"ফি -আমানিল্লাহ" বা " আল্লাহ হাফেজ" না বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেখানো সুন্নাহ অনুসরণ করি!
কাউকে বিদায় দিতে সচারাচর আমরা ‘ফি আমানিল্লাহ’এবং 'আল্লাহ হাফেজ ' শব্দ দুইটি ব্যবহার করে থাকি। বিদায় দেয়ার দু‘আ হিসেবে আমরা শব্দটিকে নির্ধারণ করেছি। আমাদের সমাজে এই দুইটি কথা খুবই প্রচলিত এবং আমরা এগুলোকে দ্বীনের মধ্যে একটা নিদিষ্ট ফরম্যাট তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু দ্বীনের মানদণ্ডে এর ভিত্তি কতটুকু? তা কি কখনো ভেবে দেখেছি?
—
‘ফি আমানিল্লাহ’ {في أمان الله} আরবী শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে- ‘আল্লাহ নিরাপত্তা দিন’ বা ‘আল্লাহর নিরাপত্তায়। আর 'আল্লাহ হাফেজ' শব্দের অর্থ আল্লাহ হেফাজত করুক। শাব্দিকভাবে এতে কোন সমস্যা নেই। বরং অবশ্যই আমরা সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহর কাছেই নিরাপত্তা কামনা করি। কিন্তু যখন কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট সুন্নাহ পাওয়া যাবে তখনও কি আমরা মানুষের বানানো দু‘আকেই মানব? মনে রাখবেন, কোন আমল করতে হলে অবশ্যই তা কুরআন বা হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হতে হবে। নতুবা তা পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে, কেননা কুরআন-হাদীসের বাইরে মানুষের বানানো হাতুড়ে আমলই হল বিদ’আত।
—
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীতের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।” [সহীহ মুসলিম-৩২৪৩]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন- "নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহ্*র কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক বিদ'আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা। [সহীহ মুসলিম-৭৬৮]
তিনি আরো বলেছেন, “যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।” [সহীহ বুখারী-৫০৬৩]
—
যদিও অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে " ফি-আমানিল্লাহ" বা "আল্লাহ হাফেজ" এই দুইটা কথাকে বিদ'আত বলা ঠিক হবে না। কারণ এর দ্বারা ভালো অর্থই বুঝায়। তবে এগুলোকে সুন্নাহ মনে করে আমল করলে বা একটা নির্দিষ্ট ফরম্যাট তৈরি করে ফেললে, তখন তা বিদ'আত বলে পরিগণিত হবে।
আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বিদায়ের দু‘আ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আমরা যদি প্রকৃত পক্ষেই আল্লাহর নিরাপত্তা ও রহমত কামনা করি, সেক্ষেত্রে কি রাসূলের শিখানো দু‘আর মর্তবা বেশী হবে না? আল্লাহর রাসূল ﷺ কাউকে বিদায় দেয়ার সময় বলতেন— ❝আস্তাউদি’উল্লা-হা দ্বীনাকা, ওয়া আমা-নাতাকা, ওয়া খাওয়া তীমা আ’মালীকা।❞ [সহীহাহ হাঃ ১৬, ২৪৮৫, সূনান আত তিরমিজী, অধ্যায়: ৪৫/ দু’আসমূহ, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৪২, মান: সহীহ]
{أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَآخِرَ عَمَلِكَ}
যার অর্থ হল: “তোমার দ্বীন, ঈমান ও সর্বশেষ আমালের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তা'আলাকে আমানতদার নিযুক্ত করলাম।”
এক্ষেত্রে কেউ যদি পুরা দু‘আ না জানে তাহলে শুধুমাত্র "আস্তউদি'উল্লা" বলতে পারে।
—
আসুন! দ্বীনি ভাই-বোনেরা, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেখানো পদ্ধতিতে প্রিয়জনকে বিদায় দেই। তাতে করে একটি মৃত সুন্নাহ উজ্জীবিত হবে এবং আল্লাহর তরফ হতেও মিলবে নিরাপত্তা, রহমত ও সফলতা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন— “যে আমার সুন্নাতকে যিন্দা করে সে আমাকে ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।” [সুনানে তিরমিযী, ২৬৭৮]
মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমায় এরশাদ করেন— “তোমাদের জন্য রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” [সূরা আহযাব: ২১]
Collected
Comment