عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَصْلَتَانِ لَا تَجْتَمِعَانِ فِي مُنَافِقٍ، حُسْنُ سَمْتٍ، وَلَا فِقْهٌ فِي الدِّينِ. -سنن الترمذي ت شاكر (5/ 49)، الرقم: 2684، ط. شركة مكتبة ومطبعة مصطفى البابي الحلبي – مصر
“আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দু’টি গুণ মুনাফিকের মাঝে জমা হয় না; উত্তম আখলাক (সুন্দর জীবনাচার) ও দ্বীনের গভীর বুঝ।”-সুনানে তিরমিযী, হাদীস-২৬৮৪
ব্যাখ্যা
আল্লামা মুবারকপূরী রহিমাহুল্লাহ (১৩৫৩ হি.) বলেন, এই দু’টি গুণ মুনাফিকের মাঝে সমবেত না হওয়ার অর্থ হলো, হয়ত দু’টিগুণের একটি থাকবে আরেকটি থাকবে না। কিংবা উভয়টিই থাকবে না। উভয় মহৎ গুণ থেকে মুনাফিক খালী হবে।
তিনি বলেন, এ হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ঈমানদারদের উভয়গুণে গুণান্বিত হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং শুধু দু’টির যেকোন একটি গুণ ধারণ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। -তুহফাতুল আহওয়াযী: ৭/৩৭৮
বিশ্লেষণ
আমরা অনেক মানুষ পাবো, যাদের আখলাক হয়তো সুন্দর কিন্তু দ্বীনের ফিকহ ও বুঝ নেই। উদাহরণ স্বরূপ আমরা পাশ্চাত্যের উন্নত আখলাকের অধিকারী লোকদের কথা বলতে পারি। দেখবেন, এই বিধর্মীদের অনেকের আখলাক সুন্দর। তাই বলে কি তারা একজন ঈমানদারের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। নিশ্চয়ই না। কারণ শুধু উন্নত চরিত্র আর সুন্দর জীবনাচার গ্রহণ করেই ঈমানদার হওয়া যায় না। আবু তালিবের আখলাকতো উন্নত ছিলো। তাই বলে কি আমরা তাকে ঈমানদার বলতে পারি?
অপরদিকে আমাদের সমাজে এমন অনেক বিদ্বান আমরা দেখতে পাই, যাদের জ্ঞানের কূল-কিনারা করা মুশকিল। আমাদের আলেম সমাজেও এমন বহু আলেম আছেন যারা ইলমের পাহাড়। কিন্তু আখলাক সুন্দর নয় বা কাঙ্ক্ষিত মানে উত্তীর্ণ নয়। তারাও প্রকৃত ঈমানদার নয়।
বরং যারা ইলম ও আখলাক এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটাবে তারাই প্রকৃত ঈমানদার।
-যারা শুধুই উত্তম আখলাকের অধিকারী।
-যারা শুধুই ইলমের অধিকারী।
-কিংবা যারা আখলাক ও ইলম উভয় পয়েন্টে জিরো।
তারা নিজেদের ব্যাপারে এই হাদীস থেকে নিফাকের পরোয়ানা গ্রহণ করি!
আল্লাহ আমাদের সকলকে নেফাক থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
আল্লামা তূরেবেশ্তী হানাফী রহি. বলেন, “প্রকৃত ইলম তা যা অন্তরে প্রোথিত হয় অতপর যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে যবান ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে; আমল ও খোদাভীতির মাধ্যমে। পক্ষান্তরে যারা ইলম অর্জন করে, ইজ্জত-সম্মান অর্জনের লক্ষে এবং দুনিয়া কামইয়ের উদ্দেশ্যে, তারা ইলমের ধারক-বাহকদের প্রকৃত সম্মান কখনও অর্জন করতে পারবে না। কারণ তারা হলো, আলিমুল লিসান (যাদের ইলম যবানের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে) আলিমুল কলব ( যাদের ইলম যবানের চৌহদ্দি অতিক্রম করে অন্তরে প্রোথিত হয়) নয়।
এ জন্য আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
"أخشى عليكم كل منافق عليم اللسان".
“ আমি তোমাদের ব্যাপারে ভয় পাই এমন প্রত্যেক মুনাফিককে যাদের ইলম তাদের যবানে সীমাবদ্ধ থাকে। (অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করে না )।” --তুহফাতুল আহওয়াযী (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ): ৭/৩৭৮
Comment