বর্তমানে সর্বাধিক কঠিন এবাদত কোনটি? বর্তমানে জিহাদের চেয়ে কঠিন আর কোন এবাদত নেই। কেননা গোটা পৃথিবীর মু’মিন কাফের, নেককার-বদকার নির্বিশেষে সবাই জিহাদের ঘোর বিরুধী। এমনকি কতিপয় আলেম পর্যন্ত এই মহান কাজের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে ক্রোধের তীর নিক্ষেপ করছেন মুজাহিদের চেহারায়। কোন অপরাধে তাঁর সাথে এমন ঘৃণিত আচরণ করা হচ্ছে? তাঁর অপরাধতো একটাই সে হৃদয়ে জিহাদের অগ্নি-শিখা প্রজ্জ্বলিত করেছে, যাতে করে এর দ্বারা ইসলামের চির দুশমন সন্ত্রাসবাদী ইহুদি-খৃষ্টান, বে-দীন-কাফেরদেরকে জালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। হে পাঠক ! জেনে রাখ এই যুগের অবস্থা এতই নাজুক যে, তুমি যদি তাহাজ্জুদের সালাত পড়া, নফল সিয়াম পালন , কোরআনুল-কারীম হেফ্জ করা, এলমে দ্বীন অন্বেষণ, দাওয়াতী কাজ সহ আরো যত এবাদত আছে সেগুলো সম্পাদন করতে চাও, তাহলে কেউ তোমার প্রতি রাগান্বিত হবে না, দুশমনীও রাখবে না। বরং সবাই সন্তুষ্ট থাকবে। ফলে তোমার সামনে কোন প্রকার সংকীর্ণতা বা বিরোধপূর্ণ কিছুই থাকবে না। অপরন্তু তারা সবাই তোমার সহযোগী হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে, তুমি যখনই জিহাদ নামক সত্যিকার সম্মান, মর্যাদা ও আত্বোৎসর্গের পথে যেতে চাবে, তখন সবাইকে তোমার বিরুদ্ধে অবস্থান দিতে দেখতে পারে। এমনকি তারা সকল প্রকার কলা-কৌশলের মাধ্যমে আপ্রাণ চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে তোমার স্পৃহা, দৃঢ়চেতা-মনোবল, দুঃসাহসিকতা দমিয়ে সংগ্রামের পথ থেকে বারণ করতে চাবে। কিন্তু অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে বলতে হয়!! আমরা কতিপয় আলেমের ব্যাপারে শুনতে পেয়েছি তিনি যদি জানতে পারেন যে, তার ছেলে অচিরেই জিহাদে যাবে, তখন তিনি এই ছেলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এবং তাঁর সাথে শত্র“তা পোষণ করেন। আর যদি এই ছেলে দুনিয়াবী পড়াশোনা সমাপন করার লক্ষ্যে কুফরী কোন দেশে যেতে চায়, তখন আলেম সাহেব আনন্দে আত্বহারা হয়ে ছেলেকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ অনুপ্রেরণা দিতে থাকেন। যাতে করে তার মনোবল আরো বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়! সকল ধরণের উপকরনের ব্যবস্থাও তিনি করে দেন। কেননা এই ছেলে দুনিয়াতে উনার মর্যাদা সমুন্নত করবে, এবং সমাজের মানুষের নিকট তার মুখমন্ডল উজ্জল করবে। একজন আলেমের ভূমিকা কি এমন হওয়া উচিৎ ? তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। এ পথে বাঁধা আসবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) সাড়ে চৌদ্দশ বছর পূর্বেই এসম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করেছেন। এবং তিনি বলেছেনঃ- নিশ্চয় শয়তান বনী আদমের কল্যাণের পথে বাঁধা দিতে ওঁৎ পেতে বসে থাকে। প্রথমে শয়তান ইসলামের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে বসে বলতে লাগেঃ তুমি তোমার নিজের এবং পূর্বপুরুষদের ধর্ম পরিহার করে ইসলাম গ্রহণ করছ ? (এটাতো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়) তখন আদম সন্তান শয়তানের কথা অমান্য করে ইসলাম গ্রহণ করে। এরপর শয়তান হিজরতের পথে বাঁধাগ্রস্ত করতে চায়। এবং তাকে (পথভ্রষ্ট করার লক্ষ্যে) বলেঃ- তুমি স্বদেশের (স্মৃতিবিজড়িত) ভূমি এবং আকাশ ছেড়ে হিজরত করতে যাচ্ছ ? (এটা কিন্তু ঠিক করছ না।) প্রকৃতপক্ষে একজন মুহাজির রশি দ্বারা বাঁধা অশ্বের ন্যায় বিভিন্ন মায়া, মমতার জালে আবদ্ধ থাকে। তথাপি সে শয়তানের কথা অমান্য করে হিজরত করে। অতঃপর শয়তান জিহােেদর পথে ওঁৎপেতে বসে এবং বলেঃ তুমি যান, মাল ব্যয় করে যুদ্ধ করে মরতে যাচ্ছ ? এর পরিবর্তে কোন (সুন্দরী) নারীকে বিবাহ কর। এতে তোমার মাল ও বাঁচবে। তখন সেই আদম সন্তান শয়তানের কথা অমান্য করে জিহাদে বেড়িয়ে যায়। সুতরাং যে ব্যক্তি এতো কুরবানী করল, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর দায়িত্ব। যদি সে শহীদ হয়, তাহলে তাকে বেহেশতে প্রবেশ করানো আল্লাহর কর্তব্য। আর যদি সে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মারা যায়, তাহলে ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর দায়িত্ব। আর যদি তাঁর বাহন তাকে নীচে ফেলে ঘাড় ভেঙ্গে দেয়, (ফলে সে মারা যায়।) এমতাবস্থায় ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। (নাসায়ী) হযরত ফযল বীন যিয়াদ (র.) বলেনঃ একদা আবু আব্দুল্লাহ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) এর নিকট জিহাদের আলোচনা করা হলো, তখন আমি তাঁর ক্রন্দনের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এবং তিনি বলতে লাগলেনঃ জিহাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন নেক কাজ নেই। তিনি আরো বলেনঃ দুশমনের সাথে মোকাবেলার সমকক্ষ অন্য কোন আমল নেই। আর সর্বোত্তম আমল হচ্ছে সরাসরি জিহাদে অংশগ্রহণ করা। আর যারা শত্র“র সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, তারা নিজেদের ইজ্জত-সম্ভ্রম ও ইসলাম প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত। সুতরাং এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন আমল কি হতে পারে ? বিশ্বের সমস্ত মানুষ নিরাপদে নির্বিঘ্নে, আনন্দ-উল্লাসে সময় অতিবাহিত করছে। আর মুজাহিদগণ কঠিন বিপদের সময় অতিবাহিত করছেন। এমনকি তারা ইসলামী শাসন কায়েমের লক্ষ্যে নিজেদের জীবন সানন্দে বিলিয়ে দিচ্ছেন। ইমাম আহমাদ (র.) এর বক্তব্য এখানেই শেষ। আমরা জিহাদকে ফরযে আইন বলি আর ফরযে কেফায়া বলিনা কেন, ফলাফল একটাই। তথা জিহাদ নামক মহান আমল ও এর প্রস্তুতি থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আর সাম্প্রতিক কালে যেহেতু জিহাদ ফরযে আইন। সেহেতু জিহাদে অংশগ্রহণ না করে আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্ততার মধ্যে রয়েছি। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আমরা মহা-হতভাগা।
Announcement
Collapse
No announcement yet.
হে উলামায়ে উম্মাহ
Collapse
This is a sticky topic.
X
X
Comment