীঃ ১০৫
হাদীস প্রচারের হুকুম
১৭। আবূ বকরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ করে বলেন, (মিনায়) তিনি তাঁর উটের উপর উপবেশন করলেন। জনৈক ব্যক্তি তাঁর উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তিনি বললেনঃ ‘এটা কোন্ দিন?’ আমরা চুপ করে রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এ দিনটির আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ ‘‘এটা কি কুরবানীর দিন নয়?’ আমরা বললাম, ‘জি হ্যাঁ।’ তিনি জিজ্ঞেসঃ ‘এটা কোন্ মাস?’ আমরা নীরব রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এর আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ ‘এটা কি যিলহাজ্জ মাস নয়?’ আমরা বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেনঃ ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন আজকের তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর মর্যাদা সম্পন্ন। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট এসব কথা পৌঁছে দেয়। কারণ উপস্থিত ব্যক্তি সম্ভবত এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছাবে, যে এ বাণীকে তার চেয়ে অধিক আয়ত্তে রাখতে পারবে।’
বুখারীঃ ৬৭
বিরক্ত হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখা
১৮। আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না।
বুখারীঃ ৬৯
১৯। ইবনু মাস’ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট দিনে নাসীহাত করতেন, আমরা যাতে বিরক্ত বোধ না করি।
বুখারীঃ ৬৮
২০। আবূ ওয়াইল (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের নাসীহাত করতেন। তাঁকে একজন বলল, ‘হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমার ইচ্ছা জাগে, যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নাসীহাত করেন। তিনি বললেনঃ এ কাজ থেকে আমাকে যা বাধা দেয় তা হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নাসীহাত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি খেয়াল রাখি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্লান্তির আশংকায় আমাদের প্রতি যেমন লক্ষ্য রাখতেন।
বুখারীঃ ৭০
ইলম গোপন করা
২১। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানা ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তা গোপন করলো, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দিবেন।
আবু দাউদঃ ৩৬৫৮
রাসুলের(সঃ) এর উপর মিথ্যারোপ করে যে
২২। সালামাহ ইবনু আক্ওয়া‘ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’
বুখারীঃ ১০৯
যখন ইলম উঠে যাবে
২৩। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (শেষ যামানায়) আল্লাহ তা’আলা মানুষের নিকট হতে একটানে ইলম উঠিয়ে নিবেন না, বরং আলিমদেরকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নিবেন। অবশেষে যখন তিনি কোন আলিমই অবশিষ্ট রাখবেন না, তখন মানুষেরা অজ্ঞ জাহিলদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তারপর বিভিন্ন বিষয়ে তাদের নিকট প্রশ্ন করা হবে, আর তারা ইলম ছাড়াই ফাতাওয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।
তিরমিযিঃ২৬৫২
২৪। আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত সন্নিকটবর্তী হলে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, ফিতনাহ প্রসার হবে, কৃপণতা বেড়ে যাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। লোকেরা বলল, হারজ কি? তিনি বললেন, কতল (হত্যা)।
মুসলিমঃ ৬৬৮৫
পরিশেষে আমাদের আহ্ববানঃ
আসুন আল্লাহকে একক ইলাহ হিসেবে গ্রহন করি। আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা অধ্যয়নের মাধ্যমে তার অনুসরন করি। তা থেকে বিমুখ না থাকি।
ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ ۗ قَلِيلًۭا مَّا تَذَكَّرُونَ
"তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে(সমস্ত ওহীঃ কুরআন ও হাদীস), তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর। (৭:৩)
فَخُذۡهَا بِقُوَّۃٍ وَّ اۡمُرۡ قَوۡمَکَ یَاۡخُذُوۡا بِاَحۡسَنِهَا ؕ سَاُورِیۡکُمۡ دَارَ الۡفٰسِقِیۡنَ
" এই হিদায়াতকে(কুরআন ও হাদীস) শক্তভাবে গ্রহন করো এবং তোমার সম্প্রদায়কে এর সুন্দর সুন্দর বিধান গুলো মেনে চলতে আদেশ কর।" (৭:১৪৫)
قَالَ اهۡبِطَا مِنۡهَا جَمِیۡعًۢا بَعۡضُکُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ ۚ فَاِمَّا یَاۡتِیَنَّکُمۡ مِّنِّیۡ هُدًی ۬ۙ فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَایَ فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشۡقٰی
"তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয়েই জান্নাত হতে এক সাথে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত(সমস্ত ওহীঃ কুরআন ও হাদীস) আসবে, তখন যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না’।" (২০: ১২৩)
কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি কতককে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছে তার দিকে এবং রাসুল (স) এর দিকে এসো। তখন তারা সমাজের দোহাই দেয় রাষ্ট্রীয় আইনের দোহাই দেয় এবং বাপ দাদাদের থেকে চলে আসা রীতিনীতির কথা বলে। তাদের বাপ দাদারা কিছু না জানে থাকলেও! এবং সঠিক পথে না চলে থাকলেও কি তাই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে? (৫:১০৪)
কুরআন হাদিসের অনুসরন অনুগত্য করতে গিয়ে যদি সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের বিপরীতে অবস্থান নিতে হয় তবে তাই করতে হবে। যদি আমরা দ্বীনের উপর থাকি তাহলে বিপথগামীরা আমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আর আমাদের তো আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।(৫:১০৫)
আলিমগণই নবীগণের উত্তরাধিকারী। তাঁরা জ্ঞানের উত্তরাধিকারী হয়েছেন। যে জ্ঞান অর্জন করে সে বিরাট অংশ লাভ করে। আর যে ব্যক্তি ’ইল্ম অর্জনের জন্য পথ চলে, আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ ’আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই তাঁকে ভয় করে- (সূরাহ্ ফাতির ৩৫/২৮)। আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’আলিমগণ ব্যতীত তা কেউ অনুধাবন করে না’’- (সূরাহ্ আল-’আনকাবুত ২৯/৩৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ তারা বলবে, ’আমরা যদি শুনতাম অথবা উপলব্ধি করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না- (সূরাহ্ মুল্ক ৬৭/১০)। অন্যত্র তিনি বলেনঃ ’’বল, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরাহ্ যুমার ৩৯/৯)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের ’ইল্ম দান করেন। আর অধ্যয়নের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয়। আবূ যার (রাযি.) তাঁর ঘাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, যদি তোমরা এখানে তরবারী রাখ, অতঃপর আমি বুঝতে পারি যে, তোমরা সে তরবারী আমার উপর চালাবার পূর্বে আমি একটু কথা বলার সুযোগ পাব, তবে আমি যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, অবশ্যই তা বলে ফেলব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়। ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) বলেন, كُونُوا رَبَّانِيِّينَ ’’তোমরা রববানী হও।’’ (সূরাহ আলু ’ইমরানঃ ৩/৭৯)। এখানে رَبَّانِيِّينَ অর্থ প্রজ্ঞাবান, আলিম ও ফকীহগণ। আরো বলা হয় رَبَّانِي সে ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি মানুষকে জ্ঞানের বড় বড় বিষয়ের পূর্বে ছোট ছোট বিষয় শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
বুখারীঃ অধ্যায়ঃ ৩, অনুচ্ছেদঃ১০
ইলম অর্জনের ফজিলত
১। কাসীর ইবনু কায়স (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবূ দারদা (রাঃ)-এর সঙ্গে দামেশকের মসজিদে বসা ছিলাম। তখন তার নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ দারদা! আমি একটি হাদীসের জন্য সুদূর মদীনাতুর রাসূল থেকে এসেছি। জানতে পারলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমি আসিনি। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার পরিবর্তে তাকে জান্নাতের পথসমূহের মধ্যে কোনো একটি পথে পৌঁছে দেন।
ফিরিশতারা জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। জ্ঞানীর জন্য আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও দু’আ প্রার্থনা করে, এমন কি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও। আবেদ (সাধারণ ইবাদাতগুজারী) ব্যক্তির উপর ’আলিমের ফাযীলাত হলো যেমন সমস্ত তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা। জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরসুরি। নবীগণ কোনো দীনার বা দিরহাম মীরাসরূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে।
আবু দাউদঃ ৩৬৪১
২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। যার আমল তাকে পিছিয়ে রেখেছে, তার বংশ গৌরব তাকে এগিয়ে দিতে পারে না।
আবু দাউদঃ ৩৬৪৩
আল্লাহ যার কল্যান চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন
৩। হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মু‘আবিয়াহ (রাযি.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ‘ইল্ম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহ্ই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর কায়িম থাকবে, বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
বুখারীঃ ৭১
ইলম অর্জনের প্রতি তৃষ্ণা
৪। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মু’মিন ব্যক্তি কখনো কল্যাণকর কথা শুনে জান্নাতে না যাওয়া পর্যন্ত তৃপ্তি পাবে না।
তিরমিযিঃ ২৬৮৬
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইলম অর্জন
৫। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ইলমের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা যায়, কোনো লোক যদি দুনিয়াবী স্বার্থ লাভের জন্য তা শিক্ষা করে, তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না।
আবু দাউদঃ ৩৬৬৪
ইলম অর্জন ও বিতরনের দৃষ্টান্ত
৬। আবূ মূসা (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যে হিদায়াত ও ‘ইল্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ তা‘আলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে) পান করায় এবং তা দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জমি রয়েছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন ঘাসপাতা উৎপাদন করে। এই হল সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিখায়। আর সে ব্যক্তিরও দৃষ্টান্ত- যে সে দিকে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহর যে হিদায়াত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণও করে না।
বুখারীঃ ৭৯
অধীনস্তদের ইলম শিক্ষা দেয়া
৭। আবূ বুরদাহ, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের জন্য দুটি পুণ্য রয়েছেঃ (১) আহলে কিতাব- যে ব্যক্তি তার নবীর উপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপরও ঈমান এনেছে। (২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হাক আদায় করে এবং তার মালিকের হাকও (আদায় করে)। (৩) যার বাঁদী ছিল, যার সাথে সে মিলিত হত। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালভাবে দ্বীনি ইল্ম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে; তার জন্য দু’টি পুণ্য রয়েছে। অতঃপর বর্ণনাকারী ‘আমির (রহ.) (তাঁর ছাত্রকে) বলেন, তোমাকে কোন কিছুর বিনিময় ব্যতীতই হাদীসটি শিক্ষা দিলাম, অথচ পূর্বে এর চেয়ে ছোট হাদীসের জন্যও লোকেরা (দূর-দূরান্ত থেকে) সওয়ার হয়ে মদিনা্য় আসত।
বুখারীঃ ৯৭
ইলম লিপিবদ্ধ করা
৮। আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাযি.) ব্যতীত আর কারো নিকট আমার চেয়ে অধিক হাদীস নেই। কারণ তিনি লিখতেন, আর আমি লিখতাম না।
বুখারীঃ ১১৩
আকর্ষন থাকা পর্যন্ত ইলম অর্জন
৯। জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মনের মধ্যে আকর্ষণ থাকে ততক্ষণ কুরআন পাঠ করো। আর যখন (মন) বিকর্ষিত হয়ে পড়ে তখন উঠে যাবে।
মুসলিমঃ ৬৬৭১
পার্থিব স্বার্থে ইলম
১০। ইবনু উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করে অথবা এর দ্বারা আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কিছু অর্জনের ইচ্ছা করে সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্দিষ্ট করে নেয়।
তিরমিযিঃ ২৬৫৫
১১। কাব ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক আলিমদের সাথে তর্ক বাহাস করা অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে বাকবিতণ্ডা করার জন্য এবং মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশে ইলম অধ্যয়ন করেছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
তিরমিযিঃ ২৬৫৪
রাসুল (সঃ) এর বাণী মেনে নেওয়া
১২। মিকদাম ইবনু মাদীকারিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! খুব শীঘ্রই এমন ব্যক্তির আগমন ঘটবে যে, সে তার সুসজ্জিত গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকবে, তখন তার নিকট আমার কোন হাদীস পৌছলে সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের সামনে তো আল্লাহ তা’আলার কিতাবই আছে। আমরা তাতে যা হালাল পাব সেগুলো হালাল বলে মেনে নিব এবং যেগুলো হারাম পাব সেগুলো হারাম বলে মনে নিব। সাবধান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম ঘোষণা করেছেন তা আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক হারামকৃত বস্তুর মতোই হারাম।
তিরমিযিঃ ২৬৬৪
ইলম প্রচার
১৩। আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না।
মুসলিমঃ ৬৬৯৭
১৪। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে হাদিস শুনে তা মুখস্থ রাখলো এবং অন্যের নিকটও তা পৌঁছে দিলো, আল্লাহ তাকে চিরউজ্জ্বল করে রাখবেন। জ্ঞানের অনেক বাহক তার চেয়ে অধিক সমঝদার লোকের নিকট তার বহন নিয়ে যায়; যদিও জ্ঞানের বহু বাহক নিজেরা জ্ঞানী নয়।
আবু দাউদঃ ৩৬৬০
১৫। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ "-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তিকে আলোকোজ্জ্বল করুন, যে আমার কোন কথা শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে সেভাবেই অন্যের নিকট তা (জ্ঞান) পৌছে দিয়েছে। এমন অনেক ব্যক্তি আছে যার নিকট ইলম পৌছানো হয় তিনি শ্রোতার চেয়ে বেশি হৃদয়ঙ্গমকারী হয়ে থাকেন।
তিরমিযিঃ ২৬৫৬
১৬। আবূ বকরাহ (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের জান তোমাদের মাল বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেনঃ এবং তোমাদের মান-সম্মান (অন্য মুসলিমের জন্য) এ শহরে এ দিনের মতই মর্যাদা সম্পন্ন। শোন, (আমার এ বাণী যেন) তোমাদের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দেয়। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ (রহ.) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন, তা-ই হয়েছে। তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ দু’বার করে বললেন, হে লোক সকল! ‘আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?’
বুখারীঃ ১০৫
হাদীস প্রচারের হুকুম
১৭। আবূ বকরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ করে বলেন, (মিনায়) তিনি তাঁর উটের উপর উপবেশন করলেন। জনৈক ব্যক্তি তাঁর উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তিনি বললেনঃ ‘এটা কোন্ দিন?’ আমরা চুপ করে রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এ দিনটির আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ ‘‘এটা কি কুরবানীর দিন নয়?’ আমরা বললাম, ‘জি হ্যাঁ।’ তিনি জিজ্ঞেসঃ ‘এটা কোন্ মাস?’ আমরা নীরব রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এর আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ ‘এটা কি যিলহাজ্জ মাস নয়?’ আমরা বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেনঃ ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন আজকের তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর মর্যাদা সম্পন্ন। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট এসব কথা পৌঁছে দেয়। কারণ উপস্থিত ব্যক্তি সম্ভবত এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছাবে, যে এ বাণীকে তার চেয়ে অধিক আয়ত্তে রাখতে পারবে।’
বুখারীঃ ৬৭
বিরক্ত হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখা
১৮। আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না।
বুখারীঃ ৬৯
১৯। ইবনু মাস’ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট দিনে নাসীহাত করতেন, আমরা যাতে বিরক্ত বোধ না করি।
বুখারীঃ ৬৮
২০। আবূ ওয়াইল (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের নাসীহাত করতেন। তাঁকে একজন বলল, ‘হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমার ইচ্ছা জাগে, যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নাসীহাত করেন। তিনি বললেনঃ এ কাজ থেকে আমাকে যা বাধা দেয় তা হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নাসীহাত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি খেয়াল রাখি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্লান্তির আশংকায় আমাদের প্রতি যেমন লক্ষ্য রাখতেন।
বুখারীঃ ৭০
ইলম গোপন করা
২১। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানা ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তা গোপন করলো, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দিবেন।
আবু দাউদঃ ৩৬৫৮
রাসুলের(সঃ) এর উপর মিথ্যারোপ করে যে
২২। সালামাহ ইবনু আক্ওয়া‘ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’
বুখারীঃ ১০৯
যখন ইলম উঠে যাবে
২৩। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (শেষ যামানায়) আল্লাহ তা’আলা মানুষের নিকট হতে একটানে ইলম উঠিয়ে নিবেন না, বরং আলিমদেরকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নিবেন। অবশেষে যখন তিনি কোন আলিমই অবশিষ্ট রাখবেন না, তখন মানুষেরা অজ্ঞ জাহিলদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তারপর বিভিন্ন বিষয়ে তাদের নিকট প্রশ্ন করা হবে, আর তারা ইলম ছাড়াই ফাতাওয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।
তিরমিযিঃ২৬৫২
২৪। আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত সন্নিকটবর্তী হলে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, ফিতনাহ প্রসার হবে, কৃপণতা বেড়ে যাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। লোকেরা বলল, হারজ কি? তিনি বললেন, কতল (হত্যা)।
মুসলিমঃ ৬৬৮৫
পরিশেষে আমাদের আহ্ববানঃ
আসুন আল্লাহকে একক ইলাহ হিসেবে গ্রহন করি। আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা অধ্যয়নের মাধ্যমে তার অনুসরন করি। তা থেকে বিমুখ না থাকি।
ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ ۗ قَلِيلًۭا مَّا تَذَكَّرُونَ
"তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে(সমস্ত ওহীঃ কুরআন ও হাদীস), তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর। (৭:৩)
فَخُذۡهَا بِقُوَّۃٍ وَّ اۡمُرۡ قَوۡمَکَ یَاۡخُذُوۡا بِاَحۡسَنِهَا ؕ سَاُورِیۡکُمۡ دَارَ الۡفٰسِقِیۡنَ
" এই হিদায়াতকে(কুরআন ও হাদীস) শক্তভাবে গ্রহন করো এবং তোমার সম্প্রদায়কে এর সুন্দর সুন্দর বিধান গুলো মেনে চলতে আদেশ কর।" (৭:১৪৫)
قَالَ اهۡبِطَا مِنۡهَا جَمِیۡعًۢا بَعۡضُکُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ ۚ فَاِمَّا یَاۡتِیَنَّکُمۡ مِّنِّیۡ هُدًی ۬ۙ فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَایَ فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشۡقٰی
"তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয়েই জান্নাত হতে এক সাথে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত(সমস্ত ওহীঃ কুরআন ও হাদীস) আসবে, তখন যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না’।" (২০: ১২৩)
কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি কতককে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছে তার দিকে এবং রাসুল (স) এর দিকে এসো। তখন তারা সমাজের দোহাই দেয় রাষ্ট্রীয় আইনের দোহাই দেয় এবং বাপ দাদাদের থেকে চলে আসা রীতিনীতির কথা বলে। তাদের বাপ দাদারা কিছু না জানে থাকলেও! এবং সঠিক পথে না চলে থাকলেও কি তাই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে? (৫:১০৪)
কুরআন হাদিসের অনুসরন অনুগত্য করতে গিয়ে যদি সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের বিপরীতে অবস্থান নিতে হয় তবে তাই করতে হবে। যদি আমরা দ্বীনের উপর থাকি তাহলে বিপথগামীরা আমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আর আমাদের তো আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।(৫:১০৫)
Comment