১. 'রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুদ্ধ করার এবং শাহীদ হবার আকাঙ্ক্ষা।'
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)–কে আমি বলতে শুনেছি যে,
"والذي نفسي بيده لولا أن رجالا من المؤمنين لا تطيب أنفسهم أن يتخلفوا عني، ولا أجد ما أحملهم عليه، ما تخلفت عن سرية تغزو في سبيل الله، والذي نفسي بيده لوددت أني أقتل في سبيل الله ثم أحيا، ثم أقتل ثم أحيا، ثم أقتل ثم أحيا، ثم أقتل"
"সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি মুমিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং যাদের সকলকে সওয়ারী দিতে পারব না বলে আশংকা করতাম, তা হলে যারা আল্লাহ্*র রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি সেই ক্ষুদ্র দলটির সঙ্গী হওয়া হতে বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহ্*র রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, অতঃপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, আবার শহীদ করা হয়।" (সহিহ বুখারী ২৭৯৭, ৭২২৬, সুনানে আন-নাসায়ী ৩১৫২, রিয়াদুস সলেহিন ১৩০২, মান: সহিহ)
হাদীসের এই অংশ- "যদি মুমিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না" আরো পরিষ্কার ভাবে বুখারী ৭২২৬ এ "যদি কিছু লোক আমার শরীক না হয়ে পিছনে থেকে যাওয়াটা অপছন্দ না করত" সুনানে আন নাসায়ীর বর্ণনায় বলা আছে "যদি মু’মিনদের মধ্যে এমন লোক না হতো, যারা আমার সঙ্গে যুদ্ধে গমন হতে অনুপস্থিত থাকতে চায় না"। রিয়াদুস সলেহিনের বর্ণনায় "আমার পিছনে থেকে যাওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হবে।"
আল্লাহু আকবর! এই উক্তিগুলো থেকে বুঝা যায় সাহাবাগণ (রাঃ) কি পরিমাণ যুদ্ধ প্রেমিক ছিলেন, যারা যুদ্ধ থেকে পিছনে বসে থাকাকে অপছন্দ করতেন, যুদ্ধ থেকে পিছনে থেকে যাওয়া তাদের জন্য কষ্টকর বিষয় ছিল।
অতঃপর রাসূল (ﷺ) বলেন,
"والذي نفسي بيده لولا أن أشق على المسلمين ما قعدت خلاف سرية تخرج في سبيل الله أبدا ولكن لا أجد سعة فأحملهم ولا يجدون سعة فيتبعوني ولا تطيب أنفسهم فيتخلفون بعدي والذي نفس محمد بيده لوددت"
"আমি মুসলমানদের জন্য কষ্টসাধ্য মনে না করলে তারা আল্লাহর রাস্তায় যে যুদ্ধেই যায় আমি পেছনে থেকে যেতাম না। কিন্তু আমার এতোটুকু সঙ্গতি নাই যে, আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিবো এবং তাদেরও সঙ্গতি নেই যে, প্রতিটি যুদ্ধে তারা আমার সাথে যাবে। আমি তাদেরকে আমার সাথে না নিয়ে গেলে তাদেরও দুশ্চিন্তা হবে।" (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৭৫৩, মান: সহিহ)
অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) যদি তাদের সকলকে সওয়ারী, বাহন তথা যুদ্ধ সারঞ্জাম দিতে সমর্থ হতেন তবে তিনি (ﷺ) কোন যুদ্ধ হতে বিরত থাকতেন না। সুবাহানাল্লাহ। আর আমরা! কিভাবে জিহাদের বয়ান এড়িয়ে যাওয়া যায়, কিভাবে যুদ্ধের চিন্তা থেকে কিভাবে পলায়ন করা যায় সেই চিন্তা করি, যুদ্ধ করা দূরে থাক!!!
অতঃপর রাসূল (ﷺ) বলেন,
"والذي نفس محمد بيده، لوددت أن أغزو في سبيل الله، فأقتل، ثم أغزو فأقتل، ثم أغزو فأقتل"
"সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন আছে! আমার আন্তরিক ইচ্ছা যে, আমি আল্লাহর পথে লড়াই করি এবং শহীদ হই। অতঃপর আবার (জীবিত হয়ে) লড়াই করি, পুনরায় শাহাদত বরণ করি। অতঃপর (পুনর্জীবিত হয়ে) যুদ্ধ করি এবং পুনরায় শহীদ হয়ে যাই।” (রিয়াদুস সলেহিন ১৩০২, মান: সহিহ)
হাদীসের এ অংশ থেকে প্রমাণিত হয় "আল্লাহকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসার প্রমাণ হচ্ছে জিহাদে অংশগ্রহণ করা ও শহীদ হওয়া। যারা আল্লাহকে যত বেশি ভালবাসেন তারা তত অধিকবার শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন।"
(সহীহুল বুখারী ৩১২৩, মুসলিম ১৮৭৬, ৩৬২৩৭, ২৭, ৮৭, ২৭৯৭, ২৮০৩, ২৯৭২, ৩১২৩, ৫৫৩৩, ৭২২৬, ৭২২৭, ৭৪৫৭, ৭৪৬৩, তিরমিযী ১৬৫৬, নাসায়ী ৩০৯৮, ৩১২২, ৩১২৪, ৩১৪৭, ৩১৫১, ৩১৫২, ৫০২৯, ৫০৩০, ইবনু মাজাহ ২৭৫৩, ২৭৯৫, আহমাদ ৭১১৭, ৭২৬০, ৭২৯৮, ৮৭৫৭, ৮৮৪৩, ৮৯৪০, ৯১৯২, ৯৭৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ৯৭৪, ৯৯৯-১০০১, ১০২২, দারেমী ২৩৯১, ২৪০৬, মান: সহিহ)
২. 'শাহীদ ব্যক্তি দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়।'
আনাস ইব্*নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন,
" ما أحد يدخل الجنة يحب أن يرجع إلى الدنيا وله ما على الأرض من شىء، إلا الشهيد، يتمنى أن يرجع إلى الدنيا فيقتل عشر مرات، لما يرى من الكرامة
"জান্নাতে প্রবেশের পর আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙক্ষা করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাকে দেয়া হয়। একমাত্র শহীদ ব্যতীত; সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে।" (সহিহ বুখারী ২৮১৭, জামে' আত-তিরমিজি ১৬৬১, মান: সহিহ)
সুবাহানাল্লাহ। মর্যাদা চিন্তা করুন! অন্য কোন আমল নয়, সালাত, সিয়াম, হজ্ব, তাহাজ্জুদ বা মিলিয়ন বিলিয়ন দানের বেলায় নয়। কোন প্রখ্যাত বিখ্যাত মুফতি শাইখুল হাদীস আল্লামা আলিম মাদানী, রহমানী, কাশেমী, ফকিহ বা তালিবুল ইলমের কথা বলা হয়নি, কোন বিশ্ব-বিখ্যাত দায়ী কারী বা মদিনার মসজিদে নববী বা কাবার ইমামের মর্যাদার কথা বলা হয়নি, একজন আল্লাহর রাস্তার শহীদের বেলায় বলা হয়েছে, সে শাহাদাতের এতো উচ্চ মর্যাদা, এতো বেশী পরিমাণ মর্যাদা দেখেছে যে, সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। সুবাহানাল্লাহ। শাহাদাতের ফজিলত বর্ণনা করতে এই একটি হাদিস-ই যথেষ্ট।
৩. 'কম আমলে অধিক পুরস্কার।'
বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
"وسلم رجل مقنع بالحديد فقال يا رسول الله أقاتل وأسلم. قال "أسلم ثم قاتل ". فأسلم ثم قاتل، فقتل، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم " عمل قليلا وأجر كثيرا"
বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
"وسلم رجل مقنع بالحديد فقال يا رسول الله أقاتل وأسلم. قال "أسلم ثم قاتل ". فأسلم ثم قاتل، فقتل، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم " عمل قليلا وأجر كثيرا"
"লৌহ বর্মে আবৃত এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যুদ্ধে শরীক হবো, না ইসলাম গ্রহণ করব?’ তিনি (ﷺ) বললেন, ‘ইসলাম গ্রহন কর, অতঃপর যুদ্ধে যাও।’ অতঃপর সে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহন করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাত লাভ করল। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন, ‘সে কম আমল করে অধিক পুরস্কার পেল।’ (সহিহ বুখারী ২৮০৮, মান: সহিহ)
আমাদের এই জামানায়ও এই রকম একজন আল্লাহর রাস্তার শহীদের মর্যাদা, ঐ লোকের চেয়ে অনেক অনেক বেশি, যে কিনা সারাজীবন দাওয়াতের কাজ করেছে, আল্লাহর সকল হুকুম মেনে চলেছে, রাত দিন ইবাদাত করেছে, তাহাজ্জুদ পরেছে। এটা কিন্তু মোটেই কোন ইলমদার লোককে বা আমলকে ছোট করার জন্য নয় বরং আল্লাহর রাস্তার একজন শহীদের মর্যাদার সাথে তুলনা করার কারণে। সত্য কথা হচ্ছে আল্লাহর রাস্তার একজন কামেল শহীদের মর্যাদার সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনাই চলে না।
৪. 'শহীদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য শাফা’আত করবে।'
নিমরান ইবনু ‘উতবাহ আয-যামারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা কতক ইয়াতীম উম্মুদ দারদা (রাঃ) এর কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহন করো। কেননা আমি আবূ দারদা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
"يشفع الشهيد في سبعين من أهل بيته " . قال أبو داود : صوابه رباح بن الوليد"
"শহীদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য শাফা’আত করবে এবং তার সুপারিশ কবুল করা হবে।" (সুনানে আবু দাউদ ২৫২২, মান: সহিহ)
৫. 'শহীদ ব্যক্তি মৃত্যুর কষ্ট'
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"ما يجد الشهيد من مس القتل إلا كما يجد أحدكم من مس القرصة " . قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح غريب"
"শহীদ ব্যক্তি মৃত্যুর কষ্ট শুধু ততটুকুই অনুভব করে, তোমাদের কাউকে একবার চিমটি কাটলে সে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে। (জামে' আত-তিরমিজি ১৬৬৮, ইবনু মা-জাহ ২৮০২, মান: সহিহ)
৬. শহীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ছয়টি পুরস্কার।
মিকদাব ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
"للشهيد عند الله ست خصال يغفر له في أول دفعة ويرى مقعده من الجنة ويجار من عذاب القبر ويأمن من الفزع الأكبر ويوضع على رأسه تاج الوقار الياقوتة منها خير من الدنيا وما فيها ويزوج اثنتين وسبعين زوجة من الحور العين ويشفع في سبعين من أقاربه " . قال أبو عيسى هذا حديث صحيح غريب"
"শহীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ছয়টি পুরস্কার বা সুযোগ আছে।
১। তাঁর প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সাথে সাথে তাঁকে ক্ষমা করা হয়,
২। তাঁকে তাঁর জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়,
৩। কবরের আযাব হতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়,
৪। সে (কিয়ামতের ভয়ংকর) কঠিন ভীতি হতে নিরাপদ থাকবে,
৫। তাঁর মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর এক একটি পাথর দুনিয়া ও তাঁর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। তার সাথে টানা টানা আয়তলোচনা বাহাত্তরজন জান্নাতী হূরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং
৬। তাঁর সত্তরজন নিকটাত্মীয়ের জন্য তাঁর সুপারিশ ক্ববূল করা হবে।
(জামে' আত-তিরমিজি ১৬৬৩, তা’লীকুর রাগীব ২/১৯৪, সহীহা ৩২১৩, আহমাদ ১৬৭৩০, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৬৪, বায়হাকী ফিশ শুআব ১০৮২৩, ১০৮২৪, আল-আহকাম ৩৬ নং পৃষ্ঠা, মিশকাত ৩৮৩৪, ইবনে মাজাহ ২৭৯৯, মান: সহিহ)
৭. 'শহীদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়মিত রিযিক দেয়া হয়, তারা জান্নাতে জীবিত। শাহীদ হবার সাথে সাথেই তারা জান্নাত পেয়ে যায়।'
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
"لما أصيب إخوانكم بأحد جعل الله أرواحهم في جوف طير خضر ترد أنهار الجنة، تأكل من ثمارها، وتأوي إلى قناديل من ذهب معلقة في ظل العرش، فلما وجدوا طيب مأكلهم ومشربهم ومقيلهم قالوا : من يبلغ إخواننا عنا أنا أحياء في الجنة نرزق لئلا يزهدوا في الجهاد ولا ينكلوا عند الحرب فقال الله سبحانه : أنا أبلغهم عنكم . قال : فأنزل الله { ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله أمواتا } " . إلى آخر الآية"
"উহুদ যুদ্ধের দিন যখন তোমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়, মহান আল্লাহ্* তাদের রুহগুলোকে সবুজ রঙের পাখির মধ্যে স্থাপন করলেন। তারা জান্নাতের ঝর্ণা সমূহের উপর দিয়ে যাতায়াত করে, সেখানকার ফলমূল খায় এবং ‘আরশের ছায়ায় ঝুলানো সোনার ফানুসে বসবাস করে। তারা যখন নিজেদের মনঃপূত খাবার, পানীয় ও বাসস্থান পেলো, তখন বললো, কে আমাদের এ সংবাদ আমাদের ভাইদের নিকট পৌঁছে দিবে, আমরা জান্নাতে জীবিত আছি, এখানে আমাদেরকে নিয়মিত রিযিক দেয়া হচ্ছে! (এটা জানতে পারলে) তারা জিহাদে অমনোযোগী হবে না এবং যুদ্ধের ব্যাপারে অলসতা করবে না। অতঃপর মহান আল্লাহ্* বললেনঃ আমি তাদের নিকট তোমাদের এ সংবাদ পৌঁছে দিবো। বর্ণনাকারী বলেন, মহান আল্লাহ্* এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “যারা আল্লাহ্*র পথে নিহত হয়েছে তোমারা তাদেরকে মৃত মনে করো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তারা তাদের রবের নিকট নিয়মিত রিযিক পাচ্ছে” (সূরাঃ আল-ইমরানঃ ১৬৯)। (সুনানে আবু দাউদ ২৫২০, মান: সহিহ)
৮. মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ)-কে এ আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যাতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনো তোমরা মৃত মনে করো না বরং তাঁরা জীবিত, তাঁদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত” - (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩: ১৬৯)। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি এ আয়াত সম্পর্কে (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন তিনি বললেন,
"أرواحهم في جوف طير خضر لها قناديل معلقة بالعرش تسرح من الجنة حيث شاءت ثم تأوي إلى تلك القناديل فاطلع إليهم ربهم اطلاعة فقال هل تشتهون شيئا قالوا أى شىء نشتهي ونحن نسرح من الجنة حيث شئنا ففعل ذلك بهم ثلاث مرات فلما رأوا أنهم لن يتركوا من أن يسألوا قالوا يا رب نريد أن ترد أرواحنا في أجسادنا حتى نقتل في سبيلك مرة أخرى . فلما رأى أن ليس لهم حاجة تركوا"
"তাদের রূহসমূহ সবুজ পাখীর উদরে রক্ষিত থাকে, যা ‘আরশের সাথে ঝুলন্ত দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করে। অবশেষে সে দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। একবার তাদের প্রভু তাদের দিকে পরিপূর্ণভাবে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি কোন আকাঙ্ক্ষা আছে? জবাবে তারা বলল, আমাদের আর কি আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, আমরা তো যেভাবে ইচ্ছা জান্নাতে ঘোরাফেরা করছি। আল্লাহ তা’আলা তাদের সাথে এরূপ তিন তিনবার করলেন। যখন তারা দেখলো জবাব না দিয়ে প্রশ্ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না তখন তারা বলল, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আকাঙ্ক্ষা হয় যদি আমাদের রূহগুলোকে আমাদের দেহসমূহে ফিরিয়ে দিতেন আর পুনরায় আমরা আপনারই পথে নিহত হতে পারতাম। অতঃপর মহান আল্লাহ যখন দেখলেন, তাদের আর কোন প্রয়োজনই নেই, তখন তদেরকে ছেড়ে দেয়া হলো (আর প্রশ্ন করা হলো না)। (সহিহ মুসলিম ৪৭৭৯, মুসলিম ১৮৮৭, তিরমিযী ৩০১১, দারেমী ২৮২২, সহীহাহ ২৬৩৩, ইবনে মাজাহ ২৮০১,মান: সহিহ)
৯. শাকিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, ইব্*ন মাসউদ তাকে বলেছেনঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঠারো জন সাহাবি যারা বদরের দিন শহীদ হয়েছিল, আল্লাহ তাদের রুহগুলো জান্নাতে সবুজ পাখির পেটে রেখেছেন যে জান্নাতে বিচরণ করে। তিনি বলেনঃ তারা এভাবেই ছিল, এক সময় তোমার রব তাদের দিকে দৃষ্টি দেন, অতঃপর বলেনঃ
يا عبادي، ماذا تشتهون؟ قالوا: يا ربنا، ما فوق هذا شيء، قال: فيقول: عبادي، ماذا تشتهون؟ فيقولون في الرابعة: ترد أرواحنا في أجسادنا فنقتل كما قتلنا
“হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা বললঃ হে আমাদের রব এর ওপরে কি আছে? তিনি বলেনঃ অতঃপর তিনি বলবেনঃ “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা চতুর্থবার বলবেঃ আপনি আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন আমরা শহীদ হতে পারি যেমন শহীদ হয়েছি”। (ইব্*ন হিব্বান, সহিহ হাদিসে কুদসি ৫৯, মান: সহিহ মাওকুফ)
১০. যে শাহীদের ব্যাপারে আল্লাহ তার ফেরেশতাদের সাথে কথা বলেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
"عجب ربنا من رجل غزا في سبيل الله فانهزم " . يعني أصحابه : " فعلم ما عليه فرجع حتى أهريق دمه، فيقول الله تعالى لملائكته : انظروا إلى عبدي رجع رغبة فيما عندي وشفقة مما عندي حتى أهريق دمه"
"আমাদের মহান রব ঐ ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্ট হবেন, যে আল্লাহ্*র পথে জিহাদে লিপ্ত হয়েছে। তার সাথীরা পালিয়ে গেছে, কিন্তু সে জানতে পারলো তার উপর আল্লাহ্*র হক রয়েছে। কাজেই সে পুনরায় (যুদ্ধের ময়দানে) ফিরে গেলো। অতঃপর তার রক্ত বয়ে দিয়ে শহীদ হলো। মহান আল্লাহ্* তাঁর ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দার দিকে তাকিয়ে দেখ, সে আমার কাছে সওয়াবের আশা নিয়ে এবং আমার ‘আযাবের ভয় করে (যুদ্ধের ময়দানে) ফিরে গিয়ে নিজের রক্ত প্রবাহিত করেছে। (সুনানে আবু দাউদ ২৫৩৬, মান: হাসান)
"عجب ربنا من رجل غزا في سبيل الله فانهزم " . يعني أصحابه : " فعلم ما عليه فرجع حتى أهريق دمه، فيقول الله تعالى لملائكته : انظروا إلى عبدي رجع رغبة فيما عندي وشفقة مما عندي حتى أهريق دمه"
"আমাদের মহান রব ঐ ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্ট হবেন, যে আল্লাহ্*র পথে জিহাদে লিপ্ত হয়েছে। তার সাথীরা পালিয়ে গেছে, কিন্তু সে জানতে পারলো তার উপর আল্লাহ্*র হক রয়েছে। কাজেই সে পুনরায় (যুদ্ধের ময়দানে) ফিরে গেলো। অতঃপর তার রক্ত বয়ে দিয়ে শহীদ হলো। মহান আল্লাহ্* তাঁর ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দার দিকে তাকিয়ে দেখ, সে আমার কাছে সওয়াবের আশা নিয়ে এবং আমার ‘আযাবের ভয় করে (যুদ্ধের ময়দানে) ফিরে গিয়ে নিজের রক্ত প্রবাহিত করেছে। (সুনানে আবু দাউদ ২৫৩৬, মান: হাসান)
১১. 'শহীদদের কাহিনী যারা এক ওয়াক্ত সালাতও পরার সুযোগ পান নি। (৩নং পয়েন্টের হাদিসও দ্রষ্টব্য)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
عن أبي سلمة، عن أبي هريرة، أن عمرو بن أقيش، كان له ربا في الجاهلية فكره أن يسلم حتى يأخذه فجاء يوم أحد . فقال : أين بنو عمي قالوا : بأحد . قال : أين فلان قالوا : بأحد . قال : أين فلان قالوا : بأحد . فلبس لأمته وركب فرسه ثم توجه قبلهم، فلما رآه المسلمون قالوا : إليك عنا يا عمرو . قال : إني قد آمنت . فقاتل حتى جرح، فحمل إلى أهله جريحا، فجاءه سعد بن معاذ فقال لأخته : سليه حمية لقومك أو غضبا لهم أم غضبا لله فقال : بل غضبا لله ولرسوله فمات . فدخل الجنة وما صلى لله صلاة .
‘আমর ইবনু উক্বাইশের জাহিলী যুগের কিছু সুদ অনাদায়ী ছিল। সেগুলো আদায় না করে তিনি মুসলমান হওয়া অপছন্দ করলেন। কাজেই তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার চাচাতো ভাইয়েরা কোথায়? লোকেরা বললো, তারা উহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, অমুক কোথায়? লোকেরা বললো, তারা উহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তিনি তার যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে নিজ ঘোড়ায় চড়ে উহুদে রওয়ানা হলেন। মুসলমানগন তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, হে আমর! আমাদের থেকে তুমি অন্য দিকে যাও। (আমাদের মধ্যে প্রবেশ করোনা। কেননা তুমি কাফের)। তিনি বললেন, আমিতো ঈমান এনেছি। তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আহত হলেন। আহত অবস্থায় তাকে তার পরিবার-পরিজনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) তার বাড়িতে আসলেন। তিনি তার বোনকে বললেন, তুমি তাকে জিজ্ঞেস করো, তুমি কি তোমার গোত্রের প্রতিপত্তি রক্ষার জন্য অথবা তাদের (দুশমনদের) প্রতি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে অথবা আল্লাহর গযব থেকে বাচার জন্য যুদ্ধ করেছো? তিনি (আমর) বললেন, আমি বরং আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপ থেকে বাচার জন্য জিহাদ করেছি। তিনি মারা গেলেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করলেন। অথচ তিনি আল্লাহর জন্য এক ওয়াক্ত নামাযও পড়ার সুযোগ পান নি। (সুনানে আবু দাউদ ২৫৩৭, মান: হাসান)
১২. জিহাদে ঘটনাক্রমে নিজের অস্র দ্বারা নিজেই মারা গেলে আর নিয়ত ঠিক থাকলে সে শহীদ।
عن أبي سلمة، عن أبي هريرة، أن عمرو بن أقيش، كان له ربا في الجاهلية فكره أن يسلم حتى يأخذه فجاء يوم أحد . فقال : أين بنو عمي قالوا : بأحد . قال : أين فلان قالوا : بأحد . قال : أين فلان قالوا : بأحد . فلبس لأمته وركب فرسه ثم توجه قبلهم، فلما رآه المسلمون قالوا : إليك عنا يا عمرو . قال : إني قد آمنت . فقاتل حتى جرح، فحمل إلى أهله جريحا، فجاءه سعد بن معاذ فقال لأخته : سليه حمية لقومك أو غضبا لهم أم غضبا لله فقال : بل غضبا لله ولرسوله فمات . فدخل الجنة وما صلى لله صلاة .
‘আমর ইবনু উক্বাইশের জাহিলী যুগের কিছু সুদ অনাদায়ী ছিল। সেগুলো আদায় না করে তিনি মুসলমান হওয়া অপছন্দ করলেন। কাজেই তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার চাচাতো ভাইয়েরা কোথায়? লোকেরা বললো, তারা উহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, অমুক কোথায়? লোকেরা বললো, তারা উহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তিনি তার যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে নিজ ঘোড়ায় চড়ে উহুদে রওয়ানা হলেন। মুসলমানগন তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, হে আমর! আমাদের থেকে তুমি অন্য দিকে যাও। (আমাদের মধ্যে প্রবেশ করোনা। কেননা তুমি কাফের)। তিনি বললেন, আমিতো ঈমান এনেছি। তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আহত হলেন। আহত অবস্থায় তাকে তার পরিবার-পরিজনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) তার বাড়িতে আসলেন। তিনি তার বোনকে বললেন, তুমি তাকে জিজ্ঞেস করো, তুমি কি তোমার গোত্রের প্রতিপত্তি রক্ষার জন্য অথবা তাদের (দুশমনদের) প্রতি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে অথবা আল্লাহর গযব থেকে বাচার জন্য যুদ্ধ করেছো? তিনি (আমর) বললেন, আমি বরং আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপ থেকে বাচার জন্য জিহাদ করেছি। তিনি মারা গেলেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করলেন। অথচ তিনি আল্লাহর জন্য এক ওয়াক্ত নামাযও পড়ার সুযোগ পান নি। (সুনানে আবু দাউদ ২৫৩৭, মান: হাসান)
১২. জিহাদে ঘটনাক্রমে নিজের অস্র দ্বারা নিজেই মারা গেলে আর নিয়ত ঠিক থাকলে সে শহীদ।
‘আব্দুর রহমান ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতসালামাহ ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) বলেন,
"كذا قال هو - يعني ابن وهب - وعنبسة - يعني ابن خالد - جميعا عن يونس قال أحمد : والصواب عبد الرحمن بن عبد الله أن سلمة بن الأكوع قال : لما كان يوم خيبر قاتل أخي قتالا شديدا، فارتد عليه سيفه فقتله فقال أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم في ذلك - وشكوا فيه - : رجل مات بسلاحه . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " مات جاهدا مجاهدا " . قال ابن شهاب : ثم سألت ابنا لسلمة بن الأكوع فحدثني عن أبيه بمثل ذلك، غير أنه قال فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " كذبوا مات جاهدا مجاهدا فله أجره مرتين " .
"খায়বার যুদ্ধে আমার ভাই কঠোরভাবে যুদ্ধ করলেন। ঘটনাক্রমে নিজের তরবারি তার দিকে ঘুরে গেলে এর আঘাতেই তিনি নিহত হন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাহাবীগণ বলাবলি করলেন এবং তার মৃত্যুর ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে বললেন, তিনি তো নিজ অস্ত্রের আঘাতে মারা গেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে জিহাদকারি মুজাহিদ হিসেবে মারা গেছে। বর্ননাকারী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, অতঃপর আমি সালামাহ ইবনুল আকওয়া’র এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে সেও তার পিতার সূত্রে একই কথা বললো। তবে সে এও বলেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাদের ধারণা মিথ্যা। সে জিহাদকারী মুজাহিদ হিসেবে মারা গেছে এবং তার জন্য দ্বিগুন সওয়াব রয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ ২৫৩৮, মান: সহিহ)
১৩। শহীদের কবরের আযাব নেই এবং কবরে তাকে প্রশ্নও করা হবে না।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবী থেকে বর্ণিতঃ
رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا بَالُ الْمُؤْمِنِينَ يُفْتَنُونَ فِي قُبُورِهِمْ إِلَّا الشَّهِيدَ؟ قَالَ: «كَفَى بِبَارِقَةِ السُّيُوفِ عَلَى رَأْسِهِ فِتْنَةً»
এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্* (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! শহীদ ব্যতীত অন্যান্য মুমিনগণ কবরের পরীক্ষার/ফিৎনার সম্মুখীন হবে, এর কারণ কি? তিনি বললেন, তার মাথার উপর উজ্জল তরবারি তাকে কবরের পরীক্ষার/ফিৎনা থেকে নিরাপদ রাখবে। (সুনানে আন-নাসায়ী ২০৫৩, মানঃ সহিহ)
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
Comment