ইমাম মুসলিম রহিঃ স্বীয় সহীহ মুসলিমে যায়েদ ইবনে ওহাব আল জুহানী থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
তিনি আলী রাঃ এর সাথে "খাওয়ারেজ" গামী কাফেলায় ছিলেন। তখন আলী রাঃ বলেছেন, হে লোক সকল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি : আমার উম্মতের মাঝে এমন এক জাতি আত্মপ্রকাশ করবে যারা কুরআন তেলাওয়াত করবে। তোমাদের কুরআন তেলাওয়াত তাদের তেলাওয়াতের কাছে, তোমাদের নামাজ তাদের নামাজের কাছে, তোমাদের রোজা তাদের রোজার কাছে কিছুই মনে হবে না। তারা কুরআন তেলাওয়াত করে মনে করবে এই তেলাওয়াত তাদের উপকারে আসবে। অথচ তা তাদের ক্ষতিই বয়ে আনবে। তাদের নামাজ তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমন ভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়।" যে সকল সৈন্যরা তাদের উপর বিজয়ী হবে কিংবা তাদের হত্যা করবে তারা যদি জানতো তাদের জন্য তাদের রাসূলের যবানে কী ফায়সালা করা হয়েছে তাহলে তারা অন্যান্য আমল ছেড়ে দিতো। সালামাহ ইবনু কুহাইল বলেন, এভাবে যায়েদ ইবনু ওহাব আল জুহানি আমাকে পর্যায়ক্রমে সৈনিকদের অবস্থাদি বর্ণনা করলেন। অবশেষে তিনি বলেন, আমরা একটি সাঁকো অতিক্রম করলাম। অতঃপর আমরা যখন মুখোমুখি হলাম- সেদিন তাদের নেতৃত্বে ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনু ওহাব আর রাসিবী- তখন সে তাদের বললো, তোমরা বর্শা নিক্ষেপ করো। তরবারি কোষ মুক্ত করে নাও। আমার ভয় হয়, না জানি তারা হারুরার দিনের মতো আবার তোমাদের কাছে আল্লাহর শপথ করে বসে। অতঃপর তারা দূরে সরে গিয়ে বর্শা নিক্ষেপ করলো এবং তরবারি কোষ মুক্ত করে আলী রাঃ এর বাহিনীর মাঝে ঢুকে পড়লো। অতঃপর আলী রাঃ এর বাহিনী বর্শা নিয়ে তাদের মাঝে ঢুকে পড়লেন। তিনি বলেন, খাওয়ারেজরা একে অপরের হাতে নিহত হয়েছে। সেদিন আলী রাঃ এর বাহিনীর মাত্র দুইজন শাহাদাত বরণ করেছেন। অতঃপর আলী রাঃ বললেন, "মুখদাজ" (অসম্পূর্ণ অঙ্গ বিশিষ্ট) কে তালাশ করো। তারা তালাশ করে পেলেন না। ফলে আলী রাঃ নিজে তালাশে নেমে গেলেন। অবশেষে তিনি একে অপরের হাতে নিহত হওয়া খাওয়ারেজের কাছে এসে বললেন, তাদের মধ্যে ভালো ভাবে তালাশ করো। অতঃপর তারা তাকে মাটির সাথে মিশে রয়েছে এমতাবস্থায় পেলেন। তখন আলী রাঃ তাকবীর বলে উঠলেন এবং বললেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন। আর তার রাসূল সত্য পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তখন আবীদাহ আস সালমানী তার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই আপনি কি এই হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন? অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই হ্যাঁ অবশ্যই। এভাবে তিনি তিন বার তার থেকে শপথ গ্রহণ করেন এবং তিনি ও শপথ করেন। (সহীহ মুসলিম : ১০৬৬, ফাতহুল মুলহিম : ৬/১৫৯-১৬০, ইকমালুল মু'লিম বিফাওয়াইদী সহীহ মুসলিম ৩/৬১৮-৬১৯)
ইমাম কুরতুবী রহিঃ তার মুফহিম গ্রন্থে (لاتكلوا عن العمل এর ব্যাখ্যায়) বলেন, তারা এই আমলের সাওয়াবের উপর ঝুঁকে পড়তো এবং জাহান্নামে থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ করে সফলতার জন্য তার উপর ভরসা করতো। যদিও আমলের মাধ্যমে তা অর্জন সম্ভব নয়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لن ينجي أحدا منكم عمله
কাউকে তার আমল মুক্তি দিতে পারবে না।
তবে এই আমল তথা খাওয়ারেজ হত্যা অনেক মহান আমল। তার সাওয়াব প্রচুর। আর এই আমলকারী ব্যক্তি যদি এই মহা প্রতিদানের কথা জানতে পারে তাহলে সে এর উপরই ভরসা করবে এবং ধারণা করবে তাই তাকে মুক্তি দিবে। (আল মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবিল মুসলিম : ৯/৮৯)
ইমাম মুসলিম রহিঃ আলী রাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি খাওয়ারেজের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের মধ্যে অসম্পূর্ণ হাত বিশিষ্ট কিংবা ছোট হাত বিশিষ্ট এক ব্যক্তি থাকবে। যদি তোমরা অধিক গর্ব না করতে তাহলে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষায় তাদের হত্যাকারীদের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা আমি তোমাদের বর্ণনা করতাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, আপনি কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন? তিনি বলেন, কা'বার রবের শপথ! হ্যাঁ অবশ্যই। কা'বার রবের শপথ! হ্যাঁ অবশ্যই। কা'বার রবের শপথ! হ্যাঁ অবশ্যই। (সহীহ মুসলিম : ১০৬৬, আল ইকমাল : ৩/৬১৭)
আব্দুর রাযযাকের এর এক বর্ণনায় এসেছে,
আবীদাহ আস সালমানী থেকে ইমাম আজুররীর বর্ণনায় এসেছে, আমি আলী রাঃ এর সাথে নাহরে উপস্থিত ছিলাম। অতঃপর যখন খারেজিদের হত্যা করা হলো তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অসম্পূর্ণ হাত বিশিষ্ট এক ব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু তারা তাকে খোঁজ করে পেলো না। এভাবে তিনি তিন বার বলে বললেন, তোমরা নিহতদের উল্টে পাল্টে দেখো। অতঃপর তারা এক ব্যক্তিকে পেলেন যার ডান হাতটি ছোট। যেনো তা মহিলাদের স্তন। অতঃপর তিনি কিবলামুখী হয়ে উভয় হাত উত্তোলন করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন যিনি তাকে তাদের হত্যার তাওফীক দিয়েছেন এবং হত্যার মাধ্যমে তাকে সম্মানিত করেছেন। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, যদি তোমরা অধিক আনন্দিত না হতে তাহলে আমি তোমাদেরকে খাওয়ারেজ হত্যাকারীদের জন্য রাসূলের মুখে যে সম্মানের কথা এসেছে তা তোমাদের বর্ণনা করতাম। (আশ শারীয়াহ : ৫৩)
ইবনু হুবায়রা রহিঃ বলেন, এর মাধ্যমে খাওয়ারেজ হত্যার মধ্যে সাওয়াবের প্রাচুর্য বুঝানো হয়েছে। এবং আমি এই কথা পেয়েছি যে, আলী রাঃ তার সঙ্গীদের থেকে অহংকারের ভয় করতেন যখন তিনি তাদেরকে খাওয়ারেজ হত্যার সাওয়াবের ব্যাপারে জানিয়েছেন। (আল ইফসাহ : ১/২৮০)
আওনুল মা'বুদে এসেছে, لولا أن تبطروا এটা بطر ধাতু থেকে। তার অর্থ হলো, নেয়ামত পেয়ে অধিক আনন্দিত হওয়া কিংবা অবাধ্যতা করা। অর্থাৎ যদি তার হত্যাকারীর সাওয়াবের কারণে তোমাদের থেকে অবাধ্যতা কিংবা অধিক আনন্দের আশঙ্কা না হতো তাহলে আমি তোমাদের বর্ণনা করতাম। (আওনুল মা'বুদ : ১৩/৭৬)
শাইখ আবুল হাসান সিন্ধী রহিঃ বলেন, لولا أن تبطروا অর্থাৎ যদি অধিক আনন্দের আশঙ্কা না হতো যা তোমাদের আমল ছেড়ে দেওয়া কিংবা অবাধ্যতায় পৌঁছে দেয়। ( হাশিয়াতু সুনানি ইবনি মাজাহ : ১/৭২)
চলবে ইনশাআল্লাহ.......
أنَّهُ كانَ في الجَيْشِ الَّذِينَ كَانُوا مع عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عنْه، الَّذِينَ سَارُوا إلى الخَوَارِجِ، فَقالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عنْه: أَيُّهَا النَّاسُ إنِّي سَمِعْتُ رَسولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ يقولُ: يَخْرُجُ قَوْمٌ مِن أُمَّتي يَقْرَؤُونَ القُرْآنَ، ليسَ قِرَاءَتُكُمْ إلى قِرَاءَتِهِمْ بشيءٍ، وَلَا صَلَاتُكُمْ إلى صَلَاتِهِمْ بشيءٍ، وَلَا صِيَامُكُمْ إلى صِيَامِهِمْ بشيءٍ، يَقْرَؤُونَ القُرْآنَ يَحْسِبُونَ أنَّهُ لهمْ وَهو عليهم، لا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ تَرَاقِيَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الإسْلَامِ كما يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، لو يَعْلَمُ الجَيْشُ الَّذِينَ يُصِيبُونَهُمْ، ما قُضِيَ لهمْ علَى لِسَانِ نَبِيِّهِمْ صَلَّى اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ، لَاتَّكَلُوا عَنِ العَمَلِ، وَآيَةُ ذلكَ أنَّ فيهم رَجُلًا له عَضُدٌ، وَليسَ له ذِرَاعٌ، علَى رَأْسِ عَضُدِهِ مِثْلُ حَلَمَةِ الثَّدْيِ، عليه شَعَرَاتٌ بيضٌ فَتَذْهَبُونَ إلى مُعَاوِيَةَ وَأَهْلِ الشَّامِ وَتَتْرُكُونَ هَؤُلَاءِ يَخْلُفُونَكُمْ في ذَرَارِيِّكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ، وَاللَّهِ، إنِّي لأَرْجُو أَنْ يَكونُوا هَؤُلَاءِ القَوْمَ، فإنَّهُمْ قدْ سَفَكُوا الدَّمَ الحَرَامَ، وَأَغَارُوا في سَرْحِ النَّاسِ، فَسِيرُوا علَى اسْمِ اللَّهِ. قالَ سَلَمَةُ بنُ كُهَيْلٍ: فَنَزَّلَنِي زَيْدُ بنُ وَهْبٍ مَنْزِلًا، حتَّى قالَ: مَرَرْنَا علَى قَنْطَرَةٍ، فَلَمَّا التَقَيْنَا وعلَى الخَوَارِجِ يَومَئذٍ عبدُ اللهِ بنُ وَهْبٍ الرَّاسِبِيُّ، فَقالَ: لهمْ أَلْقُوا الرِّمَاحَ، وَسُلُّوا سُيُوفَكُمْ مِن جُفُونِهَا، فإنِّي أَخَافُ أَنْ يُنَاشِدُوكُمْ كما نَاشَدُوكُمْ يَومَ حَرُورَاءَ، فَرَجَعُوا فَوَحَّشُوا برِمَاحِهِمْ، وَسَلُّوا السُّيُوفَ، وَشَجَرَهُمُ النَّاسُ برِمَاحِهِمْ، قالَ: وَقُتِلَ بَعْضُهُمْ علَى بَعْضٍ، وَما أُصِيبَ مِنَ النَّاسِ يَومَئذٍ إلَّا رَجُلَانِ، فَقالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عنْه: التَمِسُوا فِيهِمُ المُخْدَجَ، فَالْتَمَسُوهُ فَلَمْ يَجِدُوهُ، فَقَامَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عنْه بنَفْسِهِ حتَّى أَتَى نَاسًا قدْ قُتِلَ بَعْضُهُمْ علَى بَعْضٍ، قالَ: أَخِّرُوهُمْ، فَوَجَدُوهُ ممَّا يَلِي الأرْضَ، فَكَبَّرَ، ثُمَّ قالَ: صَدَقَ اللَّهُ، وَبَلَّغَ رَسولُهُ، قالَ: فَقَامَ إلَيْهِ عَبِيدَةُ السَّلْمَانِيُّ، فَقالَ: يا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ، أَلِلَّهَ الذي لا إلَهَ إلَّا هُوَ، لَسَمِعْتَ هذا الحَدِيثَ مِن رَسولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ؟ فَقالَ: إي، وَاللَّهِ الذي لا إلَهَ إلَّا هُوَ، حتَّى اسْتَحْلَفَهُ ثَلَاثًا، وَهو يَحْلِفُ له
তিনি আলী রাঃ এর সাথে "খাওয়ারেজ" গামী কাফেলায় ছিলেন। তখন আলী রাঃ বলেছেন, হে লোক সকল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি : আমার উম্মতের মাঝে এমন এক জাতি আত্মপ্রকাশ করবে যারা কুরআন তেলাওয়াত করবে। তোমাদের কুরআন তেলাওয়াত তাদের তেলাওয়াতের কাছে, তোমাদের নামাজ তাদের নামাজের কাছে, তোমাদের রোজা তাদের রোজার কাছে কিছুই মনে হবে না। তারা কুরআন তেলাওয়াত করে মনে করবে এই তেলাওয়াত তাদের উপকারে আসবে। অথচ তা তাদের ক্ষতিই বয়ে আনবে। তাদের নামাজ তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমন ভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়।" যে সকল সৈন্যরা তাদের উপর বিজয়ী হবে কিংবা তাদের হত্যা করবে তারা যদি জানতো তাদের জন্য তাদের রাসূলের যবানে কী ফায়সালা করা হয়েছে তাহলে তারা অন্যান্য আমল ছেড়ে দিতো। সালামাহ ইবনু কুহাইল বলেন, এভাবে যায়েদ ইবনু ওহাব আল জুহানি আমাকে পর্যায়ক্রমে সৈনিকদের অবস্থাদি বর্ণনা করলেন। অবশেষে তিনি বলেন, আমরা একটি সাঁকো অতিক্রম করলাম। অতঃপর আমরা যখন মুখোমুখি হলাম- সেদিন তাদের নেতৃত্বে ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনু ওহাব আর রাসিবী- তখন সে তাদের বললো, তোমরা বর্শা নিক্ষেপ করো। তরবারি কোষ মুক্ত করে নাও। আমার ভয় হয়, না জানি তারা হারুরার দিনের মতো আবার তোমাদের কাছে আল্লাহর শপথ করে বসে। অতঃপর তারা দূরে সরে গিয়ে বর্শা নিক্ষেপ করলো এবং তরবারি কোষ মুক্ত করে আলী রাঃ এর বাহিনীর মাঝে ঢুকে পড়লো। অতঃপর আলী রাঃ এর বাহিনী বর্শা নিয়ে তাদের মাঝে ঢুকে পড়লেন। তিনি বলেন, খাওয়ারেজরা একে অপরের হাতে নিহত হয়েছে। সেদিন আলী রাঃ এর বাহিনীর মাত্র দুইজন শাহাদাত বরণ করেছেন। অতঃপর আলী রাঃ বললেন, "মুখদাজ" (অসম্পূর্ণ অঙ্গ বিশিষ্ট) কে তালাশ করো। তারা তালাশ করে পেলেন না। ফলে আলী রাঃ নিজে তালাশে নেমে গেলেন। অবশেষে তিনি একে অপরের হাতে নিহত হওয়া খাওয়ারেজের কাছে এসে বললেন, তাদের মধ্যে ভালো ভাবে তালাশ করো। অতঃপর তারা তাকে মাটির সাথে মিশে রয়েছে এমতাবস্থায় পেলেন। তখন আলী রাঃ তাকবীর বলে উঠলেন এবং বললেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন। আর তার রাসূল সত্য পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তখন আবীদাহ আস সালমানী তার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই আপনি কি এই হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন? অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই হ্যাঁ অবশ্যই। এভাবে তিনি তিন বার তার থেকে শপথ গ্রহণ করেন এবং তিনি ও শপথ করেন। (সহীহ মুসলিম : ১০৬৬, ফাতহুল মুলহিম : ৬/১৫৯-১৬০, ইকমালুল মু'লিম বিফাওয়াইদী সহীহ মুসলিম ৩/৬১৮-৬১৯)
ইমাম কুরতুবী রহিঃ তার মুফহিম গ্রন্থে (لاتكلوا عن العمل এর ব্যাখ্যায়) বলেন, তারা এই আমলের সাওয়াবের উপর ঝুঁকে পড়তো এবং জাহান্নামে থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ করে সফলতার জন্য তার উপর ভরসা করতো। যদিও আমলের মাধ্যমে তা অর্জন সম্ভব নয়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لن ينجي أحدا منكم عمله
কাউকে তার আমল মুক্তি দিতে পারবে না।
তবে এই আমল তথা খাওয়ারেজ হত্যা অনেক মহান আমল। তার সাওয়াব প্রচুর। আর এই আমলকারী ব্যক্তি যদি এই মহা প্রতিদানের কথা জানতে পারে তাহলে সে এর উপরই ভরসা করবে এবং ধারণা করবে তাই তাকে মুক্তি দিবে। (আল মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবিল মুসলিম : ৯/৮৯)
ইমাম মুসলিম রহিঃ আলী রাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি খাওয়ারেজের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের মধ্যে অসম্পূর্ণ হাত বিশিষ্ট কিংবা ছোট হাত বিশিষ্ট এক ব্যক্তি থাকবে। যদি তোমরা অধিক গর্ব না করতে তাহলে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষায় তাদের হত্যাকারীদের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা আমি তোমাদের বর্ণনা করতাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, আপনি কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন? তিনি বলেন, কা'বার রবের শপথ! হ্যাঁ অবশ্যই। কা'বার রবের শপথ! হ্যাঁ অবশ্যই। কা'বার রবের শপথ! হ্যাঁ অবশ্যই। (সহীহ মুসলিম : ১০৬৬, আল ইকমাল : ৩/৬১৭)
আব্দুর রাযযাকের এর এক বর্ণনায় এসেছে,
لولا أن تبطروا لأخبرتكم بما سبق من الفضل لمن قتلهم
যদি তোমরা অধিক আনন্দিত না হতে তাহলে আমি তোমাদের তাদের হত্যাকারীর মর্যাদা সম্পর্কে জানাতাম। (মুসান্নাফু আব্দির রাযযাক : ১৮৬৫৭)আবীদাহ আস সালমানী থেকে ইমাম আজুররীর বর্ণনায় এসেছে, আমি আলী রাঃ এর সাথে নাহরে উপস্থিত ছিলাম। অতঃপর যখন খারেজিদের হত্যা করা হলো তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অসম্পূর্ণ হাত বিশিষ্ট এক ব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু তারা তাকে খোঁজ করে পেলো না। এভাবে তিনি তিন বার বলে বললেন, তোমরা নিহতদের উল্টে পাল্টে দেখো। অতঃপর তারা এক ব্যক্তিকে পেলেন যার ডান হাতটি ছোট। যেনো তা মহিলাদের স্তন। অতঃপর তিনি কিবলামুখী হয়ে উভয় হাত উত্তোলন করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন যিনি তাকে তাদের হত্যার তাওফীক দিয়েছেন এবং হত্যার মাধ্যমে তাকে সম্মানিত করেছেন। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, যদি তোমরা অধিক আনন্দিত না হতে তাহলে আমি তোমাদেরকে খাওয়ারেজ হত্যাকারীদের জন্য রাসূলের মুখে যে সম্মানের কথা এসেছে তা তোমাদের বর্ণনা করতাম। (আশ শারীয়াহ : ৫৩)
ইবনু হুবায়রা রহিঃ বলেন, এর মাধ্যমে খাওয়ারেজ হত্যার মধ্যে সাওয়াবের প্রাচুর্য বুঝানো হয়েছে। এবং আমি এই কথা পেয়েছি যে, আলী রাঃ তার সঙ্গীদের থেকে অহংকারের ভয় করতেন যখন তিনি তাদেরকে খাওয়ারেজ হত্যার সাওয়াবের ব্যাপারে জানিয়েছেন। (আল ইফসাহ : ১/২৮০)
আওনুল মা'বুদে এসেছে, لولا أن تبطروا এটা بطر ধাতু থেকে। তার অর্থ হলো, নেয়ামত পেয়ে অধিক আনন্দিত হওয়া কিংবা অবাধ্যতা করা। অর্থাৎ যদি তার হত্যাকারীর সাওয়াবের কারণে তোমাদের থেকে অবাধ্যতা কিংবা অধিক আনন্দের আশঙ্কা না হতো তাহলে আমি তোমাদের বর্ণনা করতাম। (আওনুল মা'বুদ : ১৩/৭৬)
শাইখ আবুল হাসান সিন্ধী রহিঃ বলেন, لولا أن تبطروا অর্থাৎ যদি অধিক আনন্দের আশঙ্কা না হতো যা তোমাদের আমল ছেড়ে দেওয়া কিংবা অবাধ্যতায় পৌঁছে দেয়। ( হাশিয়াতু সুনানি ইবনি মাজাহ : ১/৭২)
চলবে ইনশাআল্লাহ.......
Comment